ভালোবাসিবো খুব যতনে পর্ব-১৪+১৫

0
490

#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_14 ( জমিদার বাড়ির রহস্য )

” এই পূর্ণ আর কত দুর রে ? হাটতে হাটতে পা ব্যথা হয়ে গেলো যে ”

ইলুর কথায় আমি ঘাড় ঘুরিয়ে ওর দিকে তাকালাম , টপ আর জিন্স পড়া মেয়েটার গাল কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের অস্তিত্ব বিদ্যমান ,

গাড়ি থেকে নেমে, এই যে বন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে হাটছি তো হাটছি পথ তো আর শেষ হচ্ছে না ,

আসলে এটা বন জঙ্গল ছিলো না এটা একটা মানুষ চলাচলের রাস্তা , বহুদিন এই পথ দিয়ে কেউ আসে না তাই গাছ পালা গজিয়ে রাস্তা টা প্রায় অদৃশ্য করে দিয়েছে , বিভিন্ন গাছগাছালি আর বাঁশ ঝাড় দিয়ে পথ টা অনেক টাই অন্ধকার ,

আমি সামনে দিকে তাকিয়ে বললাম ,

” হাটতে থাক , আমি নিজে ও জানি না আর কত টুকুন হাটতে হবে ”

হঠাৎ সামনে বাড়ি টাইপ কিছু দেখতে পেয়ে দ্রুত পা চালালাম ,

হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি দুপুর ১ টা বাজতে চলল , এখন মনে হচ্ছে আরো ও আগে রওনা দিতে পারলে ভালো হতো ,
_______________

এই মূহুর্তে আমি আর ইলু দাঁড়িয়ে আছি নন্দনপুর এর সেই জমিদার বাড়ির সামনে , বিশাল জমিদার বাড়ি এটা , বাড়ির সামনে র লোহার গেইট জং ধরে গেছে ,

গাছের শুকনো পাতায় বেশ আচ্ছাদন করা বাড়ির সামনের জায়গা টা ,

ঘাড় ঘুরিয়ে আশেপাশে তাকাতেই নজরে এলো এক বিশাল বট বৃক্ষ , বেশ কয়েকশ বছরের পুরনো বৃক্ষ দেখেই বোঝা যাচ্ছে , এবার নজরে এলো জমিদার বাড়ি টা , বহু বছর ধরে মেরামতের অভাবে অনেক জায়গায় ই ভেঙে পড়েছে , রঙ গুলো চটে গেছে ,
মনে কৌতুহল হলো না জানি বাড়িতে মানুষ থাকা কালিন বাড়ির দৃশ্য টা কেমন ছিলো ! নিশ্চয়ই ভিষণ সুন্দর আর সতেজ ,

আমি লোহার গেইট টা ধাক্কা দিতেই তুমুল শব্দে গেইট টা খুলে গেলো , আমি আর ইলু প্রবেশ করলাম বাড়ির ভেতরে ,

শুকনো পাতায় পা ফেলতেই পাতার মর মর শব্দে মুখরিত হলো চারপাশ , ইলু আমার হাত আঁকড়ে ধরে আছে , কেন যে এলো ও , এখন আবার ভয় পাচ্ছে ,

আমি ধীর পায়ে এগিয়ে গেলাম সদর দরজার দিকে , বেশ পুরানো কাঠের দরজা , আমি দরজা টায় চাপ দিলাম , বেশ শক্ত মনে হচ্ছে , দরজার হাতল ধরে বেশ জোরে ধাক্কা দিতেই দরজাটি বেশ শব্দ করে খুলে গেলো ,

” পূর্ণ ভেতরে যাস না , আমার না কেমন জেনো লাগছে ”

আমি ইলুর দিকে চোখ পাকিয়ে তাকালাম ,

” এত দুর এসেছি কি না দেখে চলে যাবার জন্য না কি ? চুপচাপ ভেতরে চল ! তোর কি আদৌও মনে হয় এখানে ওই সব ভূত টুত থাকবে? আমার তো মনে হয় না ”

কথাটা বলেই ওর হাত টা শক্ত করে ধরে ভেতরে আসলাম , ভেতরে বেশ বড় একটা বৃত্তাকার স্পেস খালি তার চারপাশ জুড়ে বেশ কয়েকটি ঘর , এক পাশ দিয়ে দোতলা ওঠার কাঠের তৈরি সিড়ি ,

নিচের সব গুলো ঘর এক এক করে দেখলাম ,

আমি সিড়ি র দিকে এগুতেই ইলু পিছনে থেকে আটকে দিলো ,

” আয় পূর্ণ ফিরে যায় , চুলোয় যাক তোর ইনভেস্টিগেশন , পরে কিছু হলে ! ”

আমি ঘাড় ঘুরিয়ে ইলুর দিকে তাকিয়ে এখন নিজের কপালে নিজে বারি দিতে ইচ্ছে করছে কেন যে এই ভীতুর ডিম কে নিয়ে আসতে গেলাম!

” তুই যাবি ? না গেলে এখানে দাড়া আমি দোতলা টা ঘুরে আসি , দেখি কিছু পাই কি না ! ”

” না না আমি যাবো , চল ”

আমি আর ইলু ধীর পায়ে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলাম ,

এক এক করে প্রতিটি ঘর দেখলাম , প্রতিটি ঘরেই ময়লার স্তুপ , মাকড়সার জালে ভরপুর , হয়তো এখানে বহু দিন কারো পদ ধুলি পরে নি , ভয়ে তো কেউ এ মুখো হয় ই না , শহর থেকে বেশ অনেক টায় দুর এই জমিদার বাড়ি টা , তার উপর কিসব ভুতের উৎপাত ,

প্রায় বেশ কিছু টা ঘর ঘুরলাম , বাড়ি টা যেমন বড় ঘর সংখ্যা তো প্রায় শতাধিক , অনেকাংশে ভাঙা ঘর গুলো , মেরামতের অভাব !

ভাই এতো বড় বাড়ি তে থাকত কজন ? আজব

” দোস্ত খিদে পেয়েছে , কিছু আনসোস ? ”

ইলুর কথা শুনে আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম ওর দিকে ,
ও পেট চেপে সটাং দাঁড়িয়ে আছে ,

” তোকে নিয়ে আর পারি না বাপু ”

ব্যগ থেকে একটা বিস্কুট এর প্যাকেট ওর হাতে ধরিয়ে দিলাম ,
” নে বিস্কুট খা, তাও আমার মাথা খাস না ”

সব গুলো ঘর দেখা শেষে বারান্দার সবচেয়ে শেষের ঘর টা দেখতে যাবো , দরজায় ধরতে গেলাম ওমনি ঠাস করে একটা শব্দে আমি আর ইলু চমকে উঠলাম , মনে হচ্ছে দরজা লাগানোর আওয়াজ ,

ইলু দৌড়ে এসে আমার হাত আকড়ে ধরলো , আমি চারপাশে সূক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম , দোতলার উপর থেকে নিচ তলায় দৃষ্টি যেতেই আসল কারণ টা বুঝতে পারলাম , বাড়ির সদর দরজা টা বন্ধ হয়ে গেছে , হয়তো বাতাসে , ইলু কাদো কাদো কন্ঠে বলল ,

” তোকে আগেই বলেছিলাম , পূর্ণ চল এসব ছাতার ইনভেস্টিগেশনের দরকার নেই শুনলি না তো , এখন বুঝ ঠেলা , গরীবের কথা বাসি হলেও ফলে , এখন ওই ভুত আইসা তোর ঘাড় ও মটকাইবো সাথে আমি ফ্রি ”

” ভুতে ঘাড় মটকিয়ে কি করবে শুনি ? ”

” কি আর করবে , রক্ত খাবে চুষে চুষে ”

” তাহলে তো বেচারা ভুতের কপাল টা ই খারাপ ”

” কেন কেন ? ”

” কারণ আমাদের রক্ত খেয়ে ভুত মোটে ও মজা পাবে না , কারণ দু জন ই রক্ত শুন্যতায় ভুগছি৷, শরীরে তো রক্ত নাই৷, তার চেয়ে বরং ভুতেরা আমাদের মেরে হার্ট, কিডনি , চোখ এগুলো কেটে ব্যবসা করতে পারবে , বেশ লাভ হবে কি বলিস ”

আমি এক ভ্রু উঁচু করে বেশ সিরিয়াস ভাবে কথা টা বলে উঠলাম ,
আমা কথা শুনে ইলু চোখ দুটো ছোট ছোট করে কাদো কাদো দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বলল ,

” পূর্ণ তুই কি আমাকে ভয় দেখাচ্ছিস ? আমি কিন্তু সত্যি ই ভয় পাচ্ছি ”

ওর কথা শুনে আমি মুখে হাত দিয়ে গা দুলিয়ে হেসে উঠলাম ,

” বোকা মেয়ে , তুই না আধুনিক যুগের আধুনিক মেয়ে তুই ও এসব আজগুবি ভুত প্রেত বিশ্বাস করিস , আরে ও সব বলতে কিছু হয় না বোকা

” তাহলে দরজা টা বন্ধ করলো কে ? ”

” আরে ওটা মনে হয় বাতাসে বন্ধ হয়ে গেছে , চল তোকে দেখাচ্ছি ”

” হুম ”

আমি ওকে নিয়ে দোতলার সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসলাম ,

আমি গিয়ে দরজার হাতলে ধরে টান দিলাম কিন্তু আশ্চর্য , দরজা খুলছে না , বেশ অনেক বার চেষ্টা করে ও খুলতে পারলাম না , মনে হচ্ছে কেউ বাইরে থেকে বন্ধ করে রাখছে , এখন উপায়?

আমি ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসলাম , ইলু আমাকে দেখে বলল ,

” আমি বলে ছিলাম না এখানে ওসব ভুত প্রেত আছে বিশ্বাস করলি না তো , এখন হলো তো , থাক এখানে , পরে পরে ভুতের রাতের ডিনার হহ , সাথে আমি তো আছি ই ”

আমি নির্বিকার ভঙ্গিতে বসলাম সিড়ি তে ,

আমাকে এমন ঠান্ডা দেখে ইলু বেশ চটে গেলো,

” এই মেয়ে তোর ভয় লাগছে না ? ”

” সারাক্ষণ সাথে একটা আস্ত পেত্নি নিয়ে ঘুরলে তোর কি মনে হয় আর কোন পেত্নি আমার ধারে কাছে আসবে ? ”

আমার কথা শুনার প্রায় সেকেন্ড ১০ পর ইলু চোখ দুটো বড়ো বড়ো করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল ,

” তুই কি কোন এঙ্গেল এ আমাকে পেত্নি বললি পূর্ণ ? ”

আমি নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে পায়ের নখ দিয়ে মাটি ঠুকতে ঠুকতে বললাম ,

” আমি এঙ্গেল এ কেন বলতে যাবো ? আমি তো সরাসরি ই তোকে পেত্নী বললাম ”

” পূর্ণ র বাচ্চা ”

” আপনার অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে আমার বাচ্চা হবে দুর আমার এখনো বিয়েই হই নি ”

আমার কথা শুনে ইলু ধপ করে আমার পাশে বসে নাক ফুলিয়ে রাগে ফোস ফোস করতে লাগলো ,

আমি নিচ দিকে তাকিয়ে হাসলাম , যাক কিছু টা হলেও ভয় কমেছে ,

হাতের ঘড়ির দিকে আমি বেআক্কেল বনে গেলাম , এত তাড়াতাড়ি সন্ধ্যা হয়ে গেছে , এখন প্রায় ৬ টার কাছাকাছি , এখনই মাগরিবের আজান হয়ে যাবে , তারমানে আজ রাত এখানেই থাকতে হবে ,

আলো থাকতে থাকতে একটা ভালো দেখে রুম বের করতে হবে নয়তো পরে আর পারব না ,

কথা টা ভাবতে ভাবতে ই উঠে দাড়ালাম ,

” কোথায় যাচ্ছেন আপনি ? ”

” ভালো দেখে রুম খুজতে , আজ রাত টা এখানে ই থাকতে হবে ”

আমার কথা শুনে ইলু বলে উঠলো ,

” মানে কি ? এখানে থাকব মানে ? ”

” তুই দেখছিস না দরজা খুলছে না এদিকে অন্ধকার হয়ে আসছে , তাহলে ? ”

আমি আর কথা বাড়ালাম না , ওর সাথে কথা বললে সত্যি ই অন্ধকার হয়ে যাবে ,

বেশ খুঁজে খুঁজে একটা রুম বের করলাম ,
নিচ তলায় এ রুম টাই অন্য গুলোর থেকে ধুলো কম , একেবারে ই যে নেই সেটা বললে ভুল হবে , তবে কম আর কি!

সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত নেমে এলো ,

ধীরে ধীরে সব কিছু আধার হয়ে এলো ,

আমি আর ইলু ওই বাছায় করা রুম টায় বসে আছি ,

থেকে থেকে ভেসে আসছে শিয়ালের ডাক , কুকুরের কান্না , ভয়ে ইলু গুটিয়ে যাচ্ছে বারংবার ,

আমি ভেবে ই রেখেছিলাম এমন হয়তো কিছু হতে পারে তবে সিউর ছিলাম না তবুও সাথে দুটো মোম আর একটা দিয়াশলাই রেখেছিলাম ,

মেঝেতে মোম জ্বালিয়ে বসে আছি আমি আর ইলু , ও ঘুমে ঢুলছে ,

” তুই না হয় ঘুমা আমি বসে থাকি . তারপর আমি ঘুমাবো তুই জাগবি ”

আমার কথায় ইলু সায় জানিয়ে , কাঁধে র ব্যগ টা কে বালিশ বানিয়ে শুয়ে পড়লো মেঝেতে , বেচারীর সত্যি ই ঘুম পেয়েছে ,

রাত তখন প্রায় একটা , হঠাৎ শোনা যাচ্ছে কারো ফিসফিস কথার শব্দ আর পায়ের শব্দ , মাঝে মাঝে নুপুরের আওয়াজ ও আসছে , ঘুঙুর এর আওয়াজ টা আবছা ,ধীরে ধীরে পায়ের শব্দ টা বাড়ছে মনে হচ্ছে কেউ এদিকে ই আসছে !

তবে কে হতে পারে ? …

চলবে ….

#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_15 ( জমিদার বাড়ির রহস্য ২)

ওই পদ ধ্বনি টা হঠাৎ ই থেমে গেলো , কান পেতে রইলাম কিছু শোনার জন্য কিন্তু ? কিন্তু নাহ্ আর শোনা যাচ্ছে না ,

এই জঙ্গলের ভেতরে একটা পরিত্যক্ত জমিদার বাড়িতে কে ই বা আসতে পারে , কি তার উদ্দেশ্য ? ভুত বলতে যে কিছু ই নেই সেটা তো জানি তবে এ কেমন ভুত বেশধারী মানব!

ইলু হাত পা নাড়াচাড়া করছে হয়তো মশা কামড়াচ্ছে ! বেশ ভালো ই মশা আছে এখানে , এখন মনে হচ্ছে কয়েক টা মশার কয়েল নিয়ে আসলে ভালো হলো ,

ধুর ছাতা আগে জানলে তো বিছানা পত্র সব ই নিয়ে আসতাম , কে জানত বাপু এখানে এভাবে আটকে যাবো?

মশা গুলো ও যাচ্ছে তাই , হয়তো মনে মনে বলছে ,

” আইজকা পাইছি চান্দু , জম্মের খাওন খাইয়া লমু , তোদের রক্ত দিয়াই আইজকা গোসল করমু, হু হা হা ”

এসব আজগুবি কথা চিন্তা করতে করতে ই আড় চোখে ইলুর দিকে তাকালাম ইলু এক হাতের তালু দিয়ে আরেক হাত ঘষতে ঘষতে উঠে বসলো ,

” কি হলো উঠলি কেন ? ”

আমার কথা শুনে ইলু মুখ টা কাঁদো কাঁদো বানিয়ে বলল ,

” তো উঠবো না তো কি ? ভুতের ডিনার না হলেও মশার জীবনের খাবার এক সাথে ই সাবার করতাছে , জন্মের খাবার খাইতাছে ”

আমি ভ্রু কুচকে বললাম ,

” ভুত ? ”

ও আমার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে বলল ,

” হু সাথে পেত্নী ও ”

” আচ্ছা ইলু এমন ও তো হতে পারে ভুতেরা এই মশাদের ছদ্মবেশে এসে রক্ত খাচ্ছে! আসলে কি বলতো তোর শরীরে এমনি তেই তো রক্ত কম , ভুতের ওই ইয়া বড় বড় দাঁত দিয়ে রক্ত চুষতে কষ্ট হবে তাই হয়তো মশার ছদ্মবেশ ধরেছে

কিছু টা থেমে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বললাম ,

হতেই পারে ”

বলেই আড়চোখে ইলুর দিকে তাকালাম , বেচারি একের পর এক ঢোক গিলছে আর এদিক ওদিক তাকিয়ে বারবার আমার দিকে চাপছে ,

ওর সাথে মজা করতে করতে ই হঠাৎ আবার সেই আওয়াজ কানে আসলো , এবার বোধ হয় ঘুঙুরের আওয়াজ টা বেশি আসছে বলে মনে হচ্ছে ,

আমি চুপ করে আওয়াজ শুনছি , ইলু ও এতক্ষণে শুনতে পেয়েছে , বেচারীর চেহারা রক্ত শুন্য হয়ে গেছে ভয়ে আমি ওর হাতের উপর আমার হাত রেখে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে বললাম ,

” ইলু তুই ভয় পাস না , এটা কোন মানুষের কাজ , আমি যখন সব বিষয়ে, সব দিক দেখছিলাম এমন একটা আর্টিক্যাল ও পড়েছি যাতে লেখা এই জমিদার বাড়ি টা অনেকে ভোগ করার জন্য মানুষের মাঝে মিথ্যা কথা ছড়িয়েছে যে এখানে ভুত আছে , আসলে এখানে কিছু ই নেই , যাস্ট এটা একটা বাড়ি নাথিং ইল’স ”

আমার কথা শুনে ইলুর মনে হয় ভয় টা কিছু টা কমছে , আসলে এসব আমি কখনোই শুনিনি , এছাড়া ওকে ভয় থেকে বের করার আর কোন উপায় ও ছিলো না তবে এটা যে একেবারে বানোয়াট তা কিন্তু না , হতেও পারে তদন্ত শেষে এটাই ঠিক হলো ”

” এই পূর্ণ এটা কিসের আওয়াজ রে ? ”

” মনে তো হচ্ছে ঘুঙুর এর ”

” আমাদের ভয় দেখানোর জন্য এটা বাজাচ্ছে না কি রে ? ”

ইলুর কথা টা যে একেবারে ফেলনা তা কিন্তু না , আমারো কেন জানি মনে হচ্ছে গভীর এক রহস্য জরিয়ে আছে এই জমিদার বাড়ি ঘিরে ,

” হুম হয়তো , চল তো! ”

আমার কথা শুনে ইলু আঁতকে উঠে বলল ,

” কোথায় ? ”

” আওয়াজের উৎস বের করতে ”

” কি দরকার বল ! ”

” তুই যাবি কি না বল , না হলে আমি একাই যাবো ”

বলেই মোম হাতে নিয়ে উঠে দাড়ালাম , আমার সাথে সাথে ইলু ও উঠে দাড়ালো ,

আমি প্যান্টের পকেটে দিয়াশলাই গুজে নিলাম , আমি হাঁটছি পিছনে পিছনে ইলু ও বের হলো , ঘর থেকে বের হয়ে মনে হচ্ছে আওয়াজ টা দোতলায় থেকে আসছে , আমি কাঠের সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলাম , পিছনে পিছনে ইলু ও , ধীর পায়ে হাটতে হাটতে বারান্দা দিয়ে এগুতে লাগলাম ,

এক এক করে ঘরের সামনে গিয়ে দাড়ায় , যেন আওয়াজ টা আসছে কি না দেখার জন্য , ধীরে ধীরে আমি আর ইলু দোতলায় একেবারে শেষ মাথায় যে বদ্ধ রুম টা সেখানে থমকে দাঁড়ালাম ,

হ্যা , আওয়াজ টা এই ঘর থেকে ই আসছে ,

আমি আলতো হাতে রুমটার দরজার হাতলে ধরলাম,

রুম টার দরজায় ধাক্কা দিলাম খোলার জন্য কিন্তু আশ্চর্য জনক ভাবে এটা খুলল না , বেশ কয়েকবার ট্রায় করলাম, নাহ্ খুলছে না , হঠাৎ মনে হলো তাল মারা না তো , হাতলের দিকে তাকিয়ে দেখলাম , বাইরে দিয়ে তালা মারা ও না তাহলে ?

তাহলে ভেতরে কি কেউ আছে ? অবাক করা হলেও সত্যি , এই দরজা টা অন্য সকল দরজা থেকে ভিন্ন , ডিজাইন টা ও অন্য রকম তাই কৌতুহল টা ও বেশি ,

বেশ কয়েক বার দরজার হাতল ধরে এদিক সেদিক করলাম কিছু তেই খুলছেনা ,

ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসতে গিয়ে ও থমকে দাড়ালাম, ঘাড় ঘুরিয়ে দরজার দিকে তাকালাম , আমার থমকে যাওয়া দেখে ইলু ভ্রু কুচকে তাকালো আমার দিকে মোম টা ওর হাতে দিলাম ,

সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষন করলাম দরজা টায় দু হাত দিয়ে নেড়ে চেড়ে দেখলাম , খানিকটা এগিয়ে গিয়ে পুনরায় দরজার হাতল ধরে খানিকটা উপর নিচ করে ভেতরের দিকে চাপ দিলাম ,

দরজা খুলে গেলো,

আমি বেশ খুশি হয়ে দরজা ধাক্কা দিলাম , দরজা খুলে গেলো ,

আমি হাতে মোম নিয়ে ভেতরে ঢুকলাম ,

বাট ভেতরে যা দেখলাম, সেটা কখনো কল্পনায় ও আশা করি নি ,

মোমের আবছা আলোই ভেতরে অনেক গুলো মানব কঙ্কাল ঝুলোনো দেখতে পেলাম , ঝুলোনো বললে ভুল হবে , একেকটা একেক এঙ্গেল এ রাখা , কিছু কঙ্কাল মনে হচ্ছে বসে আছে কিছু আবার মেঝেতে ছড়িয়ে আছে , পায়ের হাড্ডি এক জায়গায় তো খুলি আরেক জায়গায় , একটা কঙ্কাল দেখে বেশ অবাক হলাম , কঙ্কাল টা এমন ভাবে রেখেছে যেন তার দু হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ঘরের এক কেনে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে এমন মনে হচ্ছে , ঘরে আবার একটা বিছানা আর একটা টেবিল ও রাখা , কিন্তু বেশ আশ্চর্য জনক হলো টেবিলে বই তাক তাক করে সাজানো , আমি ধীর পায়ে টেবিলের দিকে এগুলাম , এক টা বই হাতে নিতে ই দেখি ইংরেজি সাহিত্যের বই ,

বাব বাহ্ আজকাল ভুতে রাও সাহিত্য চর্চা করে নাকি?

বাকি ঘর গুলোর মতো এটা তে বিন্দু পরিমাণ ধুলো নেই , মনে হচ্ছে প্রতিদিন ই এই রুম টা কেউ পরিষ্কার করে , কারো আসা যাওয়া প্রতিনিয়ত ই হচ্ছে

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এখানে থাকে কে ? প্রায় কয়েক যুগ ধরে তো কেউ এখানে আসেই না , তাহলে ? বেশ অনেক টা রহস্য আছে তাহলে!

কিছু ক্ষন আগে যে পায়ের শব্দ টা শুনলাম এগুলো ও বা কিসের ,

তবে খটকার বিষয় হলো , বারান্দা দিয়ে আসার সময় মনে হচ্ছিলো আমার আশে পাশে ই কেউ আছে , কারো চলা ফেরা আছে , আর আমার মন কখনো মিথ্যা যুক্তি দেখায় না , তাহলে কি আমরা ছাড়াও কেউ আছে এখানে ? , ঠান্ডা বাতাস আর দমকা হাওয়ায় নাকে কেমন চেনা গন্ধ লাগছিলো , হ্যা পারফিউম এর গন্ধ , কিন্তু কথা তো এটা না কথা হলো আজকাল ভুতেরা ও কি পারফিউম ইউজ করে নাকি ? হতেও পারে আধুনিক যুগের আধুনিক ভুততত ,

কিছু একটা মনে হতেই আমি ঘাড় ঘুরিয়ে ইলুর দিকে তাকালাম ,

ও ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে কঙ্কাল গুলোর দিকে ,

এগুলো কি আদৌ তেও কোন মানুষের তো ?

চলবে …

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে