ভালোবাসিবো খুব যতনে পর্ব-৪৫+৪৬

0
530

#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_45

_________________

মাথায় বেশ চিনচিনে ব্যথা অনুভুত হচ্ছে, যা ঘুমের মাঝেই অনুভব করতে পারছিলাম। হঠাৎ মনে হলো মন্ত্রী সাহেব এর কথা, উনি কোথায়? ঠিক আছেন তো?

কিছু মানুষের মাঝে মাঝে ই এমন অনুভব হয়, যা সে ঘুমের আগে দেখে ঘুমায়, কোন কাহিনি কিংবা ঘটনা, তার রেশ টা ঘুমের মধ্যে ও থাকে আবার ঘুম থেকে জাগার পর ও কিছু ক্ষন থাকে, পরবর্তী তে আস্তে আস্তে সবটা ঠিক হয়ে যায়।

উনি কোথায়?
কথাটা মাথার মাঝে প্রেসার পরতেই আরোও বেশি ব্যথা হওয়া শুরু হলো, কপালে কুঁচকে চোখ খোলার চেষ্টা করছি, শরীরে তো বিন্দু পরিমান শক্তি ও অবশিষ্ট নেই মনে হচ্ছে, তবুও মনের জোরে চেষ্টা চালালাম।

পিটপিট করে চোখ খুলে তাকালাম। চোখের সামনে মন্ত্রী সাহেব কে এক ঝলক দেখেই মন শান্ত হয়ে গেলো। তবে উনাকে দেখা মাত্র ই মন যতটা না শান্ত হয়েছে তার চেয়ে বেশি অশান্ত হয়ে উঠলো।

এ কি অবস্থা তার! চোখ দুটো অসম্ভব লাল হয়ে ফুলে আছে, মনে হচ্ছে কত রাত অঘুম তার কেটেছে! আচ্ছা উনি কি কান্না করেছে? তাহলে চোখ ফোলা কেন? পাঞ্জাবির উপরের সবগুলো বোতাম খোলা, আর চুল! সেটা তো উষ্কখুষ্ক হয়ে আছে।

নিজের প্রতি এতো অযত্ন কেন তার!

নিজের অবস্থান বুঝতে পেরে এদিক ওদিক তাকাতে গিয়ে খেয়াল হলো মাথা টা বেশ ভারি লাগছে, মনে হচ্ছে মাথার উপর দশ কেজি ভরের কিছু চাপানো। হাত নাড়াতে গিয়ে দেখলাম এক হাতে ক্যানুলা করা, সেলাইন চলছে।

অন্য হাতে মাথায় হাত দিতেই হাতেও ব্যন্ডেজ দেখতে পেলাম সাথে মাথায় ও ব্যান্ডেজ এর অস্তিত্ব খুঁজে পেলাম। চুল মনে হয় একটা ও নেই! তবে চুলের জন্য আফসোস হলো না কেন জানি!

বেঁচে আছি! এই ঢেরর, তার উপর আমার সামনে মন্ত্রী সাহেব জীবিত এবং সুস্থ আছে এর চেয়ে বেশি পাওয়ার কি আছে।

আমাকে চোখ খুলতে দেখেও উনি সোফাই বসে এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, একটু নড়চড় ও করছে না, অবাক হলাম খুব।

আচ্ছা উনি কি রেগে আছেন আমার উপর?

মুখ খুললাম কথা বলার জন্য কিন্তু আফসোস অক্সিজেন মাস্ক লাগানো মুখে।

এক হাত দিলাম অক্সিজেন মাস্কের উপর সরাবো বলে, কিন্তু তখন ই কানে ভেসে আসলো কারো গম্ভীর কন্ঠ,

” খবর দার মাস্কে হাত দিবে না মিফতাহুল পূর্ণা ”

হাত থেমে গেলো আমার, ধীরে ধীরে তাকালাম তার দিকে, রাগে নাকের পাটা ফুলে আছে, পারছে না আমার বিছানা থেকে উঠিয়ে একটা ঢিল দিতে।

আমি ঢুল গিললাম।

” একদম মাস্ক খুলার চেষ্টা করবে না, নচেৎ খুব খারাপ হয়ে যাবে! ”

হঠাৎ দরজা দিয়ে একজন ডক্টর আর একজন নার্স প্রবেশ করলো ভেতরে..

তাহরিম কে দেখে ডক্টর কুশন বিনিময় করলো,

” গুড মর্নিং ডক্টর ”

” গুড মর্নিং ইয়াং ম্যাম, তোমার ওয়াইফ এখন কেমন? ”

উনি এক পলক আমার দিকে তাকিয়ে ডক্টরের দিকে তাকালেন,

” মাত্র ই জ্ঞান ফিরলো ”

ডক্টর হাসি মুখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

” ইন শা আল্লাহ ঠিক হয়ে যাবে, চিন্তার কোন কারণ নেই ”

” হুম ”

উনি সোফায় বসে মোবাইল দেখায় ব্যস্ত হয়ে পড়লেন,

ডক্টর আমার দিকে এগিয়ে এসে মুচকি হেসে বলল,

” এখন কেমন লাগছে? ভালো? ”

আমি মাথা দিয়ে ইশারা করলাম, মানে ভালো লাগছে।

” গুডড ”

নার্সের দিকে ঘুরে তাকে উদ্দেশ্যে করে বলল,

” যা যা মেডিসিন আছে সেগুলো ই খাওয়াও আর অক্সিজেন মাস্ক টা খুলে ড্রেস টা চেঞ্জ করে দিও ”

নার্সটা মাথা দুলালো,

” ঠিক আছে স্যার ”

” আর উনার সকল দায়িত্ব আপনার, ভালো ভাবে যত্ন করবেন ”

নার্স এক পলক মন্ত্রী সাহেব এর দিকে তাকিয়ে পুনরায় ডাক্তার এর দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বলল,

” আবব জি স্যার অবশ্যই ”

নার্সের অবস্থা দেখে ডাক্তার হাসলো, যা আমার চোখ এড়ালো না। বুঝলাম না কিছু! আমার কেন জানি মনে হচ্ছে নার্স টা মন্ত্রী সাহেব কে কোন ভাবে ভয় পাচ্ছে।

ডক্টর চলে যেতেই নার্স টা আমার কাছে আসলো, আমি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলাম তাকে। বয়স টা কত আর হবে! এই পঁচিশ – ছাব্বিশ, চোখে মুখে একটা চটপটে ভাব। এটা ভালো লাগলো কিন্তু পরবর্তী সোফায় বসে থাকা মন্ত্রী সাহেব এর দিকে চোরা চোখে বেশ কয়েক বার তাকালো যা আমার মোটেও ভালো লাগলো না।

আমি ভ্রু কুঁচকে তাকালাম তার দিকে। মেয়েটা এগিয়ে এসে অক্সিজেন অফ করে আমার অক্সিজেন মাস্ক টা খুলার সাথে সাথে ই বলে উঠলাম,

” বিয়ে হয়েছে তোমার? ”

মেয়েটা চোখ বড়ো বড়ো করে আমার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলল,

” হে? ”

আমি ধীরে ধীরে বললাম,

” বিয়ে হয়েছে তোমার? ”

মেয়েটা অবাক হয়েই উত্তর দিলো,

” হুমম ”

” বিয়ে হয়েছে যখন আরেকজনের জামাইয়ের দিকে চোরা চোখে তাকাও কেন? ”

মেয়েটা অবাকের চরম পর্যায়ে গিয়ে বলল,

” হে? ”

আমি বেশ বিরক্ত হলাম, মেয়েটা কি হে ছাড়া কিছু বলতে পারে না নাকি? আজব..

” আরে কি হে হে করছো? বললাম তোমার বিয়ে হয়ে গেছে কয়েক দিন পর হালি হালি বাচ্চার মা হবে, এখনো অন্যদের জামাইর দিকে কু দৃষ্টি দাও কেন? এটা মোটেও ভালো না আর না আমি ভালো মেয়ে! আমার জামাইর দিকে আরেকবার যদি তাকাও আমার পাশের বেড টা তোমার নামে করে দেবো বলে দিলাম, যদিও এখন আমি অসুস্থ বেশি কথা বলতে পারি না ”

কথা গুলো বলতে বেশ বেগ পেতে হলো তবুও কথা গুলো না বললেই নয়, আমার জামাইর দিকে কু দৃষ্টি দেয়, কত বড়ো সাহস!

মেয়েটা আমার দিকে অবাক দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো কিন্তু কিছু ই বলল না।

মন্ত্রী সাহেব তো এক ধ্যানে ফোন ঘাটছে চারপাশে কি হচ্ছে তাতে আর বিন্দু মাত্র ধ্যান নেই। কেয়ামত হলেও তার কিছু যাবে আসবে না।

মেয়েটি মন্ত্রী সাহেব এর সামনে গিয়ে আমতাআমতা করে বলল,

” স্যার আপনি যদি একটু বাইরে যেতেন! ”

কারো কন্ঠ শুনতে পেয়ে চোখ তুলে তাকালো তাহরিম, ভ্রু কুঁচকে বলল,

” কেন? ”

” আবব না মানে, আপুর ড্রেস চেঞ্জ করাবো তো তাই ”

” তো করান চেঞ্জ! আমি কি আপনার হাত বেঁধে রেখেছি? ”

মেয়েটা বেশ হকচকিয়ে উঠলো, আমতাআমতা করে বলল,

” নননা মানে, না গেলে চেঞ্জ করাবো কি করে ”

” বউ আমার, তারমানে বউয়ের সব আমার। আমার সামনে চেঞ্জ করাতে প্রবলেম এর তো কিছু দেখছি না ”

নার্স মেয়েটা এবার কাঁদো কাঁদো দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো,

নার্স বি লাইক :- ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি! এই দুই পাগলের মধ্যে আমি ই কেন পড়লাম? দুনিয়ায় কি আর কোন নার্স ছিলো না! হুয়াই মি?

মেয়েটার অবস্থা দেখে এখন আমার ই হাসি পাচ্ছে। আহারে বেচারী!

মেয়েটাকে দাঁড়িয়ে থাকতো দেখে তাহরিম তালুকদার উঠে বাহিরে চলে গেলো।

আর যাওয়ার আগে গম্ভীর কন্ঠে বলে গেলো,

” যা করবে সাবধানে, ওর একটু কিছু হলে আজকের অটি টা তোমার নামে করে দেবো, মাইট ইট! ”

মেয়েটা ঢুক গিলল,
একজনে পাশের বেড আর আরেকজনে অটি! তাকে মারার এতো ষড়যন্ত্র করে কেন এরা!

মেয়েটা আমার কাছে এসে মাথা টা আলতো হাতে ধরে উঠে বসিয়ে চেঞ্জ করে আবার সুইয়ে দিলো।

মেয়েটা আমার পাশে দাঁড়িয়ে উসখুস করতে করতে বলল,

” আপু একটা কথা বলি? ”

আমি মাথা নেড়ে সায় জানালাম,

” আমি না এতো ক্ষন যাবত ভাবছিলাম এমন একটা হাফ পাগল আর সাইকো মানুষের সাথে একটা মেয়ে কি করে থাকতে পারে আর উনি কি না বর্তমান তরুণ সমাজের আইডল!

আপনার স্বামী একখান মানুষ ই আপু, বাপ রে বাপ, আপনাকে যখন হসপিটালে নিয়ে আসছিলো তখন উনি হুসে ছিলেন না, মাথায় হালকা চোট পেয়েছিলেন, যখন ই উনার জ্ঞান ফিরলো তখন থেকে ই শুরু হলো উনার পাগলামি!

একবার কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারাবার দশা আবার রাগে হসপিটাল জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি। আমাদের ডাক্তার রা ও ভয়ে ভয়ে ছিলো কখন জানি পুরো হসপিটাল টাই জ্বালিয়ে দেয় কারণ উনার একটা ইশারাই যথেষ্ট।

কিন্তু যখন ই আপনাকে দেখেছি আমার ধারণা পুরোপুরি ভাবে পাল্টে গেলো, আসলে আল্লাহ বুঝে শুনেই জুরি মেলান! ”

বলেই মেয়েটা চলে গেলো, আর আমি শুয়ে শুয়ে মেয়েটার কথা ভাবছি,

আচ্ছা, মেয়েটাকে কি কোন ভাবে আমাকেও অপমান করে গেলো?..

চলবে….

#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_46

_________________

” এই মন্ত্রী সাহেব কথা বলছেন না কেন আমার সাথে? এমন করছেন কেন হে? এখন মনে হচ্ছে মরে গেলেই ভালো হতো, এটলিস্ট এভাবে কাউকে কথা বলার জন্য রিকুয়েষ্ট করা লাগতো না! ”

পর পর দু দুটো থা*প্পড়ে গাল টা জ্বলে উঠলো আমার,

” আহহ্ ”

হুট করে ই আমার চিবুকে চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

” মানুষ মনে হয় না আমাকে তোর? মে’রে ফেলতে চাস আমাকে ? আর কত যন্ত্রণা দিবি বল তো আমাকে? পা’গল তো বানিয়েছিস এখন কি পা’গলা গারদে দিতে চাস?”

আমি ব্যাথা ভুলে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি উনার দিকে, চোখ মুখ দিয়ে যেন আগুনের ফুলকি ঝরছে। কথা বলতে বলতে চোখ টা ছলছল করে উঠলো, কাঁদছেন উনি? কিন্তু কেন?

চোখের পানি আড়াল করে আমাকে একটা ধাক্কা দিয়ে চিবুক ছেড়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে যেতে নিলে আমি পিছনে থেকে শান্ত কন্ঠে বলে উঠলাম,

” কাঁদছেন মন্ত্রী সাহেব? এতো তুখোড় একজন রাজনীতি বিদ আর এতো শক্ত মনের মানুষ ও যদি কাঁদে তাহলে বাকিরা কি করবে? মরে তো যাই নি, বেঁচে আছি, ইন শা আল্লাহ সুস্থ হয়ে যাবো! আপনার এমন মুখ দেখলে কি আমার ভালো লাগবে বলুন! ”

উনি পিছনে ফিরে তাকালেন, ততক্ষণে আমি উঠে বসলাম। আমার কাছে এসে হুট করে ই জরিয়ে ধরে ফুপিয়ে উঠলো,

আমি মুচকি হেসে মাথায় হাত হাত বুলাতে বুলাতে বললাম,

” হুররর কি করে এসব? বাচ্চাদের মতো কাঁদছেন আপনি? ”

উনি আমার ঘাড় থেকে মুখ তুলে গালে আলতো হাতে স্পর্শ করে বলল,

” সসসরি বউজান! বেশি ব্যাথা লাগছে? ”

আমি ভ্রু কুঁচকে উনার হাতটা উপরে তুলে বললাম,

” নাআআ তো, ব্যথা কেন লাগবে! নিজের হাত টা দেখেছেন? এতো শক্ত! আমার গাল মনে হলো ফাটিয়ে দিলেন, দেখেন তো রক্ত বের হয়েছে কি না!”

উনি আমার গাল টা ভালো করে দেখে টুপ করে একটা চুমু খেয়ে বলল,

” উহুম রক্ত তো বের হয় নি, তবে এবার ঠিক আছে ”

আমি গাল ফুলিয়ে বললাম,

” আরেক গালে কে দিবে? আমার কি আরোও দশ বারোটা জামাই আছে নাকি যে ওদের দিয়ে দেওয়াবো? ”

উনি ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেঁসে উঠলেন,

আমার নাক টায় টোকা দিয়ে বলল,

” বড্ড পেকে গেছো পূর্ণ! এতো পাঁকা পাঁকা কথা না বলে নিজের যত্ন নিবেন! আপনি কিন্তু এখন একা নন, বুঝলেন? ”

আমি ভ্রু কুঁচকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,

” একা নই মানে কি? আরোও কেউ আছে নাকি আমার সাথে? ”

তাহরিম ভ্রু কুঁচকালো,

” তুমি জানো না? ”

” কি জানবো মন্ত্রী সাহেব? কিছু জানার কথা ছিলো নাকি? ”

তাহরিম অবাক হয়ে বলল,

” তুমি সত্যি ই জানো না? ”

আমি বেশ বিরক্ত হয়ে বললাম,

” কি জানবো টা কি? না বললে বুঝব কি করে? ”

তাহরিম দীর্ঘ শ্বাস ফেলল, নিজের কপালে নিজে চাপড় দিয়ে বিরবির করে বলল,

” আমার ই বোঝা উচিত ছিল এটা আমার বউ সয়ং তাহরিম তালুকদার এর বউ! সবার বউয়ের সাথে তো আমার বউ এর একটু তো পার্থক্য থাকবেই! ”

আমি বিরক্ত হলাম, কাজের কথা কিছু ই বলছে না আজাইরা ফাউ প্যাচাল পারছে.

” আপনি কি বলবেন মন্ত্রী সাহেব? ”

তাহরিম সোজা হয়ে আমার দিকে ঘুরে বসলো,

” আচ্ছা পূর্ণ, তোমার কি বেশ কয়েকদিন যাবত নিজেকে অন্য রকম ফিল হয় না? এই ধরো নাকে উটকো গন্ধ টাইপ! ”

আমি খানিক্ষন বেক্কেল এর মতো তাহরিম তালুকদার এর দিকে তাকিয়ে থেকে মাথা নেড়ে বললাম,

” কই না তো, কোন গন্ধ ই লাগে না তবে বেশ কয়েক দিন যাবত মুড টা ভালো পাচ্ছি না, হুট করে ই রেগে যাচ্ছি তো হুট করে ই কান্না পাচ্ছে, তো তাতে কি হলো ”

মন্ত্রী সাহেব এবার নিজেও বিরক্ত হলো,

” এই তোমার কয় মাস যাবত পি*রি*য়ড অফ? ”

” আরে আর বইলেন না, এই নিয়া বেশ টেনশনে আছি, গত ২ মাস যাবত হচ্ছে না কি কর… ”

হুট করেই থেমে গেলাম আমি, অবাক চোখে মন্ত্রী সাহেব এর দিকে তাকালাম,

উনি উৎসুক দৃষ্টি তে আমার দিকে তাকিয়ে আছে,

আমার হাত চলে গেলো পেটে, আমি অবাক দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকিয়ে ইশারা করলাম, আমি যা ভাবছি তাই নাকি?

উনি হেঁসে উঠলেন, আমি ছলছল চোখে তাকিয়ে আছি উনার দিকে, আমার এতো এতো কথার ঝুলি যেন মূহুর্তে ই ফাঁকা হয়ে গেছে, কথা গুলো যেন ভেতর থেকে দলা পাকিয়ে আসছে। বুকের মাঝে যেন সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ এর আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি এই কি তাহলে প্রথম মা হওয়ার অনুভূতি?

আমি মাথা নিচু করে আছি,

” কি হলো পূর্ণ কিছু বলো! খুশি হওনি তুমি? ”

আমি চোখ তুলে তাকালাম,

” কিছু বললেন? ” আমার শান্ত কন্ঠ,

” বললাম কিছু বলো! ”

” কি বলব? আচ্ছা আমি কি সত্যি ই প্রেগন্যান্ট? ”

” আগে শুনতাম কেউ মা হলে নাকি সে নিজেই বুঝতে পারে অথচ আমার বউ দেখো! পুরো দেশ জেনে বসে আছে যে তাহরিম তালুকদার এর বাচ্চা হবে, পুরো এলাকায় মিষ্টি বিতরণ শেষ এতোক্ষণে আমার বউ জিজ্ঞেস করে সে প্রেগন্যান্ট নাকি! সবই কপাল আমার! ”

” এই যে আসবো নাকি গর্ভবতী মহিলা? ”

দরজায় দাঁড়িয়ে কথা টা বলে উঠলো কেউ,
তাকিয়ে দেখি ইলমী দাঁড়িয়ে আছে,

আমি তাকাতেই ইলু মুচকি হেসে ভেতরে ঢুকলো,

” কিরে গর্ভবতী নারী, তুই যে পোয়াতি আগে বললি না তো! ”

আমি কিছু বলতে নিবো হুট করে ই মন্ত্রী সাহেব বলে উঠলো,

” সে তো নিজে ই জানতো না, মাত্র জানলো তাও আবার আমাকে প্রশ্ন করছে সে প্র্যাগন্যান্ট নাকি! ”

ইলু হু হু করে হেঁসে উঠলো,

” বুঝতে হবে ভাইয়া এটা আমার বান্ধবী, পৃথিবীতে মাত্র এক পিছ ই আছে! ”

ওদের কথা বলার মাঝেই তানজিম মোবাইল হাতে কেবিনে ঢুকলো পাশে চোখে চশমা পড়া একটা মেয়ে,

” কেমন আছো আমার ভাতিজার আম্মু? ”

আমি তানজিমের দিকে তাকালাম,

” তুমি কি করে বুঝলে যে ভাতিজাই হবে? ভাতিজি ও তো হতে পারে! ”

তানজিন তাহরিমের হাতে একটা ভিডিও অন করে মোবাইল টা দিয়ে সিটে বসতে বসতে বলল,

” রক্তের টান বুঝো তো! আর বাচ্চার চাচার মন কখনো ভুল বলে না ভাবিজান! আমার ভাতিজা ই হবে, ওকে নিয়ে খেলব, ঘুরবো আর মেয়ে পটাবো দুই চাচা ভাতিজা মিলে! মেয়েদের পিছনে লাইন মারবো ”

” ওহহ আচ্ছা এই ব্যসপার! কিন্তু আমি তো মেয়ে চাই, ঠিক আমার মতো শান্ত, নম্র-ভদ্র, রুচিশীল, ইনোসেন্ট একটা মেয়ে ”

আমার কথা শুনে ইলমীর কাশি উঠে গেলো, কোন ভাবে কাঁশি থামিয়ে বলল,

” তুই ইনোসেন্ট! আর এটাও বিশ্বাস যোগ্য তুই শান্ত? হাউ ফানি ইয়ার! টুডে’স বেস্ট জোক্স! ”

আমি বিরক্তি দৃষ্টিতে ইলুর দিকে তাকিয়ে বললাম,

” তুই চুপ থাক! বেশি কথা বলিস তুই ”

আমি দরজার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটার দিকে তাকালাম,

” ও কে? ”

” তোমার ভবিষ্যত জা ”

তানজিম কিছু বলার আগেই তাহরিম মোবাইলের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেই বলল।

আমি মেয়েটাকে উদ্দেশ্য করে বললাম,

” এই যে হবু জা এদিকে এসো ”

মেয়েটা আমার কাছে এলো,

” নাম কি তোমার? ”

মেয়েটা এক হাতে চশমা ঠিক করতে করতে বলল,

” মেহবুবা রহমান ”

মেয়েটার শান্ত এবং ধীর কন্ঠ।

” কোন ইয়ার? ”

” সেকেন্ড ”

” কোন সাবজেক্ট এ আছো? ”

” ইংরেজি লিটারেচার ”

” বাহ্ বেশ ভালো। আমার জা হিসেবে তোমাকে পছন্দ হয়েছে, তুমি পাশ ”

তানজিম মেহবুবার উদ্দেশ্যে বলল,

” ঘরের কর্তী যখন তোমাকে পাশ মার্ক দিয়েছে তার মানে তোমার চাকরি কনফার্ম ”

বলেই হেসে উঠলো, সাথে আমি আর ইলমী ও। মেয়েটা বেশ লজ্জা পেলো, বোঝাই যাচ্ছে বেশ লাজুকে স্বভাবের।

আমি উকি দিয়ে তাহরিম তালুকদার কি ভিডিও দেখছে তা দেখার চেষ্টা করলাম,

উনি খবর দেখছেন যেখানে ঐ দিনের চক্রান্তের কাহিনি টা সুস্পষ্ট ভাবে দেখানো হচ্ছে আর আনোয়ার হোসেন এর জবান বন্দি যেখানে সে নিজেই স্বীকার করছে ঐ দিনের এক্সিডেন্ট এর কাজ টা উনার ই, আদালতের ঘোষণা অনুযায়ী এটেন্ড টু মাডার কেইসে তার উপর একজন স্ব নাম ধন্য রাজনীতি বিদ আর বর্তমান মন্ত্রী কে মারার ইচ্ছা পোষণ করার কারণে যাবত জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

উনি ভিডিও অফ করে ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকালো আমি চোখ দুটো ছোট ছোট করে উনার দিকে ই তাকিয়ে আছি,

” কি হয়েছে এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? ”

” আনোয়ার হোসেন এতো সহজে নিজের দোষ স্বীকার করলো কিভাবে? ”

উনি মুচকি হেসে বললেন,

” ঘাস কেটে তো আর মন্ত্রী হই নি! ঘটে বুদ্ধি তো আছেই ”

___________

হসপিটালে থাকতে হয়েছে দশ দিন, মন্ত্রী সাহেব এর মতে পুরোপুরি সুস্থ না হয়ে বাড়ি যাওয়া যাবে না।

ডাক্তার শুধু একদিন বলে ছিলো,

এই সময় মাকে একটু বেশি খেতে হবে, তার উপর এতো বড়ো একটা এক্সিডেন্ট হয়ে গেলো, শরীর দুর্বল তাই খাবারের পরিমান টা বাড়াতে হবে।

ব্যস হলো আর কি, খাবারের অত্যাচার তো আছেই। একটা খেতে না খেতেই আরেকটা নিয়ে হাজির! জামাই খাইয়ে গেলে আছে মা তারপর উনি খাইয়ে গেলে আসে বাবা! এক গাধা ঠেসে খাইয়ে যায় তার কিছু ক্ষন পর আসে আমার পরানের বান্ধবী! আর আমার দেবর মহাশয় বসে বসে এদের অত্যাচার দেখে আর মজা নেয়।

বুঝলাম না একটা মেয়ের উপর এতো খাবারের অত্যাচার কি নারী নির্যাতনের মধ্যে পড়ে না? পুলিশ কি এসব দেখে না নাকি!

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে