মেঘের আড়ালে ২ পর্ব-০৬

0
1020

#মেঘের_আড়ালে২(ফিরে আসা)

#পর্ব_০৬

#লেখিকাঃফাতেমা_জোহরা_নাভিলা

লাল রঙ এর পুরানো আরএফএল চেয়ারে জোড়ো হয়ে গুটিসুটি পায়ে বসে আছে নূর।হাতের সাথে তালমিলিয়ে কিছুক্ষন পর পর নাক টানছে আর ডান হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে নাকের সাথে তালের ছন্ধ মিলিয়ে চোখের পানি গুলো মুচঁছে আপাতত। নূর যে রুমে বসে আছে রুমটি ঝুড়ে চারপাশে পিনপিন নিরবতা ছায়া,,, কোনো টু শব্দ নেই বললেই চলে,,,,আছে শুধু একঝাক জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস ছাড়ার শব্দ। নূরের এক হাত দূরে একটা চেয়ারের সামনের দিকটা ভেঙে দুইখন্ড হয়ে নিচে করুন অব্যস্থা ছিটকে উল্টো হয়ে পরে আছে। নূরের ঠিক সামনে বরাবর টেবিলে দুইজন মাঝ বয়সি লোক বসে আছে,একজন কাপাঁকাপাঁ হাতে টেবিলের উপর থেকে কাচের গ্লাস হাতে নিয়ে ঢোগ ঢোগ করে পানি খাচ্ছে,আর পাশের জন খাতা কলম নিয়ে থরথর হাতে কিজানি লিখছে আর তার সাথে হাতে থাকা গোলাপি রুমালটা দিয়ে কপালের বিন্দু বিন্দু জমে থাকা ঘাম গুলো মুচঁছে।

.

.

নূর এভার কাঁদোকাঁদো হয়ে এক বুক সাহস সঞ্চয় নিয়ে মাথা তুলে সামনে সাদা কালো ফর্মাল পোশাকে সুর্দশন ছেলেটার দিকে তাকালো।
.

.

ব্রাউন ক্লার সিল্কি চুল গুলো উল্কোসুল্কো হয়ে সামনের দিকের কিছু চুল কপালের বিন্দু বিন্দু জমে থাকা ঘামে লেপ্টে আছে,নিভ্র চোখ জোড়া গুলো আজ অনেক ভয়ংকর লাগছে মনে হচ্ছে নীল মণির এর মধ্যে এক খন্ড জ্বলন্ত লাল লাভা জ্বলছে ,,সাদা ফর্সা চামড়া কপালের দুইদিকের সবুজ রগগুলো ফুলে উঠেছে যার উপর বাম হাতের চার আঙুল মুঠো করে বৃদ্ধা আঙুল দ্বারা কিছুক্ষন পর পর কপালে ঘষছে। সাদা শার্টে বুকের দিকে তিন চারটে বোতাম খুলা যার ফাঁকে আপাতত সাদা লোমহীন উম্মাদ বুক দেখা যাচ্ছে, হাতা কনুই পর্যন্ত ঘোঁটানো, নাম না জানা বেশ দামি কোনো এক ব্রান্ডের ফর্সা ডান হাতের কব্জিতে সিলভার ক্লার এর ঘড়িটা চিকচিক করছে, তার সাথে সামান তালে চকচক করছে হাত মুঠো থাকা কালো রিভালভার। আজকের এই ইয়াদ এর সাথে কালকের ইয়াদ এর সাথে আকাশ জমিন তফাৎ। দুইটি জেনো ভিন্ন দুই রুপ এক পানি তো দ্বিতীয় আগুন। পানি আর আগুনকে যেমন হাজার চেষ্টা করে ও মিলানো যায় না, তেমনই এই ইয়াদকে ও কালকের সেই ইয়াদ এর সাথে নূর মিলাতে পারছে না। নূর পূনরায় এক ঢোগ গিলে নাক টেনে টেনে কাপা কাপা শুরে বলে উঠল,,,,,,

সসস স শুন্নন্ননননাহ, এমমম্মন কররর কর করচচছেন কেনো!!আয়ায়ায়ামার কথা বুঝার,,,

“নূরের কথার বিপরীতে ইয়াদ রেগে হাতে থাকা রিভলভার দ্বারা নিচে ছিটকে পরে থাকা চেয়ারে শুট করে দিলো” যা কিছুক্ষন আগে লাথি দিয়ে একপাশ ভেঙে ছিলো ।
.

.
এভাবে হুটহাট শুট করাতে নূর কানে দুইহাত চেপে কেপে ফুঁপিয়ে কান্না করে দিলো।
.
.
সামনে বসে থাকা দুইজন লোক ও ভয়ে থরথর করে কাঁপছে, আর মনে মনে ভাবছে,,আজ কি তারা সুস্থসবল ভাবে আদৌ বাসায় ফিরতে পারবে তো,,, না আজ তাদের কপালে শেষদিন লিখা আছে।।।।
.

.
শুনবো!!! হ্যা,,,শুনবো তো!! কিছু শুনা বা দেখা আর কিছু কি বাকী রাখসো তুমি?? চিল্লিয়ে টেবিলে দুই হাত দিয়ে ভারি দিয়ে।
.

.
টেবিলে জোড়ে ভারি হওয়াতে নূর আবার ও কেপে উঠল,,, কথা বলার শক্তি তার মধ্যে বিন্দু মাএরো আর অবশিষ্ট বাকী নেই। তার শরীল থরথর করে কাঁপছে আর চোখ বুঝে নাক টেনে ফুঁপিয়ে কান্না করছে।।।
.

.
একদম ন্যাকা কান্না করবা না বলে দিলাম। কাকে দেখাচ্ছে এই ন্যাকা কান্না আমাকে??? কেন!!ভয়ে!! তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে।।
.

.
এখন ভয় লাগছে(নূরকে ঝাঁকিয়ে) তাকাও আমার দিকে ড্যেমেইইড,,,,আই সেইড ওপেন ইউর আইস,,, (মুখ শক্ত করে চেপে ধরে) খুব ভয়ংকর লাগছে আমাকে তাই না দাঁতে দাঁত চেপে ।।। এতোই যেহেতু ভয় পাও তাহলে কেন করলে আমার সাথে এমন।। হোয়াই হোয়াই নূর হোয়াই!!!(চিল্লিয়ে) এতো বড় জঘন্য এক কাজ করার আগে মনে আসেনি মাথায় একবারো,,,, একবারো ও আমার কথা।।। দুইটো,, থরথর করে কেপে উপরের ঠোটঁ দিয়ে নিচের ঠোটঁ চেপে ধরে চোখ বুঝে,,, ঘনঘন শ্বাস নিয়ে,,,, তাকিয়ে,

পুরো দুইটো বছর আমি তোমাকে দূর থেকে আড়ালে আবডালে দাঁড়িয়ে দেখে পার করেছি।। দুইটো বছরে কতোদিন,কতো সময় হয় তা জানো??আমি বলছি,,৭৩০ দিন, ১৭,৫২০ ঘন্টা, ১,০৫১,২০০ মিনিট, ৬,৩০,৭২০০০ সেকেন্ড। আমি দূর থেকে দাঁড়িয়ে চোখ বুলিয়ে খুঁজে এক নজর তোমাকে দেখতাম শুধু তোমাকে, তাও শত অপেক্ষার পর। একনজর দেখেই চলে যেতাম সারাদিন এর তিষ্ঠা মিঠিয়ে, দিনের পর দিন শুধু এক নজর চোখের দেখার জন্য কড়া রোদের,বৃস্টির মঝে টং এর দোকানে, কলেজের ক্যাম্পাসে শত ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে কতো দিনেই পার করেছি তার হিসেব নেই।বলতে পারবে,,

কখনো বাজে বিহেভিয়ার করেছি তোমার সাথে,,, বাজে নজরে তাকিয়েছি অাদৌ,বা কাউকে তাকাতে দিয়েছি তোমার দিকে। আমি নিজেই ভালো করে চোখ তুলে তাকায়নি আর সেইখানে,,,,,তার পর ও তোমার,,,, আমাকে নিয়ে অনেক সমস্যা ছিলো,, হুট করে আমার সামনে এসে কন্ডিশন দিয়ে দিলে, আমি যদি গিটার বাজিয়ে ক্যাম্পাসে মাঠে মাঝ বরাবর বসে তোমার ফ্রেন্ড এর সামনে গান গেয়ে শুনাতে পারি তাহলে আমার প্রোপস এক্সসেপ্ট করবে।আমি,,,,,তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে,,,

দেখো না আমি কতো বোকা পাগল ছেলে,, তোমার কথা অনুযায়ী হাসিখুশি ভাবে তা ও মেনে নিলাম। পুরো দুই দিন ৪৮ ঘন্টা,২,৮৮০ মিনিট, ১,৭২,৮০০সেকেন্ড প্রিয়সিকে না দেখে শুধু গিটার শিখেছি কতো কষ্টে তা জানো, কাছ থেকে সারাজীবন এর জন্য পাশে বসে দেখতে পারবো ভেবেই, দুইটো দিন এক রাত এক করে খুশির মনে গিটার শিখেছি নির্ঘুম ভাবে না খেয়ে ।।।।। আর সেই তুমি আজ এনগেজমেন্ট করছো ওয়াওওওও গ্রেট জান্নাতুল নূর গ্রেট। একটা ছেলেকে হাতের আঙুলে উপরে নাচিয়ে আর একজন এর সাথে এনগেজমেন্ট করা।।হোয়াট এ গ্রেট আইডিয়া নূর তাইনা।।। হাতে তালি দিয়ে।। কিন্তু, আফসোস,,, তুমি তো ভুল মানুষ এর উপরে আইডিয়াটা পরক্ষ করার কথা ভাবছো।। এই ইয়াদ ইমতিয়াজ সিদ্দীক কখনো নিজের জিনিশের উপরে কাউর ভাগ তো দূরে থাক নজর ও কাউকে দিতে দেয় না।।। আর সেখানে তো তুমি তার জিনিশের ভাগ অন্য কাউকে দিতে যাচ্ছিলে এর শাস্তি যে তোমাকে এখন থেকে সারা জীবন এর জন্য পেতে হবে,,,,ডেবিল স্মাইল দিয়ে,,,,

“কাজী সাহেব কালেমা পড়ানো শুরু করুন।।। ধমক এর শুরে।।। টেবিলের উপর রিভলভার রেখে।।।

ইয়াদ এর ধমকে কাজী সাহেবের সাথে নূরের পিত্ত আত্তা রুহু জেনো কেপে উঠল।।।

__জ্বজ্জী জ্বী পরছি,,

চলবে,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে