হিমি পর্ব-২৪+২৫

0
756

হিমি
লেখনী- সৈয়দা প্রীতি নাহার

২৪.

-একটা কিছু তো মুখে দাও!

মিশ্মি মাথা নেড়ে জানান দিলো, না। সে খাবে না। আধঘন্টা ধরে টেবিল ভর্তি খাবার সামনে নিয়ে মুখ বন্ধ করে আছে মিশ্মি। না কিছু বলছে, আর না কিছু খাচ্ছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে ইয়াসির। নিজের ক্লাস ফেলে ব‌উয়ের কথা রক্ষায় শালিকে খুঁজতে আধঘন্টার চেয়েও বেশি সময় ব্যয় করেছে ইয়াসির। এরপর তাকে ইনিয়ে বিনিয়ে ক্যান্টিনে নিয়ে এসেছে। ব্যক্তিগত কথা যেখানে সেখানে বলা যায় না। প্রয়োজন পরে প্রাইভেসির। সেই প্রাইভেসির কথা ভেবেই মিশ্মি আর তার বান্ধবী তন্নিকে দুলাভাইয়ের তরফ থেকে ছোট্ট একটা ট্রীট হিসেবে ক্যান্টিনে নিয়ে এসেছিলো সে। তন্নি নিজের ভাগের খাবারটুকু খেয়ে ক্লাসের জন্য মিশ্মিকে তাড়া দিচ্ছিলো। মিশ্মি ক্লাসে যেতে তৈরি তবে খেতে নয়। ইয়াসির তাই তন্নিকে চলে যেতে বলেছে। এও বলে দিয়েছে মিশ্মিকে না খাইয়ে সে ছাড়বে না। অথচ এখন অব্দি এক ফোটা পানিও মুখে তোলে নি মিশ্মি। ইয়াসিরের ধৈর্যের বাধ ভাঙছে। ব‌উয়ের ছোট বোন বলে কিছু বলতেও পারছে না সে। মুখে হাসি ঝুলিয়ে হেসে হেসে কথা বলার চেষ্টা করছে। কিছুক্ষন পর মিশ্মি বলে উঠলো,

-স্যার আমার ক্লাসের দেরি হচ্ছে।

ইয়াসিরের বেপরোয়া জবাব,

-খাওয়া শেষ করে চলে যাও। আটকাই নি তো।

-আমার খিদে নেই।

-অথৈ বললো তুমি নাকি বাড়ি থেকে খেয়ে আসো নি। এখন দুপুর দুটো। এতক্ষন অব্দি খালি পেটে আছো, খিদে পাচ্ছে না কেনো?

মিশ্মি কৌতুহলী গলায় বললো,

-অথৈ কি করে জানলো?

-তার মানে তুমি খেয়ে আসো নি?

মিশ্মি জবাব দিলো না। ঘাড় ঘুরিয়ে বাইরের দিকে দৃষ্টি দিলো। ইয়াসির রয়ে সয়ে বললো,

-তোমার সাথে একটা জ্বরুরি কথা বলতে চাই মিশ্মি।

মিশ্মি চোখ ঘুরিয়ে ইয়াসিরের দিকে তাকালো। বিস্মিত গলায় বললো,

-কি কথা স্যার?

-দেখো মিশ্মি, আমি এখানে তোমার স্যার হিসেবে নয় দুলাভাই হিসেবে এসেছি। তোমার সাথে এ বিষয়ে কথা বলা উচিত কি না জানি না কিন্তু তোমার বোন খুব জোর করছে।

কয়েক সেকেন্ড থেমে বললো,

-তুমি কি সামহাও আমাদের বিয়েতে অখুশি?

মিশ্মি চমকে উঠলো। হঠাৎ এ প্রশ্ন কেনো উঠছে সে বুঝতে পারছে না। যদিও উত্তরটা ‘হ্যা’ তবে তা তো কাউকে জানানো যাবে না। মিশ্মি অবাক হ‌ওয়ার চেষ্টা করে বললো,

-এসব কিছুই না স্যার। আপনাদের বুঝতে ভুল হচ্ছে।

ইয়াসির টেবিলে দুহাত মুষ্টিবদ্ধ করে রেখে শান্ত গলায় বললো,

-তাহলে ভুলটা ভেঙে দিয়ে সত্যিটা বুঝাও।

মিশ্মি ঘন ঘন শ্বাস টানলো। ইয়াসির বললো,

-অথৈ তোমার কথা ভেবে অস্থির। কি হয়েছে তোমার, কেনো এমন বিহেইভ করছো এসব নিয়েই পরে আছে সারাদিন। বিয়েতে তোমার অনুপস্থিতি, বাড়িতে ওকে সময় না দেয়া, ওর থেকে দূরে দূরে থাকা, ওর সাথে ঠিক করে কথা না বলা আর এখন! ওর ফোন কল রিসিভ না করাতে ওর মনে হচ্ছে তুমি বিয়েটা চাও নি। বা কোনো এক কারনে অথৈর সাথে আগের মতো মিশতে পারছো না। আজ যদি তোমার থেকে উত্তরটা না নিয়ে যাই তবে তোমার বোনের রাগ আসমান ছুঁতে পারে। সে রাগ ভাঙানোর জন্য প্রচুর কাঠখড় পুড়াতে হবে শালিসাহেবা!

মিশ্মি আপন মনে হাসলো। মুখে বললো,

-উত্তরটা হলো পড়াশোনা। আমি পড়াশোনা নিয়ে অত্যধিক ব্যস্ত। ক্লাস, কোচিং, নোটসের চাপে ভয়াবহ অবস্থা। তাই খুব হতাশ লাগে। আর কিছু না। আগে অথৈ ছিলো। আমার সব পেরেশানি দূর করে দিতো। ওর জন্য হলেও টেনশন ফ্রী থাকতাম। ও চলে যাওয়ার পর থেকে একদম একা হয়ে গেছি কিনা, তাই বিস্বাদ লাগে সব। পানসে লাগে। এখন থেকে এভাবেই থাকতে হবে তাই নিজেকে গুছাচ্ছি।

ইয়াসির ঠান্ডা গলায় বললো,

-তাহলে অথৈর ফোন রিসিভ করছো না কেনো?

-আমার মোবাইলে কিছু প্রবলেম হয়েছে। ফুল ভলিয়োমে রাখলেও রিংটোন শোনা যায় না। তাই হয়তো খেয়াল করি নি। ব্যস এইটুকুই।

ইয়াসির কপালে চিন্তার ভাজ ফেলে মিশ্মির দিকে তাকালো। চেহারায় খুশি বিরাজ করলেও চোখ দেখে মনে হচ্ছে কতকাল ঘুমায় নি সে। ইয়াসির আর কিছু বলবে তার আগেই সেখানে উপস্থিত হয় নিহান। মিশ্মিকে নিরব বসে থাকতে দেখে ছুটে আসে কাছে। টেবিলের কাছে দাঁড়িয়ে বলতে লাগে,

-মিশু তুমি এখানে আর আমি তোমার সারা ভার্সিটিময় খুঁজছি। এতোদিন আসো নি কেনো? কোথায় ছিলে? মেসেজ সীন করো না, কল রিসিভ করো না। সমস্যা কি তোমার? না কি আমায় এভোয়েড করছো? ক্লাস‌ও তো করোনি আজকের। এখানে বসে আছো কেনো? কথা বলছো না কেনো?

মিশ্মি অনেকটাই ঘাবড়ে গেছে এতে। ইয়াসির ভ্রু কুঁচকে আছে। এই ছেলেটাকে বিয়েতে দেখেছিলো সে। মিশ্মিদের আত্মীয় হয়তো। নিহান চোখ ঘুরিয়ে ইয়াসিরের দিকে তাকিয়ে শুকনো হাসলো। মাথা চুলকে বললো,

-স্যার আপনি?

ইয়াসির এক ভ্রু উচিয়ে বললো,

-ইউ নো মি?

-হ্যা স্যার। আমি এই ভার্সিটির‌ই স্টুডেন্ট। প্রাণীবিদ্যা বিভাগ।

ইয়াসির হালকা মাথা উপর নিচ করে বললো,

-ওহ। মিশ্মিকে কি করে চেনো?

নিহান জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বললো,

-আমরা একে অপরের আত্মীয়। মানে দু পরিবারের কথা বলছিলাম আরকি। ইয়াসির নিহানকে বসতে ইশারা করলো। মিশ্মির পাশের চেয়ারটা টেনে তাতে বসে পরলো নিহান। ইয়াসির মৃদু গলায় বললো,

-শালিসাহেবাকে ট্রীট দিতে চেয়েছিলাম। তিনি তো নিতে ইচ্ছুক নয়। সেই কখন থেকে খাবার খেতে বলছি একটা দানাও খেলেন না। সকাল থেকেও না খেয়ে। দুলাভাইয়ের ইজ্জত মেরে দিলো!

কথাটা বলে হাসলো ইয়াসির। গোল গোল চোখে তাকালো নিহান। চাপা স্বরে বললো,

-সকাল থেকে কিছু খায় নি?

ইয়াসির ডানে বামে মাথা নাড়লো। নিহান পুরো শরীর ঘুরিয়ে মিশ্মির দিকে তাকালো। শান্ত গলায় বললো,

-খাচ্ছো না কেনো? শরীর খারাপ করবে তো!

-আমার খিদে পায় নি। আপনার পেলে আপনি খেয়ে নিন।

কথাটায় কিছু ঝাঁঝ মেশানো ছিলো। নিহান নরম গলায় বললো,

-এসব খেতে ইচ্ছে না করলে বলো অন্য কিছু খাওয়াই। খিদে পায় নি বলো না। আমি জানি তোমার খিদে পেয়েছে। কিন্তু তুমি খাচ্ছো না।

মিশ্মি কড়া গলায় বললো,

-জানেন‌ই যখন তখন জোর করছেন কেনো?

-জোর করা জ্বরুরি তাই।

হাতের ইশারায় ক্যান্টিনের স্টাফকে ডেকে সব খাবার নিয়ে যেতে বললো নিহান। সাথে আরো কিছু অর্ডার‌ও দিলো। মিশ্মি রাগে গজগজ করতে করতে যেই না উঠে দাঁড়াবে অমনি তার হাত ধরে ফেলে নিহান। চোখ রাঙিয়ে বলে,

-যেখানে বসে আছো বসে থাকো। নড়বে না একদম।

মিশ্মি ভয় পায় না। রাগ হয় তার। এসব কিছুই অবজার্ভ করছিলো ইয়াসির। নিহানের মিশ্মির দিকে তাকানো, কথা বলা, খাওয়ার জন্য জোর করা সর্বোপরি মিশ্মিকে শাসন করা। ইয়াসির মনে মনে হাসছিলো। ওয়েটার খাবার দিয়ে যেতেই ইয়াসির উঠে দাঁড়ালো। বললো,

-ইউ গাইজ ক্যারি অন। আমার ক্লাস আছে। বাই।

নিহান মিশ্মি দুজনেই সায় জানালো। ইয়াসির বেরিয়ে যেতেই নিহান মিশ্মিকে খেতে বললো। কিন্তু না। মিশ্মি তার কথা থেকে এক চুল‌ও নড়বে না। বার কয়েক বলার পর‌ও যখন মিশ্মি খেতে রাজি হলো না তখন নিজ হাতেই খাওয়াতে উদ্যত হলো নিহান। মিশ্মি চমকে উঠলো। বললো,

-সবাই দেখছে ভাইয়া।

-আই ডোন্ট কেয়ার। নিজে না খেলে আমি এভাবেই খাওয়াবো। সময় নষ্ট না করে হা করো।

-বললাম তো আমি খাবো না।

নিহান দাঁতে দাঁত চেপে নিচু গলায় বললো,

-এক চড়ে দাঁত ফেলে দেবো। হা করতে বলছি করো নয়তো,,,,

মিশ্মি ঢোক গিলে। ঠোঁট উল্টে তাকায় নিহানের দিকে। নিহানের চোখে মুখে ভীষন রাগ। যদি সত্যি সত্যি চড় থাপ্পড় মেরে দেয়? মিশ্মির কান্না পায় এবার। এর চেয়ে তো ভালোছিলো ইয়াসির থাকতেই খেয়ে নেয়া। নিহান আরো একবার চাপা স্বরে ধমক দিতেই মুখ খোলে মিশ্মি। নিহান দু এক বার খাইয়ে মিশ্মির হাতে চামচ দেয়। চেয়ারে গা এলিয়ে বসে বলে,

-এবার নিজে খাও। প্লেইট একদম ফাঁকা দেখতে চাই। শুরু করো। থামবে না, আর না কাঁদবে। চুপচাপ সব শেষ করে উঠো।

মিশ্মি আতঙ্ক নিয়ে খেতে লাগে। খাবারের স্বাদ বুঝতে পারছে না সে। শুধু গিলছে। বুক তার কাঁপছে। এই মুহূর্তে স্ট্রোক‌ও করতে পারে। মিশ্মির অবস্থা দেখে হাসি পেলেও হাসলো না নিহান। ঠোঁট চেপে ধরে হাসি আটকে থমথমে গলায় বললো,

-আস্তে খাও। বিষম খাবে নাহলে।

_____________________

সূর্য ডুবেছে কয়েক মুহুর্ত আগে। এখনো আবছা আলো আছে চারপাশে। বসার ঘরে পরিবারের বড় সদস্যরা আলোচনায় ব্যস্ত। কি আলোচনা করছেন তা হিমির অজানা। সে জানতেও না। তবে মাঝে মাঝে কানে আসে তাদের কথা বার্তা। কখনো চিৎকার, কখনো হুংকার, কখনো অট্টহাসি, কখনো গম্ভীর কথোপকথন। আজ‌ও তাই হচ্ছে। কোনো এক বিষয় নিয়ে গম্ভীর আলোচনায় বসেছেন মামার বাড়ির সবাই। মাঝে মাঝে কানে আসছে মামানির চেঁচানো, ধমকানো। ছোট মামীর কান্নার স্বর‌ও কানে আসছে সাথে তার আহাজারি। মামুর গলার আওয়াজ খুব কম পাওয়া যাচ্ছে। হঠাৎ হঠাৎ স্ত্রীকে থামাতে বলে উঠছেন,

-অনু থামো এবার।

কখনো ছোট ভাইয়ের ব‌উয়ের উদ্দেশ্যে বলছেন,

-এভাবে চেঁচিয়ে পুরো শহরকে জানানোর কোনো মানে আছে। শান্ত হ‌ও।

ছোট মামা এখনো অফিস থেকে ফেরেন নি বলেই তিনি আলোচনায় থাকতে পারলেন না। হিমি ভাবে এখন যদি ছোটমামাও থাকতেন তবে ব্যাপারটা কেমন হতো। নিশ্চয় আর সবদিনের মতো থতমত খেয়ে এক কথা বলতে গিয়ে আরেক কথা বলতেন। গুছিয়ে বলার অতি চেষ্টায় সব এলোমেলো করে বলতেন। সবাই নিশ্চয় ছোটমামার আবোল তাবোল কথা শুনে হেসে গড়িয়ে পরতো। ঝগড়া, কথা কাটাকাটি সব থমকে যেতো। হাসিতে মুখোরিত হতো সব। কিন্তু হলো না। সময়ের গতির সাথে বাড়তে লাগলো ঝগড়া ঝাটি। উচ্চ হতে লাগলো সবার গলার আওয়াজ। হিমি মুখ বিকৃত করে এসব না শোনার ভান ধরে জানালার গ্রিলে মাথা ঠেকালো। কিছু সময়ের মধ্যেই ধরাম করে এক আওয়াজ হলো। হিমি চমকে উঠলো। ঘাড় ঘুরালো। মনে হলো কেউ পরে গেলো হয়তো। হিমির ভাবনার মাঝেই আবার‌ও ধরাম করে আওয়াজ হলো। সাথে শুরু হলো ছোট মামীর গর্জন করে মিশ্মিকে বকা। বাইরে থেকে কারো কান্নার ধ্বনি ভেসে এলো ঘরে। হিমির বুকে ধক করে উঠলো। গলাটা মিশ্মির না? মিশ্মি কাঁদছে? ওকে কি ছোট মামি মারলো? ভাবনাকে পাশে রেখেই দৌড়ে গিয়ে দরজা খোললো। হন্তদন্ত হয়ে বের হয়ে দেখলো মিশ্মির চুলের মুঠি ধরে এলোপাথারি গালে চড় থাপ্পড় লাগাচ্ছেন মিশ্মির মা রোশন আরা। মিশ্মিকে নিজেকে বাঁচানোর কোনো চেষ্টা না করেই মাথার পেছনে হাত রেখে কেঁদে চলেছে। হানিফ শরীফ পেছন থেকে জোর গলায় বলছেন,

-ছোট ব‌উ ছাড়ো! এতো বড় মেয়েকে কেউ মারে? ছাড়ো বলছি। অনু আটকাও না। এই ছোট ব‌উ? আরে মেয়েটাকে ছাড়ো না।

অনাহিতা এগিয়ে এলেন না। থমথমে মুখে দাঁড়িয়ে র‌ইলেন। রোশন আরা থামছেন না দেখে দৌড়ে গেলো হিমি। ছোট মামীর হাত ধরে আটকে তাকে ঠেলে ঠুলে সরিয়ে দিয়ে মিশ্মিকে বুকে টেনে নিলো। কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি উঠেছে তার। চুলের কয়েক গাছি রোশন আরার হাতে লেগে আছে। মিশ্মি চুলের গোছায় হাত রেখে ফুঁপাচ্ছে। চাপা আর্তনাদ করছে।

চলবে,,,,,,,,,,,,,

হিমি
লেখনী- সৈয়দা প্রীতি নাহার

২৫.

রাত সাড়ে দশটা বাজে। মিশ্মির কান্না থেমেছে দু এক ঘন্টা আগে। ঘুমিয়েও পরেছে সে। গভীর ঘুমের মধ্যে থেকে থেকেই কেঁপে উঠছে। রোশন আরার হাত থেকে মিশ্মিকে বাঁচিয়ে নিজের ঘরে এসে ঢুকেছিলো হিমি। দরজাটাও আটকে দিয়েছিলো ভেতর থেকে। বাইরে তখন‌ও মিশ্মির মা হল্লা করছেন। মিশ্মি হাউমাউ করে কাঁদছিলো। মিশ্মিকে শান্ত করতে অনেক সময় ব্যয় হয়েছে হিমির। ডিনারের সময় বাইরে গিয়ে মিশ্মির জন্য খাবার এনেছিলো। খায় নি মিশ্মি। মুখ ভার করে নিরবে চোখের জ্বল ঝরাচ্ছিলো। শেষমেষ হিমি জানতে পেরেছে এই মারধরের কারন। দুপুরে কাজের মেয়েটি মিশ্মির ঘরের ব্যালকনি থেকে একটা ঝুড়ি পায়। ঝুড়ির ভেতরে অর্ধেক পুরা কিছু রঙিন কাগজ। কাগজ ছাড়াও আরো কিছু জিনিস পুরানো হয়েছে। কাজের মেয়েটি সেসব ফেলে দিতে নিলে চোখে পরে অনাহিতার। কৌতুহল বসত পুরে যাওয়া কাগজ গুলো হাতে উঠান। এ ধরনের রঙিন কাগজ মিশ্মি আর অথৈ কিনতো। অবসরে কাগজ কেটে ফুল পাতা, ফ্রেইম, আরো কতো কিছু তৈরি করেছে দুই বোন। কিন্তু এসব তারা বাদ দিয়েছে কলেজে উঠতেই। মাঝখানে কখনোই রঙিন কাগজ ঘরে দেখা যায় নি। তারাও কিছু কাটাকাটি করে নি। তবে এতোদিন পর আবার এ ধরনের কাগজ কে আনলো? পুরালোই বা কে? আর কেনো পুরালো? অনেক চিন্তা ভাবনা শেষে ছোট জা কে কিছু না জানিয়েই মিশ্মির ঘর তল্লাশি করতে উদ্যত হন তিনি। এ বয়সের মেয়েরা আবেগী হয়ে থাকে। মিশ্মি বরাবর‌ই চাপা স্বভাবের। এমন নয় তো সে কোনো সম্পর্কে জড়িয়েছে। সেই সম্পর্কের সাথে এই কাগজ গুলো কোনো ভাবে জড়িত হয়তো। তাই পুরিয়ে দিয়েছে! কথাগুলো ভেবে মিশ্মির আলমারি, বুক শেল্ফ, ড্রয়ার সব খুঁজলেন অনাহিতা। এমন কিছু পাওয়া যায় নি যা দেখে বুঝা যায় ওনার ভাবনা সত্যি। ঘর অগোছালো হয়ে যাওয়ায় নিজ দায়িত্বেই সব গোছাচ্ছিলেন তিনি। কি মনে করে হঠাৎ খাটের মোটা নরম তোশক উচু করে তুলে ধরেন। ওনার চিন্তাকে সত্যি করে দিয়ে দেখা মিললো এক গাদা রঙিন কাগজ। তবে তাতে কিছু লিখা নেই। কাগজ গুলো কেটে রাখা। কোনোটার হার্ট শেইপ অংশ কেটে রাখা, কোনোটার মাঝখান, কোনোটার এক কোনা, তো কোনো টা ডিজাইন করে কাটা। খটকা লাগে অনাহিতার। পুরো তোষক তুলে দেন অনাহিতা। চোখে পরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা এক পুরুষের ছবি। অনাহিতা সব ছবি একত্র করে এক এক করে দেখেন। পরিপাটি পোশাকের পুরুষটির চেহারা দেখা যাচ্ছে না। সব ছবিতেই খুব দূরে দাঁড়ানো লোকটি। লোকটির পেছন থেকে খুব সাবধানে তোলা হয়েছে ছবিগুলো। একটাতেও যুবক ছবির জন্য তৈরি নয়। কোনোটায় হাঁটছে, কোনোটায় মোবাইল হাতে, কোনোটায় ফোনে কথা বলছে আর কোনোটায় কারো সাথে কুশলাদি বিনিময় করছে। অনাহিতা অবাক হন। ছবিগুলো উল্টে পাল্টে দেখেন। গভীর দৃষ্টিতে ছবির পুরুষকে দেখে তিনি থতমত খেয়ে যান। ভয়ে বুক কেঁপে উঠে। এ যে ওনার‌ই জামাই। ছোট মেয়েটার বর ইয়াসির। এ কি করে হলো? উনি সত্যিই দেখলেন? মিশ্মি অথৈর স্বামীর লুকিয়ে ছবি তুলতো? ফলো করতো? কেনো? আর এই কাগজ! ‌কি করতে চেয়েছিলো এই মেয়ে? সদ্য বিবাহিত মেয়ের সংসার ভেঙে যাবে না তো? অথৈ যে খুব ছোট থেকেই বিয়ে করার শখ নিয়ে বড় হয়েছে। যখন‌ই কেউ জানতে চাইতো বড় হয়ে কি হবে সে, জোর গলায় বললো সে ব‌উ হবে। বয়সের সাথে ম্যাচিউরিটি এলেও বিয়ের শখ যায় নি তার। কখনোই না। এতো তাড়াতাড়ি সব ভেস্তে যাবে? আচ্ছা ইয়াসির‌ও কি এসবে মিলিত? ইয়াসির অথৈকে ধোকা দিচ্ছে? পরকিয়া? না কি এসব কিছুই জানে না সে? হাজারটা প্রশ্নে মাথা ঘুরায় অনাহিতার। চোখ বোজে লম্বা শ্বাস টেনে ঘর অগোছালো রেখেই বেরিয়ে পরেন। নিজ ঘরে ঢোকে দরজা এঁটে কল লাগান মেয়েকে। দু এক কথা বলে মিশ্মির কথা তোলেন। বলেন ওর ব্যাপারে কিছু জানে কি না। অথৈ মহা উৎসাহে জানায় মিশ্মির সাথে ইয়াসিরকে কথা বলতে বলেছিলো সে। কথা হয়েছে। মিশ্মি পড়া নিয়ে টেনশনে আছে। মেয়ের কথায় স্বস্তি পান না অনাহিতা। ভাবেন সন্ধ্যায় কথা তুলবেন। করলেন‌ও তাই। হানিফ শরীফ বাড়ি ফিরতেই জা আর তার মেয়েকে ডেকে ছবি আর কাগজগুলো দেখান অনাহিতা। মাথায় আকাশ ভেঙে পরে রোশন আরার। মিশ্মিও ঘাবড়ে যায়। কথায় কথায় অনাহিতা বলে ফেলেন ‘এগুলো ইয়াসিরের ছবি’! ব্যস লেগে গেলো দঙ্গল। অপমানে মিশ্মিকে মারতে লাগেন রোশন আরা।

হিমির বুক কাঁপে। কি করবে ভেবে পায় না সে। বাড়িতে সবার মন খারাপ। মেয়েকে প্রহার করার পর সারা সন্ধ্যা কেঁদে ভাসিয়েছেন রোশন আরা। মিশ্মির বাবা হাশিম শরীফ‌ও রেগে আছেন স্ত্রীর উপর। সেই সাথে হতবাক মেয়ের কাজে। হিমির মনে প্রশ্ন জাগে সকাল হলে কি আবার‌ও এসব শুরু হবে? সবাই বকবে মিশ্মিকে? আবার‌ও কি ছোট মামী মারবে তাকে? উত্তর মেলে না। গাঢ় শ্বাস টেনে খাটে এসে বসে হিমি। মিশ্মির পাশের বালিশটায় মাথা রাখে। কয়েক মিনিট পর কাত হয়ে শোয় হিমি। হাত বুলিয়ে দেয় মিশ্মির মাথায়। চোখ দুটো অসম্ভব রকম ফুলে আছে। গাল দুটোও ফুলো ফুলো তার। কান্নায় ভেজা মুখটা অতীব স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে। ঠোঁট হালকা ফাঁক করে শ্বাস টানছে মিশ্মি। আলুথালু চুলে হাত বুলিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে হিমি। অজান্তেই তার চোখের কোনায় জ্বল জমা হয়। আপন মনেই মিশ্মির ওকালতি করে।

‘ভালোবাসা কি দোষের? নয় তো! তবে ওকে কেনো মার খেতে হলো? একজনকে ভালোবেসেছে শুধু। সেই একজন যদি তার বোনের ভবিষ্যত স্বামী হয় তাতে তার কি দোষ থাকতে পারে? মিশু তো আগে জানতো না এই লোকটা কিছু দিনের ব্যবধানে তার বোনের প্রেমে পরবে। মিশু শুধু ভালোবেসেছিলো। ভেবেছিলো তার ভালোবাসা পূর্ণতা পাবে। পায় নি। এখানেও তার প্রতি অবিচার হলো। তার পর‌ও মিশুর দোষ কেনো হবে? কেনো সবাই তাকে বকবে? অকথ্য কথায় গালি গালাজ করবে? ছবিই নাহয় তুলেছে কয়েকটা। লোকটাকে দেখবে বলেই তুলেছিলো। তখন‌ও সে জানতো না তার ভালোবাসা তার নয় অন্য কারো। জানলে হয়তো এতোটা এগুতো না। অথচ কি স্বাভাবিক ভাবেই না ছোট মামী তাকে মরে যাওয়ার বদ দোয়া দিলেন! মায়ের দোয়া যেমন ফলে যায় বদ দোয়াও তো ফলে যায়। ছোট মামী কি এসব জানেন না? ওনার ওই কথাটা যদি সত্যি হয় তবে কি করে থাকবেন মেয়েকে ছাড়া? রাগের মাথায় যা তা বলা গেলেও কথা ফেরানো যায় না। মিশু নির্দোষ, নিষ্পাপ। অপরাধী তো ছোটমামী। সাজা হিসেবে মিশুর উচিত মায়ের সাথে কথা না বলা। মেয়েকে বিশ্বাস করতে না পারলে মায়ের সাথে কেনো কথা বলবে সে? কি করে মা ভাবলো তার মেয়ে অন্যের সংসার ভাঙছে? মিশু চাইলেই বিয়ের আগের দিন ইয়াসিরকে বলতে পারতো তার সবটা। বলে নি। এই ভেবেই যে অথৈর কি হবে! ওর স্বপ্ন ভেঙে যাবে নয়তো ইয়াসিরের সাথে বিয়ে হলে ভবিষ্যতে মিশুর কথা ভেবে গিল্টি ফিল করবে। বোনের কথা ভেবে যে ভালোবাসা বিসর্জন দিলো তাকে এভাবে মারধর করবে কেনো ওরা?’

এটুকুতেই থেমে যায় হিমি। ফোনের ঘন্টা বেজে উঠে তার। বিরক্তি নিয়ে ফোন কানে ঠেকাতেই অপর প্রান্তের ব্যক্তিটি বলে উঠে,

-আমি পৌঁছে গেছি। আপনি কোথায়?

হিমি কান থেকে ফোন নামিয়ে স্ক্রিনে তাকায়। আহত দৃষ্টিতে ঘড়ি দেখে চুপসে যাওয়া গলায় বলে,

-সরি বাচ্চা ডাক্তার। আজ আসতে পারছি না।

তাহির চমকায়। উদ্বীগ্ন গলায় বলে,

-কেনো?

-পারিবারিক একটা কাজে ফেঁসে গেছি। কাল দেখা করি?

তাহির গাল ফুলিয়ে শ্বাস ছাড়ে। বেশ কিছুক্ষন নিরবতায় কাটিয়ে বলে,

-রাখছি।

সাথে সাথে হিমি বলে উঠে,

-রাগ করলেন?

তাহিরের স্পষ্ট জবাব,

-হু।

হিমি কুঁচকানো ভ্রুকে আরো খানিক কুঁচকায়। বলে,

-সেটা আবার বলছেন ও?

-জিজ্ঞেস করলেন তো বলবো না?

-না বলবেন না। তবে বলেই যখন ফেলেছেন তখন রাগ ভুলে যান।

তাহির থমথমে গলায় বললো,

-আমি রাগ ভুলতে পারি না হিমি। আর না ভুলতে চাই।

হিমি অবাক হ‌ওয়া গলায় বললো,

-আপনি যে রেগে আছেন তা আমি বুঝতে পারছি না কেনো?

-আমি বুঝতে দিচ্ছি না তাই।

-কেনো দিচ্ছেন না?

-কারন আমি চাই যেনো আমার রাগ শুধু আমাতেই আবদ্ধ থাকে। যেহেতু আসছেন না সুতরাং ঘুমিয়ে পরুন।

হিমি তাড়াহুড়া করে বললো,

-আপনি রেগে থাকলে যার উপর রেগেছেন তার সাথে কথাও বলেন? তাও এতো স্বাভাবিক ভাবে?

তাহির শান্ত গলায় বলে,

-হ্যা। আমার অভ্যাস আছে।

হিমির কৌতুহলী গলায় প্রশ্ন,

-কিসের অভ্যাস?

-বলবোনা।

-কেনো?

-আমি আপনার উপর রেগে আছি হিমি। আমার আপনার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না। অসহ্য লাগছে।

-আপনার গলা শুনে কিন্তু সেটা মনে হচ্ছে না।

-মনে না হলেও এটাই সত্যি।

-আচ্ছা, এখন যদি আমি আপনার সামনে থাকতাম তবে রেগে গিয়ে কি করতেন আপনি?

তাহির বাঁকা হেসে বলে,

-আপনি আমার সামনে থাকলে আমার রেগে যাওয়াটা হতো না।

-কেনো?

-আপনি আসেন নি বলেই রেগে আছি। এখানে থাকলে রাগ হতো না।

হিমি মাথা দুলিয়ে মৃদু গলায় বলে,

-আচ্ছা ছাড়ুন। এখন বলুন কেনো দেখা করতে চেয়েছিলেন?

-দেখা হলে বলবো।

-আপনি এখনো আমার সাথে দেখা করতে চান?

-দরকারটা যেহেতু আমার তাই অবশ্য‌ই দেখা করতে চাই। নেক্সট যেদিন দেখা করবো বলে ঠিক করবো ওইদিন আমাকে রাগাবেন না যেনো?

-যদি রাগাই তবে কি করবেন?

-এখন‌ই বলতে পারছি না। পরিস্থিতিতে না পরলে আমি সব বুঝতে পারি না। কি করবো না করবো সেটা সময়, পরিস্থিতি, মনোভাব থেকেই আসে।

কিছুক্ষন থেমে ছোট্ট নিঃশ্বাস টেনে নিয়ে বলে,

-আমি করবো সেটা জানার জন্য আবার রাগিয়ে দেবেন না যেনো। দেখা গেলো সে রাগ আর কখনো পরলোই না।

হিমি ঠেস মারা গলায় বললো,

-আপনার রাগ না পরলে আমার কি? দরকার তো আপনার।

-এখন দরকার আমার। পরে আপনার দরকার পরবে। হন্নে হয়ে খুঁজলেও এই ডক্টর তাহিরকে খোঁজে পাবেন না।

হিমি আত্মবিশ্বাসী গলায় বললো,

-তাতে কি? আমি বাচ্চা ডাক্তারকে খোঁজে নেবো।

-দুজন‌ই কিন্তু আমি।

-উহু। ব্যতিক্রম আছে বাচ্চা ডাক্তার। আপনি বুঝবেন না।

তাহির নিঃশব্দে হাসে। সে বুঝতে পারে তার রাগ লাগছে না। হিমির কথা শুনতে ভালো লাগছে তার। মন হালকা লাগছে। ক্লান্তিও অনুভব হচ্ছে না। আর কোনো কথা হয় না তাদের মধ্যে। নিজ থেকে দুজনে ফোন কাটে। কেউ কাউকে বাই বলে না। বলে না আবার কবে কথা হবে। বলে না কবে দেখা হবে, কোথায় দেখা করবে। তবে সব‌ই যেনো জানে দুজনে। অদ্ভুত।

_________________

ভোর হতে না হতেই আবার‌ও জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হয় মিশ্মিকে। বসার ঘরে সোফায় মুখোমুখি বসে আছেন পরিবারের বড়রা। মিশ্মি কাঠগড়ার আসামীর মতো এক কোনায় মাথা নত করে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ থেকে টপাটপ জ্বল পরছে তার। হিমি সোফার পেছন দাঁড়িয়ে ছিলো এতক্ষন। অনাহিতার মিশ্মির উপর ছুড়ে দেয়া কাঁদা মেনে নিতে না পেরে এগিয়ে আসে সে। গমগমে গলায় বলে,

-যার ছবি দেখছেন সে ইয়াসির নয়। নিহান। আমার চাচাতো ভাই। নেহাল চাচ্চুর ছেলে।

বসার ঘরে যেনো বিস্ফোরণ ঘটে। ব্যাপারটা কি হলো কিছুই বুঝলো না মিশ্মি। চোখ তুলে বিস্ময় নিয়ে দেখছে হিমিকে। হিমি কোনো কিছুতে পাত্তা না দিয়েই বললো,

-এই ছেলেটা নিহান। নিহান মিশুকে ভালোবাসে। তবে মিশু এসব ছবি টবি তোলে নি।

-যদি তাই হবে তবে এতো ছবি এলো কোত্থেকে? আর পুরালোই বা কেনো কাগজগুলো?

অনাহিতার কথার জবাবে ঢোক গিলে হিমি। শান্ত গলায় বলে,

-ছবিগুলো নিহান পাঠিয়েছে। কাগজ গুলোও ওর দেয়া। সেই কবে থেকে মিশুকে ভালোবাসে। মিশুকে নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করতে ভয় পায় বলেই সামনে আসে নি। রঙিন কাগজে চিঠি ফিঠি লিখে মিশুর ব‌ইয়ে ভাজে রেখে দিতো। সাথে একটা করে ছবি। চেহারা দেখাতে চাইতো না বলেই পেছন দিক থেকে বা আড়াল থেকে ছবি তুলতে বলতো বন্ধুদের। এক‌ই ভার্সিটিতে পরে দুজনে। ছবি আর চিঠি ব‌ইয়ের মাঝখানে রাখতে ঝামেলা হয় নি। মিশু ভয় পেয়ে গেছিলো। তাই সব পুরিয়ে দিচ্ছিলো আরকি।

অনাহিতার হিমির কথা বিশ্বাস হলো না। ভ্রু নাচিয়ে বললেন,

-তোশকের নিচ থেকে যে কাগজ পেয়েছি তাতে তো কিছু লিখা নেই। ছেলেটা কি খালি ছেড়া কাগজ পাঠিয়েছিলো?

হিমি বিজ্ঞদের মতো করেই জবাব দেয়,

-মামানি তুমি বুঝো নি। নিহান পুরো কাগজে লিখে নি। কিছু অংশে লিখেছে প্রেম নিয়ে। মিশু পুরো কাগজ পুরানোর কথা না ভেবে লিখা জায়গাটাই কেটে পুরিয়ে দিয়েছে। বুঝলে?

অনাহিতা সন্দিহান গলায় বললেন,

-তুই কি করে এসব জানলি? মিশু বললো আর অমনি বিশ্বাস করে নিলি। কথা লুকাতে এসব বলছে ও।

-মিশু কিছু বলে নিতো! নিহান বলেছে। কাল তোমাদের হাতে ছবি দেখেই বুঝে গেছি ওগুলো নিহানের। তাই ফোন করে ইনিয়ে বিনিয়ে জিজ্ঞেস করলাম। পরে দেখি সবটাই বলে দিলো। সত্যি বলছি মিশুর কোনো দোষ নেই। এটা অথৈর বর ইয়াসির নয়? আমার ভাই। সেই ছোটবেলা থেকে চিনি একে। নিহানের হাটা চলা, দাঁড়ানো সব চোখের ভেতর ক্যাপচার করা। ছবিতে নিহান‌ই!

চলবে,,,,,,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে