মিষ্টার লেখক পর্ব-০৪

0
875

#মিষ্টার_লেখক(৪)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
[কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ]

সপ্তাহে চারদিন ক্লাস থাকে ইমা’র।এর মধ্যেও রেগুলার কলেজে যায় না সে।তাই আজকে বাড়িতেই আছে। সামনে বিয়ে বলে সাহারা মেয়েকে ডাল আর চালের মিশ্রনে ফেইস প্যাক তৈরি করে দিয়েছেন।যা ফেইসের ত্বক উজ্জ্বল করে,পিম্পল এবং দাগ দূর করতে সাহায্য করে।

তো এগুলো আঁখিপল্লব এবং অধরপল্লব ব্যাতিত সারা মুখশ্রী জুরে ঘন করে দিয়ে রেখেছে ইমা। মাথার চুল গুলো কপালে চলে আসবে বলে রাউন্ড হেয়ার ব্যান দিয়ে খুব সন্তর্পণে আটকে রেখেছে।এর মধ্যেও সুন্দর্যো ছড়িয়ে আছে।ক্রিম রঙা ডাল চালের মিশ্রনে, কালো পল্লবের মাঝে আঁখিজোড়া যেন ফুটে আছে। গোলাপি ঠোঁট দুটো আরো গোলাপী হয়ে ফুটে উঠেছে।
আর সেই কারণেই মহিন মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে হাসছে।
ইমা নিরবতা ভেঙ্গে সালাম দেয়।মহিন সালামের জবাব দিয়ে জিজ্ঞাসা করে কেমন আছো?
ইমা অস্পষ্ট স্বরে উত্তর দেয়, আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি কেমন আছেন?
কারণ ফেইস প্যাক কিছুটা শুকিয়ে এসেছে। কথা বলতে নিলে টান টান অনুভব হয়।

এতে যেন আরো মোহনীয় লাগে মহিনের কাছে।ইমা আশে পাশে নজর বুলিয়ে দেখলো হাসপাতালে নিজের কেবিনে বসে আছে সে। মহিন কে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে ইমা জিজ্ঞাসা করে বাসায় সবাই কেমন আছেন? মহিন ছোট করে উত্তর দেয়, ভালো।

মহিন আগেই সাহারার সাথে কথা বলেছে তাই আর পাল্টা জিজ্ঞাসা করল না।

এদিকে ইমা আর কি কথা বলবে খুঁজে পায় না।তাই ঘন ঘন চোখের পাতা ফেলে আশে পাশে নজর বুলিয়ে আবার ফোনের দিকে তাকায়। খুব অস্বস্তি বোধ হচ্ছে তার। কখনো কারো সাথে এভাবে কথা বলা হয়নি।তার‌উপর মহিন কিছু বলছেও না শুধু অনিমেষ চাহনিতে তাকিয়ে আছে।ইমার কাছে কেমন একটা দম বন্ধকর পরিবেশ লাগছে।
সময় অতিবাহিত হচ্ছে ধীরে ধীরে।ইমা আর সহ্য করতে না পেরে বললো,
— আচ্ছা তাহলে এবার রাখছি। আপনার নিশ্চয়ই কাজ আছে?

মহিনের অধরের হাসিটুকু মিলিয়ে গেল, ক্ষীণ স্বরে বললো,
— কল আমি দিয়েছি,অথচ তুমি কেটে দিবে? আমার সাথে কথা বলতে তোমার এতো অস্বস্তি বোধ কেন? আমি কি এখনো অবধি দূরের কেউ? বিয়ে করবো আমি তোমাকে এখনো যদি আমার সাথে কমফোর্ট ফিল না করতে পারো তাহলে সারাজীবন আমার সাথে থাকবে কিভাবে?

ইমা সরল ভাষায় উত্তর দেয়, বিয়ে করবেন,করেন নি এখনো অবধি!আর করেন নি বলেই আমার কথা বলতে অস্বস্তি বোধ হচ্ছে। আপনি এখনো আমার কাছে গায়রে মাহরাম। মানে পুরুষরা যেসব নারীকে বিয়ে করা বৈধ, সেসব নারী পুরুষদের গায়রে মাহরাম। অনুরূপভাবে নারীরা যেসব পুরুষকে বিয়ে করা স্থায়ীভাবে অবৈধ ওইসব পুরুষ নারীদের মাহরাম। আর নারীরা যেসকল পুরুষকে বিয়ে করা বৈধ, ওইসব পুরুষ নারীদের গায়রে মাহরাম।

ইসলামী শরীয়তে গায়রে মাহরাম পুরুষ ও নারীর মধ্যে একে অপরকে পর্দা করা ফরজ। গায়রে মাহরাম অর্থাৎ বেগানা নারীর প্রতি দৃষ্টিপাত করা পুরুষের জন্য হারাম। তেমনি গায়রে মাহরাম পুরুষের প্রতি দৃষ্টিপাত করা নারীর জন্য উচিত নয়। তবে অনিচ্ছায় হঠাৎ যে দৃষ্টি পড়ে যায়, সেটার কথা ভিন্ন। ইচ্ছাকৃতভাবে দৃষ্টিকে দীর্ঘায়িত করা হলে তা অপরাধ বলে গণ্য হবে। নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য ছতর ঢেকে রাখা ফরজ। ছতর পর্দার আওতাধীন। পুরুষের ছতর নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত এবং নারীর ছতর মুখমণ্ডল, হাতের কব্জি এবং পায়ের পাতা ছাড়া বাকি সর্বাঙ্গ। অবশ্য মুখমণ্ডল ছতরের অন্তর্ভুক্ত না হলেও হিজাবের অন্তর্ভুক্ত। তাই নারীরা গায়রে মাহরাম থেকে নিজের মুখমণ্ডল ঢেকে রাখতে হবে। কারও ছতর স্পর্শ করা তো দূরের কথা দূর হতে দেখা এবং দেখানোও হারাম। অবশ্য বিশেষ ক্ষেত্রে যেমন চিকিৎসার জন্য ছতরের প্রয়োজনীয় অংশ দেখানো যেতে পারে। এছাড়াও মুসলিম নারী বিধর্মী নারীদের সাথেও পর্দা করতে হবে। নারীরা তার মাহরামের সামনে বের হতে কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু কোনো ফিতনার আশঙ্কা থাকলে বের না হওয়াই বাঞ্ছনীয়। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পর্দার কোনো হুকুম নেই। তবে একে অন্যের লজ্জাস্থান দেখা উচিত নয়।

মহিন ইমার বলা প্রত্যেকটা কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলো। তারপর কিছুক্ষণ নিরব থেকে ধারাজ গলায় বললো,
— তুমি থাকো তোমার পর্দা নিয়ে বাই।

তারপর ইমাকে কিছু বলতে না দিয়ে কল কেটে দিল।ইমা বুঝতে পারলো না সে কি এমন অপরাধ মূলক মন্তব্য করলো।তাই কিছুক্ষণ থম মেরে বসে রইলো।
.
.
সপ্তাহ পেরিয়ে যাচ্ছে অথচ মহিন কোন রকম যোগাযোগ করছে না।
সাহারা খাতুন এতো দিন চুপচাপ থাকলে ব্যাপারটা ধীরে ধীরে আন্দাজ করতে পারলেন যে নিশ্চয়ই মহিনের সাথে ইমার কথা কাটাকাটি হয়েছে। সেই জন্যই ছেলেটা এতো দিন হয়ে যাচ্ছে অথচ কোন খুঁজ খবর নিচ্ছে না। সাহারা মনে মনে বলে, এই মেয়েকে নিয়ে আমি আর পারি না।
মেয়েকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন,মহিন কল করে না কেন?
ইমা বললো, আমি জানি না।
সাহারা অরুনলোচন আঁখি মেলে মেয়ের দিকে তাকায়।মেয়ের ইতস্তত বোধ দেখে বুঝে নেয় মেয়ে নিশ্চ‌ই কোন গন্ডগোল পাকিয়ে বসেছে।তাই রাগান্বিত স্বরে বললো,
— ডাক্তার মানুষ নিশ্চ‌ই ব্যস্ততার জন্য খবর নিতে পারে না। তুই তো অবসর আছিস কল করে জিগ্যেস করতে পারোস না?
— আম্মু তুমি জানো না উনি একজন গয়রে মাহরাম পুরুষ। উনার সাথে শুধুই এনগেজমেন্ট
হয়েছে এতেই দিন ভর নিজের চেহারা দেখিয়ে ফোন আলাপ করার কোন মানে হয় না।এটা গুনাহ এর সামিল হবে। আমি যেনে বুঝে এরকম গুনাহ করতে পারবো না।

মেয়ের কথা শুনে ভিশন রেগে গেলেন সাহারা।তার এখন আর বুঝতে বাকি নেই মহিন কেন কল করে না।এর প্রধান কারণ হচ্ছে তার মেয়ে। প্রচুর রেগে বললেন,
— কয়েকদিন পর‌ই তো তার সাথে বিয়ে হ‌ইবো। এখনো তুই পর্দা গিরি করছিস? বলছি না বিয়ের পর পর্দা করবি এখন পর্দা করবি না। একবার বাড়ির বাইরে গিয়া দেখ তোর বয়সের মাইয়ারা কেমনে সাজগোজ ক‌ইরা ঘুরতাসে আর তুই প‌ইরা আছস ঘরের কোণে।এহন যদি তারা বিয়ে ভাইঙ্গা দেয় মুখ দেখাইতে পারবি গেরামের মাইনষেরে?

ইমা তার মায়ের কথার উত্তর দেয় না,জানে দিলেও লাভ নেই। তাকে বুঝাতে বুঝতে ইমার তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়ে গেছে।
একবার ক’জন মহিলা দেখে যায় ইমাকে তারপর তারা বাড়ি গিয়ে জানায় একজন ছেলেকে পাঠাবে ইমার ছবি তুলে নেওয়ার জন্য।যদিও মহিলা গুলো ছবি তুলে নিয়েছিল কিন্তু তারা বলে ছবি স্পষ্ট দেখা যায় না।তাই আবার তুলে নিয়ে ছেলে কে দেখাবে। এতে ইমা ভিশন বিরক্ত হয়। এবং সাহারা কে নিষেধ করে তার ছবি যেন না তুলতে দেয়। কিন্তু সাহারা উল্টো রেগে বলে,
— মানুষজন যদি তোকে দেখতেই না পায় তাহলে তোকে ঘরের ব‌উ করবেন কেন? এসব ছাইড়া দে বলছি। বিয়ের পর এসব করবি তখন কেউ বাধা দিব না।

ইমা তখন বলেছিল,
— আম্মু ফোনে অনেক ছবি আছে সেখান থেকে দিয়ে দিলেই তো হয়। এভাবে একটা ছেলে এসে আমার ছবি তুলবে কেন?

তখন সাহারা রেগে গিয়ে ইব্রাহিম খলিল কে ও মেয়ের বিরুদ্ধে রুক্ষ কঠিন করে তুলে!
ইমাকে ধমকে বলে,
— তোকে যদি দেখতেই না পায় তবে বিয়ে করবে কেন?
— যে করার এমনিতেই করবে আব্বু। তখন সাজগোজ চেহারার প্রয়োজন হবে না, নর্মালি পছন্দ করবে।

সেদিন মেয়ের উপর রেগে ইব্রাহিম খলিল ধমকের স্বরে অনেক কথা বলে।ইমা শুধু নিরবে নিভৃতে কাঁদে। আল্লাহ তা’আলার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে।তার পর্দা সহিত যেন খুব শীঘ্রই বিয়ে হয় কোন দ্বীনদার ছেলের সাথে।

ইমার বাবা মা নামায রোজা ঠিক মতো পালন করলেও এই বিষয় গুলো নিয়ে খুব‌ই অজ্ঞ।তারা মনে করে বিয়ের পর পর্দা শুরু করলেই হবে। অথচ ইসলামে নারীর পর্দা যৌবনের চিহ্ন শুরু থেকেই পর্দা ফরজ হয়ে যায়।
.
.
ইমার জীবনে আবার নেমে আসে তিক্ততা। দিন ভর মায়ের কটুক্তি কথায় খুব ভেঙ্গে পরে। বোনেরা কল করে নানা ধরনের কথা বলে। একভাবে ইমাকে বুঝালে মাকে বুঝায় অন্য ভাবে।বলে ইমা এই বিয়ে করতে চায় না, নিশ্চয়ই অন্য কারো সাথে সম্পর্ক আছে!। তবুও টু-শব্দ করে না ইমা। শুধু জায়নামাজে বসে চোখের পানি ফেলে। আল্লাহ তা’আলা কে বলে এই নরক যন্ত্রণা থেকে তাকে মুক্তি দিতে।তার বিশ্বাস আল্লাহ তা’আলা একদিন সব কিছু ঠিক করে দিবেন ইনশা আল্লাহ।

এবং অবশ্যই আমি তোমাদের পরীক্ষা করবো কিছুটা ভয়,ক্ষুধা, জান-মালের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও ধৈর্যশীলদের।[১]এই আয়াত থেকে ইমা বুঝতে পারে তাকে দুঃখ কষ্টে ফেলে আল্লাহ তা’আলা ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছেন।

তিন দিন পর,
একটা মেসেজ দেখে চক্ষু বিস্ফোরিত হয়ে যায় ইমার! মেসেজে লেখা,
— খুব শীঘ্রই দেখা হতে যাচ্ছে আমাদের।একদম তুলে নিয়ে আসবো! তৈরি থেকো।

মেসেজ খানা বার কয়েক পড়লো ইমা,খানিকটা ভয়ে ঢোক গিলে সে….
________
রেফারেন্স:
[১]সূরা বাক্বারাঃ১৫৫
________

#চলবে… ইনশা আল্লাহ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে