ভালোবাসার তুই পর্ব-০৩

0
2783

#ভালোবাসার_তুই
#Part_03
#Writer_NOVA

ওয়াস রুম থেকে বের হয়ে আশেপাশে তাকিয়ে কাউকে খুঁজলো ।গোসল সেরে তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে আরেকবার চোখ দুটো এদিকে সেদিকে ঘুরালো এনাম।না,কোথাও নেই। গেলো কোথায়?ঘুম থেকে উঠেও তো দেখলো না।বারান্দায়, কিচেনেও উঁকি মারলো সেখানে নেই ।সকাল সকাল কি একটা জলজ্যান্ত মানুষ উধাও হয়ে গেল।ঠিক তখনি সদর দরজা ঠেলে প্রবেশ করলো এনাজ।হাতে এক হালি ডিম দেখা যাচ্ছে। চোখ দুটো ছোট করে মুখে বিরক্তি নিয়ে এনাম ওর বড় ভাই এনাজের দিকে তাকালো।

এনামঃ কোথায় ছিলে তুমি??
এনাজঃ হাতে কি ডিম দেখতে পাচ্ছিস।না পেলে বল আমি দুটো তোর মাথায় ভেঙে দেখিয়ে দেই।
এনামঃ আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।তুমি এতো সকাল সকাল কোথায় চলে গিয়েছিলে?সব জায়গায় খুঁজে পাই নি।
এনাজঃ আজ তোর কলেজ নেই?
এনামঃ আছে তো।সেই জন্য সকাল সকাল গোসল করে তৈরি হয়ে নিয়েছি।অনেক খুদা লেগেছে ভাইয়া।জলদী কিছু করো।আজ কি বাসায় রান্না হয়েছে?
এনাজঃ ভাত রান্না করেছি।সাথে ভেবেছিলাম ডিম ভুনা করবো আলু দিয়ে। কিন্তু ফ্রিজ খুলে দেখি ডিম নেই। তাই দোকান থেকে গিয়ে ডিম নিয়ে এলাম।ভাই তুই একটু অপেক্ষা কর।ভাতের মার ঝরাতে দিয়ে গেছি।তারাতাড়ি করে এখন ডিম ভুনা করলে হয়ে যাবে।

এনাজ জলদী করে কিচেনে গিয়ে ছোট একটা পাতিলে ডিম সিদ্ধ বসিয়ে দিলো।ভাতের মার ঝরা শেষ হয়ে গেছে। তাই পাতিল উঠিয়ে ভাত একটা ছোট বোলে বেড়ে নিলো।এনাজ আহমেদ ও এনাম আহমেদ। সম্পর্কে আপন ভাই। ৩ বছরের ছোট-বড়।বাবা-মা খুব ছোটবেলায় মারা গেছে। এনাজের বয়স ২৬ বছর আর এনামের ২৩ বছর।এনাম এখনো পড়াশোনা করেছে। এনাজ মাস্টার্সে পড়ার পাশাপাশি একটা বেসরকারি কোম্পানিতে মোটামুটি ভালো পজিশনে চাকরি করে।দুই ভাই দেখতে, শুনতে মাশাল্লাহ। এতিম ছেলে হলেও দুজনের মাঝে কোন বেড হেবিট নেই। লোকজনের সাথে মেলামেশা খুব কম।এলাকার লোক ওদের দুজনকে ভালো হিসেবে জানে।দুই ভাই একটা ছোট বাসায় ভাড়া থাকে।

ডিম সিদ্ধ হতে হতে এনাজ একটা ছুরি নিয়ে আলু কুচি করে কেটে নিল।সাথে পেঁয়াজ ও মরিচ। রান্না করতে ভালোই পারে সে।বেঁচে থাকার তাগিদে রান্নাটাও শিখে নিয়েছিলো সে।খুব দ্রুত ডিমের খোসা ছারিয়ে নিলো। পেঁয়াজ লাল হয়ে এলে মশলা কষিয়ে নিলো।খুব জলদী করে রান্না শেষ করলো।এনাম তৈরি হয়ে এসে দেখলো তার বড় ভাই টেবিলে খাবার সাজাচ্ছে।

এনামঃ এতো তাড়াতাড়ি হয়ে গেল ভাই!!!
এনাজঃ আমি তোর মতো এতো অলস নই।
এনামঃ এভাবে অপমান না করলেও পারো ভাই।
এনাজঃ হয়েছে কথা কম বলে জলদী খেয়ে কলেজে যা।আমার অফিসের জন্য তৈরি হতে হবে।
এনামঃ আজ এত দেরী যে??
এনাজঃ অফিসে মিটিং আছে। ১০ টায় শুরু হবে।এতো তাড়াতাড়ি গিয়ে কাজ নেই।

দুই ভাই একসাথে বসে খাবার খেয়ে নিলো।দুপুরের খাবারটা ছারা বাকি দুই বেলা একসাথে খাবার খায় ওরা।দুই ভাইয়ের মধ্যে ভীষণ মিল।এনাম বোল থেকে ভাত বেড়ে নিয়ে এনাজকে বললো।

এনামঃ ভাই এবার একটা বিয়ে কর।তাহলে অন্ততপক্ষে আর কিছু হোক বা না হোক, সকালে তোকে এত কষ্ট করে রান্না করতে হবে না।
এনাজঃ খুব শীঘ্র একটা কাজের বুয়া রাখবো।ঢাকার শহরে কাজের মানুষ পাওয়া অনেক টাফ।
এনামঃ তুই কি বিয়ে করবি না?
এনাজঃ তুই রান্নার মানুষের চিন্তা করছিস তাই তোকে চিন্তামুক্ত করলাম।এখন বিয়ের কথা কেন বলছিস?
এনামঃ বয়স তো কম হলো না ভাইয়া।এবার তোর বিয়ে করা উচিত।তোর যদি কোন পছন্দ থাকে তাহলে তাকেই বিয়ে করে নিয়ে আয়।
এনাজঃ মেয়েটা কে?
এনামঃ কোন মেয়ে?
এনাজঃ তোর নিশ্চয়ই কোন মেয়ে পছন্দ হয়েছে। নয়তো আমাকে বিয়ের জন্য বলতি না।কোথায় এতোদিন তো এসব কথা বলিস নি।
এনামঃ আমি এমনি বলছি।তুমি নেগেটিভ মাইন্ডে নেও কেন?
এনাজঃ তোর এসব ফালতু বকবক শোনার সময় আমার নেই। আমার খাওয়া শেষ। তুই খাবার শেষ করে কলেজে চলে যা।আর হ্যাঁ,আমার বিয়ে নিয়ে তোর চিন্তা করতে হবে না।আমার যাকে পছন্দ হবে তাকেই বিয়ে করবো।বিয়েটা মনে হয় খুব তাড়াতাড়ি করতে চেলেছি।

আনমনে মুখ ফসকে কথাটা বলে ফেললো এনাজ।কিন্তু তার ছোট ভাই প্রথমে কিছু না বুঝলেও কিছু সময় পর জিজ্ঞেস করলো।

এনামঃ ভাই তুমি সবার শেষে কি বললে?তুমি খুব শীঘ্র বিয়ে করবো।কেউ পছন্দ আছে নাকি।প্লিজ ভাইয়া বলো না ভাবী কোথায়?আমি তাকে দেখতে চাই।

এনাজ জিহ্বায় কামড় দিয়ে অন্য দিকে ঘুরে গেলো।মুখ ফসকে কি বলে ফেললো সে?ঐ লিপস্টিক পাগলী ওর রাতের ঘুম হারাম করে ফেলেছে।এখন তার জন্য সবার সামনে উল্টো পাল্টা কথাও বলছে।মাত্র দুই দিনে মনের অনেক অংশ জুরে গেছে সে।

এনামঃ ভাইয়া বলো না, তোমার কেউ আছে নাকি?ভাবিকে ঘরে তুলবে কবে?প্লিজ, প্লিজ ভাইয়া। আমাকে ভাবীর সাথে দেখা করিয়ে দেও।
এনাজঃ কথা কম বল।তোর কোন ভাবী নেই।

এক মিনিট দেরী না করে হনহন করে চেয়ার থেকে উঠে রুমে চলে গেল। সেখানে গিয়ে অফিসের জন্য তৈরি হতে লাগলো।এনাম ঠোঁট উল্টে খাবারে মনোযোগ দিলো।খাবার শেষ করে যেতে নিলে পেছন থেকে এনাজ ডাক দিলো।এনাম পেছন দিকে না ঘুরে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো।সে এখন বড় ভাইয়ের সাথে রাগ করেছে।

এনাজঃ আমি তোদের কলেজের ঐ দিক দিয়েই যাবো।তোকে নামিয়ে দিয়ে যাবো।আমার সাথে বাইকে চলে যাস।

বাইকের চাবি নিয়ে কাঁধে ব্যাগটা ঝুলিয়ে নিলো এনাজ।তারপর ভাইয়ের সাথে বাইকে রওনা দিলো কলেজের উদ্দেশ্য।বাইক থামলো কলেজের গেইটে।এনাম কোন কথা না বলে ভেতরে ঢুকে গেল। পেছন থেকে জোরে ডাক দিলো এনাজ।কোন কথা না বলে এনাম ভেতরে চলে এলো।এনাজ বাইক সাইডে রেখে দৌড়ে এনামের কাছে এলো।কাঁধে হাত রেখে বললো।

এনাজঃ কি রে কি হয়েছে তোর?রাগ করেছিস আমার সাথে। নে ধর। টাকাগুলো রেখে দে।কাজে লাগবে।
এনামঃ (নিশ্চুপ)
এনাজঃ তোর ছোট বাচ্চাদের মতো অভিমান করা এখনো যায়নি।অনেক বড় হয়েছিস।কিছু দিন পর যখন আমি তোর সাথে থাকবো না। তখন কি করবি?
অস্ট্রেলিয়া গিয়ে তোকে পড়াশোনা করে অনেক বড় হতে হবে।

এনাম হুট করে ভাইকে জরিয়ে ধরলো। কাধে মুখ গুঁজে কান্না করলো।এনাজ আলতো হাতে ধরে রেখেছে। তার মনটাও সায় দেয় না ভাইকে দূরে পাঠাতে।কিন্তু ভাইয়ের ভালোর জন্য তো পাঠাতে হবেই।এনামকে নিজের থেকে ছারিয়ে টাকাগুলো ভাইয়ের পকেটে গুঁজে দিলো এনাজ।তারপর চোখ মুছতে মুছতে গেইট দিয়ে বের হয়ে গেল।এনাম দাঁড়িয়ে ভাইয়ের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। এই মানুষটা নিজের জন্য একফোঁটাও ভাবে না।সবকিছু তার এনামকে ঘিরে।এনাম ভালো থাকলেই এনাজ ভালো থাকে।দুই ভাই একে অপরের আত্মার সাথে মিশে আছে। কেউ কাউকে ছারা থাকতে পারে না।

এনামঃ সবসময় আমার কথা ভাববে।নিজের দিকে একটু নজর নেই। শুধুমাত্র আমার ভালোর জন্য আমাকে অস্ট্রেলিয়ায় পাঠাবে।নিজের ভবিষ্যতের জন্য একটুও খেয়াল নেই। বড় ভাইরা মনে হয় এমনি হয়।নিজের শখ,ইচ্ছা, সবকিছু বিসর্জন দিয়ে ছোট ভাইয়ের ভবিষ্যতে গড়ে দেয়।নিজের সুখগুলোকে বিসর্জন দিয়ে ছোট ভাই-বোনের শখ পূরণ করে দেয়। বড় ভাইরা নিজের আনন্দ বিক্রি করে অন্যের আনন্দ এনে দেয়।স্যালুট তোমাকে ভাই। তুমি না থাকলে আজ আমি এতদূর আসতে পারতাম না।রাস্তায় অনাহারে, অনাদরে,অবহেলায় মরেই যেতাম।

বড় করে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে চুপচাপ হেঁটে ভেতরে চলে গেল। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে সব ছেড়ে নিজের ভাইয়ের সাথে থাকতে।কিন্তু তা হবে কিনা সে জানে না।অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার দিন তো ঘনিয়ে আসেছে।
কি হবে, কি করবে সেটা এনাম নিজেও জানে না।ভাইকে ছাড়া তার কিছুই ভালো লাগে না। মন খারাপ করে ক্লাস রুমে চলে গেল।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে