ভিলেনি ভালোবাসা পর্ব-১১

0
827

#ভিলেনি_ভালোবাসা
পার্টঃ ১১
লেখিকাঃ #তিথি_সরকার

আজ সকালে তুলির বিয়ে। বিয়েটা ঘরোয়া ভাবে হলেও আতিথীয়তায় কোনো কমতি রাখবেন না তুলির বাবা। তাই আজকে অনেক পদের রান্না করা হয়েছে বাড়িতে তুলির বিয়ের উপলক্ষে।

তুলি কে বউয়ের সাজে সাজানো হয়েছে। লাল বেনারসি শাড়ি মাথায় আলাদা লাল ওরনা গা ভর্তি গহণা আর হালকা মেকআপ কারণ তুলি বেশি সাজ পছন্দ করে না। এতেই তুলি কে অসাধারণ পরির মতো লাগছে।


নীরব দের বাসার সবাই চলে এসেছে। নীলা এসেই সোজা তুলির সাথে দেখা করতে চলে গেছে।
নীলা তুলির ঘরে গিয়ে দেখে তুলি বিছানায় বসে কি যেনো ভাবছে।
কিরে কি এত ভাবছিস?
তুলি বললো কিছু না আয় বোস।
তুই আমার ভাইয়ের বউ হবি ভাবতেই কেমন যেনো খুশি খুশি লাগছে তুলি কে জড়িয়ে ধরে বললো নীলা কথাটা।
তখনি তুহিনের বোনেরা তুলির ঘরে আসে তুলি কে নিচে নিয়ে যাওয়ার জন্য। ওরা এসেই বললো পুরো পুতুলের মতো লাগছে তোমাকে।
তুলি হালকা হেসে ওদের বললো তুহিন ভাইয়া কোথায়?
ওদের মধ্যে একজন বললো ভাইয়া তো বাসায় নেই সে তো তিয়াশ ভাইয়ার সাথে আছে। বাবা ডেকেছে তাই।
নিচের থেকে আবার ডাক আসলে সবাই মিলে তুলি কে নিচে নিয়ে যায়।

নিচে নেমে দেখে নীরব নীরবের বাবা মা সবাই বসে আছে বসার ঘরে। এমনকি নীলিমা রাও আছে। আরো অনেকে আছে কিন্তু তাদের কাউকেই তুলি চিনে না। পাশে তাকিয়ে দেখে সাদা পাঞ্জাবী পরা দাড়ি ওয়লা একজন খাতায় কি যেনো লিখছেন। তুলির বুঝতে অসুবিধা হলো না যে উনিই কাজী। যিনি আজ তুলি আর নীরবের বিয়ে পড়াবেন। তুলির ভিতর থেকে ছোটো একটি দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।

তুলি কে দেখে নীরব হা হয়ে রয়েছে। তুলির থেকে চোখ ই যেনো সরছে না নীরবের। নীরব মনে মনে বললো আজ থেকে তুমি চিরদিনের জন্য আমার হয়ে যাবে তুলি তখন আর তোমাকে আমার থেকে কেউ চাইলেও আলাদা করতে পারবে না।
এসব ভাবতে ভাবতেই তুলির মা তুলি কে নিয়ে নীরবের পাশে বসালো।
নীরবের বাবা বললো আগে খাতা কলমে বিয়ে টা হয়ে যাক তারপর কবুল বলে হবে কি বলো বন্ধু।
তুলির বাবা ও বললো হুম ঠিক আছে।
তখনি কাজী সাহেব বললেন তাহলে বিয়ের কাজ শুরু করা যাক এই বলেই নীরবের দিকে খাতা টা আর কলম টা এগিয়ে দিলেন।
নীরব তুলির দিকে এক পলক চেয়ে খাতায় সই করে দিলো।
এবার তুলির পালা।
তুলি সই করার জন্য কলম নিয়ে কিছু একটা ভাবছে ভাবতে ভাবতেই চোখ দিয়ে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো তুলির গাল বেয়ে।
তুলির মা ইশারা করতেই তুলি ও সই করার জন্য খাতায় কলম ঠেকালো তখনি গুলির আওয়াজে থমকে গেলো তুলি।
তুলি পাশে তাকাতেই দেখে নীরব এর হাত বেয়ে রক্ত পড়ছে। তুলি ভয়ে মুখে হাত দিয়ে রয়েছে। সারা শরীর ভয়ে ঠান্ডা হয়ে গেছে তুলির। ভয়ে হাত পা কাপাকাপি অবস্থা তুলির।

সবাই সামনে তাকাতেই দেখে তিয়াশ দাড়িয়ে আছে পিস্তল হাতে নিয়ে আর তার পিছে কালো পোশাক পরিহিত অনেক গুলো লোক যাদের দেখতে বডিগার্ড দের মত লাগছে। আর তিয়াশ এমন ভাবে দাড়িয়ে আছে যেনো কিছুই হয়নি এখানে।
ভয়ে কারো মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না।

তিয়াশ তুলির কাছে এসে একটু ঝুঁকে বললো বিয়ে করার খুব শখ হয়েছে তোমার তাই না জান। কথাটা খুবি নরম গলায় বললো যাতে তুলি আরো বেশি ভয় পেয়ে গেলো কারণ তুলির কাছে এটা বড় কোনো ঝড় আসার পূর্বাভাস মনে হচ্ছে।

তিয়াশের বাবা তেড়ে এসে তিয়াশ কে বললেন এসব কি তিয়াশ? তুমি রাজনীতি করতে করতে এতোটা নিচে নেমে গেছো যে একটা নিরপরাধ ছেলেকে গুলি মারতে তোমার একটুও হাত কাপলো না। আর এসব করলেই বা কেনো উত্তর দাও আমায় রেগে গিয়ে বললেন তিয়াশের বাবা।

তোমরা আমায় না জানিয়ে আমার তুলির বিয়ে দিয়ে দিবে আর আমি জেনেও চুপ করে থাকবো ভাবলে কি করে। আর কেনো এসব করছি তা তো ছোটো কাকা খুব ভালো করেই জানে। বলেই রাগী চোখ নিয়ে তুলির বাবার দিকে তাকায় তিয়াশ। তুলির বাবা কিছু না বলে মাথা নিচু করে নেয়।
কথার মাঝেই নীরবের মা বলে উঠলো সব কিছু পরে হবে আগে আমার ছেলেটাকে হাসপাতালে নিয়ে চলো কান্না করতে করতে বললো নীরবের মা কথাটা।
নীরব ও বলে উঠলো আমি তুলি কে না বিয়ে করে যাবো না এখান থেকে।
তিয়াশ রেগে আবার পিস্তল নীরবের দিকে ধরে রাগী গলায় বললো খুব মরার শখ হয়েছে দেখি।

তুলি রেগে গিয়ে বললো নীরব কে মারতে হলে আগে আমাকে মারুন আর আজ বিয়ে করতে হলে আমি নীরব কেই করবো।
তিয়াশ চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ সামলানোর যথাসম্ভব চেষ্টা করে বললো তুলি আমার রাগ আরো বাড়িয়ে দিস না।
আমি বলেছি যখন নীরব কে বিয়ে করবো তো নিরব কই করবো বলেই সই করতে নেয় আর তখনি তিয়াশ তুলি কে উঠিয়ে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে ঠাস করে চড় মেরে দেয় তুলির গালে। তুলি তাল সামলাতে না পেরে নিচে পড়ে যায়। ঘটনার আকস্মিকতায় সবাই আরো বেশি ভয় পেয়ে যায়।

তিয়াশ তুলি কে টেনে তুলে বললো বেশি লেগেছে? দেখি দেখি। তিয়াশ পুরোই পাগলের মতো করছে।
তুলির ঠোঁট কেটে গিয়ে রক্ত পড়ছে নাক দিয়ে রক্ত পড়ছে তা আবার তিয়াশ মুছে দেওয়ার চেষ্টায় রয়েছে। আর বলছে আমায় রাগাও কেনো বলোতো কত কষ্ট পাচ্ছো এখন। জানো আমি তোমার বিয়ের কথা শুনে কতটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
তুলি তিয়াশের দিকে ভয় ভয় চোখে তাকিয়ে দেখলো তিয়াশের চোখ অনেক লাল হয়ে রয়েছে।

তখনি তুলির আব্বু তুলি কে তিয়াশের থেকে ছাড়িয়ে বললো বাবা এমন পাগলামি করো না ওদের বিয়েটা হয়ে যেতে দাও। কথাটা যেনো আগুনে ঘি ঢালার মতো লাগলো তিয়াশের কাছে।
তিয়াশ রেগে চেঁচিয়ে বলে উঠলো তুমি কি জানতে না আমি তুলি কে ভালোবাসি বল জানতে না তাও কেনো ওর বিয়ে অন্যকারো সাথে দিতে চাইলে?

তুলির রাতের কথা মনে পড়ে যায় তখন তুলি বলে উঠলো আমি নিজে রাজি হয়েছি এই বিয়েতে আর আমি নিজেই এই বিয়ে করতে চেয়েছি তাতে আপনার কি।

তিয়াশ তুলি কে বললো সত্যি বলেছিস?
তুলি ও নির্দ্বিধায় বললো হে আমি সত্যিই বলছি।
তিয়াশ তুলি কে ধরে আসতে আসতে বললো এটা যদি সত্যি হয় তাহলে এতদিন তুই আমার ভালোবাসা দেখেছিস এবার থেকে আমার অন্য রূপ টাও দেখবি যাতে শুধুই তোর জন্য সর্বনাশ থাকবে বলেই তুলি কে টেনে নিয়ে কাজী সাহেবের কাছে গিয়ে বললো বিয়ে পড়ানো শুরু করুন তবে নীরব আর তুলির না বিয়েটা হবে তুলি আর তিয়াশের।
তিয়াশের মা অনেক বাধা দেওয়ার পরেও বিয়েটা এক প্রকার জোর করেই করলো তিয়াশ তুলি কে।
কারণ তিয়াশ বাড়ির সবার মাথায় বন্দুক তাক করেছিলো যার মানে হলো এই যে তুলি তিয়াশ কে বিয়ে না করলে সবাইকে ও মেরে ফেলবে তাই বাধ্য হয়েই বিয়েটা করতে হয় তুলি কে।
তুলি মনে মনে ভাবছে এরপর কি কি হতে চলেছে ওর জীবনে। তিয়াশ ভাইয়া যা রেগে আছে আমাকে এতো সহজে ছাড়বে না।
এদিকে তিয়াশ মনে মনে বলছে আমার ভালোবাসা টা বুঝলি না নীরবকে ভালোবাসলি ওর কিছু হলে তোর কষ্ট হয় তাই না। তাহলে তাই হোক তোর লাইফ এখন থেকে নরক করে ছাড়বো দেখে নিস।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে