ভুলতে পারব না তোকে পর্ব-৯+১০+১১

0
833

#ভুলতে_পারব_না_তোকে❤
#Part:09
#Writer: Unknown Writer

সাগরের কথা শুনে নদী অবাক চোখে সাগরের দিকে তাকিয়ে থাকল। নদী সাগরকে যতই দেখছে ততই অবাক হচ্ছে। সাগর নদীকে খাইয়ে দিয়ে একই প্লেটে নিজেও খেতে লাগল। নদীর কেন জানি না খুব কান্না পাচ্ছে। নদীর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে৷ আর নদী হাত দিয়ে নিজের চোখের জল মুছছে কিন্তু তাও চোখের জলগুলো গাল বেয়ে মাটিতে অনবরত পড়ছে তো পড়ছে। সাগর নদীর এমন কান্না দেখে খাবারের প্লেট মাটিতে রেখে নদীকে বিচলিত স্বরে বলল
–কি হলো নদী তুই এভাবে কাঁদছিস কেন?
নদীর চোখের জল হাত দিয়ে মুছতে মুছতে সাগরকে বলল
–কিছু হয় নি স্যার। কেন জানি না চোখ দিয়ে আপনাআপনি জল গড়িয়ে পড়ছে। কেন আমি কান্না করছি স্যার বলতে পারবেন?
–আমার মনে হয় তোর কোনো কিছু নিয়ে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। তাই না নদী?
সাগরের কথা শুনে নদী কান্না থামিয়ে ভাবতে লাগল তার কিসের কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু কিছুতেই যেন বুঝতে পারছে না নদী। সাগর নদীকে মুচকি হাসি দিয়ে বলল
–এখন খাবারটা খেয়ে ঘুমিয়ে পড়। তারপর কাল নাহয় কাল ভাবিস যে কিসের কষ্ট তোর।
নদীও মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলল।
সাগর নদীকে খাইয়ে দিচ্ছে তারপর সেই খাবার নিজেও খেয়ে উঠে চলে যাওয়ার আগে আবারো থেমে গিয়ে পেছনে ফিরে বলল
–আমাকে তুই ভালোবেসে ফেলেছিস নদী।
সাগরের এমন কথা শুনে নদী স্তব্ধ হয়ে যায়। তারপর সাগর নদীর রুম থেকে চলে গেল। আর নদী তখনও মাটিতে বসেই ভাবতে লাগল
–সত্যি কি আমি স্যারকে ভালোবেসে ফেললাম? না না না এটা কিছুতেই হতে পারে না। এই ভালোবাসাটা যে অসম্ভব। আমি এমন ভালোবাসায় নিজেকে কিছুতেই জড়াতে চাই না যেখানে ভবিষ্যত কি হবে তা সম্পূর্ণ আমার কাছে অজানা৷ আমি চাই না আমার জন্য স্যারের সম্মানহানি হোক। স্যার শেষে কিনা আমার মতো একটা কাজের মেয়েকে ভালোবাসে স্যারের পরিবার আত্নীয় স্বজন জানলে স্যারের মান সম্মান ধুলোয় মিশে যাবে।
নদী এসব ভাবতে ভাবতেই দেয়াল ঘেঁষে ঘুমিয়ে পড়ে। সাগর নিজের রুমে গিয়ে বিছানায় শুয়ে থাকলেও কেন জানি না সাগরের মনে হচ্ছে নদী ভালো নেই। সাগর মনে মনে বলতে লাগল
–আচ্ছা নদী বিছানায় শুয়েছে তো? এতোটা কেয়ারলেস ও।
সাগর বিছানা থেকে উঠে আবারো নিচে গিয়ে নদীর রুমে ঢুকে যা ভেবেছিল তাই হয়েছে৷ নদী এখনো মাটিতে বসে দেয়াল ঘেঁষে ঘুমিয়ে আছে। সাগর এটা দেখে নদীর কাছে এসে নদীকে কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নদীর মাথায় হাত বুলিয়ে আবার চলে গেল৷ নদী ঘুমিয়ে আছে তাই নদী টেরই পেল না সাগর আবারো এসেছিল।
.
.
.
সকালবেলায় নদী পুরো বাড়ি ঝাড়ু দিয়ে বালতি পানি দিয়ে মুছছিল। সাগর ড্রইং রুমের সোফায় বসে আছে আর একহাত হাত মুষ্ঠীবদ্ধ করে সব সহ্য করছে। সাগর চাইছে নদী এসব না করুক কিন্তু এটা নিয়ে আবারো অশান্তি হবে বলে সাগর কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারল না৷ নদী পুরো বাড়ি ঝাড়ু দিয়ে মুছে রান্নাঘরে চলে গেল। সাগর সোফায় বসে নিউসপেপার পড়ছিল। ঠিক সেই সময় রহিমা বেগম সাগরের পাশে বসে সাগরের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
–বাবা সাগর অনেকদিন তো হলো তুই বিদেশ থেকে দেশে ফিরে এলি। তোর বাবা তো লন্ডনে বড় বিজনেসের কাজ সামলাতে ব্যস্ত। তাই ঢাকায় তোর বাবার রেখে যাওয়া ব্যবসার কাজ ম্যানেজার সামলাচ্ছে। তুই তোর বাবার ঢাকার বড় বিজনেসটা একটু সামলা। তাহলে আমাদের কম্পানিতে কি হচ্ছে না হচ্ছে তুই জানতে পারবি।
সাগর বিরক্তি স্বরে রহিমা বেগমকে বলল
— মা আমি বিদেশ থেকে ফিরেছি সবে পনেরো দিন হলো। এখনো একমাসও হয় নি। আর তুমি বলছো অনেকদিন! আমি এখন বাবার বিজনেস সামলাতে পারব না।আমি এখন ঘুরাঘুরি করব, একটু আনন্দ করব তারপর বাবার বিজনেসের ব্যাপারে ভাবব। এতদিন যেহেতু ম্যানেজার বাবার বিজনেস সামলিয়েছে আরো কিছু দিন সামলাক। কিন্তু এসব ব্যাপারে এখন আমার সাথে কথা বলো না। শুধু শুধু আমার মোড অফ করো না মা।
রহিমা বেগম সাগরকে আরো কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই কেউ চিৎকার করে আন্টি বলে উঠল। রহিমা বেগম পাশ ফিরে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে তার ছোট বোনের মেয়ে উর্মি এসেছে।
উর্মিকে দেখে রহিমা বেগম বসা থেকে উঠে দৌড়ে গিয়ে উর্মিকে জড়িয়ে ধরে। রহিমা বেগম উৎফুল্ল কন্ঠে উর্মিকে বলল
–উর্মি তুই! কেমন আছিস মা? এতদিন আমাদের কথা বুঝি তোর মনে পড়ে নি।
উর্মি দাঁত বের করে হাসি দিয়ে বলল
–আমি ভালো আছি আন্টি। এতদিন আমি পড়াশোনার কত চাপে ছিলাম। সুইজারল্যান্ড থেকে আজই দেশে ফিরলাম। তুমি কেমন আছো আন্টি?
রহিমা বেগম খুশি হয়ে উর্মিকে বলল
–আমি ভালো আছি রে উর্মি। তুই এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? আয় ভিতরে আয়।
উর্মি ভিতরে ঢুকে দেখল একটা সুদর্শন ছেলে সোফায় বসে নিউসপেপার পড়ছে। কিছুটা গম্ভীর হয়েই নিউসপেপার পড়ছে সে। উর্মি সাগরের দিকে আঙুল তুলে রহিমা বেগমকে জিজ্ঞেস করল
–আন্টি এই হটি বয় টা কে?
উর্মির কথা শুনে রহিমা বেগম তো অবাক হলো সাথে সাগর নিউসপেপার পড়া বাদ দিয়ে সামনো তাকিয়ে দেখল একটা স্টাইলিশ মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সাগর পা থেকে মাথা অবধি উর্মিকে দেখল৷ উর্মি ধবধবে সাদা, লম্বায় পাঁচ ফুট চার, মাঝারি চুল, গায়ের পরনে একটা গোলাপি টি শার্ট, আর নীল জিন্স পেন্ট, মাথায় টুপি পড়া, আবার পায়ে পড়েছে কালো রংয়ের হাই হিল। সাগর উর্মির দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকাল। রহিমা বেগম হেসে উর্মিকে বলল
–তোর সাগর ভাই রে উর্মি। কিছুদিন আগে আমেরিকা থেকে পড়াশোনা করে দেশে ফিরেছে।
উর্মি ছোটবেলা থেকেই সাগরকে ভীষণ পছন্দ করত। কিন্তু সাগর উর্মিকে এড়িয়ে চলত৷ রহিমা বেগমের মুখে সাগর ভাই কথাটা শুনে উর্মি চিৎকার করে বলল
–আন্টি এই হটি বয়টা আমার সাগর ভাইয়া?
রহিমা বেগম হেসে বলল
–হ্যা রে তোর সাগর ভাইয়া।
উর্মি দৌড়ে সোফায় গিয়ে সাগরের গলা জড়িয়ে ধরল। এদিকে রান্নাঘরের পাশে আড়াল থেকে নদী সবকিছু দেখছে আর অবাক হয়ে উর্মির দিকে তাকিয়ে আছে। উর্মি সাগরের এতো কাছে আসাটা না চাইতেও নদী মেনে নিতে পারছে না। নিজের অজান্তেই নদীর চোখগুলো ঝাপসা হয়ে আসছে।
উর্মি সাগরের গলা জড়িয়ে ধরাতে সাগর আরো রেগে নিজেকে উর্মির কাছ থেকে ছাড়িয়ে রেগে বলে উঠল
–এই মেয়ে আমার কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রেখে থাকবে। একদম আমার কাছে আসার চেষ্টাও করবে না।
সাগরের কথায় উর্মির মন খারাপ হয়ে যায়৷ এটা দেখে রহিমা বেগম সাগরকে রেগে বলল
–সাগর তুই উর্মির সাথে এমনভাবে কথা বলতে পারিস না। মেয়েটা এমনিতে বড্ড হাসিখুশি থাকে আর তুই মেয়েটার মনটা খারাপ করে দিলি!
সাগর রেগে সোফা থেকে উঠে নিউসপেপার সোফার ছুঁড়ে ফেলে বলল
–আমি বেশ করেছি মা৷ ওর সাহস কি করে হয় আমাকে টাচ করার! একেই তো লজ্জা সরম বলতে কিছুই নেই। তারওপর আমাকে হটি বয় উপাধি দিচ্ছে। যত্তসব৷
সাগর সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে নিজের রুমে চলে গেল। উর্মির চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগল৷ রহিমা বেগম উর্মির মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
–কষ্ট পাস না উর্মি মা৷ সাগর একটু এমনি। ধীরে ধীরে ও ঠিক হয়ে যাবে।
উর্মি রহিমা বেগমের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিল। ঐদিকে স্নেহা সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে দেখে একটা অসম্ভব সুন্দর মেয়ে সোফায় বসে আছে। স্নেহা ধীরে ধীরে সোফার কাছে এসে সামনে দাঁড়িয়ে রহিমা বেগমকে জিজ্ঞেস করল
–মা এই মেয়েটা কে? ওয়াও কি বিউটিফুল গার্ল !

রহিমা বেগম মুচকি হেসে স্নেহাকে বলল
–স্নেহা এটা তোর উর্মি আপু। যার সাথে তুই ছোটবেলায় খুব খেলতি। মনে আছে তোর?
উর্মি আপু কথাটা শুনেই স্নেহা উর্মিকে খুশিতে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে বলল
–উর্মি আপু তুমি এসে পড়েছো?
উর্মি মুচকি হেসে স্নেহাকে জড়িয়ে ধরে বলল
–হ্যা আমি এসে পড়েছি স্নেহা।
স্নেহা কাঁদতে কাঁদতে উর্মিকে বলল
–তুমি আর আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না৷ তুমি এই বাড়িতেই থাকবে। বলো এই বাড়িতে থাকবে তুমি আপু?
উর্মি একটু হেসে স্নেহাকে বলল
–হ্যা আমি আজ থেকে এই বাড়িতেই থাকব। এই বাড়িতে থাকাটা যে আমার খুব দরকার।
রহিমা বেগমও উর্মির কথা শুনে খুব খুশি। রহিমা বেগম মনে মনে বলল
–আমার সাগরের মন থেকে ঐ ফকিন্নির বাচ্চার জন্য যেই আবেগ তৈরি হয়েছে তা উর্মিই পারবে ধ্বংস করে দিতে। আমার উর্মিই পারবে আমার ছেলেকে আবার আগের মতো করে দিতে।




#চলবে….

#ভুলতে_পারব_না_তোকে❤
#Part:10+11
#Writer: Unknown Writer

Part : 10
সাগরের পুরো বাড়িটা উর্মি ঘুরে দেখছিল ঠিক সেই সময় উর্মি দেখল রান্নাঘরে একটি মেয়ে রান্না করছে। উর্মির বেশ কৌতূহল হতে লাগল কে এই মেয়েটি তাই উর্মি মেয়েটিকে শান্ত গলায় বলল
— এই মেয়ে কে তুমি?
নদী পেছন ফিরে তাকাল। আর নদী দেখতে পেল নদীর একদম সামনে উর্মি দাঁড়িয়ে আছে। নদী ভীষণ ঘাবড়ে যায়৷ তবুও নদী উত্তরে বলল
–ম্যাডাম আমার নাম নদী।
নদীর কথা শুনে উর্মি একটু হেসে বলল
–তুমি এই বাড়ির কে হও?
নদী মাথা নিচু করে বলল
–আমি এ বাড়ির কাজের লোক হই।
–ওহ তাহলে শুনো আমার জন্য একটা লেমন জুস বানিয়ে আনো ওকে?
–জ্বি ম্যাডাম।
উর্মি চলে গেল। নদী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উর্মির জন্য লেমন জুস বানাতে লাগল। উর্মি ড্রইং রুমের সোফায় পায়ের উপর পা তুলে স্নেহার সাথে গল্প করছে আর হাসাহাসি করছে। নদী লেমন জুস বানিয়ে টেবিলের উপর রাখল। উর্মি টেবিলে লেমন জুস দেখে জুসটা হাতে নিয়ে মুখে দিতেই মুখটা কেমন ফ্যাকাশে করে ফেলল। উর্মি রেগে সোফায় বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে নদীর মুখে লেমন জুসটা ছুড়ে ফেলে দেয়৷ নদীর সাথে এমনটা হবে নদী কখনো আশা করে নি। নদীর মুখেসহ সারা শরীরে লেমন জুস মাখামাখি করছে। নদীর এখন প্রায় কান্না করে দেওয়ার মতো অবস্থা। উর্মি রাগে দাঁতে দাঁত চেপে চিৎকার করে নদীকে বলল
–হুয়াট রাবিস। এইটা কি জুস বানিয়েছো তুমি?
নদী কাঁপা কাঁপা গলায় বলল
–ম্যাডাম আ আপনি তো বলেছিলেন লেমন জুস বানাতে তাই বানিয়ে আনলাম।
–আরে ইডিয়ট আমি লেমন জুস মধু ছাড়া খাই না। আর তুমি মধুর বদলে চিনি দিয়েছো কোন সাহসে? উত্তর দাও?
নদী এবার কাঁদতে লাগল৷ তখনি রুম থেকে সাগর চিৎকার চেচামেচির আওয়াজ শুনে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসল। সাগর দেখল নদীর পুরো শরীর ভিজে একাকার হয়ে আছে আর নদী কাঁদছে। সাগর এটা দেখে উর্মি ও স্নেহার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
–এখানে কি হয়েছে? নদীর এই অবস্থা হলো কি করে?
তখন স্নেহা সাগরকে রেগে বলল
–দেখ ভাইয়া নদী উর্মি আপুর জুসে মধুর বদলে চিনি দিয়ে দিয়েছে। এই মেয়েটা কত হিংসুটে।
স্নেহার কথা শুনে সাগরের মেজাজ গরম হয়ে গেলে। কোনোরকম নিজের রাগটাকে কনট্রোল করে হাত মুষ্ঠীবদ্ধ করে সাগর স্নেহাকে বলল
–নদী কি জানত যে তোর উর্মি আপুর জুসে মধু লাগে?
তখন উর্মি সাগরকে বলে উঠল
–আমি ওকে বলেছিলাম আমার জন্য লেমন জুস বানাতে…
উর্মিকে বলতে না দিয়ে সাগর বলে উঠল
–তুমি কি নদীকে এটা বলেছিলে যে তুমি জুসে মধু মিশিয়ে খাও?
উর্মি এবার রেগে গিয়ে বলল
–সাগর ভাইয়া তুমি এই কাজের মেয়েটার জন্য আমার সাথে তর্ক করছো?
সাগর শান্ত গলায় উর্মিকে বলল
–তর্ক আমি করছি না বরং তর্ক করছো তুমি। তোমার উচিত ছিল নদীকে জানানো যে তুমি জুসে মধু মিশিয়ে খাও। কিন্তুু নদী ভুলবসত চিনি দিয়েছে বলে তুমি নদীর গায়ে এবাবে জুস ছুড়ে ফেলতে পারো না৷ তোমার সাহস হয় কি করে নদীর গায়ে এভাবে জুস ফেলার?
উর্মি এবার কান্না করে দিয়ে চিৎকার করে বলল
–সাগর ভাইয়া!!!!
–একদম চুপ। নিজে দোষ করে সেই দোষটা অপর মানুষের ঘাড়ে দিতে তোমার লজ্জা করে না?
উর্মি সাগরের কথা সহ্য করতে না পেরে সিঁড়ি বেয়ে উপরে কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল।
উর্মির সাথে সাথে স্নেহাও মুখ ভেংচি কেটে উপরে চলে গেল।
এবার সাগর দেখল নদীর পুরো শরীরে জুস মাখামাখি করছে। নদীর শরীর থেকে এখন লেবুর সুগন্ধ বেরিয়ে আসছে। সাগর নদীর হাত ধরে উপরে চলে যেতে নিলে সামনে রহিমা বেগম হাজির হন। সাগর রহিমা বেগমকে দেখেও না দেখার ভান করে নদীকে নিয়ে উপরে চলে যেতে নিলে রহিমা বেগম বলে উঠল
–দাঁড়া সাগর৷
সাগর দাঁড়াল। রহিমা বেগম সাগরের সামনে গিয়ে দেখল সাগর নদীর হাত চেপে ধরে রেখেছে। এটা দেখে রহিমা বেগম বলল
–তুই এই মেয়ের হাত ধরে কেন রেখেছিস?
সাগর শান্ত গলায় তার মাকে উত্তর দিল
–তা জেনে তোমার কি লাভ মা?
রহিমা বেগম রেগে বলল
–সাগর তুই কি বলছিস ভেবে বলছিস তো?
–এতে ভাবার কি আছে মা। আমি তোমার সাথে পড়ে কথা বলব। এখন আমাকে আমার রুমে যেতে দাও।
–তুই রুমে যাচ্ছিস যা৷ কিন্তু এই মেয়েটাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস?
–কেন মা? নদীকে আমি আমার রুমে নিয়ে যাচ্ছি।
–সাগর তুই…
–তোমার কোনো কথাই আমি শুনতে চাই না মা। সো প্লিজ শুধু শুধু কথা বাড়িও না।
সাগর রহিমা বেগমকে কথাটা বলেই নদীকে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে যেতে লাগল। রহিমা বেগম রাগে আগুন হয়ে আছে। রহিমা বেগম রেগে মনে মনে বলতে লাগল
–তুই একদম ভালো করছিস না সাগর৷ ঐ ছোটলোকের বাচ্চার ভূত তোর মাথা থেকে আমি নামিয়েই ছাড়ব।
.
.
.
সাগর নদীকে নিজের রুমে নিয়ে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল। সাগরের দরজা লাগানো দেখে নদী ভয় পেয়ে গেল। নদী সাগরকে ভয় পাওয়া কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
–স্যার দরজাটা লাগালেন কেন?
সাগর নদীর কোনো কথার উত্তর না দিয়ে নদীকে পা থেকে মাথা অবধি দেখতে লাগল৷ এতে নদীর বেশ অসস্থি হতে লাগল। সাগর পাশের টেবিলে থাকা একটা বড় ফ্লাস্কের পানি নদীর মাথায় ঢেলে দিল। মুহূর্তেই নদী আরো ভিজে টুপটুপ হয়ে গেল। সাগরের এমন কান্ডে নদী অবাক হয়ে ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল। নদী নিজেকে দুই হাত দিয়ে ঢাকার চেষ্টা করতে লাগল। রুমের ফ্লোরে পানির বন্যা বয়ে গেল। কিন্তু সেদিকে সাগরের খেয়াল নেই। সাগর নদীকে দেখতে ব্যস্ত৷ সাগর আলমারি থেকে একটা বড় রুমাল বের করে নদীর মাথা মুছতে লাগল। আর নদী বাচ্চাদের মতো হাঁচি দিতে লাগল। নদী হাঁচি দিতে দিতে সাগরকে জিজ্ঞেস করল
–স্যার আপনি আমার সাথে এমন করলেন কেন? এমনিতেই উর্মি ম্যাডাম আমাকে ভিজিয়ে দিল তারওপর এখন আপনিও আমাকে ভিজিয়ে দিলেন।
সাগর নদীর প্রস্ন শুনে দুষ্টুমি মাখা কণ্ঠে উত্তর দিল
–তোর পুরো শরীর থেকে লেবুর গন্ধ বের হচ্ছিল তা কি তুই জানিস নদী? ইচ্ছে করছিল তোকে লেবুর মতো খেয়ে ফেলি৷ কিন্তু দেখ আমার তো কপাল খারাপ তোকে খেতে পারব না তাই এই লোভটাকে চাপা দিতে তো তোকে আমার গোসল করিয়ে দিতেই হবে। তাই যা ভাবলাম তাই করলাম। এতে কিন্তু আমার কোনো দোষ নেই।
নদীর প্রস্নের উত্তর যে সাগর এভাবে দিবে তা নদীর জানা ছিল না৷ নদী অবাক চোখে সাগরের দিকে তাকিয়ে আছে।
নদীর এমন তাকানো দেখে সাগর নদীকে মুচকি হেসে বলল
–কিরে নদী আমাকে খেয়ে ফেলার প্লেন করছিস নাকি? যেভাবে তাকাচ্ছিস মনে হয় এখনি আমাকে খেয়ে ফেলবি। আমি কিন্তু খাবার হিসেবে এতোটাও তিক্ত হবো না।
সাগরের আবারো অদ্ভুত কথাগুলো শুনে নদীর এবার রাগ হতে লাগল। নদী রাগী দৃষ্টিতে সাগরের দিকে তাকিয়ে বলল
–স্যার আপনি এসব কি বলছেন?
–তুই যা জানতে চেয়েছিলি তাই তো তোকে বললাম। এখন আমার দোষ হয়ে গেল! আমি তোকে সবার অত্যাচার থেকে প্রোটেকট করার ট্রাই করি আর তুই কিনা আমাকে দোষী বানিয়ে ফেলছিস নদী! এটা কি ঠিক?
সাগর নদীর খুব কাছে চলে আসে দেখে নদী ভয়ে পেছনে যেতে গেলে ফ্লোরের পানিতে নদী পা পিছলে পড়ে যেতে নিলে সাগর নদীর কোমড় জড়িয়ে নদীকে একদম নিজের কাছে নিয়ে আসে। নদী ভয়ে এখনো সাগরের শার্ট খামচে ধরে আছে। সাগর এটা দেখে মুচকি হাসল আর নদীর গালে কিস করে দিল। নদী এটার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না। নদী চোখ বড়বড় করে সাগরের দিকে তাকাল৷ নদী দেখল সাগর নদীর চোখের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নদী এটা দেখে চোখ বন্ধ করেই সাগরকে বলে উঠল
–স্যার আমাকে ছাড়ুন।
নদীর কথায় সাগরের ধ্যান ফিরল। সাগর নদীকে ঠিক করে দাঁড় করিয়ে ছেড়ে দিল৷ সাগর নদীর চুল মুছে দিলেও নদীর পুরো শরীরে ভিজে একাকার। নদী পেছন ঘুরে চোখ বন্ধ করে মনে মনে বলল
–আমার পুরো শরীরে এখন ভিজে গেছে। এই অবস্থায় যদি আমি বাইরে বের হই তাহলে বড় ম্যাডাম, স্নেহা আপামনি, উর্মি ম্যাডামের অনেক কথা শুনতে হবে। আমি এখন কি করি? এদিকে স্যারের সামনে দাঁড়াতেও লজ্জা করছে আমার।
সাগর নদীকে হঠাৎ পিছে ঘুরতে দেখে নদীকে বলল
–কি হলো নদী হঠাৎ আমাকে দেখে তোর এতো লজ্জা হচ্ছে! আমার প্রেমে টেমে পড়ে গেলি নাকি?
সাগরের এমন কথা শুনে নদী এবার রেগে দাঁতে দাঁত চেপে ঐ অবস্থায় দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করে বলল
–আমি আছি আমার জ্বালায় আর স্যার আপনি আছেন আপনার রঙিন ভাবনায়। কপাল আমার।
–কি হলো আমাকে কিছু বললি?
–ক কই স্যার! কিছু বলি নি তো। আমি কিছু বলি নি।
সাগর আলমারি থেকে একটা গোলাপি রঙের প্যাকেট বের করে নদীর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল
–যা ওয়াশরুমটা ঐদিকে। এই ড্রেসটা পড়ে আয়।
নদী প্যাকেট খুলে দেখল এখানে একটা লাল রঙের থ্রি পিজ রাখা আছে। নদী সাগরকে জিজ্ঞেস করল
–স্যার এটা আমি পড়ব?
–হুম তোর জন্যই তো কিনেছিলাম। কেন তোর পছন্দ হয় নি?
–পছন্দ হয়েছে স্যার। কিন্তু থ্রি পিজটা দেখে তো মনে হয় অনেক দামি।
–এটা তোর জন্য কিনেছি। এতো দাম বেশী কম আমি বুঝি না। পছন্দ হয়েছিল তাই আগে থেকেই কিনে আলমারিতে রেখেছিলাম। ভেবেছিলাম কোনো একদিন তোকে দিব। কিন্তু আজই দিতে হলো। যা এখন ড্রেসটা পড়ে আয়।
নদীও মুচকি হাসি দিয়ে ড্রেসটা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। সাগর বিছানায় বসে ফোন টিপছিল ঠিক কিছুক্ষণ পর নদী ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো। সাগর হা করে নদীর দিকে তাকিয়ে রইল৷ নদীকে দেখতে লাল পরির মতো লাগছে। মায়াবী চেয়ারায় লাল রঙের জামাটা পড়ে নদীকে যেন আরো মায়াবী লাগছে। সাগর বিছানায় বসা থেকে উঠে নদীর কাছে যায়। সাগর নদীর মাথায় হাত বুলিয়ে মুচকি হেসে বলল
–তোকে দেখতে খুব সুন্দর লাগছে নদী। দেখতে একদম লাল পরীর লাগছে তোকে।
সাগরের কথা শুনে নদী লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলল। কিন্তু নদী এটা ভেবে খুশি হলো জীবনে কেউ তো নদীকে সুন্দর বলেছে। কিন্তু হঠাৎই নদীর মুখে ভয়ের ছাপ দেখা দিল৷ সাগর বুঝতে পারল নদী কোনো কিছু ভেবে খুব ভয় পেয়ে গেছে। সাগর নদীকে তাই জিজ্ঞেস করল
–কি হলো নদী তুই ভয় পাচ্ছিস কেন?
নদী কাঁপা কাঁপা গলায় সাগরকে বলল
–স্যার আ আমি যদি এ এতো দামি জামা পড়ে বা বাইরে বের হই তাহলে ব বড় ম্যাডাম আমাকে আস্ত রাখবে না৷
সাগর নদীর কথা শুনে মলিন হাসি দিয়ে নদীর গালে হাত দিয়ে বলল
–কিছুই হবে না নদী। তুই ভয় পাস না৷ আমি আছি তো তোর পাশে।

#Part:11
নদী বুকে এক বালতি সাহস নিয়ে ঘরের বাইরে বের হলো। নদী দেখতে পেল আশেপাশে কেউ নেই। এটা দেখে নদীর ভয়টাও মন থেকে চলে গেল। কিন্তু যখনই নদী সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে নেয় তখনই নদী দেখতে পায় রহিমা বেগম এখনো নিচে সিঁড়ির কাছে দাঁড়িয়ে আছে। রহিমা বেগম নদীকে পা থেকে মাথা অবধি দেখতে লাগল৷ নদী একটা দামী লাল রঙের জামা পরে রহিমা বেগমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে ভাবতেই রহিমা বেগমের শরীরে যেন আগুন জ্বলছে। নদী ভয়ে কাঁপা কাঁপা পা নিয়ে এক পা দু পা করে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামল। নদী মাথা নিচু করে রহিমা বেগমের সামনে দিয়ে যেতে নেয় ঠিক তখনই রহিমা বেগম নদীকে পেছন দিক দিয়ে পা দিয়ে লেংড়ি মেরে নদীকে ফেলে দেয়৷ নদী হুমড়ি খেয়ে মাটিতে পড়ে।
নদী ব্যথা পেয়ে আহ করে চিৎকার করে উঠলে সাগর রুম থেকে দৌড়ে বের হয়ে দেখে নদী মাটিতে পড়ে আছে। এটা দেখে সাগর তাড়াতাড়ি নিচে নেমে এসে নদীর কাছে এসে নদীকে টেনে তুলে। তারপর সাগর নদীকে জিজ্ঞেস করল
–কি হলো নদী তুই এভাবে নিচে পড়ে গেলি কি করে?
নদী ডান হাতের কনুইয়ে হাত দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল
–স্যার আসলে আমি পা পিছলে পড়ে গিয়েছিলাম।
সাগর রহিমা বেগমের দিকে তাকালে রহিমা বেগম সাগরের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেল।
সাগর বুঝতে পারল নদীর হঠাৎ হুমড়ি খেয়ে পড়ে যাওয়ার পেছনে সাগরের মা আছে। সাগর নদীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল
–নদী তুই তোর ঘরে যা৷
নদীও মাথা নাড়িয়ে চলে গেল।
.
.
.
রাত ১ টা বাজে হঠাৎই বাইরে চিৎকার চেচামেচির আওয়াজ শুনতে পাওয়া যায়। সাগরসহ সবাই রুম থেকে বেরিয়ে নিচে যায়৷ উর্মি চিৎকার করে পুরো বাড়ি ফাটিয়ে ফেলছে। রহিমা বেগম বিচলিত হয়ে উর্মিকে জিজ্ঞেস করল
–কি হয়েছে উর্মি মা তুই এমন চিৎকার করছিস কেন?
উর্মি হাঁপাতে হাঁপাতে রহিমা বেগমকে বলল
–আন্টি আমার রুমে একা একা থাকতে ভীষণ ভয় করে। আমি রুমে একা থাকতে পারব না।
রহিমা বেগম উর্মিকে বলল
–তা বেশ তো স্নেহা তোর সাথে থাকলেই তো হলো উর্মি। তাহলে তো আর কোনো ভয় থাকবে না তোর৷
স্নেহাও রহিমা বেগমের কথায় সাথে সাথে বলল
–হ্যা উর্মি আপু তুমি আমার সাথে আমার রুমে থাকো তাহলে তোমার আর ভয় করবে না।
উর্মি এবার যা বলল তাতে সবাই কিছুটা অবাক হয়ে যায়। আর সাগর তো অবাকের শেষ সীমানায় পৌঁছে যায়৷ উর্মি মাথা নিচু করে সবাইকে বলল
–আমি কারো রুমে ঘুমাব না আমি শুধু সাগর ভাইয়ার রুমে ঘুমাব।
উর্মি এমন কথা শুনে নদীর কেন জানি না খুব কষ্ট হতে লাগল। রহিমা বেগম ও স্নেহা তো উর্মির কথায় খুব খুশি। কিন্তু সাগর রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বলল
–হুয়াট ননসেন্স! কিসব আজেবাজে কথা বলছো তুমি আমার রুমে থাকবে মানে? তুমি কি আমার বিয়ে করা বউ নাকি যে তোমাকে আমি আমার রুমের বিছানায় গিয়ে তুলব?
সাগরের কথা শুনে উর্মি কাঁদতে কাঁদতে রহিমা বেগমকে বলল
–আন্টি সাগর ভাইয়া আমাকে বলছে কেন?আমি সাগর ভাইয়ার রুমে ঘুমাব।
তখনই সাগর বলে উঠল
–ঠিক আছে বেশ তুমি আমার রুমে ঘুমাও আমি আমার রুম থেকে বেরিয়ে যাব৷ নাউ হেপি?
উর্মি এবার সাগরের দিকে কান্নাজড়িত কন্ঠে তাকিয়ে বলল
–না সাগর ভাইয়া তুমি আমার সাথে ঘুমাবে। আমি যেই রুমে থাকব তুমিও আমার সাথে সেই রুমেই ঘুমাবে।
সাগর এবার রেগে উর্মিকে বলল
–আজব তো আমাকে কি তোমার পাগল বলে মনে হয় যে আমি তোমার সাথে একই রুমে ঘুমাব!
তখনই রহিমা বেগম সাগরকে বলল
–থাক সাগর উর্মি যেহেতু তোর সাথে একই রুমে ঘুমাতে চায় তুই বরং রাজী হয়ে যা। উর্মি বিছানায় ঘুমালো আর তুই বরং সোফায় ঘুমিয়ে নিলি তাহলেই তো হলো।
সাগর এবার অবাক হয়ে রহিমা বেগমকে বলল
–মা তুমি এটা বলতে পারলে?
–হ্যা আমি এটা বলতে পারলাম। আর এটাই আমার শেষ কথা। আমি চাই না আমার উর্মির কোনো মন খারাপ হোক।
স্নেহাও সাগরকে বলল
–ভাইয়া তুই আর আপত্তি করিস না। উর্মি আপু তোর রুমেই থাক।
সাগর মনে মনে বলতে লাগল
–এ কোন পাগলের পাল্লায় পড়লাম আমি। এই উর্মি মেয়েটাকে আমার একদম সুবিধার মেয়ে বলে মনে হয় না। এর সাথে আমি এক রুমে ঘুমাব তা অসম্ভব।
সাগর নদীর দিকে তাকিয়ে দেখল নদী একপাশে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। সাগর এটা দেখে মনে মনে বলল
–হ্যা একই রুমে আমি ঘুমাব কিন্তু উর্মির সাথে নয় নদীর সাথে।
সাগর সবাইকে বলে উঠল
–ঠিক আছে উর্মি আমার রুমেই থাকল৷ আমি সোফায় শুয়ে পড়লাম। গুড নাইট।
সাগর নিজের রুমে চলে গেলে উর্মি রহিমা বেগম ও স্নেহার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে সাগরের পেছন পেছন সাগরের রুমে চলে গেল৷ নদী নিজের রুমে গিয়ে মাটিতে বসে কাঁদতে লাগল। নদী কেন কাঁদছে তা নদী নিজেও জানে না কিন্তু তবুও নদীর চোখের জল যেন চোখ দিয়ে পড়ছে তো পড়ছে। নদী মনে মনে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগল
–কেন আমার এতো কষ্ট হচ্ছে? না চাইতেও কেন আমার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে? আমার কেন বুকের ভিতরটা এমন তোলপাড় করছে! স্যারের রুমে উর্মি ম্যাডাম ঘুমাবে তাতে আমার কি! আমার তো কান্না করার কথা নয়।
.
.
.
রাত ৩ টা বাজে। উর্মি সাগরের বিছানায় আরাম করে ঘুমাচ্ছে। কিন্তু সাগরের চোখে ঘুম নেই। সাগর সোফায় বসে গালে হাত দিয়ে বসে আছে। সাগর মনে মনে বলল
–ইচ্ছে করছে এই উর্মি মেয়েটাকে গলা টিপে মেরে ফেলি। কত বড় সাহস এই মেয়ের আমার বিছানায় মনের শান্তিতে ঘুমাচ্ছে! কিন্তু এটাকে এখানে না রাখলে পরিবারে অশান্তি হবে তা আমি চাই না। তাই এই ঝামেলাটাকে নিজের রুমে রাখতে হলো। একদম অসহ্য।
সাগর সোফা থেকে উঠে উর্মির মুখের কাছে এমন একটা স্প্রে করে দেয় যাতে উর্মি ঘুমের দেশে গভীর তলিয়ে যায়। সাগর রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে পেছন ফিরে উর্মির দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল
–বোকা মেয়ে৷ কি ভেবেছিলে তুমি! আমাকে আমার নদীর কাছ থেকে আলাদা করবে এই পদ্ধতি অবলম্বন করে! আমাকে তুমি এখনো চিনো না উর্মি।
সাগর রুম থেকে বেরিয়ে নদীর রুমে গিয়ে দেখল নদী এখনো ঘুমায় নেই। দেয়ালের একপাশে ঘেঁষে মাটিতে হাত পা গুটিয়ে বসে আছে।
সাগর নদীর পাশে হঠাৎ বসলে নদী ঘাবড়ে গিয়ে সাগরকে দেখে দেয়াল ঘেঁষে সাগরের থেকে দূরে সরে যায়৷ নদী ভয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় সাগরকে বলল
— স্যার আ আপনি এখানে?
সাগর একটু মুচকি হেসে নদীকে বলল
–তো কোথাও থাকব শুনি?
–কেন আপনার ঘরে থাকবেন স্যার। উর্মি ম্যাডামের তো ঘরে একা থাকতে ভয় লাগবে।
সাগরের এবার রাগ উঠে গেল। সাগর নদীর কাছে এসে নদীর দু পাশে দেয়ালে হাত রেখে বলল
–তোর কি আমাকে পাগল বলে মনে হয় নদী? আমি ঐ উর্মির সাথে একই রুমে থাকব! আমার দম তো বন্ধ হয়ে যাবে।
ইম্পসিবল। আই কান্ট টেক ইট এনিমোর।
নদী সাগরের ইংরেজির মানে বুঝল না৷ তাই নদী সাগরকে জিজ্ঞেস করল
–স্যার আপনি কি বললেন ঐটা?
সাগর বুঝল নদী বুঝতে পারে নেই। তাই সাগর নদীকে বলল
–অসম্ভব আমি তা মেনে নিতে পারব না নদী। তোকে ছাড়া থাকতে আমার ভীষণ কষ্ট হয়। চল না আমরা দূরে কোথাও পালিয়ে বিয়ে করে ফেলি যেখানে কেউ থাকবে না।
সাগরের কথা শুনে নদী সাগরকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিয়ে বলল
–তা হয় না স্যার। কোনোদিনও হয় না। আমি একটা কাজের মেয়ে। আর কাজের মেয়ের সাথে আপনার মতো বড়লোক ছেলের কখনো মিলে না৷ আমার আর আপনার মাঝে আকাশ পাতাল তফাৎ স্যার। আপনি বিদেশ থেকে পড়াশোনা করে আসা কতো জ্ঞানী মানুষ। আর আমি তো কোনোদিন ইস্কুল কি জিনিস তাই জানি না। এটা সম্ভব না স্যার। আপনি এসব কথা ভুলে যান।
সাগর নদীকে একটান দিয়ে নিজের বুকের উপর ফেলে জড়িয়ে ধরে বলল
— কিন্তু আমি যে তোকে চাইলেও ভুলতে পারব না নদী। ভালোবাসা কি ভুলে যাওয়া যায় নদী? চাইলেও কি তা সম্ভব?
নদীর কাছে এর কোনো উত্তর নেই৷ সাগর নদীকে এভাবে জড়িয়ে ধরে আছে দেখে নদী সাগরের কাছে ছুটতে চাইলে সাগর নদীকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। নদী এবার কাঁদতে লাগল। নদীর চোখের পানি সাগরের বুকে গিয়ে স্পর্শ করল। সাগর বুঝতে পারল নদী কান্না করছে তাই সাগর নদীকে আরো শক্ত করে চেপে ধরল নিজের বুকের মাঝে। নদী সাগরের বুকে মাথা রেখে কাঁদতে কাঁদতে বলল
–স্যার আমাকে আপনি ছেড়ে দিন। আপনি আমাকে ভালোবাসলেও আমি আপনাকে ভালোবাসি না৷
সাগর রেগে গিয়ে নদীকে বলল
–কি বললি তুই?
–আমি আপনাকে ভালোবাসি না স্যার৷
সাগর রেগে নদীকে ছেড়ে দিয়ে নদীর হাত ধরে টেনে নদীকে বিছানায় ফেলে নদীর দুই হাত চেপে ধরে বলল
–আরেকবার বল তুই নদী কি বললি তুই?
নদী এবার সাগরের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখল সাগরের চোখ লাল হয়ে আছে। সাগরকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে সাগর ভীষণ রেগে আছে। নদী এবার ভীষণ ভয় পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল
–স্যার আমাকে আপনি ছেড়ে দিন।
–আগে বল তুই একটু আগে কি বললি? আমার ভালোবাসা কি তোর চোখে পড়ে না নদী!



চলবে,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে