শুভধ্বংস

0
1208
চৈতি খুব ভালো মতো আয়নায় নিজেকে দেখে নিচ্ছে। শাড়িটা একটু বেশি ফিনফিনে হয়ে গেল? ইটালিয়ান শিফন! আজ অনেক দিন পর হঠাৎ পুরানো দিনের কথা মনেপড়লো মনে আছে অল্প বয়সে এমন শাড়ি পরার বড় বাসনা থাকতো, দোকানে ঘুরে ঘুরে এই ধরনের শাড়ি হাতাহাতি করে চলে আসত পছন্দ হয়নি বলে। আসলে পার্সে থাকত মাত্র দু তিনশ টাকা। আজ এই ধরনের শাড়ি তার কেবিনেটে পড়ে থাকে কিন্তু পরতে ইচ্ছে করে না এখন মনে হচ্ছে ভুলই হয়েছে। স্বাচ্ছল্য আসার পর সব ধরনের বস্তুগত উপভোগ করা দরকার ছিল। কিন্তু বাচ্চাদের মানুষ করা, সংসার গুছানোয় কখন সময়টা ফাঁকি দিল…. আর হাতের মুঠো থেকে সব বেরিয়ে গেল। পরিণতি পাবার পর এখন অবশ্য ভুলের হিসাব বের করে কোন লাভ নেই… সে যাইহোক!
তবে আজ চৈতি চাচ্ছে তাকে প্রায় নিখুঁত দেখতে লাগুক। জীবনে প্রথমবারের মত মনে হয় প্রতিযোগিতায় নামছে সে। আজ তার বাড়িতে একজন অতিথি আসবেন। যে সেই অতিথি নয় বিশেষ অতিথি। কি মনে হচ্ছে গোপন কোনো প্রেম অভিসার কিনা? আসল ঘটনা তার চেয়েও জটিল! তার স্বামীর গোপন প্রেমিকা ও সম্ভাব্য দ্বিতীয় স্ত্রী আক্ষরিক অর্থে চৈতির সতীন আসছে তার সাথে দেখা করতে, চৈতিরই আহবানে। বিখ্যাত শিল্পপতি সামাদ তালুকদার এর সাথে কর্পোরেট মডেল কন্যা তানিয়ার দহরম মহরম একেবারে যাকে বলে ওপেন সিক্রেট! সামাদকে নিয়ে তানিয়ার সাথে চৈতি কখনও বসেই নি। কারণ প্রয়োজনবোধ করেনি, ধনবান ক্ষমতাবান পুরুষদের আশেপাশে দুধের মাছি ছোক ছোক করেই এতে এত গুরুত্ব দিতে নেই। কিন্তু বেলায় বেলায় পানি অনেক গড়িয়েছে! দীর্ঘ ছয়মাস শীতল যুদ্ধের পর চৈতির সাথে সামাদের ডিভোর্স এখন সময়ের ব্যাপার।আজ তানিয়াকে ডেকে পাঠিয়েছে চৈতি। মেয়েটিও দারুণ স্মার্ট কিছুই না জানার ভান করে বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে রাজি হয়ে গেছে। আপাত দৃষ্টিতে রাজত্ব ছাড়ার আগে হবু রানীকে ঠান্ডা মাথায় তার রাজত্ব বিষয়বস্তু বুঝিয়ে দেওয়া মতো ব্যাপার বলা যায় আজকের মিটিং।যদিও তানিয়ার হবু রানী হবার ব্যাপারটা এখনও ওপেন সিক্রেট! অন্য অর্থে একটা চল্লিশোর্ধ্ব বয়স্ক মধ্যমমানের শিক্ষিতা ক্লান্ত মধ্য বয়স্ক রমনীর সাথে সাতাশ বছর বয়স্ক এমবিএ উদ্ভিন্নযৌবনা অপরূপা রূপসী তানিয়ার প্রতিযোগিতা…..। এখানে আসতে এককথায় তানিয়া রাজি থাকলেও এখন চৈতির সন্দেহ হচ্ছে মেয়েটা আসবে তো? দেরি করছে কেন? কল দেবে একটা? বারবার ফোন করলে আবার দাম না বেড়ে যায়।তবু মোবাইলটা তুলতেই যাচ্ছিল… “ম্যাডাম, নিচতলায় মেহমান আসছে আপনার খোঁজ করে” সাবিহা ধীর পায়ে কখন দরজায় দাঁড়িয়েছে, চৈতি চমকে উঠল, ” কেমন মেহেমান? ” ওই যে ওই তানিয়া! এক দুইবার আইসিলো আগে , কইলো আপনার সাথে কথা হইসে ” সাবিহা শ্লেষের সাথে বলল।
চৈতি ভিতরে ভিতরে ভালোই চমকালো। সাবধানে ঢোক গিলে সহজভাবে বললো,” ওপরে নিয়ে আসো” সাবিহা অবাক হয়ে বলল, “উপরে আনমু বেডরুমে? ” সাবিহার চোখে বিশ্বের সাথে চাপা একটা ক্ষোভ ধরা পড়ছে। ওকি কিছু বুঝতে পারছে তানিয়া মেয়েটা কে,? চৈতি সাবিহার দৃষ্টিকে পাত্তা না দিয়ে বলল, নিয়ে আসো উপরেই নিয়ে আসো উপরের লিভিং এ বসাও সোজাসোজি বেডরুমে নিয়ে আসা লাগবে না। সাবিহা অসম্ভব বিস্মিত হলো তারচেয়ে বেশি রকমের মুখ বেজার করে চলে গেল। তার মোটেও ইচ্ছা করছে না মেহমানকে উপরে নিয়ে আসতে।ইচ্ছা হচ্ছে এক হাতে চুলের মুঠি ধরে আরেক হাতে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে।এই “রঙিণী মাইডামকে” সে বাড়িতে কয়েকবার পার্টিতে দেখেছে লাইব্রেরী রুমে স্যারের সাথে ঢলা-ঢলি করতে। আগে শুনেছে স্যারের অফিসের কর্মচারী ছিল… এই শালীর জন্য যত অশান্তি এই বাড়িতে। সাবিহার আবার ভয়ও হচ্ছে। আজকাল তার ম্যাডাম ভারী বিচিত্র আচরণ করছে। স্যারের সাথে প্রচন্ড রকমের ঝগড়া হওয়ার পর থেকে গত এক সপ্তাহ তিনি কেমন যেন ঠান্ডা মেরে গেছেন। বাইরে থেকে ঠান্ডা ভেতর থেকে গরম মানুষ ভয়ংকর ভয়ংকর অন্যায় করে ফেলে। কে জানে মেয়েটাকে খুন টুনই করে ফেলেন নাকি! যদিও আজকে এমন মাথা গরম পরিস্থিতিতে সাবিহাও তো ঠিক থাকতে পারতো না। তার নিজের জীবনেই কত বার মনে হয়েছে তার কুদ্দুসের বাপের নতুন বউয়ের ঠিকানা খুঁজে মুখে এসিড মেরে আসতে। কুদ্দুসের চিন্তা করেই বাদ দিয়েছে সেটা। তাকে জেলে ধরে নিয়ে গেলে বাচ্চাটা বাঁচবে না ।তবে বড়লোকদের সাহস বেশি! ম্যাডাম সত্যি এমন কিছু করে ফেললে? বড়লোকদের উকিল মোক্তারেরা পুলিশরে ঘুষ খাওয়ায় পার পেয়ে যাবে ধরা খেতে হবে সাবিহাকে! ” ইয়া আল্লাহ খুন খারাবি কিছু হলে সবচে আগে আমি ফাসব আমারে রক্ষা করো…” এদিকে চৈতি ভালোমতো নিজেকে দেখে নিচ্ছে কোন অবস্থাতেই আজকে তাকে দুর্বল অসহায় দেখতে লাগা যাবে না, প্রতিপক্ষ যখন আধুনিক যুগের স্মার্ট মেয়ে তাকেও তার যোগ্য হতে হবে একটা স্মার্ট সতীন। “ম্যাডাম বসাইছি উপরে লিভিং রুমে আছে” চৈতি দম নিল জোরদার যুদ্ধের দামামা বেজে গেছে এখন যেতে হবে… ****** তানিয়া বেশ ঘুরে ঘুরে দেখছে দোতালার লিভিং রুম! বাড়ির এই অংশটা তার দেখা হয়নি।ম্যাডামের ব্যক্তিগত চেম্বার মনে হচ্ছে। দামি দামি জিনিসের ঠাসা শোকেস! দুনিয়ার যেখানে গেছে ডেকোরেশন পিস কিনে কিনে বাড়িটাকে মিউজিয়াম বানিয়েছে। দেখে লাগছে দোকান কোন! যত্তসব। তানিয়া ঘড়ি দেখলো, তার বিরক্ত লাগছে, তবে সময় পাওয়াতে নিজেকে গুছিয়ে নেয়া যাবে, তানিয়া গুছানো মেয়ে। সামাদের সাথে এফেয়ারের পুরা ব্যাপারটা এক্সিকিউট করতে সময় লেগেছে, কিন্তু হয়ে এসেছে প্ল্যান মতোই,। ঠিক যখন যেভাবে সে চেয়েছে তখনই ধীরে ধীরে লোকচক্ষুর সামনে এসেছে। বড় শিল্পপতি হবার সাথে সাথে চরিত্রবান হিসেবে খ্যাত সামাদের ঘটনাটা জেনে পুরা পৃথিবী হয়েছে স্তম্ভিত! অফিসে সোসাইটি ক্লাবে পার্টিতে সব জায়গায় গসিপ মুখোরোচক গল্প তাদের নিয়ে। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার ছিল চৈতি তালুকদার! মহিলা শুরু থেকেই যেন ঠান্ডা মেরে ছিলেন সব ঘটনায়! তানিয়া অনেক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল কিন্তু তেমন কিছুই হয়নি, তানিয়ার সাথে সামাদের স্ক্যান্ডাল যখন দাবানলের মত ছড়াচ্ছে মহিলা একটা টু শব্দ করেননি একবারও দেখা করতে চাননি তার সাথে। এইসব কেসে যাহয় ফোনে থ্রেড দেয়া, চিৎকার, গালিগালাজ, সিনক্রিয়েট কিছুই না! হঠাৎ দুদিন আগে প্রথমবারের মত ফোন দিলেন! যেন কিছু জানেন না।
ভারী আন্তরিক গলায় বললেন, তোমার বস কিছু প্রপার্টির কাগজ আর এভিডেন্স তোমায় বুঝিয়ে দিতে বলেছে! গুরুত্বপূর্ণ পুর্ন কাগজ তুমি তো জানোই আমাদের সেপারেশন হচ্ছে এগুলো খুব এফিশিয়েন্ট কাউকে দেয়া প্রয়োজন। তানিয়া শুনে হতভম্ব! মহিলা কি এত্ত হাবা? এখনও যেন কিছুই জানেন না। এটা কি করে সম্ভব? এখানে আসতে অনেকেই মানা করেছিল তাকে, এটা একটা ট্র‍্যাপ হতে পারে। তবু এসেছে আজকাল দুঃসাহসিক কাজ সে বেশ দাপটের সাথেই করে। বিচিত্র এক অহংয়ের নেশা নিয়ে চলে বেড়ায়। তার কাছে চৈতির সাথে দেখা করাটাও চ্যালেঞ্জ লেগেছে! পাঁচতারা হোটেলে ঝলমলে মসৃণ মার্বেলের মেঝেতে সে যখন পেন্সিল হিলে হেঁটে যায়, আজকাল মানুষ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকে দেখে। তানিয়া জানে তাকে নিয়ে আলোচনা হয়,গালমন্দ হয়।হ্যা সেইই বিখ্যাত শিল্পপতি সামাদ তালুকদারের গার্লফ্রেণ্ড যার কারনে তার দীর্ঘ আঠাশ বছরের সুখী দাম্পত্য জীবন ভেঙে যাচ্ছে।” একটা হ…. ” বিচ! হাই সোসাইটির মেয়েরা কতো কিছু বলেই না গালি দেয়। অথচ ভেতরে ভেতরে তানিয়ার ব্যাগ জুতো কানের হীরের টপের জন্য হাহাকার করে মরে, পুরুষরাও কুৎসা রটায় আবার মনে মনে সামাদ তালুকদার হবার বাসনাও রাখে “আহা আমার এত পয়সা থাকলে এত গরম জিনিস আমার আয়ত্বে থাকতো।” এসবে কিন্তু তানিয়ার বেশ লাগে। তবু আজ সে এসেছে নিজের আসল সাহস যাচাই করতে। হবু স্বামীর প্রাক্তন স্ত্রীকে দেখিয়ে দেয়া উচিত যে সে কি চিজ! সামাদও সাহস দিয়েছে বলেছে চৈতি কিছুই করবে না তার সাথে। সামাদের মায়া কাটানি আগের বউয়ের জন্য আরও বুঝিয়েছে ” চৈতি নাকি একটু অন্যরকমই, সম্পর্ক জানার পর তেমন কোন ঝামেলা করেই নি। মিউচুয়ালি ডিভোর্স হয়ে যাচ্ছে, তাকে তার পাওনা বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। সে কোন সমস্যা করবে না।” তবে সত্যি বলতে তানিয়ার নিজের হবু মসনদ নিজ চোখে দেখার জন্য তরটাও সইছিলো না । আজ চৈতি তানিয়াকে কি কি ধরনের প্রশ্নবাণে পরাস্ত করতে পারে তার জবাবে তানিয়া কি পালটা কি তীর ছুঁড়বে মনে মনে প্র্যাকটিস করে নিচ্ছিল । মহিলা কতটুকু নিচে নামতে পারে সেটা আগাম কল্পনা করে রাখা তার জন্য সুবিধাজনক। কেজানে তার কোন বদ মতলব আছে কিনা, তানিয়া ঠিক করেছে এবাড়িতে কিছু খাবে না, আর এখানে আসার আগে তার দুজন বন্ধুকে বাড়ির সামনের ক্যাফেতে বসিয়ে এসেছে, মহিলা আবার যদি খুন করার ফন্দি আঁটে? যদিও সে ব্যাবস্থা তানিয়া করে রেখেছে…. ” অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলে বেশি কষ্ট হয়নিতো আসতে? ” ভারী মিষ্টি সুললিত কণ্ঠ তানিয়াকে চমকে দিল। বাড়ির বর্তমানের কর্ত্রীর কাছ থেকে এত উষ্ণ অভ্যর্থনা আশা করেনি সে। নিজের বিস্ময় সাবধানে সামলে বলল, “নানা কষ্ট কিসের? আমিতো আগেও এসেছি এই বাড়িতে …. ‘ মহিলা হেসে বসলেন তানিয়ার সামনে। তানিয়া দেখছে তাকে, নিজের গলার কাছে জামার বোতামটা কায়দা করে প্লেস করলো এটা একটা ক্যামেরা । “হাল্কা চর্বি আছে তয় ফিগার কইলাম খারাপ না ” কানের কাছে লাগানো ব্লু টুথ থেকে আওয়াজ হলো।যেটা চুল দিয়ে কায়দা করে ঢেকে রাখা। তানিয়া গলা খাকারি দিয়ে উঠলো, অর্থাৎ মৃদু ধমক, তবে খেয়াল করলো চৈতি ম্যাডামকে অন্যান্য দিনের চেয়ে আজ বেশ পরিপাটি । বলা চলে অগোছালো ভাবে হলেও মহিলা সাজগোজ করেছে, গায়ে দামী শাড়ি । বাহ ডিভোর্সের চিন্তায় মানুষ শ্রীহীন হয় ইনার দেখি রূপ খোলতাই হচ্ছে। ঘরের মধ্যে এত সাজসজ্জা? নাকি তাকে দেখানোর জন্য? হাসি পেল তানিয়ার! ” আমি মনে হয় অসময়ে এসে পড়েছি আপনি হয়ত বের হচ্ছিলেন… ” চৈতি নিজের হাতের নখ গুলো দেখতে দেখতে বলল, “হ্যা বের হচ্ছিলাম, একটা ইভেন্ট এটেন্ট করা লাগত তুমি বলা চলে সময় মত না এলে আর আধ ঘন্টা পর হয়ত আমায় পেতেই না। – আমার জন্য দেরি হয়ে গেল আপনার! – কিছুটা হলো তবে তোমার সাথে মিটিংটাও জরুরী ছিল। যাহোক কি খাবে বল, চা কফি না ঠান্ডা কিছু? তানিয়া কিছু লাগবেনা বলতে গিয়েও সামলে নিল ,” তানু মহিলা চালবাজি করছে তোর সাথে কোন ভুল না, সাবধান! “লুকিয়ে রাখা বুটুথ থেকে নির্দেশ পেল ” কিন্তু সরাসরি না করলে চলবে না তানিয়াকে সাবধান থাকতে হবে, হেসে বলল,” যা আপনার পছন্দ! সেটাই চলবে! ( মানা করতারলি না! কিছু দিলেও খাবি না কইলাম! )আবার ব্লুটুথে প্যানপ্যানানি! ” চুপ কর নয়তো চাটি খাবি” তানিয়ার ইচ্ছা করল বলতে কিন্তু পারছে না এই গাধা গুলো বক বক শুনে নীরবেই এই খেলা এক্সিকিউট করতে হবে। ” কিছু তো নাও,! ” যা আপনার পছন্দ বল্লাম তো! ” ” যা আমার পছন্দ সেটাই চলবে? অভিয়াসলি! আমাদের পছন্দ অলমোস্ট একই রকম কি বল?” তানিয়ার চোখমুখ শক্ত হয়ে গেল, (তানিয়ার কানের ব্লুটুথ বলে উঠলো “তানু বুড়ি ঝামেলার দিকে যাচ্ছে সাবধান।) চৈতি বলছে, ব্যাস একটাই পার্থক্য আমার টাটকা গরম গরম পছন্দ, তুমি মনেহয় একটু বাসি মানে ঠান্ডা পছন্দ কর। ” তানিয়া মুখ খুলতেই চাচ্ছিল, সে সুযোগ না দিয়ে চৈতি উঁচু গলায় ভৃত্যকে ডাক দিলো”সাবিহা! সাবিহা কাছেপিঠেই ছিলো সে দৌড়ে এলো, ” ম্যাডামের নাস্তার ব্যাবস্থা কর! ও আচ্ছা তানিয়া, ও হলো সাবিহা, এই বাড়ির সুপারভাইজার! তানিয়া ম্যাডামের জন্য ঠান্ডা সায়োনায়েড আর এসিড নিয়ে এস,” তানিয়া ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল, মাথায় বজ্রপাত হল মনে হচ্ছে ” জ্বি! ‘ চৈতি তানিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল – হ্যা, ঠান্ডা স্যালাদ আর এপেল জুস তোমার পছন্দের! সেদিন পার্টিতে দেখলাম এই খাচ্ছিলে! – ওহ! স্যালাদ!এপেল জুস! তানিয়া দ্রুত সামলালো নিজেকে। সাবিহা ঠান্ডা চোখে তাকিয়ে ছিল, চৈতি বলল- তাকিয়ে না দেখে যাও আগে নাস্তা নিয়ে আস। সাবিহা চলে গেলে তানিয়া ঠান্ডা গলায় বলল, ম্যাম আমরা এখন কাজের কথায় আসি? আমি বুঝতে পারছি না আমায় এখানে আপনি ডেকে পাঠিয়েছেন কেন! – ওহ! তাই তো আগে কাজের কথা সেরে নেয়াই ভালো কিছু ইমপর্ট্যান্ট কাগজ আছে। যেটা তোমার বসের সাথে অফিসিয়ালি পার্টেড হবার আগে তাকে বুঝিয়ে দেয়া দরকার।তার হাতে দিলেই ভালো হতো কিন্তু এখন উপায়ও নেই , সামাদ আছে নিউ ইয়র্ক, ফোনে কথা হচ্ছে না ও থাকলে তোমায় বিরক্ত করতামও না কিন্তু ব্যাপার গুলো গুরুত্বপূর্ন! । এস এস… তানিয়া দ্বিধা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, তার গলায় গুজে থাকা কলমের মত ক্যামেরায় তার দুই কাজিন ভাই সব খেয়াল করছে, -“কি ব্যাপার এস, এখনও আমি তোমার বসের ম্যারিড ওয়াইফ তোমায় অর্ডার করতেই পারি, ডোন্ট ওয়ারি ইটস টোটালি প্রফাশনাল নাথিং পারসোনাল ” তানিয়া নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করল,মহিলা সব জেনেও এমন করছে….. । চৈতি হয় প্রচন্ড ভাবে তার সাথে চালাকি করছে নাহলে বিশাল মাপের একটা গাধী মহিলা।তবু প্রচন্ড সন্দিঘ্ন মন নিয়ে এগিয়ে গেল চৈতির পেছনে। চৈতি খুব সাবলীলভাবেই তানিয়াকে বেডরুমে নিয়ে এলো ।ধবধবে সাদা মার্বেলের মেঝে, অপুর্ব সুন্দর ইটালিয়ান ফার্নিচার দিয়ে সাজানো বিশাল বেডরুম বিছানার উল্টো দিকেই বিশাল আয়না।আহা, এই আয়নায় ঘুম থেকে উঠে তানিয়া একদিন নিজের মুখ দেখবে, গায়ে থাকবে সাদা সিল্কের ম্যাক্সি ! ভাবতেই কেমন শিহরণ খেলে যাচ্ছে শরীরে! ওফ! আর দুটা সপ্তাহ! সামাদ ফিরলেই চৈতি আউট তানিয়া ইন। ” বোস না দাঁড়িয়ে কেন? তানিয়া জড়সড় হয়ে বসলো। চৈতি হেসে বলল, “আমি মুলত কিছু জিনিস তোমায় বুঝিয়ে দিতে ডেকেছি, ” কিছু জিনিস মানে… ” – বলছি তার আগে এটা বল তোমার বনানীর ফ্ল্যাটটা কেমন লেগেছে,। শুনলাম ফ্ল্যাটটা তোমার অফিস থেকে কোয়াটার এলর্ট হয়েছে?. চৈতির চোখে সুক্ষ্ণ অথচ তীক্ষ্ণ একটা আলো খেলে গেল, সাবিহা এর মাঝে তানিয়ার জন্য নাস্তা টেবিলে রেখে গেছে। তানিয়ার বর্তমান ফ্ল্যাটের চাবিটা সামাদ তার বার্থডেতে তুলে দিয়েছে।সেখানে চৈতির স্বামীর সপ্তাহে তিন দিন নৈশভিসার এখন নিয়মের মধ্যে পড়ে! এই মহিলা এটা জানেন না তা হতে পারে না৷ মহিলা চালবাজি করছে তার সাথে – তা কেমন লাগছে ফ্ল্যাট? তানিয়াও নিজের মুখে টেনশন আসতে দিলো না হাসি মুখে বলল- আ… হ্যা বেশ ভালো,! চৈতি হাসিমুখে বলল, ” শুধু ভালো? দারুণ নয়! ওটার মার্বেলস গুলো ইটালির জানোতো, বড় মেয়ে তানজিয়ার জন্য করেছিলাম ওর বিয়েতে দেব, একটা বাথরুমেরতো আমি মেলাকাইট পাথরের বানাতে চেয়েছিলাম কিন্ত তানুর গাড় সবুজ রঙ পছন্দ হলো না! এইজন্য ব্ল্যাক অনিক্স দিয়ে গড়ে দিলাম। বাথরুমটা সুন্দর না? জাকুজি? জাকুজি বাথটাবটা কেমন? জানো তো এক সাথে দুজন বাথ নিতে পারে ওখানে! ” তানিয়া হাসলো, সে ভালো মতোই জানে। তবে ওবাড়ির জাকুজির ব্যাবহার নিয়ে সে যা জানে চৈতি ম্যাডামকে জানালে শ্যাম্পু করা ফুরফুরে চুলের গোড়ায় আগুন না ধরে যায়! ” এই দেখ বাড়ির গপ্প করতে করতে আসল জিনিসই বুঝিয়ে দেয়া হলো না! দাঁড়াও তোমাকে পেপারস গুলো দিয়ে দেই! – পেপারস! কিসের পেপারস?বুঝলাম না ম্যাম! – প্রপার্টির পেপারস! সামাদের সব এক্সক্লুসিভ কাগজ গুলো শুনলাম তোমার তত্ত্বাবধানেই আছে আজকাল ! চৈতির চোখ তীক্ষ্ণ হয়ে উঠলো হঠাৎ, তানিয়া চট করে সামলে নিল যদিও কথাটা সত্যি নয় সামাদ এখনও এমন কোন গুরুদায়িত্ব তাকে দেয় নি। বিয়ের আগে তার আশা করাও ঠিক না তবে চৈতির সামনে দায়ভারটা নিতে আপত্তি নেই, ভাবুক না তানিয়াকে কিছুটা গুরুত্বপূর্ণ, দুদিন পর এই মসনদ তো তারই হচ্ছে। – জ্বি…. হ্যা… মানে ওর মানে সামাদের মেন্টাল স্ট্রেসটার কারনে… – গুড! আসলেও ওর এই অবস্থায় বলিষ্ঠ কারো সাথে থাকাও দরকার! যাহোক তোমায় আগে ফ্ল্যাটের কাগজ গুলো বুঝিয়ে দেই, যেটা ওর নামে করে দিয়েছি । – ফ্ল্যাট কিসের ফ্ল্যাট? – কেন বনানীর, যেটাতে তুমি আছো, সামাদের নামে রেজিস্ট্রি করে দিয়েছি । ” রেজিস্ট্র… মানে? বুঝলাম না ফ্ল্যাটটা তো সামাদেরই মানে স্যারেরই ছিল তাই না? “তানিয়া জিজ্ঞাস করবে না করবে করেও বলে ফেলল, চৈতি তার মিষ্টি হাসিটা আরও প্রসারিত করে বলল, ফ্ল্যাটটা আগে আমার নামে ছিল! তবে সামাদের লয়ালিটি অসাধারণ, ও বলা চলে কড়াগন্ডায় আমার কাছ থেকে কিনে টাকা বুঝিয়ে দিয়ে তারপর ফ্ল্যাটটা নিয়েছে । সিগনেচার করে দিয়েছি! কিন্তু ওর এত ব্যাস্ততা কাগজ না বুঝেই চলে গেল নিউ ইয়র্ক, আমায় বলল সব বুঝে রাখতে! দেখ তো ওর এই সব ইমপর্টেনট কাগজ এখন আমার কাছে রাখা সাজে?এখন তো এই ভারমুক্ত হয়ে যাওয়া উচিত তাইনা? তানিয়া থম ধরে দাঁড়িয়ে রইলো। ( ” ওরে শালা এই বুইড়া খাসিতো দেখি টাকার বান্ডিল সবই এখনও বুড়িরে গছায় রাখসে তুই আছস কিত্তে বুইড়ারে ফ্রীতে নাচ দেখাইতে? “) তানিয়ার ব্লুটুথ আবার সচল তবে এবার তানিয়া বিরক্ত হবার জায়গায় চিন্তিত হয়ে গেল।অজান্তেই চুমুক দিয়ে বসলো এপেল জুসে, ব্যাবসা সামাদের নামেই কিন্তু ইন্টারনাল প্রপার্টি আর কি কি এই মহিলার নামে করা সেটাতো ভাবা হয়নি! “দেখ তো আবার কথায় আটকে গেলাম তুমি বসোতো! আমি পেপারস গুলো বের করি। কোন সেলফে যে রাখলাম…. বয়স বাড়ছে এত কিছু কি মনে থাকে বল? ” তানয়া অস্বস্তি নিয়ে বলল, ” ম্যাম আপনি বের করুন আমি বাইরে দাড়াচ্ছি! ” না না বাইরে দাঁড়াবে কেন তুমি চোর না ডাকাত? তুমি তো সামাদের এত বিশ্বাসভাজন! তোমার কাছে কি গোপনীয়তা? বস আরাম করে আমি একটু খুজে দেখি ” চৈতি তার ক্যাবিনেট খুলেছে তানিয়ার তাকানো উচিত নয় সে আয়নায় মুখ করে আছে। সেখান থেকে তারপরও দেখা যাচ্ছে মহারানীর রত্ন ভান্ডার! তানিয়ার চোখে নেশা ধরে যাচ্ছে। গুলশানের খুব দামী শাড়ির শোরুমে কাজ করত আগে। দামী শাড়ির নেশা তখনই পেয়ে বসেছিল তাকে। মহিলার ক্যাবিনেটে থরে থরে সাজানো সব ডিজাইনার শাড়ি, অসাধারণ রঙ কন্ট্রাস্ট কাঞ্চিভরম, কাঞ্চিপুরম, ,তিনচারটা সব্যসাচী, নিতা লুল্লার কয়েকটা, আর পাঁচছটা আছে মানিশ মালহোত্রার! সর্বনেশে কালেকশন! তানিয়ার গা ঝিমঝিম করছে পঞ্চাশোর্ধ সামাদের সাথে গত তিন বছর রগরগে প্রেম চালিয়ে নিজের আলমারি ভরেছে ঠিকই কিন্তু সত্যি কথা হলো এর এক তৃতীয়াংশও সে কিনতে পারেনি। সামাদ তার মজা লুটে গেছে এর এই ম্যাডাম পটের বিবি হয়ে আরামে শাড়ি গয়নায় কালেকশন বাড়িয়েছেন৷ “কোথায় যে রেখেছি…… ওহ হ্যা মনে পড়েছে, ইলেকট্রনিক ক্যাবিনেটে।। সরি ভাই তোমায় বসিয়ে রেখেছি! তুমি ড্রিঙ্কস নাও ” চৈতি চোখে মুখে অপরাধিনীর মুখ করে আবার ফিরে গেল ক্যাবিনেটে,, ক্যাবিনেটের ভেতরে ইলেক্ট্রনিক লকের একটা সিন্দুক! ” খাইসেরে তানিয়া! এতো দেখি আলিবাবার গুহায় আয়া পড়সস! এক কাম কর টেবিলে রাখা ফলের ছুরিটা নে, বেডির পিঠে বহায়া লুইটে আয়া পড়! বুইড়ার লগে থাকন লাগব না। ” তানিয়া বিরক্ত হয়ে মাথা ঝাকালো ব্লুটুথে বকবক চলছেই৷ তবে মহিলা বলা যায় নিজের রত্নভান্ডার সবই উন্মুক্ত করে দিচ্ছেন, তানিয়ার কি করা উচিত ঘর ছেড়ে চলে যাওয়া উচিত, কিন্তু সে অক্ষম! তার কেমন গা ঝিমঝিম করছে…. এই দামী শাড়ির গন্ধ থরে থরে সাজানো পারফিউম শ্যানেল, ডিওর, বুলগেরি, আর্ডেন…. সব আচ্ছন্ন করে রেখেছে তাকে। ” এই যে ক্যাবিনেটেই আছে দেখ কত ভেতরে। আমিও না যা কান্ড করি একেক সময়,….” চৈতি ইলেক্ট্রিক লকারের থেকে বেশ কিছু ভেলভেটের কাঠের আর ক্যাপিজ বক্স বের করলেন, তানিয়া চমকে উঠলো,বাক্সের একেকটায় সেগুলোর ব্যান্ড ট্যাগ বসানো, দামাস, মালাবার, জয়আলুকাস! বাক্স গুলো এমন ফেলে ছড়িয়ে বের করছেন নেহাতই যেন কোন মূল্যহীন অবাঞ্চিত বস্তু! মেয়েরা যত বেশি এলোমেলো থাকুক বা যত ছল চাতুরি করুক তাই বলে নিজের যক্ষের ধন এভাবে উজার করবে তাও সতিনের সামনে? তানিয়ার কেমন হাত নিশপিশ করছে বাক্স গুলো খোলার….. নিষাদ গ্রুপস ওফ ইন্ডাস্ট্রিজের এমডির ম্যাডাম কম গড়াননি নিশ্চয়ই…. তানিয়ার হাতের কাছে বাক্স গুলো, এদিকে কেবিনেটের ভেতরের কয়েকটা কাগজের মধ্যে বের হলো দলিলের খাম। চৈতি তাড়াতাড়ি বের করতে গিয়ে একটা টিং শব্দ করে ছোট চকচকে কিছু গড়িয়ে তানিয়ার পায়ের কাছে এল, তানিয়া তুলে দেখলো। গাড় নীল পাথরের আংটি চারিদিকে হীরে অনেকটা প্রিন্সেস ডায়নার আংটির মত! হীরের জ্যোতিতে তানিয়ার চোখ ঝলমলে হয়ে গেল! কত দাম হবে এর? – এই নাও পেপারস! ওহ! আংটিটা! থ্যাংক গড তুমি তুলেছ নয়তো হারিয়েই যেত…. তানিয়া চমকে তাকালো! চৈতি হাতে নিল আংটিটা,, ছোট একটা নিশ্বাস ফেলে গাঢ় করুণ কন্ঠে বলল, ” স্মৃতি ঘেরা জিনিস, ব্লু সাফায়ার! ভ্যানক্লেফ আর এরপেলের…. সামাদ গতবছর রোমে বেড়াতে নিয়ে গিয়ে জন্মদিনে কিনে দিয়েছিল আমায়! এত নিষেধ করেছিলাম জানো, কথাই শুনলো না পকেটে ভিসা কার্ডের সব টাকা খরচ করে বসে থাকলো এই আংটির পেছনে … কি পাগলামো যে করতে পারে ! তুমি আবার কিছু মনে করো না মনটা খুব বিক্ষিপ্ত জানো তো , কাউকে খুব দরকার হাল্কা হবার জন্য। তানিয়া ঢক ঢক করে খেয়ে নিল অনেকটুকু এপেল জুস, তার ব্লু টুথের ভাইদের নিষেধ সত্ত্বেও জুসে বিষের সম্ভাবনা থাকার কথা জেনেও , ” তার মনে পড়ছে গতবছর সামাদ ইউরোপ গিয়েছিল বউকে নিয়ে, বলেছিল অফিশিয়াল টুর বউ যেহেতু পার্টনার বউকে নিতে হবে, ! ফিরে এসে তানিয়াকে দিয়েছিল দুটা দামি পারফিউম আর একটা ব্যাগ এই পেয়ে স্বর্গ পেয়ে গিয়েছিল সে অথচ বুড়ো নিজের বউকে দিয়েছে ব্লু সাফায়ার! মজা লুটেছে তানিয়ার সাথে বউ পেয়েছে আংটি! গরু মেরে জুতা দান! ইচ্ছা হচ্ছে বুড়োর টাক মাথায় বেচে যাওয়া চুল গুলো খুবলে তুলে ফেলে। ফিরুক আগে।সামাদ তাকে বলেছিল বিয়ের পর হানিমুন সুইজারল্যান্ডে করবে তানিয়া বলবে, “না ” আগে যাব দুবাই! এই সব গুলো ব্র‍্যান্ডের একটা করে সেট তার চাইই ! অন্তত এই চৈতি বুড়ির সমান তো তাকে কিনতেই হবে! ” এনিওয়ে এই নাও তোমার বসের আমানত বাড়ির পেপারস!আড়াই কোটি টাকার বিনিময়ে ঈমানদারির সাথে বুঝিয়ে দিলাম তোমায়! তানিয়া থম ধরে থাকলো দলিল নিয়ে! চৈতি বলল,” জানো আমি সামাদকে বলেছিলাম এই বাড়িটাই তো তুমি নিয়ে নাও, এই বাড়ি ভরা স্মৃতি, আমিই না হয় চলে যাই তুমি এটাও কিনে নাও ওই না করলো। বলল, আমার নিজের হাতের গড়া বাড়ি, মেয়ে গুলো বড় হয়েছে এবাড়িতে ,এ সব কিছু এ নাহয় আমারই থাক, আর আমিও ভাবলাম প্রায় পনেরো কাঠার উপর সাত হাজার স্কয়ার ফুট ডুপ্লেক্স একা থেকে ভয়ই লাগবে , তার চে ওর জন্য নাকি দুহাজার স্কয়ায়ফুটের ফ্ল্যাটই ঠিকাছে, ধানমন্ডির বাংলোটাও দিয়ে দিল রিয়েল এস্টেটকে…. ওটাও আমার নামে ছিল কিনা , ” ওই বাড়িও আপনার নামে! ” তানিয়া শত দমিয়েও বিস্ময় লুকিয়ে রাখতে পারলো না। চৈতি হেসে বলল, হ্যাঁ, মুলত সামাদ কিছু ইনকাম ট্যাক্স বাচানোর জন্য বেশ কিছু ভাইটাল প্রপার্টি আর শেয়ারস আমার নামে রেজিস্ট্রেশন করে রেখেছিল, যার কারনে কাগজে কলমে অনেক কিছুই আমার! তবে আমি সামাদকে প্রমিজ করেছি এসব কিছু বিক্রি করতে গেলে আগে আমি তাকেই বলব! তার হাতে গড়া জিনিস সেই রেখে দিক না’হয়। কি বল? “বুড়ো কিনবে তো তখন যখন আস্ত থাকবে! এত বড় ধোকা! ” তানিয়া শান্ত মুখে ভেতর থেকে গজগজ করছে ইচ্ছা করছে বুড়ো ভামটার মগজ চাবিয়ে খায়! ” তানিয়া ভালোমতো দেখ পেপারস গুলা আসল নি রে? আস্ত গোটা দলিল? মারাত্মক ব্যাপার কইলাম! ” তানিয়ার কানের ব্লুটুথ গুন গুন করে যাচ্ছে। তানিয়ার তবু এই ঘরের নেশা কাটাছে না,এর মানে হলো বনানীর ওই পিচ্চি ফ্ল্যাট নিয়েই খুশি থাকতে হবে! এমন বাংলো বাড়ি আর সহসা দেখছেনা সে। আহা কি স্বপ্ন দৃশ্যই না দেখেছিল এই রুমে এসে! এই বুড়ি এই মহলে কুন্ডলী পাকিয়ে পড়ে থাকবে আজীবন! চৈতি হৃষ্টচিত্তে বলল, ” নাও আজ কিছুটা মুক্ত হলাম তোমার জিনিস গুলো বুঝিয়ে দিয়ে! ” তানিয়া দলিলটা পরিক্ষা করা লাগবে কাগজ নিয়ে আর দেরি করিস না বের হ তাড়াতাড়ি!! কুইক কুইক! তোর ধারণাও নাই হাতে কেমন জ্যাকপট লাগসে কাজ গুছায়ে তাড়াতাড়ি আয় ” তানিয়া ফাইল নিয়ে গলা পরিষ্কার করে বলল, ম্যাম আমার মনে হয় এখন আসার দরকার মানে কাগজ গুলো স্যার আমায় তার অফিস ম্যানেজারকে সাবমিট করতে বলেছিলেন… তাহলে আসি ম্যাম… তানিয়া উঠে দাঁড়ালো দলিলের জন্য না রাগে তার গা রী রী করছে “তানিয়া! একটা কথা! ” চৈতি হঠাৎ এগিয়ে এল, তানিয়া বুকট ধক করে উঠলো! ” একটা রিকোয়েস্ট করি, তুমি তো ওর সাথে অনেক দিন আছো সামাদ আমার অনেক দিনের সঙ্গী কিনা একসাথে প্রায় আঠাশ বছরের সঙ্গ! ওর চিন্তাটা মাথাথেকে ঝাড়তে পারছি না, জানো তো ওর মাইল্ড স্ট্রোক হয়ে গেছে, হাইব্লাড প্রেসার, ডাইবেটিস, ইউরিক এসিড সবই আছে। এখন ষাটের কোঠায় যাচ্ছে এত বড় ব্যাবসা একা হাতে সামলানো কিছুটা ত প্রেশার থাকবেই তাই না? নিজে হাতে এত বড় ব্যাবসা! খেয়াল রেখ প্লিজ। এই একটাই রিকুয়েস্ট! চৈতি চোখের কোন সুক্ষ্ণ পানি চিকচিক করছে,….. ঢঙ আর কি ! তানিয়ার কন্ঠে সুক্ষ তাচ্ছিল্য নিয়ে বলল – স্যারের চিন্তা না করলেও চলবে আপনাকে, আমিতো আছিই বিজনেস যা কিছু শিখেছি স্যারের কাছ থেকেই ইনশাআল্লাহ সামলে নিতে পারব চৈতি আকাশ থেকে পড়লো, তানিয়া আমি শুধু সামাদের খেয়াল রাখতে বলেছি বিজনেসের নয়! আমাদের লিটারাল সেপারেশনের মানে ডিভোর্সের পর বিজনেসের ভার তো অনেকটা কমেই আসবে! ” কমে আসবে? তানিয়া চমকে উঠলো, ” মানে আমি কিছু বুঝলাম না! ” – “কেন তুমি জানো না? টেক্সটাইল আর লেদার গুডসের ব্যাবসাতো বড় মেয়ের নামে হয়ে গেছে। কাগজপত্রতো কবেই ট্রান্সফার করে নেয়া আর শিপিংয়ের ব্যাবসা ছোটটার নামে তবে ও এখনও পোক্ত হয়নি পাওয়ার অফ এটর্নি করা আমার নামে! কাজেই এটার দ্বায়িত্ব আপাতত আমার। তানিয়া স্তম্ভিত হয়ে তাকিয়ে আছে। এই মহিলা মিথ্যা বলছে৷ কিছুদিন আগেও সে জেনেছে এই সব শেয়ার সামাদের নামে এখন মেয়েদের নামে গেল কি করে! এই মহিলা কালো যাদু করে রেখেছে নাকি আসলেও সামাদ তালুকদার নামের বুড়ো ভামটা মুলত খালি সিন্দুকে ডবল তালা! তানিয়ার হঠাৎ মনে পড়লো সামাদের বড় মেয়ের বিয়ের আগে সামাদের ম্যানেজার নিজাম সাহেব অনেক কাগজ পত্র নিয়ে প্রপার্টি লয়ারের সাথে মিটিং করতেন। বেশ ক্লাসিফায়েড মিটিং ছিল সেগুলো খুব কম মানুষকে অবগত করা হয়েছিল। তানিয়া ভেবেছিল সামাদ বড় কোন প্রপার্টি ডিল করছে হয়ত। বুড়োটা যে আসলে খলিফা সেজে সব বিলিয়ে দিয়ে ফকির হবার তাল করছে কে জানতো? বুড়ো তাহলে এখন স্যুট টাই পরা ভিখিরী! চৈতি অবাক হয়ে বলে উঠলো,” এনি ওয়ে তুমি এত ঘামছো কেন বলতো? এসির বাইশ ডিগ্রী টেমপারেচারেও! একটু কি বসবে? ” ক- ক – কিছু না ম্যাডাম! ব্যাস আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে ম্যানেজার স্যার আর কিছুক্ষণ পর হয়ত অফিসে থাকবেন না আমি আসি…? তানিয়া দলিলটা হাতে নিয়ে মুড়িয়ে নিল – ওহ হ্যা হ্যা এস। খুব ভালো লাগলো তোমার সাথে দেখা হয়ে আবার কবে না কবে দেখা হয়, ভাল থেকো কেমন? তানিয়া উত্তর দিলো না রোবটের মত সোজা হেটে ঘর ছেড়ে চলে গেল ****-*- তানিয়া হিল খটখটিয়ে যাবার পর সাবিহা খুব ভয়ে ভয়ে ম্যাডামের রুমে ঢুকে হতভম্ব হয়ে গেলো। আয়নার সামনে বসে তার ম্যাডাম খিল খিল করে হাসছে! ওই শঙখুনিটা বের হয়েছে অনেক আগেই ম্যাডামের অবস্থা কি, জানার জন্য মন আকুলিবিকুলি করছিল। ভাবছিল ম্যাডাম হয়ত কাঁদবেন বা রেগে ফেটে যাবেন! কিম্বা কে জানে সুই সাইড খায়া ফেলে যদি! উলটা ম্যাডাম দেখি হেসে গড়িয়ে পড়ে! দুঃখে পাগল হয়ে গেল নাকি? সাবিহা ভয়ে ভয়ে টেবিলের নাস্তার ট্রে তুলছে। “কিরে সাবিহা কি এখানে?” সাবিহা ট্রে কাঁপিয়ে ফেলল”জ্বি ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বলেছিলেন… ” যা বল আমি আধা ঘন্টা পর নামবো। আমায় আবার মেকাপ করতে হবে৷ কাজল লেপ্টে গেছে… ” ” জ্বি আচ্ছা” সাবিহা কিছু বলতে গিয়েও সামলে নিল। সদ্য পাগল হয়া মানুষ খুনি হতে বেশি দেরি নেই। খেপে গিয়ে কিছু ছুড়ে টুড়ে মারলে সাবিহা শেষ! সাবিহা দ্রুত চলে গেল ঘর ছেড়ে ! চৈতি হাসিমুখে আয়নায় বসে আবার মেকাপ করছে মুখে তবু হাসি সরছে না। নিজের মনের কল্পনায় তার অতি সম্ভাব্য এক্স হাজব্যান্ডের হতভম্ব চেহারাটা কল্পনা করছে আর হাসিতে আবারও ফেটে পড়ছে সে, ” আমি সরি সামাদ ভেরি সরি!সত্যি খারাপ লাগছে তোমার জন্য।” মনে আছে কপর্দকহীন ছিলে যখন, সেই সময় হাত ধরেছিলাম তোমার। শুধু তোমার সততার মুগ্ধ ছিলাম। কত দিন শুধু আলুভর্তা করে খেয়ে থেকেছি তোমার সাথে মনে আছে? তীব্র সহ্য আর ধৈর্যর সাথে ঠান্ডা স্নায়ুটা তখনই রপ্ত করে নিয়েছিলাম আমি। কিভাবে ভুলে গেলে সেটা? লোকে মুখে শুনে তোমাদের স্ক্যান্ডালের কথায় আমি কিন্তু ধাক্কা খাইনি জানো?এই সম্পর্কের কথা জেনে তোমার সামনে আমার হতাশার অশ্রু সবই ছিল মিথ্যা। আসলে আমারতো কোন অনুভুতিই ছিল না কারণ মরা লাশের অনুভুতি থাকে না! যেবার ওই তানিয়ার সাথে প্রথম বারের মতো ব্যাঙ্কক গেলে সব জেনেছি তখনই ! আমার বিশ্বাসের খুনটা তখনই করে ফেলেছিলে! ভেতরের খুন হওয়া লাশটা নিয়ে ঘুরে বেরিয়েছি গোটা আড়াইটা বছর। সেদিন থেকে শান্ত হয়ে আমিও নক্সা করা শুরু করেছিলাম তোমার সুচারু ভাবে ধ্বংসের। আর অবিশ্বাসী হয়ে তুমিও অপরাধবোধে এসে সরল মনে যা চাইলাম তা করে গেলে! ফলাফল অতি সন্নিকটেই জানতে পারবে। মানুষের আসল চরিত্র বোঝা যায় প্রচন্ড অভাব অথবা প্রচন্ড প্রাচুর্যের মধ্যে। তোমার মধ্যের লম্পট জেগে উঠেছিল প্রাচুর্য পেয়ে। যার কারণে এই মুল্য তো দেয়াই উচিত। ভয় নেই, তোমার ভালোবাসার সম্মান করতে বাড়ির আসল পেপারসই দিয়েছি তাকে। তার দুই ফ্রড ভাই এই বিষয়ে ওস্তাদ আমি জানি!এদের কাছে বাড়ির আসল দলীল যাওয়া মানে কি তুমি অচিরেই জানতে পারবে। ! তোমার বাকি বিজনেস আর প্রপার্টি তো আমার বাচ্চাদের নামে হস্তগত হয়েই গেছে। তোমার শেষ আশ্রয়টা হয়ত আজ তোমার হাত ছাড়া হবে। আমি যে শুধু তানিয়াকে পেপারস গুলো দিয়েছি তাই নয়, আমার কাছে রক্ষিত কিছু বিজনেস ডিটেইলস আর কনফিডেনসিয়াল কাগজ আমি একটা পার্শেল করে তোমার রাইভেলকেও পাঠিয়ে দিয়েছি! আর কিছু ট্যাক্স ফাকির জোড়ালো তথ্য আর তোমার নতুন প্রজেক্টের জন্য অবৈধ জমি দখলের ডিটেল ডকুমেন্ট গেছে পুর্তমন্ত্রনালয় আর দুদকের কাছে। ফিরে এসে নোটিশ পাবে দু এক দিনের মাঝেই। সামাদ যেদিন তোমার হাত প্রথম ধরলাম, প্রতিজ্ঞা নিয়ে ছিলাম তোমার জীবনের প্রতিটা মোড়ের জন্য আমি একনিষ্ঠ ভাবে দোয়া করে যাব, তোমার সঙ্গ দিয়ে যাব। জীবনের এই মোড়ে এসে আমার সঙ্গ আর বিশ্বাস তোমার হয়ত প্রয়োজন নেই তবু আজ তোমার ধ্বংসে আমার শুভ কামনা জেনো!তুমি সফল হয়েছিলে খুব সুচারু ভাবে শেষটাও যেন হও অতি নিখুঁত ভাবে দোয়া করি। শুভধ্বংস সামাদ! শুভধ্বংস! শারমিন আঞ্জুম

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে