ভালোবাসার প্রজাপতি পর্ব – ৬

0
939

#ভালোবাসার প্রজাপতি
#তাসনিম তামান্না
#পর্ব-৬

ইশরাককে এগিয়ে আসতে দেখে আফরা ভয় পেয়ে ছিটের সাথে লেগে গেলো…

আফরা ভয় পেয়ে তুতলিয়ে বলল

-ক..কি করছেন?

ইশরাক উত্তর দিলো না। আফরা চোখ বন্ধ করে ওড়না চেপে বসে আছে এই বুঝি কিছু ঘটবে।ইশরাক এগিয়ে এসে আফরার সিট বেল লাগিয়ে দিলো আফরার তখনো চোখ বন্ধ ইশরাক আফরার কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলল

-‘তুই কি ভেবেছিলি আমি তোকে কিস করবো? ছিঃ আই হেট ইউর ডাটি মাইন্ড মাই নোটি সুইট ওয়াইফ’

কথা শুনে আফরা হতবম্ভ হয়ে গেলো ততক্ষনা চোখ খুলে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো ইশরাকের দিকে। কথাটা বলে ইশরাক আফরার কানে ফু দিয়ে নাক টেনে বাঁকা হেসে গাড়ি ড্রাইভে মন দিলো। আফরা অবাকের রেস কাটিয়ে উঠে রেগে বলল

-‘ছিঃ কথার কি ছিড়ি। ডাটি মাইন্ড আমার না আপনার বুঝলে। লুজ কারেক্টার লোক একটা সুযোগ খোঁজে শুধু…..’

এইটুকু বলেই আফরা থেমে গেলো। ইশরাক বলল

-‘হ্যাঁ আমি লুজ কারেক্টার তারপর সুযোগ খুঁজি? আচ্ছা সুযোগ খুঁজে কি করি? কিস করছি তোমাকে? কই? কবে? কখন? মনে পড়ছে না তো?’

আফরা কিছু বলল না চুপ করে রইলো আসলে ওর এখন কিছু বলতে ইচ্ছে করছে না। কেনো করছে না তাও জানে না। আফরার প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে ইশরাক ও চুপ রইলো কেউ আর কোনো কথা বলল না সারারাস্তা। ১ ঘন্টা পর কলেজের কাছাকাছি আসতেই আফরা বলে উঠলো…

-‘স্টপ দাঁড়ান দাঁড়ান’

ইশরাক ভরকে গিয়ে ততক্ষণে গাড়ি থামালো। আফরা সিট বেল খুলে নামতে গেলে ইশরাক আফরার হাত ধরে আঁটকে দিয়ে বলল

-‘এই তুই এই মাঝ রাস্তায় কোথায় যাচ্ছিস?’

-‘আমি এই টুকু রাস্তা হেটে যেতে পারবো। আর তাছাড়া আপনি ঔ কলেজের প্রফেসর। স্টুডেন্ট আর টিচার একসাথে একগাড়িতে আসছে দেখলে বিষয়টা দৃষ্টি কটু দেখায়’

-‘আফরা আমি ওখানে জাস্ট কিছুদিনের লেকচারাল। বিকজ ওখানে প্রফেসর কিছুদিনের জন্য লিভ নিয়েছে তার পার্সোনাল কাজের জন্য আর প্রিন্সিপাল আমার বাবার ফেন্ড তার রিকুয়েষ্টেই আমি এখানে এসেছি আর তোর সাথে… ওর ওর নাথিং এলস’

-‘আমি আপনার কাছে এস্কিউস চাই নি। আমাকে এতো স্কিউস দেওয়ার কোনো মানেই হয় না। আর আপনি আমাকে বোঝাতে আসছেন যে আপনার হসপিটাল থাকার শর্তেও আপনাকে কলেজের জাস্ট কিছু দিনের জন্য লেকচারাল হিসেবে রাখতে চাইলো আর আপনি রাজিও হয়ে গেলেন আমাকে শিখাতে আসছেন। আমি জানি আপনি কেনো এসেছেন… আমাকে কষ্ট দিতে। আমাকে মেরে ফেলতে। আগের বার তো ফুলফিল মার্ডার করতে পারেননি তাই এইবার মাডার করে জাবেন!’

-‘আফরা!’

-‘হ্যাঁ বলেন। আমি না একটা কথা বুঝতে পারছি না ৪বছর পর এসে আপনি আপনার আমার প্রতি ভালোবাসার অনুভূতিটা বুঝতে পারলেন? এতোদিন কই ছিল এ ভালোবাসার? কই ওখানে যাওয়ার পর ফোন দেন নি? আমি বেচে আছি নাকি মারা গেছি সেটা একবারও জানতে চান নি? আপনি আমাকে আপনার থেকে দূরে থাকতে বলছেন আমি সেটাই করছি তাহলে কেনো এখন আপনি আমার পিছু পড়ে আছে? একটু বলবেন আমায়? এর উত্তর গুলা কি সে কি আপনার জানা আছে?’

ইশরাক কিছু বলল না শান্ত চোখে তাকিয়ে রইলো আফরার পানে আফরা সে দৃষ্টি উপেক্ষা করে হাত ছাড়িয়ে গাড়ি থেকে নেমে পড়লো। ইশরাক ও আর আফরাকে বাঁধা দিলো না।

কলেজের গেট পার হয়ে আফরা জোরে শ্বাস নিলো। একটু এগিয়ে গিয়ে রাণীকে দেখতে পেলো একা একা বকবক করছে আফরা রাণীর পাশে গিয়ে দাড়াতেই রাণী ধমকে বলল

-‘আইছেন পটের বিবি দূর হয়ে যা সামনে থেকে বাল’

আফরা বোকা বনে গেলো কি করলো ও যার জন্য রাণী ওকে ঝাড়ি দিলো তাই বলল

-‘কি হলো আমি আবার কি করছি? না-কি অন্যর রাগ আমার ওপরের ঝাড়তাছিস?’

-‘তোর জন্যই তো সব হলো….! দূর চল ক্লাসে চল কিছু না’

-‘ওফ তোর যে মাঝে মাঝে কি হয়! নিশ্চয়ই ভাইয়ার সাথে ঝগড়া লাগছে?’

-‘ঔই তুই ঔ মদনের কথা বলছি না মাঝে মাঝে মনে হয় তুই আমার না ওর ফেন্ড যা দূরে গিয়ে মর’

রাণী কথাটা বলে রেগে আফরার বাহুতে ধাক্কা দিলো। আফরা হাসতে হাসতে দূরে সরে গেলো।

.

আফরা ক্লাসে ডুকতেই নতুন মানুষ দেখলো কমবেশি সবাই সবার সাথে পরিচিত হচ্ছে। আফরা আর রাণী পিছনে বেঞ্চে গিয়ে বসলো সামনের বেঞ্চ বুক। কিছুক্ষণের মধ্যে প্রিন্সিপাল আর ইশরাক ক্লাস রুমের আসলো। প্রিন্সিপাল পড়াশোনা নিয়ে অনেক কিছু কথা বলে চলে গেলে। ইশরাক বলল…

-‘সো তোমরা তো জেনেই গেলে আমি কে? আজ যেহেতু তোমাদের এন্ড আমার কলেজের ফাস্ট ডে তো এক এক করে সবার আইডেন্টিটি দাও’

আফরা খেয়াল করলো প্রায় সব মেয়ে গুলা ইশরাকের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে কথা গিলছে। আফরা ইশরাককে মনে মনে কঠিন থেকে কঠিন গালি দিলো তাও রাগ মিঠছে না ইশরাককের মাথাটা ফাটাতে পারলে আফরার শান্তি লাগতো। কিন্তু সেটা কোনো ভাবেই সম্ভব না এমুহূর্তে তো কোনো ভাবেই না বাসায় থাকলে না হয় একটা চান্স নিয়ে দেখতে পারতো।

আজ কলেজের প্রথম দিন হওয়ায় ওতোটা ক্লাস হলো না। কলেজ শেষ করে আফরা আপনমনে ফুটপাত দিয়ে হাটছিলো। আফরা কলেজ শেষ করেও কোনো ক্লান্তি আসছে না উল্টা হাটতে ভালো লাগছে ওর। হঠাৎ ফাঁকা রাস্তায় আফরার পাশে গাড়ি থামাতেই চমকে তাকালো আফরা। আফরার গাড়িটা চিন্তে এক মুহুর্তও দেরি হলো না এটা ইশরাককের গাড়ি। ওমনি ক্লাসের রাগ মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো। আফরা কিছু বলতে যাবে তার আগে ইশরাক আফরার হাত টেনে গাড়িতে বসিয়ে গাড়ি চালাতে শুরু করে দিলো।

-‘কি শুরু করেছেন টা কি? আমাকে কি আপনার সরকারি মনে হয়? যখন যা খুশি তাই করছে আমার সাথে!’

ইশরাক উত্তর দিলো না নিরব হয়ে গাড়ি চালাতে লাগলো। ইশরাকের উত্তর না পেয়ে আফরা আরও রেগে বলল

-‘গাড়ি থামান, গাড়ি থামান বলছি, আমি আপনার সাথে যাবো না আমি একাই যেতে পারি বুঝলেন’

-‘হ্যাঁ আমি জানি সেটা। আপনি যদি ওমন আস্তে আস্তে হেঁটে বাসায় জান তাহলে আজ সারাদিনেও যেতে পারবেন না’

আফরার খেয়াল হলো মনে মনে বলল ‘সত্যি তো আমার এই বিষয়টা একটুও খেয়াল ছিলো না এটা আমার বাসার পাশের কলেজ না এটার দূর অনেক পুরনো অভাস হেঁটে বাসায় যাওয়া তাই আমি হাটছিলাম’

কিন্তু মুখে বলল

-‘তো কি হইছে আমি বাসে চলে যেতাম। আপনার গাড়ির তেল বেশি হয়ে গেছে নাকি? আপনার বাসা তো কাছেই। আপনি কেন খামখা আমাকে গাড়িতে উঠালেন’

-‘আমি ওখানেই যাচ্ছিলাম সেজন্য ভাবলাম তোমাকেও নিয়ে যায়’

আফরা আর কিছু বলল না।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে