ভুলতে পারব না তোকে পর্ব-২০

0
938

#ভুলতে_পারব_না_তোকে❤
#Part:20
#Writer: Sabbir Ahmmed

নদীর কথা শুনে সাগর হাসতে লাগল৷ সাগর এভাবে হাসছে কেন নদী বুঝতে পারল না। নদী শুধু বোকার মতো সাগরের দিকে তাকিয়ে রইল। নদীর কিছুটা রাগ হচ্ছে। রেগে গিয়েই নদী সাগরকে জিজ্ঞেস করল
–স্যার আপনি হাসছেন কেন?
সাগর হাসি থামানোর চেষ্টা করে নদীকে বলল
–কই হাসছি নাতো।
–এইতো আপনি হাসছেন।
–নারে নদী আমি হাসছি না। এবার বাসায় চল।
সাগর নদীর হাত ধরে বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্য হাঁটতে লাগল। বাড়ির ভিতরে ঢুকেই সাগর দেখতে পেল রহিমা বেগম, উর্মি এখনো ঘুমায় নি। তাদের দু জনেরই মন খারাপ। স্নেহাকে সাগর কোথাও দেখতে পেল না। স্নেহা হয়ত নিজে নিজের ঘুমাচ্ছে। সাগর কোনো কথা না বলে নদীকে নিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতে নিলেই রহিমা বেগম গম্ভীর স্বরে বলে উঠলেন
–দাঁড়া সাগর।
সাগর নদীকে নিয়ে ঢুকতে নিয়েও ঢুকল না। রহিমা বেগম সাগরের সামনে এগিয়ে এসে দাঁড়িয়ে বলল
–তুই ঢুকতে পারবি বাবা। কিন্তু এই মেয়ের এ বাড়িতে জায়গা নেই।
সাগর রহিমা বেগমকে শান্ত গলায় বলল
–কিন্তু কেন মা? আমি যদি বাড়ির ভিতরে ঢুকতে পারি তাহলে নদী কেন ঢুকতে পারবে না?
রহিমা বেগম এবার বেশ রাগী গলায় সাগরকে বলল
–ঢুকতে পারবে না মানে ঢুকতে পারবে না। তুই ঘরের ভিতর আয় বাবা৷ এই হারামজাদির হাত ছেড়ে দে।
–আমি মরে গেলেও নদীর হাত ছাড়তে পারব না মা।
–সাগর তুই কিন্তু বেশী বাড়াবাড়ি করছিস।
তখন উর্মি সোফায় বসা থেকে উঠে এসে সাগরের সামনে এসে নদীর দিকে একবার তাকিয়ে সাগরের দিকে তাকিয়ে বলল
–কি আছে এই মেয়ের মধ্যে যার কারণে তুমি আমায় চোখে দেখতে পাও না?
সাগর একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে উর্মিকে বলল
–তোমার সব থাকলেও তুমি কখনো নদী হতে পারবে না।
উর্মি রেগে চিৎকার করে সাগরকে বলল
–সাগর তুমি কিন্তু এই কাজের মেয়ের সাথে আবারো তুলনা করে আমাকে অপমান করছো!
–তোমায় আমি অপমান করলে করলাম। আই ডোন্ট কেয়ার।
সাগর কারও কোনো কথা না শুনে সোজা বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে নদীকে সোজা সাগরের রুমে নিয়ে যেতে নিলে রহিমা বেগম সাগরকে বলল
–সাগর আমি বারণ করা সত্তেও তুই এই মেয়েকে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করিয়েছিস। আবার ওকে নিয়ে উপরে কোথায় যাচ্ছিস?
সাগর পেছনে ফিরে রহিমা বেগমকে বলল
–মা আজ থেকে নদী আমার ঘরে থাকবে। তুমি উর্মির জন্য অন্য একটা রুম চুজ করে নাও।
সাগরের এই কথা শুনে নদী সাগরের হাত নিজের হাত থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলল
–স্যার আপনি এসব কি বলছেন? আমি কেন আপনার ঘরে থাকতে যাবো?
সাগর একটা মুচকি হাসি দিয়ে নদীর দিকে তাকিয়ে বলল
–হ্যা আজকে থেকে তুই আমার ঘরেই ঘুমাবি সুইটহার্ট।
–না স্যার এটা হতে পারে না।
–এটাই হতে পারে।
সাগর কথাটা বলেই নদী হাত ধরে টানতে টানতে সিঁড়ির উপরে নিয়ে যেতে লাগল। সাগর নিজের ঘরে নদীকে নিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। রহিমা বেগম ও উর্মির মাথা যেন ঘুরতে লাগল। সাগর যে এমনটা করবে ওদের ধারণা ছিল না।
.
.
.
এদিকে সাগর এভাবে ঠাসস করে দরজা লাগিয়ে দেওয়াতে নদীর ভয়ে হাত পা কাঁপা কাঁপি করছে। নদী মনে মনে বলতে লাগল
–ধুর কি যে করলাম। কেন যে স্যারকে ঐ সময় জড়িয়ে ধরতে গেলাম। এবার বুঝো ঠেলা। আমার অবস্থাই এখন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। স্যার এখন আমার জন্য বেশী পাগলামি করছে।
সাগর দরজা লাগিয়ে নদীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিল। নদীও একটা হাসির ভান করে হাসি দিল।
–কি ম্যাডাম আপনার ভয় লাগছে আমাকে দেখে?
সাগরের মুখে আপনি আবার ম্যাডাম ডাক শুনে নদীর চোখ বড়বড় হয়ে গেল। নদী হয়তো ভাবে নি সাগর তাকে আপনি করেও বলবে। নদী কষ্ট করে মুচকি হেসে সাগরকে বলল
–স্যার আমি নদী। আপনি কি ভুলে গেছেন?
সাগর নদীর দিকে এগোতে এগোতে বলতে লাগল
–তোকে আমি কি করে ভুলে যাই নদী। আমি যে তোকে ভুলতে পারি না
নদী পিছাতে পিছাতে সাগরকে বলল
–ওহ ভালো স্যার।
–কিসের ভালো?
–না না না স্যার কিছু না।
–আমাকে দেখে কি তোর ভয় লাগছে?
–স্যার সত্যি কথা বলব?
–হ্যা বল।
–আমার আপনাকে এখন খুব ভয় লাগছে।
–তাই বুঝি? খুব ভয় লাগছে?
সাগর নদীর একদম কাছে চলে আসে। নদীর পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। সাগর নদীর দু পাশে দুই হাত নদীর একদম কাছে দাঁড়িয়ে আছে।
নদী ভয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। নদী চোখ বন্ধ করে সাগরকে বলল
–স্যার আমি আমার ঘরে যাবো। আমাকে আমার ঘরে যেতে দিন।
–তা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এখন থেকে তুই আমার ঘরেই থাকবি।
সাগরের এমন কথা শুনে নদী চোখ খুলে সাগরের দিকে তাকিয়ে বিচলিত কন্ঠে বলল
–স্যার এটা অন্যায়। এটা হতে পারে না।
–তোকে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুই তা হতে দিলি না। তাই আমি নিরুপায় নদী।
নদী রাগী গলায় সাগরকে বলল
–আমি আপনার ঘরে থাকবো না স্যার। কিছুতেই না। আমাকে যেতে দিন।
নদী সাগরকে কথাটা বলেই যেতে নিলে সাগর নদী দেয়ালের সাথে দুই হাত চেপে ধরে। নদী হাতে ব্যথা পেয়ে চোখ বন্ধ করে আহ্ বলে চিৎকার করে উঠে। সাগর রেগে দাঁতে দাঁত চেপে নদীকে বলল
–যাওয়ার চেষ্টা ভুলেও করবি না নদী। আমার কাছ থেকে তোকে আমি কোথাও যেতে দিব না।
–স্যার আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন?
–হ্যা আমি তো পাগলই হয়েছি। কেন? এটা কি নতুন করে তোকে বুঝাতে হবে?
–স্যার আমার পায়ে ব্যথা করছে। আমি কি একটু বসতে পারি?
নদীর কথা শুনে সাগরের রাগ কমে গেল। সাগর নদীর কথা শুনে নদীর হাত ধরে টেনে নদীকে বিছানায় বসাল। নদী গাল ফুলিয়ে বসে আছে। সাগর মুচকি হেসে নদীকে বলল
–সারাদিন কিছুই খেলি না। কিছু খাবি?
–না আমি কিছু খাবো না স্যার।
–পানিও খাবি না?
নদীর গলা পানির পিপাসায় শুকিয়ে যাচ্ছে। নদী অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে সাগরকে বলল
–স্যার আমার সত্যি খুব পানির পিপাসা পেয়েছে।
–তাই বুঝি?
–হ্যা স্যার খুব পানির পিপাসা পেয়েছে। স্যার আমি পানি….
নদীকে কিছু বলতে না দিয়ে হঠাৎই সাগর নদীর দুই হাত বিছানায় চেপে ধরে নদীর ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিল। ঘটনাটা এতোই তাড়াতাড়ি ঘটে যে নদী পাথর হয়ে যায়। নদী চোখ বন্ধ করে সাগরকে ছাড়াতে চায় কিন্তু ছাড়াতে পারে না। যখন সাগর নদীর ঠোঁট ছাড়ে তখন নদী ধাক্কা দিয়ে সাগরকে নিজের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে উঠে বসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল
–অসভ্য ছেলে এই তোর পানি দেওয়ার নমুনা।
সাগর উঠে দাঁড়িয়ে মুচকি হেসে নদীকে বলল
–এখনো কি পানির পিপাসা আছে নদী?
–স্যার আপনি কিন্তু…
–একটু আগেই তো তুই করে বলে অসভ্য বললি। এখন আবার স্যার!
–আপনি একটা অসভ্য ছেলে।

.
.
.
সাগর মুচকি হেসে ঘরের দরজা খুলে চলে গেল। আর নদী নিজের ওড়না দিয়ে ঠোঁট ভালো করে মুছতে লাগল। কিন্তু তাও কেমন যেন একটা অসস্থি লাগছে নদীর কাছে।
সাগর কিচেনে নদীর জন্য খাবার আনতে গেলে রহিমা বেগম সেটা দেখতে পেয়ে যায়৷ কারণ রহিমা বেগম না ঘুমিয়ে সোফায় বসে ছিলেন। রহিমা বেগম রাগী গলায় সাগরকে বলল
–তুই নদীর জন্য কোনো খাবারই নিয়ে যেতে পারবি না সাগর।
–মা তুমি সবসময় নদীর সাথে এমন করো কেন বলতে পারো?
–ঐ হারামজাদিকে আমি সহ্য করতে পারি না তাই এমন করি। আর সাগর তোকে একটা কথা বলতে চাই।
–কি কথা মা?
— কাল তোর বাবা বিদেশ থেকে দেশে ফিরছে।
–ওহ ভালো।
–সাগর তোর বাবা দেশে ফিরছে তুই খুশি হোস নি?
–খুশি হয়েছি কিনা জানি না।
সাগর নদীর জন্য খাবার হাতে নিয়ে চলে যেতে নিলে রহিমা বেগম আবারো সাগরকে বলল
–সাগর আমি কিন্তু তোকে বারণ করেছি।
সাগর পিছে ফিরে রহিমা বেগমকে বলল
–আমি কারও বারণ শুনতে বাধ্য নই মা। আমি আমার মতো চলতেই পছন্দ করি। আমাকে আমার কাজে বাঁধা দিও না।





#চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে