অতঃপর দুজনে একা পর্ব-২৪(শেষ পর্ব)

0
1931

#অতঃপর দুজনে একা – [শেষাংশ]
লাবিবা ওয়াহিদ

—————————
অফিসে কাজে ব্যস্ত রিয়ন। ব্যস্ত ভঙ্গিতে কী-বোর্ডে আঙুল চালাচ্ছে সে। একটা জরুরি মেইল লিখছে সে। এমতাবস্থায় কর্কশ শব্দে তাঁর ফোনটি বেজে উঠলো। টাইপিং এর গতিবেগ কিছুটা কমে এলো। রিয়ন অন্যমনস্ক হয়ে পরলো। পরমুহূর্তে, কিছুটা বিরক্ত হয়ে পরলো ফোনের প্রতি। কে এই অসময়ে ফোন করে তাকে বিরক্ত করছে? অদ্ভুত তো! ফোনের ওপাশের মানুষটির কী মিনিমাম কমনসেন্স বলতে কিছু নেই? মনিটরে নজর বন্দি রেখেই এক হাতে সেলফোনের পাওয়ার বাটন টিপে দিলো। অতঃপর আবার নিজের কাজে মনোযোগ দিলো৷ অবশেষ কিছু শব্দ লিখে পুরো মেইলটিতে একবার চোখ বুলিয়ে নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে মেইলটি পাঠিয়ে দিলো। ঠিক তৎক্ষণাৎ রিয়নের ফোন বেজে ওঠে। রিয়ন হাত টানটান করে সেলফোনটি হাতে নিলো। স্ক্রিনে চোখ বুলিয়ে বেশ চমকালো সে। রিয়নের উড বি কল করছে। মেয়েটির নাম সুজানা। রিয়ন তাঁর নাম্বার সেভ করায় সহজেই চিনতে পারলো৷ কিন্তু এই সময়ে মেয়েটা তাকে কল কেন করলো? বেশ অদ্ভুত ব্যাপার তো। সুজানা এবং রিয়নের বিয়েটা আগামী মাসের মাঝামাঝিতে হবে৷ তাও দু’জনের মধ্যে সেরকম পরিচিতি নেই। রিয়ন আকাশ-পাতাল ভাবতে ভাবতে কল রিসিভ করলো। প্রথমেই ওপাশ থেকে ভেসে আসে সুরেলা কন্ঠের সালাম। রিয়ন অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে সালামের উত্তর দিলো।
–“বিরক্ত করে ফেললাম আপনাকে?”
–“না, না। কী বলছো!”
–“তাহলে কল রিসিভ করছিলেন না যে?”
–“অফিসে আছি, কাজে ব্যস্ত ছিলাম। তাই ফোনে মনোযোগ ছিলো না।”
–“ওহ, এক্সট্রিমলি সরি।”
–“সরির প্রয়োজন নেই। ইট’স ওকে। হঠাৎ কল দিলে যে?”

ওপাশ থেকে কিছুক্ষণ নিরবতা শোনালো। রিয়ন চুপ করে সেই নিরবতা শুনছে। হঠাৎ সুজানা মৃদু স্বরে আওড়ায়,
–“কোনো একজনের তো আমার সাথে যোগাযোগ করার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই, তাই পন্থা না পেয়ে আমাকেই কল দিতে হলো।”

রিয়ন বুঝেছে সুজানার বলা ধাঁধার মানে। এমতাবস্থায় রিয়নের নিজেরই খারাপ লাগতে শুরু করলো। আসলেই সে ঠিকমতো খবর নেয় না। পরিচিত হয় না। এখনো যে তাঁর মনে অন্য কারো বসবাস। বারবার ভুলে যাচ্ছে তার জীবনে একজনের বসবাস শুরু হয়ে গিয়েছে। তাকে ঘিরেই তার সুখ-দুঃখ মিশে আছে। রিয়নের খারাপ লাগা থেকেই সিদ্ধান্ত নিলো কিছু। রিয়নের হঠাৎ চুপ হয়ে যাওয়ায় সুজানা বলে ওঠে,
–“শুনতে পাচ্ছেন আপনি? হ্যালো?”
–“চলো, আজ কোথাও ঘুরে আসি। ঘুরলে আমার ম্যামের অভিমান কাটবে তো?”

সুজানার মুখে হাসি ফুটলো। বিশ্বজয়ের হাসি। এই আনন্দ সে কোথায় প্রকাশ করবে খুঁজে পেলো না। খুশিতে গদগদ হয়ে বললো,
–“সেটা তো সময়-ই বলবে। আপনি যখন ফ্রী হবেন আমায় কল দিয়েন। আমি তৈরি হয়ে থাকবো।”

রিয়ন বেশ চমকালো। সাথে হাসলোও। সে জানে অলরেডি সুজানার অভিমান কেটে গেছে। তাছাড়া রিয়নের কাজেও সে ব্যাঘাত ঘটায়নি বরং বলেছে রিয়নের জন্যে সে অপেক্ষা করবে। এরকম জীবনসঙ্গীনি যে রিয়ন পাবে ভাবতেই তার কোথাও খুব প্রশান্তি হচ্ছে।

—————
মাহবিন গলায় টাই বাঁধছে আর আয়ন্তি বিছানায় ছড়ানো শাড়িগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে। মুখটা তাঁর ঘুচে আছে। অসহায় চাহনিতে শাড়িগুলোতে নজর বুলাচ্ছে। মাহবিন আয়নায় বারবার আয়ন্তির অবস্থা দেখছে। আয়ন্তি মুখশ্রী আঁধার করে কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো,
–“এখন থেকে আমায় শাড়ি পরতে হবে?”

মাহবিন যেন জানতো আয়ন্তি তাকে এই প্রশ্নই করবে। তাই ফিচেল হাসি দিয়ে বলে,
–“শাড়িতে তোমায় বড্ড বউ বউ লাগে। তাই উপায় নেই, পরতেই হবে।”
–“এমন কেন করছেন?”
–“ভালোবাসি তাই।”

বলেই আয়ন্তির কাছে এসে আয়ন্তির কোমড় জড়িয়ে আয়ন্তির কপালে অধর ছোঁয়ালো। সেই শীতল ছোঁয়ায় আয়ন্তি শিউরে ওঠে। মাহবিন আয়ন্তির গালে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
–“ফিরে এসে যেন শাড়ি পরিহিত দেখি। নয়তো নিজ হাতে জোর করে শাড়ি পরাই দিবো। এখন সিদ্ধান্ত তোমার। আসছি।”

বলেই মাহবিন চলে গেলো। আয়ন্তি চেয়ে রয় মাহবিনের যাওয়ার পানে। আজও মাহবিনকে বিদায় দিতে পারলো না সে। মাহবিনের স্পর্শে যে আজও অবশ হয়ে গিয়েছে সে। মাহবিন- আয়ন্তির বিয়ে হয়েছে আজ প্রায় দেড় মাস৷ এতগুলো দিন কেটে গেলেও আয়ন্তির নিজেকে, মাহবিনের স্পর্শকে সেই প্রথমদিনের মতোই মনে হয়! একদম নতুন। নতুন বাড়িতে তাসলিমা ফুপি, মাহবিন, রিহাব এবং শায়লাকে নিয়ে বেশ আছে আয়ন্তি। শায়লাকে মাহবিন বিয়ে দিতে চেয়েছিলো কিন্তু শায়লা তাকে না করে দেয় এবং বলে দু’এক বছর চাকরি করতে চায় সে। তারপর বিয়ের কথা ভাববে। মাহবিন অবশ্য আর দ্বিমত করেনি। বোন চাকরি করতে চাইছে, করুক। হুট করে তার অনিচ্ছায় বিয়ের বোঝা ঘাড়ে চাপাতে চায় না সে। মাহবিন মনে-প্রাণে বিশ্বাস করে তাঁর বোনকে। সেই ভাবেই যে বড়ো করেছে দুই ভাই-বোনকে। সোনিয়া-শাকিল যখন মাহবিনদের বাড়িতে নিজ অধিকার ফলাচ্ছিলো, হস্তক্ষেপ করছিলো তখন মাহবিন চাইলেই ওদের বাড়ি থেকে বের করে দিতে পারতো। কিন্তু সে তা করেনি তার ভাই-বোন দুটোর জন্যে। মাহবিন অপেক্ষায় ছিলো সঠিক সময়ের, যখন শায়লা এবং রিহাব ম্যাচিওর হবে, সবটা বুঝবে তখনই তাদের বাবা-মা নামক মানুষ দুজনের আসল রূপ দেখাতে হবে। নয়তো এমন হতো যে মাহবিন রিহাব এবং শায়লার চোখে খারাপ হয়ে যেত। মাহবিন চায়নি এরকমটা। দীর্ঘ দিনের পরিকল্পনা করা ছিলো তার। সেই পরিকল্পনা ফলাতে অপেক্ষা করতে হয়েছিলো বছরের পর বছর। সুজন ঠিক-ই বলে, মাহবিন হচ্ছে সাইলেন্ট কিলার। ঠান্ডা মাথায় খু’ ন করে দেবার মতো লোক মাহবিন। তাকে দুর্বল ভাবা মানে নিজে বো’ কার অস্কার প্রাপ্ত।

——————-
নীলা গালে হাত দিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে বসে আছে। আজ রিহাব দেখা করতে চেয়েছে। তাই নীলা একটি ক্যাফেতে বসে আছে। তবে আজ নীলার মন ভালো নেই। হঠাৎ নিলয়ের জন্যে মন কেমন করছে তার। প্রথম প্রেম তো, মাঝেমধ্যে হুট করা মনে পরে যায়। চাইলেও কেউ ভুলতে পারে না। মনের এক কোণে তার এক টুকরো অস্তিত্ব থেকে যায়। এর মাঝেই রিহাব চলে আসলো। হাসি হাসি মুখে নীলাকে পেছন থেকে ভয় দেখালো। নীলা চমকে পিছে ফিরে তাকালো। রিহাব ফিচেল হেসে নীলার অপজিটে গিয়ে বসতে বসতে বললো,
–“আমার কথা ভাবছিলে বুঝি?”
–“দেরী করলে কেন?”

রিহাব কান ধরলো। হাসার চেষ্টা করে বললো,
–“সরি, বাইকের টায়ার পাঞ্চার হয়ে গেছিলো। বেশি অপেক্ষা করালাম বুঝি?”
–“না, ঠিক তা নয়।”
–“আচ্ছা, কেন ডেকে পাঠালাম সেটা জানতে চাইবে না?”

নীলা জিজ্ঞাসা সূচক নয়নে তাকালো রিহাবের পানে। রিহাব তার হাসি বজায় রেখে নীলার হাত নিজের মুঠোত নিয়ে বলে,
–“অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে। আজ তোমার বাসায় প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। উইল ইউ ম্যারি মি নীলা?”

অতীত, স্মৃতি নিমিষেই যেন সব ভুলে গেলো নীলা। রিহাবের এরূপ উক্তিতে তার চোখ ঝাপসা হয়ে এসেছে। এরকম একটি মুহূর্ত তাকে এতটা আনন্দ দিবে সে কল্পনাও করতে পারেনি। সত্যি জীবন বুঝি এতটা রঙিন হতে পারে? নীলার তো জানা ছিলো না। এই রঙ কেন আগে নীলার জীবনে আসেনি? নীলার অশ্রু গাল ছুঁতেই রিহাব সপ্তপর্ণে তা মুছে দিয়ে ব্যস্ত ভঙ্গিতে বললো,
–“আহা, কাঁদছো কেন? খুশির সংবাদ-ই তো দিলাম। দেখো কান্ড!”

নীলা হাসলো। হাসি বজায় রেখে চোখে জল নিয়েই বললো,
–“জানো রিহাব, তুমি আমার জীবনের এক রঙিন বৃষ্টি। সেই বৃষ্টি, যেটা প্রকৃতির মতো করে আমায় সতেজ করেছে। নতুন প্রাণ দিয়েছে। সত্যি তুমি খুব ভালো রিহাব। আমি স্বীকার করতে বাধ্য, আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি। তুমি ব্যতীত আমি অন্য পন্থা এখন এই সাদা-কালো পৃথিবীতে পাই না। তুমি পাশে থাকলেই আমার দুনিয়া রঙিন হয়। তোমায় সবসময় পাশে চাই।”

নীলার এলোমেলো কথা রিহাব মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রয়। হঠাৎ উঠে নীলার কাছে গিয়ে নীলাকে জড়িয়ে ধরে মৃদু কন্ঠে বলে ওঠে,
–“থাকবো। আমি নীল পাখির পাশেই থাকবো। আমিও ভালোবাসি। খুব ভালোবাসি।

——————–
রিয়ন এবং সুজানার বিয়ে হয়েছে আজ এক সপ্তাহ হয়েছে। আজ বিকালের দিকে দু’জন একসাথে ঘুরতে বেরিয়েছে। রিয়ন চেষ্টা করছে সুজানাকে সর্বোচ্চ সুখ দেয়ার। রিয়ন চায় না নিজের গাফিলতির কারণে সুজানা কোনোরকম কষ্ট পাক। হয়তো ভালোবাসতে দেরী হবে তাই বলে সঠিক সম্মান দিবে না তা তো নয়। সুজানা আজ বেশ খুশি। বিয়ের পর প্রথম ঘুরতে বেরিয়েছে সে। তাও নিজের স্বামীর সঙ্গে। এর চেয়ে আনন্দদায়ক কিছু হতে পারে কিনা তা সুজানার জানা নেই। সুজানা রিয়নের পাশে হাঁটতে হাঁটতে মৃদু স্বরে বললো,
–“ঘটক সাহেব যখন আপনার ছবি দেখালো তখনো বুঝিনি আপনি আমায় রঙিন জীবন দিবেন। আমার জীবনে প্রতিটি মুহূর্তে রঙ ছুঁয়ে যাবেন। অতঃপর দুজনে একা হয়েছি। একান্ত কাছাকাছি হয়েছি তখনই আপনাকে আরও গাঢ় ভাবে চিনতে শুরু করলাম, উপলব্ধি করতে পারলাম।”
–“আমি তোমায় একটি কথা জানাতে চাই সুজানা। আমি চাই না তোমার থেকে কিছু লুকাতে।”

সুজানা চট করে থেমে যায়। উৎসুক নজরে রিয়নের পানে তাকিয়ে বলে,
–“কী? বলুন, আমি শুনছি।”
–“আমি এক মেয়েকে ভালোবাসতাম।”
সুজানা পিটপিট করে কিছুক্ষণ রিয়নের পানে তাকিয়ে বলে,
–“সমস্যা নেই তো। প্রত্যেক মানুষের জীবনেই প্রেম আসে। আমি নাহয় আপনার দ্বিতীয় প্রেম হলাম?”
–“তুমি কষ্ট পাওনি?”
–“পেয়েছি। তবে আমি তো চাইলেই অতীতে গিয়ে সব বদলাতে পারবো না। তাই আপাতত বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবছি। আমি আপনার বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ এ থাকতে চাই রিয়ন। সেই অনুমতি কী দিবেন?”

রিয়ন আলতো হেসে সুজানার গাল টেনে বললো,
–“কবুল বলার মাধ্যমেই অনুমতি পেয়ে গেছিলে। এখন আবার আলাদা করে অনুমতি চেয়ে লাভ কী?”
সুজানাও হাসলো। লাজুক হাসি। হঠাৎ কোথা থেকে জয়া এসে রিয়নকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো। সুজানা এক নিমিষের জন্যে থমকে যায় রিয়নের বুকে অন্য মেয়েকে দেখে। সুজানা জয়ার চেহারা দেখতে পায়নি। ঘটনা এতই দ্রুত ঘটেছে যে কেউ-ই কিছু বুঝে উঠতে পারেনি। মস্তিষ্ক ঘটনাটি নিতে কিছুটা সময় নেয়৷ সুজানা চোখ বড়ো বড়ো করে জয়ার দিকে তাকিয়ে রয়। জয়া কাঁদতে কাঁদতে বলে,
–“ওয়াসিফ আমায় ঠকিয়েছে ভাইয়া। ওয়াসিফ কানাডাতে এক বিদেশিনীকে বিয়ে করে নিয়েছে। আমার সকল স্বপ্ন এক নিমিষেই শেষ হয়ে গেছে ভাই। আমি আমার ভুল বুঝতে পারছি, খুব করে বুঝতে পারছি। আমায় ক্ষমা করে দাও। তোমার সাথে আমায় ফিরিয়ে নিয়ে যাও ভাইয়া।”

সুজানা একবার রিয়নের দিকে তাকাচ্ছে তো একবার জয়ার দিকে। রিয়নের চোখ-মুখ লাল। চাইলেও কিছু বলতে পারছে না। যতই হোক, জয়া তার ছোট বোন। চাইলেও ফেলে দিতে পারে না। সুজানা বুঝলো এটাই রিয়নের সেই বোন যে পালিয়ে গিয়েছিলো। রিয়ন তাকে বলেছে জয়ার ব্যাপারে। রিয়ন জয়ার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বেশ রুদ্ধ স্বরে বললো,
–“তোর অপরাধের ক্ষমা তুই পাবি না। তবে আমি তোকে বিয়ে দিবো। তোকে বাড়ি উঠিয়ে আবার সম্মান-হানি করার কোনো মানেই হয় না।”

সেদিন জয়াকে নিজেদের সাথে বাড়ি নিয়ে যায় রিয়ন। মা-বাবার সাথে কথা বলে পরেরদিন-ই এক চল্লিশ বছর বয়সী লোকের সাথে জয়ার বিয়ে দিয়ে দেয়। জয়া যথেষ্ট রূপবতী। তাই জয়া পালিয়ে গেছে শুনেও লোকটি দ্বিমত করেনি। এছাড়া লোকটিরও বউ মরেছে আজ বছর পাঁচেক। তাঁরও তো ইচ্ছে হয় নতুন বউয়ের। লোকটির দুটো সন্তানও আছে। জয়া তাঁর পাপের শাস্তি এভাবে পাবে ভাবতে পারেনি। মা-বাবার দিকে তাকিয়েও ফায়দা হলো না। জয়ার প্রতি রাগ তাঁরা এখনো মনের মধ্যে পুষে রেখেছে। জয়া সেদিন কিছু বলেনি। সে ওইরকম ভুল না করলে আর ওয়াসিফের মতোন জা’ নো’ য়ারকে সুযোগ না দিলে আজ তাঁর জীবনটা এরকম হতো না। সবই তাঁর লোভ এবং কু’কর্মের ফল।

————————–
সোনিয়া লোনের টাকা ঠিকমতো প্রদান না করায় সে এখন জেলের ভাত খাচ্ছে। শাকিলের কোম্পানি মাহবিন আগেই কেড়ে নিয়েছে। তাই শাকিলও এখন পথে নেমেছে। এছাড়া শাকিলের নামেও নানান কেস ছিলো যেগুলো মাহবিন নিজ উদ্যোগে প্রমাণসহ পুলিশ স্টেশনে জমা দিয়েছে। শাকিল কিছুদিন পলাতক হলেও পুলিশের হাত থেকে নিস্তার পায় না। যেই দম্পত্তি রাজার হালে থাকতো তাঁরা এখন নিজেদের পরিণামে জেলের হালে আছে। কিছু মানুষ অন্যায় করার সময় ভুলে যায় যে জীবনটা চক্রের মতো। পাপের শাস্তি থেকে কেউ কোনোদিন রেহাই পায়।

—————–
দুই মাস পর,
–“কোথায় আছো এখন?”
–“ভার্সিটিতেই, হঠাৎ?”
–“আমি এসেছি ভার্সিটির সামনে। বেরিয়ে আসো।”

আয়ন্তি যেন আকাশ থেকে পরলো। চোখ বড়ো বড়ো করে বললো,
–“ওম্মা। কেন আসছেন?”
–“ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো। অলরেডি সিরিয়াল নাম্বার দিয়ে দিয়েছি।”
–“হোয়াট!! ডাক্তার কেন? আমি তো সুস্থই আছি।”
–“কত যে সুস্থ আছো তা দেখাই যায়। কিছুদিন ধরে আমি বেশ লক্ষ্য করছি তোমার হাবভাব। আজও তো ব্রেকফাস্ট করতে গিয়ে সব বমি করে ফেলে দিয়েছো।”

আয়ন্তি মুখ ঘুচিয়ে বসে রইলো। তার খাবারে রুচি না থাকলে তাঁর কী দোষ? আজকাল কিছুই খেতে পারে না সে। সব কেমন দুর্গন্ধ লাগে। কিছু না করেও ভীষণ ক্লান্তি অনুভব হয়। সারাদিন ঘুমের জন্যে চোখ ফুলে থাকে। সব অবশ্য মাহবিনকে শেয়ার করেনি।
–“কী হলো? চুপ করে গেলে কেন? তুমি নিজে থেকে আসবে নাকি নীলাকে কল করবো?”
–“আহ, হা! এত ব্যস্ত হচ্ছেন কেন? আমি আসছি।”

বলেই আয়ন্তি কল কেটে দিলো। নীলা আয়ন্তির করুণ মুখশ্রী দেখে বলে,
–“দুলাভাই যখন ডেকেছে বসে আছো কেন? যাও, যাও! সুখবর যেন তাড়াতাড়ি পাই।”
–“তোর মাথা।”

বলেই আয়ন্তি রাগে গিজগিজ করতে করতে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে এলো। নীলা আয়ন্তির যাওয়ার পানে তাকিয়ে হু হা করে হেসে উঠলো।

আয়ন্তি আসতেই মাহবিন গাড়ির ডোর খুলে দিলো। আয়ন্তি ভেংচি কেটে গাড়িতে উঠে বসলো। হসপিটালে গিয়ে আয়ন্তি ডাক্তারের সাথে তার সমস্যাগুলো শেয়ার করে কিছু টেস্টও করে আসলো। পরেরদিন রিপোর্ট দিবে। সেটাই জানালো ডক্টর। আয়ন্তি এক গাদা ওষুধের দিকে তাকিয়ে নাক সিটকে বলে,
–“এজন্য-ই এসব হসপিটাল আর ডাক্তার ভালো লাগে না। একটু মাথা ঘুরালেও এরা পাঁচ-ছয়টা করে ট্যাবলেটের পাতা ধরাই দিবে।”
–“এর মানে তোমার মাথাও ঘুরায়? লুকালে আমার থেকে?”

আয়ন্তি জিহবায় কামড় দিলো। মাহবিন তার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে। আয়ন্তি এবার চুপসে গেলো। একটা টু-শব্দও করলো না। পরেরদিন মাহবিন রিপোর্ট নিয়ে আসে। আয়ন্তি তখন বিছানা গুছাচ্ছিলো। রিপোর্টের জন্যে আয়ন্তিকে আজ ভার্সিটি যেতে দেয়নি। মাহবিন হঠাৎ আয়ন্তিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। আয়ন্তি আঁতকে উঠে। মাহবিনের মন মাতানো পারফিউম নাকে এসে বিঁধতেই আয়ন্তি বুঝে গেলো পেছনের মানুষটি কে। আয়ন্তি বুকে থুঁ ফেলার ভঙ্গি করে বলে,
–“ভয়-ই তো পাইয়ে দিয়েছিলেন।”
–“তুমি আমায় এরকম এক সুখ দিবে আমি কখনো ভাবতে পারিনি আয়ন্তি।”

আয়ন্তি চমকে উঠলো। মাহবিন কিসের কথা বলছে? মাহবিন আবারও বললো,
–“আমি বাবা হতে চলেছি আয়ন্তি। আমার ঘর আলো করে প্রিন্সেস আসবে। আমি বাবা হবো!”

নিমিষেই আয়ন্তির চোখ জোড়ায় অশ্রু’রা ভীড় জমালো। সে নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছে না। এটা সত্যি? নাকি কোনো স্বপ্ন? আনমনেই আয়ন্তির হাত মাহবিনের হাতের উপর চলে গেলো যা বর্তমানে আয়ন্তির পেটে অবস্থান করছে। আয়ন্তি ভাঙ্গা গলায় বললো,
–“আ..আমি মা হবো? আ..আমায় আধো আধো বুলিতে কেকে…কেউ আম্মু বলে ডাকবে?”

আয়ন্তির কথার মাঝেই অশ্রুরা গাল বেয়ে গড়িয়ে পরলো। মাহবিন আয়ন্তিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বক্ষে স্ব-যত্নে আগলে নিয়ে বলে,
–“হ্যাঁ। আর আমি বাবা। চলো সবাইকে সুসংবাদ জানিয়ে আসি।”

মাহবিন আয়ন্তির থেকে নিজেকে ছাড়াতে নিলে আয়ন্তি ছাড়ে না। মৃদু স্বরে শুধালো,
–“ভালোবাসি আমার অনাগত সন্তানের আব্বু। অতঃপর দুজনে আর একা নই, আমাদের সাথে আরেকজন যোগ হবে।”

~~ সমাপ্ত।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে