সাত সমুদ্রের তিমির পর্ব-২০

0
895

#সাত_সমুদ্রের_তিমির
পর্বঃ২০
#সুমাইয়া_আফরিন

‘তুই এই মেয়েকে কেন বাড়িতে নিয়েছিস রাফাত?’

এক দফা অবাক হয়ে কথাটা বলে উঠল কাকলি সরকার। রাফাত অনুর হাত শক্ত করে ধরে দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে। বাড়ির সবাই হা করে তাকিয়ে আছে অনু আর রাফাতের দিকে। কাকলি সরকার আর সায়মা যেন আকাশ থেকে পড়েছে রাফাতের এমন কাজে। কাকলি সরকার আর সায়মা কোনোদিন ভাবেনি রাফাত অনুকে এই বাড়িতে নিয়ে আসবে। নিজেদের পায়ে নিজেরাই কুড়াল মারল তারা। চোখে রাগ ও আফসোসের পানি ভাসছে সায়মার।

বাড়ির কারো কারো ঠোটের কোণে অস্ফুট হাসি বিরাজ করছে। তারা একটু খুশিই হয়েছে অনু বাড়িতে আসায়। রাফাতকে খুশি দেখার অগাধ ইচ্ছা আছে তাদের। যার কারনেই তাদের মুখে আনন্দের আভা ছড়িয়ে আছে।

রাফাত অনুকে আর নিজের থেকে দূরে রাখার সাহস পাচ্ছল না যার কারনেই অনুকে এখানে নিয়ে আসা। অনু তার চোখের সামনে থাকলে অনুর প্রত্যেকটি পদক্ষেপ বুঝতে পারবে রাফাত। আর কোন কারনে অনু এমন করছিল সেটাও জানতে পারবে সে। রাফাত খুব ভালোভাবে জানে এই বাড়িতে অনুকে সবসময় অপমানিত হতে হবে। অনুর জোবনের ঝুকিও আছে এই বাড়িতে। আর সেই ঝুকি হচ্ছে সায়মা। রাফাত খুব সহজেই সায়ায়মাকে এই বাড়ি থেকে বের করে দিতে পারে কিন্তু তার মায়ের জন্য সে পারছে না। সায়মার প্রধান অস্ত্র হলো তার মা। এই অস্ত্র দিয়েই এখনও যুদ্ধ করে এই বাড়িতে টিকে আছে সে।

রাফাত অনুর হাত ধরে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করল। তার মায়ের সামনে গিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল,

‘এত অবাক কেন হয়েছো তুমি?অনু আমার স্ত্রী।যতটা তোমার অধিকার আছে এই বাড়িতে থাকার ততটা অনুরও আছে।’

কাকলি সরকার তার ছেলের এমন কথা শুনে অবাকের চুড়ান্ত পর্যায়ে পৌছে গেলেন। কাকলি সরকারের চোখ অসম্ভব লাল হয়ে আছে। মাথার রগগুলো ফুলে আছে তার। রাগে দাঁত কিটমিট করতে করতে বললেন,

‘তুই এই মেয়েটার সাথে আমার তুলানা করছিস?’

রাফাত তার মায়ের এমন কথায় ভ্রু ক্যচকে তাকিয়ে রইল। ফিচেল হাসি দিয়ে বলে উঠল,

‘তুমি এসব কি বলছো মম? ওর সাথে তোমার কেন তুলনা করবো না বলো তো। ও তো কতো মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে আর তুমি তো একটা মেয়ের সম্মানও বাঁচাতে পারোনি।’

কাকলি সরকার হতভম্বিত হয়ে তাকিয়ে রইলেন তার ছেলের দিকে। রাগে হাত পা থর থর করে কাঁপছে তার। রক্তিম চোখ ক্রমশ আরো রক্তবর্ণ ধারন করছে। রাফাত যে কখনো তার সাথে এভাবে কথা বলবে কখনো কল্পনাও করতে পারেনি সে। রাফাতের কথায় অনুর দিকে তাকাতেও এক প্রকার লজ্জা করতে থাকল তার।

রাফাত অনুর হাত আরো শক্ত করে ধরে টানতে টানতে উপরে নিয়ে গেল। রাফাতের পায়ের সাথে অনুর পা মেলাতে বারবার হুমড়ি খেয়ে পড়ছে সে। রাফাত একটা ঘরে এসে থমকে যায়। অনুর হাত ছেড়ে দিয়ে সোফায় ব্লেজারটা খুলে ওয়াশরুমে ঢুকে যায় রাফাত। অনু নির্বিকারভাবে তাকিয়ে থাকে রাফাতের যাওয়ার পানে।

রাফাতের থেকে চোখ সরিয়ে হতাশ হয়ে বিছানায় বসে পড়ে অনু। রাফাত তার বাড়িতে গিয়ে যা যা করেছে সবকিছুই যে এক দঃসপ্ন লাগছে তার কাছে। কিন্তু এটা দঃসপ্ন নয়। এটা বাস্তব ছিল। এক রাশ হতাশা নিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয় অনু। চোখ বন্ধ হয়ে আসছে তার। মনে পড়তে লাগল সেই আর্তনাদে ভরা সময়টার কথা।

এক ঘন্টা আগে,,,,,,,

রাফাত কিছুক্ষনের জন্য চুপ হয়ে গেল। অনু এখনও ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছে । দুইটা থাপ্পরে সম্ভব ব্যথা পেয়েছে সে। ছোট থেকেই মামার কাছে অনেক আদরে বড় হয়ে সে। তার মামা, মামি কখনো উচু গলায় তার সাথে কথা বলেনি আর এই ছেলেটা এসেই তাকে থাপ্পর মেরেছে, এটা ভাবতেই আরো কান্না পাচ্ছে তার। হঠাৎ রাফাত অনুর দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠল,

‘অনু পাঁচ মিনিটের মধ্যে ব্যাগ গোছাও। আমার বাড়িতে যাবে তুমি।’

অনু এতক্ষন নিচের দিকে তাকিয়ে ছিল। রাফাতের কথায় মাথা উচু করে অবাক দৃষ্টিতে তাকায় সে। রাফাতের কথায় ইরা,লারা আর মিমিও অবাক হয়ে গেছে। হা করে তাকিয়ে আছে রাফাতের ভাবান্তর মুখস্রির দিকে। রাফাত অনুর অবাক দৃষ্টি উপেক্ষা করে বলল,

‘কি হলো?তাড়াতাড়ি করো।’

অনু রাফাতের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। অনু রাফাতের কথার কিছুই যেন বুঝতে পারছে না। রাফাতের মা তাকে এক সেকেন্ডের জন্যেও সহ্য করতে পারে না আর এই লোক চাচ্ছে সে নাকি তার মায়ের চোখে সামনে সারাদিন থাকবে। অনু নাক টেনে একটা গলা খাকারি দিল। কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বলে উঠল,

‘আপনার মাথা ঠিক আছে তো রাফাত?’

‘তো আমাকে দেখে কি মনে হচ্ছে আমার মাথা ঠিক নেই?’

‘আসলেই মনে হচ্ছে। কারন আপনার মা আমাকে একদম সহ্য করতে পারে না তো আমি কীভাবে……

আর কিছু বলতে পারল না অনু। তার আগেই চুপ করিয়ে দিল রাফাত। উচ্চ কন্ঠে বলে উঠল,

‘তোমাকে এত বুঝতে হবে না। তোমাকে যতটুকু বলা হপ্যএছে ততটুকু করো।’

রাফাতের কথা শুনে মারাত্মক রাগ উঠছে অনুর। অনু একজন ইনডেপেন্ডেন্ট মেয়ে। কারো উপর সে নির্ভরশীল না। তো কোন কারনে সে রাফাতের কথা শুনবে?রাফাতের এমন কথার জন্য অনু কিছু বলতে গেল কিন্তু আর বলল না। নিজের রাগকে কোনো ভাবে সামলিয়ে ব্যাগ গোছানো শুরু করল।

ইরা, লারা আর মিমি অনুর ব্যাগ গোছানো দেখে অবাকের চুড়ান্ত পর্যায়ে পৌছে গেল। ইরা অনুর বাহুডানা ধরে একটু আড়ালে নিয়ে গিয়ে বলল,

‘অনু তুই সত্যিই রাফাতের সাথে যাবি?রাফাত তোর সাথে যা করলো তারপরেও তুই যাচ্ছিস ওর সাথে।’

অনু ইরার কথায় অনেকটা বিরক্ত হলো। বিরক্তিভরা নয়নে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,

‘আরে পাগল, রাফাতের বাড়িতে গেলে ওর বাবার বিষয়ে অনেক প্রমান জোগাড় করতে পারবো। কোনোভাবে রাফাতের বাবাকে হাইপার করে সব সত্যিটা বের করে ফেলবো তার মুখ থেকে। বুঝলি?’

ইরা ভ্রু উচু করে আবার নামিয়ে নিল। ইরা অনুর বুদ্ধির প্রশংসা করে ব্যাগ গোছাতে আগ্রহি করে তুলল।
_____________

হঠাৎ কপালে কারো ঠোটের স্পর্শ পেতেই চমকে উঠল অনু। চোখ খুলতেই নিজের মুখের অত্যন্ত কাছে রাফাতকে আবিষ্কার করল সে। রাফাত অনুর এভাবে জেগে ওঠাতে প্রচন্ড লজ্জা ও ভয় পেয়ে যায়। রাফাত ভেবেছিল অনু হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে কিন্তু রাফাতকে অবাক করে দিয়ে অনু দিব্যি জেগে আছে।

রাফাত এক লাফ দিয়ে অনুর কাছে থেকে দশ হাত দূরে চলে গেল। অনু ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে রাফাতের লজ্জামিশ্রিত মুখের দিকে। অনু ক্ষীণ স্বরে রাফাতকে বলল,

‘একজন ঘুমন্ত মেয়ের সুযোগ নিচ্ছিলেন? আমি তো আপনাকে ডিসেন্ট বয় ভেবেছিলাম। কিন্তু এখন তো দেখছি আপনি এতটাও ডিসেন্ট না।’

রাফাত অনুর কথার কি উত্তর দেবে বুঝতে পারছে না। হঠাৎ মুখে চিন্তিতভাব এনে বলে উঠল,

চলবে,

(ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে