হয়তো_ভালোবাসি Part_10

0
1995

হয়তো_ভালোবাসি
Part_10
#Writer_Eshetaq_Nora

রুমের ভিতর–

নীড় ঢুকেই দেখলো নেশা ঘুমিয়ে আছে।সারা শরীর লাল হয়ে খারাপ হয়ে গেছে।

নীড়ঃ আই এম সরি জান।।আমি জানতাম নাহ তোমার গোলাপ ফুলে এলার্জি। জানলে কখনো করতাম নাহ এই কাজ????[নেশার হাত ধরে ]

একটুপর

নেশার জ্ঞান ফিরেছে।।নীড় তাকে খাওয়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু কিছুতেই নেশা খাবার মুখে নিচ্ছে নাহ।

নীড়ঃ প্লিজ খেয়ে নাও নেশা।।না হলে সুস্থ হতে পারবে নাহ।।

নেশাঃ আপনি প্লিজ এখান থেকে যান।।আমার আপনাকে সহ্য হচ্ছে নাহ।

নীড়ঃ নেশা আমি…….

তখনই আকাশ রুমে ঢুকলো।।আকাশকে দেখে নেশা গাল ফুলিয়ে অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিলো।আকাশ বুঝতে পারলো নেশা রাগ করেছে। আকাশ গিয়ে নেশার পাশে বসলো।নেশা আরেক দিকে মুখ ফিরিয়ে নিলো।

আকাশঃ নেশা আজ আব্বুর মৃত্যুবার্ষিক ছিলো।

নেশাঃ ??

আকাশঃ তাই এতিমখানায় গিয়েছিলাম

নেশাঃ ??

আকাশঃ সরি তো??

[যদিও ডাহা মিথ্যা কথা। আকাশ গিয়েছিলো একটা পুলিশ কে হুমকি দিতে।।কারন সে আকাশের লোক দের জেলে ঢুকিয়ে রেখেছিলো মারপিট করায় ]

নেশাঃ এই ছেলে এখানে কেন?

আকাশ বুঝতে পারলো নেশা নীড়ের এখানে থাকার ফলে রাগ করেছে। কথাটা ভেবেই আকাশের মনে লাড্ডু ফুটতে শুরু করলো।

আকাশঃ মনে মনে- হাহ আমার নেশাকে পটাবে?।।দেখ তোকে সহ্যই করতে পারে নাহ আমার জান??।।

আকাশঃ আমিই ওকে রেখে গেছিলাম।।যদি তোমার কিছু দরকার হয় তাই।

নেশাঃ আমি নিজের খেয়াল নিজে রাখতে পারি আকাশ।।

আকাশঃ আচ্ছা সরি।।[বলেই নীড়ের হাত থেকে সুপের বাটিটা নিয়ে নিলো ]

আকাশঃ তুমি যেতে পারো এখন নীড়।।ধন্যবাদ এতক্ষণ দেখে রাখার জন্য।।বলেই নেশাকে খাইয়ে দিতে লাগলো।আর নেশাও খেতে লাগলো।
যা দেখে নীড় গাল ফুলিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।কারন এখন কিছু বললে নেশা রিয়েক্ট করতে পারে।।তাই কিছু বললো নাহ।আকাশ সেদিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দিলো

এইভাবেই নীড় আর নেশার দিন কাটতে লাগলো।নীড় অনেক বার নেশাকে ইমপ্রেস করার চেষ্টা করেছে কিন্তু নেশা পাত্তা দেয়নি।এইদিকে নীড় আকাশের বিরুদ্ধে কোন স্ট্রং প্রমাণ পাইনি যা নেশাকে দেখাবে।।।লোকটা অতিমাত্রায় চালাক।।খুব সাবধানে নিজের কাজ করেছে।।তার উপর ১ বছর দেশে ছিলো নাহ। তাই নতুন কোন খুন ও করে নি।।।তাই প্রমাণ পাওয়া খুব কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। তাই ভাবলো নেশাকে এমনিতেই সব বলে দেবে।। যদি একটু হলে ও বিশ্বাস করে তাকে।।সেই অনুযায়ী প্লেন করলো।।

কাল বিয়ে বাড়িতে অনেক কাজ।।তাই সবাই বিজি।।বাড়িতেই পার্লারের লোক এসেছে।।সবাই ফেস পেক লাগিয়ে বসে আছে। নেশার ফেস পেক লাগানো শেষ তাই সে ঘরে চলে যায়।।আর পার্লারের এক মহিলাকে বলে ঘরে এসে তার পেডিকিওর করতে।। মহিলাটি ঘরে এসে তার পেডিকিওর করতে শুরু করে পায়ে।নেশা চোখ বন্ধ করে কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছিলো।।পায়ে ম্যাসেজ করার ফলে খুব আরাম হচ্ছিলো তাই চোখ বুঝে রেখেছে।হঠাৎ রুমে নীড় ঢুকে মহিলাটিকে ইশারা করলো বেরিয়ে যেতে।মহিলাটি বেরিয়ে গেল।।

নেশাঃ কি হলো বন্ধ হয়ে গেলে কেন??[ চোখ বন্ধ রাখা অবস্থায় ]

নীড় কিছু ভেবে মুচকি হেসে নেশার পায়ের কাছে বসে পায়ে ম্যাসেজ করতে লাগলো।

নেশাঃ তুমি আছো।।আমি তো ভেবেছি চলে গেছো।

নীড় কিছু বললো নাহ।।কিন্তু ওর বোম ফাটা হাসি পাচ্ছে।।

নেশাঃ এতো আস্তে করছো কেন। আগে তো ঠিক ছিলো।।[ চোখ বন্ধ করে]

নেশাঃ আরে সুরসুরি দিচ্ছো কেন।

বলেউ নেশা চোখ খুললো।আর নীড়কে দেখেই

নেশাঃ আয়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া?????

নীড় নেশার মুখ চেপে ধরলো।

নীড়ঃ চুপ চুপ। এতো চিৎকার করো কেন।।??

নেশাঃ????

নীড়ঃ উফ এখন এমন করছো কেন। কথা বলো

নেশাঃ উম্মম্মম্মম

নীড় খেয়াল করলো নেশা মুখ থেকে হাত সরাতে বলছে।

নীড়ঃ ওহহ সরি সরি।। [মুখ থেকে হাত সরিয়ে ]

নেশা জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।।

নীড়ঃ ঠিকাছো??

নেশাঃ হুম।।আপনি এখানে কেন??

নীড়ঃ তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছিলো খুব??

নেশাঃ ওকে। এখন যান

নীড়ঃ জান?।।উফ এইভাবে বললে যাবো কিভাবে জান?

নেশাঃ আমি জান বলিনি যান বলেছি।।

নীড়ঃ আমিও তো জানই বললাম?

নেশাঃ আমি যেতে বলেছি???????

নীড়ঃ ওহহ আচ্ছা তাই বলো?।।আচ্ছা যাচ্ছি।। কিন্তু রাতে রেডি থেকে একজায়গায় যাবো।

নেশাঃ আমি আপনার সাথে কোথাও যাবো নাহ

নীড়ঃ তাহলে তুলে নিয়ে যাবো।

নেশাঃ ?

নীড় চলে গেল।।

রাতে—

নীড় দেখলো নেশার আসার নামগন্ধ নেই।।।নীড় রুমে গিয়ে দেখলো নেশা তো ঘুম।

নীড়ঃ এই মেয়ে কে তো আমি?

নীড় নেশাকে কোলে করে নিয়ে গাড়িতে বসালো তারপর ড্রাইভিং করে এক জায়গায় নিয়ে গেল।সারা রাস্তায় এমন ঘুম দিয়েছে যে একটু টের ও পায়নি।।কি মেয়েরে বাবা।।?

নেশার ঘুম ভাঙলো মুখে পানির ছিটায়।আর দেখলো নীড় তাকে একটা চেয়ারের সাথে বেধে রেখেছে।

নেশাঃ হোয়াট দা?।।আপনি কি করছেন এইসব

নীড়ঃ তোমার ঘুম ভাঙাচ্ছি।।

নেশাঃ সেটা ডাক দিয়েও করা যেত।

নীড়ঃ যেই ঘুম দিয়েছো ভেবেছি অজ্ঞান হয়ে গেছো।।তাই পানির ছিটা দিলাম

নেশাঃ ?আমায় বেধে রেখেছেন কেন??

নীড়ঃ আদর করতে?

নেশাঃ শাট আপ

নীড়ঃ এমন করো কেন। তুমি তো আমায় ভালোবাসো।। তাহলে আদর করলে কি হবে?

নেশাঃ ভালোবাসতাম এখন বাসি নাহ।

নীড়ঃ কেন বাসো নাহ।।আমার মনে ভালোবাসা জাগিয়ে এখন বলো ভালোবাসো নাহ।।

নেশাঃ ও রেয়লি?।।আমি আপনার মনে আমার জন্য ভালোবাসা জাগিয়েছি।

নীড়ঃ হুম।তাই তো ভালোবাসি তোমায়।।খুব ভালোবাসি

নেশাঃ??হাসালেন মি. নীড় । আপনি আমায় ভালোবাসেন আমি তো জানতামই নাহ।।ধন্যবাদ আমাকে জানানোর জন্য

নীড়ঃ আমি সত্যি তোমায় ভালোবাসি নেশা ?

নেশাঃ হুম জানি তো। তাই তো ২ বছর আগে পুরো কলেজের সামনে আমায় অপমান করেছিলেন আপনার নিসুর জন্য।আচ্ছা যেই নিসুকে আপনি এতো ভালোবাসেন তাকে ছেড়ে এখন আবার ইশাকে বিয়ে কেন করছেন?

নীড়ঃ নিসু আমায় ছেড়ে চলে গেছে।

নেশাঃ ওহহ তাই আমার কাছে আসলেন তাই তো।।নিসু যদি থাকতো তাহলে আপনার মনে হয়তো এই ভালোবাসা জন্মই নিতো নাহ।

নীড়ঃ আমি আগে থেকেই তোমায় ভালোবাসি নেশা?।।

নেশাঃ তাই বুঝি। তো ওই অপমান গুলো কি ভালোবাসার প্রতিদান ছিলো।

নীড়ঃ নেশা আম…..

নেশাঃ আমি বাড়ি যাবো।

নীড়ঃ প্লিজ আমার কথা শুনো।।কেন ওইদিন ওইরকম করেছিলাম তা শুনতে চাইবে নাহ?

নেশাঃ নাহ।।আমি কিছু শুনতে চাই নাহ।।আমি বাড়ি যাবো।

নীড়ঃ কিন্তু না শুনা পর্যন্ত তো তোমায় আমি বাড়ি যেতে দিবো নাহ?

নেশাঃ ??

নীড়ঃ নিসুর বাবা আর আমার বাবা বিজন্যাস ফ্রেন্ড ছিলো।।তাই ওদের সাথে আমাদের ভালোই সম্পর্ক ছিলো।।প্রায় সময়ই তারা আমাদের বাড়ি আসতো আর আমরা তাদের বাড়ি যেতাম।।একবার তাদের বিজন্যাসে অনেক বড় লস হয় আর আঙ্কেল তার সব কিছু বিক্রি করে দেয় এমনকি তাদের বাড়িও বিক্রি করে দেয়।তাই আব্বু ওনাদের আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসে।।নিহার আম্মু নেই।।তখন থেকে ওনারা আমাদের বাড়িতেই থাকে। একদিন আমি আর আঙ্কেল মিলে পার্কে ঘুরতে যাই।তখন আমার মাত্র ১২ বছর।।রাস্তার ওইপাশে আইসক্রিমের গাড়ি দেখে আমি কিছু নাহ ভেবেই ওইপাশে যেতে নেই।।হঠাৎ একটা ট্রাক সামনে চলে আসে।।আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলি।।আর ওইমূহুর্তে আঙ্কেল আমায় বাচায়।কিন্তু নিজে বাচতে পারেনি।।ট্রাক টা তাকে পিষে নিয়ে যায়।।তারপর থেকে নিহা একদম একা হয়ে যায় যদিও সে আমার বাড়িতে থাকতো। কিন্তু বাবা মা ছাড়া বুঝতেই তো পারছো।তারপর থেকে নিহার প্রতি ও আমার অন্যরকম মায়া সৃষ্টি হয়।তাকে টাইম দেয়ার চেষ্টা করতাম সব সময়।কারন যতোই হোক আঙ্কেল আমায় বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছে।। আব্বু আমার আর নিহার বিয়ে ঠিক করে।।আমাদের পড়ালেখা শেষ করেই বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো। নিহা যা বলতো তাই করতাম।।ওর সকল আবদার পুরন করার চেষ্টা করতাম।একদিন ও বলে তোমার সাথে ভালোবাসার নাটক করতে।। প্রথমে আমি রাজি হইনি।।কিন্তু পরে ও জানায় যে তুমি তাকে সবার সামনে খুব অপমান করেছো।সারাদিন খুব কান্নাকাটি করলো।তাই আমি ও বাধ্য হয়ে খোঁজ নিলাম।।আর জানতে পারলাম সত্যিই ওইদিন তুমি ওকে থাপ্পড় মেরেছো সবার সামনে।।কিন্তু কেন মেরেছো তা জানতাম নাহ।।পরেরদিন থেকে শুরু হয় তোমাকে ভালোবাসার অভিনয়।। [একটু থেমে]জানো যেদিন তুমি চলে গিয়েছিলে তোমায় আটকাতে চেয়েছিলাম। ভালোবেসে ফেলেছিলাম যে। কিন্তু কি করে আটকাতাম বলো।আর আটকালেই বা কি হতো।।আমি যে নিহার কাছে দ্বায়বদ্ধ।জানো তুমি যাওয়ার একবছর পর নেশা আমায় ছেড়ে চলে যায়।সেদিন কষ্টের থেকে বেশি খুশি হয়েছিলাম কারন আমি তোমার কাছে ফিরে যেতে পারবো।।কিন্তু সেখানে গিয়ে তোমাদের কাউকেই পেলাম নাহ।।অনেক ট্রাই করলাম।। আমার প্রায় পাগল পাগল অবস্থা। আমার এমন অবস্থা দেখে আম্মু হার্ট অ্যাটাক করলো।আর আম্মুর খুশির জন্য আমায় ইশাকে বিয়ে করতে রাজি হতে হয়।[ কথাটা বলেই নীড় নেশার কাছে গিয়ে ওর বাধন গুলো খুলে দিলো ]

নীড়ঃ আমি আজ ও তোমায় ভালোবাসি নেশা। খুব ভালোবাসি। [৷বলতে বলতে নেশার ঠোঁটের কাছে নিজের ঠোঁট নিয়ে গেল।।কিন্তু নেশা মুখ ঘুরিয়ে নিলো।নীড় দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে উঠে দাড়ালো।।অন্যদিকে ঘুরে—]

নীড়ঃ আজ যা বললাম তার সবই সত্যি।। বাট তুমি যদি নাহ বিশ্বাস করতে চাও তাহলে কিছু করার নেই।।কিন্তু নেশা আজ আমি তোমায় আরো কিছু বলতে চাই।।সেটা হলো আকাশের ব্যাপারে।। তুমি হয়তো জানো নাহ ও কতটা ভয়ংকর।। ও ইশাকে খুন করেছে।।।তাও আবার আমার সামনে

[ বলেই নেশার দিকে ঘুরলো। কিন্তু সে তো নেই।।তারমানে চলে গেছে।।।কথাটা নেশার শোনা হলো না।নীড় পিছন পিছন গিয়ে দেখলো নেশা গাড়ি নিয়ে চলে গেছে ]

নীড়ঃ জানি নাহ কবে তোমায় আবার নিজের করে পাবো কিন্তু তোমায় যে আকাশের সত্যি টা জানাতে হবে যে করেই হোক।।কাল তোমায় সব শুনতেই হবে নেশা।।

পরেরদিন রাতে

নীড়ের হাত পা বাধা আর সামনে দাড়িয়ে আছে আকাশ।

নীড়ঃ আমাকে এখানে নিয়ে এসেছো কেন আকাশ?

আকাশঃ তুই আমার জানের দিকে নজর দিয়েচ্ছোস।। তোকে আর বাচিয়ে রাখা যাবে নাহ।।আজ আমি তোকে শেষ করে দিবো

চলবে?

( অনেকেরই নীড়কে নায়ক হিসেবে পছন্দ ছিলো নাহ।।কারন সে নেশার সাথে ওইরকম করেছে।।কিন্তু এতে নীড়ের ও কিছু করার ছিলো নাহ।।আপনারা ওর জায়গায় থাকলে কি করতেন তা আমার জানা নেই।।?

❤❤আরেকটা কথা। কিছু মানুষ আছে যারা আমার গল্পের নায়িকাকে ও পছন্দ করে নাহ আবার নায়ককেও নাহ।।আবার আমার গল্পের কাহিনি ও পছন্দ করে নাহ।।কিন্তু তাদের কাছে এতোই ফালতু টাইম থাকে যে তারা সবসময় আমার গল্প ও পড়বে আবার খারাপ কমেন্ট ও করবে।।এগুলা করতে তাদের মধ্যে একটু লজ্জা ও লাগে নাহ।।সত্যিই অসাধারণ।পৃথিবীতে এই টাইপের মানুষ সত্যিই খুব বিরল।।তাদের নিয়ে চিরিয়াখানায় রাখা উচিত ?❤❤)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে