মেঘের আড়ালে ২ পর্ব-০৫

0
1073

#মেঘের_আড়ালে ২(ফিরে আসা)
#পর্ব__০৫
#লেখিকাঃফাতেমা_জোহরা_নাভিলা

বাম হাতে কব্জির জোড়ার উপরে কিছুটা লাল ছপ ছপ হয়ে ফুলে আছে।আমি ঘুমো ঘুমো চোখে কাঁদোকাঁদো হয়ে একবার হাতের দিকে তাকাচ্ছি তো আর একবার মাথা তুলে দুই হাত দূরে আমার সামনে স্টার জলসা স্টাইলে দ্যা ঘসিটি বেগেমের আফতারে দাঁড়ানো আম্মু হাতের চকচক খুন্তির দিকে তাকিয়ে আছি।।।
.

.
তোর বাপ এক জমিদার ছিলো তার ঘরে তুই হইসোস অবিকল আর এক জমিদার।।।তোরা বাপ বেটি দুইটা কি কসম খাইসিস সারা জীবন আমার জানটার তেসপাতা বানানোর।। খুন্তি নাচিয়ে নাচিয়ে রাগে ঝাঁজালো গলায় ফুঁসতে ফুঁসতে বললেন।।

কারন আমরা জমিদার এর বংশধর নতুন কি (হাতে চা এর কাপ নিয়ে রুমে প্রবেশ করতে করতে )। ভুলে গেলা তুমিই তো পদবী দিয়েছো আমাদের এক গাল হাসি দিয়ে, আর কতোবার তোমাকে বলবো এভাবে কথায় কথায় বলবানা তো,,, আমার শুনতে বড্ডো কষ্ট হয় আমরা জমিদার আর তুমি আফসোস এর সুরে । এখন সেই সব বাদ,,, যাও তো আমার জন্য আর এক কাপ চা নিয়ে এসো মাথাটা প্রচণ্ড ব্যাথা করছে।।(নূরের বাবা)

আর সাথে আমার জন্য ও আম্মু।(বালিশের নিচ থেকে ফোন নিতে নিতে বলল নূর)

খুন্তির বারি কি আরো খাইতে মন চায় তোর তাইলে দ্বারা আমি চুলারজ্বালটা অফ করে আসতেসি, তারপর শুরু করছি।।

নূরের বিপরীতে কটমট সুরে বলে উঠল মিসেস রাবেয়া অরফে নূরের আম্মু।।

মানে!!

যদি কথা বলার জন্য আর ফোন গুতানোর জন্য অতন্ত্য মাথাটা আস্ত ঠিকঠাক দেখতে চাস,,, তাইলে চুপ চাপ ওয়াশরুমে যায়,,, ফ্রেশ হয়ে নিচে আয় বেদ্দপ মাইয়া। আজ যে তোর বইনের এনগেজমেন্ট ভুলে গেসোস।কয়টা বাজে ঘড়ির দিকে তাকাইসিলি একবারো ,,,, একটা দিন জমিদার এর মতো না ঘুমাইলে কি হয় মরে যাইবি,,,, ভড়ং আরো একদিন বেশী বাঁচতি।।।। আর তুমি (গুরে নূরের বাবার দিকে তাকিয়ে)

সকাল থেকে দুই কাপ চা অলরেডি সাবাড় করে ফেলসো এখন আবার আসছো,,, আরো চা লাগবে তোমার। চা খেয়ে এই মাথা ব্যাথা না কমিয়ে কাজ করে মাথা ব্যাথা কমাও,,,, আর আমাকে উদ্ধার করো এই যুদ্ধ থেকে।।। আজ মেয়ের যে বিয়ের পাকা কথা বার্তা সেই খেয়াল কি আছে তোমাদের। রেগে বললেন।।।। চুপ চাপ বাপ বেটি দুইজন নিচে এসে আমাকে কাজে হেল্প করে উদ্ধার করো।।।একা হাতে আর কতো কি সামলাবো, অাদৌ একা একজনের পক্ষে কি এতো কাজ করা সম্ভব।।। বলে চলে গেলেন হনহন করে।
.

.
হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে হোলরুমে সোফায় বসে বিরক্তি নিয়ে মটরশুঁটি বাছছে নূর।আপাতত বাছছে কম বিরক্তি নিয়ে চারপাশে ফেলছে বেশী। তার ঠিক পাশে ইশারা আর রফিক সাহেব বসে বসে পুদিনাপাতা বাছছেন।
.
.
রান্নাঘর থেকে তাড়া দিয়ে বলে উঠলেন মিসেস রাবেয়া,,,,,

এইইই তোদের পুদিনাপাতা বাছা হইসে, হইলে নূরকে বল পদিনা জার্যটা তারাতারি বানাতে আর,, অর থেকে মটরশুঁটি নিয়ে আমাকে বেছে তারাতারি পাঁচ মিনিটের মধ্যে দেয় তো।।
.
.
জীবনে প্রথম মনে হয় আম্মুর কথা শুনে নূর এতো খুশি হয়েছে।।। মটরশুঁটি বাছতে বাছতে তার জান তেসপাতা হয়ে যাচ্ছিলো এতোক্ষন ধরে। সে বসা থেকে চ্রট করে উঠে পরলো ইশারা হাত থেকে টেনে পুদিনাপাতা নীল কাঠাঁটা নিয়ে,, সাদা মটরশুঁটি পূর্ন পলি ব্যাগ দিয়ে হনহন করে রান্নাঘরে চলে আসলো।।। আর কিছু করতে পারুক ইয়া না পারুক এই ইন্ডিয়া স্টাইলে টকদই আর পুদিনার জার্যটা ও ঠিক লাজাভাব ভাবে করতে পারে। রান্নাঘরে এসে খুশি মনে ব্লান্ডার অন করে দিলো।।
.

.
বাসায় ছোটখাটো জোট বেধে গেছে ইতিমধ্যে দুপুরে ও পুরো বাড়ী খালি ফাঁকা রাস্তা ময়দান ছিলো, আর এখন ছোটখাটো ঢাকা মিরপুর দশ এর জ্যামে মাথা হাত দিয়ে রিক্সা বদলে সোফার উপরে বসে আছি খুব কষ্ট করে। চারপাশে বাচ্চাকাচ্চা হৈঁচৈঁতে মাথা বনবন করছে। ইরফান ভাইয়ার বাসা থেকে আসবে বেশী হলে হাতেগনা পাঁচ থেকে ছয়জন। আর সেখানে আমার চৌদ্দ গুষ্টি এসে বসে আছে ৬৬ জন ভাবা যায় । আপাতত তিনটে বেড রুপ কিচকিচ করছে মানুষজন বাচ্চাকাচ্চা দিয়ে দম ছাড়ার যায়গা ও আর বিন্দুমাত্র অবশিষ্ট নেই এই বাসায়। এই মূহুতে মনে হচ্ছে চা না খেলে মাথা ব্যাথায়, মাথা ফেটে দুই খন্ড হয়ে ছিটকে সাদা টাইলসে উপরে পরে যাবে ইতিমধ্যে। না, নূর নিজের অলসের জাহাজকে সাইডে রেখে উঠে গিয়ে নিজ থেকেই এক কাপ চা করে খেতেই হবে, না হলে আমাকে মিনিট পাঁচ এর পর আর কেউ মনে হয়না খুঁজে পাবে ইহা কালে।।। উঠে অলস ভঙিতে রান্নাঘরে উদ্দেশে পা দিতেই পিছু থেকে উচ্চশুরে কলিংবেল বলে উঠল,,,,

প্লিজ ওপেন দ্যা ডোর!!!

আশেপাশে তাকিয়ে দেখি এতো মানুষ থাকতেও কেউ দরজার ধারে কাছে যাচ্ছে না। বলি আমিও যাবো না, আমি কি এই বাসার দারাওয়ান না কি খালি দরজা খুলা খুলির ডিউটি পালন করবো। বলি দারাওয়ানকে তো তারপর মাস শেষে এক মোটা অংকে টাকা দেওয়া হয় দরজা খুলার জন্য।আর আমাকে তো এক আনিও কিছু দেওয়া হয়না, ফ্রিতে এতো জন জন সেবা দেওয়া ঠিক না। কপাল কুঁচকে দরজা থেকে চোখ ফিরিয়ে রান্নাঘরের সামনে পা দিতেই আবার পিছ থেকে মেয়েলি কণ্ঠে বলে উঠল,,,,,, পিজ ওপেন দ্যা ডোর।।। বলার সাথে সাথে,,,,

আম্মু রান্নাঘর থেকে হাতে লাল মশলাযুক্ত খুন্তি নিয়ে বের হলেন রুক্ষচোখে ,,,,আর আমার দিকে কপাট রাগ নিয়ে বলে উঠলেন,,,, সবার সামনে থাপ্পড় খাওয়ার বড্ডো শক হইসে তোর, কতোক্ষন ধরে কলিংবেল বাজছে দরজা খুলছিস না কেন বেয়াদব।।।।। ভালো ভালো চড় না খাইতে চাইলে খুল।।।।। রেগে।।। তোর বাপ মনে হয় আইসে লেবু আনতে বাজারে পাঠিয়েছি সেই কখন, সব আনছে লেবু আনতে ভুলে গেসে মহাশয়।।। ধেইধেই করে দাঁড়িয়ে আছিস কেন বলার ও পর,,, যা দরজা খুল।।। ধমক এর শুরে।।।

আমি আম্মুর ধমকে রিতিমত কেপে উঠলাম,,,,, এক ঢোগ গিলে আশেপাশে চোখ বুলিয়ে আগে পরিবেশ এর সংকেত বুঝে নিলাম কেউ দেখলো কিনা। না কেউ দেখেনি ওফফফ বাচাঁ গেলো ,,,দেখলে এতোক্ষনে ইজ্জৎ এর উল্ফাত হালুয়া হয়ে যেতো।।। চোখ গুরিয়ে কপাট রাগ দেখিয়ে আম্মুকে বলে উঠলাম,,, আজ যদি নানাজান বেচে থাকতো তাহলে আমিও তোমাকে বুজতাম আম্মু কথায় কথায় চিল্লাইলে কেমনডা লাগে তখন,, বলেই দরজা খুলার জন্য পা বাড়ালাম,,,

একঝাক বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলে আমি রিতিমত থ মুখ আমার অটোমেটিক হা হয়ে গেলো,,,,

চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে