মনের গহীনে শুধুই তুমি পর্ব-৮+৯+১০

0
1278

#মনের_গহীনে_শুধুই_তুমি
#পর্ব_8+9+10
#Mst_Meghla_Akter_Mim

বেশ কিছুদূর যাওয়ার পরে রোদ থেমে গেলো। চোখ আটকে গেলো সেই লেডি বাইকারের উপরে কিন্তু আজও তার মুখ দেখা যাচ্ছে না। হেলমেট হাতে দাঁড়িয়ে আছে, চুল গুলো যেনো বাতাসের সাথে খেলা করছে। রুদ্র রোদের দাঁড়িয়ে থাকা দেখে বললো,

-” দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? এই সুযোগ চল ডাকি ওকে।”

রোদ কিছু না বলে একভাবে তাকিয়েই আছে। কিছুক্ষণ বাদে রুদ্র ওকে ধাক্কা দিলো। ও ঘোর থেকে বেরিয়ে মেয়েটার দিকে যেতে নিলো আর বললো,

-“এইযে লেডি বাইকার শুনতে পারছেন!”

রোদের কণ্ঠ মেঘের কানে আসতেই ও চোখ বড় বড় করে ফেললো। ভয়ে বুকের ভেতরে কাঁপছে। বিড়বিড় করে বললো,

-“উনি আমার পিছু নিয়েছে নাকি। আজ আমায় দেখে ফেললে বাড়ির সবাই জেনে যাবে আমি বাইক চালাতে পারি। না এইটা হতে পারে না যে করেই হোক আমাকে উনার সামনে যাওয়া যাবে না।”

বলেই মেঘ হেলমেট পরে নিলো। রোদ আরো এগিয়ে এসেছে আবারো বলছে, ” যাবেন না শুনুন।”

কিন্তু মেঘ তাড়াতাড়ি বাইক স্টার্ট দিয়ে হাই স্পিডে বাইক চালাতে নিলো। লুকিং গ্লাসে দেখছে রোদ আর রুদ্র পেছনে আসছে আর ইশারা করে মেঘ কে থামতে বলছে। মেঘ যতো দ্রুত সম্ভব বাইক চালিয়ে একটা রাস্তার মোড়ে এসে অন্য দিকে চলে গেলো। কিন্তু রোদ ভুল করে অন্য রাস্তায় চলে গেলো। মেঘ বাইক নিয়ে অনেকটা দূরে আসার পর পেছনে দেখলো রোদ নেই। একটু বুক ভরে শ্বাস নিয়ে বাইক চালাতে চালাতে বললো,

“বাবা জোর বাঁচা বেঁচে গেছি। শান্তিতে বাইক ও চালাতে দিবে না ওই বান্দর দেখছি।”

কিছুদূর যেতেই দেখলো রাস্তার মাঝে দিয়ে একটা মেয়ে যাচ্ছে। অনেকবার হর্ন দিলো মেঘ তবুও সরে যাচ্ছে না। উপায় না পেয়ে মেঘ মেয়েটার খুব কাছে গিয়ে ব্রেক করলো। মেয়েটা মেঘের দিকে খেয়াল করে আহ করে উঠলো। মেঘ বাইক থেকে নেমে মেয়েটার সামনে গিয়ে বললো,

-” এভাবে রাস্তার মাঝ দিয়ে যেতে আছে? যদি accident হয়ে যেতো?”

-“সরি আপু। একটু চিন্তিত ছিলাম তাই বুঝতে পারিনি।”

-“এতো ছোট মেয়ের কিসের চিন্তা শুনি?”

-“বাবা অসুস্থ ওষুধ এখনও কিনে নিয়ে যেতে পারিনি। কি করব কিছুই বুঝতে পারছি না।”

মেঘ কিছু টাকা দিয়ে বললো, “এইটা দিয়ে তোমার বাবার ওষুধ কিনে নিয়ে যাও। এভাবে রাস্তায় হাঁটলে দুর্ঘটনা ঘটতে বেশি সময় লাগবে না।”

-” কিন্তু আপু আমি তোমার থেকে টাকা নিতে পারবো না। তোমাকে তো আমি চিনি ও না।”

মেঘ মুচকি হেসে বললো,” এমনি টাকা দেই নি তো তোমায়! যেদিন তুমি একটা চাকরি করবে সেদিন এই টাকা আমায় ফেরত দিয়ে দিবে তাহলেই হলো। আর আমি মেঘলা এর চেয়ে বেশি পরিচিতি এখনও গড়ে তুলতে পারিনি। তোমার নাম কি?”

-” আমার নাম ‘জান্নাত’ ।আর অনেক ধন্যবাদ তোমাকে আপু। তোমার address আমায় দাও টাকা ফেরত দিয়ে আসবো।”

মেঘ বাইকে উঠতে উঠতে বললো,” address নেই তো আমার মানে address বলা যাবে না। পৃথিবী তো গোল তাই একদিন না একদিন তো দেখা হয়েই যাবে। আর আজ আসি আমি একটু তারা আছে আমার।”

-” ঠিক আছে আপু।”

জান্নাত টাকা টার দিকে তাকিয়ে বললো,” আজ এই টাকা না পেলে হয়তো বাড়িতেই যেতে পাড়তাম না আমি। তোমাকে ধন্যবাদ দেয়ার ভাষা আমার জানা নেই। সবসময় ভালো থেকো।”
.
রোদ অন্য রাস্তায় গিয়ে অনেক খোঁজার পড়েও বাইকার মেয়েটার দেখা পেলো না। রাগে আফসোসে রোদ একটা গাছে হাত দিয়ে আঘাত করলো। আর বলছে,

-” এতো কাছে এসেও ওকে আমি দেখতে পেলাম না।”

অনবরত হাতে আঘাত করায় ওর হাত থেকে রক্ত ঝরছে। রুদ্র রোদের হাতের দিকে লক্ষ্য করে বললো,” তোর হাত থেকে রক্ত ঝরছে থাম এবার।”

–“না না না আমি আর পারছি না এই যন্ত্রণা নিতে রুদ্র।”

–“কিসের যন্ত্রণা? এই যন্ত্রণা তুই নিজে মিছে মিছে বয়ে নিয়ে আসছিস। দোস্ত এইবার নিজের জীবন নতুন করে শুরু কর। মেঘ ভাবীর সাথে সুখে ঘর বাঁধ এবার।”

রোদ কান্না করছে। বললো,” কিভাবে ভুলে যাবো রুদ্র? পায়েলকে ভুলে যাওয়া সম্ভব না আমার। আর এই লেডি বাইকারের পেছনে কেনো পরে আছি তুই তো জানিস। ওকে আমি যখন প্রথম দেখেছিলাম কয়েকটা ছেলে একটা মেয়ের ওরনা নিয়ে নিয়েছিলো। আর তার একটু পরেই ও বাইক নিয়ে এন্টি নেয়। সাথে একটা ছেলেও ছিল তবে সে ছেলের মুখ দেখাও আমার হয় নি কারণ সে ও হেলমেট পড়ে ছিল। আর বাইকার মেয়েটা হেলমেট খুলে রেখে দিলেও ওর মুখ আমি কিংবা কেউ দেখেনি। রাহুল বলেছিল ওর মুখে মাস্ক ছিল। কিন্তু বাইকার মেয়ে আর ওই ছেলেটা বখাটে ছেলে গুলোকে মারছিল তখন খোপা করা সেই হালকা বাদামী রঙের চুল আর ঘাড়ে থাকা জন্ম দাগ আমার চোখ এড়িয়ে যায় নি। আমি থমকে গেছিলাম সে দুইটা জিনিসে। আমি মোহিত হয়ে গেছিলাম ॥তার একমাত্র কারণ আমার পায়েলের চুল ঠিক এমন আর জন্ম দাগ টাও। আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি ওই আমার পায়েল। আমার আমার পায়েলকেই চাই। আই নিড হার!”

রোদ কাঁদছে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। ওর কান্না রুদ্রর মনেও কষ্ট জাগিয়ে তুলছে। ছোট থেকে রোদের এই কষ্ট আর নিতে পারছে না রুদ্র। একটা মেয়ের জন্য এত পাগল হতে কাউকে দেখেনি সে। রুদ্র রোদ কে উঠিয়ে বললো,

-” নতুন করে শুরু কর না জীবন। তোর কষ্ট আর নিতে পারছি না আমরা।”

-“কিভাবে রুদ্র? আমার মনে শুধু একজনেরই বসবাস।”

রোদ আরো কিছু বলতে যাবে তখনই ওর ফোন বেজে উঠলো। কান্না থামিয়ে ফোন বের করে দেখলো অচেনা নাম্বার থেকে কল। রোদ কল pick করে হ্যালো বলতেই ফোনের অপাশ থেকে বললো,

-” আমি ঘুরতে বেরিয়ে বাড়িতে চলে আসলাম আর আপনি কোথায় হ্যাঁ?”

রোদ কণ্ঠ শুনেই বুঝতে পারলো এইটা মেঘ। রোদ ফোন কানে দিয়ে বললো, “আমি জাহান্নামে আছি। তুমি আমার নাম্বার পেলে কোথায় থেকে?”

–আপনি আমার একমাত্র স্বামী আপনার নাম্বার আমি পাবো না তা হয় নাকি।

–এই মেয়ে নাটক করবে না। তোমার ঘুরাঘুরি এতো তাড়াতাড়ি শেষ হয় কেন? আর কল করছো কেন?আমাকে ছাড়া কি থাকতে পারছো না?

মেঘ মজা করে বললো,” সত্যি গো তোমাকে ছাড়া আমি আর এক মুহূর্ত থাকতে পারছি না। তাড়াতাড়ি আসুন।”

–এই তোমাকে না….

রোদের কথা শেষ না হতেই মেঘ বললো, “শুনুন সাথে কেউ থাকলে তাঁকেও নিয়ে আসুন আমি রাখছি।”

রোদ কে আর কিছু না বলতে দিয়ে মেঘ ফোন রেখে দিলো। ফোন রেখে মেঘ বলছে, “যাক উনি এখনও বাড়িতে যায় নি। আমি তাড়াতাড়ি বাড়িতে যায়।”

রোদ ফোন রেখে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো,”তুই এইখানে কেনো এসেছিলি বল তো।”

-” এইতো এমনি হাঁটতে আসছিলাম।”

–” এই বিকেলে তুই এইখানে হাঁটতে আসছিলি? আর তুই কেম্নে জানলি মেঘের বাড়ি এখানে?ব্যাপার কি বল তো। ”

রুদ্র কথা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও রোদের থেকে কিছু লুকিয়ে রাখতে পারলো না। বললো, “অর্চির খোঁজ নিতে এসেছিল। ”

রোদ রুদ্রের কাঁধে মেরে বললো,” শালা তুই প্রেমে পড়েছিস আর আমি জানিনা। চল তোকে তোর অর্চির কাছে নিয়ে যাই। তবে ভাই সাবধান মেঘের বন্ধু তো ও। ”

–” না রোদ আজ যাওয়া যাবে না। ওর ফোন নাম্বার পেয়েছি। আগে সবকিছু ঠিক করে নেই তারপর।”

–“আচ্ছা তাহলে সাবধানে বাড়িতে যা। আমি যায় তাহলে।”

_________
অর্চি আয়রা আর সাপা গল্প করছে এর মাঝে দিহান এসে বললো, “আমার কি আসা যাবে আপনাদের মাঝে?”

আয়রার মুখে হাসি ফুটে উঠলো দিহান কে দেখে কিন্তু মুহূর্তেই হাসিটা মিলিয়ে গেলো। দিহানকে ঘরে আসতে দেখে ও চলে যেতে নিলো। দিহান আয়রার হাত ধরলো। আয়রা কেঁপে উঠলো। দিহানের হাত ধরা দেখে অর্চি আর সাপা ঘর থেকে চলে গেলো। আয়রা হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললো,

-” ছাড়ুন প্লিজ। আপুরাও তো চলে গেলো।”

দিহান আয়রাকে ওর সামনে নিয়ে বললো, “আমাকে দেখে চলে যাচ্ছিলে কেনো? আমি কি খুব খারাপ!”

আয়রার চোখে পানি ছল ছল করছে। ও নিচের দিকে তাকিয়ে বললো, “তা না।”

-“তাহলে কি?”

আয়রা দিহানের দিকে তাকিয়ে আর কিছু না বলে বেরিয়ে গেলো। দিহান আয়রার অদ্ভুত ব্যবহারে একটু অবাক হলো। আয়রা বাহিরে গিয়ে ওয়াশ রুম এ গিয়ে মুখে পানি দিতে শুরু করলো। আর মনে মনে ভাবছে,

-“আমি চাই না আপ্নার সামনে থাকতে। কারন আমি দুর্বল হয়ে পড়েছি আপনার প্রতি আর আমি চাই না আমি আরো দুর্বল হয়।”

মেঘ বাড়িতে এসে নিজের ঘরে যাচ্ছিল তখনই আয়রাকে ওয়াশ রুম থেকে বেরোতে দেখলো। ওকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে ওর মন খারাপ। মেঘ আয়রাকে ডেকে বললো,

-” আয়রা তোমাকে এমন লাগছে কেনো? মন খারাপ? কি হয়েছে? ”

–” কিছুনা ভাবি। কই আমার মন খারাপ? এমনি ভাবি কিছু হয়নি। বাসায় যেতে হবে আম্মু আব্বু ডাকছে আমি নিচে যায় তুমি আর ভাইয়া এসো।”

জোর করে হাসার চেষ্টা করে আয়রা কথাগুলো বলেই চলে গেলো। মেঘ ওর মন খারাপের কারণ কি তা জানতেও পারল না। মেঘ ঘরের দিকে যাচ্ছে আর বলছে,

-” কে কি বলে কিছুই বুঝিনা। তবে আমি নিশ্চিত আয়রার কিছু হয়েছে। না বললো আমি খুঁজে ঠিক বের করব। ”

মেঘ দিহানকে গাড়ির চাবি দিলো আর যা যা ঘটেছে সবকিছু বললো। দিহান বললো,” দেখ মেঘ সাবধানে থাকবি আর এখন আমার সাথে এত কথা বলিস না রোদ দেখলে প্রবলেম হবে।”

–“ঠিক আছে। তবে আজ ওদের বাড়িতে যাচ্ছি কিন্তু তোকে কল করলে বাইক নিয়ে যাবি promise কর।”

মেঘ হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো।

দিহান মেঘের হাতে হাত দিয়ে বললো, “জো হুকুম মহারানী।”

মেঘ খুশি হয়ে বললো,” এই জন্য ই তো তোকে এত ভালোবাসি আমি।”

রোদ বাড়িতে এসে ঘরে যেতে নিয়ে মেঘ আর দিহান কে দেখে বাহিরে দাঁড়িয়ে যায়। দাঁড়িয়ে শুধু মেঘের শেষের কথাটা শুনতে পেলো। কথাটা শুনে রোদ যেনো তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। নিচে যাচ্ছে আর বলছে,

-” তুই আমার বউ আর অন্য ছেলেকে ভালোবাসি ভালোবাসি বলিস সাহস তো কম না।”

রোদ হন হন করে নিচে গিয়ে বললো, “বাবা মেঘের মনে হয় যাওয়ার ইচ্ছা নেই চলো আমরা যায়।”

রোজা চৌধুরী বললো, “আবার কি হয়েছে? আর মেঘ যাবেই তো।”

মেঘ নিচে আসতে আসতে বললো,” আমি রেডি হয়েছি এখন চলুন সবাই। পাপ্পা – মাম্মা ভালো থেকো তোমরা আর আমার সাথে দেখা করতে আসবে তো?”

–“হুম অবশ্যই। তুই ও ভালো থাকিস আর সবাই কে ভালো রাখিস।”(মিমি হাসান)

প্রতীক হাসান আবারো মেঘের মাথায় হাত রেখে বললো,”সেদিন যা বলেছিলাম মনে রেখো আর take care of everyone.”

–“হুম পাপ্পা ।”

মেঘ আদিল চৌধুরীর কাছে গিয়ে বললো, “বাবা চলুন।”

রোদ সবাই কে বিদায় জানিয়ে মেঘের কাছে এসে বললো,”যেতে কেন হবে গল্প করো যাও।”

মেঘ কিছু না বুঝে বললো, “বুঝলাম না।”

রোদ রেগে চলে গেলো। মেঘ রোজা চৌধুরী কে বললো,”মা আপনার ছেলে কি জেগে জেগে স্বপ্ন দেখে? উনার কথা কিছুই বুঝিনা।”

রোজা চৌধুরী মেঘের কাঁধে হাত দিয়ে হাসি টেনে বললো,”এখন বুঝবে না কিন্তু পরে দুজনেই বুঝবে এখন বাসায় চলো।”

রোদ বাড়িতে গিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলো। যাওয়ার পথে কারো সাথে কোনো কথায় বলেনি মনে হচ্ছিল রোদ কোনো এক প্রিয়জনের প্রতি অভিমান করে আছে। কিন্তু এ অভিমান ই বা কিসের? রোদ তো মেঘ কে চিনে মাত্র দুদিন ধরে। তাহলে কি এজন্যেই বলা হয় বিয়ের পর সৃষ্টিকর্তা তার প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি করে দেয়! রোদ ঘরে পায়চারি করছে আর বারবার বলছে,

-“বিয়ের পরে অন্য একটা ছেলেকে ভালোবাসি বললো। boyfriend আছেই তাহলে আমার বাড়িতে থেকে কেন গেলো হ্যাঁ?”

রোদ বিড়বিড় করছিলো এমন সময় হঠাৎ ওর মনে হলো কেনো ও এমন করছে? নিজে নিজে বললো, “ওর যার সাথে যা খুশি থাক আমার কি।”

বলে শান্ত হয়ে বসার চেষ্টা করলো। ফোন হাতে নিয়ে নিউসফিড scroll করছিলো এমন সময় প্রিন্স messenger এ এসএমএস দিলো।

-” হে ভাইয়া!”

প্রিন্সের এসএমএস পেয়ে রোদ তাড়াতাড়ি করে রিপ্লাই দিলো,” হ্যালো ছোটো মিয়া। কেমন আছো?”

-“আমি তো ভালো আছি কিন্তু তুমি কেমন আছো? দুই তিন দিন তোমার যে কোনো খবর ই নেই।”

-“আমার জীবন তামা তামা ভাই শেষ আমি। খবর পাবে কেমন করে হুট করে জোর করে মানুষ একটা পেত্নীর সাথে আমার বিয়ে দিয়ে দিছে।”

-“What a getting surprise bro! তাহলে আমার জন্য দুইটা special মানুষ হয়ে গেলো। সামনাসামনি দেখা হচ্ছে খুব তাড়াতাড়ি।বাই দ্যা ওয়ে ভিডিও কল দেই তোমার wife আছে তো তোমার সাথে? ”

রোদ এসএমএস টা পড়ে হতাশ হয়ে একা একা বললো,”শালা তোর বোন কে খুঁজে মরছি আমি আর সে তুই অন্য মেয়ে আমার বউ শুনে এতো খুশি? অবশ্য তুই তো তোর বোন কে দেখিস নি বুঝবি কেম্নে! আর এইটাও জানিস না আমি তোর দুলাভাই হতাম! ”

প্রিন্স কিছুক্ষণ পরেও রিপ্লাই না পেয়ে আবারো এসএমএস দিলো,” রোদ ভাইয়া busy নাকি। ”

রোদ প্রিন্স কে কল করলো। প্রিন্স কল রিসিভ করে বললো, “বউ এর সাথে আছো এই জন্য আমাকে ignore করলে তাইনা? আর ভিডিও কল না দিয়ে অডিও কল কেনো দিলে? তোমার বউ কে আমি কেড়ে নিবো নাকি?”

রোদ অসহায় হয়ে বললো, “বাহ্ বাহ্ বাহ্ এখন তুমিও আমায় এসব বলছো! অডিও কল এ কথা বলে শান্তি লাগে আর এখন আমার এই মুখ কাউকে দেখাতে ইচ্ছা করছে না। আর ওই পেত্নী থাকলে কল দিতাম ই না। ”

প্রিন্স রোদের কথা শুনে হাসতে শুরু করলো। বললো,”ভাইয়া বিয়ের পর তোমার এই অবস্থা। আমি গিয়ে সবকিছু ঠিক করে দিবো। ”

-” এই দাঁড়াও দাঁড়াও। তুমি আসবে মানে? তখনও বললে আবার এখনও বলছো! সত্যি আসবে নাকি? ”

-” আরে ভাইয়া তুমি জানো না? আমি মাম্মা, পাপ্পা সবাই যাচ্ছি দেশে কয়েক দিনের মধ্যেই। আঙ্কেল তো জানেন।”

-“আমার বাবা তো আমাকে আমার খুশির খবর কখনোই দিবে না। কেন যে আমার বাবা আমার ভালো দেখতে পারে না। আমার জীবন শেষ করার জন্য ওই মেয়েকে বাড়িতে রাখল। তবে এখন ভালো লাগছে তোমরা সবাই আসবে শুনে। এই আন্টি কে ফোন টা দাও তো অনেকদিন কথা হয় নি। ”

প্রিন্স হেসে বললো,” একটু wait করো আম্মু কে ডেকে দিচ্ছি। ”

মিস মৌ ফোন নিয়ে বললো,” রোদ কেমন আছিস? ”

রোদ উত্তর দিতে নিয়েই দেখলো মেঘ ঘরের দিকে আসছে। ও মেঘ কে শোনানোর জন্য বললো,” আমি একটুও ভালো নেই তোমাকে ছাড়া darling! তুমি কেমন আছো? ”

মিস মৌ হেসে বললো,” তুই আমাকে darling বলা আর ছাড়তে পারলি না। আমিও আছি এইতো ভালো। এই তোর নতুন বউ কেমন আছে? ”

মেঘ রোদের ফোনে কথা শুনেও ঘরে এসে আপন মনে লাগেজ খুলছে। রোদ মেঘের পাশে গিয়ে বললো,” বাদ দাও না ওর কথা। এখন শুধু তোমার আর আমার কথা হবে এর মাঝে কোনো তৃতীয় ব্যাক্তিকে আমি চাই না। ”

মেঘ আস্তে করে বললো,” হ আমি তৃতীয় ব্যাক্তি! আপনি আপনার গার্লফ্রেন্ড কে নিয়ে যা খুশি করুন আমার কি।”

মিস মৌ শুধু হাসল। রোদ আবারো বললো, “তাহলে কবে আমাদের দেখা হচ্ছে। ”

-” That’s surprise my boy. ”

-” ওকে কি আর করব তুমি তো আমাকে শুধু surprise ই দাও। আচ্ছা আজ ফোন রাখি? আসলে যে শাকচুন্নী কে বিয়ে করেছি না? ও শুনে ফেললে আবার বিপদ। ”

মিস মৌ হাসি দিয়ে বললো, “ঠিক আছে। আর ও তোর বিবাহিত স্ত্রী ওকে শাকচুন্নী বলিস না। মেনে নেয়ার চেষ্টা কর। ”

-” সে দেখা যাবে।”

রোদ বেডে পা তুলে বসল আর ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। মেঘ লাগেজ রেখে রোদের কাছে তেড়ে এসে বললো,” আপনি আপনার গার্লফ্রেন্ডের সাথে যা ইচ্ছা করুন কিন্তু আমাকে শাকচুন্নী বলার অধিকার কে দিয়েছে আপনাকে? ”

রোদ মেঘের কথার কোনো উত্তর দিচ্ছে না যেনো ও কিছুই শুনতে পারছে না। মেঘ কোমরে হাত দিয়ে বললো, “কানে কথা যায় না আপ্নার?”

তবুও রোদ ফোন টিপছে কোনো উত্তর দিচ্ছে না। মেঘ এইবার আরো রেগে বললো,” calling এ কথা বলেও কথা শেষ হয়নি আবার chating করতে হয়। দেখি ফোন টাই নিয়ে নিবো।”

বলেই মেঘ রোদের ফোন নিলো। রোদ ফোন নেয়ায় বললো, “এই ফোন দাও আমায়। অন্যের ফোন নিতে নেই তুমি জানো না? ”

-” কেউ কোনো কিছু জিজ্ঞেস করলে তার উত্তর দিতে হয় তা জানেন না?”

-‘জানি কিন্তু কেনো উত্তর দিবো আমি? তুমি আমার বউ তাই তোমাকে নিয়ে যা ইচ্ছা আমি বলতে পারি তার উত্তর তোমায় কেন দিবো? ”

মেঘ রোদের কপালে ঘুতো দিতে ভ্রু কুঁচকে বললো,”আপ্নার মাথায় disturb আছে এখন বুঝলাম। একবার বলেন বউ তারপর আবার গার্লফ্রেন্ডের সাথে কথা বলেন ব্যাপার কি? কয়টা লাগে! ”

রোদ চোখ বড় বড় করে বললো,” এই মেয়ে এসব কি বল! আমার কাউকে লাগে না আর তুমিও আমার কেউ না। আমি জীবনে শুধু একজন কেই ভালোবেসেছি আর তাঁকেই ভালোবাসব। কিন্তু তুমি কেমন মেয়ে যে নিজের এমন সুন্দর, হ্যান্ডসাম স্বামী থাকতেও অন্য একটা ছেলেকে ভালোবাসি বল! ”

মেঘ অবাক হয়ে বললো, “আমি আবার কাকে ভালোবাসি! আর আপনাকে সুন্দর কে বলেছে? বান্দর এর মতো দেখতে তো। তো আপনার গুণধর ভালোবাসার মানুষ কে আমি দেখতে পারি? ”

রোদ মেঘের থেকে ফোন নিয়ে বললো,” মোটেও না! তোমাকে ওর সাথে দেখা করিয়ে আমি কোনো ঝামেলা করতে চাই না। ও না তোমার মতো পেত্নী না অনেক সুন্দর। আর শোনো তুমি তোমার ওই দিহানকে নিয়েই থাকো আর কাউকে দেখতে হবে না। ”

মেঘ কপাল চাপরে হাসতে শুরু করলো।রোদ মেঘের হাসির দিকে তাকিয়ে আছে। এর মাঝেই আদিল চৌধুরী এসে গলা খাকরি দিলো। মেঘ হাসি থামিয়ে রোদের পাশে চুপ করে দাঁড়াল। রোদ বললো,

-” বাবা এসো ভেতরে আসো। ”

আদিল চৌধুরী ভেতরে এসে রোদের কাঁধে একটা মেরে বললো,” বউ মা এর সাথে আবার ঝগড়া করেছিলি নাকি?”

রোদ অসহায় মুখ করে বললো, “বাবা তুমি আমাকে এত খারাপ ভাবো কেমন করে? আমি কি সবসময় ঝগড়া করি নাকি।”

মেঘ হেসে বললো,” বাবা আপ্নার ছেলে তো খুব ভালো। ওসব ভাববেন না। উনি যা করবেন তার দ্বিগুণ আমি ফেরত দিবো উনাকে।”

রোদ রাগী রাগী হয়ে মেঘের দিকে তাকালো। মেঘ হাসি দিয়ে আদিল চৌধুরী কে বললো, “বাবা আপনি বসুন না। ”

আদিল চৌধুরী মেঘের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,”তোমরা দুজন ভালো থাকলেই আর আমাদের কিছু চাই না। আর আমি এখন বসব না। একটা কথা বলতে এসেছিলাম। ”

-” আবার কি বলবে? আমার জীবন শেষ। মাঝে মাঝে মনে হয় তুমি আমার বাবাই না।”

আদিল চৌধুরী রোদের গালে হাত দিয়ে বললো,” আমি তো তোর বাবা কিন্তু তার আগে তোর বন্ধু। আর তোর ভালোর জন্য তুই আমার সম্পর্কে যায় ভাব আমার কিছু মনে হবে না। ”

-” হ্যাঁ তা আমি জানি তো। এই মেয়ে আসার পর থেকে তুমি আমার সাথে এমন করো। ”

আদিল চৌধুরী হেসে বললো,” আচ্ছা শোন তোর ঘরের এই সোফাটা কেমন বেমানান না!”

মেঘ আদিল চৌধুরীর সামনে গিয়ে বললো,” না না বাবা। ঠিকই আছে তো। ”

রোদ বিড়বিড় করে বললো,” আবার কি করতে চায় আমার সাথে! ”

একটু জোরে বললো,” বাবা সোফাটা অনেক সুন্দর মানায় এ ঘরে আমার বন্ধু রা ও বলে কিন্তু কি ব্যাপার বল তো! ”

আদিল চৌধুরী একটু চিন্তিত হওয়ার ভান করে বললো,”না না তোমরা ভালো করে দেখো এইটা এ ঘরে একদম মানায় না। তাই আমি ভাবছি কাল কে এই সোফাটা সরিয়ে আমার ঘরে নিয়ে যাবো।”

-“দেখো বাবা দরকার নেই। আমার ঘর যেমন আছে তেমনই ভালো। ”

-” আরে না তোর ঘর টা সুন্দর লাগতে হবে তো। এই জায়গায় মেঘের science instruments গুলো রাখলে ভাল হবে। ”

মেঘ বললো,” না বাবা লাগছে না। এই ঘর তো সবচেয়ে বেশি সুন্দর লাগে এভাবেই। ”

রোদ আর মেঘ অনেক বুঝানোর চেষ্টা করল কিন্তু আদিল চৌধুরী কিছুই শুনলেন না। বলে গেলেন কাল কে সোফাটা অন্য ঘরে নিয়ে যাওয়া হবে এইটাই ফাইনাল কথা।
আদিল চৌধুরী যাওয়ার পরে মেঘ আর রোদ দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে রোদ রেগে বললো,

-” তুমি তোমার science instruments এর কথা বলেছিলে এ জন্য এইটা হলো এখন কে কোথায় থাকবো কাল থেকে?”

মেঘ বেডে বসে একটু ভেবে বললো, “আমি তো কোনো কিছুর কথা বলি ই নি। আর শুনুন দরকার হলে আপনি নিচে থাকবেন।”

-“কি! আমি নিচে থাকতে পারবো না। তুমি থাকবে।”

মেঘ বললো, “আচ্ছা শুনুন আপনি একদিন নিচে থাকবেন আর একদিন আমি নিচে তাহলেই হবে। আজ আর এইটা নিয়ে কথা বাড়িতে লাভ নেই। শরীর অনেক খারাপ লাগছে অনেকদিন পর বা….. ”

বলতে নিয়েই থেমে গেলো মেঘ। মনে মনে বললো,” এখনই তো বাইক এর কথা বলে ফেলতাম। ”

রোদ ভ্রু কুঁচকে বললো,” কি বলতে নিয়ে থেমে গেলে? ”

মেঘ হেসে বললো,” কিছুনা। একটু ঘুমায় আমি? ”

-” হুম ঘুম পাগলি তো তুমি ঘুমাও। ”

মেঘ কাঁথা মুড়ি দিয়ে ফ্যান ছাড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। রোদ সোফায় গিয়ে বসে তাকিয়ে দেখল মেঘ লাগেজ খুলে রেখেই ঘুমিয়ে পড়েছে। রোদ বললো,

-” এত ঘুম পাগল আমি দেখিনি। মনে হয় ড্রেস গুলো আলমারি তে রাখার জন্য লাগেজ খুলেছিল কিন্তু মহারানীর তো তার দিকে আর খেয়াল ই নেই। ”
_________
অর্চি আর মেঘের বাড়ি পাশাপাশি ই। অর্চি মেঘ চলে আসার পর বাড়িতে গেলো। বাড়িতে গিয়ে ফ্রেস হয়ে ঘরে এসে দেখল ওর ফোন বেজে চলেছে। ফোন হাতে নিয়ে দেখলো অচেনা একটা নাম্বার থেকে কল এসেছে।কল pick করলো অর্চি আর বললো,” হ্যালো কে বলছেন? ”

অর্চির কন্ঠ শুনে রুদ্রের মনের মধ্যে এক শীতল অনুভূতি বয়ে গেলো। রুদ্র চুপ করে আছে। অর্চি আবারো বললো,”হ্যালো! কথা বলছেন না কেনো?”

তবুও কোনো উত্তর না পেয়ে অর্চি ফোন রেখে দিয়ে বললো,” না জানি কে কল করে। আরে বাবা চুপ করে থাকার হলে ফোন করার কি কোনো দরকার আছে!”

অর্চি খাটে বসে কলেজের কিছু অ্যাসাইমেন্ট দেখতে লাগলো। পাঁচ মিনিট পর আবারো একই নাম্বার থেকে কল আসলো। অর্চি ফোন রিসিভ করে বলতে শুরু করলো,

“কে আপনি? মিছে মিছে কল করার কারণ কি জানতে পারি? কল করে কথা না বললে কল করে টাকা নষ্ট করার দরকার নেই। আমার সময় বেশি হয়নি।”

অর্চি এক শ্বাসে কথাগুলো বললো। রুদ্র শান্ত গলায় বললো, “আমি রুদ্র!”

ে রুদ্র? আমি তো এ নামে কাউকে চিনি না। মনে হয় ভুল করে ফোন করেছেন। আমি রাখছি।”

-“না রেখো না শোনো একটু।”

-“কি বলবেন আবার? বললাম তো আমি আপনাকে চিনি না।”

-“আমি রোদের বন্ধু। সেদিন যাঁকে তুমি বললে রোদ কে নিয়ে আসতে সে আমি। এইবার চিনেছো?”

-“এত মিথ্যা কেনো বলছেন! সেদিন যাঁকে আমি বলেছিলাম সে তো কথায় বলতে পারে না কিন্তু আপনি তো কথা বলতে পারেন। দেখুন অযথা একটা বোবা ছেলের নাম করে মেয়েদের disturb করবেন না। এগুলো একদম উচিত না।”

-” না বিশ্বাস করো ওই ছেলেটি ই আমি। আমি তোমাকে আমার ছবি পাঠাচ্ছি তাও বিশ্বাস করো।”

অর্চি মুখ চেপে হাসছে। মনে মনে বলছে,” কেমন লাগছে এখন! সেদিন হা করে তাকিয়ে ছিলে এখন আবার ফোন। একটু ঘুরিয়ে তো নিতেই হবে। ”

কন্ঠ একটু তীব্র করে অর্চি বললো,” আমার কোনো ছবির প্রয়োজন নেই। দয়াকরে দ্বিতীয় বার বিরক্ত করবেন না। ”

রুদ্র কিছু বলতে চাইলো কিন্তু অর্চি সে সুযোগ না দিয়ে ফোন রেখে দিলো। ফোন কিছুক্ষণের জন্য অফ করে দিলো অর্চি। মুখে এক শয়তানী হাসি, ও যেনো কোনো কিছু জয়ের আনন্দ উপভোগ করছে। রুদ্র বারবার ট্রাই করে যাচ্ছে কিন্তু অর্চি কে আর পেলো না। অনেকটা দুঃখে রাত এক টার পর ঘুমিয়ে পড়লো।
________
মেঘ ঘুমিয়ে পড়েছে। ঘুমের অতলে ডুবে আছে যেনো। কিন্তু রোদের ঘুম আসছে না। ওর চোখ থেকে ঘুম কেউ কেড়ে নিয়েছে মনে হচ্ছে। ওর চোখের সামনে বারবার বাইকার মেয়েটার হাওয়ায় উড়ন্ত চুল গুলো ভেসে উঠছে। তাঁকে দেখার কত উত্তেজনা। তার জন্য এই দীর্ঘ প্রতীক্ষা। আজ যদি তার দেখা পেতো সারাজীবন হয়তো না ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিতে পারত রোদ। সারাজীবনে অনেক রহস্য ভেদ করলেও এই বাইকার মেয়েকে তিন বছর ধরেও খুঁজে পায় নি রোদ। এই মেয়েটা রোদের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। সেই ছোট পায়েলের চেহারার সাথে কি ওর এখনও মিল আছে? তাঁকে দেখলে কেমন অনুভূতি হবে? কল্পনা তে যে এতো সুন্দর হয় বাস্তবে সে কেমন হবে? কিন্তু সামনে একটা রূপবতী মেয়ে আর সে যদি তার স্ত্রী হয় তাহলে তার অন্য মেয়ের ভাবনা মানায় নাকি? না মানায় না, রোদও আর বেশি ক্ষণ এইসব ভাবতে পারলো না মেঘের দিকে চোখ যেতেই।
ঘুমন্ত অবস্থায় ছোট একটা মেয়ে লাগছে মেঘ কে। ফ্যানের বাতাসে সামনের চুল গুলো যেনো অবাধ্য হয়ে উঠেছে। রোদ মুহূর্তেই মেঘের এই রূপে যেনো বশবর্তী হয়ে যাচ্ছিল। ইচ্ছা করছে মেঘের মুখে হাত দিয়ে চুল গুলো ঠিক করে দিতে। গুটি গুটি পায়ে রোদ এগিয়ে যাচ্ছে। বুকের মাঝে সমুদ্রের উঠাল পাতালের ন্যায় হচ্ছে। রোদ নিজের আয়ত্তে নেই। মেঘের পাশে বসে ওর কপালের দিকে হাত বাড়াচ্ছে রোদ। রোদের হাত কাঁপছে, এক অদ্ভূত অনুভূতি কাজ করছে। রোদ হাত বাড়িয়ে দিলেও মেঘ কে আর স্পর্শ করা হলো না। রোদ ছোয়ায় আগেই মেঘ অন্য পাশ হয়ে যায়। রোদ হাত সরিয়ে নিয়ে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো। এতক্ষণ একটা ঘোরের মধ্যে ছিল রোদ। উঠে দাঁড়িয়ে রোদ একা একা বলছে,

-“আমার কি হচ্ছে আমি যেনো কিছুই বুঝতে পারছি না। ওকে স্পর্শ করা মোটেও ঠিক না আমার। আমি শুধু পায়েলকে ভালোবাসি।”
……….
ফজরের আগেই ঘুম ভেঙ্গে গেলো মেঘের। স্বভাবতই মেঘ ফজরের আগেই ঘুম থেকে উঠে। ঘুম থেকে উঠে আগে গোসল করলো মেঘ। তারপর নামাজ পড়ে নিয়ে জানালার পাশে দাঁড়ালো। জানালার গ্লাসের ফাঁক দিয়ে সূর্য রশ্মি রোদের মুখে এসে পড়ছে। মেঘের সেদিকে খেয়াল ই নেই। মেঘের যেনো খেয়াল ই নেই এই ঘরে ও ছাড়াও আরেকজন আছে। মেঘ চোখ বন্ধ করে পাখির কিচিরমিচির শব্দ শুনছে। একটু পর বেলকনি তে গিয়ে ভ্রু কুঁচকালো। মেঘের মনে হচ্ছে ঘরের সঙ্গে এই বেলকনী একদম মানায় নি কারণ এখানে নেই কোনো ফুল নেই কোনো রকিং চেয়ার। তবে বেলকনীতে বেশ ভালোই লাগছে, সকালের আকাশ মন কে ভালো করে দেয়ার জন্য যথেষ্ঠ। কিছুক্ষণ বাদে ঘরে প্রবেশ করলো মেঘ। রোদের দিকে চোখ যেতেই দেখল রোদের মুখে রোদ এসে পড়ছে। মেঘ মুচকি হেসে একা একা বললো,

-“ঘরে উনি আছেন আমার তো খেয়াল ই ছিল না।”

জানালার পর্দা টানিয়ে নিয়ে মেঘ দু কাপ কফি নিয়ে ঘরে আসলো। কফি কাপ দুটো টেবিল এ রেখে রোদের সামনে গেলো। একটু বাঁকা হাসি দিয়ে মনে মনে বললো,

-” ঘুমানো শেষ করছি আমি দাঁড়ান একটু। নামাজ পড়া নেই শুধু ঘুম এসব তো চলবে না।”

মেঘ ওর এক গ্লাস পানি নিয়ে রোদের মুখে ঢেলে দিলো। রোদ ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে বললো,” বৃষ্টির পানি গায়ে কিভাবে এলো।”

মেঘের দিকে খেয়াল না করেই উপরের দিকে তাকিয়ে বললো, “ছাদ তো ঠিক আছে তাহলে পানি কিভাবে আসলো? ভূত আসলো নাকি আমার ঘরে! ”

মেঘ জোরে জোরে হেসে উঠলো। মেঘের হাসির শব্দে রোদ মেঘের দিকে তাকিয়ে স্তব্ধ হয়ে গেলো। মেঘের দিক থেকে চোখ ফেরাতেই পারছে না। ওর হাতের দিকে চোখ পড়তেই দেখলো হাতে গ্লাস। মুহূর্তেই রোদের মেজাজ বিগরে গেলো। ও রেগে মেঘ কে বললো,

-” তুমি আমার গায়ে পানি ঢেলেছ? কেনো পানি ঢেলেছ বল।”

মেঘ হাসি থামিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো, “কোনো সন্দেহ আছে এখন কে পানি ঢেলেছে? এই দেখুন গ্লাস, এটাতে পানি ছিল আর আমি ই আপনার গায়ে পানি ঢেলেছি কেমন অনুভূতি হলো বলুন। নামাজ না পড়ে ঘুমালে ঘুম থেকে জেগে দিতেই তো হবে। ”

রোদ মেঘের এক হাত ধরে ওকে একদম ওর কাছে এনে বললো, “তোমার ভয় করেনা একটা ছেলেকে রাগাতে? আর এমনি ডাকতে পারো নি? ”

মেঘ রোদের দিকে তাকিয়ে চুপ করে থাকল। একটু পরে রোদের থেকে সরে গিয়ে তাওলা এগিয়ে দিয়ে বললো,”পানি মুছে নিন অসুস্থ হয়ে পড়বেন নাহলে। ”

রোদ আরো রেগে বললো, “এইটা আমার কথার উত্তর না মেঘ। উত্তর দাও কেনো পানি দিয়েছ? ”

মেঘ কফির কাপ হাতে নিয়ে তাতে এক চুমুক দিয়ে একটু মুচকি হেসে রোদের দিকে তাকিয়ে বললো,” আপনি ও তো আমায় সেদিন এমনি ডেকেও ঘুম ভাঙ্গাতে পারতেন কিন্তু তবুও পানি দিয়েছিলেন সেটার শোধ নিলাম।”

রোদ দাঁত কটমট করে বললো,” সেদিন অনেকবার ডাকার পরে পানি দিয়েছিলাম আর তুমি তো একবারও ডাকো নি। আমি তোমার মত ঘুম পাগল না। তোমাকে তো আমি….”

বলেই রোদ পানির বোতল হাতে নিয়ে মেঘের দিকে এগিয়ে গেলো। মেঘ রোদের আসা দেখেই দৌড়ে ঘরের বাহিরে গিয়ে ভেঙচি কেটে বললো,

-“এত সহজ না মেঘের গায়ে পানি ঢালা বুঝেছেন। ”

বলেই আবার দৌড়াতে শুরু করলো। রোদ ওর পেছনে দৌড়ে আসছে আর বলছে,” আজ আমি তোমার গায়ে পানি দিবোই। আমার সাথে ফাজলামি শুরু করা হয়েছে হ্যাঁ।”

একটু পর ইহানার ঘরের সামনে গিয়ে রোদ মেঘ কে ধরে ফেললো। মেঘ কে পেয়ে রোদ শয়তানী হাসি দিলো। মেঘ ভয়ে বলছে,” আল্লাহ বাঁচাও আমায়। এখনই গোসল করেছি আর ভিজতে চাই না।”

রোদ বোতলের পানি মেঘের গায়ে যেই ঢালতে যাবে অমন সময়েই ইহানা ঘর থেকে বেরিয়ে আসলো। মেঘ সরে যেতেই ইহানা রোদের সামনে এসে যায় আর সব পানি ইহানার মাথায় পরে যায়। হুট করে ইহানা ওদের মাঝে চলে আসায় রোদ ও কিছুই বুঝতে পারেনি। ইহানা রোদের দিকে তাকিয়ে কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো,

-“তুমি আমার গায়ে পানি ফেললে! জানো না আমার ঠান্ডা লেগে যায়। তুমি আমায় ভালই বাস না বুঝলাম কিন্তু তাই বলে এইসব করবে!”

রোদ জ্বীবে কামড় দিলো। ইহানার মাথায় হাত দিয়ে বললো, – “ইহু সরি প্লিজ রাগ করিস না। বিশ্বাস কর ইচ্ছা করে দেই নি। তোর ভাবীর গায়ে দিতে গেছিলাম কিন্তু তুই মাঝে চলে এসেছিস। ”

মেঘ পাশে দাঁড়িয়ে হাসি আটকানোর চেষ্টা করছে। ইহানা মেঘের দিকে তাকিয়ে বললো,” তোমরা প্রেম করবে আর তা আমাকে দেখানোর জন্য আমার ঘরের সামনে এসেছিলে? ”

-ইহানা তুমি ভুল বুঝছো। (মেঘ)

–” কিছুই ভুল বুঝছি না আমি।লোভী মেয়ে একটা, ফাঁসিতে আমার রোদ কে বিয়ে করেছো আর এখন আমার সাথে….”

ইহানা আর কিছু না বলে ঘরে চলে গেলো। মেঘের মন বেশ খারাপ হয়ে গেলো। ওর চোখের কোণে পানি এসেছে। ও স্বাভাবিক গলায় রোদ কে বললো,

-” সরি আপ্নার সাথে এমন করা ঠিক হয় নি আমার। আর আমি আজকেই এই বাড়ি থেকে চলে যাবো। ”

মেঘের কথাটা রোদের বুকে গিয়ে যেনো লাগলো। রোদ মেঘ কে কিছু বলতে যাবে তখনই মেঘ দৌড়ে ঘরে চলে গেলো। রোদ দেয়ালে আঘাত করে বললো,

“মজা করতে গিয়ে মেয়েটা কে কষ্ট দিয়ে ফেললাম।”

আয়রা ঘর থেকে বেরোতে মেঘ কে কাঁদতে কাঁদতে ঘরের দিকে যেতে দেখলো তার পেছনেই রোদ কে দেখে বললো,”ভাইয়া কি হয়েছে ভাবীর?”

-“আর বলিস না ইহু ওকে বলেছে ও নাকি লোভী, আমাকে ফাঁসিতে বিয়ে করেছে তাই কান্না করছে। বলছে চলে যাবে। ”

-” এই ইহু এইটা লোভী সেজন্য কি সবাই লোভী হবে নাকি। ভাইয়া তুই যা গিয়ে ভাবি কে শান্ত কর আর আমি ইহু কে দেখছি।”

-“হুম।”
বলেই রোদ ঘরে গেলো। ঘরে গিয়ে দেখল মেঘ লাগেজ নিয়ে বাহিরে আসছে। রোদ শান্ত গলায় বললো,” রাগ করে চলে যেও না প্লিজ। ইহানার হয়ে আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। ”

মেঘ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,” আমি লোভীর তকমা গায়ে মেখে এই বাড়িতে থাকতে পারবো না। আর আমি আপনাকে কোনো লোভে পড়ে বিয়ে করিনি তা আপনিও জানেন। এই বাড়িতে রয়ে গেছিলাম আপনার মা বাবার খুশি মাটি করব না বলে কিন্তু আর থাকতে পারবো না। ”

রোদ মেঘের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,” তোমাকে থাকতেই হবে।যখন নিজের ইচ্ছা তে একবার থেকে গেছো এখন আর নিজের ইচ্ছা তে যেতে পারবে না। ”

মেঘ ভ্রু কুঁচকে বললো,” আমি চলে গেলে তো আপনারই ভালো তাইনা? আপনি আপনার গার্ল ফ্রেন্ড কে বিয়ে করে নিতে পারবেন। তবে আপনি আটকাচ্ছেন কেন? প্রেমে পড়ে গেলেন নাকি?”

রোদ রেগে বললো,” তোমার প্রেমে জীবনে পড়ব না আমি। আমি তোমাকে যেতে দিবো না কারণ আমার তোমরা সাথে আরো বোঝা পড়া আছে। তুমি গেলে তো আমি একটু শান্তিতে ঘুমাতে পারবো। ”

মেঘ একটু হেসে বললো,” যাচ্ছি না আমি! ”

-” মানে? তুমি তো এখনই যেতে নিলে তাহলে যাবে না কেনো? ”

-“আমি যাবো আর আপনি সুখে আপনার গার্ল ফ্রেন্ড কে বিয়ে করবেন তা তো আমি হতে দিবো না। আপনাকে শান্তিতে থাকতে দিবো না আমি। ”

” এই মেয়ে এখনই তো কাঁদতে কাঁদতে যেতে চাইলে আবার কি হলো? লাগেজও তো নিয়েছ তাহলে আবার কি হলো। ”

মেঘ রোদের মুখের সামনে গিয়ে ফিস ফিস করে বললো,”ইহানা আমাকে বলেছে বলে আমার খারাপ লেগেছে কিন্তু আপনার গার্ল ফ্রেন্ড কে না দেখতে আমি যাবো না। আর সবচেয়ে বড় কথা আমি চলে গেলে বাবা মা কষ্ট পাবে। আর আপনি যেহেতু চাইছেন আমি থাকি তাই আমি থাকব।আর লাগেজ তো নিয়েছি কারণ আলমারি তে আমার ড্রেস গুলো রাখবো।”

মেঘ আলমারির দিকে গেলো। রোদ হা করে তাকিয়ে আছে। মেঘ যেই আলমারি তে হাত দিতে যাবে তখনই রোদ চিৎকার করে বললো,

-” আলমারি তে হাত দিবে না তুমি। ”

.

.

চলবে……..

ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কেমন হচ্ছে একটু জানাবেন প্লিজ তাহলে আমার ত্রুটি গুলো শুধরে নিতে ভালো হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে