অনুভবে ২ পর্ব-০৭

0
509

অনুভবে (২য় খন্ড)
পর্ব ৭
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা

ইনারা এক’পা পিছয়ে যায়। কিন্তু বেশি পিছাতে পারে না। পিছনের দেয়ালে পিঠ ঠেকে আটকে যায় সে। পাশ দিয়ে বের হতে নিলে সভ্য তার কাঁধের দুইপাশে হাত রেখে রাস্তা আটকে দেয়।

ইনারা স্তব্ধ। লজ্জায় তার চোখে আপনা-আপনি নিচে নেমে যায়। সে আশেপাশে অস্থির হয়ে তাকিয়ে বলে, “রাস্তা ছাড়ুন।”
“তুমিই তো এসেছিলে আমার কাছে।”
“আপনার খবর জিজ্ঞেস করতে এসেছিলাম। এত কাছে আসতে বলিনি আপনাকে।”
“তাই বুঝি? তো হঠাৎ করে আমার খবর নেবার আকাঙ্খা কেন এলো তোমার মনে।”
ইনারার মনে হলো সুরভির বলা কথাটা সভ্যকে জানানো উচিত হবে না। তাই সে বলল, “এমনিতেই।”
“এমনিতেই কেউ কোনো পুরুষের কাছে এসে তাকে স্পর্শ করে? কই ওদিন তো আমাকে নিজের কাছে আসা থেকে বারণ করেছিলে।”
ইনারা এবার চোখ তুলে তাকায়, “বিরক্ত করবেন না। একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে এসেছি। সোজাসাপটা উওর দিবেন।”
“উওরের পরিবর্তে কি দিবে তুমি?”
“প্রয়োজন নেই উওরের। আমিই চলে যাই।”
ইনারা যেতে নিবে এর পূর্বেই সভ্য তার মাথা নাড়ায়। আর তার চুলের পানি ছিঁটের পড়ে ইনারার মুখেতে। ইনারার বিরক্তি আরও বাড়ে, “কী সমস্যা আপনার?”

সভ্য উওর দেয় না। সে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ইনারার দিকে। তার মুখের মাঝে পানির ফোঁটা জমে গেছে। তা ইনারার সৌন্দর্যটা অন্যরকম করে দিয়েছে। অদ্ভুত সুন্দর। তার বুকের ভেতর কেমন এক ঝড় উঠে। এই মুহূর্ত ইনারাকে দেখাচ্ছে শুভ্র সকালের মতো, কোমল ও পবিত্র। সে মুগ্ধতা জুড়ে হারিয়ে যায় ইনারার মাঝে।
ডুবে যেতে নেয় তার মাঝে। কিন্তু গভীর ডুবতে পারে না। এর পূর্বেই ইনারা তাকে সরিয়ে চলে যায়। সভ্য সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। মৃদু হাসে। চোখ বন্ধ করে খানিক সময় পূর্বের দৃশ্য মনে করে। বারান্দায় যেয়ে দাঁড়াতেই একটু দূরেই দেখতে পায় সুরভি ও ইনারাকে। ইনারাকে বিরক্ত দেখাচ্ছে। আচ্ছা মেয়েটা কি জানে সে যখন হঠাৎ এমন রেগে যায় বা বিরক্ত হয় তখন তাকে সবচেয়ে বেশি মিষ্টি দেখায়?

সভ্য মনে মনে বলে,
“জানো প্রিয়,
তোমার সাথের স্মৃতিগুলো তোমার মতো জেদি,
চাই হারিয়ে যাক সে স্মৃতি, হারিয়ে যাক সে ভালোবাসা,
হারিয়ে যাক প্রতি মুহূর্ত তোমাকে কাছে পাবার,
প্রতি মুহূর্ত তোমাকে হারাবার,
প্রতি মুহূর্ত সে বেদনার।
আফসোস!
হারায় না সে স্মৃতিগুলো,
হারায় না এই অনুভূতি,
কেবল হারিয়ে যাই তোমার মাঝে আমি।”
.
.
সুরভি জিজ্ঞেস করে, “কী হলো তোর?এত সুন্দর মতো গেলি তাহলে টমেটোর মতো মুখ করে রাগে ফিরে আসলি কেন?”
“অসভ্যের কাণ্ডে।”
“দুলাভাই কী করছে?”
“ওই অসভ্য… থাক বাদ দে। তুই আমাকে একটা কথা বল। সাইদ ভাইয়া কিছু বলেছে নিউজে আমার ও আইজার ছবি দেখে?”
“তুই এসব করিয়েছিস? আমিও তো বলি হঠাৎ করে এসব কীভাবে সামনে এলো। আবার খুশিও হয়েছিলাম আইজা লোকের এত ঘৃণা পাচ্ছে এই দেখে। আমার কি যে মজা লাগছিলোম এত শান্তি অনেক বছর হলো পাই নি।”
“এখনও তো কিছু শুরু হয় নি। যখন শুরু হবে তখন একেকজন তাদের অস্তিত্বের জন্য কাঁদতে বাধ্য হবে। সবাইকে তাদের কর্মের পরিণতি পেতে হবে। যা কষ্ট আমাদের দিয়েছে তার দশগুণ বেশি ফেরত পাবে। আমি যেদিন থেকে তাদের সামনে যাব সেদিন থেকে তাদের অশান্তির সময় শুরু হবে। আর আমাদের শান্তির।”
“কবে ওদের সামনে যাবি তুই?”
“জলদিই।”
“আর এই যাত্রায় আমার কি করতে হবে?”

ইনারা সুরভির কথা শুনে ঘাবড়ানো গলায় বলে, “তুই কিছু করবি না। এসব থেকে দূরে থাকবি তুই বুঝেছিস? আমি চাই না উনারা তোর কোনো ক্ষতি করুক।”
“একদম না। এই তিন বছর আমি হাতে হাত দিয়ে বসে থাকতে বাধ্য হয়েছিলাম। বাবা মা’য়ের কসমে আটকে ছিলাম। কিন্তু প্রিয়’র জন্য আমাকেও কিছু করতে দে প্লিজ।”
ইনারা কিছু মুহূর্ত ভাবল, “তুই একটা জিনিস করতে পারিস।”
“কী?”

উওর দেবার পূর্বেই সেখানে তৃতীয় ব্যক্তি উপস্থিত হয়ে যায়। ব্যক্তিটা সভ্য। সে ক্যাজুয়াল ড্রেসাপ করেই এসেছে। এসে সবার আগে সে দেখল ইনারাকে। তারপর সুরভিকে উদ্দেশ্য করে বলল, “তোমার দুপুরের খাবার ভালো লেগেছে তো?”
“অনেক।”
“কিছু লাগলে আমাকে বলবে।”
“আসলে দুলাভাই একটা জিনিস লাগতো।”
“অবশ্যই বলো।”
“ইনারার কাছে আপনার রান্নার অনেক প্রশংসা শুনেছি।”
সভ্য ভ্রু কপালে তুলে ইনারার দিকে তাকায়, “তাই না’কি? তোমার বান্ধবী আমার প্রশংসাও করতে জানে?”
ইনারা বিরক্তির সুরে বলে, “ভুলে করে দিয়েছিলাম একদিন।”
“না,” সুরভি জানায়, “অনেকদিনই করেছে। আপনার রান্না নিয়ে, গান নিয়ে, ব্যবহার নিয়ে, আপনি কত হ্যান্ডসাম তা নিয়েও…” ইনারা সম্পূর্ণ কথা শেষ হবার পূর্বেই সুরভির পেটে কনুই মেরে বলে, “ও একদমই মজা করছে। তাই না?”
ইনারার কঠিন দৃষ্টি দেখে সুরভি না চাইতেও মাথা নাড়ায়। সভ্য আড়চোখে ইনারার দিকে তাকায়, “বুঝেছি। এবার বলো, তুমি কি খাবে?”
“আপনি যা খাওয়াবেন তাই খাব। তবে যেহেতু সন্ধ্যা নাস্তার মধ্যে আমার বেকড পাস্তা ফেভারিট। তবে যা আপনার আমাকে খাওয়াতে মন চায়, আপনি তাও খাওয়াইতে পারেন। আর সাথে মিষ্টি কিছু হলে কথাই নেই।”
সভ্য মৃদু হাসে, “এক কথা বলো তো তোমার আর ইনারার মধ্যে এত মিল। কার থেকে কার উপর ইফেক্ট পড়েছে।”
“দুলাভাই দেখেন আমরা দুইজন বেস্টফ্রেন্ড আর আমরা দুইজনই পাগল। দুইজন একসাথে হয়ে পাগলপণা বেড়ে গেছে শুধু।”
“পাগলপণা কোনো শব্দ?”
“কি জানে? মুখে আসলো বলে দিলাম।”
সভ্য হাসে সুরভির কথা শুনে। বলে, “আচ্ছা শালীসাহেবা, আমি আপনার ফরমায়েশ এর খাবার তৈরি করছি।”

সভ্যের হাসি দেখে সুরভি চোখ দুটো বড় বড় করে নেয়। সভ্য যেতেই সে ইনারার হাত দেখে বলে, “দোস্ত সভ্য দুলাভাই হাসছে দেখছিস? তার হাসি কত সুন্দর! একদম কিলার স্মাইল। জানি আমার দুলাভাই, দুলাভাইয়ের দিকে নজর দেওয়া উচিত না। কিন্তু আমার হার্ট অ্যাটাক করার অবস্থা। ভালো হলো সে তার কোনো মিউজিক ভিডিও এবং ইন্টারভিউতে একবারও হাসে নি নাহলে কতজন যে ঘায়েল হয়ে যেত আহ।”
“হয়েছে তোর? এবার কাজের কথা বলি?”
সুরভি এখানো সভ্যের যাবার দিকে তাকিয়ে বলল, “হুম।”
ইনারা তাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে নেয়। বলে, “আমার দিকে তাকিয়ে কথা বল। তারা কতবছর আগে গান গাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। এখনো তোদের পাগলামি শেষ হয় নি।”
” পঞ্চসুর কেবল একটা ব্যান্ড না, অনুভূতি। ওদের নিয়ে পাগলামি ছাড়া যায়?”
“সে পঞ্চাসুর আমার জীবনের বারোটা বাজানোর কাজে জড়িত আছে।”
“জোহানের কথা বলছিস?”
“তোর সভ্যও আমাকে কম কষ্ট দেয় নি।”
“তোকে বলেছি উনার কোনো…”
“হ্যাঁ জানি তাই এ নিয়ে কথা বলব। কিন্তু তুই আগে আমার কথা শুন। আমি যেভাবে বলব সেভাবে করবি।”
.
.
দুইজন কথোপকথন শেষ করে বাড়ীর ভিতরে ঢুকে। দেখে সভ্য রান্নাঘরে কাজ করছে। সুরভি একপ্রকার টেনে নিয়ে যায় ইনারাকে। রান্নাঘরের যেয়ে সভ্যকে জিজ্ঞেস করে, ” দুলাভাই কোনো সাহায্য লাগবে?”
সভ্য পিছনে ফিরে তাকায়। মৃদু হাসে, ” না, পাস্তা বয়েল হচ্ছে। আর কেক ওভেনে দিব। বিশেষ কাজ নেই আর।”
সুরভি ইনারার কানের কাছে যেয়ে বলে, “দেখ তুই কত লাকি। আমার দুলাভাই রান্নাও পারে। কত জনের ভাগ্য এমন ভালো থাকে।”
“তোকে মাইর দিব আমি।”

সুরভি ভয়ে দ্রুত সরে আসলো তার কাছ থেকে। আবারও সভ্যকে আমতা-আমতা করে বলল, “দুলাভাই আরেকটা আবদার করব রাখবেন?”
“হ্যাঁ, বলো।”
“আমরা সকলে পঞ্চসুরকে অনেক মিস করি। আপনার গানকে অনেক মিস করি। স্বার্থপরের মতো বলছি কিন্তু প্লিজ একটা গান গাইবেন আজ।”
“আমি আর গান গাই না। ছেড়ে দিয়েছি।”

ইনারা বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকাল সভ্যের দিকে৷ সে অবাক। গান সভ্যের কেবল শখ ছিলো না, আবেগ ছিলো। ছোট বেলার থেকে গান সভ্যের জীবনের সাথে জড়িত। তাহলে কীভাবে সে গান গাওয়া ছাড়তে পারে?

সুরভি আবার বল, “প্লিজ দুলাভাই আমার জন্য না হলেও ইনারার জন্য। আপনাদের বিয়ে উপলক্ষে ইনারার জন্য একটা গান গেয়ে শুনান।”
সভ্য ইনারার দিকে একপলক তাকায়। তারপর মাথা নাড়ায়। সুরভি লাফিয়ে উঠে। সে বলে, “তাহলে আপনার রুমে যে গিটার দেখেছি তা নিয়ে আসি।”
সভ্য অনুমতি দিতেই সুরভি দৌড়ে যেয়ে গিটারটা নিয়ে আসে।

সভ্য গিটারটা হাতে পেয়ে কিছু মুহূর্ত তাকিয়ে থাকে সেদিকে, “অনেকবছর হলো গিটার বাজাই না। হাত ছুটে যেতে পারে।”
“দুলাভাই গিটারের তারে আপনার হাত লাগতেই আপনা-আপনি সুর মিলে যাবে। একবার ট্রাই তো করুন।”

সভ্যের তবুও একটু ভয় লাগে। পঞ্চসুর ছাড়ার পর থেকে তার আর গানের প্রতি চর্চা নেই। ঘাবড়ে যাচ্ছে সে। সম্ভবত এ ব্যাপারটা ইনারা ধরতে পারে। তাই সভ্য তার দিকে তাকাতেই সে পূর্বের সব ভুলে মৃদু হাসলো। বলল, “আমারও বিশ্বাস আপনি পারবেন। আপনি গীত থেকে ছুটে যেত্ব পারেন, গীত আপনার থেকে ছুটবে না।”

ইনারার এতটুকু কথায় যেন সভ্য আশ্বাস পেল। সে গিটারে হাত রেখে সুর বাঁধলো। আর গান ধরল,

আমি পারিনি তোমাকে, আপন করে রাখতে,
আমি পারিনি তোমাকে, আবার আমার করে রাখতে
তুমি বুঝোনি, আমি বলিনি, তুমি স্বপ্নতে কেন আসোনি
আমার অভিমান তোমাকে নিয়ে সব গেয়েছি
তুমি বুঝোনি, আমি বলিনি, তুমি স্বপ্নতে কেন আসোনি
আমার অভিমান তোমাকে নিয়ে সব গেয়েছি
গানে-গানে, সুরে-সুরে কত কথা বলেছি তোমাকে
তুমি বুঝোনি, বুঝোনি…..

সম্পূর্ণ গানটা সভ্য গাইলো ইনারার দিকে তাকিয়ে। তাদের দু’জনের দৃষ্টি বন্ধন ছিলো। কেউ এক মুহূর্তের জন্য চোখ ফেরায় নি। তাকিয়ে ছিলো একে অপরের দিকে। চোখে চোখে কিছু কথা হলো, যা মুখে বলা হয় নি। কেউ কি বুঝেছে এই কথা?

এই গানের প্রতিটি শব্দ জুড়ে তাদের অনুভূতি লুকানো। দুইজনেই নিজের অনুভূতিটা বুঝল। কিন্তু তার সামনের মানুষটার অনুভূতিটা বুঝতে পারলো না। এই অভিমানের সিন্দুকেই তাদের ভালোবাসাটা বন্দী হয়ে রইলো। কেউ জানলো না তার ভালোবাসার মানুষটির মনের কথা, কেউ বুঝলো না।

সভ্যের চোখ নম্র হয়ে এসেছিলো। গানটা যেদিন সে প্রথম শুনেছিল সেদিন কেবল ইনারার কথাই মনে করেছে সে। কিন্তু তার দেখা পাওয়ার ছিলো না। বুকে একরাশ বেদনার মেঘ জমেছিলো সেদিন। আজ ইনারা তার সামনে, কিন্তু এই বেদনার মেঘ বেড়েছে। এই মনে করে যে আবারও একদিন ইনারা তাকে ছেড়ে চলে যাবে। সে সাথে সাথে অন্যদিকে ফিরে তার গিটার একপাশে রাখে। বলে, “এইটুকুই মনে আছে।”
“অসাধারণ হয়েছে দুলাভাই।” সুরভি বলে, “আপনার কন্ঠ শুনে আমার কেমন যে অনুভূতি হচ্ছে আমি ভাষায় বুঝাতে পারব না।”
“শুনে ভালো লাগলো।”

সভ্য ফ্রীজ থেকে কিছু সবজি বের করে। তার গেঞ্জির হাতা কনুই পর্যন্ত তুলল এবং চপিং বোর্ড বের করে সবজি কাটার প্রিপারেশন নেয়। এমন সময় সুরভি আবার ইনারার কাছে যেয়ে বলে, “ভাই জীবনে আমার প্রথম তোর থেকে জ্বেলাস ফিল হচ্ছে।”
“কেন?”
“কেন মানে? ব্রো তোর কাছে সভ্য আছে। সে রান্না করতে পারে, গান গাইতে পারে, এত সুন্দর করে কথা বলতে পারে, আর এত হ্যান্ডসাম, হায়। চপিং বোর্ডে সবজি কাটার সময়ও কাওকে কীভাবে এত হট লাগতে পারে?”
“এখনো হয় নি তোর? ওর প্রশংসা আমার সামনে করার প্রয়োজন নেই।”
“কেন তোর জ্বেলাস ফিল হচ্ছে?”
“তোর সাথে? এক কাজ কর, ওকে তুই রেখে দে। যা।”
“ছিঃ! ছিঃ! ছিঃ! আমার দুলাভাই মানে আমার ভাইয়ের মতো। এসব কথা মুখে আনতে লজ্জা করে না তোর?”
“তাহলে বিরক্ত করিস না আমাকে।”
বলে ইনারা চলে গেল। যাবার পূর্বে সভ্যকে একবার দেখে নিলো। আসলেই তাকে আকর্ষণীয় দেখাচ্ছিলো। এক মুহূর্তের জন্য তার হৃদয়ের স্পন্দন থেমে গেল। তবুও সে দ্রুত নিজের নজর ঘুড়িয়ে অন্যদিকে তাকাতে সক্ষম হয়।

ইনারা যেতেই সুরভি বলে, “দুলাভাই আপনি কি জানেন ইনারার সাথে কি হয়েছে?”
সভ্য এক মুহূর্তের জন্য তার কাজ থামিয়ে সুরভীর দিকে ধ্যান দেয়, “জানি।”
“আসলে অতীতে যা হয়েছে তা ও স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছে না। আমি যখন আমেরিকায় প্রথম ওর সাথে ফোনে কথা বলছিলাম তখন আমি অবাক হয়েছিলাম। অচেনা লাগছিলো ওকে। ওর মাঝে কিছু একটা হারিয়ে গিয়েছিলো। ওর মাঝের ইনোসেন্সটা আর ছিলো না। হাসিতে আগের মতো মিষ্টি ভাব ছিলো না। চোখে খুশি ছিলো না।”
“আজও নেই। কিন্তু কিছু সময় আপনার পরিবর্তন হতে হয়।”
“হুম, কিছু কিছু ঘটনা সম্পূর্ণ মানুষের জীবটাকেই পরিবর্তন করে দেয়।” দীর্ঘশ্বাস ফেলে সুরভি। আবার জিজ্ঞেস করে, “দুলাভাই আমি জানি এটা আপনার ব্যক্তিগত বিষয় কিন্তু আমার একটা প্রশ্ন ছিলো আপনার কাছে উওর দিবেন?”

তখনই ইনারার ডাক পরে, “সুরভির বাচ্চা তুই আমার সাথে সময় কাটাতে আসছিস না ওই অসভ্যের সাথে। জলদি এদিকে আয়।”
সভ্য হাসে, “কিন্তু মেডামের হুমকি পাল্টালো না। তুমি যাও, নাহয় পরে আমার বকা খেতে হবে। আমি খাবার রেডি করে আনছি।”
সুরভি কিছু বলতে যেয়েও চুপ হয়ে গেল। ইনারা আবারও তাকে ডাকে। সে চলে যায়। তার আর জিজ্ঞেস করা হয় না সভ্য কী ভালোবাসে ইনারাকে?
.
.
দরজা খুলে সাইদ। তার মুখের ভাবভঙ্গি ভালো নয়। রাগে দেখাচ্ছে তাকে। সুরভি দরজাতে দাঁড়িয়ে ছিলো। সাইদকে দেখে তার মেজাজ বিগড়ে যায়। সাইদকে এ কয়বছর আর সহ্য করতে পারে না সে।
সাইদ তাকে জিজ্ঞেস করে, “কোথায় ছিলি তুই এতক্ষণ?”
সুরভি তার পাশ কাটিয়ে ঢুকে বাসায়। উওর দেয় না তার কথার।

সাইদ তার পিছু পিছু আসে। আবারও ধমক দিয়ে জিজ্ঞেস করে, “আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি। কোথায় ছিলি তুই?”
তার ধমক শুনে রুম থেকে তাদের বাবা মা বেরিয়ে আসে।
সুরভিও চুপ থাকার মেয়ে না। সে একই সুরে বলে, “তোমাকে আমার কৈফিয়ত দিতে হবে?”
“অবশ্যই দিতে হবে। ছিলি কোথায় তুই?”
“আমার যেখানে ইচ্ছা সেখানে ছিলাম। তোমার কী?”
“এতক্ষণ পর্যন্ত তো কারও সাথে বাহিরে থাকিস না তুই। কার সাথে ছিলি?”
“বিশেষ কারও সাথে।”
“বিশেষ কেউ!” বিস্মিত সুরে বলে সাইদ, “এই বিশেষ কারও জন্য তুই আহনাফের সাথে বিয়ের জন্য রাজি হচ্ছিস না?”
“বিশেষ কেউ ছেলে হতে হবে কেন? ফ্রেন্ড হতে পারে। মেয়ে হতে পারে।” স্বাভাবিক গলায় বলল সাইদ।
“তুই তো গত কয়েক বছর ধরে কোনো ফ্রেন্ডের সাথেই দেখা….” বলতে বলতে থেকে যায় সাইদ। তার চোখদুটো বড় হয়ে যায়। সে অবাক গলায় জিজ্ঞেস করে সুরভিকে, “তুই ইনারার সাথে দেখা করে এসেছিস।”
সুরভির গাঢ় হাসি আঁকে ঠোঁটের কোণে, “হ্যাঁ, ইনারার সাথে দেখা করে এসেছি।”

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে