হিমি পর্ব-১০+১১

0
830

হিমি
লেখনী- সৈয়দা প্রীতি নাহার

১০.

অর্থনীতির ক্লাস শেষ করে সবে বেরিয়েছে মিশ্মি। উল্টোদিকের বিল্ডিংএ গার্লস কমন রুমে বসার উদ্দেশ্যে পা বাড়াতেই পুরুষালী গলায় ভেসে এলো মিশ্মির নাম। মিশ্মি চমকে উঠে এদিক ওদিক তাকালো। নীল টি শার্টের উপর নীল সাদার চেক শার্ট পরনে নিহান দাঁড়িয়ে। রোদচশমা টি শার্টের গলায় ঝুলানো। হাতে কালো রঙের ঘড়ি। চুলগুলো খাড়া হয়ে আছে। চাপ দাঁড়িতে হাত বুলিয়ে শ্যামবর্ণের ছেলেটি মিশ্মির মুখোমুখি দাঁড়ালো। মৃদু হেসে বললো,

‘কেমন আছো?’

মিশ্মি হাসার চেষ্টা করে বললো,

‘ভালোই। আপনি কেমন আছেন ভাইয়া?’

নিহান মাথা দুলালো যার অর্থ সে ভালো আছে। মিশ্মি কোনো কথা বললো না বিপরীতে। চোখ ঘুরিয়ে আশপাশ দেখছে সে। নিহান কিছু বলবে বলবে করেও থেমে যাচ্ছে। কোনো এক কারনে গলায় কথাগুলো আটকে যাচ্ছে। শেষমেষ জোর করে বলেই ফেললো,

‘বাড়ি ফিরছো?’

মিশ্মি আমতা আমতা করে বললো,

‘আমি আসলে কমন রুমে যাচ্ছিলাম।’

নিহান ভ্রু কুঁচকালো। ঘড়িতে সময় দেখে নিয়ে বললো,

‘তোমার ক্লাস তো শেষ মেই বি। এর পর আর কোনো ক্লাস আছে বলে মনে হচ্ছে না।’

মিশ্মি ছোট্ট করে বললো,

‘জি ক্লাস নেই।’

‘তাহলে কমন রুমে বসবে কেনো? বাড়ি কখন ফিরবে?’

মিশ্মি অপ্রস্তুত হাসলো। বললো,

‘ফিরবো কিছুক্ষন পর। একটানা ক্লাস করে ক্লান্ত হয়ে গেছি তাই রেস্ট নিতে বসতাম একটু।’

নিহান হাস্যোজ্জল গলায় বললো,

‘তাহলে চলো। বসি কোথাও। আমার ফ্রেন্ডসরা নিজস্ব কাজে ব্যস্ত। একা ভালো লাগছে না। তুমি থাকলে সঙ্গ পাওয়া যাবে।’

মিশ্মি চেয়েও না করতে পারলো না। নিহানের সাথে হাঁটা দিলো। ভার্সিটির পেছনের সারিবদ্ধ গাছের পাশে বেঞ্চে বসলো দুজনে। এখানকার পরিবেশ খুব ভালো। রোদের তাপ খুব একটা লাগে না। গাছের ছায়ায় আটকে যায়। ফুরফুরে বাতাস‌ও বয়। ছাত্র ছাত্রীদের গিজগিজ কম। নিরিবিলিতে অনেকটা সময় পার হলো। নিহান বুঝতে পারে মিশ্মি কথা বলতে লজ্জা পাচ্ছে। মেয়েটা বরাবর‌ই এমন। আগ বাড়িয়ে কখনোই কিছু বলে না। চাপা স্বভাবের। নিহানের সাথে পরিচয় খুব অল্প দিনের বিধায় সংকোচ বোধ করছে। মিশ্মিকে সহজ করতে তার পরিবার, বাবা মায়ের কথা জানতে চায় নিহান। মিশ্মি‌ও সাধারন ভাবে জবাব দেয় প্রতি কথার। নিহানের পরিবার সম্পর্কেও টুকটাক প্রশ্ন করে। তারপর আবার‌ও সেই নিরবতা। নিহান বেঞ্চ থেকে উঠে গিয়ে ঝালমুড়ি কেনে। মেয়েরা স্ট্রীট ফুড খুব ভালোবাসে। মিশ্মিও ভালোবাসে। নিহান দেখেছে মাঝে মাঝেই এই রাস্তায় ঝালমুড়ি খেতে ছুটে আসছে মিশ্মি আর তার বন্ধুরা। মিশ্মির বন্ধুদের দল বড় নয়। ছোট। মাত্র তিনজন তারা। এই তিনজনের মধ্যে একজনের বিয়ে হয়ে গেছে। স্বভাব বসত বিবাহিত বান্ধবী আগের মতো মিশতে পারে না। তাতে মিশ্মি বা তার বান্ধবী তন্নীর কোনো হেলদোল নেই। নিহান ঠোঙায় ঝালমুড়ি নিয়ে ফিরে এলো বেঞ্চে। মিশ্মি অন্যমনস্ক হয়ে বসে ছিলো। নিহান ঠোঙা এগিয়ে দিলে ঘাড় ঘুরিয়ে নিহানকে দেখে মিশ্মি। নিহান‌ও তাকায় তার দিকে। চোখাচোখি হয় দুজনের। মিশ্মির ছোট চোখদুটো ফুলে আছে। কপালে অজান্তেই ভাজ পরেছে। মিশ্মি চোখ সরিয়ে মাটির দিকে তাকায়। মাথা নেড়ে বলে,

‘খাবো না ভাইয়া। আপনি খান।’

নিহানের কানে বাজতে থাকে ‘ভাইয়া’। মিশ্মি প্রায় সবাইকেই ভাইয়া বলে ডাকে। কিন্তু তা বলে নিহানকেও ডাকবে? এই ভাইয়া শব্দটা শুনলেই রাগ লাগে নিহানের। আর কেউ ডাকলে নয় শুধু মিশ্মি ডাকলে। যাকে ব‌উ করতে চায় সে যদি বার বার ভাইয়া ডেকে নিজেকে বোন বানিয়ে দেয় তাতে রাগ হ‌ওয়াটাও স্বাভাবিক। এসব তো মিশ্মি বুঝে না। সে নিষ্পাপ মনেই ভাইয়া ডেকে বেরায়। আর এদিকে আহত হয় বেচারা প্রেমিক।

‘তুমি তো ঝালমুড়ি পছন্দ করো!’

‘আপনি কি করে জানলেন?’

নিহান জোরপূর্বক হেসে বললো,

‘কি করে আবার! সব মেয়েরাই এসব ভালোবাসে তাই মনে হলো।’

মিশ্মি থমথমে গলায় বললো,

‘সবার ভালোবাসা পূর্ণতা পায় না। তাই সময় থাকতেই সরে যাওয়া উচিত।’

নিহান ভড়কে গেলো। ভড়কালো মিশ্মি নিজেও। নিজের অজান্তেই এক কথার মাঝে আরেক কথা বলে ফেলেছে সে। নিহান সন্দিহান গলায় বললো,

‘মানে? আমি তো এসব কিছু বলি নি মিশ্মি। তাহলে সরে যাওয়ার কথা আসছে কেনো?’

মিশ্মি নিহানের হাত থেকে ঠোঙা নিজের হাতে নিলো। এক মুঠো ঝালমুড়ি হাতে নিয়ে মুখে পুরলো। খেতে খেতে বললো,

‘ও কিছু না। এমনিই বলছিলাম। আপনার ক্লাস নেই?’

নিহান জবাব দিলো না। মিশ্মির বলা কথার পেছন কারন খুঁজছে সে। মিশ্মি হয়তো ব্যাপারটা বুঝে গেলো। কথা ঘুরাতে বললো,

‘ঝাল নেই একদম। একটু লঙ্কাগুড়ো এনে দেবেন?’

নিহান যেনো হাতে আকাশের চাঁদ পেয়েছে! চট করে দাঁড়িয়ে দৌড় লাগালো ঝালমুড়ি নিয়ে দাঁড়ানো লোকটার কাছে। লঙ্কাগুড়োর বোতল নিয়ে ফিরে এলো সে। মিশ্মি দু তিন বার বোতল ঝাঁকিয়ে অনেকটা লঙ্কাগুড়ো ঢাললো মুড়িতে। ভয়ানক ঝাল অনায়াসেই খেলো সে। নিহান কথা বাড়ানোর তাগিদে বললো,

‘শপিং শেষ?’

মিশ্মি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো। নিহান হাসি মুখে বললো,

‘তোমার বোনের বিয়ের শপিং? কি যেনো নাম ওর?’

মিশ্মির চেহারা ছেয়ে গেলো নিকষ কালো অন্ধকারে। ঝালমুড়ি চিবানোয় মনোযোগী হয়ে বললো,

‘অথৈ।’

‘হ্যাঁ, অথৈ। ওর বিয়েটা একটু তাড়াতাড়ি হয়ে যাচ্ছে না?’

মিশ্মি দীর্ঘশ্বাস গোপন করে বললো,

‘হয়তো! তবে অথৈ খুশি। বর কনে খুশি হলে আমাদের‌ও উচিত খুশি হ‌ওয়া।’

নিহান মাথা দুলিয়ে প্রশ্ন করলো,

‘পাত্র কি করে?’

‘ভার্সিটির প্রফেসর।’

নিহান গোল গোল চোখে তাকালো। ভাবুক গলায় বললো,

‘কোন ভার্সিটির? অথৈ যে ভার্সিটিতে পরে সেখানের? প্রেমের বিয়ে না কি?’

মিশ্মি ঠোঁটে কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে বললো,

‘অনেকটাই তাই। স্যার ওকে দেখে প্রেমে পরে গেছেন। অথৈ ওনাকে চেনে না। আসলে, তিনি আমাদের ভার্সিটির প্রফেসর।’

নিহান আবার‌ও চমকালো। কৌতুহলী গলায় বললো,

‘কোন প্রফেসর?’

‘জীব বিজ্ঞান ডিপার্টমেন্টের ইয়াসির আহমেদ।’

‘হুয়াট! ‌উনি? ‌ইয়াসির স্যার? ‌ইয়াসির স্যার অথৈকে দেখে প্রেমে পরেছেন?’

মিশ্মি ভাবলেশহীন গলায় বললো,

‘এতো অবাক হ‌ওয়ার কি আছে? প্রেমে পরতেই পারেন। অথৈ কি কম সুন্দরী না কি?’

নিহান ফিচেল গলায় বললো,

‘তা নয়। কিন্তু ইয়াসির স্যার কারো প্রেমে পরতে পারেন জানা ছিলো না। উনি তো কখনো কোনো মেয়ের দিকে চোখ তোলে তাকান নি অব্দি। শুনেছি ক্লাসের মেয়েদের‌ সাথে বেশ রুড বিহেইভ করেন। আর সেই তিনি প্রেমে পরে গেলেন? দেখলেন কোথায় ওই পিচ্চিকে?’

মিশ্মি হাসলো। হেসে হেসেই বললো,

‘যাকে চোখ তোলে দেখেছেন তার প্রেমেই পরেছেন। আমাদের ভার্সিটিতে অনুষ্ঠান ছিলো। অথৈও এসেছিলো সেদিন আমার সাথে। তখন‌ই হয়তো দেখেছেন। আমি জানি না সঠিক।’

কথা শেষ করে উঠে দাঁড়ালো মিশ্মি। নিহান‌ও উঠে দাঁড়ালো তার সাথে। মিশ্মি ব্যস্ত ভঙ্গীতে বললো,

‘আসছি ভাইয়া। পরে কথা হবে।’

নিহান অনিচ্ছাসত্ত্বেও মাথা দুলিয়ে সায় দিলো। মিশ্মি কয়েকপা এগুতেই নিহান ছুটে এসে মিশ্মির সামনে দাঁড়ালো। বলতে লাগলো,

‘আমি ড্রপ করে দেই?’

মিশ্মি ঝট করে বলে উঠলো,

‘না। মানে, আপনার সাথে আমায় দেখলে বাড়িতে তুলকালাম লেগে যাবে।’

‘বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে নামিয়ে দেবো নাহয়। খুব রোদ! ‌এই সময় রিকশাও পাবে না হয়তো। ইউ ক্যান ট্রাস্ট মি।’

মিশ্মি কথা বাড়ালো না। মৃদু হেসে যেতে রাজি হলো।
.

পেশেন্ট দেখার মাঝপথেই মায়ের ফোন পেয়ে কিছুটা বিব্রত হয় তাহির। ফোন না উঠিয়ে সাইলেন্স করে দেয় সে। প্রেসক্রিপশন লিখা শেষ করে রোগীকে রোগ বিষয়ক বিষদ বর্ণনা করে বিদায় জানালো। অ্যাসিটেন্টকে ডেকে বলে দিলো আজ আর রোগী দেখবে না সে। বাকিদের এপোয়েনমেন্ট কাল শিফ্ট করতে। অ্যাসিটেন্ট ছেলেটি তাহিরের কথা মতো রোগীদের চলে যেতে বললো। রোগীদের মধ্যে দেখি গেলো হতাশা। সারাদিন ধরে কেবিনের বাইরে বসে থেকে এখন ডাক্তার বলছে এটেন্ড করবে না। ডাক্তারকে কঠোর হৃদয়ের অধিকারি বলে মনে হতে লাগলো কারো কাছে। কেউ কেউ আবার ভয়ানক সব গালি গালাজ দিয়ে প্রস্থান করলো। কয়েকজন চুপচাপ চলে গেলেও মনে মনে এখানে আর কখনো না আসার প্রতীজ্ঞা করলেন। তাতে অবশ্য‌ তাহিরের কিছু যায় আসে না। তার একমাত্র ভাবনা মায়মুনাকে নিয়ে। কাজের সময় সচরাচর মা ফোন করেন না। আজ হঠাৎ‌ করলেন। তাও তিন বার। তাহির কল ব্যাক করলো। মায়মুনা জামান ফোন তুলে গম্ভীর গলায় বলেন,

‘আমরা পৌঁছে গেছি। তুমি কখন আসছো?’

তাহির চোখ বোজে লম্বা শ্বাস টানে। বলে,

‘সরি মা। আসতে দেরি হবে আমার।’

মায়মুনা জামান গলার স্বর কড়া করে বললেন,

‘পেশেন্ট দেখা কখন শেষ হবে?’

‘পেশেন্ট দেখবো না আর। কালকের এপোয়েনমেন্ট রেখেছি সবার জন্য।’

‘তাহলে আসতে পারবে না কেনো?’

‘আসতে পারবো না বলি নি মা। বলেছি দেরি হবে!’

মায়মুনা জামান সন্দিহান গলায় বলেন,

‘কিসের জন্য দেরি হবে তাহির? পেশেন্ট দেখা নেই, হাসপাতালে এমার্জেন্সি নেই। তবে?’

তাহির গ্লাস হাতে নিয়ে পানি খেলো। ঘাড় বাকিয়ে বললো,

‘শরীর খারাপ লাগছে। তোমরা কেনাকাটা করো। আমি কিছু সময় রেস্ট নিয়ে আসবো। তাছাড়াও আমার পছন্দ খুব বাজে। কি কিনতে কি কিনবো তার ঠিক নেই। আমি বরং তোমাদের পিক পরবো। রাখছি মা।’

মায়মুনা ফোন ব্যাগে রাখেন। পাশে বসা ভাইঝিকে নিয়ে চলে আসেন শপিং মলের বাইরে। ছেলে তার কথার অমান্য করছে। কয়েকদিন ধরেই করছে। বিয়ের আগে এই হাল হলে বিয়ের পর কি হবে ভাবতেই আত্‌কে উঠেন মায়মুনা। শপিং মলের দরজা পেরুতেই ভয়ঙ্কর এক ধাক্কা খান তিনি। যদিও দোষ মায়মুনার ছিলো তবুও অপর পাশ থেকে আসা নির্দোষ মেয়েটিকে দোষী বানিয়ে দিলেন তিনি। মেয়েটি হতবিহ্বল হয়ে গেলো। মায়মুনা রাগী গলায় এ যুগের ছেলেমেয়েদের বেহাল্লাপনা, বেয়াদবির পেছনে বাবা মায়ের দেয়া শিক্ষার দিকে আঙুল তুললেন। সামনে দাঁড়ানো মেয়েটি বিনীত ভাবেই বললো,

‘আন্টি আই এম সরি কিন্তু আপনি এভাবে আমার বাবা মায়ের ব্যাপারে কথা বলতে পারেন না। আমি মেনে নেবো না সেটা।’

মায়মুনার রাগ বেড়ে গেলো এতে। চোখ গরম করে বললেন,

‘তুমি আবার‌ও আমার আপমান করছো? বড়দের সাথে বেয়াদবি করার সাহস কোথায় পাও তুমি?’

‘আমি বেয়াদবি করছি না তবুও আমার কথা শুনে তেমন মনে হলে আমি সরি বলছি। সিন ক্রিয়েট করবেন না।’

‘সরি বলে আমাকে ধন্য করছো না তুমি। সরি শব্দটা বললেই সাত খুন মাফ হয়ে যায় না। মায়ের মতো এক মহিলাকে ইচ্ছাকৃত ধাক্কা দিয়ে তাকে আবার সরি বলো?’

মেয়েটি গাল ফুলিয়ে শ্বাস ছাড়লো। কাঠ কাঠ গলায় বললো,

‘যে কাজ আমি করি নি তার জন্য সরি বলতে বাধ্য ন‌ই আমি। ধাক্কা ইচ্ছাকৃত ছিলো না তার চেয়েও বড় কথা আপনি আমায় ধাক্কা দিয়েছেন। আমি দেই নি। সেক্ষেত্রে আপনার উচিত আমাকে সরি বলা।’

মায়মুনা জামান গর্জে উঠেন এবার। কেনাকাটা করতে আসা প্রায় সবাই জড়ো হয়ে গেছে সেখানে। মায়মুনা বলেন,

‘তোমার স্পর্ধা দেখে আমি আশ্চর্য হচ্ছি। বয়সে বড় একজনকে সরি বলতে বলছো তুমি। কোনো কান্ডজ্ঞান আছে তোমার?’

‘জি না নেই। আমি ভীষন খাপছাড়া আর আপনার কথায় বেয়াদব। যেমন তেমন বেয়াদব ন‌ই ভয়ানক বেয়াদব। আমার বেয়াদবি প্রকাশ পায় ঠিক তখন যখন কেউ আমার বাবা মা নিয়ে কথা বলে। তাই বলছি, যা হয়েছে ভুলে যান। এই যে আপু, নিয়ে যান ওনাকে। হাইপার হয়ে যাচ্ছেন তো। অসুস্থ হয়ে পরতে পারেন।’

মায়মুনার ভাইঝি তাকে অনুরোধের সুরে বললো,

‘চলো ফুপি। গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। কথা বাড়িয়ে লাভ নেই।’

মায়মুনা কপট রাগ নিয়ে বেরুলেন। ভীড় কিছুটা ফাঁকা হতেই কাপরের অনেকগুলো ব্যাগ হাতে এগিয়ে আসেন অনাহিতা। বাইরের দিকে তাকিয়ে বলেন,

‘কি হচ্ছিলো হিমি? তুই এখানে দাঁড়িয়ে কি করছিস? ‌অথৈ কখন থেকে অপেক্ষা করছে তোর জন্য।’

হিমি মাথা চুলকে শার্টের হাতা ঝেড়ে বললো,

‘কিছুনা মামানি। একজনের সাথে ধাক্কা লেগেছিলো। তিনি আবার সম্পূর্ণ দোষ আমার ঘাড়ে চাপাচ্ছিলেন। একটু কথা কাটাকাটি। আর কিছুনা।’

অনাহিতা ঠেস মারা গলায় বললেন,

‘যেখানে যাস সেখানে ঝামেলা বাঁধিয়ে দিস। না জানি আমার মেয়ের বিয়ের দিন কি করে বসিস তুই! চল এখন।’

হিমি মিঁইয়ে যায় কিছুটা। শুকনো ঢোক গিলে মামানির হাত থেকে ব্যাগগুলো নিজের হাতে নিয়ে এগুতে থাকে উপর তলার দিকে। ধাক্কা দেয়া মহিলার উপর রাগ লাগছে হিমির। এনাকে ভদ্র মহিলা বলা যায় না কিছুতেই। আবার অভদ্র মহিলাও বলা যায় না। বড়দের সম্মান দিয়ে কথা বলতে হয়। যদিও তিনি সম্মানের যোগ্য নন তবুও অসম্মান করা যাবে না। এনাকে স্মৃতি থেকে আউট করতে হবে। একদম ডিলিট।

চলবে,,,,,,,,,,

হিমি
লেখনী- সৈয়দা প্রীতি নাহার

১১.

তাহির বসার ঘর অতিক্রম করতেই হনহন করে ঘরে ঢোকেন মায়মুনা আর ওনার ভাইঝি হৃদি। রাগে, অপমানে মায়মুনার গা জ্বলছে। ফুসফুস করে শ্বাস ছেড়ে ছেলেকে দেখলেন তিনি। তাহির ভ্রু কুঁচকে মায়ের উদ্দেশ্যে বললো,

‘এতো তাড়াতাড়ি চলে এলে যে? আমি এক্ষুনি বেরুচ্ছিলাম।’

হিমির উপরের সমস্ত রাগ ঝপাং করে তাহিরের উপর এসে পরলো। মায়মুনা জামান গম্ভীর গলায় বললেন,

‘যাওয়ার হলে এতক্ষনে যেতে তুমি। যেতে চাও নি বলেই হসপিটাল থেকে ঘরে ফিরেছো।’

তাহির মায়ের কথায় জমে যায়। হালকা কেশে বলে,

‘তা নয়। সত্যি আজ শরীর খারাপ করছিলো। তাই আজকের সব এপোয়েন্টম্যান্ট ক্যানসেল করে বাড়িতে রেস্ট নিতে এসেছিলাম। ফোনে তো বলেছিলাম মা। দেখো আমি রেডিও হয়েছি। কিন্তু, দেরি হয়ে গেছে না বেশি? তোমরা কেনাকাটা করেছো তো? ব্যাগ কোথায়? হৃদি তুই,,,,’

তাহিরের কথার মাঝেই বড় বড় পা ফেলে উপর তলায় নিজ ঘরে চলেন মায়মুনা। কিছুক্ষন থম মেরে থেকে তাহির হৃদির দিকে তাকায়। মায়মুনার শোবার ঘরের দরজা বন্ধ হ‌ওয়ার আওয়াজ পেয়েই চোখ বোজে লম্বা শ্বাস টানে হৃদি। হ্যান্ড ব্যাগ টেবিলে রেখে সোফায় গা এলিয়ে বসে। তাহির উল্টোদিকের সোফায় বসে কৌতুহলী গলায় প্রশ্ন করে,

‘মায়ের কি হয়েছে হৃদি? আমি যাই নি বলে রেগে আছে?’

হৃদি হালকা মাথা দুলিয়ে রান্নাঘরের দিকে তাকিয়ে উচু গলায় ডেকে উঠে ফুলের নাম। কালো রঙের ময়লাটে জামা গায়ে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসে ফুল। বিনীত ভঙ্গীতে বলে উঠে,

‘জি আফা?’

হৃদি বিরক্তির শীষ তুলে বলে,

‘হুয়াট আফা? কতোবার তোকে,,,, ছার ঠান্ডা পানি খাওয়া তো। গ্লাস ভর্তি ঠান্ডা পানি।’

মেয়েটি আবার‌ও দ্রুত পা ফেলে ফ্রিজ খোলে পানির বোতল বের করে। পরিষ্কার গ্লাসে বোতল থেকে পানি ঢেলে হৃদির হাতে ধরিয়ে নিজ কাজে ফিরে। হৃদি ঢকঢক করে পানি খায়। একবারেই পুরো গ্লাস ফাঁকা করে টেবিলে নামিয়ে রাখে। শান্ত গলায় বলে,

‘তুমি যাও নি বলেই নয় শুধু আরো অনেক কাহিনী আছে।’

তাহির ভ্রু নাচায়। হৃদি মায়মুনার ঘরের দিকে চোখ বুলিয়ে ফিসফিস করে বলে,

‘তোমার আসতে দেরি হচ্ছে বলে ফুপি আমায় নিয়ে মল থেকে বেরিয়ে আসছিলেন। ঠিক ওইসময় আরেকটা মেয়ে ঢুকছিলো। তোমার চিন্তায় বা রাগে ফুপি অন্যমনস্ক। মেয়েটাও তাড়ার মাঝে ছিলো হয়তো। ব্যাস! যা হ‌ওয়ার হলো।’

তাহির স্মিত গলায় বললো,

‘কি হলো?’

‘ধাক্কা। এদিক থেকে ফুপি ওদিক থেকে ওই মেয়ে। একদম মুখোমুখি সংঘর্ষ।’

তাহির ছোট্ট নিঃশ্বাস টেনে বললো,

‘মা নিশ্চয় খুব রেগেছে মেয়েটির উপর!’

হৃদি ঘাড় বাঁকিয়ে বললো,

‘তা আর বলতে? ফুপির রাগ তখন আসমান ছুঁই ছুঁই। রাগের মাথায় মেয়েটাকে যাচ্ছেতাই বলছিলেন। মেয়েটাও কম না! কয়েকটা কথা শুনিয়ে দিয়েছে। তারপর থেকেই ফুপির অপমান অপমান বোধ হচ্ছে।’

হৃদির কথা বলার ভঙ্গী দেখে মৃদু হাসলো তাহির। কপালে আঙুল ডলে বললো,

‘তুই যা ফ্রেশ হয়ে নে। আমি দেখছি মাকে।’

হৃদি মাথা দুলিয়ে উঠে দাঁড়ালো। আফসোসের সুর তোলে বললো,

‘আমার মেয়েটার জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে জানোতো!’

‘কেনো?’

‘মেয়েটার তো কোনো দোষ‌ই ছিলো না। শুধু শুধু ওতো কথা শুনতে হলো বেচারিকে। জানো, ফুপির সাথে ধাক্কা খেয়ে শপিং মলের দরজায় গিয়ে পিঠ ঠেকেছিলো তার। বা হাতে মেই বি ব্যাথা পেয়েছে। কিন্তু কিছুই বলে নি বিপরীতে!’

তাহির সন্দিহান গলায় বললো,

‘একটু আগেই না বললি কয়েকটা কথা শুনিয়েছে মাকে?’

‘আরেহ, ফুপি যখন ওর মা বাবার শিক্ষা আদব হেন তেন নিয়ে কথা বলছিলেন থুক্কু অপমান করছিলেন তখন‌ই তো কথা বললো সে। ইন ফ্যাক্ট ও যেসব কথা বলেছে তার জন্য ক্ষমাও চেয়েছিলো। কিন্তু তুমি তো চেনো তোমার মা জননীকে! কোনো কথাতেই কাজ হলো না। বরং রাগ বেড়ে সপ্তম আসমান ছুঁয়েছিলো।’

তাহির পকেটে ডান হাত গুজলো। মায়ের এমন ব্যবহার খুব পুড়াচ্ছে তাকে। মায়ের সাথে কথা বলা উচিত এ ব্যাপারে। হৃদি হ্যান্ড ব্যাগ হাতে তুলতে তুলতে বললো,

‘আসলে ফুপির রাগটা অন্য জায়গায় ছিলো।’

তাহির রাগি গলায় বললো,

‘আশ্চর্য! ‌এক এক বার এক এক কথা বলছিস কেনো তুই? একবারে সুষ্ঠু ভাবে সব কথা বলতে পারিস না?’

হৃদি অসহায় মুখ করে বললো,

‘সব গুলিয়ে যায় তো। আর তাছাড়াও ফুপি এ কথা আমায় গাড়িতে বসে বলেছেন। পুরোটা রাস্তা মেয়েটার আদব কায়দা আর পোষাকের কথা বলে বলেই মাথা চাপড়াচ্ছিলেন।’

তাহির গমগমে গলায় বললো,

‘মা এমন‌ই। ওনার মতে বাঙালী মেয়েরা বাঙালীর মতো থাকবে। তাদের পোশাকে বাঙালী বাঙালী ভাব থাকবে, আচার আচরণে উচ্চ বংশের পরিচয় থাকবে। কোনো মেয়ে যদি ওয়েস্টার্ণ পরে মায়ের কথার জবাব দেয় তবে সে আন ডাউটেডলি আনকালচার্ড প্লাস বেয়াদব। যেমন তুই!’

হৃদি চোখ মুখ অন্ধকার করে বললো,

‘ভাইয়া প্লীজ। জন্মের পর থেকে বিদেশে বড় হয়ে দেশে এসে যদি বাঙালী সাজতে বলা হয় তাহলে সেটা আমার পক্ষে অসম্ভব। ওয়ান মোর থিঙ, আমি কখনোই ফুপির কথার জবাব দেই না। খালি শুনি।’

তাহির মাথা ঝাঁকিয়ে সিড়ির দিকে পা বাড়াতেই হৃদি তাচ্ছিল্য মাখা গলায় বলে,

‘মেয়েটার জামা আমার মতো ছিলো না বাই দ্যা ওয়ে। কিছুটা তোমার মতো ছিলো। টি শার্ট, তার উপর শার্ট, প্যান্ট, কেড্স, হাতে ঘড়ি, বেল্ট। চুলগুলো যদিও মেয়েদের মতো। কোঁকড়ানো। পোশাকের সাথে চুলের মিল নেই খুব একটা। অদ্ভুত।’

তাহিরের পা অটোমেটিক থেমে গেলো। নিজের মনেই বলে উঠলো একটা নাম ‘হিমি’। আবার ভাবলো পৃথিবীতে এক‌ইরকম চুল, পোষাকের স্টাইল থাকে। এই দেশে এক‌ইরকম হাজার হাজার মেয়ে না হলেও দু একজন থাকতে পারে। প্রয়োজন নয় সেই একজন হিমিই হবে। হতে পারে মায়ের সাথে অন্য কোনো মেয়ের ধাক্কা লেগেছে।
.
.
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে একের পর এক শাড়ি, ড্রেস নিজের উপর রেখে দেখছে অথৈ। সবগুলোই দূর্দান্ত। কিন্তু পরতে হবে যেকোনো একটা। এটাতেই সমস্যা। হিমির পছন্দ অনুযায়ি হলুদ, মেহেদীর আউটফিট কেনা হয়েছে বলে এখন আর সেগুলো দেখতে হবে না। মুশকিল তো এঙ্গেইজমেন্টের রাতে কি পরবে সেটা নিয়ে। দেখতে এসে ছেলের মা আঙটি পরালেও ছেলের কথা সে এঙ্গেইজমেন্ট করবে। শ্বাশুরির থেকে আঙটি পরা হয়েছে বরের থেকে তো নয়! ‌বর ব‌উকে আঙটি পরাবে এটাই তো নীতি। কিন্তু এ দেশে সব উল্টো হয়। মা বাবা অথবা গুরুজনরা বিয়ের রিং কনের হাতে পরিয়ে দেয়। এর মানে হলো কনের এঙ্গেইজমেন্ট বরের পরিবারের সাথে হয়েছে। ইয়াসির এর সম্পূর্ণ বিরধীতা করে। ফলস্বরুপ নতুন করে আরো একটি অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। অথৈর অবশ্য এতে লাভ‌ই হলো। ছোট বেলা থেকেই আর সব মেয়েদের মতো রুপকথার স্বপ্ন দেখেছে। নিজেকে রাজকুমারী ভাবে নি যদিও, ভাবে নি তার রাজকুমার সাদা ঘোড়ায় চরে আসবে। তবে ভেবেছে তার বর‌কে সে রাজকুমার বলেই সম্বোধন করবে। তার বিয়েতে সপ্তাহব্যাপী আয়োজন চলবে। হ্যান্ডসাম কিউট করে একটা ছেলে তার বর হবে, যার মুখের দিকে তাকিয়েই সারাজীবন পার করা যাবে। অতিরিক্ত ভালোবাসা, দেখভাল, শাসন এসব তো থাকতেই হবে অথৈর প্রতি। একদম সিনেমার হিরো। আজ যখন সেই রুপকথা বাস্তব হচ্ছে তখন নিজের পছন্দস‌ই হ‌ওয়া চাই সব। অথৈ গাঢ় বেগুনি রঙের লেহেঙ্গা গায়ে লাগিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখছিলো নিজেকে। অথৈ কোথায় শুনেছিলো মানুষ নিজেকে যতোটা সুন্দর মনে করে অন্যের কাছে তার সৌন্দর্য দুই গুন বেশি থাকে। অর্থাৎ তার উচিত নিজের পছন্দ নয় অন্যের পছন্দ যাচাই করা। হিমি অনাহিতার কাজে হাত লাগাতে চলে গেছে অনেক আগে। অথৈর রুমে এই মুহুর্তে এক মাত্র মিশ্মি আছে। অথৈর ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা জামা গুলোর ভাজ ঠিক করে নির্দিষ্ট জায়গায় রাখছে সেগুলো।

‘মিশু? এটায় ভালো লাগবে আমাকে? বল না!’

মিশ্মি একপলক দেখলো। মৃদু গলায় বললো,

‘তোকে সব কিছুতেই ভালো লাগে। যা ইচ্ছে পরতে পারিস।’

অথৈ কিছুটা খুশি হলো মিশ্মির কথায়। তবে খুশি জাহির করলো না। গলা কেশে বললো,

‘যা ইচ্ছা বললে হয় না কি? এঙ্গেইজমেন্টে এমন কিছু পরা উচিত যাতে সবাই তাক লেগে যায়। বল না কোনটা পরবো।’

মিশ্মি সোজা হয়ে দাঁড়ালো। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে অথৈকে দেখে খাটে পরে থাকা বাকি পোশাকের দিকে তাকালো। সাদা রঙের গাউন হাতে উঠিয়ে অথৈর গায়ে ঠেকালো মিশ্মি। ভালো করে আগাগোড়া নিরক্ষন করে মিষ্টি করে হেসে বললো,

‘পারফেক্ট! তুই কাল এটাই পর। বিয়েতে তো লেহেঙ্গাই পরবি। রিং সিরেমনিতে গাউনটাই বেস্ট। একদম রাজকুমারি লাগবে।’

অথৈ গোল গোল চোখে গাউনটার দিকে তাকালো। উল্টো ঘুরে আয়নায় নিজেকে দেখে গাল ফুলিয়ে বললো,

‘কিন্তু এটার সাথের জুয়েলারি কিনি নি তো? কি করে পরবো?’

মিশ্মি অভয় দিয়ে বললো,

‘আমি কিনে আনবো।’

‘তুই? কোথা থেকে আনবি?’

‘কোথা থেকে আবার জুয়েলারির দোকান থেকে! আমার ওই পুরাতন রুপার ব্রেসলেইটের কথা মনে আছে? পাথর পরে গেছিলো বলে পরতেই পারি নি আমি। ভাবছি আজ গিয়ে সেটা ঠিক করিয়ে আনবো। সাথে তোর গাউনের সাথে ম্যাচিং জুয়েলারি। হবে?’
.
.
দরজায় টোকা পরতেই লক খোলে বেরোন মায়মুনা জামান। চিন্তিত গলায় বলেন,

‘তোমার সত্যি শরীর খারাপ করছিলো তাহির? কেমন লাগছে এখন? রাগের মাথায় খেয়াল‌ই করি নি তোমার কথা। ইশ! কিছু খেয়েছো বাড়ি ফিরে? আব্দুল ফুল ওরা খোঁজ নিয়েছে তোমার?’

মায়ের কথায় মৃদু হাসে তাহির। মাকে শান্ত করে ঘরে গিয়ে বসে। ফিচেল গলায় বলে,

‘তেমন কিছু হয় নি মা। অস্বস্তি হচ্ছিলো। যা গরম পরেছে তাই হয়তো!’

‘তুমি কিছু খেয়েছো কি না সেটা বলো!’

‘হ্যাঁ মা খেয়েছি। বাড়ি ফিরতেই আব্দুল কোল্ড কফি আর স্ন্যাক্স দিয়ে গেছিলো।’

মায়মুনা জামান স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলেন,

‘এখন ভালো লাগছে?’

তাহির মাথা নাড়ে। মায়মুনা জামান হাসি মুখে বলেন,

‘আমি নামাজ পরে ফেলি। দেরি হয়ে যাচ্ছে। তুমি যাও, রেস্ট নাও। হৃদি ফ্রেশ হয়েছে?’

তাহির মাথা দুলিয়ে বললো,

‘হয়তো।’

কিছু বলবে বলবে করেও বলতে পারে না তাহির। ধীর পায়ে ঘরের বাইরে আসতে নিলেই মা বলে উঠেন,

‘আজ কি হয়েছে জানো?’

তাহির ঝটপট মাথা নাড়লো। অর্থাৎ সে জানে না। মায়মুনা জামান উৎসাহিত গলায় বললেন,

‘সামিয়া এসেছিলো শপিংএ। তবে বেশিক্ষন থাকে নি। ও ভেবেছিলো তুমি থাকবে। কিছু কথা টথা বলতো হয়তো। তুমি যাও নি বলে চলে গেলো। শাড়ি, লেহেঙ্গা কিছুই দেখে নি। যেদিন তোমার সময় হবে বলো, মেয়েটাকেও ডেকে নেবো। বিয়ের কেনাও হবে আর কথাও বলতে পারবে।’

তাহির সায় জানালো। মায়মুনা গর্ব করে বললেন,

‘মনের মতো মেয়ে পেয়েছি। রুপ গুন মাশা আল্লাহ! ‌আচার আচরণ তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না।’

মুহুর্তেই থমথমে গলা করে বললেন,

‘আরো তো আছে। ফর্সা, সুন্দরী তবুও বড়দের সম্মান করতে জানে না। চেহারা দেখে কে বলবে বেয়াদব! ‌একদম নিষ্পাপ। ফুলের মতো চেহারা।’

তাহির অবাক হ‌ওয়া গলায় বললো,

‘কার কথা বলছো মা? ফুলের মতো চেহারা মানে? আমাদের ফুলের মতো?’

মায়মুনা জামানের ধ্যান ভাঙে। তাচ্ছিল্য হেসে বললেন,

‘কতজন‌ই তো আছে। ছারো ওসব! তুমি বুঝবে না। যাও যাও, রেস্ট নাও।’

তাহিরের মুঠোফোন বেজে উঠে। হাসপাতাল থেকে ফোন এসেছে। তাহির দ্রুত পা ফেলে বাইরে আসে। ফোন উঠিয়ে কানে ঠেকায়। ওপাশের কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,

‘আসছি।’

চলবে,,,,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে