ভুলতে পারব না তোকে পর্ব-০১

0
1838

#ভুলতে_পারব_না_তোকে❤
#Part:01
#Writer: Unknown Writer

–একি! ছিহ্ ছিহ্ ছিহ্! সাগর তুই একটা কাজের মেয়ের এঁটো খাবার খাচ্ছিস! পাগল হয়ে গেলি তুই?
সাগরের মায়ের কথায় সাগর চমকে উঠল। এতক্ষণ সাগর নদীর এঁটো খাবার লুকিয়ে লুকিয়ে খাচ্ছিল আর যেটা এখন সাগরের মা রহিমা বেগম দেখে ফেলে৷ সাগর এখন তার মাকে কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। সাগর আমতা আমতা করে তার মাকে বলল
–না মানে মা আমি আসলে ভেবেছিলাম….
সাগরকে বলতে না দিয়ে রহিমা বেগম রেগে সাগরকে বলল
–কি ভেবেছিলি তুই? ছিহ্ সাগর তুই বিদেশ থেকে পড়াশোনা করে এই শিখে এলি?
–মা আমি আসলে ভেবেছিলাম এটা তোমার এঁটো খাবার। আর আমার যেহেতু বড্ড খিদে পেয়েছিল তাই আমি তোমার খাবার ভেবে খাবারটা খাচ্ছিলাম।
–সাগর আমি কি এই ভাঙা প্লেটে খাবার খাই? মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোর?এটা নদী খাবারের প্লেট। আর এই নদী মেয়েটাই বা কেমন! ওর এতো বড় সাহস রান্নাঘরে এঁটো খাবারের বাটি রেখেই চলে গেলো! নদী!!! এই নদী!!! কই গেলি তুই!!! হারামজাদি গেলো কোথায়??
রহিমা বেগম চিৎকার করে নদীকে ডাকতে লাগল। রহিমা বেগমের এমন চিৎকার শুনে নদীর আত্মা কেঁপে উঠল৷ নদী দৌড়ে রুম ঝাড়ু দেওয়া বাদ দিয়ে রান্নাঘরে চলে যায়। নদী রান্নাঘরে গিয়েই দেখল রহিমা বেগম এবং সাগর দুজনেই দাঁড়িয়ে আছে। সাগর মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। আর রহিমা বেগম রক্ত লাল চোখে নদীর দিকে তাকিয়ে আছে। রহিমা বেগম এগিয়ে এসে নদীর চুলের মুঠি ধরেই বলে উঠল
–হারামজাদি! নবাবের বেটি সাজতে মন চায় তোর? আমার ছেলেকে তুই তোর এঁটো খাবার খাওয়াতে চাস! তোকে তো আমি..
রহিমা বেগম নদীর গালে থাপ্পড় মারতে গেলে সাগর রহিমা বেগমের হাত ধরে ফেলে। রহিমা বেগম তার ছেলের কান্ডে অবাক হয়ে যায়৷ রহিমা বেগম রাগী গলায় সাগরকে বলল
–সাগর তুই এই কাজের মেয়েটার জন্য আমার হাত ধরলি? তুই তোর নিজের মায়ের হাত ধরলি! তাও এই কাজের মেয়েটাকে থাপ্পড় মারছি বলে!
–মা আমি মানছি ও আমাদের বাসায় কাজ করে। কিন্তুু তাই বলে তুমি ওকে এভাবে কাজের মেয়ে বলে অপমান করতে পারো না।
–বাহ বাহ বাহ৷ আমার ছেলে দেখছি তার মায়ের সাথে তর্ক করছে৷ এখন মনে হচ্ছে তোকে ছোটবেলায় লেখাপড়ার জন্য বিদেশ পাঠানোই আমার ভুল হয়েছে।
নদী দাঁড়িয়ে থেকে নিঃশব্দে চোখের জল ফেলছে। কিন্তুু হঠাৎই নদীকে অবাক করে দিয়ে সাগর নদীর কাছে এগিয়ে এসে নদীর গালে কষিয়ে ঠাসস করে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। থাপ্পড়টা এতো জোরেই মারা হয় যে নদী মাটিতে ছিটকে পড়ে দেয়ালে মাথায় আঘাত পায়। নদী সাথে সাথে আহ্ বলে চিৎকার করে উঠে৷ নদী এবার শব্দ করেই কেঁদে দেয়। সাগর এবার একটা শয়তানি হাসি দিয়ে তার মাকে বলল
–মা তুমিও না কি যে বলো! এই কাজের মেয়েটার জন্য আমি তোমার মনে আঘাত করব তা কি হয় বলো? আমি তোমার ছেলে মা তুমি কি করে ভুলে যাও। আমি তো এতক্ষণ তোমার সাথে মজা করছিলাম মা। আমি ভুল করে তোমার খাবার ভেবে এই কাজের মেয়ের খাবার খেয়ে ফেলেছি।
সাগরের কথা শুনে রহিমা বেগমের খুশি ধরে রাখে কে। রহিমা বেগম খুশি হয়ে তার ছেলেকে বলল
–এই নাহলে আমার ছেলে। আমিতো ভেবেছিলাম আমার ছেলে হঠাৎ করে এই কাজের মেয়ের খাবার কেন খেতে যাবে! তুই ভুল করে খেয়ে ফেলেছিস এবার আমি বুঝতে পেরেছি বাবা।
সাগর তার মাকে জড়িয়ে ধরে বলল
–লাভ ইউ মা। অবশেষে আমাকে বুঝার জন্য।
–লাভ ইউ টু আমার সোনা ছেলে।
–মা আমি এখন আমার ঘরে যাই৷ আর এই কাজের মেয়েটাকে বলো আমার জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে আসতে।
কথাটা বলেই সাগর রান্নাঘর থেকে চলে গেল। নদী সাগরকে ঠিক চিনতে পারল না। নদী কাঁদতে কাঁদতে মনে মনে বলল
–একটু আগেই তো স্যার আমার হয়ে কথা বলছিল হঠাৎ করেই কি করে নিজেকে বদলে ফেললেন উনি? আসলে আমার মতো গরীব কাজের মেয়ের পাশে কেই বা দাঁড়াবে! আমি যে সম্পূর্ণ একা। আমার নিজের মা বাবাও পেটের খিদে মেটাতে আমাকে এদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। জীবনটা আসলেই অনেক দুঃখের।
নদী মাটিতে বসে এসব ভাবছিল হঠাৎ করেই রহিমা বেগম চিৎকার করে নদীকে বলল
–কিরে হারামজাদি এভাবে বসেই থাকবি নাকি আমার ছেলের জন্য কফি বানাবি?
নদী বসা থেকে অনেক কষ্টে উঠল৷ মাথায় হাত দিয়েই রহিমা বেগমের দিকে হাসিমাখা মুখ করে তাকিয়ে বলল
–এইতো বানাচ্ছি বড় ম্যাডাম। আপনি চিন্তা করবেন না। এখনি কফিটা বানাচ্ছি।
রহিমা বেগম আর কিছু না বলে চলে গেল৷ নদী কফি বানাচ্ছে আর কাঁদছে। নদীর চোখের জল কফির কাপেও দু এক ফোঁটা পড়ে যায়৷ কিন্তুু সেদিকে নদীর খেয়াল নেই।



#চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে