ভালোবাসার প্রজাপতি পর্ব – ৫

0
866

#ভালোবাসার প্রজাপতি
#তাসনিম তামান্না
#পর্ব-৫

আজ আকাশটা গুমোট গম্ভীর ভাবে আছে থেকে থেকে ঠান্ডা বাতাস বইছে।সময়টা দুপুরের হলেও দেখে মনে হচ্ছে সন্ধ্যা নেমে আসছে। মনে হচ্ছে এইটু বাদেই বৃষ্টি নামবে। আফরার ঘরে মন বসছে না। বই, খাতা, কলম ফেলে ছুট লাগালো ছাদে। আজ কইদিন যে ধকল যাচ্ছে তার ক্লান্তি দূর করার জন্য রিফ্রেশমেন্ট দরকার। বাসার সবাই দুপুরের খাবার খেয়ে ঘুম দিচ্ছে তাই আফরার ছাদে আসার সময় কারোর চোখে পড়ে নি। আফরা ছাদের মাঝক্ষানে গিয়ে দু-হাত মেলে দিয়ে বুক ভরে শ্বাস নিলো। যেনো শান্তি পাচ্ছে। মাথা থেকে ভারি বস্তু সরে যাচ্ছে। বন্দী কালো কেশগুলা উনুক্ত করে দিলো। ধীর পায়ে রেলিংয়ে ঠেস দিয়ে দাড়ালো।
কদিন তো আফরার দম ফেলার সময় পেতো না রেজাল্ট ভালো হওয়ায় ঢাকা মেডিক্যালে চান্স পেয়ে গেছে অবশ্য অনেকের রেজাল্ট ভালো হওয়ায় চান্স পাই না কিন্তু আফরার কপাল ভালো হওয়ায় চান্স পেয়ে গেছে সাথে রাণীও।

আফরা সব কষ্ট, ক্লান্তি,দূঃচিন্তা, দূরে রেখে গুনগুন করে গেয়ে উঠলো…

‘এই মেঘলা দিনে একলা
ঘরে থাকে না তো মন
কবে যাবো কাছে পাবো
ও গো তোমার নিমন্ত্রণ’

গানের কলি গাইতে গাইতে আফরা চোখের সামনে আশা ছোট চুলগুলা কানের পিঠে গুঁজে দিলো। তাতে অবশ্য কোনো কাজ হলো না অবাধ্য চুল গুলা আবার সামনে চলে আসলো। আফরা আর সেগুলা সরালো না সরাতে ইচ্ছে করলো না বেশ ভালোই লাগছে ওর দমকা হাওয়া এসে সে চুলগুলা এলোমেলো করে দিচ্ছে। বৃষ্টি ফোঁটা পড়তেই আফরা চোখ বন্ধ করে আকাশে দিকে মুখ করে দু-হাত মেলে দিলো।

“বৃষ্টিবিলাশিনি তোমার স্নৃগ্ধ মায়াভরা মুখশ্রী বার বার আমাকে তোমার ‘ভালোবাসার প্রজাপতির’ ডানায় আটকা পড়তে বাধ্য করে। কেনো এতো পোড়াও আমায়? নাওনা আপন করে একটিবার”

আফরা চমাকালো! থমকালো! পিছন ফিরে বিষ্ময় নিয়ে প্রশ্ন করলো…

-আপনি এখানে? কখন এলেন?

ইশরাককের ঘোর কাটলো আফরার কথায় গলা ঝেড়ে মজার নিয়ে বলল…

-‘হ্যাঁ। আপনি যখন দৌড়ে ছাদে আসলেন তখন ভাগ্যক্রম বসতো আমি শিরি দিয়ে আসছিলাম আর আপনাকে এদিকে আসতে দেখে আমি ও আসলাম দেখতে কোন ছেলের সাথে প্রেম করছেন? কিন্তু এসে দেখলাম কেস উল্টে! ফ্রীতে ফ্লিমও দেখা হলো? রোমান্টিক ওয়েদারে নায়কার নাচানাচি!’

আফরা কিছু বলল না। ও জানে ইশরাক ওকে রাগানোর জন্য এসব বলছেন। তাই ধীর পায়ে ইশরাককের পাশ কাটিয়ে চলে আসতে নিলেই ইশরাক আফরার হাত টেনে ধরলো। আফরা চমকালো কিন্তু পিছন ফিরলো না ওভাবেই দাড়িয়ে রইলো। ইশরাক বলল

-‘আমার থেকে পালাছিস?’

ইশরাককের কন্ঠ কেমন শোনালো আফরার কাছে। আফরা পিছন ফিরে ইশরাককের চোখের দিকে তাকালো কিন্তু সেটা কয়েক সেকেন্ডের জন্য ও জানে ঔ চোখ ওর সর্বনাশ। তাই ঔ চোখে চোখ রাখতে পাড়লো না। চোখ ফ্লোরে স্থির করে বলল…

-‘পালাবো কেনো? আর আপনার থেকে পালানোর প্রশ্নই আসে না। আপনি এমন তো বিশেষ কেউ নন যে পালাবো’

-‘ও আচ্ছা আমার চোখের দিকে তাকিয়ে একথা গুলা বলতো দেখি’

আফরার কেমন অসস্থি হতে লাগলো। হাত মুছড়াতে মুছড়াতে কঠিন গলায় বলল

-‘ছাড়ুন আমার হাত। আপনার কোনো রাইট নাই আমার হাত ধরার’

ইশরাক হাসলো হেসে বলল

-‘জানি পারবি না। তাইতো কথা ঘোরাতে চাইছিস। আর রইলো এই হাতের, এই হাততো শুধু আমার ধরার অধিকারই থাকবে দেখে নিস’

কথাগুলা বলে আফরার হাত একপ্রকার ছুড়ে মাড়লো। আফরা ব্যাথা পেলো হাতে। আফরা ব্যাথাতুর কন্ঠে বলল…

-‘কেনো করছেন এমন? আমি তো আপনাকে জ্বালায় না তবুও এমন কেনো করছেন?’

ইশরাক ছাদ থেকে চলে আসছিলো আফরার কথা শুনে একটু দাড়িয়ে উত্তর না দিয়ে চলে গেলো। আফরা হাত ডলতে লাগলো। আফরা ইশরাককের বিহেভিয়ারে অবাক হচ্ছে এটা সেই আগের ইশরাক নয়! ও এই ইশরাকে চিনে না! আফরা আর কিছু না ভেবে ছাদ থেকে নেমে আসলো…

বাসার দরজা খোলা থাকায় বাসায় ডুকে পড়লো। ড্রাইংরুমে আসতেই দেখলো ইশরাক আর অয়ন কথা বলছে। আফরা কোনো কথা না বলে রুমের দিকে চলে আসলো কিন্তু কিছু কথা কানে আসলো আফরার…

-‘শুনলাম তোর নাকি কোন কলেজে জব হয়েছে?’

-‘হ্যাঁ…’

আর কিছু শুনতে পেলো না আফরা। আর বেশি কৌতূহলও দেখালো না এ ব্যাপারে। রুমে গিয়ে রাণীর সাথে কথা বলল। অতঃপর আরা ঘুম থেকে উঠে গেলে আরাকে ফ্রেশ করিয়ে কিছুক্ষণ দুষ্টুমি করলো। সন্ধ্যার সময় ড্রাইংরুমে এসে দেখলো ইশরাক নেই চলে গেছে। আফরা হাফ ছেড়ে বাচলো। সেদিন চলে গেলো আফরার রাতে ঘুম হলো না। কাল থেকে স্বপ্ন পূরণের শুরু ভেবে। মনে এক আলাদা শান্তি অনুভূতি কাজ করছে।

★★★

সকাল সকাল ইশরাককে আফরাদের বাসায় দেখে আফরার ভ্রু কুচকে আসলো বিরবির করে বলল ‘এই লোকের কি কোনো কাজ নাই সারাদিন এবাড়ি থাকে কেনো? নাকি আন্টি বাসা থেকে বের করে দিসে? দিলে তো ভালো করছে? ঠিক। একদম বেশ হইছে!হুম’

কিছু না বলে চুপচাপ ইশরাককের ওপর পাশে চেয়ার টেনে বসলো। আফরা বসতেই আফরার মা আফসানা বেগম বলতে লাগলেন…

-‘শোন ওখানে গিয়ে সারাক্ষণ বইয়ের মধ্যে ডুকে যাস না আবার! ঠিক মতো খেয়ে নিবি, আমি বক্সে খাবার দিয়ে দিয়েছি বাইরের খাবার খাবি না শরীর খারাপ করবে কিন্তু আর শোন তুই……’

-‘আম্মু থামো তো আমি ওখানে থাকতে যাচ্ছি না ক্লাস শেষ হয়ে গেলে চলে আসবো এমন করছ যেনো কোথায় যাচ্ছি’

-‘হ্যাঁ তোমার তো আবার কোনো দিকে খেয়াল থাকে না সেজন্য বলছি। আর ইশরাক তো আছে কোনো অসুবিধা হলে জানাবি’

-‘মানে’

অয়ন স্যান্ডুইস খেতে খেতে বলল

-‘ইশরাককের তোর কলেজের শিক্ষক। আর শোন কলেজে যেহেতু আজ প্রথম দিন আমি নিয়ে যেতে চাইছিলাম কিন্তু একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ পড়ে গেলো তুই ইশরাককের সাথে যা’

আফরা অবাক হলো। পরমুহূর্তেই মুখ চুপসে গেলো। এখন না ও বলতে পারবে না বললেই অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। আফরা একটুখানি খেয়ে উঠে গেলো। ইশরাকের খাওয়া শেষ হতেই। আফরাকে তাড়া দিতে লাগলো। আফরা আরাকে আদর করে। ইশরাককের গাড়িতে গিয়ে বসলো। ইশরাকও গাড়ি স্টার্ট দিলো। কিছু দূর গিয়ে ইশরাক গাড়ি থামালো। আফরা ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করলো

-‘গাড়ি থামালেন কেনো?’

প্রশ্নটা করে থেমে গেলো আফরা। ইশরাক আফরার দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে। ইশরাককে এগিয়ে আসতে দেখে আফরা ভয় পেয়ে ছিটের সাথে লেগে গেলো…..

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে