বিষাক্তফুলের আসক্তি পর্ব-০৫+০৬

0
857

#বিষাক্তফুলের আসক্তি
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা
পর্ব-০৫+০৬

খবরের কাগজ হাতে থম মেরে সোফায় বসে আছে ইকবাল খান। প্রত্যেকটা নিউজপেপারে তাজের নামে জঘন্য থেকে জঘন্যতম নিউজ ছাপা হয়েছে। টিভি অন করে সোফাতে বসে আছে ইরিনা রহমান। ছেলের নামে এমন জঘন্য কথা শুনতে হবে কোনোদিন কল্পনা করেনি দুজনের কেউই। যে ছেলের জন্য একদিন গর্বে বুক ভরে এসেছিলো আর সেই ছেলের জন্য লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে। ইকবাল খান অফিসে যেতে ভয় পাচ্ছেন। মানুষের কথা শোনার ভয়ে সে বাড়ি থেকেই বের হতে চাইছেন না।

ইকবাল খান হতাশ গলায় বললো, ইরি এসব দেখার জন্যই কী বেঁচে ছিলাম ?

ইরিনা কী বলবে, সে নিজেই স্তব্ধ হয়ে গেছে।

ইকবাল পুনরায় বললো, তাজ কোথায় ?

ইরিনা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বললো, সার্ভেন্ট বললো সকালেই তাজ বেড়িয়ে গেছে মেয়েটাকে নিয়ে।

ইকবাল অবাক হয়ে বললো, কোথায় গেছে ?

সেটা তো জানি না। তবে সার্ভেন্ট বললো মেয়েটাকে নাকি এক প্রকার টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গেছে, অনেক রেগে ছিলো তাজ।

ইকবাল নিউজপেপার রেখে বললো, মহিবুলের সাথে একবার কথা বলা দরকার কিন্তু কোন মুখে তাদের সাথে কথা বলবো। মৌয়ের কী অবস্থা সেটাও জানা প্রয়োজন।

মেয়েটা সেই ছোটবেলা থেকে তাজকে ভালোবাসে কিন্তু তাজ কখনো ওকে বুঝার চেষ্টাই করেনি। মেয়েটা অনেক বড় আঘাত পেয়েছে। মহিবুল অনেক শান্ত প্রকৃতির মানুষ। মহিবুলের জায়গায় অন্যকেউ হলে হয়তো অনেক সমস্যা করতো।

বুঝলে ইরি, জীবনে এমন কিছু পরিস্থিতি আসে মানুষ সেই পরিস্থিতির কাছে অসহায় হয়ে যায়। চাইলেও কিছু করার থাকে না। আমি অফিসে যাচ্ছি, পরিস্থিতি খারাপ বলে তো আর ব্যবসা বানিজ্য বন্ধ করে বাড়িতে বসে থাকা যাবে না। সেলিব্রিটিদের জীবন বরাবরই আমার পছন্দ নয়, তার বড় একটা কারণ হচ্ছে এদের পার্সোনাল লাইফ বলতে কিছু নেই। এদের বেডরুমের কথাও মানুষের নখদর্পনে।

ইকবাল খান রুমে চলে গেলেন অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হতে। ইরিনা রহমান বসে রইলেন সোফায়। মহিবুল ইরিনা রহমানের ছোট চাচার ছেলে। তাজ আর মৌ সম্পর্কে মামাতো ফুপাতো ভাইবোন হয়।

ব্রেকফাস্ট করে রায়হান বসে আছে মৌয়ের কাছে। হালকা খাবার খাইয়ে মেডিসিন দেওয়া হয়েছে মৌকে। জ্বর কমতে শুরু করেছে, মৌ এখন ঘুমাচ্ছে। মৌয়ের বাবা-মা গেছে ব্রেকফাস্ট করতে।

রায়হান মৌয়ের হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো, কী ভেবেছিলি মৌমাছি ? আমাকে ফাঁকি দিয়ে তাজের হয়ে যাবি ? ছোটবেলার সেই বোকা রায়হান নই রে আমি। তোর ধোঁকা খেতে খেতে বুঝতে শিখে গেছি, নিজের জিনিস কীভাবে নিজের করতে হয়। এখন বোকা তুই নাকি আমি সেটা বুঝতে পারছি না। দেখ তাজের তোকে নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই, তবু তুই তাজের জন্য পাগল। আমি তোকে এতোটা ভালোবাসি সেটা সারাজীবন তুই শুধু ব্যবহারই করে গেছিস। এদিকে তুই আমার থেকে পালাই পালাই করিস কিন্তু আমি তোকে ছাড়তে পারছি না আর কোনো দিন পারবও না। এখন বোকাটা কে বল তো। তুই আমাকে বাধ্য করেছিস এই নোংরা খেলাটা খেলতে। আমার এতে দোষ নেই রে মৌমাছি।

৭.
কারো উচ্চস্বরে পড়ার শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো আহানের। কানের উপর বালিশ চাপা দিয়ে আবার ঘুমানোর চেষ্টা করেও লাভ হলো না।

Jhony, Jhony.
Yes papa ?
Eating sugar ?
No papa.
Telling lie ?
No papa.
Open your mouth.
Ah, ah, ah.

বিরক্ত হয়ে উঠে বসলো আহান। শব্দের উৎস খুঁজতে আশেপাশে তাকালে স্পিকারের দিকে চোখ গেলো। পাখির সেফটির জন্য তার রুমে একটি ক্যামেরা আর মাইক্রোফোন লাগিয়েছে আহানের বড় ভাই। সেটার সাহায্যে আহান যেখানেই থাকুক পাখি রুমে কী করছে আর বলছে সব দেখতে আর শুনতে পারবে নিজের ফোনে বা ল্যাপটবে। আহানের রুমের স্পিকারে পাখির কথা সবসময় শোনা যাচ্ছে, আহান রুমে থাকলে। আহানের বিরক্ত লাগলেও কিছু করার নেই, বড় ভাই চব্বিশ ঘণ্টা পাখির উপর নজর রাখতে বলেছে। একটা পাগল মেয়ে তার ভাইয়ের কাছে এতটা ইম্পর্ট্যান্ট কেনো বুঝতে পারছে না আহান। গতরাতে এজন্যই পাখির চেঁচামেচি নিজের রুমেই শুনতে পেয়েছিলো। আহান চরম বিরক্তি নিয়ে পাখির রুমে গিয়ে দেখে পাখি বেডের উপর বসে শব্দ করে ছড়াটা বারবার পড়ছে।

আহান ধমক দিয়ে বললো, এই মেয়ে তুমি কী পাঁচ বছরের বাচ্চা ? এটা কী ছড়া পড়ছো হ্যাঁ ?

পাখি ভয় পেয়ে কেঁপে উঠে আহানের দিকে তাকিয়ে তোতলাতে তোতলাতে বললো, জনি জনি।

আহান পুনরায় ধমক দিয়ে বললো, কী জনি জনি ? বাচ্চাদের ছড়া তুমি বারবার পড়ছো কেনো ?

পাখি ঠোঁট উল্টে কান্নার ভাব করে বললো, এটা আমার ফেবারিট ছড়া।

আহান বিরক্ত গলায় বললো, এতবড় মেয়ের নাকি জনি জনি ছড়া ফেবারিট।

পাখি এবার ঠোঁট উল্টে কান্না করে বললো, আপনি আমাকে বকেন কেনো সবসময় ? আপুনি তো কখনো আমাকে বকে না। আমি কতকিছু ভেঙে ফেলি আপুনি কিচ্ছু বলে না আমাকে আর কিছু না করলেও বকেন আপনি। খুব পঁচা আঙ্কেল তো আপনি।

আহান চোখ বড় বড় করে বললো, হোয়াট ? আঙ্কেল, আমাকে আঙ্কেল বললো ?

আহান নিজের বিস্ময় কাটিয়ে জোরে ধমক দিয়ে বললো, এই মেয়ে আমাকে তোমার আঙ্কেল মনে হয় ?

পাখি এবার জোরে জোরে কান্না শুরু করে দিলো, পাখির কান্নার আওয়াজ শুনে দৌড়ে এলো ন্যান্সি।

আহান থতমত খেয়ে বললো, মহা জ্বালা তো।

ন্যান্সি পাখির মাথায় হাত বুলিয়ে বললো, কী হয়েছে বেবি ?

পাখি আহানকে দেখিয়ে বললো, আঙ্কেলটা বকেছে।

আহান থতমত খেয়ে ধমক দিয়ে বললো, এই মেয়ে খবরদার আঙ্কেল বলবে না আমাকে। আর একবার আঙ্কেল বললে একদম বাসা থেকে বের করে দিবো।

আহান হনহনিয়ে বের হয়ে গেলো রুম থেকে। পাখি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো আহানের যাওয়ার দিকে।

ন্যান্সির দিকে তাকিয়ে বললো, পঁচা আঙ্কেল।

ন্যান্সি বাংলা বুঝতে আর বলতে পারে ভালো করেই। পাখিও ইংরেজি ভাষা রপ্ত করেছে বেশ ভালোই। তাই পাখির সাথে কথা বলতে ন্যান্সির প্রবলেম হয় না। ন্যান্সি ইংরেজিতে বললে সেও ইংরেজিতে বলে আবার ন্যান্সি বাংলা বললে সেও বাংলা বলে। তিতির পাখিকে যতটা শেখানোর যায় চেষ্টা করেছে শিখাতে।

ন্যান্সি মুচকি হেসে বললো, আঙ্কেল বলে না বেবি।

পাখি ভাবুক ভঙ্গিতে বললো, তাহলে কী বলবো ?

তুমি ভাইয়া বলতে পারো।

ঠিক আছে ভাইয়া বলবো, পঁচা ভাইয়া।

ন্যান্সি মুচকি হেসে বললো, চলো ব্রেকফাস্ট করবে।

আপুনি কখন আসবে ?

তুমি গুড গার্ল হয়ে থাকলে তাড়াতাড়ি চলে আসবে।

ঠিক আছে আমি একদম গুড গার্ল হয়ে থাকবো।

ন্যান্সি দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো পাখির দিকে তাকিয়ে। কারণ সেও জানে পাখির আপুনি বেঁচে নেই। এদিকে আহান নিজের রুমে গিয়ে পাখিকে ইচ্ছে মতো বকতে বকতে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। মেয়েটাকে একদমই সহ্য হচ্ছে না আহানের। কিন্তু কিছু করারও নেই তার।

৮.
রাগে মাথা ফেঁটে যাচ্ছে তাজের। যতগুলো হসপিটালে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করিয়েছে, ইমারজেন্সি রিপোর্ট বের করেছে। সবগুলো রিপোর্ট একই কথা বলছে, তিতির প্রেগনেন্ট। কিন্তু সেটা তো অসম্ভব, মাথায় কিছুই ঢুকছে না তাজের। সারাদিন একটার পর একটা হসপিটালে গিয়েছে কিন্তু ফলাফল শূন্য। তাজ যেখানে জানে তিতির প্রেগনেন্টই নয় সেখানে ডিএনএ টেস্ট করার মানেই হয় না। তাজ এটাই প্রমাণ করতে পারছে না তিতির প্রেগনেন্ট নয়, সেখানে ডিএনএ টেস্ট করে পজিটিভ কিছু আশা করাও বোকামি মনে হয়েছে তাজের কাছে। সেটাও তাজের বিরুদ্ধেই আসবে, তাজের বুঝা হয়ে গেছে। ড্রয়িংরুমে বসে আছে পুরো খান পরিবার। ইকবাল খান গম্ভীর মুখে বসে আছে। ইরিনা রহমান একবার ছেলের দিকে তাকাচ্ছে তো একবার স্বামীর দিকে তাকাচ্ছে।

ইকবাল খান গম্ভীর গলায় বললো, গতরাতে একবার মনে হয়েছিলো আমার হয়তো কোথাও ভুল হয়েছে। তুমি এমন একটা জঘন্য কাজ করতে পারো না। কিন্তু এতগুলো হসপিটালের রিপোর্ট কীভাবে ভুল হয় তাজ ?

তাজ অসহায় গলায় বললো, প্লিজ বাবা বিলিভ মি।

কীভাবে বিশ্বাস করবো বলো তো ? একটা হসপিটালের রিপোর্টও যদি ভিন্ন হতো তাহলে তুমি এই কথা বলতে পারতে।

তাজ অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বাবার দিকে। কীভাবে তাকে বুঝাবে সে মিথ্যা নয় বরং এই মেয়েটা মিথ্যা, সবগুলো রিপোর্ট মিথ্যা। ইরিনা বরাবরই শান্ত মেজাজের মানুষ, তাই সে নিরব ভূমিকা পালন করছে। ইরিনা ঘুরে তাকালো একটু দূরে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটার দিকে।চোখমুখ বলে দিচ্ছে সে প্রচন্ড ক্লান্ত, দাঁড়িয়ে থাকতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে তার। মেয়েটার মুখ দেখে বুঝার উপায় নেই কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা। কেমন অনুভূতিহীন পুতুলের মতো নিষ্প্রাণ চোখে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে। ইরিনা দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিজের ছেলের দিকে তাকালো। রাগ, হতাশা আর অসহায়ত্ব চোখে মুখে স্পষ্ট। নিজের বাবার দিকে তাকালো অসহায় দৃষ্টি যেনো বলে দিচ্ছে সে মিথ্যা বলছে না। ইরিনা রহমানের নিজেকে কেমন পাগল পাগল মনে হতে লাগলো। কেমন গোলকধাঁধা মনে হচ্ছে সবকিছু। ধুপ করে কিছু পড়ে যাওয়ার আওয়াজে সবাই ঘুরে তাকালো। তিতির লুটিয়ে পড়েছে ফ্লোরে। ইরিনা দ্রুত এগিয়ে গেলো তিতিরের দিকে।

ব্যস্ত গলায় বললো, কেউ এক গ্লাস পানি নিয়ে এসো।

একজন সার্ভেন্ট দ্রুত এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিলো ইরিনার দিকে। চোখেমুখে পানি ছিটিয়ে দিয়েও কোনো লাভ হলো না।

তাজের দিকে তাকিয়ে বললো, ওকে রুমে নিয়ে চল।

তাজ অবাক হয়ে বললো, আমি ?

এতকিছু ভাবার সময় নেই তাজ। মেয়েটা যেমনই হোক একজন মানুষ সে। এই অবস্থায় তো ফেলে রাখা মানুষের মতো কাজ হবে না। রাজিব ভাইকে একটা কল করুন তো, ইকবালের উদ্দেশ্যে বললো।

তাজ বাঁধ্য হয়ে তিতিরকে কোলে তুলে নিচের গেস্ট রুমের দিকে এগিয়ে গেলো। কিছুক্ষণের মধ্যে তাজদের ফ্যামিলি ডক্টর রাজিব হোসেন হাজির হলো।

তিতিরকে পরীক্ষা করে বললো, দেখে মনে হচ্ছে প্রচন্ড মানসিক চাপের মধ্যে আছে। বেশ কয়েকদিন ঠিকমতো খাওয়াদাওয়াও করেনি, শরীর একদমই দূর্বল। এভাবে চলতে থাকলে আরো অবণতি হবে, খারাপ কিছু হতে সময় লাগবে না। এই সময়ে তো আরো দিগুণ দেখাশোনার প্রয়োজন। নাহলে দুজনেরই ক্ষতি হবে।

তাজ তাকিয়ে আছে রাজিবের দিকে। একটা অন্তত আশা ছিলো, রাজিব হোসেন বুঝতে পারবে তিতির প্রেগনেন্ট নয়। সেই আশায় পানি ঢেলে দিলো। রাজিব কিছু মেডিসিন দিয়ে, তিতিরের খেয়াল রাখতে বলে চলে গেলো।

ইরিনা বললো, তাজ মেডিসিনগুলো আনানোর ব্যবস্থা কর।

তাজ বিরক্ত হয়ে বলো, সব নাটক।

ইরিনা শান্ত গলায় বললো, রাজিব ভাই আমাদের ফ্যামিলি ডক্টর। সে নিশ্চয়ই মিথ্যা কথা বলবে না।

তাজ অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো মায়ের দিকে। নিজের বাবা-মাই তাকে বিশ্বাস করতে পারছে না, এটা তাকে আরো বেশি কষ্ট দিচ্ছে। তিতিরের দিকে রক্তচক্ষু করে বের হয়ে গেলো রুম থেকে। মেয়েটার প্রতি ঘৃণা যেনো তাজের ধাপে ধাপে বেড়ে চলেছে।

ঘন্টা খানেক সময় শাওয়ার নিয়ে রুমে এসেছে তাজ। মাথায় ঘুরছে নানা প্রশ্ন। কিছুতেই কিছু মিলাতে পারছে না। তাজের মনে হচ্ছে সে ক্রমশ একটা ষড়যন্ত্রের জালে জড়িয়ে যাচ্ছে। যত বের হওয়ার চেষ্টা করছে ততটাই বাজেভাবে জড়িয়ে যাচ্ছে। ফোনের রিংটোনে ভাবনায় ছেদ পড়লো তার। ফোন হাতে নিয়ে মৌয়ের নাম্বার দেখে বুকটা কেমন ধক করে উঠলো। এতসবের মধ্যে মৌয়ের কথা যেনো মাথা থেকে একেবারেই বেড়িয়ে গিয়েছিলো। হঠাৎ করেই মৌয়ের উপর তীব্র অভিমান অনুভব করলো তাজ। মানুষ তো তার উপর অভিমান করে যাকে সে ভালোবাসে। কিন্তু তাজ তো মৌকে কখনো ভালোবাসেনি তবে কেনো এতো অভিমান হচ্ছে। না ভালোবেসে তো, বন্ধু হিসাবে, সত্যি কী তাই ? কেনো মনে হচ্ছে সারা পৃথিবী অবিশ্বাস করলেও মৌয়ের উচিত ছিলো তাজকে বিশ্বাস করা। তাজ নাহয় মৌকে সেভাবে ভালোবাসেনি কিন্তু মৌ তো বেসেছে। তবে কেনো বিশ্বাস করতে পারলো না তাজকে। তাজের ভাবনার মাঝেই কল কেটে গেলো। সাথে সাথেই আবার বেজে উঠলে রিসিভ করলো তাজ।

গম্ভীর গলায় বললো, হ্যালো।

তাজের আওয়াজ শুনতেই ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো মৌ। তাজ বেশ শান্ত ভঙ্গিতে শুনতে লাগলো মৌয়ের কান্না। তবে বুকের ভেতর কেমন একটা করছে মৌয়ের কান্না শুনে। মৌকে সবসময় হাসিখুশি দেখে এসেছে তাজ। তাই হয়তো কান্নাটা ঠিক মানতে পারছে না।

তাজ দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বললো, কিছু বলবি নাকি কেটে দিবো কল।

মৌ এবার শব্দ করে কেঁদে দিলো, কেনো এমন করলে তাজ ?

তাজের অজানা কারণে রাগ হচ্ছে না এখন বরং কষ্ট হচ্ছে। মানতে পারছে না মৌও তাকে ভুল বুঝছে।

তাজ বেলকনিতে গিয়ে দেয়াল ঘেঁষে ফ্লোরে বসে শান্ত গলায় বললো, মৌ আমি তোকে কখনো বলিনি ভালোবাসি। কিন্তু উনত্রিশ বছর ধরে তোকে চিনি। আমাকে যদি কেউ এসে বলে মৌ এমন জঘন্য একটা কাজ করেছে। আমি কিন্তু বিশ্বাস করবো না, যতক্ষণ না তুই নিজে সেটা স্বীকার করছিস। কারণ আমি চিনি তোকে। অপরদিক দেখ তুই আমাকে হাজারবার বলেছিস ভালোবাসি। কেউ একজন এসে বললো তাজ এমন আর তুই বিশ্বাস করে নিলি ? একবার মনে হয়নি তাজ এমন কিছু করতে পারে না। ভালোবাসার কথা নাহয় বাদই দিলাম, উনত্রিশ বছরে তুই এই চিনলি আমাকে ? মৌ শুধু ভালোবাসি বললেই হয় না, তার উপর বিশ্বাস রাখতে হয়। সারা পৃথিবীর মানুষের বিরুদ্ধে গিয়ে শুধু ভালোবাসার মানুষের কথায় যেদিন বিশ্বাস করতে পারবি সেদিন বুঝবি তুই তাকে ভালোবাসিস।

মৌ কী বলবে বুঝতে পারছে না। সত্যি তো শুধু ভালোবাসলে হয় না বিশ্বাস থাকতে হয়। বিশ্বাস হচ্ছে ভালোবাসার ভিত্তি, বিশ্বাসই যদি নড়বড়ে হয় তাহলে ভালোবাসা টিকে থাকবে কীভাবে ?

মৌ কিছু বলছে না দেখে তাজ বললো, রাখছি এখন।

মৌ তাড়াতাড়ি বললো, না।

আবার কিছুটা সময় নিরবতায় কেটে গেলে তাজ বললো, একদিন সব সত্যি সামনে আসবে মৌ। আমি সেদিনের অপেক্ষায় আছি। সেদিন তোরা আমার চোখে চোখ রাখতে পারবি তো ? তোর দোষ নেই রে, যেখানে আমার নিজের বাবা-মা আমাকে বিশ্বাস করতে পারছে না সেখানে তোর কী দোষ। তবে মনে রাখিস সত্য কোনোদিন লুকিয়ে রাখা যায় না। সত্য হচ্ছে দিনের আলোর মতো, নিজের পথ খোঁজে ঠিক বেড়িয়ে আসবে আর সেদিন তোরা কীভাবে আমার চোখে চোখ রাখতে পারিস আমি দেখবো। সেদিন কাউকে মাফ করবো না আমি। আমার বাবা-মা আমাকে অবিশ্বাস করার চরম শাস্তি পাবে সেদিন আর সাথে তুইও। এসবের পিছনে যে আছে তাকে আমি ছাড়বো না। প্রত্যেককে তার শাস্তি ভোগ করতে হবে। এই গল্পটির সবচেয়ে অসহায় ব্যাক্তি আমি, তোরা কেউ নয়। নিজে সত্যিটা জেনেও প্রমাণ করতে না পারার মতো অসহায়ত্ব আর কিছুতেই নেই। নির্দোষ হয়েও সবার ঘৃণার দৃষ্টি সহ্য করার মতো কষ্ট আর কিছুতে নেই। একটু একটু করে গড়ে তোলা স্বপ্ন, ক্যারিয়ার চোখের সামনে ধূলোয় মিশে যাওয়ার মতো তীব্র যন্ত্রণা কিছুতেই নেই। কাউকে ছাড়বো না আমি, কাউকে না। আমার প্রতিটা অপমানের প্রতিশোধ নিবো।

মৌয়ের হঠাৎ মনে হলো সে ভুল করেছে তাজকে অবিশ্বাস করে। অন্যায় করে এতোটা কনফিডেন্স কারো থাকতে পারে না। মৌয়ের চোখে ভেসে উঠলো গত উনত্রিশটি বছর, যেটা সে তাজের সাথে কাটিয়েছে। স্কুল থেকে প্রপোজ পাওয়া শুরু হয়েছিলো তাজের, সব পায়ে মাড়িয়ে নিজের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে গেছে কেবল। মেয়েদের কখনো অসম্মান করেনি, কোন অন্যায়ের সাথে আপোষ করেনি। তাহলে সেই ছেলেটা কীভাবে এমন নিম্ন কাজ করবে। না না আরো দেরি হয়ে যাওয়ার আগে তাজকে সরি বলতে হবে মৌয়ের।

তাজ বললো, রাখছি এখন। বড্ড ক্লান্ত আমি, ঘুমাবো।

মৌ অস্থির গলায় বললো, আ,,আম সরি।

তাজ তাচ্ছিল্যের সুরে বললো, কেনো ?

মৌ জিহ্বা দিয়ে শুকনো ঠোঁট ভিজিয়ে বললো, ক্ষণিকের জন্য পথ হারিয়ে ফেলেছিলাম।

আগামীকাল কেউ নতুন কিছু বললে আবারও পথ হারিয়ে ফেলবি। তুই বরং আগে নিজের সঠিক পথটা খোঁজে বার কর। বারবার পথ হারালে সমস্যা তোরই হবে।

মৌকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন কেটে দিলো তাজ। সবকিছু বিষাক্ত লাগছে তার কাছে। যতদিন তার জীবনে তিতির নামক বিষাক্তফুলটা আছে ততদিন সব এমনই বিষাক্ত থাকবে।

তাজ বিড়বিড় করে বললো, এভাবে হবে না তাজ। ঠান্ডা মাথায় চিন্তা কর। এই ষড়যন্ত্রের জাল থেকে বের হওয়ার একটা রাস্তা ঠিক পেয়ে যাবি তুই।

৭.
গত কয়েকদিনের অনিয়মে একদমই দূর্বল হয়ে গেছে তিতির। খাওয়াদাওয়া না করা, অতিরিক্ত মানসিক চাপ, ঠিকমতো না ঘুমানো সব মিলিয়ে শরীরটা আর পেরে উঠেনি। তাজ সারাদিন এক হসপিটাল থেকে আরেক হসপিটাল ছুটালেও এক দানা খাবার খাওয়ানোর প্রয়োজন মনে করেনি। তাই হঠাৎ করেই চোখের সামনে সব অন্ধকার হয়ে এসেছে। পিটপিট করে চোখ খোলে সামনে ইরিনাকে বসে থাকতে দেখে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো।

ইরিনা সেটা খেয়াল করে গম্ভীর গলায় বললো, এতো ছটফট করার প্রয়োজন নেই।

সাইড টেবিলে দেখিয়ে বললো, খাবারগুলো খেয়ে মেডিসিন খেয়ে নাও আর নিজের খেয়াল রাখতে শেখো। নিজের জন্য না হলেও যে আসছে তার জন্য।

কথাগুলো বলে ইরিনা বের হয়ে গেলো রুম থেকে। তিতির বেডে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো। বড্ড ক্লান্ত লাগছে তার। সাইড টেবিলে তাকিয়ে খাবার দেখে ধীরে ধীরে উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে নিলো, খুব বেশি ক্ষুধা পেয়েছিলো। খাবার খেলেও মেডিসিন খেলো না। এতক্ষণে খেয়াল হলো এটা তাজের রুম নেই। সেটা বুঝতে পেরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। আজ অন্তত একটু ঘুমানো যাবে। তিতির কিছু না ভেবে চুপচাপ শুয়ে পড়লো।

ফজরের আযানে ঘুম ভাঙলো তিতিরের। কয়েকদিনের ঝামেলায় ঠিকঠাক নামাজও পড়া হয়নি। ওযু করে এসে নামাজ পড়ে নিয়ে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো। সকালের সতেজ বাতাসে মনটা একটু শান্ত হলো। সকালের ব্রেকফাস্ট তিতিরের রুমে দিয়ে গেলো এক সার্ভেন্ট, তিতিরও চুপচাপ খেয়ে নিলো। দশটার দিকে রুম থেকে বেড়িয়ে অনেকটা ইতস্তত হয়ে তাজের রুমের দিকে গেলো। গতকালের ড্রেসটাই এখনো পরে আছে সে। মুলত একটা ড্রেস নিতেই তাজের রুমে আসা। দরজায় নক করে সাড়াশব্দ না পেয়ে রুমে গিয়ে দেখলো তাজ নেই। একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে কাবার্ড থেকে একটা ড্রেস নিয়ে দ্রুত বের হয়ে গেলো তাজের রুম থেকে। গতরাতে যে রুমে ছিলো সেখানে গিয়ে শাওয়ার নিয়ে রেডি হলো। তিতির ঠিক করেছে আজই সে মৌয়ের সাথে দেখা করতে যাবে। রেডি হয়ে বের হতেই ড্রয়িংরুমে ইরিনার সামনে পড়লো।

ইরিনা গম্ভীর গলায় বললো, কোথায় যাচ্ছো ?

তিতির নিচু গলায় বললো, আমার একটু কাজ ছিলো বাইরে। বেশি সময় লাগবে না তাড়াতাড়ি চলে আসবো ?

ইরিনা শান্ত দৃষ্টিতে কিছুটা সময় তাকিয়ে রইলো তিতিরের দিকে। তবে আর কিছু বললো না, এদিকে তিতির কনফিউজড সে যাবে কী যাবে না।

কিছু সময় পর ইরিনা গম্ভীর গলায় বললো, তাজ ফিরার আগে যেনো তোমাকে বাসায় দেখি আমি।

তিতির মাথা নাড়িয়ে বের হয়ে গেলো বাসা থেকে। মুখে মাস্ক পরে গেইটের বাইরে এসে একটা রিকশা ডেকে তাতে উঠে পড়লো। উদ্দেশ্য মৌয়ের বাসা, তারপর নিজের ফ্ল্যাটে গিয়ে নিজের প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র আনতে হবে। তার জানা নেই খান ভিলায় আর কতদিন থাকতে হবে তাকে।

কলিংবেল বাজাতে গিয়েও তিতির হাত সরিয়ে নিচ্ছে বরাবর। তাকে দেখে এ পরিবারের সবার কেমন রিয়াকশন হবে সেটা ভাবতেই ঘাম ছুটে যাচ্ছে। কিন্তু মৌয়ের সাথে কথা বলা যে খুব বেশি প্রয়োজন তার। অনেকটা সাহস নিয়ে কলিংবেল বাজালো তিতির। কিছুক্ষণ পর দরজা খোলে দিলো মৌয়ের মা রেহেনা।

তিতিরকে দেখে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বললো, এই মেয়ে তুমি এখানে কী করছো ? আমার মেয়ের জীবনটা নরক করে শান্তি হয়নি তোমার ? আবার কী ধ্বংস করতে এসেছো এখানে।

তিতির ভীত গলায় বললো, আমি মৌ আপুর সাথে একটু কথা বলতে চাই।

রেহেনা অনেক রেগে গেলো, তুমি এখনই এখান থেকে না গেলে খুব খারাপ হয়ে যাবে। কারো সাথে কথা হবে না তোমার, যাও এখান থেকে।

চিৎকার চেঁচামেচি শুনে মৌ বাইরে এসে বললো, কী হয়েছে মা এভাবে চেঁচামেচি করছো কার সাথে ?

তুই রুমে যা মৌ।

দরজায় তিতিরকে দেখে অনেক বেশি অবাক হলো মৌ। তিতিরকে গায়ে নিজের কেনা ড্রেস দেখে বুকে চিনচিন ব্যাথা অনুভব করলো। মৌ নিজেই এগুলো কিনে তাজের কাবার্ডে রেখেছিলো। এতে তাজ অনেক হেসেছিলো তার কান্ড দেখে।

একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে শান্ত গলায় বললো, ওকে আসতে দাও। আমারও কিছু কথা আছে ওর সাথে।

রেহেনা বললো, কিন্তু।

প্লিজ মা, আসতে দাও।

রেহেনা তিতিরের দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দরজা থেকে সরে দাঁড়ালেন৷ তিতির ধীর পায়ে প্রবেশ করলো ভেতরে। মৌ তাকে ইশারা করলো তার সাথে যেতে। তিতির বাধ্যঁ মেয়ের মতো মৌকে অনুসরণ করলো। মৌ তিতিরকে নিয়ে নিজের বেলকনিতে গিয়ে বসলো।

মৌ শান্ত গলায় বললো, কী বলবে বলো ?

তিতির কিছুটা সময় থম মেরে বসে থেকে চোখ বন্ধ করে নিজেকে শান্ত করে বললো, স্যার সত্যি বলছে তার কোনো দোষ নেই।

মৌ অনেক অবাক হলো তিতিরের কথা শুনে। তাজ নিদোর্ষ শুনে না বরং তিতির তাকে সত্যিটা বলছে বলে অবাক হচ্ছে।

তিতির আবার বললো, না আমি প্রেগনেন্ট আর না স্যারের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক ছিলো কোনো কালেই।

রাগে শরীরের রক্ত গরম হয়ে আসছে মৌয়ের। ইচ্ছে করছে তিতিরকে গলা টিপে মেরে ফেলতে। দুটো জীবন নষ্ট করে, দুটো পরিবারের মান সম্মান মাটিতে মিশিয়ে মেয়েটা কতো সহজে সব স্বীকার করে নিচ্ছে। আদোও বুঝতে পারছে মেয়েটা কত বড় অপরাধ করেছে।

মৌ লম্বা শ্বাস টেনে নিজেকে শান্ত করলো, তাহলে এসব কেনো করলে ?

অকপটে তিতিরের উত্তর, বাধ্যঁ হয়ে।

মৌ অবাক হয়ে বললো, মানে ?

এবার টলমলে চোখে তিতির তাকালো মৌয়ের দিকে ভেজা গলায় বললো, আপনার জীবনের বেঁচে থাকার কারণ যে মানুষটা। কেউ যদি তার মাথায় গান তাক করে বলে তার কথা না শুনলে শেষ করে দিবে মানুষটাকে। আপনি কী করতেন আপু ? আমি স্বার্থপর মানুষ আপু, পারিনি নিজের স্বার্থের সাথে আপোষ করতে।

তিতিরের গাল বেয়ে এক ফোটা নোনাপানি গড়িয়ে পড়লো। মৌ বিস্ময় কাটিয়ে উঠতে পারছে না। অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তিতিরের দিকে।

মৌ কাঁপা গলায় বললো, কে করেছে এমনটা আর কেনো ?

তিতির চোখ বন্ধ করে একটা ঢোক গিলে বললো, র,,,

মৌ কোথায় তুই ?

কারো আওয়াজে থেমে গেলো তিতির। এই আওয়াজ তার খুব ভালো করে চেনা। এই তো সেই নরপশুটা যে সবার জীবন এলোমেলো করে দিয়েছে। ভয়ে গলা শুকিয়ে এলো তিতিরের। কী করবে বুঝে উঠার আগেই বেলকনিতে প্রবেশ করলো রায়হান, মিস্টার রায়হান চৌধুরী। রহমান চৌধুরীর বড় ছেলে। তিতির বড় বড় চোখে তাকালো রায়হানের দিকে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের আনাগোনা দেখা গেলো তিতিরের।

রায়হান শান্ত দৃষ্টিতে একবার তার দিকে তাকিয়ে আবার মৌয়ের দিকে তাকালো, শরীর কেমন এখন তোর ?

মৌ কিছুটা সময় চুপ থেকে বললো, আলহামদুলিল্লাহ। তুই এখানে কেনো ?

তিতির অবাক হয়ে তাকালো মৌয়ের দিকে। মৌয়ের কথা শুনে তার বুঝতে অসুবিধা হলো না রায়হান শুধু তার পরিচিত নয় বরং কাছের কেউ। তিতির বুঝতে পারেনি রায়হান মৌয়ের পরিচিত। তিতির তাজের সাথে রায়হানের শত্রুতার কারণ জানে না। তিতির ভাবতেও পারেনি রায়হান মৌয়ের পরিচিত কেউ।

রায়হান তিতিরের দিকে তাকিয়ে শান্ত আর স্বাভাবিক গলায় বললো, মেয়েটা কে ?

রায়হানের শান্ত গলায়ও ভয়ে কেঁপে উঠলো তিতির।

মৌ বললো, আমার পরিচিত একজন।

তিতির হঠাৎ বলে উঠলো, আজ আমি আসি আপু।

মৌ বললো, কিন্তু..

মৌয়ের কথা সম্পন্ন হওয়ার আগেই তিতির উঠে বের হয়ে গেলো দ্রুত। মৌ আটকানোর সময়ও পেলো না। তিতির কিছু বলতে চাইছিলো সেটা সম্পূর্ণ শুনতে পারলো না মৌ।

রায়হান বললো, মেয়েটা এভাবে চলে গেলো কেনো ?

তোকে দেখে হয়তো আনইজি ফিল করছিলো। এখন কী মনে করে এসেছিস সেটা বল।

তোর খোঁজ নিতে এলাম।

মনে মনে বললো, আমি ঠিক সামনে না এলে তো আমার দুই বছরের সাজানো খেলা এক মিনিটে শেষ করে দিচ্ছিলো তিতির। এর ফল তোকে ভোগ করতে হবে তিতির।

চলবে,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে