স্বপ্নীল ১৩

0
1223

স্বপ্নীল
১৩

“কি জানি কি মন্ত্র দিয়া জাদু করিল,,,সোনাবন্ধে!
সোনাবন্ধে আমারে পাগল করিলো,
সোনাবন্ধে আমারে দিওয়ানা বানালো

ওই গানটার মাউথ অর্গানের সুরে বাজছে। নীল উইন্ডোর পাশে দাঁড়িয়ে রাতের আকাশ দেখছিল। হঠাৎ করে মাউথ অর্গানে গানটার সুর শুনতে পায়। গানের সুরে যেন তাকে ডাকছে।বার বার মনে হচ্ছে এই সুরে পাগল করে দিচ্ছে তাকে। কি আছে এই সুরটায়।তাকে কেন এত টানে,সে কি এই সুরওয়ালা এত মনোমুগ্ধকর সুরের প্রেমে পড়েছে।হয়ত পড়েছে।না হলে কেন তার মনে ভিতরে এত আনচান আনচান করছে। আর দেরী করা যাবে না, তাহলে কালকের মত আবার সেই সুরওয়ালা কে মিস করব।

সুরওয়ালাকে খুঁজতে সে বের হয়ে যায়।তাকে বের হতে দেখে প্রাচ্য পিছন থেকে অনেকবার ডাকে কিন্তু সে যে এতই সুরে প্রেমে মগ্ন ছিল প্রাচ্য ডাক তার কান অব্দি পৌঁছায়নি।

★★★
প্রাচ্য রুমে তৃণ আসে প্রাচ্যর পাওয়ার ব্যাংক টা নেওয়ার জন্য।সে রুমে এসে দেখে প্রাচ্য মাত্র গোসল করে বের হয়েছে।ভেজা চুল গুলো তোয়ালে দিয়ে মুছতে মুছতে আয়নার সামনে যায়।প্রাচ্য আয়নার ভিতরে তৃণ দেখে তার দিকে ফিরে বলে,
-“এতরাতে তুই আমার রুমে কেন??”
তৃণ কোনো কথা না বলে প্রাচ্যর দিকে এগিয়ে যায়।প্রাচ্য ভেজা চুল থেকে পানি পড়ছে টুপটুপ করে। নিজের হাত বাড়িয়ে দিয়ে সে পানি নিজের হাতে নিচ্ছে।তা দেখে প্রাচ্য বলে উঠে,
-“করছিস কি তুই?”
তৃণ হুস করে একটা শব্দ করে প্রাচ্যর ঠোঁটে তর্জনী আঙ্গুল রাখে।সাথে সাথে প্রাচ্যর সর্ব
অঙ্গ কেঁপে উঠে,হাতের থেকে তোয়ালে পড়ে যায়।তার পিঠ আয়নায় ঠেকে যায়।তৃণ একহাত আয়নায় রেখে আরেক হাত প্রাচ্য’র চুলের পানি নিয়ে খেলা করছে সে।
-“এত রাতে গোসল করলি কেন?
তার এত কাছে তৃণ।যেন তার হার্টবিট বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম। মুখে দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।প্রাচ্য কিছু বলছে না দেখেই তৃণ নিজের দৃষ্টি চুলের পানি থেকে সরিয়ে প্রাচ্যর দিকে তাকায়। কি সিগ্ধতা এই মুখে, মায়া ভরপুর এই মুখে। এই সিগ্ধতার মোহ সে পড়েছে যাচ্ছে। নিজের ওষ্ঠদ্বয়ের মধ্যে প্রাচ্য’র অধরের ওষ্ঠদ্বয়গুলো বন্ধ করে নেয়।মুহুর্তের মধ্যে কি হয়ে গেলো প্রাচ্য কিছু বুঝে উঠতে পারেনি।নিজের সর্বস্ব শক্তি দিয়ে ধাক্কা মারে তৃণ কে।ধাক্কা খেয়ে সে নিজে হুসে ফিরে। কি করছিল সে এতক্ষন, সঙ্গে সঙ্গে প্রাচ্য’র দিকে তাকায়।প্রাচ্য’র দুচোখ দিয়ে নোনাজল গাল বেয়ে পড়ছে। বিচলিত হয়ে যায় সে। উঠে দাঁড়া সে,প্রাচ্যর দিকে এগিয়ে যেতে নিলে প্রাচ্য বলে উঠে,

-“তুই খারাপ সেটা জানতাম।এতটা খারাপ সেটা জানতাম।এত নিচ মন মানসিকতা তোর,ছিঃ।আমি সবাই বলে দিবো কি করছিস তুই আমার সাথে।
এটা বলে সে আর থামেনি দৌড়িয়ে বের হয়ে যায়।পিছন থেকে প্রাচ্য প্রাচ্য বলে অনেকবার ডাকে তৃন।তারপর প্রাচ্যর পিছন পিছন সে ও ছুটে যায়।

★★★

রিসোর্ট পিছনে বারান্দায় নীল আসে।কিন্তু আজকে এই খান থেকে কোনো সুর আসছে না। সে ভেবেছে হয়ত কালকের মত এই জায়গা তার সুরওয়ালা এখানে বসে মাউথ অর্গানের সুর তুলছে।তাই সে এখানে আসে। আবার সে সুর ওয়ালা কে খুজছে খুজতে পৌঁছে যায় রিসোর্ট হ্যালিপ্যাডের মুখকরা বারান্দায়। সে বারান্দা এসে দাঁড়ায় ।এখান থেকে হ্যালিপ্যাড দেখা যাচ্ছে।হ্যালিপ্যাডের দোলনায় কেউ একজন কে বসে থাকতে দেখে।আর সেই বসে থাকা ব্যাক্তি যে মাউথ অর্গান বাজাচ্ছে,বুঝা যাচ্ছে। মুহুর্তের মধ্যে তার মন আনন্দ পুলকিত হয়ে উঠে।অবশেষে তার সুরওয়ালাকে খুজে পেয়েছে।তাকে সামনে দেখে দেখতে পাবে।ইস!

সে বারান্দা থেকে পা বাড়ায় সে জায়গা থযাওয়ার জন্য।হঠাৎ সে শুনতে পায় প্রাচ্য গলা।স্বপ্ন স্বপ্ন বলে চিৎকার করে ঢেকে যাচ্ছে।কন্ঠ যেন কান্না মিশানো বুঝতে পারলো সে।তাই যে দিকে যাচ্ছিল সে দিকে না যেয়ে প্রাচ্য ডাক শুনে তার কাছে যাওয়ার জন্য উলটে দিকে যাচ্ছে।কি হয়েছে এত রাতে,প্রাচ্য কেন এভাবে চিৎকার করে সবাইকে ডাকছে।সবাইকে দেখে সে স্বপ্নের রুমে ভিতরে ঢুকতে, তাই সে ঢুকে দেখে প্রাচ্য কান্না করছে। বোনকে কান্না করতে দেখে তার পাশে গিয়ে বলে,
-“কি হয়ে আপু,কান্না করছ কেন?
তখনই স্বপ্ন তার রুমের ভিতরে তড়িঘড়ি করে ঢুকে বলে,
-“কি হয়েছে?
স্বপ্নে দেখে প্রাচ্য হামলে পড়ে তার বুকে,কুপিয়ে কুপিয়ে কান্না করতে থাকে।।প্রাচ্য মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
-“কান্না থামা! বল কি হয়েছে তোর।

প্রাচ্যর কান্না গতি যেন আরো বেড়ে গেছে।প্রাচ্য কিছু বলছে না দেখে সে তার বন্ধূদের দিকে তাকায়। প্রাচ্য কি হয়েছে জানার জন্য।রোদ,আর ধূসর বলে তারা কিছু জানে না।তারপর স্বপ্ন চোখ যায় তৃণ দিকে।সে এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে কাচুমাচু হয়ে।স্বপ্নের আর বুঝতে পেরেছে হয়ত তৃণ সাথে কিছু হয়েছে তার জন্য প্রাচ্য এমন করছে।কিন্তু তাদের মধ্যে বেশিভাগ পিঞ্চ মেরে একজন আরেকজন কে নানা কথা বলতে।কিন্তু আজকে তাদের মধ্যে কি হয়েছে যার জন্য প্রাচ্য এভাবে কাঁদছে।নিশ্চয় বিরাট কিছু ঘটে যার জন্য প্রাচ্য…

প্রাচ্য সব কথা খুলে বলে সবাইকে।এটা শুনে স্বপ্নের মেজাজ বিগড়ে যায়।প্রাচ্যকে সরিয়ে তড়িৎ গতিতে ছুটে যায় তৃণ দিকে।তৃণ শার্টের কলার চেপে ধরে বলে,
-“কেন করছিস এমনপ্রাচ্য সাথে।সবাইকে আমি বলে দিয়েছিলাম না, যা করবি বাইরে করবি আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেলের কারো সাথে এমন কোনো খারাপ আচরণ করবি না।যাতে তাদের সম্মানহানি হয়।
-“বিশ্বাস কর স্বপ্ন! আমি ইচ্ছা করে এসব করিনি।
-“কেন? করলি তুই এসব।
-“ছেড়ে দে স্বপ্ন ওকে”ধূসর এসে স্বপ্নের হাত থেকে তৃণ শার্টের কলার ছেড়ে নেয়।স্বপ্নে রুমে এককোনে নিয়ে ফ্যাসফ্যাস গলায় বলে
-কি করছিস স্বপ্ন!
স্বপ্ন কিছু না বলে রাগি চোখে তাকায় ধূসরের দিকে। ধূসর ঘাবড়ে যায়।শান্তনার সুরে বলে,
-“আমি বুঝতে পাচ্ছি তোর রাগ হচ্ছে।রাগ হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু তুই তো এটা জানিস।তৃণ প্রাচ্যকে ভালোবাসে। ভালোবাসার ক্ষেতে এসব কিসটিস হয়ে থাকে। এটা কি স্বাভাবিক নয়।
-“আমি মানছি তৃণ প্রাচ্যকে ভালোবাসে।কিন্তু তৃণ আজকের কাজ টা কি প্রাচ্যর ইচ্ছার বিরুদ্ধ করা কাজ। ও কেন প্রাচ্যকে জোর করে এসব করতে গেলো।আর তুই বলছিস ভালোবাসার ক্ষেতে এসব একটু আকটু হয়ে থাকে।ওদের মধ্যে তেমন কোনো সম্পর্ক আছে।যার জন্য তৃন এই কাজ করবে।তৃণ প্রাচ্যকে ভালোবাসে।প্রাচ্য কি তৃণকে ভালোবাসে?
-“বাসে!প্রাচ্য ও তৃণকে ভালোবাসে।।দেখিস না তুই,তৃণ মুখে টিনা মিনার কথা শুনলে প্রাচ্য ক্ষেপে যায়। তৃণ মুখে অন্য মেয়ের কথা শুনলে প্রাচ্যর হিংসা হয়,সহ্য করতে পারে না।এই জন্য পিঞ্চ মেরে কথা বলে তৃণকে।তুই ওদের মাঝে আর কথা বলিস।ওদের দুজন ব্যপার দুজনকে বুঝতে দে।
এটা বলে ধূসর যেয়ে প্রাচ্য পাশে দাঁড়ায়।সে বললো,
-“তোদের দুজন ব্যাপার তোরা দুজন বুঝে নেয়।আর প্রাচ্য তুই , তোর সাথে যা অন্যায় তৃণ করেছে তার শাস্তি তুই নিজেই ডিসাইড করে তৃণকে দিস।
এটা বলে তৃণ শার্টের কলার টেনে এনে প্রাচ্য’র পাশে দাঁড় করিয়ে বলে,
-“এই নে তোর আসামী কে।তুই কি করবি শাস্তি দিবি দে,,
প্রাচ্য কিছু না বলে বের হয়ে যায়।
-“যা গিয়ে মান ভাঙা।”
ধূসর কথা শুনে তৃণ স্বপ্নের দিকে তাকায়, স্বপ্নে ইশারা বুঝায় যেতে। তারপর দৌড়িয়ে যায় প্রাচ্য পিছন পিছন।প্রাচ্য যেয়ে রিসোর্টের পিছনে সিঁড়ি গুলোয় যেয়ে বসে।তার পাশে তৃণ বসে।তৃনকে বসতে দেখে দুইহাত দূরে সরে যায়, তৃণ আবার সেই দুইহাত দূরুত্ব ব্যবধান সরিয়ে আবার প্রাচ্য’র গা ঘেঁষে বসে।এবার প্রাচ্য সরে যেতে নিলে তার কোমর জড়িয়ে ধরে তৃণ।তার হাতে কিল দিতে দিতে কান্নাভেজা কন্ঠে প্রাচ্য বলে,
-“স-রা হাত, ভালো হবে বলছি।
-“হাত সরালে তো চলে যাবি তুই।আগে বল আমার কথা শুনবি। তাহলে হাত সরাবো।
-“প্রশ্নেই উঠে না।কোন দুঃখে আমি তোর কথা শুনতে যাবো। নোংরা মন মানসিকতা কোনো মানুষের সাথে আমার কোনো কথা নেই।
-“বিশ্বাস কর। আমি ইচ্ছা করে এমন করিনি। হঠাৎ করে তোকে এভাবে দেখেই,,,,
-“কি এভাবে দেখে,,আল্লাহই জানে আমার আগে কয়জন মেয়েকে তুই এভাবে জোর করে কিস করেছিস।নিশ্চয়ই তোর ওই গালফেন্ড কে কিস করেছিস।
-” কি সব উলটা পাল্টা কথা বলছিস তুই।তোকে প্রথম কিস করেছি।
-“তুই বললে আমি বিশ্বাস করবো।যে বন্ধুকে কিস করতে পারে।আর সে ছেলে নাকি গার্লফেন্ডকে কিস করেনি এখনো।বিশ্বাস করতে হবে এখন আমায় এই কথা। আমার তো মনে হচ্ছে তোর এই টিনার সাথে রুমডেট করা হয়ে গেছে।
-“প্রাচ্য!” এটা বলে জোরে চিৎকার দিয়ে থাপ্পড় উঠায় প্রাচ্য’র জন্য।কিন্তু নিজের রাগ দাঁতে দাঁত চেপে সংযত করে হাত নামিয়ে ফেলে। এত জোরে ধমক শুনে প্রাচ্য কেঁদে দেয়।প্রাচ্য’র গালে আলতো করে হাত রেখে বলে,

-“বিশ্বাস করতে পাচ্ছি না তুই আমাকে।তোকে কি দোষ দিবো,দোষ তো আআমার।আমিতো নিজেকে এমনভাবে উপস্থাপন করেছি তোর সামনে । তাই তুই আমাকে বিশ্বাস করতে পাচ্ছিস না। আমি শুধু লাস্ট এই কথা বলবো।যত যাই করি না কেন আমি,তোকে আজ পর্যন্ত কাউকে কিস দূরে কথা কাউকে টার্স পর্যন্ত ও করিনি।
এটা বলে তৃণ চলে যায়।প্রাচ্য বসে বসে কান্না করতে থাকে।
-“কিস করবে আমাকে আর ভালোবাসবে ওই টিনা কে।টিনাকে যখন ভালোবাসি তাহলে কেন আমায় কিস করলি, কেন, কেন?আমায় ভালোবাসা রিফিউজ করে টিনা ভালোবাসা গ্রহণ করেছিস তুই।আমার থেকে দেখতে বেশি সুন্দরী বলে।

হ্যালিপ্যাডের সব জায়গা তন্নতন্ন করে খুজেছে নীল।খুজে হয়না হয়ে গেছে সে। দোলনায় বসে ভাবছে সে।এই কিছুক্ষন আগেই এখানে তার সুরওয়ালা মাউথ অর্গানের সুর বাজছিল।কিন্তু এখন আবার কোথায় হারিয়ে গেলো। কোথায় চলে গেলো।তার খুব কান্না পাচ্ছে।একটু জন্য হারিয়ে ফেলেছে। আর কি দেখা পাবে সে। কালকেই তো চলে যাবে সে এখান থেকে। সুরওয়ালা আরো কতক্ষণ এখানে বসে থাকলে কি হত। বেশি কি ক্ষতি হয়ে যেত। সুরওয়ালাকে দোষ দিয়ে কি লাভ। সে কি জানে তার সুরের প্রেমে পড়েছে কেউ একজন।তার সুরে প্রেমে পড়ে বার বার তাকে দেখার জন্য ছুটে এসেছে।যদি জানত তাহলে নিশ্চয় অপেক্ষা করত।
নানা রকম চিন্তা ধারণা করেই।অবশেষে হতাশ হয়ে রিসোর্ট ফিরে যেতে হয়।

#চলবে
#কাউছার স্বর্ণা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে