মিষ্টার লেখক পর্ব-০২

0
966

#মিষ্টার_লেখক(২)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)

হাত গুটিয়ে বসে থাকতে দেখে সাথে আসা আত্মিয়া ভদ্রমহিলা বললেন,
— এই তুমি কি লজ্জা পাচ্ছ? অবশ্য লজ্জা পাওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে তোমার গুরুজনরা যে অপেক্ষা করছে। হাত বাড়িয়ে দাও কিউটি!

এদিকে ইমা টলমলে চোখ দুটো দিয়ে মাথা তুলে তাকাতেও পারছে না। কেননা তাকালেই চোখের অবাধ্য অশ্রু কণা গুলো টুপ করে ঝরে পরবে। এতে করে পরিবেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। অতিথি হয়ে আসা লোকজন মন্দ কিছু ভাববে। যেমনটি ইমা’র আম্মু ভাবে। এতো দিন কোন বিয়েতে অমত করলেই সাহারা বলতো ইমা’র নাকি কারো সাথে রিলেশন আছে যাকে ইসলাম বলে “হারাম সম্পর্ক”! সেই ছোট বেলা থেকেই ইমা কোন ছেলের সাথে কথা পর্যন্ত বলে না।

ইমা’র এই বিয়েটা নিয়ে খুব দ্বিধা বোধ হচ্ছে।বার বার ঐ লেখকের কথা মনে পরছে।
সেদিন রাত দশটা বেজে নয় মিনিট শুয়ে শুয়ে নিউজ ফিড স্ক্রল করছে ইমা। সামনে তুহিন আহমেদ নামের আইডি থেকে একটা গল্প সামনে এলো। সপ্তাহ খানেক আগে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দিয়েছিলো, তিনিও একসেপ্ট করে নিয়েছিলেন।
ফেবুতে ইমা’ও টুকটাক লেখালেখি করে, সেই সুবাধে ই রিকোয়েস্ট দিয়েছিলো। ভেবেছিলো গল্প পড়বে। কিন্তু ঐ লেখকের গল্প পড়া হয়নি তখনো,তাই গল্পটা স্কিপ করে সামনে থাকা কমেন্টে খেয়াল গেল ইমা’র। যেটা লেখক নিজে তার গল্প পোষ্ট করা কমেন্টে লিখেছেন। কমেন্টটি ছিল,
আমি কথা রাখি। আগের পর্ব ১৩ দিন আগে দিয়েছিলাম। ১০০ লাইক ১৩ দিন পর পূরণ হয়েছে। তাই আজ চতুর্থ পর্ব দেওয়া হল। এটায় ১০০ লাইক পড়তে একবছর লাগলে পঞ্চম পর্বও একবছর পর দেওয়া হবে।

ঐ মুহুর্তে কমেন্ট খানি পড়ে ভিশন হাসি পেয়েছিল ইমা’র।তাই হা.হা.হা রিয়েক্ট না দিয়ে পারলো না।এর কিছুক্ষণ পরই মেসেজ আসে “you are Blocked ”
ইমা যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো কিছু সময়ের জন্য। সাথে ভেবে নিয়েছে খুলনার মানুষজন চরম লেভেলের দাম্ভিকতা সম্পূর্ণ। না হয় এই সামান্য ব্যাপারে এরকম করে কেউ?
ইমা সেই রাতে একটুও ঘুমাতে পারেনি, সারাক্ষণ তার মাথায় ঘুরপাক খেয়েছে কি অপমান টাই না করলো লোকটা। জীবনের প্রথম এমন অপমানের মুখোমুখি হতে হয়েছিল শুধু মাত্র ঐ বজ্জা’ত লোকের জন্য।
.
যাই হোক অনেক দ্বিধা দ্বন্দ্বের পরেও আব্বু আম্মুর সম্মানের কথা চিন্তা করে ডান হাত বাড়িয়ে দিলো ইমা। তখন সে রিং পরাতে নিলে ঐ আত্মিয়া ভদ্রমহিলা বাধা প্রদান করে বললেন,
— এই মহিন করছিস কি?বাম হাতের অনামিকা আঙুলে রিং পরাতে হয় এও জানিস না?

ভদ্রমহিলা’র কথায় ভিশন অবাক হলো ইমা। তখন ভদ্রমহিলা বললেন,
প্রাচীন কালের মানুষ বিশ্বাস করতো যে, বামহাতের অনামিকা সরাসরি হৃৎপিণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত। সে আঙুলে একটি রিং পরা জীবনসঙ্গীর সাথে চিরন্তন প্রেম এবং সংযুক্তির প্রতীক। কারণ বৃত্তের যেমন কোনো প্রান্ত নেই; তেমনই ভালোবাসারও কোনো প্রান্ত নেই। তারই চিহ্ন এ আংটি।
লাতিন ভাষায়, বামহাতের অনামিকা ‘ভেনা অ্যামোরিস’ নামে পরিচিত। যার অর্থ ‘ভালোবাসার ধমনী’। মানুষ বিশ্বাস করে, বামহাতের অনামিকায় বাগদানের আংটি পরলে তা কোনো নারীকে তার জীবনসঙ্গীর সাথে ভালোবাসার বন্ধন গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। কারণ আপনার জীবনসঙ্গীই আপনার হৃদয়ের সবচেয়ে কাছের।

এটুকু বলে তিনি থামলেন,ইমা ভাবছে ইসলাম কি বলে এই ব্যাপারে? কখনো শুনেনি খুব জানতে ইচ্ছে করছে তার। আদৌও ইসলামে এই নিয়ম আছে কিনা। ঠিক করলো পরে একসময় নারীদের আমল ঘরে হাফেজা আপুদের থেকে জিজ্ঞাসা করবে।
ভদ্রমহিলা আবারো ইমা’র উদ্দেশ্যে বললেন,
— আমি তোমার হবু বরের মামাতো বোন বুঝলে তাই মজা করেও অনেক কিছু বলবো, তুমি যেন কিছু মনে করো না বোন।নাও এবার বাম হাতটা দাও দেখি?

ইমা বাম হাতটা এগিয়ে দিলে মহিন তার অনামিকা আঙুলে ডায়মন্ড রিং পড়িয়ে দেয়। তারপর ইব্রাহিম মেয়ের হাতে একটা রিং দিয়ে বললো মহিন কে পড়িয়ে দেওয়ার জন্য।ইমা তার বাবার কথা মতো রিং হাতে নেয় তবে হাত ভিশন কাঁপছে।মহিন হাত এগিয়ে দিলে কাঁপা কাঁপা হাতেই পড়িয়ে দিল।ইমা তার বাবার দেওয়া রিংটার দিকে খেয়াল করে বুঝতে পারলো এটা তার বাবা’কে মামা দিয়েছিলেন। তাড়াহুড়ো করে ঘর থেকে নিজের রিংটা দিয়ে দিল তার বাবা।যদিও ছেলেদের স্বর্ন পরা জায়েজ নেই তবুও তো নিজের কাছে যত্ন করে রেখে দিয়েছিলেন।তাই ইমার খারাপ লাগলো কিছুটা।
.
বিকাল গড়িয়ে যাচ্ছে তাদের যাওয়ার সময় হয়ে আসছে তাই মহিনে’র মামাতো বোন বললো, ওদের দুজনকে একটু আলাদা প্রাইভেসি দেওয়া উচিৎ। তখন সাহারা মেয়েকে বললেন,মহিন কে নিয়ে ছাদে যাওয়ার জন্য। ওখানের পরিবেশ নিরিবিলি ঠান্ডা তাই।

ইমা মহিন কে উদ্দেশ্য করে ছোট করে বললো,
— আসুন..

মহিন হাত দিয়ে ইশারা করলো যাওয়ার জন্য। তারপর সিঁড়ি গলিয়ে উপরে উঠলো তারা। কিছুটা এগিয়ে যেতেই পা স্লিপ খেয়ে পড়ে যাওয়া ধরে ইমা!
মহিন বিচক্ষণতার সহিত ইমা’র কোমর জড়িয়ে ধরে পড়ে যাওয়া থেকে আটকায়। তবে নিজেও পরতে পরতে বেঁচে যায়।
বৃষ্টির কারণে শেওলা জমে পিচ্ছিল হয়ে আছে ছাদের বেশিরভাগ অংশ।তাই এমন ধারা কান্ড ঘটে।

মহিন ইমা’কে ঠিক করে দাঁড় করালে ইমা পুরো ছাদের দিকে নজর বুলিয়ে ভালো স্থান দেখে ওখানে গিয়ে দাঁড়ায়। পিছু পিছু মহিন ও যায়।

সামনে থাকা কাঁঠাল গাছে অনেক কাঁঠাল ধরে আছে গাছে।যা ছাদের সাথে লেগে আছে।ইমা হাত দিয়ে ছুয়ে দিল কাঁঠাল গুলো,যদিও তার কাঁঠাল পছন্দ নয় তবুও দেখতে ভালো লাগে। তাছাড়া ইব্রাহিম খলিলের ভিশন পছন্দ কাঁঠাল।বাবা যখন তৃপ্তি ভরে খায় তখন মন ভরে দেখে ইমা।

দুজনের মধ্যে নিরবতা ভেঙ্গে মহিন আগে শুরু করলো কথা,
— আমাকে পছন্দ হয়নি বলে তখন কাঁদছিলেন?

চমকে তাকায় ইমা!অন্য কেউ খেয়াল না করলেও মহিন ঠিক খেয়াল করেছে ইমা তখন কাঁদছিল। মহিন চশমার মধ্য দিয়ে তাকিয়ে আছে ইমা’র প্রতিউত্তরের জন্য কিন্তু ইমা চুপটি করে দাঁড়িয়েই র‌ইলো।তাই মহিন অধৈর্য হয়ে আবারও সুধালো,
— আমাকে পছন্দ না হওয়ার কারণ জানতে পারি?

ইমা মিনমিন করে বললো,
— শুধু আপনি কেন? আপনাদের বিভাগের একজন মানুষ কে ও আমার পছন্দ নয়!

মহিন কথাটা শুনেও না শোনার ভান করে বললো,
— কিছু বললেন আপনি?
— তেমন কিছু নয়।

এতে করে শব্দ বিহীন বিস্তর হাসে মহিন। মনে হচ্ছে ইমা’র মলিন মুখশ্রীর কারণ খুঁজে পেয়েছে সে।তাই এই প্রশংজ্ঞ বাদ দিয়ে বললো,
— আচ্ছা ফর্মালিটি বাদ দিয়ে আমি আপনাকে তুমি করে সম্বোধন করি?

ইমা এবারো নিশ্চুপ হয়ে র‌ইলো।তাই মহিন নিজে নিজেই বললো,
— নিরবতা সম্মতির লক্ষণ। চাইলে আপনি মানে তুমিও আমাকে তুমি করে সম্বোধন করতে পারো, আমি মাইন্ড করবো না হা হা হা…

এই মুহূর্তে মহিন’কে বাঁচাল ছাড়া কিছু মনে হলো না। কেননা এখানে আসা অব্দি বকবক করেই যাচ্ছে লোকটা।
ইমার ভাবনার মাঝে রিহাব এসে পিছন থেকে উচ্চ কন্ঠে আওয়াজ করে!যার ফলে ভিশন ভয় পেয়ে যায় ইমা।দুই হাত দিয়ে কান চেপে ধরে বলে, “ইয়া আল্লাহ”!

মহিন পিছনে ফিরে দেখে বাচ্চা একটা ছেলে। চোখে মুখে তার আনন্দ খেলে যাচ্ছে। হাসছে আর বলছে “ইমু ভয় পাইছে,ইমু ভয় পাইছে” কি মজা কি মজা।
ইমা ব্যাপারটা বুঝতে পেরে পিছন ফিরে রিহাবের কান চেপে ধরে বললো,
— অসভ্য ছেলে থাপ্পড় দিয়ে তোর সব গুলো দাঁত ফেলে দিব দেখিস!

মহিন ইমার হাত ছাড়িয়ে বলে,
— তুমি এই অবুঝ বাচ্চাটাকে মারছো কেন? এটাই তো ওর দুষ্টুমি করার বয়স এখন দুষ্টুমি করবে না তো কখন করবে?

ইমা রেগে বললো,
— দুষ্টুমির একটা লিমিট থাকে,ও সেই লিমিট ক্রসিং করে ফেলেছে।

মহিন এই প্রশংজ্ঞ বাদ দিয়ে বললো,
— ও নিশ্চ‌ই আমার শালা বাবু তাই না?
তা শালা বাবু তোমার কোন পাত্তা নেই কেন? সেই কখন এসেছি তোমাদের বাসায়।আর এখন যাওয়ার বেলা তোমার দেখা মিললো?

ইমা বললো,
— সারাদিন এই গ্রাম থেকে ঐ গ্রামে টহল দিয়ে বেড়ালে তার দেখা মিলবে কিভাবে?

মহিন ইমাকে এড়িয়ে গিয়ে বললো,
— বাহ্ শালা বাবুর কি সেনাবাহিনী হবার ইচ্ছা আছে নাকি? বেশ ভালো ইচ্ছে কিন্তু আমি তোমাকে ট্রেনিং দিব ঠিক আছে?

রিহাব তো মহিনের কথা শুনে আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে বললো ঠিক আছে ভাই-থ্রি !
মহিন বিষ্ময় ভাব নিয়ে বললো,
— ভাই-থ্রি কেন?

রিহাবের সহজ শিকারক্তি ,
— বারে আপনি আমার তিন নাম্বার দুলাভাই না? সেই জন্যই তো ভাই-থ্রি।
— আচ্ছা এই ব্যাপার।
— হুম এই ব্যাপার।
— আচ্ছা তুমি বোন কে কি বলে ডাকলে তখন?

রিহাব একটু ভেবে বললো,
— ইমু ডাকের কতা বলছেন?
— হুম ঐটাই আমার খুব পছন্দ হয়েছে। ঠিক করেছি আমিও তোমার আপুকে ইমু বলে ডাকবো।

রিহাব তো সেই খুশি কারণ ইমা কে ইমু বলে ডাকার জন্য সবাই তাকে বকাঝকা করে কিন্তু তার নতুন দুলাভাই তাকে সমর্থন করে সেও ইমু বলে ডাকবে বললো।
এদিকে ইমা খুব বিরক্ত বোধ করলো, মহিন এই বাঁদর ছেলের প্রত্যেকটা কাজে উৎসাহিত করার জন্য।

এর মাঝে নিচ থেকে কথা কাটাকাটির আওয়াজ শুনতে পেয়ে দৌড়ে যায় রিহাব।ইমা ধীরে ধীরে পা ফেলে উঠানের দিকে রেলিং গেসে দাঁড়ায় কি হয়েছে দেখার জন্য। সেখানে দেখতে পায় তার হবু শ্বশুর শ্বাশুড়ি এবং মহিনের মামাতো আছেন। গ্রামের কয়েকজন লোক ইমা’র নামে বদনাম রটাচ্ছে! সেই সব শুনে মহিনের মা রাজিয়া সুলতানা রেগে মেগে অস্থির হয়ে বললেন,
— এরকম চরিত্রহীনা মেয়েকে তিনি কখনোই তার ঘরের ব‌উ করবেন না! তিনি একজন প্রফেসর তার একটা সম্মান আছে…

#চলবে… ইনশা আল্লাহ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে