ভালোবাসার তুই পর্ব-০৪

0
2358

#ভালোবাসার_তুই
#Part_04
#Writer_NOVA

কলেজের গেইট দিয়ে ঢুকতে দেরী কিন্তু আমার পিঠে দুরুম দারুম কিল পরতে দেরী হলো না।কি হলো আমার সাথে সেটা বুঝতে আমার কিছু সময় লাগলো।ততক্ষণে আমার পিঠ আলু ভর্তা হয়ে গেছে। আমি পিঠ ধরে মা গো, বাবা গো বলে চিৎকার শুরু করলাম।

আমিঃ ও বাবা গো, মা গো।কে কোথায় আছো গো?আমায় বাঁচাও গো।আমার পিঠে তাল পরছে।কোন হারামী আমার পিঠে কিল দিলো রে।আজ তার একদিন কি আমার একদিন?আমার সাথে লাগতে আসার মজা ভালো হবে না।

রেগে বাঘের মতো তাকাতেই বিড়াল হয়ে গেলাম।সামনে আমার পুরো বান্ধবী টিম কোমড়ে হাত দিয়ে খাইয়া ফালামু লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে। আমি চোখ দুটো এদিক সেদিক ঘুরিয়ে একটা বলদা মার্কা হাসি দিলাম।কিন্তু মন জয় করতে পারলাম না। সামনে আমার তিন বান্ধবী শারমিন,সিফা,মৌসুমি দাঁড়িয়ে আছে। এতটা রেগে আছে যে ওদের চোখের দিকে তাকাতে পারছি না।

শারমিনঃ এই তোর আসার সময় হলো।দুই দিন ধরে তোর কোন খোঁজ-খবর নেই।

সিফাঃ তোর কি হয়েছে বল তো?

মৌসুমিঃ আমরা বড়লোক্সদের সাথে কথা বলি না।

আমিঃ ঢংগীগুলি।আমার কোন খোঁজ-খবর নিছোত।একটা কলও তো করিসনি।

আমি রেগে ওদের দিকে তাকাতেই ওরা আমার দিকে দ্বিগুন রেগে তাকালো।আমি চুপ হয়ে মুখে এক আঙুল দিয়ে রাখলাম।

সিফাঃ তোর ফোন বন্ধ কেন?কতবার তোকে কল দিছি তোর ধারণা আছে।

মৌসুমিঃ তোর আম্মুর কাছে ফোন করে জানতে পারলাম তুই মামার বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিস।তুই তো ঐ বাড়িতে গেলে আমায় ভুলে যাস।

শারমিনঃ কে তুই? যা যেখানে থেকে এসেছিস সেখানে যা।আমরা তোকে চিনিনা।

আমিঃ ওরে আমার শারু বেবি,তুমি রাগ করছো আমার সাথে। এবার বুঝতে পেরেছি ঢংগীরা।আমার সাথে অভিমান করেছো।আহারে!!! ঢং না করে ভেতরে চল।আমার ক্ষুধা লাগছে।

মৌসুমীঃ বাসা থেকে খেয়ে আসিস নি?

আমিঃ হুম খেয়েছি। এখন আবার খাবো।তোর কোন সমস্যা? আমার বাপের টাকায় খাই তোর কি রে?

মৌসুমিঃ আমি এমনি বললাম।তাই বলে এভাবে অপমান করবি।

আমিঃ অপমানের দেখছিস কি?সবে তো শুরু করেছি।এখনো আরো বাকি আছে। ঐ সিফু আমার ব্যাগটা ধর তো।আমি ব্যাগ থেকে লিপস্টিক বের করে ঠোঁটে দিমু।ঠোঁটের লিপস্টিক হালকা হয়ে গেছে।

শারমিনঃ পৃথিবী উল্টিয়ে যাবে তারপরেও তোর লিপিস্টিক দেওয়া বন্ধ হবে না।বাসা থেকে দিয়ে আসতে আসতে খেয়ে ফেলছিস।

আমি ব্যাগ থেকে আয়না ও লিপস্টিক বের করে নিলাম।ব্যাগটা সিফার হাতে দিয়ে লিপস্টিক নিজের হাতে নিলাম।আয়নাটা মৌসুমির হাতে দিয়ে দিলাম।

আমিঃ চুপ কর।আমার আয়নাটা ধর তো।লড়াচড়া করবি না।সুন্দর করে ধর না রে।আমি তো ভালো করে দিতে পারছি না।যদি লিপস্টিক দেওয়া সুন্দর না হয় রে তোদের তিনটার খবর আছে।(রেগে)

মৌসুমিঃ বিয়ের পর কোন দিন জানি লিপস্টিকের কারণে ওর জামাইকে ডিভোর্স দিয়ে দেয়।বলবে তোর থেকে আমার লিপস্টিক বেশি দামী।

আমিঃ পাগল হলেও এতটা পাগল হয়নি।নিজের জামাইরে ডিভোর্স দিয়া দিমু।জাতে পাগল হলেও তালে ঠিক আছি।

সিফাঃ যাক তোর তাহলে সুমুতি হয়েছে। নিজের জামাইকে ডিভোর্স দিবি না।

আমিঃ আরে বলদী জামাইরে ডিভোর্স দিলে তো মন মতো লিপস্টিক কিনতে পারুম না।যেই ব্যাটারে বিয়া করুম তার থিকা লিপস্টিক কিনে তারে ফকির বানাই ফালামু।

মৌসুমিঃ তুই বদলাবি না।
আমিঃ হইছে এবার ভেতরে চল।

চার বান্ধবী একসাথে ভেতরে চলে গেলাম।দুই দিন ওদের ছারা ছিলাম।কিন্তু মনে হচ্ছে কতদিন পর সবার দেখা হয়েছে।

🍂🍂🍂

আজকাল অফিসের চাপ একটু বেশি এনাজের।নিশ্বাস ছারার জো নেই। কোম্পানির মালিক এনাজকে অনেক পছন্দ করে।কারণটা হলো ওর পার্সনালিটি।খুব কম সময়ে সবার মন জয় করার ক্ষমতা রাখে সে।মাথায় হাত দিয়ে কেবিনে বসে আছে। তখনি রুমে ঢুকলো কোম্পানির ম্যানেজার রুহুল আমিন সাহেব।

রুহুলঃ মাথা ব্যাথা করছে নাকি এনাজ?

এনাজঃ আসালামু আলাইকুম স্যার।কেমন আছেন?

রুহুলঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুমি কেমন আছো?
এনাজঃ আলহামদুলিল্লাহ।

রুহুলঃ মুখ দেখে তো মনে হচ্ছে না ভালো আছো।কি হয়েছে তোমার?

এনাজঃ কিছু না।একটু মাথা ধরছে।কিছু বলবেন স্যার।হঠাৎ এই সময়।

রুহুলঃ একটা কথা বলতেই এসেছিলাম।তোমার শরীরটা যখন ভালো না তাহলে পরে বলব।

এনাজঃ না না সমস্যা নেই। বলুন আপনি।

রুহুলঃ পারিবারিক কাজের জন্য কিছু দিন ঢাকায় যেতে হবে।তুমি যদি আমার কাজগুলো একটু সামলে নিতে।অনেক জরুরি দরকার।তা না হলে যেতাম না।তোমার ওপর ভরসা আছে আমার।তাই এই দায়িত্ব তোমাকে দিতে চাইছি। অন্য কারো ওপর তোমার মতো ভরসা করতে পারি না।প্লিজ বাবা,তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিও না।

এনাজঃ এ কেমন কথা স্যার।আপনি নিশ্চিন্তে আমার ওপর ভরসা করে যেতে পারেন।আমি অবশ্যই আপনার দেওয়া দায়িত্ব যথাযথ পালন করবো।এতটুকু আস্থা আমার নিজের ওপর আছে স্যার।

রুহুলঃ তুমি আমাকে চিন্তামুক্ত করলে বাবা।আল্লাহ তোমার ভালো করুক।আমি এখন আসছি।তুমি পিয়নকে ডেকে গরম গরম এক কাপ চা কিংবা কফি
খেয়ে নেও। মাথা ধরাটা কিছুটা হলেও কমবে।

এনাজঃ জ্বি আমি খেয়ে নিব।আমার ও আমার ছোট ভাইয়ের জন্য দোয়া করবেন স্যার।

রুহুলঃ আমার দোয়া সবসময় তোমাদের সাথে আছে।আর হ্যাঁ,শুনো তোমাকে বলতে হবে না।আমি এদিক দিয়ে যাওয়ার সময় পিয়নকে বলে দিবো।তোমার আর কষ্ট করে বলতে হবে না।

এনাজঃ ধন্যবাদ স্যার।

রুহুলঃ ধন্যবাদ দিয়ে আমাকে ছোট করো না এনাজ।ধন্যবাদ তো তুমি পাওনা আমার কাছ থেকে। আমি নয়।

এনাজ মুচকি হাসলো।রুহুল আমিন সাহেব এনাজের মাথায় হাত বুলিয়ে দ্রুত রুম ত্যাগ করলো।এনাজ তার যাওয়ার পানে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।

🍂🍂🍂

পরের দিন……..

ক্লাসরুমে বসে হাই তুলছি নোভা।সাথে ওর বান্ধবী টিম।স্যার ক্লাস করছে যে টপিক নিয়ে তা ওর মাথার ওপর দিয়ে চলে যাচ্ছে। বিরক্ত হয়ে এদিক সেদিক তাকালো।ভেনেছিলো এখন ওর বান্ধবীদের সাথে লুকিয়ে গল্প করবে।তা আর হলো না।ওরা খুব মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করছে।হাই তুলে ব্যাগ থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে মোবাইল বের করে নিজের ঠোঁটের লিপস্টিক চেক করলো।ঠোঁটের লিপস্টিক অনেকটা হালকা হয়ে গেছে। ক্লাস চলাকালীন সবার দিকে তাকিয়ে ব্যাগ থেকে লিপস্টিক বের করে ঠোঁটে ঘষতে শুরু করলো।এতটা মনোযোগ দিয়ে ঠোঁটে লিপস্টিক দিচ্ছে যে সামনে যে স্যার এসে দাঁড়িয়ে আছে সে দিকেও খেয়াল নেই।

আমি গুণগুণ করে গান গাইতে গাইতে লিপিস্টিক লাগাচ্ছিলাম।এমন সময় সিফা ওর হাত দিয়ে বারবার খোঁচা মারছে।আমি রেগে চিৎকার দিয়ে বললাম।

আমিঃ ঐ ছেমরি চোখে দেখস না লিপস্টিক দিতাছি।হাত দিয়ে খোঁচা মারছিস কেন?শান্তিতে কি একটু লিপস্টিকও দিতে দিবি না।তোদের এতো কি সমস্যা রে।সবাই আমার লিপস্টিকের পেছনে পরে আছিস।

সিফাঃ সামনে তাকা।(আস্তে করে)

আমিঃ ঐ ছেমরি সামনে কি দেখবো রে।আমার এতো দিকে নজর দেওয়ার টাইম নেই। আমি আগেও বলছি এখনও বললাম।আমি লিপস্টিক দেওয়ার সময় একটুও জ্বালাবিনা।শাঁকচুন্নি গুলো,আমার ভালো সহ্য হয় না।আমার লিপস্টিক পুরো নষ্ট করে দিলো।ধূর,কিছু ভালো লাগে না।

স্যারঃ আমি আয়নাটা ধরে তোমাকে লিপিস্টিক দিতে সাহায্য করি।

আমি তার দিকে না তাকিয়ে খুশি হয়ে বললাম।

আমিঃ তাহলে তো অনেক ভালো হয়।নিন আপনি আয়না ধরুন।আমি সুন্দর করে লিপস্টিক দিয়ে নেই।
স্যারঃ তোমার সাহস তো কম বড় না।স্যার কে বলো তোমার আয়না ধরতে।বেয়াদব মেয়ে কোথাকার?

আমি মাথা ঘুরিয়ে স্যারের দিকে তাকিয়ে হা হয়ে গেলাম।এতক্ষণ স্যারকে আমি এসব বলেছিলাম।আল্লাহ আমার এখন তেরটা বেজে যাবে।রক্ষা করো তুমি।আমি লিপস্টিক পেলে দীন-দুনিয়ার খবর কেন যে ভুলে যাই।

স্যারঃ এই মেয়ে ক্লাস রুম থেকে এখনি বের হয়ে যাও।
আমিঃ স্যার আমার কথাটা শুনুন।আমি বুঝতে পারিনি আপনি এখানে ছিলেন।(মাথা নিচু করে)

স্যারঃ একদম চুপ। আরেকবার কথা বললে আমি তোমার বাবা-মা কে ডাকবো।এই মুহুর্তে তুমি ক্লাস থেকে বের হয়ে যাবে।(রেগে)

আমি চুপচাপ ভালো মেয়ের মতো করে ব্যাগটা সামনে নিয়ে জাপটে ধরে ক্লাস রুম থেকে বের হয়ে গেলাম।বের হয়ে কিছু সময় উড়া ধুরা ডান্স করলাম ক্লাসের বাইরে।এখন আমি ফুচকা খেতে যাবো।সাথে কতগুলো লিপস্টিক কিনবো।বাজারে নিউ ব্রান্ডের কিছু লিপস্টিক এসেছে।স্যার আমাকে রুম থেকে বের করে দিয়ে আমার কাজ আসান করে দিয়েছে। নাচতে নাচতে ফুচকার স্টলের দিকে রওনা দিলাম।খুশিতে সিঁড়ি দিয়ে ব্যাঙের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে নামলাম।আহা কি আনন্দ আকাশে,বাতাসে!!! আমি আজ অনেকগুলো রং-বেরঙের লিপস্টিক কিনবো।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে