? তোমার আড়ালে ?পার্ট :৯

0
897

? তোমার আড়ালে ?পার্ট :৯

Urme prema (sajiana monir)

হঠাৎ সুবাহর গালে “ঠাসসস”করে চর পড়লো সাথে সাথে সুবাহর হাত তার গালে চলে যায়।সুবাহ পুরো থমকিয়ে গেছে তার সাথে কি এটা কি হল ?
পুরো ব্যপারটাই তার মাথার উপর দিয়ে গেল !
সুবাহ মাথা উচুঁ করে দেখে সামনে আরোশ দাড়িয়ে আছে তার চোখে মুখে ভয়ংকর রাগ মনে হচ্ছে এখনই তাকে পুরো গিলে খাবে ।
কিন্তু সুবাহ আরোশের এভাবে তার উপর রেগে থাকা আর তাকে চড় মারার কারন খুজেঁ পাচ্ছেনা ।সে কি এমন করেছে যে আরোশ নিদ্রা আদি জান্নাত সুহানের সামনে তাকে এভাবে থাপ্পর দিলো ?
সে তো নিদ্রার কথা ‌অনুযায়ী এখানে এসে এই রুমে আদির সাথে আটকিয়ে গেছে বাহির থেকে কেউ দরজা লক করে দিয়েছে তাই আদি আর সুবাহ একই রুমে আটকিয়ে গেছে এতে তার কি দোষ ?
সুবাহ তো অন্ধকারে ভয়ে আদির হাত ধরেছিলো আর ঠি ক তার কিছুসময় পর আরোশ দরজা খুলেছে ।
আরোশ কিছু না জিগাসা করে তার গায়েঁ হাত তুলে দিলো ?
সে কি করেছিলো !
গালে হাত দিয়ে সুবাহ আরোশের দিকে তাকিয়ে এসব ভাবতে লাগে ।আরোশ রেগে সুবাহর হাত শক্ত করে ধরে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে পিছন থেকে জান্নাত সুহান আরোশকে থামানোর চেষ্টা করছে ।জান্নাত বার বার বলছে
“ভাইয়া প্লিজ একবার কথাটা শুনুন !”
কিন্তু আরোশ জান্নাতের কথায় তেক্কার না করে সুবাহকে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে কারন এই মুহূর্তে আরোশ কথা শুনার মত পরিস্থীতিতে একদম নেই সে ভয়ংকর ভাবে রেগে আছে ।আদি ঠায় সেখানেই দাড়িয়ে আছে সব কিছু যেন তার মাথার উপর দিয়ে গেছে ।সে তো নিদ্রার কথায় সুবাহর হেল্প করতে উপরে এসেছে ।নিদ্রাইতো তাকে বলেছে যে “সুবাহ ভার্সিটির স্টোর রুমে আটকা পড়ে আছে সুবাহর হেল্পের প্রয়োজন !”এই কথা শুনেই তো আদি এখানে এসেছে সুবাহর হেল্প করতে ।
নিদ্রা দরজার সামনে দাড়িয়ে সব কিছু মজা নিচ্ছে সে এটাইতো চেয়েছিলো আরোশ সুবাহ কে ভুল
বুঝোক আদিকে নিয়ে ।তাই তো সে সুবাহকে স্টোর রুমে ডাকে আর আদিকে মিথ্যা বলে পাঠায় তারপর দুজনকে লক করে দেয় স্টোর রুমে আর আরোশ সুবাহ আর আদিকে অন্ধোকার স্টোর রুমে দেখে খারাপ কিছু ভেবে তাকে ভুল বুঝে তাকে থাপ্পর মারে সবার সামনে তাকে অপমান করে ।যা নিদ্রার মনে বেশ শান্তি লেগছে কারন সে তো চেয়েছেই তাই সব তার প্লান অনুযায়ী হচ্ছে আরোশ সুবাহ কে ঘৃনা করবে আর সেই সুযোগে আরোশকে নিদ্রা হাসিল করবে !

আরোশ সুবাহকে বাড়িতে টানতে টানতে নিয়ে আসে বিষন রেগে আছে সে !
বাড়িতে কেউ নেই সবাই আরোশের নানুর বাসায় একটা ফাংশন এটেন্ড করতে গেছে ২ দিন পর ফিরবে !
আরোশ সুবাহ টেনে নিয়ে বেডে ছুড়েঁ মারে তারপর দরজা লক করে তার কাছে যেয়ে তার চুলের মুঠোয় শক্ত করে ধরে ।সুবাহ ব্যথায় কুকঁড়িয়ে উঠে আরোশ সুবাহর চোখে চোখ রাখে ভয়ংকর লাল হয়ে আছে চোখ আরোশ চুলের মুঠি ঝাকিয়ে বলতে লাগে
“কি কমতি ছিলো আমার ভালোবাসায় ?
কি কমতি ছিল বল !!!!!
কেন তুই আদির কাছে গেলি ?
আমাকে দিয়ে তোর মন ভরছিলো না !”
সুবাহ হা হয়ে তাকিয়ে আছে আরোশের দিকে !
আরোশ তাকে এসব কি বলছে ?
সুবাহ কান্না করতে করতে বলতে লাগে
“আপনি এসব কি বলছেন ?
আমার আর আদির মধ্যে তেমন কোন সম্পর্ক নেই আমরা জাস্ট ভালো ফ্রেন্ড !
আপনার ভুল হচ্ছে ।
আমি তো আপনাকে ভালো….”
আরোশ সুবাহকে কিছু বলতে না দিয়ে তার চুল ছেড়ে দুই বাহু শক্ত করে ধরে বলতে লাগে
“চুপ একদম চুপ আদি তোর জাস্ট ফ্রেন্ড তাই তো ?
তাই বুঝি তাকে বিয়ে করতে গিয়েছিলি !
প্রথমে আমার সাথে টাইম পাস করিস তারপর তা নিজের বোনের মাথায় গছিয়ে দিয়ে নিজে নিজের আসল প্রেমিক আদির কাছে যাস !”
সুবাহ আরোশেকে বলতে লাগে
“আমার কথাটা একবার শুনার চোষ্টা করেন ।
আরোশ আমি আপনার সাথে টাইম পাস করিনি আমি বাদ্ধ ছিলাম এসব কিছু….”
আরোশ সুবাহর মুখ চেপে ধরে সুবাহ আর কিছু বলতে পারেনা ।আরোশ মুখ চেপে ধরে বলতে লাগে
“তোর মুখে কোন কথাই আমি শুনতে চাইনা ।বিয়ের পর নিজের স্বামীকে রেখে যে মেয়ে তার প্রেমিকের সাথে স্টোর রুমে সময় কাটাতে পারে তার থেকে আর কি শুনবো !
তোর চরিত্র এমন হবে তা আমার সত্যি ধারনার বাহিরে ছিলো !
ঘৃনা হয় নিজের প্রতি যে তোর মত মেয়েকে আমি ভালোবেসেছি ।”
সুবাহ আরোশেক দিকে তাকিয়ে আছে ভাবহীন ভাবে !
আরোশ ও তাকে চরিত্রহীন ভাবে ?
তার চরিত্র নিয়ে সে ও এসব কথা বললো !
সবাই না হয় তাকে ভুল বুঝে কিন্তু আরোশ থেকে সুবাহ এসব কিছু কখনো আশা করেনি ।
সুবাহ নিজেকে আরোশ থেকে ছাড়িয়ে নিজের চোখ মুছে রেগে চিৎকার করে বলতে লাগে
“অনেক হয়েছে আপনি অনেক বলেছেন আর আমিও অনেক শুনেছি !
আপনি আমার চরিত্র নিয়ে কি করে বলতে পারেন ?
কি ভাবেন আপনি আমাকে কোন রাস্তার মেয়ে ?
যে আপনি আমার চরিত্র নিয়ে যা বলবেন সব মেনে নিবো !
বিয়ের পর আপনার দেওয়া প্রত্যেকটা আঘাত মেনে নিয়েছি কারন আমি মনে করেছি কোথাও আমার দোষ আছে আপনার সাথে অন্যায় হয়েছে আর তার জন্য আমি দায় আছি !
তাই আপনাকে সত্যি জানাতে চেয়েছি কিন্তু আপনি যখন আমার কোন কথা শুনতেই নারাজ উলটো কিছু না জেনে আমার চরিত্রের উপর আঙ্গুল তুলেছেন !
বিচার বিবেচনা না করে নিজের রায় জানিয়ে দিয়েছেন আমি চরিত্রহীন !
তাহলে আমিও নিজের দিক থেকে আর কোন কৈফাত দিবোনা !
যেখানে আমার চরিত্রের উপর আঙ্গুল তোলে সেখানে আমি একমূহুর্ত ও থাকবোনা !
আমি তো চরিত্রহীন আমার মত চরিত্রহীন মেয়ে আপনার জীবনে না থাকাই ভালো।
আমি এক্ষনই আপনার এই বাড়ি থেকে আর আপনার জীবন থেকে চলে যাবো “
বলেই সুবাহ সামনে দিকে নিজের পা বাড়ায় বাহিরে যাবার জন্য আরোশ পিছন থেকে টান দিয়ে সুবাহকে বেডে ফেলে তার উপরে উঠে তার গলায় চাপ দিয়ে বলতে লাগে
“যাওয়ার কথা বললে খুন করে দিবো !
সব সময় আমার চোখের সামনে থাকবি তুই ।সারাজীবনের জন্য আমার সাথে থাকবি আমার হয়ে থাকবি !
মৃত্যু ছাড়া আমার থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব না !”
বলেই আরোশ সুবাহর উপর থেকে উঠে বাহিরে চলে যায় ।সুবাহ বেডে শুয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগে আর কাশতে লাগে ।সুবাহ আরোশের এমন ব্যবহারে বেশ আঘাত পায় ।আরোশ রুমে থেকে চলে যেতেই সুবাহ বেডে মুখ গুজেঁ কান্না করতে লাগে ।
আজ আরোশের ব্যবহারে তাকে পুরোপুরি ভেঙ্গে দিয়েছে ।সে আরোশের কাছ থেকে কখনই এমন ব্যবহার আশা করেনি ।সে জানতো আরোশ তাকে ঘৃনা করে কিন্তু তাকে চরিত্রহীন ভাবে তা তার জানা ছিলোনা ।আজকের অপমানীত সুবাহ কখনই হয়নি ।আরোশ তাকে আজ পুরোপুরি ভেঙ্গে দিয়েছে ।
মানুষ সবার আঘাত সয্য করতে পারে কিন্তু নিজের ভালোবাসার মানুষের থেকে পাওয়া আঘাত কখনই সে সয্য করতে পারেনা ।
তা খুব বেশি যন্ত্রনার হয় !
ছোট থেকে দাদী আর নিদ্রার অপমান সয্য করেছে তার মায়ের সাপোর্ট ছিলো বলে সে তা সয্য করে নিয়েছে কিন্তু আরোশের আজ করা অপমান সারাজীবনের জন্য পরাজীত করে দিয়েছে ।সে নিজের ভালোবাসার মানুষের কাছে এমনটা আশা করেনি !
মানুষ যখন খুব বেশি ডিপ্রেশনে থাকে মানুষিক চাপে থাকে বা মানুষিক ভাবে যন্ত্রনায় থাকে একমাত্র সেসময়ই তার মাথায় আত্নহত্যার চিন্তা মাথায় আসে ।একমাত্র সে সময়ই সব যন্ত্রনা থেকে মুক্তির রাস্তা খুজেঁ নেয় ।আত্মহত্যা কখনো কোন কিছুর সমাধান হয়না কিন্তু জীবনে এমন কিছু সময় আসে যে এইটাই একমাত্র উপায় মনে হয় মুক্তির জন্য !
সব কিছু থেকে শান্তি পাবার জন্য ।আজ সুবাহর সকল ধর্য্যের বাধঁ ভেঙ্গে গেছে ।আর ধর্য্যে ধরা মত ক্ষমতা তার নেই !
ছোট থেকে কেবল মাত্র তিরস্কার পেয়েছে নিজের দাদী থেকে আর নিদ্রা থেকে ।আরোশকে ভালোবেসে আকড়ে ধরে বাচতেঁ চেয়েছে কিন্তু সবার ভালোর জন্য নিজের ভালোবাসাকে বলি দিয়ে তাকে যখন ছেড়ে দিতে চেয়েছে ঠিক সে সময় আরোশ তাকে নিজের করে নিয়েছে আর সবার কাছে সমাজের কাছে তখন সে চরিত্রহীন প্রমানীত হলো !
আজ নিজের ভালোবাসার মানুষ ও তাকে চরিত্রহীন নামক ট্যাগ টা লাগিয়ে দেয় !
তার চেয়ে বেশি তার কাছে মৃত্যু ও ভালো ।পরিবার থেকে ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে তিরস্কারীত হলে বাচারঁ কোন ইচ্ছে থাকেনা ।
সুবাহ সব যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেতে চায় ।আর চায়না সে কোন যন্ত্রনা পেতে ।
সে সবার জীবন থেকে চলে গিয়ে সবাইকে মুক্তি দিতে চায় নিজেও মুক্তি হতে চায় সুবাহ বেড থেকে উঠে আস্তে আস্তে রুমে রাখা ফলের ছুড়ির দিকে যায় ।ছুড়িটা হাতে নিয়ে নিজের হাতের শিরার উপরে টান দেয় তারপর ফ্লোরে বসে বেডের সাথে হেলান দিয়ে হাত ছড়িয়ে দেয় হাত থেকে গলগল করে রক্ত ঝোড়তে থাকে !
সুবাহ আরোশের সাথে কাটানো প্রত্যেকটা মুহুর্ত ভাবতে লাগে ।আস্তে আস্তে চোখের সামনে সব কিছু ঝপসা হয়ে যাচ্ছে ।সুবাহ মৃদ্যু হেসে আলতো সুরে বলতে লাগে
“আরোশ চলে যাচ্ছি আপনার জীবন থেকে সারাজীবনের জন্য ।কোন চরিত্রহীন মেয়ে আপনার জীবনে না থাকাই ভালো !”

বেশ কিছু সময় আরোশ রুমে ফিরে রুমে ফিরে দেখে পুরো রুম অন্ধকার আরোশ দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করে ঘরের লাইট জ্বালাতেই যা দেখলো তা দেখে তার দুনিয়া পুরো থমকিয়ে গেল ……….

চলবে…..
❤️❤️❤️❤️

Plz সবাই সবার মতামত জানাবেন ???

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে