ভিলেনি ভালোবাসা পর্ব-১২

0
842

#ভিলেনি_ভালোবাসা
পার্টঃ ১২
লেখিকাঃ #তিথি_সরকার

তুলির সাথে তিয়াশের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর তিয়াশ তার লোকদের বললে তারা যাতে সবার সামনে থেকে বন্দুক সরিয়ে ফেলে। তারাও তাই করলো
তখনি তিয়াশের বাবা বললেন তিয়াশ তুমি আর তুহিন তো কাল রাতের ফ্লাইটেই চলে যাওয়ার কথা ছিলো তাহলে তুমি এখানে কি করে এলে?
তুলি কে তোমরা আমার থেকে আলাদা করে দিবে তা তো হয় না আর তাছাড়া আমার লোক সব সময়ই তোমাদের সবার উপর নজর রেখেছিলো যার দরুন আমি সবার আগে সব কিছুর খবর পেয়ে যাই।
আমি তো কাল রাতেই সব জেনে গিয়েছিলাম কিন্তু আমি দেখতে চেয়েছিলাম তুলি কি করে। আর ও যা করলো তার শাস্তি ও ভয়ঙ্কর ভাবে পাবে। কথাটা তুলির দিকে তাকিয়ে বললো তিয়াশ।
এখন তোমরা বলো তুলি কে মেনে নিবে এই বাড়ির বউ হিসাবে নাকি ওকে নিয়ে আমি আলাদা হয়ে যাবো?
তিয়াশের বাবা বুঝতে পারলেন ছেলেকে এখন কিছু বলে আর লাভ নেই তাই তিনি চুপ করে রইলেন।
তখনি তিয়াশের মা তেড়ে এসে বললো এই মেয়েকে কখনোই আমি আমার ছেলের বউ হিসাবে মেনে নিবো না। ওকে ওর বাবা মায়ের কাছে ফেরত দিয়ে দেও তিয়াশ।
তিয়াশ তার মায়ের দিকে চেয়ে বাঁকা হেসে বললো তাতো আর এই জন্মে হচ্ছে না।
তিয়াশের মা বললো তাহলে তুমি আর অফিসেও বসতে পারবে না দেখি বউ কে কি করে খাওয়াও।
তিয়াশ হালকা হেসে বললো তোমরা এতো বোকা কেনো বলোতো মা। আমার আসে পাশে বডিগার্ড কি এমনি এমনি ঘুরে তাদের আমি বেতন দেই না? যতদিন অফিসে বসিনি বেতন দেই নি? রাজনীতি করি আমি ভুলে যাও কি করে আর সেই টাকাতেই অফিস করেছি নিজের। ভেবেছিলাম তোমাদের সবাইকে সারপ্রাইজ দিবো কিন্তু তা আর হলো না। আর বাবার অফিসে বসেছিলাম শুধু তুহিনের কথায়।

আড়াল থেকে মিসেস আমেনা বেগম এসব দেখে আর শুনে খুবই খুশি হলেন। আর মনে মনে বললেন আমি আগেই বলেছিলাম ও কিছুতেই এ বিয়ে হতে দিবে না।

তিয়াশের মা চেঁচিয়ে বললো তুলির বাবাকে, কি দেখছেন দাড়িয়ে দাড়িয়ে মেয়েটাকে তো আমার ছেলের মাথা খাওয়ার জন্য ছেড়ে দিয়েছেন আর মেয়ে ও তাই করেছে এখন আপনার মেয়ে নিয়ে এই বাড়ি থেকে বিদায় হোন।

তুলির বাবা তুলি কে বললো মা এসে পর। তুলি ও তার বাবার কথা মতো তিয়াশের হাত থেকে নিজের হাত ছুটাতে বেস্ত হয়ে পরে। তিয়াশ ছারছেনা দেখে তুলি বললো আমার হাত ছাড়ুন লাগছে আমার।

তিয়াশ কথাটা শুনার সাথে সাথে আরো চেপে ধরলো তুলির হাত। আর দাঁত কিটমিট করে বললো আরো লাগবে শুধু দেখতে থাকো জান।
হাতের ব্যথায় তুলির চোখ দিয়ে পানি পড়া শুরু হয়ে গেছে। তাও কিছু বলছে না। কারণ তুলি বুঝে গেছে যতো বলবে ততো ব্যাথা বাড়বে আর তা বাড়াবে তিয়াশ নিজেই।

তিয়াশের মা এসে আদুরে গলায় ছেলেকে বললো বাবা এমন পাগলামি করিস না আমার কথা শুন ওর চেয়েও ভালো মেয়ে এনে দিবো তোর জন্য।

তিয়াশের মেজাজ এমনিতেই বিগরে ছিলো এই কথা শুনার পর আরো বেশি বিগরে গেলো।
তিয়াশ তার মায়ের কথার জবাব না দিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বললো আমার বউ নিয়ে আমি চলে যাচ্ছি। কেউ বাধা দিতে চাইলে এখানেই মেরে রেখে যাবো। বলেই তুলি কে টানতে টানতে বাড়ির বাইরে নিয়ে এলো। সবাই কিছু করতে চেয়েও কিছুই করতে পারলো না কারণ সবাই ই তিয়াশের রাগ সম্বন্ধে অবগত।

এদিকে তিয়াশ তুলি কে গাড়ির সামনে এনে গাড়ির দরজা খুলে ভিতরে ধাক্কা দিয়ে তুলি কে বসিয়ে দেয়। তুলি বের হতে চাইলে দরজা ভালো করে লাগিয়ে দেয় যাতে বের হতে না পারে।
তিয়াশ ভিতরে গিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিবে তখনি তার চোখ যায় তুলির গায়ের গয়নার দিকে যেগুলো তুলির বাবা আর নিরবেরা মিলে দিয়েছিলো। তিয়াশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে তুলির গায়ের গয়নার দিকে হাত দিতে নিলে তুলি বাধা দেয় এতে তিয়াশ রেগে গিয়ে তুলির মাথার ওরনা খুলে ওর হাত বেঁধে দেয় পেছন দিকে নিয়ে আর রুমাল দিয়ে তুলির মুখ বেঁধে দেয় যাতে কিছু বলতে না পারে বা করতে না পারে। তারপর ইচ্ছে করে টেনে টেনে তুলির গায়ের সমস্ত গয়না খুলে ফেলে। এতে অনেক জায়গায় ছিলেও যায় তুলির।
গয়না খোলার সময় তুলি ব্যাথা পেয়ে কেঁদে দেয় নিঃশব্দে তা খেয়াল করেও তিয়াশ ইচ্ছে করে আরো ব্যাথা দিয়ে টেনে খুলে। তুলি কে ব্যাথা দিয়ে যেনো সে অনেক তৃপ্তি পাচ্ছে তা তার মুখ দেখেই বুঝতে পারছে তুলি।

তিয়াশ তার লোকদের ডেকে গয়না গুলো দিয়ে বলে বাড়ির ভিতরে গিয়ে দিয়ে আসতে আর তারা তাই করলো।

তিয়াশ তুলির কানের কাছে মুখ এনে বললো সম্ভব হলে শাড়ি ব্লাউজ ও খুলে রেখে যেতাম।
তুলি তিয়াশের দিকে তাকালে তিয়াশ তুলি কে পাত্তা না দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেওয়া শুরু করে।

গাড়ি চলতে চলতে মাঝ রাস্তায় থেমে যায়। তিয়াশ নেমে দেখে গাড়ির টায়ার লিক হয়ে গেছে। এতে তিয়াশের রাগ হলেও তুলির ঘুমন্ত মুখ দেখে নিমিশেই রাগ পানি হয়ে যায়।
তুলি তখন কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গিয়েছিলো।

তখনি তিয়াশের লোকেরা এসে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে স্যার। তিয়াশ টায়ারের কথা বললে তারা তাদের গাড়িতে করে চলে যেতে বলে আর বলে তারা নতুন টায়ার লাগিয়ে গাড়ি নিয়ে আসছে।
তিয়াশ তাদের থামিয়ে দিয়ে তুলির দিকে তাকিয়ে বলে যতক্ষণ খুশি লাগুক আমি দাড়িয়ে আছি তোমরা নতুন টায়ার লাগাও।
তারাও কাজে লেগে পড়লো আদেশ শুনা মাত্র।

তিয়াশ এসে তুলির মুখের দিকে চেয়ে আছে গাড়ির জানালার কাছে দাড়িয়ে।
বাতাসে তুলির মুখের উপর চুল এসে পড়লে তিয়াশ তা আলতো করে ফু দিয়ে সরিয়ে দেয়।
গাড়ির টায়ার লাগানো হয়ে গেলে তিয়াশ তাদের বলে আগে থাকতে গিয়ে সব রেডি করে রাখতে। গিয়ে যাতে কিছুর জন্য অপেক্ষা করতে না হয়। তাই তারাও চলে যায়।

তিয়াশ তুলির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে গাড়ির দরজা খুলে পানির বোতল নিয়ে পানি ছুড়ে মারে তুলির মুখে। এতে তুলি ধরফরিয়ে উঠে। সামনে তাকাতেই দেখে তিয়াশ দাড়িয়ে আছে পানি হাতে। এতে তুলির বুঝতে অসুবিধা হলো না যে কাজ টা তিয়াশ ই করেছে।

আমি কষ্ট করে গাড়ি চালাবো আর তুই মহারানীর মতো পরে পরে ঘুমাবি তাতো হয় না। বলতে বলতে গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দিলো।
তুলি ও আর ঘুমালো না।

গাড়ি চলতে চলতে এসে থামে এয়ারপোর্ট এর সামনে তা দেখে তুলি অবাক চোখে তিয়াশের দিকে তাকায়।
তিয়াশ তুলির চাওয়ার মানে বুঝতে পেরে বলে তুই যেই পরিমানে হট আর সুন্দরি তোকে বিদেশে বেঁচে দিলে অনেক টাকা পাওয়া যাবে। বলেই বাঁকা হাসলো তিয়াশ।

এদিকে তুলির অবস্থা প্রায় খারাপ। তুলি মনে মনে বলছে এই ছেলেকে দিয়ে বিশ্বাস নেই যা রেগে আছে তাতে এই কাজ করা তার পক্ষে অসম্ভব কিছু না।
এসব ভেবেই ভয়ে ঢোক গিললো তুলি। মুখেও কিছু বলতে পারছে না কারণ তুলির হাত মুখ দুটোই বাধা।


তিয়াশ তুলি কে নিয়ে রাতের ফ্লাইটেই প্যারিসে চলে এসেছে। ভোর ৬ টার সময় তারা ল্যান্ড করে।
সারা রাত তিয়াশ নিজেও ঘুমায়নি তুলিকে ও ঘুমাতে দেয় নি। যখনি তুলির চোখ লেগে আসছিলো তখনি পানি মেরেছে তুলির মুখে তিয়াশ। এরপর তো বলেই দিয়েছে আবার ঘুমালে এর পর গরম পানি ঢালবে তুলির মুখে। এই ভয়ে তুলি আর চাইলেও ঘুমাতে পারেনি।

প্লেন থেকে নেমে তিয়াশ তুলি কে হাত মুখ বাধা অবস্থায় নিয়েই আরেকটা গাড়িতে উঠলো।
দেখে বুঝা গেলো এখানেও তার সাঙ্গোপাঙ্গো আছে। কারণ এখানে আসতে না আসতেই কালো পোশাক পরা লোক গুলো তাদের খেদমতে লেগে পড়েছে আর তিয়াশ হুকুম দিয়ে যাচ্ছে।

তারা গিয়ে একটি বড় হোটেলের সামনে নামলো তা দেখে তুলি চেয়ে রইলো। তুলি কে এইভাবে চেয়ে থাকতে দেখে তিয়াশ বললো এই খানেই তোকে বেঁচে দিয়ে আমি চলে যাবো বাংলাদেশে।
বলেই বাইরে এসে দরজা খুলে তুলি কে বাইরে বের করার চেষ্টা করলো তবুও পারলো না কারণ তুলি শক্ত হয়ে বসে আছে। অনেক ভয় পেয়েছে তুলি। তা তার মুখ দেখেই স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে।

তিয়াশ আর কোনো উপায় না পেয়ে তুলি কে কোলে করে নিয়ে ভিতরে ঢুকলো।
ভিতরে ঢুকতে না ঢুকতেই হোটেলের ম্যানেজার এসে তিয়াশ কে স্বাগত জানিয়ে নিজেই রুমের চাবি নিয়ে তাদের সাথে গেলো।
৭ তলায় গিয়ে ৩০৪ নাম্বার স্পেশাল রুমটা ওদের জন্য খুলে দেয়। আর তিনি রুম খুলে দিয়ে ভিতরে চাবি রেখে চলে যান।

ভিতরে গিয়ে তিয়াশ তুলি কে বিছানায় বসিয়ে দেয় আর ওর দিকে বাঁকা চোখে চেয়ে কাউকে কল দেয়।
কল ধরার পর অপর পাশ থেকে কিছু বললে তিয়াশ বলে উঠলো তাহলে আজ সন্ধ্যায় ডিল ফাইনাল। তারপর আরো কিছু কথা বলে কল কেটে দিয়ে তিয়াশ ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।

হোটেলের কর্মচারীদের বলে যায় ৩০৪ নাম্বার রুমে অনুমতি ছাড়া যেনো কেউ না ঢুকে। এমনকি কোনো খাবার ও যাতে না নিয়ে যাওয়া হয়।

এদিকে তুলি ভয়ে কাঠ হয়ে গেছে।
তুলি মনে মনে ভাবছে কিসের ডিলের কথা বললো ভাইয়া। তাহলে কি আমাকে সত্যি সত্যিই বেঁচে দিবে ভাবতেই কান্নার বেগ আরো বেড়ে গেলো তুলির।

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে