ভালোবাসার প্রজাপতি পর্ব – ৭

0
843

#ভালোবাসার প্রজাপতি
#তাসনিম তামান্না
#পর্ব-৭

-‘হ্যাঁ রে আফরা আজ কলেজের প্রথম দিন কেমন ছিল?’

আফরা ডাইনিং টেবিলে বসতেই আফরার মা প্রশ্ন করে উঠলো। আফরা হেসে বলল

-‘হ্যাঁ আম্মু খুব ভালো ছিল’

-‘যাক তাহলে তো ভালোই’

-‘আরা কোথায় আম্মু?’

-‘আরামণি তো অয়নের কাছে ঘুমাচ্ছে’

-‘অয়ন ভাইয়া এখন বাসায় কেনো? ভাইয়া তো রাতে আসে?’

-‘হ্যাঁ বলল মাথা ব্যাথা করছে তাই চলে আসছে’

-‘তাহলে আরাকে ভাইয়ার কাছে দিলা কেনো? জ্বালাবে ভাইয়াকে’

-‘আরাও কাঁদছিলো আর অয়ন ও নিয়ে গেলো।’

-‘ওহ আম্মু খাইয়ে দাও তো নিজের হাতে খেতে ভালো লাগছে না’

আফরার মাও মেয়েকে সযত্নে খাইয়ে দিতে লাগলেন। আফরা আর আফরা মার কথা শুনে শিউলি বেগম এসে বসলেন পাশে। আফরা কাছে গিয়ে আস্তে আস্তে বলল

-‘হ্যাঁ রে আফরা আয়রা’কে আজ কাল দেখছি রুমের বাইরে এসে আমাদের কাজে হেল্প করছে তুই কি কিছু বলেছিলি না-কি রে?’

আফরার ভ্রু কুচকে এলো ও তো আয়রার সাথে কোনো কথাই বলে নি এসব নিয়ে তাহলে? আফরা মুখের খাবার গিয়ে বলল

-‘কই চাচি আমি তো আপুর কিছুই বলি নাই’

-‘তাহলে মেয়েটার কি হলো? এখন আরাকে সামনে দেখলে রেগে তেড়ে এসে মারেও না শুধু আরার দিকে তাকিয়ে থাকে’

-‘কি বলো? আমি তো এই ক’দিন এডমিশন, কলেজে ভর্তির জন্য খেয়াল দিতে পারি নাই’

আফরা চিন্তায় পড়ে গেলো। আয়রা আবার কি হলো? শিউলি বেগম ভাবুককন্ঠে বলল

-‘আচ্ছা যাকগে বাদ দে আমি ভাবলাম তুই হয় বা আয়রাকে কিছু বলছিস। মেয়ের যে কি হলো হয়ত নিজের ভুলটা বুঝতে পারছে ‘

-‘আমারও তাই মনে হয় ভাবী। আয়রা হয়ত নিজের ভুলটা বুঝতে পারছে’

-‘তাহলে কি এখনি অয়ন আর আয়রার বিয়ের কথাটা তুলবি?’

-‘না ভাবী আর ক’টা দিন যাক দেখি আমার মেয়ের মতিগতি কোন দিকে যায়’

-‘আমার ছেলে তো আয়রাকে ছাড়া বিয়ে করবে না বলেই দিয়েছে। আর আয়রাও তো একটা গতি হওয়া দরকার মেয়েটাও বড় হচ্ছে স্কুলে ভর্তি হবে আর কইদিন পর’

-‘ভাবী ভেবে দেখো অয়নের মতো ভালো ছেলেকে আমার মেয়ের মতো পড়াকাপালীর সাথে বিয়ে দিয়ে পরে যেনো আপসোস করতে না হয় আর তা ছাড়া আরাও তো আছে…..’

-‘আয়রাকে আমার ছেলের বউ হিসেবে আমার কোনো আপত্তি নাই রে আমি চাই ওরা যেনো সুখে থাকে ভালো থাকে আয়রা একটা ভুল করে তো তার মাসুল দিচ্ছে নিজে কষ্ট পাচ্ছে এতোগুলা বছর এবার ঠিক হওয়া দরকার’

আফরা ওদের কথা শুনলো কিন্তু কিছু বলল না। আফরাও চাই ওর বোন আয়রা একটু সুখ নামক বস্তুটা পাক ও জানে অয়ন আয়রাকে সুখে রাখবে। অয়ন আয়রাকে ভালোবাসে বলে এখনো আয়রার ভালোবাসা পাওয়ার আশায় এখনো বিয়ে করে নি।

কলেজ শেষ করে আফরা করিডোর দিয়ে হাটছিলো। আজকেও আফরাকে ইশরাক গিয়ে নিয়ে এসেছে এটা নিয়ে আফরা ইশরাককের সাথে ঝগরাও করছে কিন্তু ইশরাক আফরার কথার প্রতিউত্তর দেয় নি চুপ করেছিল। আফরা ইশরাককে চুপ থাকতে দেখে আরো রেগে যায় কিন্তু পরক্ষণে চুপ করে যায়। আফরা আপনমনে বিড়বিড় করে ইশরাককে বকতে বকতে হাঁটছি হঠাৎ করে কারোর সাথে ধাক্কা খেলো আফরার হাতে থাকা বইটা ছিটকে গিয়ে পড়লো। আফরা সামনে থাকা ব্যক্তিটাকে না। দেখে বইটা হাতে তুলে নিতে নিতে বলল ‘সরি একচুয়ালি আমি খেয়াল ক….’

সামনে থাকা ব্যক্তিটাকে দেখে আফরার কথা হাওয়া হয়ে গেলো চোখ দুটো মার্বেল মতো করে বই দিয়ে মুখ ডেকে দিলো এক দৌড় দাড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটা ‘আফরা’ ‘আফরা’ বলে ডেকেই যাচ্ছে। কিন্তু আফরা লোকটার ডাক শুনলো না। কলেজ গেটের বাইরে এসে ইশরাককের গাড়ি দেখে কোনো কিছু না ভেবেই গাড়িতে উঠে পড়লো। গাড়িতে উঠে জোরে জোরে শ্বাস নিলো পিছনে ফিরে দেখলো লোকটা আসছে কি না? কিন্তু না লোকটা নাই। ব্যাগ থেকে পানি বের করে ঢক ঢক করে খেয়ে নিয়ে শান্ত হলো চোখ বন্ধ করে সিটে এলিয়ে দিলো। মনে ভয় জমতে লাগলো আয়রা আরাকে হারানোর ভয় জমতে লাগলো। এর আগেও এই লোকটার সাথে দেখা হয়েছিলো আয়রা কথা শুনছিলো সেদিন ও আফরা পালিয়ে আসছিলো কিন্তু এ কথা ও কাউকে বলে নি কিন্তু আজ অয়নকে বাসায় গিয়ে বলতেই হবে সব কথা নাহলে যদি পরিস্থিতি খারাপের দিকে যায়? আফরার চোখের কার্ণিশ বেয়ে নোনাধরা বেরিয়ে এলো কিন্তু মুছলো না ওভাবেই রইলো কয়েক সেকেন্ড পর দরজা বন্ধ শব্দে আফরা চমকে উঠে চোখ মুছে নিল। ইশরাক অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো…

-‘বাবাহ! আজ সূর্য কোন দিকে উঠে? ম্যাডাম আমার গাড়িতে? ‘

আফরা ইশরাককের কথায় কান না দিয়ে বলল

-‘আমাকে একটু বাসায় পৌঁছে দিবেন? ‘

ইশরাককের কাছে আফরার গলাটা কেমন লাগলো। ইশরাক আফরার মুখশ্রী ভালো করে দেখে বলল

-‘আফরা কিছু হয়েছে? শরীর খারাপ লাগছে কি তোমার?’

ইশরাককের কথায় আফরা কোনো উত্তর দিলো না ওর মাথায় একটা কথায় ঘুরছে আরাকে হাড়িতে ফেলবে না তো? আয়রা কি নরক জীবনটা বেছে নিবে? অয়নের কি হবে? ঔ লোকটা কোনো ক্ষতি করে দিবে না তো?

ইশরাক আফরার উত্তর না পেয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো। আফরা ফোন বের করে অয়নকে ফোন দিলো। একবার, দুইবার, তিনবার অয়ন ফোন ধরলো না আফরার দূঃচিন্তা হতে লাগলো হাত কাঁপছে। ইশরাক আড় চোখে আফরাকে পর্যবেক্ষণ করছে। আফরাকে উদভ্রান্তের মতো লাগছে ইশরাক গাড়ি সাইডে ব্রেক করে আফরার দিকে তাকিয়ে বলল

-‘কি হইছে এমন করছিস কেনো? শরীর খারাপ লাগছে?’

আফরা অশ্রু সিক্ত নয়নে তাকালো ইশরাকের দিকে। ইশরাকে বুকে মোচর দিয়ে উঠলো। আফরাকে বুকে টেনে নিয়ে বলল

-‘কি হয়েছে জান? বল আমাকে?’

আফরা ইশরাককের জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে দিলো। ইশরাক বুঝতে পারছে না আফরার কি হলো এ-তো কিছুক্ষণ আগেও ভালো ছিল এখন হঠাৎ কি হলো। ইশরাক আফরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল

-‘আচ্ছা কান্না থামিয়ে বলল আমাকে কি হইছে? ‘

আফরার কান্না থেমে এলে ইশরাক বলল

-‘বল এবার কি হইছে?’

আফরা নিজের অবস্থান বুঝতে পেরে সরে এলো তৎক্ষনাৎ চোখ মুখ মুছে বলল

-‘কিছু হয়নি চলে আপনি’

ইশরাকের মেজাজ চটে গেলো। রেগে এগিয়ে আসতে আসতে বলল

-‘এতোক্ষণ কেঁদে আমার শার্ট নষ্ট করে এখন বলিস কি না কিছু হয়নি? বল কি হইছে আজকে তোর মুখ থেকে কথা বের করে ছাড়বো’

আফরা ইশরাককের এগিয়ে আসা দেখে ভয় পেয়ে ইশরাককের কাছে হাড় মেনে বলল।

-‘বলছি বলছি দূরে যান প্লিজ ‘

ইশরাক ছিটে বসে বলল

-‘শুরু কর’

আফরা ঢোক গিলে কাপা গলায় বলল

-‘আ… আজ আ…আপুর বয়ফ্রেন্ডকে দেখছি ও না র সাসাথে আমার আগেও দে দেখা হইছিলো আর ওনি আমার কাছে আয়রার কথা শুনছিল…. ‘

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে