লেখনীতে – রিয়া খাতুন – প্রিয় মম অন্তরের উৎসাহস্পন্দন,

0
378

#গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_২০২০

চিঠি নং -২
লেখনীতে – রিয়া খাতুন

প্রিয় মম অন্তরের উৎসাহস্পন্দন,
কিভাবে কথা বলবো সম্বোধনে নাকি স্পর্শে! তুমি না বললেও তুমি কিছুক্ষন পরে ফিরবে আর আমি তোমাকে জড়িয়ে ধরবো আর বলব উৎসাহস্পন্দন লাভ ইউ। শুধু তোমার অপেক্ষার প্রহর অতিক্রমের জন্য লিখতে বসা। খামখেয়ালী পূর্ণ চিঠি দেখলে তুমি হেসেই পাগল হবে তাই আর হাসির পাত্র তোমাকে নাই বা করলাম!

“পাগলি তোমাকে সাহিত্যিক হতেই হবে,, তোমাকে উচ্চাঙ্গে উথাল স্রোত তৈরি করতে হবে। যেই স্রোতে সমগ্ৰ সাহিত্যের কলঙ্ককে ভাসাতে হবে আর ধ্বংস করতে হবে কিছু কবি ছদ্মবেশীদের। ছন্দিকা(রিয়া); তৈরি করবে তুমি এক তরুনমেলা যেই তরুণদের জাগরনে সমগ্ৰ ভারতবর্ষে এক সাহিত্যমেলা শুরু হবে। তুমিই পারবে হ্যাঁ তুমি।।” তোমার এই কথাগুলোর উৎসাহিকতা আমাকে কোন পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে তা কোনদিনও মুখে প্রকাশ করতে পারিনি তাই এই চিঠি লিখছি। তুমি যখন অফিস থেকে ফিরবে এই ছোট্ট খামটা তোমার দেহের সিক্ত ঘাম আমার আঁচলে শুকিয়ে দিয়ে ব্যালকনির ছোট্ট কোনঠাসা জায়গায় দুই হাতের মুঠোয় যখন তুমি আমার শরীরে হালকা শিহরণ তুলবে ঠিক তখন এই খামটি ভাবছি তোমার দেব। আজকেই দেব উৎসাহ তোমায়,, প্লিজ যেন বলোনা, এতো কঠিন কঠিন অক্ষর তুমি বোঝোনা একদম বলবেনা তুমি আমাকে পড়ে শোনাও খবরদার বলবেনা এতো কঠিন ভাষা তুমি বোঝোনা! আজকে প্লিজ পড়বে বলো…
এটাই হয়তো শেষ চিঠিও হতে পারে আবার প্রথমও হতে পারে।
তোমার মনে আছে সোনা, যখন তুমি রাত জেগে থাকতে আমার জন্য। ৩.০০ টার প্রহরে আমার জন্য ক্ষনের বুনন কাটতে। আর আমি তখন হয়েছিলাম সাহিত্যিক। তোমার অভিমান ভাঙচুর করে যখন দুই চোখে তোমার দিকে তাকাতাম আর আমি আবার অভিমানের কন্ঠে সুর বাজিয়ে বলতাম আমি এবার সাহিত্য চর্চায় অব্যাহতি নেবো তখনই তুমি আমাকে জাপটে বুকের মধ্যে নিয়ে বলা অভিমানের ছন্দপত্তন করে সাহিত্যকে নিয়ে একটু চটিয়ে তুলে সাহিত্য চর্চায় আমাকে বারবার রসদ জোগাতে‌। এখন ব্যস্ততায় হয়তো তোমার অভিমানকে ইচ্ছা করেই বাড়াতে চাই হয়তো তুমি আর বাসা বাঁধতে চাওনা। তাই এখন সাহিত্যকে আর রসদ বানায়না পেশা আর আমার ফ্যানদের জন্য লেখাটা চালাচ্ছি। তবে তুমি তা হয়তো জানতে পারবেনা কখনোই, হয়তোবা পারছো। অনেকবার জিজ্ঞাসা করেছো তবে বিভিন্ন কথার অতিক্রমে তুমি অতিক্রমিত হও বারবার। কোনদিনও বলতে পারবোনা শুধু চাইতে পারবো যে তুমি আবার অভিমানের ড্রাফট বক্স খোলো।

অপরাহ্নের অন্তিমতায় সূর্যের বিদায়বেলায় ঠিক আমার নাকের মধ্যস্থতায় চুম্বন করছে আর চিঠির পাতায় এক শূন্যতা নামছে অন্ধকারের। জানি এই অন্ধকার আর চিরস্থায়ী হবেনা,, কেন কিছু ঘন্টা পর তুমি ফিরবে। আর আমার এই চিঠিটা……

উৎসাহ এই বিদায়বেলায় বড্ড আজ মনে করাচ্ছে পানাগড় ভ্রমন। সারাদিন কেনাকাটার ব্যস্ততায় যখন বাসটা মিস হয়ে গেল তখন আমার কিসমিসের মত মুখটা দেখে আমার দুটো হাতধরে ‘আমি আছি’ কথাটা বলে লাড্ডু করার চেষ্টা করছিলে। সূয্যি মামা এইবার চলে গেল উৎসাহ।আর কিছুক্ষন: তারপর তুমি ফিরবে। জানিনা ৪ বছর সংসারের পর এই কথাগুলো এখনো কাষ্ঠলিপিতে লিপিবদ্ধ করতে হচ্ছে! হয়তো দূরে থেকেও আমরা অদূরে আর কাছে থেকেও নিছক ‘কাছে’ আবদ্ধ। তাহলে কি কাজের ব্যস্ততা মানুষকে সম্পর্কের পুরাতন ছাঁচ ফেলে নতুনকে আবহিত করে! হ্যাঁ করে তবে পুরাতন ছাঁচে নব নির্মিত করে। নির্মাণ মানে হলে সুন্দরভাবে গুছিয়ে গড়ে তোলা তার মানে এইতো নয় নির্মাণ মানে সুন্দরভাবে সবকিছুকে গুছিয়ে নেওয়ার জন্য কিছু উৎসহপ্রবণতাকে মুছে দেওয়া…

রাত ১২.০০টা বাজতে আর ৪ মিনিট‌ দেরী। এবার তুমি আসবে আর জড়িয়ে ধরে বলবে,, “ছন্দি ও ছন্দি প্লিজ রাগ করোনা।‌একটু লেট হয়ে গেল। আজ কয়টা কবিতা আর গল্পের সমাহার করলে নাকি আমার জন্য ভেবে ভেবেই দিনকে‌ পাড়ি দিয়ে রাতকে ডাকলে! আর আমাকে তুমিতো এখন যেতেই দেবেনা কিন্তু আমাকেতো চলে যেতেই হবে।”‌ জানি তুমি আমার কাছে থাকতে চাওনা তবুও হৃদয়ের প্রতি স্পন্দন তোমাকে নিমন্ত্রন জানাতে চায়।
উৎসাহ সবাই বলে আমি নাকি বিধবা তুমি নাকি চলে গেছ আজ ৬ মাস হল। সবাই খুব বকাবকি করে। তাদেরকে আমি বলতে পারিনা তুমি আছো: তোমার বারণ অগ্ৰাহ্য করার ক্ষমতা হয়নি যে এখনো। রাত ১২.০০র পর তুমি যখন আমার কাছে এসে একরাশ নিমিত্ততায় আমাকে তোমার ঘর্মসিক্ত বক্ষকুঠুরিতে স্থান দাও তখন দুধসাগরের পাড় বেয়ে যাওয়া জোনাকিদের মুখ ভেংচি দেখিয়ে একটু গর্বেই জড়িয়ে ধরি। তবে আমার খুব অভিমান হয় কেন সবসময়ের জন্য থাকোনা! কিছু সময়ের জন্য কেন! সূর্যোদয়ের নূতন প্রভার সৃষ্টি হয় তাহলে তুমি এই প্রভাকে নিশকিরণে রাখো কেন সর্বদা! ঘুম ভেঙে যখন দেখি আমার হৃৎস্পন্দন তাদের গতিবিধি থামিয়েছে তখন বুঝতে পারি তুমি আর নেই।‌ জানো উৎসাহ সবাই বলে নতুন জীবন বাছার‌। এ আবার কেমন কথা বলতো! তুমিতো আমার জীবনের পুরোধা। পুরোধায় আবার নতুন,‌ পুরনো কি কথা! আমিতো জানি সকলের প্রতি অভিমানেই তুমি রাতে লুকিয়ে লুকিয়ে আমার কাছে আসো…
সবাই যখন আমাকে বকতো যে পাগলের মতো ‘উৎসাহস্পন্দন’ কেন তোমাকে বলি, তখন আমি একটা কথাই বলতাম ওর প্রকৃত নাম যাই হোক ওর মানবিক নাম ‘উৎসাহস্পন্দন’। ও না থাকলে সাহিত্যে আমার তীব্রতর প্রচেষ্টা জুড়তোনা।‌ তাই রাহুল নয় তুমি সারাজীবন আমার কাছে থাকবে ‘উৎসাহস্পন্দন’ হিসাবে।

এই চিঠিটা তোমার কাছে পৌঁছাবে কিভাবে জানিনা,, শুধু একটা ইচ্ছা পূরণ করবে পূর্বের ন্যায় আমার চোখের একফোটা জলকে হাতে নিয়ে আর আমাদের আসন্ন নবজাত শিশুর মাথায় হাত বুলিয়ে রক্তিমাকাশ যখন আচমকায় একটু জোৎস্না এনে দেবে তখন শুধু চিঠির ভাঁজটা খুলে আমার মাথাটা তোমার কাঁধে রেখে একবার চিঠাটা পড়বেতো? তুমি তো আছোই আমার হৃদয় জুড়ে। যদি কেউ পাল্টাতে পারে এই পাতা তাহলে আমার উৎসাহস্পন্দন।। চিঠিটাকে তোমার বাস্তবের এক ছোট্ট পঙক্তিমালায় রাখবেগো??

ইতি-
তুমি রূপী নিঃশ্বাস ছন্দিকা (রিয়া)

তাং- ৯/৮/২০২০

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে