মেঘের আড়ালে ২ পর্ব-০৭

0
1155

#মেঘের_আড়ালে২(ফিরে আসা)

#পর্ব_০৭

#লেখিকাঃফাতেমা_জোহরা_নাভিলা

এই শীতের মধ্যে ও কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম গুলো জমে আছে,,,তার সাথে হাত ও সমান তালে আজ ঘেমে আছে । হাতে থাকা নীল কলমটা আমার হাতের ঘামে সে ও তালমিলিয়ে ঘেমে গেছে। আমার একটা সমস্যা অতিরিক্ত মাএরায় যখন ভয় পাই বা হাই লেভেল এর সর্কট খাই,, তখন কান দুইটো গরম হয়ে ধোয়া বের হতে থাকে আর কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলি।কিন্তু আজ,, অতিরিক্ত ভয়ের চ্রটে সাথে নতুন কিছু ও হচ্ছে,,,, দম বন্দ হয়ে আসছে আমার শ্বাস গুলো গলার মাঝ পথে এসেই জোটবেধে ভার হয়ে গলায় সুরে এসে আটকে আছে, এখন শ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে। তাহলে কি,,,,এই নিরহ মাসুম মেয়েটা এভাবে অকালে অক্সিজেনের অভাবে আজ মারা টারা যাবো!!! আল্লাহ।।।। জীবনের বিশটে বছর আম্মুর শত শত খুন্তির বারি খেয়ে, রসগোল্লা রাগিতো গরম চোখ দেখেই পার করলাম আর এখন,,,,,,,, কই ভেবেছিলাম এটলিস্ট বিয়ের পর হয়তো বা বাকী জীবনটা ভালো ভালো সুখের মুখ দেখে কেটে যাবে আমার।।।আর ভালো এখন থেকে সব অন্ধকার মনে হচ্ছে আমার জীবন। পাশে ইয়াদ এর দিকে অসহায়তা নিয়ে তাকিয়ে দেখি,,,,,,

.

.
চোখগুলো চিকচিক করছে,,ফর্সা চেহারাতে খোঁচা খোঁচা গাল ভর্তি দাড়ি মাঝে ও টিউব লাইট এর মতো অতি সুন্দর তার টোল ফুটে আছে তার সাথে আকা-বাকা দাঁতের এক বিশ্বজয় করা হাসি মুখে। রেজিষ্ট্রিশন প্যাপারে হাত বুলিয়ে প্রশান্তি হাসি দিচ্ছে।।। তার প্রশান্তি হাসি দেখে আমার পিত্ত আত্ত , রুহু, কলিজা, গুর্দা সব জ্বলে উঠল ।তার হাসি আমার কাছে আজ,,, এখন ঠিক এইমূহুতে থেকে পৃথিবীর সব থেকে বাজে জঘন্য অসহ্য হাসি মনে হচ্ছে।শালা উগন্ডার বেয়াদ্দপ খচ্চোর এর সাথে বিয়ে হয়ে গেলো আমার শেষমেষ।।।।। এই অসহ্যকর বান্ধাকে আমি সারাজীবন সহ্য করবো কি করে,, আল্লাহ মালুম।।।।ভেবেই দুঃখে কপাল কুঁচকে চোখ ফিরিয়ে কান্না আবার মন দিলাম।আপাতত কান্না মন দিতে হবে,কান্না করা ছাড়া আমার এখন আর কোনো কাজ নেই তাই খুব করে কান্না করতে হবে । কিন্তু এখানেও বাধল বিপত্তি,,, ঔই যে কথায় আছে না,, অতি সুখ কেউর কপালে সহ্য হয়না,, আমার ক্ষেতে কথাটা প্রমান হলো আপাতত উল্টো আমার দুঃখ কেউর সহ্য হলো না বলে মনে হচ্ছে। তাইতো কান্নার মাঝে হঠাৎ নাকে এক দূর গন্ধ আসাতে আমি কান্না মাঝ পথেই ব্রেক কষে দিলাম। ওয়েট,,,,,, কেডাইরে কোন শালায় যার কাছে আমার দুঃখো গুলো সহ্য হলো না(চোখ মুছতে মুছতে)।।।।নিতান্ত মনে মনে।।

.

.
“কপাল কুঁচকে নাকে হাত দিয়ে পাশে বসে থাকা ইয়াদ এর দিকে তাকালাম।ইয়াদ ও সেম কপালের ডান সাইডের ভ্রুটা কিছুটা উঁচু করে কুঁচকে চোখগুলো ছোট করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। দুইজন একে উপরের দিকে তাকিয়ে একসাথে সন্দেহ দৃষ্টিতে সামনে তাকালাম। তাকিয়ে দেখি মওলবি সাহেবের পাশে বসে থাকা লোকটা কাচুঁমুচুঁ করে নিচের দিকে তাকিয়ে হাতের রুমাল দিয়ে কপাল মুচছে, মুখে তার কিছুটা লজ্জা অসহায় ভাব। নিচে তাকিয়ে দেখি ঘটনা ইতিমধ্যে রটে গেছে😑😑।অতিরিক্ত চাপে প্রকৃতিক চাপ সেরে ফেলছে🤧। ইয়াদ উনার দিকে বিরক্তি চাহনিতে চেয়ে হাতে থাকা প্যাপারটা বাজ করে উঠে এক হাত পকেটে ঢুকিয়ে অন্য হাত দিয়ে টেবিলের উপর থেকে আমার হাত নিয়ে বলে উঠল চলো।।।

♣️

পিনপিন নিরবতা গাড়ীতে বসে আছি ইয়াদ এর পাশে। ইয়াদ ড্রাইভিং করছে আর সাথে আড়চোখে তার নিভ্র লুচু চোখ দিয়ে আমাকে দেখছে।মন প্রান উজাড় করে দেখুক শালায় খচ্চোর ,,,,,,,সেদিকে আমার আপাতত মাথা ব্যাথা নেই, মাথা ব্যাথা হলো,,, এতোক্ষন ইয়াদ এর ছোবলা ছিলাম বলে দুনিয়াদারির কোনো হাদিস এর কথা মাথা ঘুরপাক ছিলো না। হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত দশটা বাজতে চললো তার মানে আম্মু হাতে গরম গরম খুন্তি নিয়ে অপেক্ষা প্রহর গুনছে আমার জন্য নিশ্চয়(ঢোগ গিলে)।।। বাগান থেকে লেবু ছিড়ে আনতে পাঠিয়ে ছিলো আমাকে আর আমি সেখানে লেবু না নিয়ে রেডিমেড ডিস্কিয়াও ডিস্কিয়াও সাইকো জামাই সাথে করে নিয়ে ফিরছি বাসায়।।।কি হবে এখন আমার।।।।দাঁত দিয়ে নখ কামড়িয়ে ।।।।

🍁🍁🍁
কিছুক্ষন আগে,,,,,

দরজা খুলে আমি থ রিতিমত আমার মুখ অটোমেটিক হ্যা হয়ে গেলো,,,,,আমি চিল্লিয়ে বলে উঠলাম,,,,,,,,, ফারদিন,,,,,,,জড়িয়ে ধরে।।।।হোয়াট এ সারপ্রাইজ দোস্ত। অস্ট্রেলিয়া থেকে কবে আসলি।।। তোরে আমি যে কতো পরিমান মিসস করসি কুত্তা। তুইতো আমারে ভুলেই গেসোস হারামি।

.
ছাড় ছেমরি,,,,,দূরে যাহ দূরে যাহ,,,, হারামি এমনেই দিন কাল ভালা না, বিশ্বাসে মাইর ও নাই বাপু,,, যদি করোনা হয়ে যায় আমার তোর থেকে।।আল্লাহ।।।। আর ভুলতে দিলিই কই আমারে,,, মরে গেলেও তোরা ভুলা যাইবো না এই জীবনে।তুই যে আমার ফুলোকা তারোকা সাবকা কেহেনা হে,,,, এক হাজারো মে মেরি এক লতি বজ্জাত হারামি বেহেনা হেয়।
.
কুত্তা,,,,তুই আর ভালা হইলিনা।।। তুই দূরে যাহ হারামি,,, বিশ্বাস এর মাইর তোর লগে নাই যদি অস্ট্রেলিয়া থেকে পকেটে করে করোনা নিয়া আসিস আমাগো বাসায়, যাহ ফোট এন্তে ।।।।

.

বলি,,, অনিক ভাই বুঝসো,,, আমাদের কি কেউ মিসস করসে, না শুধু একজনেরেই মিস করসে।আমরা কি দাঁড়িয়ে থাকবো,,,,

.
নারে মনে হয়না, আমাদের আর মিস করার মতো কেউ আসে এই বাসায় দিপ্ত,,,,আহহহহহ ক্লান্তি নিশ্বাস ছেড়ে।।একজন যেটুকুই মিস করতো তার তো আজ বিয়ের কথা বার্তি,, দুইদিন পর বিয়ে হয়ে যাবে,,, তারপর তো কেউই আর নেই আর মনে করার মতো আমাদের।।।।

দিপ্তর বিপরীতে অনিক বলে উঠল,,,

.

বলি, দুইজনে একটু কেশে কথা বলো,,,,কে কারে কতো মিস করে আমার জানা আছে।কথা বলবা না তোমরা দুইজন। আপিকে চ্রটগ্রামে পেয়েতো আমাকে একটা ফোন করে ও খবর নেওনি। হুহ।।

.
কারন তোর এক্সাম ছিলো তাই।জড়িয়ে ধরে।কেমন আছিস পুচকি।।।দিপ্ত।
.
এতোক্ষন বাবা-মার চৌদ্দ গুষ্টির ভিরের মাঝে দম বন্ধ হয়ে আসছিলো। কিন্তু তোমাদের দেখে আপাতত জানের মধ্যে রুহু এসেছে তাই এখন আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি, তুমি কেমন আছ,আর অনিক ভাই তোমার কি খবর।।

.

ভালো রে পাকনি,,,বলি কি বইন লং জার্নি করে এসেছি, কোনো রুমকি ফাকা আছে।।।অনিক।
.
পুরো বাড়ী ৬৬ জন এর কব্জা আছে। দম ছাড়ার মতো ও বিন্দু মাএ কোনো যায়গা অবশিষ্ট আর নেই এই বাসায়।নূর।
.
কি সাংঘাতিক ব্যাপার।।।।। এখন কি হবে!!!ফারদিন।
.
চলো ছাদে যাই, মা, খালা, চাচিগো তো ভূতের ভয় টয় আছে মনে তাই তারা ছাদে ভুলেও আসবো না।আমরা জমে আড্ডা দিতে পারবো,,,, নূর
.
হ্যা, চল। দিপ্ত।
.

.
ছাদে চার ভাইবোন দাঁড়িয়ে আড্ডামত্ত হয়ে আছি। দশ মিনিট আগে ইফরান ভাইয়ারা এসেছেন আম্মু নিচ থেকে আমাদের পিচ্ছি বাহানীদ্বারা খবর পাঠিয়েছে নিচে আসার জন্য।এতো ভিরের ঠ্যালাঠ্যালিতে আপাতত নিচে জাওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই আমাদের। তাই বিন্দাস ভাবে চিল মুডে দাঁড়িয়ে আছি আমরা কাজিন নামক চার ভাইবোন । কথার মাঝে ছাদের গেইট হঠাৎ জোড়ে খোলাতে আমরা কথা থামিয়ে গুরে তাকালাম পিছে,,,তাকিয়ে দেখি মালিহা দৌড়ে আসছে,,,,,
.
নূর আপি,খালা তোমাকে ডাকছে,,হাপিয়ে কমোড় দুই হাত গুঁজে,, জলদি নিচে যাও।
.
কেনো!!
.
জানিনা, কিন্তু খেপে আছে অনেক।তাপমাত্রা খুব হাই।।
.
সে নতুন কিরে, আমার অতি শান্তশিষ্ট নানা ঘরে নানি আমার জন্য ওয়ান পিস কোথা থেকে যে এই খুন্তিকা নারী কপালে নিয়ে এলো।।।আফসোস এর শুরে।।কি আর করা চল যাই।।
.
জলদি করে বড় বড় লাফে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে বাধল আর এক বিপত্তি, বলে না জলদির কাজ শয়তান এর কাজ।তাইতো নিজের প্লাজোতে নিজেরই পায়ের টান পরাতে নিচে ছিটকে পড়ে যেতে,,,, চোখ মুখ খিচ্ছে,,,,,আল্লাগো আমার কমোড় গেলোগো গেলো আর মনে হয়না আমি আর বাচমু,,, কে কোথায় আছিস আমাকে বাচাঁ। মালু ধোর আমাকে গাদি,,,আম্মুউউউউ।কিন্ত একমিনিট আমি ব্যাথা পাচ্ছি না কেন,,, এক চোখ খিচ্ছে পিটপিট করে ঝুকে নিচে তাকালাম, নাহ আমি পড়ে যাই নি আমি হাওয়াতে কাউর বাহুডোর আবদ্ধ আছি,কিন্তু কার।।। কোন হে ওয়য়য় জিস্নে মুঝে ফিল্মি স্টাইল মে পাকড়া,হু ইজ হি!!!,,,,এভার দুইচোখ খুলাম, খুলে সামনে তাকিয়ে আমি থ,,,,,,,

“আমার সামনে রাহাত ভাই দাঁড়িয়ে আছে।এক হাতে আমাকে ধোরে আছে আর এক হাত দিয়ে ফোনে কার সাথে জেনো কথা বলছে। কিন্তু রাহাত ভাই এনে হাউউউউ,,,, রাহাত ভাইও আমাকে রিতিমত এখানে দেখে অবাক যা তার চাহনিতে স্পষ্ট।
.
নূর তুমি ঠিক আছ,,,,,বাহুডোর থেকে উঠাতে।
.
হ্যা,ভাইয়া ঠিক আছি।ধন্যবাদ আমাকে কমোড় ভাঙা জীবন থেকে বাচাঁনোর জন্য।
.
তুমি এখানে কি করছো, আই মিন এই বাসায়।।।কোনো রিলেটিভ এর বাসা তোমার।দাওয়াতে আসছো নিশ্চয়!
.
লে হালুয়া এই কি কয় ছেমড়ায় মনে মনে,,, না ভাইয়া মুচকি হেসে।এটা আমার কোনো রিলেটিভ এর বাসা না। বরং এটা আমারই বাসা।
.
মানে!!!!
.
এতো অবাক হওয়ার কি আছে ভাইয়া। এটা আমারই বাসা।কোনো সমস্যা?
.
মানে আজ তোমার!!আই,,, মিন,, এনগেজমেন্ট।।।
.
জ্বী আজ আমার, ব,,,,,,,

“নূরররররররররররর”এই নূর

ভাইয়া আম্মু ডাকছে আমি পরে এসে আপনার সাথে কথা বলছি,,,,

.
এতো চিল্লাছো কেন আম্মম্মমুউউউ মানুষ কি বলবে,,, (রান্নাঘরে এসে)
.
চুপ বেয়াদ্দপ,,, তোরা বাপ বেটি দুইটা তো কসম খাইছিস আমাকে অশান্ত রাখার জন্য(ঝাঁজালো গলায়) আর এখন বলছিস চিল্লাও কেন।তোর বাপ সেকখন লেবু আনতে গেছে,,,,,এখন নিরউদ্দেশ লেবু হয়ে গেছে।আর তুই দরজা খুলতে গিয়ে দরজা হয়ে গেসোস।কোনো দায়িত্ব আছে তোগো।।।রেগে।।
.
আই হেব এ এই মূহুতে গবিরতম ওয়ান অফ প্রশ্ন আম্মু।মানুষ দরজা হয় আবার কিভাবে 🙄।
.
থাপ্পড় চিনিস,,, কতো প্রকার ও কি কি, না চিনামু তোরে এখন কোনটা।আমার সামনে থেকে এখন যাহ গিয়ে বাগান থেকে বড় বড় দেখে চার পাঁচটে লেবু ছিঁড়ে নিয়ে এসে আমাকে উদ্ধার কর।।
চলবে,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে