মাতাল হাওয়া পর্ব-১০+১১

0
204

#মাতাল_হাওয়া। ইতি চৌধুরী। পর্ব-১০
(দয়া করে কেউ কপি করবেন না)

প্রায় তিনটার দিকে হাসপাতালে এসে পৌঁছায় লাবিব। ব্যস্ত হয়ে কেবিনে প্রবেশ করতেই দেখে চিত্রলেখা ঘুমাচ্ছে। অনেকক্ষণ নিঃসঙ্গ হয়ে শুয়ে শুয়ে উপরের সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আবার ঘুমিয়ে পড়েছে। তাকে ঘুমাতে দেখে আর ডাক দেয় না লাবিব৷ অসুস্থতার ছাপ পড়েছে চোখ-মুখে স্পষ্ট। চিত্রলেখাকে নিশ্চিন্ত হয়ে ঘুমাতে দেখে আর ডাকে না। রুমের মধ্যেই শব্দ না করে কিছুক্ষণ পায়চারি করে। চিত্রলেখার অসুস্থতার খবর পেয়ে ঘাবড়ে গিয়েছিল সে। আজই সকালে তার বাবার চোখের ছানির অপারেশন হয়েছে। তাই খবর পাওয়া মাত্র, তৎক্ষনাৎই আসতে পারেনি। যেই অপারেশন শেষ হয়েছে ওমনি চলে এসেছে দেখতে। এসে দেখার পর এখন কিছুটা স্বস্তি লাগছে তার। কেবিনের অন্যপাশে রাখা সোফায় বসে গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে সে। গতকাল রাত থেকেই দৌড়াদৌড়ির উপরেই আছে। দু’দন্ড বিশ্রাম নেয়ার সময় হয়নি। সকালে ঠিক করেছিল বাবার অপারেশনটা হয়ে গেলেই বাসায় গিয়ে ঘুম দিয়ে শরীর চাঙা করবে। কিন্তু সেই সুযোগ আর হয়নি। খবর পেয়ে ওদিক সামলে ছুটে আসতে হয়েছে চিত্রলেখার কাছে। এখানেও যে সে অনেকটা সময় থাকতে পারবে তাও নয়। তাকে আবার চক্ষু হাসপাতাল যেতে হবে। ওখানে আরও কিছু কাজ বাকি রয়ে গেছে। তবে আপাতত জরুরী তলব না পড়া পর্যন্ত সময়টুকু সে চিত্রলেখাকে দিতে পারবে।

এখন অবশ্য লাবিব একা আসেনি। রওনকও এসেছে তার সঙ্গে। দু’জনে একই জায়গা থেকে না এলেও একই সময়ে এসে পৌঁছেছে। আজকের মিটিংটা জলদি শেষ করার চেষ্টা করেছিল সে। যাতে করে দ্রুত চিত্রলেখার কাছে ফিরে আসতে পারে। কিন্তু তার চেষ্টা বিফলে গিয়েছে। যতই সে জলদি করার চেষ্টা করেছে ততই মিটিং লম্বা হয়েছে। জরুরী না হলে মিটিংটা সে ক্যান্সেলই করে দিতো। এক মুহূর্তের জন্যও তার মন মস্তিষ্ক মিটিংয়ে ছিল না। দেহটা ওখানে থাকলেও বারবার মনের ভেতর শুধু ঘুরপাক খেয়েছে চিত্রলেখার জ্ঞান হারানো মলিন মুখটা। বার দুই মিটিংয়ের মধ্যে বিরতির নাম করে উঠে গিয়ে হাসপাতালে ফোন করে খোঁজও নিয়েছে সে চিত্রলেখা ঠিক আছে কিনা। এখানকার ডাক্তার রেজাউল করিম তার পরিচিত। এক ক্লোজ বন্ধুর বড় ভাই। উনার তত্ত্বাবধানেই রেখে গিয়েছিল রওনক চিত্রলেখা। জানে সেবা যত্নে কোনো ত্রুটি হবে না। তবুও অজানা অস্থিতায় তার বুকের ভেতরটা ছয়লাব হয়েছিল। তাই জলদি ফিরে আসার আপ্রাণ চেষ্টাও করেছে সে। আচমকা এমন হওয়ার কারণ সে নিজেও জানে না। চিত্রলেখার জন্য সে কেন ব্যস্ত হচ্ছে এর কোনো ব্যাখ্যা রওনকের জানা নেই। আপাতত জানার তাগাদাও অনুভব করছে না সে। যা যেমন হচ্ছে হতে থাকুক। এতে তো কারো কোনো ক্ষতি হচ্ছে না।

হাসপাতালে এসেই রওনক চিত্রলেখার কেবিনে না এসে সরাসরি চলে গেছে ডাক্তার রেজাউল করিমের সঙ্গে দেখা করতে। চিত্রলেখার কন্ডিশন সম্পর্কে জানতে। ওকে আর হাসপাতালে রাখতে হবে কিনা জিজ্ঞেস করতেই ডাক্তার জানায় তাকে আজই রিলিজ করে দেয়া হবে। রওনক বলে গিয়েছিল সে ফিরে না আসা পর্যন্ত যেন রিলিজ না দেয়া হয়। তাই এতক্ষণ তাকে ডিসচার্জ করা হয়নি। নাহলে জ্ঞান ফেরার পরপরই রিলিজ করে দেয়া হতো। রওনক ডাক্তারকে বলে ডিসচার্জ পেপার রেডি করতে। সে নিজেই নিয়ে যাবে। ডাক্তারের সঙ্গে কথা সেরে বেরিয়ে আসে চিত্রলেখাকে দেখতে। রওনক কেবিনে প্রবেশ করতেই দেখে চিত্রলেখা ঘুমাচ্ছে। লাবিব কোথায় দেখার জন্য চোখ বুলাতেই দেখে অন্যপাশের সোফায় মাথা হেলে দিয়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছে। হয়ত তন্দ্রায় চোখে ঘুম নেমে এসেছে তার। ছেলেটা গতরাত থেকে ব্যস্ত সে খবর রওনকের জানা। এমন অবস্থায় সে লাবিবকে ফোন করতো না। কিন্তু চিত্রলেখার বাসার কাউকে সে চিনে না। কোথায় থাকে সেটাও জানে না। যদিও অফিসে ফোন করলেই এসব তথ্য পাওয়া যাবো কিন্তু রওনক ইচ্ছা করেই অফিসের কাউকে না জানিয়ে লাবিবকে ফোন করেছে। সে জানে চিত্রলেখা আর লাবিবের মধ্যে বিশেষ বন্ধুত্ব রয়েছে। ভালো সম্পর্ক না থাকলে নিশ্চয়ই চিত্রলেখা লাবিবের বাইকে উঠতো না। সেই আন্দাজ থেকেই লাবিবকে ফোন করেছিল সে। তার আন্দাজ বৃথা যায়নি। যদিও লাবিবের কাছে চিত্রলেখার বাসার কারো ফোন নম্বর নেই। কিন্তু বাসার ঠিকানাটা সে জানে। তার যাওয়া হয়নি কখনো তবে চিত্রলেখা একদিন বলেছিল তাকে। রায়ের বাজারে বড় মসজিদের গলি নামের একটা গলি আছে। রায়ের বাজারের সব চাইতে বড় মসজিদ ওটা সেজন্য ঐ গলিরটারও নাম পড়ে যায় বড় মসজিদের গলি। সেই গলিতে একটাই একতলা বাড়ি আছে। সেই বাড়িটাতেই থাকে ওরা। কথায় কথায় লাবিব রওনককে এটাও বলে ফেলেছে বাড়িটা চিত্রলেখার খালুর। খালা খালুর কাছেই থাকে ওরা চার ভাই-বোন। ওর খালাই মানুষ করছে ওদের। এমন কথা শুনে রওনক জিজ্ঞেস করে ফেলেছিল চিত্রলেখার বাবা-মায়ের কথা। সেই কথার জবাবে মুখ মলিন করে লাবিব জানিয়েছে তাদের মৃত্যুর কথা। সঙ্গে এও জানায় দশম শ্রেনী পড়ুয়া চিত্রলেখাই বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর থেকে ছোট তিন ভাইবোনের জীবনে বাবা-মায়ের ভূমিকা পালন করে আসছে। চিত্রলেখার জীবনের এতটুকু গল্পই যেন রওনকের হৃদয়ের গভীরের অনেকটা পর্যন্ত ছুঁয়ে ফেলেছে। তার হয়ত ঐ মুখে হাসি না থাকার কারণটা জানা হয়ে গেছে। কেন মেয়েটা নিজের জন্য জুতা না কিনে ছেঁড়া জুতাই সারিয়ে নিয়ে ব্যবহার করছে সেই প্রশ্নের উত্তর রওনক পেয়ে গিয়েছে। ছোট্ট একটা গল্প রওনককে তার না জিজ্ঞেস করা অনেক প্রশ্নের উত্তর জানিয়ে দিয়েছে।

রওনক এগিয়ে গিয়ে চিত্রলেখার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। ক্লান্তি জেঁকে বসা মুখটার দিকে অদ্ভুত টানে তাকিয়ে রয় সে। ঠিক সেই মুহূর্তেই ঘুম ভেঙে চোখ মেলে চিত্রলেখা। চোখেচোখ পরে দু’জনার। হয়ত তাদের অজান্তেই শুভ দৃষ্টি সম্পন্ন হয়। বেশ কিছুক্ষণ একে-অপরের চোখে চোখ রাখে দু’জনে। জড়তায় চিত্রলেখার ভেতরটা নুইয়ে আসে তাও দৃষ্টি সরাতে পারে না সে। রওনক তো চাইলেও তার আগ্রহ দমিয়ে রাখতে পারছে না। অবশ্য সে সেই চেষ্টাও করছে না। অনেক লম্বা একটা সময় সে নিজেকে সব রকম আবেগ অনুভূতিদের থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে। লম্বা সময় সে বিশেষ দৃষ্টি নিয়ে কারো দিকে তাকায়নি। চিত্রলেখা কখন তার দৃষ্টিতে বিশেষ হয়ে ধরা পড়লো তা সে নিজেও জানে না। বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর চিত্রলেখা উঠতে চেষ্টা করলে বাঁধা দিয়ে রওনক বলে,

-উঠতে হবে না।

এক মুহূর্ত বিরতি দিয়ে রওনক আরও জিজ্ঞেস করে,

-এখন কেমন লাগছে?

-ভালো।

কথার শব্দ পেয়ে লাবিবের তন্দ্রা কাটে। চোখটা সামান্য লেগে গিয়েছিল ক্লান্তিতে। আচমকা কথার শব্দ কানে আসতেই সেই ঘুম চোখ ছুটে পালায়। উঠে এগিয়ে আসে সে। এগিয়ে এসে চিত্রলেখাকে জিজ্ঞেস করে,

-এখন কেমন লাগছে তোমার?

মাথা ঝাঁকায় চিত্রলেখা। লাবিব পাল্টা প্রশ্ন করে,

-হঠাৎ আজ লিফটে উঠতে গেলে কেন তুমি?

চিত্রলেখা একবার রওনকের দিকে তাকায় মুখে কিছু বলে না। জবাব না পেয়ে লাবিবই পাশ থেকে আরও বলে,

-তোমার যে ফোবিয়া আছে তা ভুলে গিয়েছিলেন নাকি?

চিত্রলেখাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রওনক বলে,

-আমি ইনসিসট করায় উঠেছিল। তাছাড়া আমি জানতাম না ওর ফোবিয়া আছে।

-ও আচ্ছা।

লাবিব আর এই প্রসঙ্গে কথা বাড়ায় না। তবে রওনক চিত্রলেখার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকেই মনে মনে ভাবে, লাবিব সব জানে তোমার বিষয়ে। ঠিক কতটা গভীর তোমাদের সম্পর্ক? তোমরা কি শুধু ভালো কলিগ, বন্ধু নাকি এর চাইতেও বেশি কিছু? মনে মনে এসব ভেবে আবার নিজেই নিজেকে প্রবোধ দেয় সে। ওরা সম্পর্কে যাই হোক তাতে তার কি! রওনক কেবিন থেকে বেরিয়ে যেতে নিলে পেছন থেকে চিত্রলেখা বলে,

-আমি বাসায় যাবো।

কথা শুনে দাঁড়ায় রওনক। পেছন ফিরে তাকালে চিত্রলেখা আরও বলে,

-আমি বলেছিলাম আমাকে ছেড়ে দিতে কিন্তু ওরা দেয়নি। বলল আপনি না আসা পর্যন্ত ছাড়বে না।

ঠান্ডা দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থেকে রওনক বলে,

-ডিসচার্জ পেপার রেডি হচ্ছে। একটু পরেই ছেড়ে দিবে তোমাকে।

এই কথা শুনে লাফিয়ে উঠে লাবিব বলে,

-ভালোই হয়েছে। আমি তাহলে তোমায় বাসায় দিয়ে আসবো নাহয়। এই শরীর নিয়ে একা যাওয়া উচিত হবে না।

চিত্রলেখা কিছু বলে না। এক মুহূর্ত সময় নিয়ে কিছু একটা চিন্তা করে রওনক বলে,

-তুমি তো এমনিও ব্যস্ত আমি না হয়…

রওনককে কথা শেষ করতে দেয় না লাবিব। বলে,

-কোনো সমস্যা নেই স্যার। আপনি একদম ব্যস্ত হবেন না। আমি ওকে পৌঁছে দিয়ে আসবো।

আর কথা বাড়ায় না রওনক। বলে,

-আমাকে ডিসচার্জ পেপারে সাইন করতে হবে। আমি ওটা করে দিয়ে আসছি।

আর এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায় সে। রওনক বেরিয়ে যেতেই লাবিবের ফোন আসে। ফোনে কথা শেষ হতেই চিত্রলেখা জিজ্ঞেস করে,

-কি হয়েছে?

-আসলে বাবার সাথে মা একা। আমাকে যেতে হবে।

-আপনি যান।

-কিন্তু তুমি?

-আমার জন্য চিন্তা করবেন না। আমি নাহয় একটা সিএনজি নিয়ে চলে যাবো।

-এর চাইতে আমি তোমার জন্য একটা উবার কল করে দিচ্ছে।

-এসব ঝামেলার কোনো প্রয়োজন নেই। তাছাড়া আমি এখন একদম ভালো আছি। সিএনজি করে চলে যেতে পারবো। আপনি ব্যস্ত হবেন না প্লিজ।

-কিন্তু তোমাকে একা ছাড়তে মন চাইছে না যে!

-আপনার এখন ওখানে যাওয়াটা জরুরী।

ওদের কথার মধ্যেই ফিরে আসে রওনক। লাবিবের মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ দেখে জিজ্ঞেস করে,

-এনি প্রবলেম?

-মা ফোন করেছে। বাবার ওখানে সে একলা। ডাক্তার দেখা করতে বলেছেন। আমাকে এক্ষুনি যেতে হবে।

-তাহলে তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেন?

ইশারায় চিত্রলেখাকে দেখিয়ে বলে,

-ওকে একা ছাড়তে মন সায় দিচ্ছে না।

-ওকে নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না, আমি আছি। নিজ দায়িত্বে যেহেতু হাসপাতালে আনতে পেরেছি, বাসায়ও পৌঁছে দিতে পারবো।

লাবিব আরও কিছু বলার চেষ্টা করলে রওনক তাকে সেই সুযোগ না দিয়ে নিজেই বলে,

-কথা না বলে জলদি যাও তো। কোনো প্রয়োজন হলে অবশ্যই আমাকে জানাবে।

লাবিন আর অপেক্ষা করে না। ব্যস্ত কদম ফেলে বেরিয়ে যায়। বাবার ডাক্তারের সাথে কথা বলতে হবে তাকে। লাবিব চলে যেতেই চিত্রলেখা মুখ তুলে তাকায় রওনকের দিকে। মুখ তুলতেই দেখে রওনক তার দিকেই তাকিয়ে আছে। ইতস্তত বোধ করে সে। জড়তায় কথা বের হয় না গলা দিয়ে। রওনক নিজেই বলে,

-ডিসচার্জ হয়ে গেছে। হাটতে পারবে নাকি কাউকে বলবো হুইলচেয়ার আনতে?

-তার প্রয়োজন নেই। আমি হাটতে পারবো।

বেড ছেড়ে নামতে নিলেই মাথা হালকা ঝাঁকি দেয় চিত্রলেখার ফলাফল টলে ওঠে সে। তৎক্ষনাৎ হাত বাড়িয়ে ধরে ফেলে রওনক। আবার চোখে চোখ পরে দু’জনার। নিজেকে সামলে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায় চিত্রলেখা। রওনকের হাত থেকে নিজের হাত সরিয়ে নেবার চেষ্টা করলে সে হাত ধরে রেখেই বলে,

-একা হাটতে কষ্ট হবে। আমার হাতটা ধরে হাটো তাহলে আর পরে যাবে না। আই উইল হোল্ড ইউ টাইট।

চিত্রলেখা আপত্তি করতে চেয়েও আর আপত্তি করে না। লিফটের সামনে আসতেই রওনক বলে,

-সিড়ি দিয়ে নামি নাহয়।

মাথা ঝাকায় চিত্রলেখা। সিড়ি ভেঙে নিচে নেমে রিসিপশন এড়িয়া জুড়ে থাকা ওয়েটিং চেয়ারে চিত্রলেখাকে বসিয়ে দেয় রওনক। বসিয়ে দিয়ে বলে,

-একটু বসো, আমি এক্ষুনি আসছি।

আসছি বলে চিত্রলেখাকে বসিয়ে রেখে প্রথমে সে যায় হাসপাতালের ফার্মেসীতে। সেখান থেকে চিত্রলেখার ঔষধগুলো নিয়ে চলে যায় পাকিংয়ে গাড়ি আনতে। আজ সে সঙ্গে ড্রাইভার আনেনি। নিজেই ড্রাইভ করে এসেছে। গাড়িটা এনট্রান্সে রেখে দৌড়ে ফিরে আসে চিত্রলেখার কাছে। একটা হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,

-চলো।

এক মুহূর্ত রওনকের বাড়িয়ে দেয়া হাতের দিকে তাকিয়ে রয় চিত্রলেখা। তা দেখে তাগাদা দিয়ে রওনক বলে,

-কি হলো? এসো।

আর অপেক্ষা না করে রওনকের বাড়িয়ে দেয় হাতটা ধরে উঠে দাঁড়িয়ে চিত্রলেখা বলে,

-আমি চলে যেতে পারবো। আপনাকে কষ্ট করতে হবে না।

রওনক কিছু বলে না। ঠান্ডা দৃষ্টি নিয়ে তাকায় কেবল। তারপর চিত্রলেখার হাত ধরে তাকে নিয়ে দ্রুত হেটে বেরিয়ে আসে। গাড়ির সামনের সিটের গেইট খুলে দিয়ে বলে,

-বসো।

-সত্যি আপনাকে কষ্ট করতে হবে না আমার জন্য। আমি একাই চলে যেতে পারবো। একটা সিএনজি করে না হয় চলে যাবো।

রওনক আর কিছু না বলে নিজেই ঠেলে চিত্রলেখাকে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে নিজে নিচু হয়ে ঝুঁকে এসে সিট বেল্টটা বেঁধে দেয়। এতে করে দু’জনে একে-অপরের সবচাইতে বেশি কাছাকাছি আসে। একদম কাছ থেকে একে-অপরকে দেখা হয় তাদের হয়ত কয়েক সেকেন্ডের জন্য। সিট বেল্ট বাঁধতে গিয়ে রওনকের দৃষ্টি আবার একবার থমকে যায় চিত্রলেখার মুখের উপর। বারি খায় তাদের দৃষ্টি। কিছু কথা হয় তাদের যা অব্যক্ত। চিত্রলেখা নড়ে উঠলে রওনক দরজা লাগিয়ে দিয়ে গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে। গায়ের কোটটা খুলে পেছনের সিটে ছুঁড়ে দিয়ে সে গাড়ি স্টার্ট দেয়। মোবাইলে লোকেশন বের করে নেয় রায়ের বাজার বর মসজিদের গলির। একবার চিত্রলেখার মুখের দিকে তাকিয়ে সামনের দিকে তাকায় সে। পাশ থেকে চিত্রলেখা আড় চোখে একবার রওনককে দেখার চেষ্টা করে আবার নিজেকে সামলে নেয়।

চলবে….

#মাতাল_হাওয়া। ইতি চৌধুরী। পর্ব-১১
(দয়া করে কেউ কপি করবেন না)

চিত্রলেখাকে বাসার লোকেশন বলে দিতে হয়নি। জিজ্ঞেস না করেই রওনক একদম সঠিক জায়গায় চলে এসেছে। এটা দেখে ভীষণ রকম অবাক হয়েছে চিত্রলেখা। গাড়িটা এসে বাসার নীল রঙের লোহার গেইটটার সামনে দাঁড়াতেই চিত্রলেখা আর নিজের কৌতূহল দমিয়ে রাখতে না পেরে জিজ্ঞেস করে,

-আপনি আমার বাসা কীভাবে চিনলেন? আমি তো আপনাকে লোকেশন জানাইনি।

রওনক সিটবেল্ট খুলতে খুলতে বলে,

-তুমি আমার অফিসে চাকরী করো। তোমার বাসার এড্রেস বের করা নিশ্চয়ই আমার জন্য কঠিন কোনো টাস্ক নয়।

চিত্রলেখা মনে মনে ভাবে, এটা অবশ্য ঠিক কথা। তার ঠিকানা রওনকের জন্য জানা আহামরি কোনো ব্যাপার নয়। অফিসে ঠিকানা দেয়াই আছে। হয়ত অফিস থেকে নিয়েছে। চিত্রলেখাকে অন্যমনস্ক দেখে রওনক বলে,

-লাবিব দিয়েছে।

-লাবিব সাহেব?

-হ্যাঁ।

-কিন্তু সেও তো কখনো আসেনি। মুখে মুখে বলেছিলাম একবার।

-সেটাই লাবিব জানিয়েছে আমায়।

আর কিছু বলে না রওনক। বেশি কথা বললে দেখা যাবে আসল কথাটা তার মুখ ফস্কে বেরিয়ে এসেছে। সেই আসল কথাটা হচ্ছে একদিন চিত্রলেখার পেছন পেছন হাটতে হাটতে তারবাড়ি পর্যন্ত এসেছিল রওনক। কেন এসেছিল তা তার জানা নেই। হেটে এসেছিল বলেই রাস্তাটা মনে আছে তার। গাড়ি করে আসলে হয়ত এত পরিষ্কার মনে থাকতো না। তবুও হয়ত তার বোকামি হয়ে গেল। চিত্রলেখাকে জিজ্ঞেস করে না জানার ভনিতা করা উচিত ছিল। সে যাক গিয়ে, যা হয়ে গেছে তা হয়ে গেছে।

রওনক গাড়ি থেকে নেমে এসে চিত্রলেখার দরজা খুলে একটা হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,

-হাতটা ধরে নামো।

চিত্রলেখা একবার রওনকের হাতের দিকে তাকিয়ে আবার আশেপাশে তাকায়। এলাকার মুখ পরিচিত অনেক মানুষজন আশেপাশেই আছে। চিত্রলেখা এখানেই বড় হয়েছে। এলাকায় তার খালুর পরিচিতু আছে। মোটামোটি এলাকার সবাই তাকে চিনে। এত বড় গাড়ি করে বাসা পর্যন্ত এসেছে এতেই না লোকে কত কথা বলা শুরু করে দেয়। এখন যদি সে রওনকের হাত ধরে গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির ভেতর পর্যন্ত যায় তাহলে তো হয়েই গেল। মানুষ বলার জন্য হাজারটা কথা পেয়ে যাবে। চিত্রলেখাকে বসে থাকতে দেখে রওনক তাগাদা দিয়ে বলে,

-কি হলো? নামো।

আমতা আমতা করে চিত্রলেখা বলে,

-আমি নিজেই হাটতে পারবো।

-আমি তো তোমায় বলছি না আমার কোলে উঠতে। জাস্ট হাতটা ধরবে।

আগের চাইতে আরও বেশি আমতা আমতা করে চিত্রলেখা বলে,

-আশেপাশের মানুষজন হয়ত বিষয়টা খারাপ ভাবে নিবে।

-কিন্তু তুমি অসুস্থ!

-সে কথা তো সবাই জানে না।

রওনক বিরক্ত হয়ত। এসব ম্যান্টালিটি তার একদম পছন্দ নয়। যারা নিজের কথা বাদ দিয়ে লোকে কি বলবে সেসব চিন্তা বেশি করে তাদেরকেও রওনকের বিরক্ত লাগে। কিন্তু এই মুহূর্তে সে চিত্রলেখার উপর বিরক্ত হতে পারছে না। লোকে কি বলবে বা ভাববে সেটা ভাবার সময় তার নেই । সে ফস করে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে চিত্রলেখার হাত ধরে তাকে টেনে গাড়ি থেকে নামায়। যেমন ঠেলে বসিয়েছিল তেমনি টেনে বের করলো। মনে মনে ভাবে, কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে শুনে না কেন মেয়েটা? লাবিবের কথাও কি সে একবারে শুনে না? নাকি লাবিবের কথা শিরোধার্য? আমার সাথে গাড়িতে আসতে সমস্যা কিন্তু লাবিবের সঙ্গে বাইকে আসতে কোনো সমস্যা নেই। তখন লোকে কথা বলতো না? এসব আবোলতাবোল ভাবতে ভাবতেই মনে মনে নিজেকে ঝাড়ি লাগায় রওনক। কিসব ভাবছে সে!

রওনকের চিত্রলেখাকে হাত ধরে টেনে বের করার চিত্র আশেপাশে থাকা অন্যরা লক্ষ না করলেও দুবাড়ি অন্যপাশে টঙ দোকানে বসে থাকা মামুন ঠিকই দেখেছে। এমন দৃশ্য দেখে তার মুখের চা বেরিয়ে এসেছে। অপেক্ষা না করে চায়ের কাপ নামিয়ে রেখে তৎক্ষনাৎ কদম বাড়ায় মামুন চিত্রলেখার দিকে।

বাড়ির গেইটা সচরাচর খোলাই থাকে কিন্তু আজ ভেতর থেকে লাগানো। চিত্রলেখা জোরে জোরে কয়েকবার ধাক্কা লাগায়। এই সময় খালা আর চারু বাসায় থাকে। খালা কখনো কখনো ঘুমায়। কিন্তু চারু ঘুমায় না। কয়েকবার দরজায় জোরে বারি দেয়ার পরেও এখনো কেউ দরজা খুলছে না। ততক্ষণে মামুন এগিয়ে এসেছে। পাশ থেকে জিজ্ঞেস করে,

-মায়া তুই এই সময় বাসায়?

পাশ ফিরে মামুনকে দেখে খানিকটা চমকে যায় চিত্রলেখা। সে মনে-প্রাণে চাইছিল মামুনের সঙ্গে এখন যেন তার দেখা না হয়। মামুন দেখলেই তাকে জেরা করবে। একশ একটা প্রশ্ন তার দিকে ছুঁড়ে দিবে। তার প্রথম প্রশ্নই হয়ত হবে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটা কে? চিত্রলেখা একদম চায় না রওনক তাকে পৌঁছে দিতে এসে কোনো অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পরুক। মামুনকে আর কিছু জিজ্ঞেস করতে দেয়ার সুযোগ না দিয়ে চিত্রলেখা বলে,

-মামুন ভাই আমার শরীরটা ভালো না। আমরা পরে কথা বলি?

চিত্রলেখার শরীর ভালো নেই শুনেই মামুন ব্যস্ত হয়। নিজের জায়গা থেকে এগিয়ে আসে, হাত বাড়ায় চিত্রলেখার কপালে হাত দিয়ে জ্বর আছে কিনা দেখবে বলে। কিন্তু মামুনের হাত চিত্রলেখার কপাল স্পর্শ করার আগেই রওনক তার হাত ধরে টান দিয়ে দু’কদম পেছনে সরিয়ে আনে। ঘটনার আকস্মিকতায় মামুন বা চিত্রলেখা কে কীভাবে রিয়্যাক্ট করবে বুঝে উঠতে পারে না। চিত্রলেখা অবাক হয় রওনকের কান্ড দেখে। বিস্ময়ে কথা বলতে পারে না সে। তবু নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,

-মামুন ভাই আমার জ্বর নেই। এমনি শরীরটা একটু খারাপ।

তখনই চারু ভেতর থেকে লোহার গেইটটা খুলে দেয় ঝনঝন শব্দে। দরজা খুলে বোনকে দেখে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। চারুকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে চিত্রলেখা বলে,

-হা করে দাঁড়ায় আছিস কেন চারু?

নিজেকে সামলে নিয়ে চারু বলে,

-আপা তুমি এই সময়!

-শরীরটা ভালো নেই।

এতক্ষণে চারু বড় বোনকে লক্ষ করেছে। আসলেই মুখটা চুপসে একটুখানি হয়ে গেছে তার। চিত্রলেখার একটা হাত ধরে চারু বলে,

-সকালে তো ঠিকঠাকই গেলা আপা। হঠাৎ কি হলো? আসো, ভেতরে আসো।

রওনকও ওদের পেছন পেছন আসা ধরলে তার খেয়াল হয় চিত্রলেখার ঔষধ গাড়িতেই রয়ে গেছে। সে চিত্রলেখাকে বলে,

-আমি এক্ষুনি আসছি।

রওনক আবার বেরিয়ে যেতেই চারু ফিসফাস করে জিজ্ঞেস করে,

-লোকটা কে আপা?

-আমার বস।

-লাবিব ভাইয়া যার কথা বলো সবসময়? তার এত বড় গাড়ি আছে আগে তো কখনো বলোনি।

-আরে লাবিব না। কোম্পানির মালিক।

-এ্যা!

বিস্ময়ে চারুর মুখ হা হয়ে গেছে। তা দেখে চিত্রলেখা বলে,

-মুখটা বন্ধ কর দেখে ফেলবে তো।

চারু নিজেকে সামলে নেয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করে। কিন্তু কোম্পানির মালিক, এত বড় একজন মানুষ ওর বোনকে ছাড়তে নিজে এসেছে বিষয়টা সহজে হজম হওয়ার মতো নয়।

রওনক ফিরে এসে গাড়ির পেছনের দরজা খুলে চিত্রলেখার ঔষধ ও ব্যাগটা নিয়ে নেয়। সকাল থেকে ব্যাগটা তার গাড়িতেই আছে। চিত্রলেখাকে দেয়া হয়নি। এখন ঔষধ নিতে এসে চোখে পড়লো। ঔষধ, ব্যাগ নিয়ে গাড়ির দরজা লক করে বাড়ির ভেতর ঢোকার জন্য কদম বাড়ালে পাশ থেকে মামুন জিজ্ঞেস করে,

-আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না?

মামুন এখানেই দাঁড়িয়ে ছিল, যায়নি। রওনককে দেখে তার মনে কৌতূহলের জন্ম হয়েছে। তার মায়াকে গাড়ি করে বাড়ি অব্দি নিয়ে এসেছে। মানুষটা কে জানার তাগাদা অনুভব করছে মামুন। প্রশ্ন শুনে থেমে গিয়ে ঠান্ডা দৃষ্টি নিয়ে মামুনের দিকে তাকায় রওনক। জবাব না পেয়ে মামুন আরও জিজ্ঞেস করে,

-মায়ার সঙ্গে একই অফিসে চাকরী করেন বুঝি?

-মায়া কে?

জিজ্ঞেস করে রওনক। প্রশ্ন শুনে শব্দহীন প্রশস্ত হেসে মামুন বলে,

-চিত্রলেখা, ওকে ভালোবেসে মায়া বলে ডাকি আর কি।

আঁড়চোখ করে তাকায় রওনক। তার দৃষ্টিতে স্পষ্ট জিজ্ঞাসা। মুখ ফস্কে বলেও ফেলে,

-ভালোবেসে?

-জি, খুব জলদি বিয়েও করবো আমরা।

চোখ-মুখ শক্ত হয় রওনকের। সেটা হয়ত মামুন খেয়াল করে না। চিত্রলেখার কথা ভাবার সময় দুনিয়ার অন্য কিছু দেখার সময় পায় না মামুন। সে তার মন-মস্তিষ্ক সবটা দিয়েই চিত্রলেখাকে ভালোবাসে। রওনককে চুপ করে থাকতে দেখে মামুন আবার জিজ্ঞেস করে,

-তা বললেন না আপনারা একই অফিসে চাকরী করেন নাকি?

-সেটা আপনার না জানলেও চলবে।

বলে আর এক মুহূর্তও অপেক্ষা করে না রওনক। দ্রুত কদম ফেলে বাড়ির ভেতর ডুকে যায়। নীল রঙের বড় লোহার গেইটটা দিয়ে ঢুকতেই উঠানের মতো অনেকটা জায়গা ফাঁকা পড়ে আছে। ডান পাশে দুই ভাগ করে বাগান করা। একপাশে সবজি গাছ দেখা যাচ্ছে আরেকপাশে ফুলের গাছ। বাম পাশে একতলা বাড়িটার শুরুতেই বারান্দা। ঢুকার মুখে হাতের ডান পাশে একটা চাপ-কল বসানো। এই বাড়ির মানুষগুলোর জীবনযুদ্ধের গল্প যেন চোখ বুলালেই জানা যাচ্ছে। আশপাশটায় একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে ভেতরে চলে যায় রওনক। চিত্রলেখা ড্রইং রুমেই বসে আছে। রওনককে বিদায় দিয়ে নিজের ঘরে গিয়ে শুবে সে। চিত্রলেখার একপাশে নারগিস বেগম বসে আছেন তাকে আলতো জড়িয়ে। চোখে ভিজে আগে তার। চারু এখানে নেই। রওনককে ঢুকতে দেখেই উঠে দাঁড়ায় চিত্রলেখা। তা দেখে রওনক বলে,

-ইটস ওকে উঠতে হবে না। কিন্তু এখানে না বসে বিশ্রাম করলে হয়ত বেটার হতো।

-এখন ঠিক আছি আমি।

খালার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে চিত্রলেখা বলে,

-এটা আমার খালা। আর খালা উনি হচ্ছেন আমার বস। উনার কোম্পানিতেই চাকরী করি।

নারগিস বেগম ধন্যবাদ জানায় রওনককে চিত্রলেখার এতোখানি খেয়াল রাখার জন্য। ততক্ষণে চারু নাস্তা নিয়ে এসেছে রওনকের জন্য। বেরিয়ে পড়া উচিত চিন্তা করে বলে,

-আমি আসছি।

বাধা দিয়ে চিত্রলেখা বলে,

-একটু কিছু মুখে দিন।

রওনক আপত্তি না করে ট্রে তে রাখা শরবতের গ্লাসটা তুলে সবটুকু একটানে খেয়ে নিলে তা দেখে চারু বলে,

-আপা সবসময় বলে একটানে পানি বা শরবত খেতে নেই। শয়তানের কাজ হচ্ছে একটানে খাওয়া।

চারুর বাড়তি কথার বাতিক আছে। পাশ থেকে চিত্রলেখা ধমকের সুরে বলে,

-কি হচ্ছে কি চারু?

-ওমা আপা তোমার থেকে যা শিখেছি তাই তো বললাম।

চিত্রলেখাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে রওনক বলে,

-ইটস ওকে, আসলে আমার তাড়া আছে তাই জলদি করে একটানে খেলাম। এরপর থেকে খেয়াল রাখবো। পরেরবার আর একটানে খাবো না।

-আপনি আবার আমাদের বাসায় আসবেন?

জিজ্ঞেস করে চারু। এমন কথায় চিত্রলেখা, রওনক দু’জনেই অপ্রস্তুত হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে রওনক হালকা করে মাথা ঝাঁকায়। তারপর হাতে থাকা ঔষধ ও ব্যাগ চিত্রলেখার দিকে বাড়িয়ে ধরে বলে,

-তোমার ঔষধ। আর ব্যাগটা আমার গাড়িতেই ছিল।

ব্যাগ দেখে চিত্রলেখা মনে মনে হাফ ছেড়ে বাঁচে। তার ব্যাগে পনেরো’শ টাকা ছিল। বেতন না পাওয়া অব্দি তাকে এই টাকা দিয়েই চলতে হবে। সে ভেবেছিল ব্যাগের সাথে টাকাগুলোও গেছে। এখন ব্যাগ ফিরে পেয়ে স্বস্তি লাগছে। কিন্তু রওনকের উপস্থিতিতে ব্যাগ খুলে এক্ষুনি দেখতে পারছে না ভেতরে টাকা আছে কিনা। হতেই পারে হাত থেকে ব্যাগ পরে যাওয়ার সময় টাকাটা কোথাও পড়ে গেছে। কিন্তু রওনক না যাওয়া পর্যন্ত চেক করার কোনো উপায় নেই।

চিত্রলেখা তার হাত থেকে ব্যাগ ও ঔষধ নিলেই উঠে দাঁড়ায় রওনক। বিদায় নিতে নিতে বলে,

-কাল পরশু তো এমনি অফিস বন্ধ। যদি মনে করো আরও বিশ্রাম প্রয়োজন তাহলে আমায়…(এক মুহূর্ত থেমে বলে) লাবিবকে জানিয়ে দিলেই হবে। একদম সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত অফিস আসার প্রয়োজন নেই। ইউ টেক রেস্ট এন্ড টেক কেয়ার অফ ইউসেলফ। আজ আসছি।

চিত্রলেখা রওনককে বিদায় দিতে বারান্দা পর্যন্ত এসেছে। নীল লোহার গেইটটা দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় একবার পেছন ফিরে তাকায় রওনক। আজকের দিনের মতো শেষবার তাদের চোখাচোখি হয়। রওনকের চোখে চোখ পড়তেই দৃষ্টি সরিয়ে নেয় চিত্রলেখা। আর অপেক্ষা না করে বেরিয়ে যায় রওনক। গাড়িতে বসেই স্টার্ট দেয়। অন্যপাশের টঙ দোকানের ছাউনির তলায় বসে রওনকের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে মামুন।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে