একদিন কাঁদবে তুমিও পর্ব-২+৩

0
754

#একদিন_কাঁদবে_তুমিও
#পর্ব_২
#Saji_Afroz

বাসায় আসতেই ইনতিসার সোজা মা এর রুমে গেল। ইলারা জামান বারান্দায় বসে বই পড়ছিলেন। তার প্রিয় শখ গুলোর মাঝে একটি হলো বই পড়া। জীবনে কত যে বই তিনি পড়েছেন, তার কোনো সঠিক হিসাব নেই। তার বই গুলো দিয়ে ঘরে একটি লাইব্রেরীও তৈরী হয়ে গেছে। নতুন নতুন বই কেনা ও সেগুলা সাজিয়ে রাখা তার শখ। অবসর সময়টা বই পড়ে কাটান তিনি।

ছেলে ইনতিসার কে দেখে তিনি বললেন, এসেছিস?

মা এর পাশে থাকা চেয়ারটায় বসতে বসতে সে বলল, তুমি ডাকবে আর আমি আসব না?
-অফিসের কোনো কাজ ছিল না তো?
-যত কাজই থাকুক। আমার কাছে তুমি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি মৃদু হেসে বললেন, বিয়ে ঠিক হলো। কিন্তু দিন-তারিখ ঠিক করলাম না। আজরার মা এর সাথে এই বিষয়ে কথা বললাম। তিনি বললেন আগামীকাল তাদের বাসায় যেতে।
-ও আচ্ছা।
-তাই ভাবলাম আজ তোকে নিয়ে শপিং এ যাই।
-শপিং এ কেন?
-বারেহ! দিন, তারিখ ঠিক করব তাই মেয়েকে কিছু দিতে হবে না? ভাবছি একটা ডায়মন্ড এর নেকলেস দেব ওকে। কী বলিস?
-তুমি যা বলো।
-তোর কোনো চাওয়া নেই?

একটু থেমে ইনতিসার বলল, সবকিছু কত জলদি হয়ে যাচ্ছে।
-ভালো কাজ জলদিই হয়। ফ্রেশ হয়ে নে। নাস্তা দিচ্ছি। একটু রেস্ট নিয়ে নিস। বের হব সন্ধ্যায়।

হ্যাঁ সূচকভাবে মাথাটা নেড়ে নিজের রুমে আসে ইনতিসার। পকেট থেকে ফোন বের করে আজরার ছবি দেখলো সে।
ভারী মিষ্টি দেখতে মেয়েটা। উজ্জ্বল শ্যামলা গা এর রঙ। কোমর সমান চুল তার। ঠোঁটের নিচের তিলটা বেশ আকর্ষণীয়। যেই দেখছে সেই বলছে, ইনতিসারের সাথে বেশ মানাবে তাকে।

অপরদিকে নাবীহা? শ্যামবর্ণ তার গা এর রঙ। মাঝারি উচ্চতা। গোলগাল চেহারা। যেইচেহারা দেখলে মনটা ভরে যায়। সব মায়া যেন ভর এসে বসেছে সেই চেহারায়।
আজ যখন কথা বলতে বলতে চোখের চশমাটা সে ঠিক করছিল, দারুণ লাগছিল তাকে দেখতে। ইনতিসার কে দেখেই সে কাচুমাচু করছিল। লজ্জা পাচ্ছিলো বলা যায়।
নাবীহা কে দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো, সহজ সরল একটা মেয়ে সে। এমন শান্তশিষ্ট, মায়া ভরা চেহারার মেয়েই যে তার পছন্দ ছিল। তাছাড়া নাবীহা সম্পর্কে সবটা জেনেই বিয়ে করতে চেয়েছিল ইনতিসার। ভেবেছিল মধ্যবিত্ত একটা পরিবারের মেয়েই বুঝবে, সংসারের গুরুত্ব কতটা। যারা কষ্ট করে বড়ো হয়, তারাই তো কষ্টের মূল্যায়ন করতে জানে। আগলে রাখতে জানে সবকিছু। এসব ভাবলেও নাবীহা কে দেখেও যে তার ভালো লাগেনি এমনটা নয়। কেন লেগেছে এর সঠিক কারণ সে জানে না। শুধু এটা জানে, ভালোলাগা হুটহাটও হয়। এই মুহুর্তে যদি আজরার সাথে বিয়েটা ভেঙে নাবীহা কে পাওয়া যেত তবে সে তাই করতো। কিন্তু নাবীহা তাকে পছন্দ করে না। কেন করে না এর কারণ জানা নেই তার।
আচ্ছা, নাবীহা কেন তাকে পছন্দ করেনি?
.
.
.
ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাসায় প্রবেশ করতেই নাবীহার মা নায়লা খাতুন বললেন, আজ বলেছিলাম একটু তাড়াতাড়ি আসতে।
-খুব বেশি দেরীও হয়নি।
-জামা পালটে আয়। কাজে হাত লাগাতে হবে।

নাবীহা তার রুমে আসে। ফ্যানটা ছেড়ে দেয় সে। ধূলোয় আস্তরণ পড়ে থাকা বৈদ্যুতিক পাখাটা ধীরেধীরে ঘুরতে শুরু করে।
প্রচন্ড গরম পড়ছে আজ। বাইরে কড়া রোদ। বাতাস নেই বললেই চলে। যতটুকু বাতাস আছে আশেপাশের বড়ো বড়ো বাড়ির বাঁধা পেয়ে নাবীহা দের এই ছোট্ট আশ্রয়স্থল এ পৌঁছতে পারে না।

নাবীহা ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসলো। ভাবতে লাগলো আজকের কথা। হুট করে ইনতিসারের সাথে দেখা হয়ে গেল তার।
ক’দিন আগেই ইনতিসারের পরিবার থেকে সম্বন্ধ এসেছিল তার জন্যে। নাবীহার বাবা এমন সম্বন্ধ পেয়ে খুব খুশি হলেও মেয়ের উপরে কিছু চাপিয়ে তিনি দিতে চাননি। তাই নাবীহার উপরেই সবটা ছেড়ে দেওয়া হয়। নাবীহা বিষয়টি নিয়ে ভাবার আগেই তার ফুফাতো ভাই এর ফোন আসে৷ সে জানায়, নাবীহা কে পছন্দ করে সে। বিয়ে করতে চায় তাকে।
একথা শুনে নাবীহা যেন পৃথিবীর সমস্ত সুখ খুঁজে পেয়েছিল। কারণ অনেক আগে থেকে সে তার ফুফাতো ভাইকে পছন্দ করতো। যদিও মনের কথা মনের মাঝেই চেপে রেখেছিল সে।
তার ফুফাতো ভাই সাজির তাকে বলল, যদি সে রাজি থাকে তার পরিবারের সাথে কথা বলবে। নাবীহা সম্মতি জানালে তারাও তার জন্যে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে।
নাবীহার বাবা মোহাম্মাদ জাকির বোনের সাথে আত্মীয়রা করতে পিছপা হতে চাননি। তাছাড়া নাবীহাও এই বিয়েতে রাজি। আর তাই ইনতিসারের পরিবার কে না করা হয়।
ফোন বেজে উঠে নাবীহার। স্ক্রিনে আজরার নাম ভাসছে। সে রিসিভ করতেই আজরা বলল, কেমন আছিস?
-ভালো তুই?
-ভালো। ফ্রি আছিস?
-হু আছি। বল না কী বলবি?

আজরা আমতাআমতা করতে থাকে।
নাবীহা বলল, কী রে? বিয়ে ঠিক হওয়ার পরই বান্ধবী কে পর করে দিচ্ছিস? এত সংকোচ করছিস কেন?
-আসলে একটা বিষয়ে জানতে চাচ্ছিলাম।
-বলে ফেল নিঃসংকোচে।

নাবীহার কাছ থেকে সাহস পেয়ে আজরা বলল-
আমার যার সাথে বিয়ে হয়েছে তার নাম কী জানিস?
-ওহহো! এসব নিয়ে কথা বলারই সময় পাইনি রে। সময় করে আসব আমি তোর বাসায়।
-তার নাম ইনতিসার।

আজরার কথা শুনে থেমে গেল নাবীহা।
পরমুহূর্তেই মনে হলো, সেই ইনতিসার যে এই ইনতিসার হবে এমন কোনো কথা নেই!
তাই সে বলল-
সুন্দর নাম।
আজরা বলল, পরিচিত মনে হচ্ছে না নামটা?
-কেন জিজ্ঞাসা করছিস বল তো?
-মানতাশার কাছে শুনেছি, এই নামের ছেলের সম্বন্ধ তোর জন্যেও এসেছিল।
-একই নামের কত কেউই থাকতে পারে।
-পারে। কিন্তু সে একই নামের একই জন।

কথাটি শুনে চমকালো নাবীহা। বিস্ময় নিয়ে বলল-
তাই?
-হু।
-কীভাবে বুঝলি?
-মানতাশা ছবি দেখে বলেছে। তুই না কি প্রত্যাখ্যান করেছিস ইনতিসার কে?

মানতাশার উপরে রাগ হলো নাবীহার। কোথায় কী বলতে হয় সেই বোধ এই মেয়ের হয়নি এখনো।
সে বলল-
হ্যাঁ।
-কেন? যদিও মানতাশা বলেছে তোর ব্যবসায়ী পছন্দ না।
-এটা ঠিক। সাথে আরেকটা বড়ো কারণ আছে।
-কী?
-তোকে বলেছিলাম, আমার ফুফাতো ভাই এর উপরে ক্রাশ আমি।
-হু।
-আর সেই ফুফাতো ভাই আমাকে বিয়ে করতে চায়। পেশায় সে ইঞ্জিনিয়ার। তবে কেন আমি পছন্দের মানুষ কে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করব?

নাবীহার কথা শুনে অশান্ত মনটা শান্ত হয়ে গেল আজরার। সাথে নাবীহার জন্য খুশিও হলো সে। আজরা বলল-
এ তো অনেক ভালো খবর।
-হু। আমি এটা মানতাশা কে বলেছিলাম। তোকে বলেনি?
-নাহ। তোর সাথে কথা বলে কত বড়ো পাথর যে মন থেকে সরলো! বারবার মনে হচ্ছিলো বিয়েটা করা উচিত হবে কি না আমার।
-কি যে বলিস না! বিয়ের জন্য সম্বন্ধ আসা যাওয়া করবে এটা স্বাভাবিক। এখন এটা নিয়ে তুই যদি উশখুশ করিস! সব কিছু বাদ দে। বিয়েতে ফোকাস কর।
-তারা কাল তারিখ ঠিক করতে আসবে।
-আরে বাহ! তোর বিয়েটা খেয়ে নিই। এরপর আমারটা হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

নাবীহার সাথে কথা বলা শেষে ফোন রেখে লম্বা একটা নিঃশ্বাস ফেললো আজরা। এই বিষয়ে সে ইনতিসারের সাথে কথা বলতে চায় না আর। সত্যিই তো! বিয়ের জন্য সম্বন্ধ আসা যাওয়া করাটা একটা স্বাভাবিক বিষয়।
.
.
.
আজ ইনতিসারের পরিবার বিয়ের তারিখ ঠিক করতে আসবে। তাই সে সাজতে ব্যস্ত রয়েছে।
ইনতিসার কে একবারই দেখেছে এখনো। লম্বা, ফর্সা, গালে চাপ দাঁড়ি সবমিলিয়ে যেন আজরার স্বপ্নের পুরুষ।
ঘটকের মাধ্যমে সম্বন্ধ আসলেও ইনতিসারে মা এর আজরা কে বেশ পছন্দ হয়। তার পছন্দ কেই গুরুত্ব দিয়ে সেও এসেছিল আজরা কে দেখতে। দেখার পরেই ভালো লেগেছে জানায়।
আচ্ছা, শুধু কী মা এর জন্য বিয়েটায় রাজি হলো সে?

মাথায় এই প্রশ্নটা আসলে চিন্তার ভাজ পড়ে আজরার কপালে। আজিজা বানু রুমে এসে তাকে তাড়া দিয়ে বললেন, এখনো তৈরী হলি না? তারা চলে এলো বলে!

আজরা কে চিন্তিত দেখে তিনি বললেন, কী হয়েছে? মুখ এমন শুকনো কেন?
-আচ্ছা মা? ইনতিসার কী মা এর কথাতে বিয়েটা করছে?

মেয়ের মাথায় যে মানতাশার বলা কথাগুলো ঘুরছে ভালোই বুঝেছেন তিনি। আজিজা বানু তার পাশে বসতে বসতে বললেন, আমার মেয়ে কোনদিকে কম বল তো? ইনতিসারের মা তোকে একা একবার দেখে গেছেন। কিন্তু কথা পাকাপোক্ত করেছেন ইনতিসার তোকে দেখার পর। এই থেকে বুঝছিস না? ওর তোকে ভালো লেগেছে বলে বিয়েটা হচ্ছে।

এইবার মলীন মুখে হাসি ফোটে আজরার। তিনি তাকে তাড়া দিয়ে বললেন, চটজলদি তৈরী হয়ে নে।

কানের দুলটা পরতে পরতে আজরা ভাবলো, আজও কী তাকে ও ইনতিসার কে আলাদা কথা বলতে দেওয়া হবে?
.
.
.
ইলারা জামান তার বোন কে নিয়ে প্রবেশ করলেন আজরার বাড়িতে। সাথে রয়েছে ড্রাইভার। যার হাত ভর্তি মিষ্টির বাক্স ও ফলমূল। ওসব টেবিলের উপরে রাখলে তাকে তাড়া দিয়ে ইলারা জামান বললেন, গাড়ি থেকে বাকি জিনিসও নিয়ে এসো।

আজিজা বানু এতসব কিছু দেখে বললেন, এত জিনিসের কী প্রয়োজন ছিল আপা?
-বিয়ের তারিখ ঠিক করতে আসলাম। প্রয়োজন তো ছিলই।

আশেপাশে তাকিয়ে আজিজা বানু বললেন, ইনতিসার আসেনি?

একগাল হেসে ইলারা জামান বললেন, ও কী আসার কথা ছিল? না মানে দিন তারিখ ঠিক করতে এলাম। ছেলের কাজও ছিল। তাই আর ডাকলাম না। সামনে কত আসা যাওয়া হবে।
-তা ঠিক, তা ঠিক। আপনারা বসুন।

বসতে বসতে নিজের বোনের সাথে আজিজা বানুকে পরিচয় করিয়ে দিলেন তিনি। ড্রাইভার আরেক দফা এসে জিনিসপত্র গুলো রেখে যায়।

হুট করে সেখানে মানতাশার আগমন ঘটে। জিন্স, টি-শার্ট পরা মানতাশা কে দেখে তারা ভ্রু কুচকায়।
মানতাশা ভেবেছিল আজ ইনতিসার আসবে। মূলত তাকে দেখতেই সে আসলো। কিন্তু দু’জন মহিলা কে দেখে হতাশ হলো সে। আর কোনো কথা না বলেই শুরুতেই সে বলল-
আজরার হবু বর আসেনি?

মানতাশা কে দেখে চরম বিরক্ত হলেন আজিজা বানু। কিন্তু তা প্রকাশ না করে মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করে বললেন-
আসেনি। তুমি ভেতরে যাও আজরার কাছে।
-যাহ বাবা! আমি আরও হবু দুলাভাই কে দেখতে এসেছিলাম।

এই বলে সে ভেতরে যেতেই আজিজা বানু বললেন-
আজরার বান্ধবী হয় সে। বেশ চঞ্চল মেয়েটা।

আজরার রুমের পাশে আসতেই মানতাশা দেখলো, সে উঁকি দিয়ে ড্রয়িংরুমে কী হচ্ছে দেখার চেষ্টা করছে। মানতাশা কে দেখেই সে বলল-
কণ্ঠ শুনে বুঝেছি তুই এসেছিস। কিন্তু কথা সব বোঝা যাচ্ছিল না বলে শিওর ছিলাম না। দেখলি ইনতিসার কে?
-আসলেই তো দেখব।
-মানে?
-আসেনি।

এই বলে ভেতরে প্রবেশ করতে করতে মানতাশা বলল-
জোর করে বিয়েতে রাজি করলেও সবকিছুতে তো জোর করা যায় না।
-মানে?
-সে আজ আসার প্রয়োজনীয়তা মনে করেনি। অথচ আসতেই পারতো। হবু বরকে দেখার জন্য তুই যেভাবে ছটফট করছিস সে কী করছে না? আসলেই করছে না। কারণ বিয়েটা করছে সে মা এর খুশির জন্য।

আজরা কিছু বলতে যাবে তখনি সেখানে উপস্থিত হোন আজিজা বানু। তার সাথে ড্রয়িংরুমের দিকে পা বাড়ায় আজরা। হাসিখুশি মুখটা তার অন্ধকারে ছেয়ে গেছে। মানতাশার বলা কথাগুলো কানে বাজছে অনবরত।
তার সাথে মানতাশাও আসতে চাইলে তাকে রুমেই থাকতে বললেন আজিজা বানু। মানতাশা বাধ্য হয়ে রুমেই থেকে যায়।

আজরা আসতেই তাকে সাদরে গ্রহণ করলেন ইলারা জামান। তাদের সালাম জানিয়ে বসলো আজরা।
আজরার মুখ মলীন দেখে তিনি বুঝতে পারলেন, ইনতিসার আসেনি বলে হয়তো মন খারাপ হয়েছে। ইনতিসার কে তিনি আসতে বলেছিলেন। কিন্তু সে আগ্রহ দেখায়নি।
বিয়েতে রাজি হয়েছে এটাই ইলারা জামানের জন্য বেশিকিছু। তাই সবকিছুতে তিনি ইনতিসার কে জোরাজোরি করতে চাইছেন না। কিন্তু এখন আজরার মুখ মলীন দেখে তার মায়া হলো।
একপাশে গিয়ে ইনতিসার কে ফোন দিলেন। কিছুক্ষণ তার সাথে কথা বলে ভিডিও কল দিলেন তিনি।
এরপর আজরার সামনে এসে ফোনটা ধরে বললেন, আমার ছেলেও হবু বউকে দেখার জন্য অস্থির। কিন্তু কাজের চাপে আসতে পারেনি। তবে বলে রেখেছিল, আমি যেন ভিডিও কল দিই।

মা কেন যে মিথ্যে কথা বলছে! বরং অফিসে ফোন দেওয়াতে বিরক্ত হয় ইনতিসার। মা এর কথা রাখতেই ভিডিও কল দিয়েছে সে। এসব চেঁপে সে মুখে হাসি এনে বলল-
দুঃখিত আজ আসতে পারিনি।

ইনতিসার কে দেখে মলীন মুখে হাসি ফোটে আজরার। সে মৃদুস্বরে বলল-
ইটস ওকে।

ইনতিসার কে ফোনে রেখেই আজরার গলায় নেকলেসটি পরিয়ে দেন ইলারা জামান।
বিয়ের তারিখ ঠিক করেন।
এরপর ফোন রাখে ইনতিসার। আজরাও রুমে ফিরে আসে। মানতাশা বলল, কবে ঠিক হলো তারিখ?
-এক সপ্তাহ পর।
-এত তাড়াতাড়ি!
-ওদের মতে শুভ কাজে দেরী করতে নেই।

আজরার গলার দিকে চোখ যেতেই দাঁড়িয়ে পড়লো মানতাশা। সে বলল, এটা ওরা দিয়েছে বুঝি?
-হু।
-দেখে তো মনে হচ্ছে ডায়মন্ড।
-হু।

আজরার গলা থেকে নেকলেসটি খুলে নিজের গলায় পরে নেয় মানতাশা। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইলো সে। মানতাশার ফর্সা গলায় নেকলেস টি চকচক করছে। মনে হচ্ছে এটা তারই জন্য বানানো হয়েছে।
ভাগ্য করে এমন ঘরের বউ হতে চলেছে আজরা। অথচ রূপে আজরা ও নাবীহার দিক থেকে শতভাগ এগিয়ে আছে মানতাশা।
দুধে আলতা গা এর রঙ তার, কাঁধ সমান সোজা চুল, বিড়ালের মতো চোখ তারই , আর দেখতে বেশ লম্বাও সে।
তার ভাগ্যে ইনতিসার বা তার মতো কেউ আসেনি কিন্তু নাবীহার তো এসেছিল। তবুও ইঞ্জিনিয়ার ফুফাতো ভাই এর জন্য প্রত্যাখ্যান করলো। অথচ সেই জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার মাসে কতই বা বেতন পায়? যতটা না ইনতিসার তার ড্রাইভার কে দেয় এমনটা!
নাবীহার জায়গায় সে হলে নিমিষেই রাজি হয়ে যেত। যদিও তার প্রেমিক রয়েছে। কিন্তু এমন কাউকে পেলে প্রেমিককেও ছাড়তে রাজি সে!
.
চলবে

#একদিন_কাঁদবে_তুমিও
#পর্ব_৩
#Saji_Afroz

আজ মানতাশা ও এজাজের প্রেমের সম্পর্কের এক বছর পূর্ণ হলো। তাই এজাজ তাকে দেখা করতে বলেছে। যদিও মানতাশার দেখা করার কোনো ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু সারপ্রাইজের কথা শুনে না করতে পারলো না সে। এজাজের সাথে দেখা করার জন্যে রেস্টুরেন্টে আসে মানতাশা। এখানেই প্রায় বসে তারা।
আজও মানতাশার আগে এজাজের আগমন ঘটে। তাকে ঘন্টা খানেক অপেক্ষা করানো মানতাশার অভ্যেসে পরিণত হয়েছে।
সে দেরীতে আসবে জেনেও সঠিক সময়ে চলে আসে এজাজ। যদি কোনোদিন দ্রুত চলে আসে? কবে বেচারিকে একা সময় কাটাতে হবে এই ভেবে এজাজ দেরী করে না।

মানতাশার অপেক্ষা করতে করতে তার দেখা পেল এজাজ।
সাদা রঙের টপস, নীল জিন্স পরে চোখে কালো সানগ্লাস লাগিয়েছে সে।
দেখতে তাকে নায়িকার চেয়ে কোনো অংশে কম ভালো লাগছে না!
চোখের চশমাটা খুলে এজাজের পাশে বসতে বসতে মানতাশা বলল, কতক্ষণ হলো এসেছ?

এক ঘন্টা হয়ে গেলেও এজাজ জবাব দিলো, খুব বেশি সময় হচ্ছে না।
-ওহ!

তারা খাবার অর্ডার করে। খাওয়ার মাঝেই মানতাশা বলল, কী সারপ্রাইজ এর কথা বলছিলে তুমি?
-মা কে তোমার কথা বলেছি। তারা তোমার ছবি দেখে অনেক বেশি পছন্দ করেছে। যেতে চায় তোমার বাসায়।

এজাজ খেয়াল করলো, কথাটি শুনে মানতাশা খুশি হলো না। বরং তার চেহারাটা ফ্যাকাসে হয়ে যায়। এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে জবাবে সে বলল, কিন্তু তুমি এখনো কোনো জব পাওনি। তোমার কথা বাসায় কীভাবে বলব আমি?

তার কথা শুনে হেসে ফেলে এজাজ। মানতাশা বলল, কী হলো?
-আমি কী বোকা? এতটুক বোধ শক্তি আমার আছে। মা কে এটা বলে থামিয়েছি আমি।
-ভালোই করলে।
-কিন্তু মা তোমার সাথে দেখা করার লোভ থামাননি।
-মানে?
-পাশের শপিংমলেই আছেন মা। তোমাকে দেখতে চান তিনি।

একথা শুনতেই প্রায় লাফিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে মানতাশা। সে বলল-
কীসব বলছ? এভাবে হুটহাট! নাহ এটা পসিবল না এখন।
-তোমার পরিবারের কেউ তো জানছে না।
-তবুও…
-মা একটা উপহারও এনেছেন তোমার জন্য। ছেলের হবু বউ কে দেবেন বলে ঠিক করে রেখেছিলেন।

উপহারের কথা শুনতেই শান্ত হলো মানতাশা। আবারও বসতে বসতে বলল, তাই?
-হু। আসতে বলি?

একটু ভেবে সে বলল, বলো।

এজাজ মা কে ফোন করে আসতে বলল। আর এদিকে মানতাশা ছটফট করতে থাকে সেই উপহারের জন্য। তার যে আজরার সেই নেকলেসটি চোখে ভাসছে!

অফিসে যাওয়ার জন্যে বেরুচ্ছে ইনতিসার। তার পথ আটকালেন ইলারা জামান। ইনতিসার বলল, কিছু বলবে?

তিনি ইনতিসারের ফোন চায়। ইনতিসার বলল, তোমার ফোনে ব্

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে