অতঃপর দুজনে একা পর্ব-০৫

0
1360

#অতঃপর দুজনে একা – [০৫]
লাবিবা ওয়াহিদ
[কপি সম্পূর্ণ নিষেধ]

————————-
উৎসবমুখর পরিবেশটি হঠাৎ-ই থমথমে, স্তব্ধ হয়ে গেলো। হাসিতে ঝলমল করা সকলের মুখমন্ডল মুহূর্তেই বিমূঢ়, ভার হয়ে রইলো। নুরুল আলম সিঙ্গেল সোফায় শক্ত হয়ে বসে আছে। তার কাঁধ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে নীলার বাবা অর্থাৎ লুৎফর সাহেব। আয়েশা গিয়েছে জয়ার মায়ের সাথে ভেতরে। জয়ার মা অর্থাৎ আয়েশার মেজো বোন হঠাৎ-ই অসুস্থ হয়ে পরেন। বিপি হাই তার। ওয়াসিফের বাবা-মা সহ তাদের সকল গেস্ট অলরেডি চলে গিয়েছে। এই মুহূর্তে যারা আছে তারা সবাই আয়ন্তির আপনজন। মাহবিন সেই অবস্থাতেই রেলিঙ এর সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে৷ ঘাড়, দেহ কেমন উষ্ণতায় ছেয়ে আছে তার। সে দাঁড়িয়ে আছে আয়ন্তির কিছু বলার অপেক্ষায়। আয়ন্তি কিছু বলছে না দেখে কিছুটা বিরক্তিবোধও হলো বটে। আয়েশা হঠাৎ বের হলেন, মেয়ের কাছে এলেন। মেয়েরও তো কিছুটা সময়ের প্রয়োজন। জয়ার মায়ের কাছে তানজিলা, মুনিয়া ওরা আপাতত জয়ার মায়ের কাছে বসেছে৷ জয়ার বড়ো ভাই রিয়ন চোখ-মুখ শক্ত করে একপাশে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ দিয়ে যেন আ’ গুনের লাভা বের হচ্ছে তার। ঘটনাস্থলে সে ছিলো না। নুরুল আলমের আদেশে বাড়ির পেছনের দিকে কিছু অপূর্ণ কাজ সামলাতে গেছিলো। কিছু সময়ের ব্যবধানে যে এতকিছু ঘটে যাবে কে জানতো?

আয়ন্তি এবার মুখ খুললো। মায়ের দিকে তাকিয়ে এক চমৎকার হাসি দিলো। হাসতে হাসতে বাবার উদ্দেশ্যে বললো,
–“কী চমৎকার ঘটনা ঘটে গেলো তাই না আব্বু? ঠিক যেমনটা তুমি চেয়েছিলে ঠিক তেমন। তুমি তো কোনো ভুল করতেই পারো না তাই না আব্বু? যত ভুল, দোষ করে বসে আছি আমি আর আমার ভাইয়া। আরেকবার প্রমাণ হয়ে গেলো আব্বু, ভুল ছোট’রাই করে বেড়ায় না। বড়ো’রাও করে। ইভেন, তারা আরও বেশি বেশি করে। নিজের দাম্ভিকতা প্রমাণ করতে গিয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় তারা।”

আয়েশা মেয়েকে ধমক দিয়ে উঠলেন।
–“এটা কী ধরণের অ’ভদ্রতা আয়ন্তি? বাবার সাথে এভাবে কথা বলে কেউ?”
–“সুন্দর করেই তো বললাম আম্মু। কথায় কথায় ধমকিয়ে কী লাভ? এই ঘটনা না ঘটলে কখনো তোমরা আমায় বুঝতে? আমি তো আব্বুকে আগেও বলেছিলাম, ওয়াসিফ ক্যারেক্টারলেস একটি ছেলে। আমার কথায় আব্বু কী বলেছিলো জানো? আমি অন্য কাউকে পছন্দ করি দেখে ওয়াসিফকে ‘না’ করছি। ওয়াসিফের নামে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছি। আব্বুজান আমার এতই ওয়াসিফের ভক্ত হয়ে ওঠে যে নিজের ঘরের মেয়েকে এক নিমিষেই অবিশ্বাস করে ফেলে। ভালো চাকরি, ভালো স্ট্যাটাস দিয়ে কী মানুষকে বিচার করা যায় আম্মু? এজন্যই আমি আজকের দিনের জন্যে চুপ ছিলাম, যেন সবটা নিজের চোখে দেখো।”

নুরুল আলম নিরব। আয়েশাও নিরব হয়ে গেলেন। মেয়ের উপর দিয়ে কী ঝড় বয়ে গেছে তা মেয়ের কথাবার্তাতেই সব বোঝা যাচ্ছে। আয়ন্তি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে আবারও বলতে শুরু করলো,

–“আমার বড়ো ভাইয়ের কাঁধেও তো আব্বু এরকম এক ঘটনা চাপিয়ে দিয়েছিলো। একমাত্র কারণ ছিলো ভাইয়া অন্য কাউকে ভালোবাসতো। ভালোবাসা কী দোষের ছিলো আব্বু? জানো, সেদিন যদি আমি ভাইয়াকে পালাতে সাহায্য না করতাম তাহলে ওই আপুটা সুইসাইড করতো। নিজের দাম্ভিকতার জন্যে কী আরেক মেয়ের মৃ’ত্যুর দায়ভার তুমি নিতে আব্বু? বলো? চুপ কেন? সবসময় তো চুপ থেকে গেলাম, আর তুমি বলে গেলে। তাহলে আজ আমি মুখ খুললে তুমি কেন কিছু বলছো না?”

অন্যমনস্ক হয়ে নুরুল আলম সবটা শুনে গেলো নিরবে। আয়ন্তির ভাই নিলয়ের কথা শুনে আয়েশা মুখে আঁচল গুঁজে পুণরায় কাঁদছে। কতদিন হলো বড়ো ছেলেটার সাথে যোগাযোগ হয় না। কী করছে, কেমন আছে কিছুই জানা নেই!
–“যে নিজে খাল কেটে কুমির নিয়ে আসে তার জন্যে আজকের দিনটাই যথেষ্ট। বুঝে নাও, অপমানগুলাও লুফে নাও। আমার গায়ে কোনো দাগ লাগেনি আব্বু, আর লাগলেও তার দায়ভার তোমার কারণ তুমি অন্ধ হয়ে এসব করেছো। কাল থেকে তুমি তোমার প্রাসাদ নিয়ে থেকো। আমি এ বাড়িতে আর থাকছি না!”

বলেই আয়ন্তি চোখ মুছতে মুছতে উপরে চলে গেলো। আয়েশা দেখলো মাহবিনকে। বেশ চমকালোও বটে। মাহবিন এখানে কী করছে? আয়েশা নাক টেনে চোখ মুছলো। এগিয়ে গেলো মাহবিনের দিকে। আয়েশার খুব ইচ্ছে হলো চোখে-মুখে একরাশ রাগ ফুটিয়ে তুলতে। কিন্তু মাহবিনকে দেখলে কেন যেন নিলয়ের কথা মনে পরে যায়। আয়েশা মাহবিনের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলে,
–“তোমার বন্ধুরা তো বেরিয়ে গেলো কখনই? তুমি এখনো যাওনি? চোখ-মুখ এমন লাগছে কেন?”

মাহবিন বেশ কিছুক্ষণ আয়েশার দিকে তাকিয়ে বলে,
–“একচুয়ালি, আমি সিক!”
–“এমা? কী হয়েছে?”

মাহবিনের হাত ধরতেই চমকে গেলো। জ্বরে হাত গরম হয়ে আছে। আয়েশা চোখ বড়ো বড়ো করে বললো,
–“রুমে গিয়ে রেস্ট করো। আমি খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি!”
–“কিন্তু আন্টি.. আমি কীভাবে এই বাড়িতে থাকবো? সার্ভেন্ট তো আমার লাগেজ গুছিয়ে দিচ্ছে। আমি জাস্ট রেডি হয়ে চলে যাবো। আসছি!”

মাহবিন উপরে চলে গেলো। রুমে আসতেই দেখলো সার্ভেন্টের লাগেজ গোছানো শেষ। সার্ভেন্টকে কিছু বকশিশ দিয়ে বিদায় করলো মাহবিন। অতঃপর ফ্রেশ হয়ে এসে কয়েক মিনিটেই রেডি হয়ে গেলো। ফুল রেডি হয়ে রুম থেকে বের হতেই আয়ন্তির মুখোমুখি পরলো। আয়ন্তির চোখ-মুখ অসম্ভব লাল। আয়ন্তিও এঙ্গেজমেন্টের ড্রেস চেঞ্জ করে নরমাল সেলোয়ার-কামিজ পরেছে। মাহবিনকে ফর্মাল সুটে দেখে কিছুড়া চমকালো সে। হাতের লাগেজটাও নজরে এলো। আয়ন্তি আমতা আমতা করে বললো,
–“চলে যাচ্ছেন? জ্বর কমেছে?”

মাহবিন ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেললো। অতঃপর বাঁকা হাসি দিয়ে বলে,
–“এত মেহমানদারীর জন্যে ধন্যবাদ। যদিও আমি মেহমানদারিটা এক্সেপ্ট করি না!”
আয়ন্তি মিইয়ে যাওয়া গলায় বলে,
–“কেন?”
–“ওয়াসিফ!”

মাহবিন পুণরায় হাসলো। আয়ন্তি নিরবে চেয়ে রইলো মাহবিনের পানে। মাহবিন ব্যস্ত ভঙ্গিতে হাতঘড়ি দেখতে দেখতে বলে,
–“লেট হচ্ছে, আসছি। ভালো থেকো। পরিচিত হয়ে ভালো লাগলো!”

মাহবিন চলে যেতে লাগলো। আয়ন্তি পিছু ডাক দিলো। মাহবিন থেমে যায়। পিছে ফিরে তাকায় আয়ন্তির পানে। আয়ন্তি ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে শুধায়,
–“আর কী কখনো হবে না দেখা আমাদের?”

মাহবিন শীতল চাহনি নিক্ষেপ করলো। হাসার চেষ্টা করে বলে,
–“ইচ্ছে এবং সঠিক নিয়্যত থাকলে কোনো কিছুই অসম্ভব না।”

মাহবিন যেন মিলিয়ে গেলো কিছু মুহূর্তের মাঝে। আয়ন্তির চোখ পুণরায় ঝাপসা হয়ে এলো। চোখের কোণ বেয়ে অঝোর ধারায় জল গড়াতে লাগলো। মাহবিন যেন তার থেকে হারিয়ে গেলো, বহুদূর। আয়ন্তি কাঁদতে কাঁদতে পাশের দেয়াল লেপ্টে ধপ করে বসে পরে। মাঝ রাস্তায় মাহবিন যেন তাকে ছিন্ন করে চলে গেলো, চূর্ণ-বিচূর্ণ করে চলে গেলো।

মিনিটখানেকের মাঝে কাঁধে কারো স্পর্শ উপলব্ধি করলো। আয়ন্তি ক্ষণে ক্ষণে নাক টেনে উপরে তাকালো। রিয়ন মলিন চেহারায় দাঁড়িয়ে আছে আয়ন্তির মুখপানে তাকিয়ে। আয়ন্তির ক্রন্দনরত মুখশ্রী পর্যবেক্ষণ করে বলে,
–“এভাবে কাঁদছিস কেন তুই?”

হাঁটু ভেঙ্গে আয়ন্তির পাশে বসলো রিয়ন। আয়ন্তি রিয়নকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। রিয়ন আয়ন্তির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে তাকে শান্ত করার আপ্রাণ চেষ্টা চালালো। আয়ন্তির কান্না এবার থেমে থেমে আসছে। রিয়ন মলিন কন্ঠে বললো,
–“থামার ইচ্ছে নেই তোর? এত কাঁদে কেউ? জয়াকে আমার বোন বলতেও লজ্জা লাগে। ওর জন্যে তোর চোখের পানি সহ্য করতে হচ্ছে আমায়!”

আয়ন্তি নাক টেনে বলে,
–“আমার জয়ার উপর কোনো অভিযোগ নেই ভাইয়া।”
–“তাহলে এত কিসের কান্না? মা অসুস্থ, খালাও কেমন করছে। তুই অশান্ত থাকলে চলে?”
–“তুমি বুঝবে না ভাইয়া। এই কান্নাটা আমার ভেতরটাকে হালকা করার কান্না।”
–“হুম বুঝেছি। খুব বড়ো হয়ে গেছিস। রুমে যা, আমি খাবার আনছি।”

আয়ন্তি রিয়নকে ছাড়তে ছাড়তে বলে,
–“কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না!”
–“দেবো এক চ’ড়! যা রুমে। আমি তোর থেকে জানতে চেয়েছি?”

আয়ন্তি মুখটা থমথমে করে রুমের দিকে চলে যায়। মিনমিন করে বলতে লাগে,
–“রিয়ন ভাই সারাদিন শুধু ধমকানোর তালেই থাকে।”

———————
রাত যখন গভীর, তখন একপ্রকার দৌড়ে নিলা আয়ন্তির রুমে আসে। আয়ন্তি তখন বারান্দায় দাঁড়িয়ে মাহবিনকে অনুভব করছে। বারংবার পাশের বারান্দায় নজর বুলাচ্ছে। মাহবিন সেদিন যখন বিয়ে ভাঙ্গার কথা বলেছিলো তখন আয়ন্তি জানতে চেয়েছিলো কারণ। মাহবিন আয়ন্তির দিকে শীতল চাহনি বুলিয়ে বলেছিলো,
–“হঠাৎ ইচ্ছে হলো তোমার জন্যে ভালো কিছু করার। সেই ভালো কিছু করার ইচ্ছে থেকেই বলছি ওয়াসিফের সাথে বিয়েটা ভেঙ্গে দাও, তোমার জন্যে ও পার্ফেক্ট না।”

নিলার দেয়া ধাক্কাতে আয়ন্তি বাস্তবে ফিরে আসে। ঘনঘন চোখে পাঁপড়ি ফেলে বলে,
–“কী হলো?”
–“জয়াপি ফেসবুকে ছবি পোস্ট করেছে, ওয়াসিফ ভাইয়ার সাথে।”
–“তো?”
–“তো মানে? দেখবি না? ও তো চরম খা’ চ্চর!”

আয়ন্তি হাসে। নিঃশব্দময় হাসি।
–“দেখতে ইচ্ছে করছে না!”
–“আচ্ছা। দেখা লাগবে না। ওর চেহারা তো সা’ পের মতোন। দেখে কী কাজ?”

পুণরায় হাসে আয়ন্তি।
–“আচ্ছা, এখন আয়। দুজনে পা মেলে বসি!”
–“শীত করছে তো এখানে!”
–“কম্বলটা নিয়ে আয়, তুই আর আমি আড্ডা দিবো আজ!”
–“বাকিরা?”
–“ওরা ক্লান্ত। জ্বালিয়ে কাজ নেই!”

নিলা দেরী না করে দুটো কম্বল আনলো। কম্বল গায়ে জড়িয়ে দু’জনেই ফ্লোরে পা ছড়িতে বসলো। আয়ন্তি চোখ বুজে বুক ভরে নিঃশ্বাস ফেললো কিছুক্ষণ। নিলা হঠাৎ বলে ওঠে,
–“জানিস আয়ন্তি। তখন রিয়ন ভাই মাহবিন ভাইয়ের সাথে ঝামেলা করেছিলো!”

চট করে চোখ খুলে যায় আয়ন্তির। তড়িৎ নিলার পানে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আয়ন্তি। ভ্রু কুচকে বেশ উত্তেজিত ভঙ্গিতে বলে,
–“মানে? কী হয়েছিলো? আমি কেন জানলাম না?”
–“তুই তো বাড়ির ভেতরে ছিলি। জানবি কী করে? মাহবিন ভাইয়াকে অনেক কথা শুনিয়েছে রিয়ন ভাই৷ আমার তো মাহবিন ভাইয়াকে মোটেও ওয়াসিফের মতোন লাগে না। তাহলে কেন রিয়ন ভাই মাহবিন ভাইয়াকে ধমকালো বলো তো? আজব! সবসময় বেশি বেশি।

আয়ন্তি চুপ করে কিছুক্ষণ বসে রয়। থম মেরে, নিস্তেজ ভঙ্গিতে। ঘনঘন পলক ফেলে মিনমিন স্বরে বলে ওঠে,
–“এ তুমি কী করলে রিয়ন ভাই!”
–“কিছু বললি?”

আয়ন্তি চুপ করে রইলো। বেশ কিছুক্ষণ নিরবফা চললো ওদের মাঝে। আয়ন্তির মাথায় হঠাৎ-ই অনেক ভাবনা চলে আসে। এক কঠিন সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলে। আয়ন্তি নিরবতা ভাঙলো,
–“খালা কেমন আছে?”
–“ভালো আছে। তখন তো দেখে আসলাম ঘুমোচ্ছে।”
–“তুই ভার্সিটির জন্যে বাসা ভাড়া নিয়েছিস না নিলা?”
–“হ্যাঁ।”
–“তোর সাথে আমি থাকতে পারবো? তোর ফ্ল্যাট থেকে ভার্সিটি আমার কাছাকাছি হবে।”

নিলা চমকে তাকালো আয়ন্তির পানে। কী স’র্বনাশা কথাবার্তা। নুরুল আলম তো মরে গেলেও আয়ন্তিকে দূরে থাকতে দিবে না, তাহলে নিলার সাথে ফ্ল্যাটে কেমনে থাকবে? তবে নিলার নিজের দিকটা ভাবতে গেলে ভালোই হবে। নিলা বাসাটায় একা থাকে। কোনো বান্ধুবীও তার সাথে থাকে না। বলা তো যায় না কখন কী বিপদ হয়? তাই আয়ন্তি আসলে তার জন্যে ভালোই হবে। ভিষণ ভালো। নিলা হাসিমুখে বললো,
–“আচ্ছা, আমার জন্যে তো ভালোই হবে। একা, একা আর কতদিন? আমারই তো কেমন একা ভয় লাগে!”
–“কালই চলে যাবো, আমি। ব্যাপার না।”
–“খালু রাজি হবে?”
–“তোর খালুর মতামত নিয়ে তো আমি সিদ্ধান্ত নেইনি? খালুর কথা জানার ইচ্ছে হলে খালুকে নিয়ে থাক, আমি অন্যকোথাও দেখবো!”
–“এমন করে বলিস কেন?”

আয়ন্তি কিছু বললো না। পেছনের থাই গ্লাসে চোখ বুজে মাথা এলিয়ে দিলো।

——————————
ভোরের আলোয় আকাশ আলোকিত। সূর্যের দেখা এখনো মেলেনি ওই আকাশ রাজ্যে। রাতের অন্ধকার গ্রাস করে আলোরা তাদের উৎপত্তি ঘটাচ্ছে। একসময় আঁধারকে পুরোপুরি গ্রাস করে আলোকিত হতে শুরু করে ধরনী। চারিপাশে পাখিদের মৃদু কিচিরমিচিরের ধ্বনি। চোখে আলোর ঝাপটা পরতেই আয়ন্তির ভ্রু-দ্বয় কুচকে এলো। গভীর ঘুমটাও হালকা হয়ে এলো। বেশ কিছু সময় বাদে বারান্দার রেলিঙে এক নাম না জানা পাখি এসে বসলো। বিরক্তিকর শব্দে সে ডেকেই চলেছে। এবার আয়ন্তির হালকা ঘুমটা পুরোপুরি ভেঙ্গে গেলো। কপালে পরলো বিরক্তির ভাঁজ। পিটপিট করে চোখ মেলে তাকালো আয়ন্তি। রাতে যেভাবে বসেছিলো সেভাবেই ঘুমিয়ে পরেছিলো সে। চোখ কচলে আড়মোড়া ভাঙ্গে আয়ন্তি। পাশে তাকিয়ে দেখে নিলা নেই। হাই তুলতে তুলতে উঠে দাঁড়ায় আয়ন্তি। নাকটা কেমন খচখচ করছে। ঠান্ডা লাগার আগাম বার্তা। আয়ন্তি রুমে আসতেই দেখলো নিলা তার বিছানায় বেঘোরে ঘুমোচ্ছে। আয়ন্তি দেয়াল ঘড়িতে নজর বুলিয়ে ওয়াশরুম চলে গেলো। ওয়াশরুম থেকে এসে চেয়ারে উঠে আলমারির উপর থেকে বড়ো লাগেজটা নামালো সে। লাগেজ খুলে জামা-কাপড়, সমস্ত দরকারি জিনিস ঢুকালো। অতঃপর বই রাখলো আরেক মাঝারো সাইজের লাগেজে। নিলাকেও জাগিয়ে তুললো আয়ন্তি। তার তাড়াতাড়ি বের হতে হবে। এমনিতেই বেলা গড়াবে নুরুল আলম এবং আয়েশাকে বোঝাতে বোঝাতে।

নিলা চোখ কচলাতে কচলাতে বলে,
–“ঘুমালাম-ই তো কয়েক ঘন্টা।”
–“নিজ ফ্ল্যাটে ফিরে শান্তির ঘুম দিশ। এখন নিজের জামা-কাপড় গুছিয়ে জলদি তৈরি হয়ে নে!”

নিলা হাই তুলতে তুলতে ওয়াশরুম ঢুকে গেলো। আয়ন্তি নিজ চুলে চিরুনি বুলিয়ে চুল খোপা করে ফেলে এবং মাথা ওড়নায় আবৃত করে। নিলা আসতেই জামা-কাপড় গোছানোর কাজে লাগিয়ে দেয় আয়ন্তি। অতঃপর আয়ন্তি রুম থেকে বেরিয়ে পরলো, বাবার রুমের উদ্দেশ্যে।

~চলবে, ইনশাল্লাহ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে