ভালোবাসিবো খুব যতনে পর্ব-১২+১৩

0
536

#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_12

চোখের উপর সূর্যের তীর্যক রশ্মি পড়াতে ঘুমটা ভেঙে গেলো , বেলকনি দিয়ে সকালের মৃদু বাতাস হালকা আসছে , চোখ বন্ধ রাখতে ই ভ্রু জোড়া কুচকে গেলো , পিটপিট করে চোখ খুলে উঠে বসলাম , জ্বর টা এখন নেই বললেই চলে।

এক হাতে পেচিয়ে চুল গুলো খোপা করতে করতে আশপাশে তাকালাম , বিছানার পাশের টেবিল টার উপর একটা বাটিতে তোয়ালে এখনো ভিজানো আছে , তার সাথে ই ঔষধের পাতা গুলো ছড়ানো , আর থার্মোমিটার রাখা।

আশেপাশে তাকিয়ে ইলুকে খোঁজা র চেষ্টা করলাম , ধীরে ধীরে বিছানা থেকে নেমে বেলকনিতে উঁকি দিলাম নাহ্ বেলকনিতে তো নাই ইলু , কিচেন রুম, ড্রয়িং , ডাইনিং রুমে কোথাও নেই ইলু তবে গেলো টা কোথায় , এত সকাল সকাল বাসায় চলে গেলো না কি , কখনো তো এমন করে না , এটলিস্ট বিদায় টা নিতে পারতো ,

এত বেখেয়ালি মেয়েটা , সারারাত জেগে জেগে সেবা করলো আর ভোর হবার আগেই উধাও , ব্যপার টা ভয়ানক না! যেই মেয়ে রাত এগারো টার জায়গায় বারো টা হলেই সেদিন সকালে আর ঘুম থেকে টেনেও তোলা যায় না আজ সে সারা রাত সেবা করার পরও সক্কাল সক্কাল উধাও , আসলেই খটকা জনক ,

আর কিছু না ভেবে ফ্রেস হয়ে বিছানায় বসতে বসতে দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালাম ,

সবে মাত্র সাতটা আরো বহুত সময় বাকি আছে ,

আমি আর কিছু চিন্তা না করেই মোবাইল খুজতে লাগলাম , কিছু তো বলতেই হবে এই ছন্ন ছাড়া মেয়েটাকে , বড্ড বেখেয়ালি নিজের প্রতি।

ফোন খুঁজে বের করে অন করতেই ফোন আসতে লাগলো, প্রায় ৬০ -৭০ টা মিসড কল এসে জমা হলো কল লিস্টে , আমার ফোন আবার অফ থাকলে ও অন করার সাথে সাথে ই সকল নোটিফিকেশন আসা শুরু করে , সে যায় হোক ,

কল লিস্টে ঢুকেই দেখি ইলুর প্রায় ৪০+ মিসড কল আর আননোন নাম্বার থেকে প্রায় ৩০+ মিসড কল , ভ্রু কুচকে কিছু ক্ষন ফোনের দিকে তাকিয়ে থেকে ইলুর নাম্বারে কল করলাম ,

কয়েকবার রিং বাজার পর ই ইলু কল পিক করলো , আমি কিছু বলার আগেই শুরু হলো তার উনিশসো কটকটি সালের ভাষন ,

” ওই মহারানী ভিক্টোরিয়া , তুই কোন দেশের প্রেসিডেন্ট রে না কি প্রেসিন্টের বউ তুই ? ডোনাল্ড ট্রাম্প এর এক্স বউ না কি তুই আর না কোন সেলিব্রিটি ? তোরে কেডা রাইতের বেলা ফোন দিয়ে জালাইবো ? কোন দুঃখে তুই ফোন ডা অফ করে ঘুমাস? তোরে কত বার ফোন দিসি ফোন টা ও ধরার ইচ্ছে করে নাই তাই না , শা*লি বলদি , ওই দিকে ওনি মরার মতো পইরা পইরা ঘুমা আর এদিকে টেনশনে আমি ফুসফুস অ্যাটাক করি ”

ইলুর কথা শুনে আমি অবাক হয়ে আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করলাম ,

” তুই না সকালে গেলি শুধু আমার বাসা থেকে! আবার এসব কথার মানে কি ? আর বাপের জন্মে ফুসফুস অ্যাটাক এর নাম শুনি নাই ”

আমার কথা শুনে ইলু অবাক হয়ে বলল ,

” ওই পূর্ণ কি কস তুই ? আমি কবে তোর বাসাত গেলাম , আমি তো আমার বাসায় ই ! মেয়াদ উত্তীর্ণ কিছু খাইছোস না কি রে ? কি আবল তাবল কথা বলতাছোস ? আর ফুসফুস অ্যাটাক শুনোস নাই বলে কি থাকতে পারে না! ”

” আমি আবল তাবল কথা বলতাছি নাকি তুই ভাউ খাইতাছোস ? সারারাত আমার সেবা করলি এখন আবার নাটক করছিস ? ”

” হুয়াট ? আর ইউ ক্রেজি পূর্ণ ? আমি কখন গেলাম তোর বাসায় ? আর তোর কি ই বা হয়েছে ? যে সারারাত সজাগ থাকতে হবে কেন আমার ? ”

” ওমা কাল রাতে তো তুই ই আসলি বেলকনি দিয়ে, কড়া পারফিউম এর গন্ধ , এখনো আমার ঘরের মাঝে আছে ”

” রাতে তাও আমি আবার মানুষের বাসায় যাবো বেলকনি দিয়ে , আমাকে কি তোর কোন এঙ্গেল এ চুর টুর মনে হয় ? আর তুই তো জানিস পূর্ণ আমি পারফিউম দেই না , কড়া হবে দুর ”

” তার মানে তুই বলতে চাইছিস তুই কাল মাঝ রাতে আমার বাসায় আসিস নি ? ”

” আরে বাবা না রে , কেন কিছু কি হয়েছে ? “..

” না মানে তুই যদি কাল না ই এসে থাকিস তাহলে আসলো কে ? আমার মাথার কাছে বসে কপালে জলপট্টি দিয়ে দিলো আবার সুপ খাইয়ে দিলো , ঔষধ খাইয়ে দিলো, মাথায় হাত রেখে ঘুম ও পারিয়ে দিলো , তুই না হলে আসলো কে ?

” আচ্ছা তুই টেনশন করিস না৷, আমি তোর বাসায় আসবো নে বিকেলে অফিস শেষ করে ”

বলেই বিদায় জানিয়ে ফোন টা কেটে দিলো ,

আমি বিছানার উপর বসে ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ চোখ যায় , বিছানার পাশের টেবিল টার উপর ,
পানির গ্লাসে র নিচে একটা চিরকুট টাইপ কিছু রাখা আছে ,

আমি ভ্রু কুচকে সেই চিরকুট টা হাতে নিলাম ,

সেখানে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা ছিলো ,

________________

….ভালোবাসি তোমায় যতটা ভালোবাসলে লোকে পাগল বলে

আমি তোমার সেই পাগল প্রেমিক…

নিজের যত্ন নিবে , ভালো ভাবে খাওয়া দাওয়া করবে, এখন সিজন চেঞ্জ হচ্ছে বাইরে বেশি ঘুরাঘুরি করবে না আর একটা কথা , কখনো যদি মেয়ে তোমার ফোন বন্ধ পেয়েছি তাহলে সেদিন দেখবে পাগলের পাগলামি কাকে বলে ? কত প্রকার ও কি কি ? বি কেয়ার ফুল মাই গার্ল ,

আর হ্যা ,
শুভ সকাল রানী …

__________________

তালুকদার ভিলায় ,

দোতলার একদম শেষ মাথার একটা রুম , আবছা অন্ধকার হয়ে আছে রুম টা , পর্দা দিয়ে জানলা গুলো ঢেকে দেওয়া , পর্দার ফাক গলে কিছু টা অবাধ্য রশ্মি প্রবেশ করেছে রুমের মেঝেতে ,

বিছানায় উপুড় হয়ে গভীর ঘুমে মগ্ন এক যুবক , গায়ের চাদর টা কোমড় পর্যন্ত মেলে দেওয়া , পড়নে শুধু মাত্র একটা টাউজার ,

পা টিপে টিপে রুমে প্রবেশ করলো কেউ , রুমে এসেই জানলা থেকে পর্দা সরাতেই কয়েকগুচ্ছ আলোর প্রতি ফলন ঘটলো রুমে র মধ্যে ,

সূর্যের আলো টা চোখে পড়তেই চোখ কুচকে ফেলল তাহরিম , চোখ বন্ধ করে ই বিরক্তি কন্ঠে বলে উঠলো ,

” তোর কি আর খেয়ে দেয়ে কাজ নেই তানজিম ? সকাল সকাল আমার ঘুমের বারো টা বাজাতে চলে আসলি? এমনি তেই সারা রাত ঘুমোতে পারি নাই , এখন যা তো যা, ঘুমোতে দে !

বলেই আবার কাথা দিয়ে নাক মুখ ঢেকে সুয়ে পড়লো ,

ভাইয়ের কান্ড দেখে তানজিম গা দুলিয়ে হেসে উঠলো ,

তাহরিমের মাথার কাছে এসে বসলো , চাদর টা একটু ফাক করে মুখ বাড়িয়ে তাহরিম এর কানের কাছে গিয়ে বলল ,

” কেন রে ভাইয়া ? সারা রাত কি চুরি করছিলি ? ছে ছে ছেহ , শেষ মেষ কি না মন্ত্রী তাহরিম তালুকদার চুরি করছে তাও কোথায় , নিজের হনে ওয়ালা গার্লফ্রেন্ড এর বাসায় , হায় খোদা এটা শোনার আগে আমার কিডনি অ্যাটাক কেন হলো না , ”

তানজিম এর কথা শুনে তাহরিম চোখ বন্ধ করে ই হাতের কাছে থাকা বালিশ দিয়ে তানজিম কে ঢিল ছুড়ে বলল ,

” তানজুর বাচ্চা , তুই কি যাবি না কি আমি উঠবো? কাল কেই তো মাত্র গলাটা ঠিক হয়েছে , অকালে যদি পার্মানেন্ট বোবা না হতে চাস এখনি বের হ রুম থেকে আর আমাকে ঘুমাতে দে ”

তাহরিমের থ্রেট শুনে তানজিম খানিকটা দমে গেলো ,

রুম ছেড়ে যেতে যেতে বলল ,

” হুম হুম এখন দিন তোমার ই, করে নাও অত্যাচার এই অবলা প্রানী টার উপর , তবে মনে রাইখো এই দিন , দিন না, আরো দিন আছে
মনে রাইখো , এক মাঘে শীত যায় না ,
রাতের বেলা চুরি করে বউরে দেখতে যায়তে পারে আর আমি বললেই দোষ , হুহ ভালো মানুষের এই দুনিয়ায় দাম নাই , লোকে ঠিক ই বলে ”

বলতে বলতেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো , তানজিমের আজগুবি কথা শুনে তাহরিম চোখ বন্ধ করে ই ঠোঁট এলিয়ে হাসলো , পুনরায় ডুবে গেলো ঘুমের অতল গহীনে ,

চলবে …

#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_13

” কিরে মুখ টা বাংলার পাঁচের মতো করে রাখছোস ক্যা ? কি হইছে? ”

ইলুর কন্ঠ শুনতে পেয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে পাশে তাকালাম , এক পলক ওর দিকে তাকিয়ে আবার সামনে র দিকে তাকালাম ,

এখন বিকেল পাঁচ টা , অফিস থেকে সরাসরি ই ধানমন্ডি লেকের পাড় আসলাম , জায়গা টা আমার বরাবরই ভালো লাগে , পড়ন্ত বিকেলে সূর্য টা যখন ডুবে ডুবে ভাব তখনকার রক্তিম আকাশ আমার বরাবরই প্রিয় , এই বেলায় এখানে অনেক মানুষ ই দেখা যায় ,

” কি হলো কথা বলছিস না কেন? কি হয়েছে তোর ? স্যার ডেকে নিয়া কিছু বলছে? ”

আমি সামনে র দিকে তাকিয়ে ই বললাম ,

” না , স্যার কি বলবে , ডেকেছিলো একটা কাজের জন্য , আর আমি ভাবছি সকালে র সেই বিষয় টা নিয়ে , বেশ ভাবাচ্ছে আমাকে বিষয় টা ! ”

আমার কথা শুনে ইলু কিছু মনে পরার ভঙ্গিতে ব’লে উঠলো ,

” ওও হ্যা , আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম , তোর সেই সকালের গাঁজা খুরি কথা বার্তা , কি হয়েছিলো রে ? ”

ওর কথা শুনে আমি চোখ পাকিয়ে ওর দিকে তাকালাম ,

” আমি গাঁজা খুরি কথা বার্তা বলি ? ”

” হে হে হে , কে বলল তুই এসব কথা বলিস , এসব তো আমি বলি , তুই তো সদা সর্বদা সত্যি কথা ই বলিস , এখন বল তো কি হয়েছিলো ”

” আরে কাল সন্ধ্যা থেকে ই শরীর টা কেমন ম্যাচ ম্যাচ করছিলো , সিজন চেঞ্জ এ জ্বর আসবে আসবে ভাব , খারাপ লাগছিলো বিধায় কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়েছিলাম , হঠাৎ রাতে খুব খিদে পেয়েছিলো কিন্তু উঠে খাবো সেই সুযোগ বা শক্তি ছিল না , রাত তখন ১২ টা কি একটা , বেলকনি থেকে কিছু পড়ার শব্দে আমি চমকে যায় , কিন্তু কারো শরীরের পারফিউম এর গন্ধে অনেক টাই নিশ্চিত হই যে কেউ এসেছে আর এই বেলকনি দিয়ে আসার স্বভাব তো তোর ই আছে তাই আমি ভাবলাম তুই এসেছিস ”

আমার কথা শুনে ইলু কিছু ক্ষন নিরবতা পালন করে চিন্তিত স্বরে বলল ,

” তারপর ? ”

” তারপর আমার মাথার কাছে এসে কপালে হাত দিলো , আমি ভাবলাম তুই তাই বললাম কিছু রান্না করতে খিদে পেয়েছে , সেও আমার মাথায় জলপট্টি দিয়ে , না না শুধু মাথায় না , চোখ সহ ভিজে কাপড় দিয়ে ঢেকে নিঃশব্দে রান্না করতে চলে গেলো , কিছুক্ষণ পর এক বাটি সুপ নিয়ে খাইয়ে দিলো , ঔষধ খাইয়ে ঘুম পাড়ালো আর সারা রাত সেবা করলো , আমি ভোরের দিকে ও কপালে কারো স্পর্শ টের পেয়েছিলাম , সে হয়তো কানে কানে ফিসফিস করে কিছু একটা বলেছিলো আমি বুঝতে পারি নি , আমি তো ভাবছিলাম তুই , আর সকালে উঠে দেখি নাই কেউ ”

আমার কথা শুনে ইলু ভ্রু কুচকে খানিক টা সময় আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল ,

” তোর কথা আমি সবসময় ই বিশ্বাস করি কারণ তুই বানোয়াট কিছু বলিস না , তবে এই বিষয় টা আসলে ই রহস্য জনক ”

আমি ওর দিকে এক পলক তাকিয়ে ব্যগ থেকে চিঠি টা বের করে ওর হাতে দিলাম , ইলু আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো ,

” এটা কি ? ”

” সকালে ঘুম থেকে উঠে গ্লাসের নিচে থেকে পেয়েছি ”

ইলু পুরো টা পরে চোখ বড়ো বড়ো করে তাকালো আমার দিকে ,

” কি রে পূর্ণ , এই দেখি তোর সিক্রেট লাভার , সেই পসেসিভ আর কেয়ারিং তো , হায়য়য় আমার যে কেন একটা সিক্রেট লাভার নাই ! ”

ইলুর কথা শুনে বিরক্তি প্রকাশ করে বললাম ,

” ঢং বাদ দে , যে মনে চাই সে হবে , তার কথা কেন আমার শুনতে হবে আজিব , এখন চল তো কাল আবার একটা জায়গায় যেতে হবে কিছু ইনভেস্টিগেশন আছে আর কয়েকদিনের মধ্যেই হয়তো কোথাও পাঠাবে কতৃপক্ষ থেকে ”

আমার কথা শুনে ইলু বলে উঠলো ,

” মানে কি কোথায় যাবি কাল ? ”

” নন্দন পুর এলাকা আই মিন নন্দনপুর জমিদার বাড়ি ”

” নন্দনপুর জমিদার বাড়ি মানে কি ? তুই জানিস ওই জায়গা টা কত রিস্কি ? কম লোক তো আর পাঠানো হয় নি ওখানে , এক জন ও কি বেঁচে ফিরেছে ? কারো টিকি টি পর্যন্ত পায় নি কেউ , ভুতুড়ে এলাকা ওটা , তুই যাবি না , আমি বলছি তুই যাবি না ”

বেশ আতঙ্কিত কন্ঠে ইলু কথা গুলো বলে উঠলো ,

” আরে বোকা ভয় পাচ্ছিস কেন ? আমি তো কাল শুধু দিনের বেলাই যাবো ঘুরে সব কিছু দেখে রাতের মধ্যে ই ফিরে আসবো , চিন্তা করিস না তো ”

” আমি স্যারের সাথে কথা বলব , তুই একা একটা মেয়ে , তোকে কোন আক্কেলে ওখানে পাঠাচ্ছে হে ? তুই একদম রাজি হবি না ”

” আরে পাগল , আমি কি আগে কখনো এরকম পোড়া বাড়ি কিংবা পুরোনো রাজবাড়ী এসবে ইনভেস্টিগেশন করি নি নাকি ? আগেও তো কত আর্টিকেল করলাম এসব নিয়ে , কত রাত কাটালাম এসব বাড়িতে ”

” পূর্ণ তুই বুঝতে পারছিস না , ওসব পুরা বাড়ি আর নন্দনপুর জমিদার বাড়ি এক না , তুই জানিস না ওই এলাকায় কোন মানুষ থাকে না , রাত হলে কিসব শব্দ শুনা যায় আবার ইনভেস্টিগেশনের জন্য যারাই গিয়েছে এক রাতের বেশি তাদের তো দেখায় যেত না , একদম গায়েব , এখন তো ওখানে কোন ইনভেস্টিগেটর কিংবা পর্যটক ও যায় না , তুই প্লিজ না করে দে ”

আমি চারপাশে তাকিয়ে ব্যগ নিয়ে বসা থেকে উঠতে উঠতে বললাম ,

” মিফতাহুল পূর্ণা যখন একটা কাজ কাঁধে নিয়েছে সেটা সে করেই ছাড়বে আর সফল সে হবেই , এটাই পূর্ণার নিয়ম , আমি কোন কিছু তে পিছপা হওয়া শিখিনি তাই আজ ও হবো না , আমি এটা পারব বলেই সরকার এই কাজ টা আমাকে দিয়েছে আর আমি পারব ই , ইন শা আল্লাহ ”

আমার এমন দৃঢ প্রতিজ্ঞা দেখে কিছু ক্ষন চুপ করে থেকে বলে উঠলো ,

” ঠিক আছে তুই যখন যাবি ই যাহ , সাথে আমি ও যাবো , বিপদে পড়লে দুজন একসাথে ই পড়ব , আমি আর কিচ্ছু শুনতে চাই না , চল সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে বাসায় যাবো ”

আমি কিছু বললাম না , পা চালিয়ে রাস্তায় আসলাম , সাথে ইলু ও , কারো মুখে কোন কথা নেই ,

রিকসা দিয়ে বাসায় আসতে আসতে প্রায় মাগরিবের আজান হয়ে গেছে ,

নামাজ পড়ে কিছু খেয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসলাম , উদ্দেশ্য নন্দনপুর জমিদার বাড়ির সব তথ্য জানা,

তবে আর যাই হোক , জমিদার বাড়ি টা বেশ সুন্দর , ছবি তে যা দেখলাম ,

ল্যাপটপ থেকে বিভিন্ন তথ্য কালেক্ট করে ডায়েরি তে নোট করতে লাগলাম,

___________________________

” স্যার পূর্ণা মেম কে নন্দনপুর ইনভেস্টিগেশনের জন্য নোটিশ দিয়েছে ”

” নন্দনপুর ? ”

” স্যার ওই যে নন্দন পর জমিদার বাড়ি যে , আরে যেটা কে সবাই ভুতুড়ে বাড়ি বলে চেনে ওটা

কুশনের কথা শুনে তাহরিম খানিক টা উত্তেজিত হয়ে বলল ,

“What nonsense ! কি সব কথা বলছো ? ওটা র ইনভেস্টিগেশন না অফ করে দিয়েছিলো , গত কয়েক বছরে যাদের কেই পাঠানো হয়েছে তাদের মধ্যে কেউ ই ফিরে আসে নি , এটা আবার চালু করেছে কে ?

” স্যার এটা কতৃপক্ষের আদেশ ”

” পূর্ণা রাজি হয়েছে ? ‘

” জি স্যার , মেম কাল একবার দেখে আসতে যাবে ”

” হুয়াট ? এই মেয়েটা এমন কেন ? লাইফে এত রিস্ক নিতে হবে কেন ? কি দরকার এসব ? এত রিস্কি একটা জায়গায় কেন যেতে হবে , সাহস কি ওর ওভার লোড হয়ে গেছে নাকি ”

কিছু ক্ষন ভেবে তাহরিম বলে উঠলো ,

” কুশন , আমাদের কিছু লোককে কে নন্দন পুর জমিদার বাড়ি তে পাঠাবে , তার সব কিছু ইনভেস্টিগেশন করে আমাকে জানা তে বলো “..

তাহরিমের কথা শুনে কুশন মাথা নাড়িয়ে বলল ,

” ঠিক আছে ভাই ”

কুশন চলে যেতে নিয়েও হঠাৎ থেমে গেলো ,

পিছনে ফিরে তাহরিমের দিকে তাকিয়ে বলল ,

” ভাই একটা কথা ! ”

” হ্যা বলো ”

” ভাই কাল ইন্টারভিউ তে যখন মেম আপনাকে প্রশ্ন করেছিলো যে , তানজিম ভাই এর এক্সিডেন্টের পিছনে কারো হাত আছে না কি ? আপনি তো জানতেন এটা বিরোধী দলের ইসতিয়াক সরকার এর কাজ , আর আপনি তো প্রমান ও পেয়েছেন ! তাহলে আপনি ওরকম কথা বললেন কেন যে আপনি জানেন না ? ”

কুশনের কথায় তাহরিম রহস্য জনক ভাবে হাসলো ,

” তোমার মাথায় এটা ঢুকবেনা বলেই আমি মন্ত্রী আর তুমি আমার এসিস্ট্যান্ট ”

তাহরিমের কথা শুনে কুশন মাথা চুলকাতে চুলকাতে হাসলো ,

তাহরিম সোফায় বসতে বসতে বলল ,

” বুঝলে কুশন , রাজনীতি বড় জটিল একটা জিনিস , বড্ড মাথা খাটাতে হয় নয়তো বাঁশ খাবে , এখন যদি আমি বলেই দিতাম যে আমি জানি কে ষড়যন্ত্র করেছে তাহলে তারা নিশ্চয়ই সাবধান হ’য়ে যেত , আর তাদের জব্দ করা টা বেশ টাফ হয়ে যেতো , তারা এখানো পর্যন্ত জানে যে আমি কিছু ই জানি না তাই বেখেয়ালি ভাবে অনেক ভুল ই করতে পারে , আর আমাদের সেই সুযোগের অপেক্ষা ই করতে হবে , বুঝলে ? ”

” জি ভাই ”

” হুম এখন যাও যা করতে বললাম , কর ”

” জি ভাই ”

কথা টা বলেই কুশন রুম থেকে চলে গেলো ,

তাহরিম কুশনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে ঠোঁট কামড়ে হাসলো ,

মন্ত্রী সাহেব এর মনে চলছে আরেক অংক , অংকের সমাধান হয়তো খুঁজে পাবে খুব শীঘ্রই …

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে