মায়া পর্ব-০৪

0
1131

#মায়া
#পর্ব_০৪
#ওয়াহেদ_মাহমুদ

ওয়াহেদ সুরাইয়ার হাত ধরে নিয়ে অন্য রুমে চলে যায়। তা দেখে আফসানা তেলে বেগুনে জ্বলতে থাকে। আফসানা শুধু চায় সুরাইয়া এই বাসা থেকে চলে যাক আর না হয় এই বাসায় থেকে নির্যাতিত হতে থাকুক। ইদানিং সুরাইয়ার প্রতি ওয়াহেদের অল্প অল্প কেয়ারিং, ভালোবাসা মোটেও সহ্য হচ্ছে না আফসানার

কিছুক্ষণ পর ওয়াহেদ সুরাইয়ার রুম থেকে আফসানার রুমে চলে আসে । সুরাইয়া হাত ধরে নিয়ে আসে। ডাক্তারে একা একা চলাফেরা করতে মানা করেছে। এক্সিডেন্টের পরে মাথায় আর পায়ে অনেক আঘাত পেয়েছে। সে জন্যই একা একা চলা ফেরা করতে মানা করেছে।

ঘুমানোর সময় আফসানা ওয়াহেদকে, বলে আমাকে বললেই তো আমি গিয়ে তোমাকে নিয়ে আসতাম। সুরাইয়ার প্রতি এতো ভালোবাসা আসছে কেনো তোমার। তুমি কি বুঝতে পারছো না সুরাইয়ার জন্য তোমার এমন অবস্থা হয়েছে। সুরাইয়া যদি সেদিন ফোন না করতো তাহলে আজ তোমার আর আমার এমন খারাপ পরিস্থিতিতে থাকতে হতো না। নিজের দিকে একবার তাকিয়ে দেখেছ। বিয়ের দশ বছর পর কোনো সন্তান দিতে পারেনি। যদিও একটা সন্তান হয়েছে সেটাও মেয়ে। আসলে সুরাইয়া মেয়েটা অলক্ষ্মী। দেখে নিও ওর জন্য একদিন বাসায় সবাইকে বিপদে পড়তে হবে।

ওয়াহেদ রাগান্বিত স্বরে বলে, কি সব শুরু করলে তুমি বক বক না করে চুপ থাকবে একটু। আর সুরাইয়ার কি জানতো তার ফোন দেয়ার কারণে আমাদের এক্সিডেন্ট হবে। জানলে তো ফোন করতো না। আর কিছু না বলে দুজনে চুপ হয়ে যায় আফসানা।

সকালে উঠে বাসায় হৈচৈ হয় অনেক। শ্বাশুড়ি, আফসানা আর ওয়াহেদ গিয়ে দেখে সুরাইয়া কান্না করছে অনেক। কয়েকদিন আগে মেয়ে পূর্ণতা খাট থেকে পড়ে যায়। আর মাথায় আঘাত পায়‌। মাথায় আঘাত পেয়ে সামান্য ফুলে যায় কিন্তু সুরাইয়া সেদিকে খেয়াল করেনি তেমন। এতো কিভাবে খেয়াল রাখবে। ওয়াহেদ এক্সিডেন্ট করেছিল তাকে নিয়ে ব্যস্ত। মাথায় আঘাত পেয়ে চোখের পাশে কালো কালো বর্ণ ধারণ করেছে।

তাড়াতাড়ি ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। ওয়াহেদ এসে পূর্ণতাকে কোলে নেই। কিন্তু সুরাইয়ার শ্বাশুড়ি এসে ওয়াহেদের হাত টানতে টানতে অন্য রুমে নিয়ে চলে যায় আর বলে ভালোবাসা দেখাতে হবে না। এতো ভালোবাসা পেলে মা মেয়ে দু’জনে মাথায় উঠে বসবে। সব সময় কড়া শাসনে রাখতে হবে। সুরাইয়া পূর্ণতাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়া সময় ওয়াহেদ ও সাথে যেতে চায় কিন্তু সুরাইয়া নিষেধ করে, তুমি এখনো অনেক অসুস্থ, যেতে হবে না। তোমার রেস্টের প্রয়োজন। আমি নিজেই সবকিছু করতে পারব।

সুরাইয়া পূর্ণতা কে নিয়ে ডাক্তারের চেম্বারে যায় ওখানে গিয়ে ভালো মতো ডাক্তার দেখান। ডাক্তার বলে চিন্তার কোন কারণ নেই। বেশি চিন্তা করতে হবে না। রক্ত জমাট বাঁধার কারণে এমন হয়েছে। ডাক্তার দেখিয়ে আসার পথে অনেক দিন পর সুরাইয়ার এক বন্ধুর সাথে দেখা। এইচএসসি পরিক্ষার পর সুরাইয়া বিয়ে হয়ে যায়, তখন থেকে আর কারো সাথে যোগাযোগ নেই। অনেকদিন পরে যখন দেখা কথা তো বলতেই হবে। তাই দুজন রাস্তার পাশে একটা পার্কের বেঞ্চে বসে গল্প করছিল।

কথায় কথায় সুরাইয়ার বন্ধু সুরাইয়াকে জিজ্ঞেসা করে কিরে তুই একা কোনো তোর হাসব্যান্ড কোথায় একা কেন এসেছিস সব কিছু ঠিক আছে তো।

সবকিছু লুকিয়ে সুরাইয়া বলে তেমন কিছু না আমার হাসব্যান্ড অসুস্থ তাই আসতে মানা করেছি। ও আমাকে খুব ভালোবাসে। আমিই আসতে মানা করলাম। এমনিতেই অসুস্থ রেস্ট নিচ্ছে ওয়াহেদ।

আফসানার শ্বাশুড়ি আফসানা কে বাইরে থেকে খাবার পার্সেল আনতে বলে। কাজের মেয়েটা আজ আসেনি আর সুরাইয়া বাড়িতে নেই তাই আজকের খাবার টা বাইরে থেকে আনতে বলে।

বাইরে পার্সেল নিয়ে আসতে যাওয়ার সময় আফসানা সুরাইয়াকে পার্কের বেঞ্চে একটা ছেলের সাথে গল্প করতে দেখে আর পূর্ণতা সেই ছেলেটার কোলে ছিল। এটা দেখে আফসানা সুরাইয়াকে সন্দেহ করতে লাগলো। আর মোবাইল দিয়ে দুজনের একসাথে একটা ছবি তুলে রেখে দেয় এটা ভেবে যে ব্লাকমেইল করতে কাজে লাগবে‌।

কিছুক্ষণ পর পার্সেল কিনে নিয়ে বাসায় চলে আসে আফসানা। সুরাইয়া ও বাসায় চলে আসে পূর্ণতার ডাক্তার দেখিয়ে আর পুরোনো বন্ধুর সাথে গল্প শেষে করে। আজ বেশ ভালোই লাগছে সুরাইয়া অনেকদিনের পুরোনো বন্ধুর সাথে দেখা।

বাসায় এসে সুরাইয়া পূর্ণতা কে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছে। ঠিক এমন সময় হাসতে হাসতে সুরাইয়ার রুমে আসে আফসানা। শয়তানের মতো হাসি দিয়ে সুরাইয়ার উদ্দেশ্যে বলে নতুন বয়ফ্রেন্ড এর সাথে ভালোই তো পার্কের চিপায় চাপায় ঘুড়ে বেড়াচ্ছেন।

সুরাইয়া তখন অবাক চোখে তাকিয়ে বলে কি সব আজেবাজে কথা বলেন। আমার নতুন বয়ফ্রেন্ড মানে! আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড ছিল না আর এখনো নেই। আমি শুধু ওয়াহেদকে ভালোবাসি আর কাউকে না।

আফসানা হাসতে হাসতে ফোন থেকে ছবি গুলো সুরাইয়াকে দেখায়।

সুরাইয়া তখন মুচকি হেসে বলে এটা আমার বয়ফ্রেন্ড না। এটা আমার অনেক আগের বন্ধু। অনেকদিন পরে দেখা তাই গল্প করছিলাম। আর আপনি এখানে পার্কের চিপায় চাপায় কোথায় পাচ্ছেন। আমি তো খোলা জায়গায় আমার বন্ধুর সাথে কথা বলছিলাম।

আফসানা তখন শয়তানি হাসি দিয়ে বলে। আমি জনি আপনার কোনো বয়ফ্রেন্ড থাকতেই পারে না। কিন্তু আমি যদি এটা শ্বাশুড়ি আর ওয়াহেদ কে গিয়ে দেখাই তাহলে কি হবে বুঝতে পারছেন তো। সবাই মেনে নিবে আপনার আলাদা সম্পর্ক আছে‌ অন্য জায়গায়। আর এই বাড়িতে আপনার যতটুকু সম্মান বা জায়গা আছে সেটাও থাকবে না। তখন এরা তোমাকে এই বাসা থেকে তাড়িয়ে দিবে। সারাজীবনের জন্য বাপের বাড়িতে থাকতে হবে।

সুরাইয়ার বুঝতে বাকি থাকলো না আফসানা তাকে ব্লাকমেইল করার চেষ্টা করছে আর ওয়াহেদের থেকে তাকে দূরে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে‌। সুরাইয়া তখন করুণ দৃষ্টিতে আফসানার দিকে তাকিয়ে বলে। এভাবে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আপনি কি লাভ পাবেন। আমি আপনার সাথে এমন কি অপরাধ করেছি যে আপনি আমাকে এতো বড় ক্ষতি করার চেষ্টা করছেন। এই বাসা থেকে তাড়িয়ে ওয়াহেদের থেকে দূরে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন।

আফসানা তখন হাসতে হাসতে বলে না না ভুল বুঝলে তোমাকে এই বাসা ওয়াহেদ কে ছেড়ে যেতে বলছি না। এই বাসায় থাকতে হলে আমার কথা অনুযায়ী থাকতে হবে। না হলে বুঝতেই পারছো ছবি গুলো দেখিয়ে তোমার নামে কি কি বলব। ৭৬০

এমন অবস্থায় সুরাইয়া কিছু বুঝতে পারছে না কি করবে। সব দিক থেকে যেন, বিপদ ঘনিয়ে আসছে। নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে। ইচ্ছে করছে আত্মহত্যা করতে। গলা থেকে উর্না টা খুলে ফেলে সুরাইয়া। একটা টেবিল নিয়ে ঠিক ফ্যান সোজাসুজি রাখে অনেক কিছু ভাবতে থাকে। জীবনের ভালো মন্দ সময়গুলো। কিন্তু ভেবে দেখে জীবনের খারাপ সময় টা দিয়ে ভরপুর সুরাইয়ার জীবন। বিয়ের দশ বছর পর্যন্ত মা ডাক শুনতে না পারা, যদিও দশ বছর পর মা ডাক শুনতে পরেছে কিন্তু মেয়ে হয়েছে বলে শ্বাশুড়ির নির্যাতন। ওয়াহেদের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত।

সব থেকে কষ্ট টা তখন পেয়েছে যখন ওয়াহেদ দ্বিতীয় বিয়ে করে নিয়ে আসে‌। কোনো স্ত্রী চায় না তার স্বামীর ভাগ অন্য কাউকে দিতে। কিন্তু শুধুমাত্র স্বামীর খুশির জন্য হাসি মুখে সেটাও ত্যাগ করে দিয়েছে।

কিন্তু আত্মহত্যা করার আগে একটা চিঠি লিখে যায়।

প্রিয় ওয়াহেদ
সব কিছু আমার ধৈর্যের বাহিরে। আমি আর সহ্য করতে পারছি না। সন্তান বাদেও তো দশ বছর আমার সাথে ছিলে তাহলে মেয়ে হওয়ার পরে এখন কেন আমার সাথে এমন করো? ছেলে সন্তান না হওয়ায় জন্য কি শুধু মেয়েরা দায়ি? এটা তো আল্লাহর ইচ্ছায় হয়। দোয়া করি আফসানাকে নিয়ে সারাজীবন সুখে থেকো আর তোমাদের একটা সুন্দর ফুটফুটে ছেলে সন্তান হবে।

আর কিছু না ভেবেই সুরাইয়া টেবিলের উপর উঠে যায় উর্না টা নিয়ে ফ্যানের সাথে শক্ত করে বাঁধে দেয়। মেয়ে পূর্ণতার দিকে এক নজর হাসিমুখে দেখে তারপর গলার মধ্যে ফাঁস বেঁধে দেয়।

চলবে,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে