ভিলেনি ভালোবাসা পর্ব-১০

0
855

#ভিলেনি_ভালোবাসা
পার্টঃ ১০
লেখিকাঃ #তিথি_সরকার

তুলির বাবা নীরবের বাবাকে কল দিলো এবং বললো বন্ধু নীরব আর তুলির বিয়েটা তাড়াতাড়ি সেরে ফেললে ভালো হয় তোর কি মত।
নীরবের বাবা ফোনের ওপাশ থেকে বললো এতো খুশির খবর বন্ধু। আমি নিজেই এই ব্যাপারে কিছু দিনের মধ্যে তোর সাথে কথা বলতাম। আচ্ছা তুই তো চেয়েছিলি তুলি মায়ের পড়াশুনা শেষ হলে বিয়ে দিতে তাহলে এতো তাড়াতাড়ি দিবি যে?
তুলির বাবা বললো শুভ কাজে দেরি করার দরকার নেই আর তাছাড়া ওরা তো এখন একে অপরকে চিনে আর বয়স ও হয়েছে দুজনের তাই ভাবলাম তারাতারি কাজ টা সেরে ফেলি।

এদিকে তুলি তুহিন এর বোনদের কাছে শুনেছে তিয়াশ এখন বিয়ে করবে না কারণ সে অন্য কাউকে ভালোবাসে।তাই নীলিমা আপুকে বিয়ে করতে পারবে না।
তুলি তখন জিজ্ঞেস করেছিলো কাকে ভালোবাসে কিছু জানো তোমরা?
তুহিন এর ছোট বোন বললো আমরা জানি না। তবে হতে পারে ভাইয়া তার ক্লাসমেট দের মধ্যে কাউকে ভালোবাসে।এই টুকু বলেই ওরা ওদের ঘরে চলে যায়।

তুলি মনে মনে ভাবছে তার মানে ভাইয়ার ফোনের ওয়াল পেপারে যার ছবি দেখেছি সেটি সেই মেয়েটি যাকে ভাইয়া ভালোবাসে। আর আমি বোকার মত ভেবেছি ওটা আমার ছবি। আমি ওই বাড়িতেই ঠিক ছিলাম এই বাড়িতে কেনো যে আসতে গেলাম ভালো লাগে না।


বিকেলে এক সাথে বসে নীরবের বাবার সাথে কথা বলছে তুলির বাবা।
নীরবের বাবা বললো তাহলে আর দেরি কেনো দুদিন পরেই নাহয় বিয়েটা দিয়ে দেই তুই যেহেতু আয়োজন করে দিতে চাইছিস না বিয়েটা পরে নাহয় অনুষ্ঠান করা যাবে।
তুলির বাবা বললো ঠিক আছে আমি তুলির মায়ের সাথে কথা বলে নেই।
রাতে এসে তুলির মায়ের সাথে সব কথা খুলে বললো তুলির বাবা সাথে তিয়াশের কথাও বললো।
তুলির আম্মু সব শুনে বললো না না মেজো ভাবি কখনোই তুলি কে মেনে নিবে না তুমি যা সিদ্ধান্ত নিয়েছো তাই সঠিক।
তারপর তারা একসাথে তুলির ঘরে গেলো। তুলির আব্বু তুলি কে বললো আমরা তোমার বিয়ে ঠিক করেছি। তোমার এখন বিয়ের বয়স হয়েছে তুমি কি রাজি তুলি?
তুলি কিছু বলার আগে তুলির আম্মু বলে উঠলো রাজি কেনো হবে না বিয়ে হলেও ও তো আমাদের কাছেও থাকবে আর এখন শুধু বিয়ে টা করিয়ে রাখবো পরে তুলির পরীক্ষা শেষ হলে অনুষ্ঠান হবে।
তুলির সোজা উত্তর আমি এখন কোনো বিয়ে করতে পারবো না আব্বু।
তুলির আম্মু বললো তুই কি কাউকে ভালোবাসিস তুলি? এরকম হলে তো আমাকে বলতি।
তুলির বাবা বললো তুমি কি সত্যিই বিয়েটা করতে চাও না?
তুলির আম্মু তুলির দিকে চেয়ে আছে করুন ভাবে আর ভাবছে তুলি কি তিয়াশ কে ভালোবাসে? এরকম হলে তো তিয়াশের মা ওকে মেরেই ফেলবে। মেজো ভাবি পারে না এমন কোনো কাজ নেই। এসব ভাবতেই তার মাঝে ভয়ে কাজ করতে শুরু করলো।
তুলির বাবা বললো আমার অনেক টাকার ঋণ আছে আর কোম্পানি ও বেশির ভাগ নীরবের বাবার নামে হয়ে যাবে ঋণ পরিশোধ না করতে পারলে। তোমার সাথে নিরবের বিয়ে হলে টাকা টা ধীরে সুস্থে শোধ করতে পারবো।
কথাটা সত্যি নাকি মিথ্যা তা তুলির মা ও বুঝতে পারলো না।
তুলি তাও রাজি হতে চাইলো না তখনি তুলির আম্মু তার মাথায় তুলির হাত রেখে বললো তুই এই বিয়ে না করলে আমার মরা মুখ দেখবি।
যদিও তুলি এইসব বিশ্বাস করে না তাও মায়ের ক্ষতির কথা শুনে রাজি হয়ে গেলো বিয়েতে। তুলির বাবা তুলির মাথায় হাত বুলিয়ে বললো দেখিস কখনো অসুখী হবি না। নীরব তোকে অনেক ভালোবাসে।
তুলির বাবা মা খুশি মনে ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন।

তুলি ভাবছে তার মানে নীরব ভাইয়া আগে থেকেই এসব ব্যাপারে জানতো তার জন্যই আমার পিছে পিছে ঘুরতো।

তুলির বাবা তার বড় ভাই দের বললো তুহিন এর বাবাকে ফোন করে অনুমতি নিয়ে নিলো কারণ তিনি দেশের বাইরে আছেন ব্যবসার কাজে। তাদের সম্মতি জানা হলে তুলির দাদীর কাছে যায়।
মিসেস আমেনা (দাদী) রাজি না আবার কেনো রাজি না তাও তিনি বলছেন না। তিনি বিড়বিড়য়ে বললেন এর জন্য তোরা যা করছিস তা ঠিক করছিস না। ও এই বিয়ে হতেই দিবে না।
তুলির বাবা বললো মা তুমি কি কিছু বলছো?
মিসেস আমেনা বললেন যা ভালো বুঝো করো আমার এ ব্যাপারে কিছুই বলার নেই।

তুলির বাবা সব কিছু ঠিক করছে বিয়ের জন্য। নীরব দের ও বলা হয়ে গেছে। বিয়েটা ঘরোয়া ভাবে হবে তাই নীরবরা আর ওদের খুব কাছের আত্মীয় স্বজন আর তুলি দের বাসার লোক থাকবে।

রাতে তিয়াশ অনেক রাত করে বাড়ি ফিরলো। আর এসেই সোজা তুলির ঘরে চলে গেলো। তুলি তখন ঘুমাচ্ছিলো। তুলির ঘরে এসেই তুলির পাশে বসে তুলি কে দেখছিলো চাদের আলোয়। আর মনে মনে বলছে আর কিছুদিন পরেই তোকে একবারের জন্য আমার করে নিবো তখন আর তোকে হারানোর কোনো ভয় থাকবে না আমার বলেই তুলির কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো তিয়াশ।
তিয়াশ তুলির পায়ে নূপুড় পরানোর জন্য পা ধরে নূপুর টা পড়িয়ে দেওয়ার জন্য।
তখনি তুলির ঘুম ভেঙে যায় আর উঠেই সামনে থাকা তিয়াশের গালে চড় মেরে দেয়।

চড় খেয়ে রাগে তুলির গাল চেপে ধরে তিয়াশ আর রাগী গলায় বলে উঠে তোর সাহস হলো কি করে আমার গায়ে হাত তোলার?
তুলি এতক্ষণে বুঝে গেছে এটা তিয়াশ তাই তুলি নিজেকে ছড়ানোর চেষ্টা করে বললো ছাড়ুন আমার লাগছে।

আমি ধরলেই লাগে কই নীরব যখন ধরে তখন লাগে না? বলেই তিয়াশ তুলি কে ছেড়ে দিলো।
ছাড়া পেয়ে তুলি বললো অসভ্যের মত কথা বলা বন্ধ করুন। আপনি এতো রাতে একটা একা মেয়ের ঘরে কি করছেন? একা অন্ধকার ঘরে আপনি একটা মেয়ের ঘরে কেন এসেছেন বলেন।

তিয়াশ দাঁতে দাঁত চেপে বললো তুই যা ভাবছিস তা করতেই এসেছিলাম বুঝেছিস তোর মতো মেয়ের সাথে ওগুলোই করা যায় তাছাড়া কিছুই না কারো ঘরের বউ হওয়ার যোগ্য না তুই। কথাটা বলার সাথে সাথেই তুলি আরো একটি চড় বসিয়ে দিলো তিয়াশের গালে।

তুলি রাগে কাঁপতে কাঁপতে বললো এখনি এই ঘর থেকে বেরিয়ে যান নইলে আমি চিৎকার করে সবাইকে ডাকবো তা আপনার জন্য সম্মানিত হবে বলে আমার মনে হয় না।
তিয়াশ ও রেগে বেরিয়ে গেলো। আর নিজের ঘরে গিয়ে জোরে দরজা লাগিয়ে দিলো।

চোখ দিয়ে তুলির অনবরত পানি পড়ছে। নিজের রাগ কমানোর জন্য হাতে নখ বসিয়ে দিলো। এটা তুলির ছোটবেলার অভ্যাস।


বিয়ের আগের দিন অফিসের কাজে বড় কাকার কাছে তিয়াশের যেতে হবে তাই তিয়াশ কে বিয়ের ব্যাপারে কেউ কিছু জানায় ও নি। তুলির আব্বু বলেছে তিয়াশ আসলে নাহয় বলা যাবে তাতে আর এমন কি। তাই কেউ কিছু বললো না এতে তুলির বাবা মা মনে মনে খুশি হলো।
রাতের ফ্লাইটের জন্য তিয়াশ চলে গেলো তুলির সাথে রাগ করে দেখাও করলো না।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে