ভুলতে পারব না তোকে পর্ব-০২

0
1065

#ভুলতে_পারব_না_তোকে❤
#Part:02
#Writer: Unknown Writer

নদী কফি হাতে নিয়ে সাগরের রুমে গেল। কিন্তুু আশেপাশে সাগরকে কোথাও খুঁজে পেল না। নদী আর কিছু না ভেবে টেবিলে কফির মগটা রাখতে নেওয়ার আগেই কেউ দরজাটা ঠাসস করে বন্ধ করে দিল। নদীর ভয়ে বুকটা কেঁপে উঠল৷ কোনোরকম কফির মগটা টেবিলে রেখে পেছনে তাকানোর আগেই কেউ নদীকে হেঁচকা টান দিয়ে বিছানার উপর ফেলে দেয়৷ নদী ভয়ে চোখ বন্ধ করে নেয় কিন্তুু একটুপরেই চোখ খুলে দেখল সাগর নদীর দুই হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে নদীর উপর ঝুকে নদীর দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নদী সাগরকে হঠাৎ দেখে ভয়ে চিৎকার করতে নিলে সাগর নদীর ঠোঁট ডান হাত দিয়ে চেপে ধরে।সাগর শান্ত গলায় নদীর দিকে তাকিয়ে বলল
–চুপ একদম শব্দ করবি না।
–উমমমমমম
–বললাম না একটা শব্দও করবি না।
সাগর নদীর কপালের কাঁটা জায়গায় আলতো করে চুমুর স্পর্শ দিল৷ নদী এখনো ভয়ে কেঁপে উঠছে। সাগর নদীর মুখটা এখনো চেপে ধরে রেখেছে। এমনিতেও নদী সাগরকে খুব ভয় পায়। তাই ভয়ে সাগরের সাথে জোরাজুরিও করছে না। সাগর নদীর বাম গালে গভীর চুমু
দিয়ে বলল
–তোকে এই গালে খুব ব্যথা দিয়েছি তাই না নদী? কি করব বল তখন আমার কি যে হয়েছিল আমি নিজেও জানি না। ঐ সময় মাকে বুঝানো দরকার ছিল যে আমি তোকে সহ্য করতে পারি না। তাই এমনটা করেছি।
সাগর নদীর গালে আলতো করে হাত বুলাতে বুলাতে বলল
–তোর গালটায় খুব জোরে মেরেছি তাই না? আমাকে তুই ক্ষমা করে দে নদী।
–উমমমমমমম
সাগর নদীর ঠোঁটটা ডান হাত দিয়ে চেপে ধরে রেখেছিল যার ফলে নদী কিছু বলতে পারছিল না৷ তাই সাগর নদীর ঠোঁট থেকে হাত সরিয়ে নেয়। নদী এবার ঠোঁট ছাড়া পেয়ে সাগরকে আস্তে করে বলল
–স্যার আমাকে যেতে দিন৷ বড় ম্যাডাম আমাকে না পেলে খুব বকা দিবে।
–যদি তোকে না যেতে দেই তাহলে তুই কি করবি নদী?
–স্যার দয়া করে আপনি এমন করবেন না। আমাকে যেতে দিন। আমার বাসার অনেক কাজ পড়ে আছে।
নদীর কথা শুনে সাগর নদীর উপর থেকে সরে যায়। নদী বিছানা থেকে নেমে চলে যাচ্ছিল ঠিক তখনি সাগর নদীর হাতটা আবার চেপে ধরে নদীকে একদম নিজের কাছে নিয়ে আসে। নদী কাঁপা কাঁপা গলায় সাগরকে বলল
–স স্যার আবার কি হলো?
–তোর কপাল থেকে রক্ত পড়ছে সেই খেয়াল কি তোর আছে? অবশ্য আমার জন্যই তো এমনটা হলো।
সাগর নদীকে বিছানার একপাশে বসিয়ে নদীর কপালে মলম লাগাতে থাকে। নদী ব্যথা সহ্য করতে না পেরে আহ্ করে উঠে। নদীর চোখ দিয়ে আবারো জল গড়িয়ে পড়ছে। সাগর নদীর কপালে মলম লাগানো শেষ হলেই নদীকে বলে উঠল
–এবার এখান থেকে যা।
নদী এবার দৌড়ে সাগরের রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেল।
সাগর বিছানার দুপাশে হাত রেখে বসে আছে। মাথাটা নিচু করে সাগর আনমনে কিছু ভাবছে। কিন্তুু যা ভাবছে তার মানে সাগর নিজেও জানে না।
.
.
.
নদী বাথরুমে অনেকগুলো কাপড় নিয়ে বসেছে। কাপড় কাচতে কাচতে নদীর হাত ব্যথা হয়ে গেছে। কিন্তুু তবুও নদীকে এই কাপড়গুলো কাচতেই হবে। যতই হোক নদী যে সাগরের বাসার কাজের মেয়ে। নদী মনে মনে বলল
–আমার কপালে আর কি লেখা আছে তা আমি জানি না। কিন্তুু এতো কাজ কর্ম করতে করতে আমি যে ক্লান্ত হয়ে পড়ছি৷ মা! বাবা! কেন তোমরা আমাকে নিজের স্বার্থে এদের কাছে বিক্রি করে দিলে। সামান্য বিশ হাজার টাকার বিনিময়ে তোমরা আমাকে কেন বিক্রি করে দিলে! আমি যে আর এতো কষ্ট নিতে পারছি না৷
নদী হঠাৎই মনে পড়তে লাগল সাগরের দেওয়া সেই কপালে, গালের চুমুর স্পর্শের কথা। সাবান ফেনা হাতেই নদী নিজের গালে কপালে হাত দিতে লাগল৷ নদী আবারো মনে মনে বলল
–আচ্ছা স্যারকে আমি ঠিক বুঝতে পারি না। এই আমাকে মারলেন আবার এই আমাকে আদর করে দিলেন। স্যারের মাথা ঠিক আছে তো! আমার মতো কাজের মেয়ের জন্য উনার এতো দরদ ঠিক না।
নদী এসব ভাবছিল কিন্তুু হঠাৎই সাগরের ছোট বোন স্নেহা চিৎকার করে নদীকে ডাকতে লাগল
–নদী???এই নদী???কোথায় তুই??? আরে হারামজাদি এদিকে তাড়াতাড়ি আয়। আমার বিছানার চাদর এখনো পাল্টে দিস নি কেন? আরে এই নদী???
স্নেহার এমন চিৎকার শুনে নদী কাপড় কাঁচা বন্ধ করে হাত ধুয়ে দৌড়ে স্নেহার ঘরে গেল। নদী কাঁপা কাঁপা গলায় বলল
–জ্বি আপামনি বলেন…
নদী এতটুকু বলতেই ঠাসস করে নদীর গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিল স্নেহা। নদী গালে হাত দিয়ে কান্নামাখা চোখে স্নেহার দিকে তাকিয়ে থাকে।
স্নেহা রেগে চিৎকার করে নদীকে বলল
–ছোট লোকের বাচ্চা তোর এতক্ষণ লাগে আসতে? আমি কতক্ষণ ধরে ডাকছি তোর কি কানে যায় না?
নদী কাঁদতে কাঁদতে স্নেহাকে বলল
–আসলে আপা মনি আমি কাপড় ধুচ্ছিলাম তাই আসতে দেড়ি হয়ে যায়।
–ওয়াও এখন ন্যাকা কান্না জুড়ে দিয়েছিস দেখছি। এসব ন্যাকা কান্না অন্য কাউকে দেখা কিন্তুু এই স্নেহা চৌধুরীকে না। এখন যা আমার বিছানা ঠিক করে দে।
নদী এবার চুপচাপ স্নেহার বিছানার চাদর বদলে দিল। এবং ঘরটাও গুছিলে দিল৷
কিন্তুু ঘরের আড়াল থেকে কেউ হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে সব শুনছিল।




#চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে