বিষাক্তফুলের আসক্তি পর্ব-৩১+৩২

0
1054

#বিষাক্তফুলের আসক্তি
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা
পর্ব-৩১+৩২

গুটি গুটি পায়ে ধ্রুবর রুমে প্রবেশ করলো তারা।

ধ্রুব বিরক্ত গলায় বলে উঠলো, তুই এখানে কী করছিস ?

ধ্রুব ভাইয়া তুমি এমন কেনো বলো তো ? আমি তোমার এত খেয়াল রাখি তবু তুমি আমাকে দেখতেই পারো না। দেখলেই কেমন ধমকে উঠো।

ধ্রুব কপাল কুঁচকে বললো, দেখ তারা একদম জ্বালাবি না আমাকে। দেখছিস প্যাকিং করছি তবু বিরক্ত করছিস।

তারা ধ্রুবর হাত থেকে টিশার্ট কেড়ে নিয়ে বললো, আমাকে দাও আমি গুছিয়ে দিচ্ছি।

ধ্রুব কোমরে হাত রেখে ভ্রু কুঁচকে তাকালো হাঁটুর নিচ পর্যন্ত ফ্রক পড়া বছর দশের তারার দিকে, তুই নিজের চুল বাঁধতে পারিস না আর তুই আমার ব্যাগ প্যাকিং করে দিবি ?

তারা দাঁত বের করে হেসে বললো, আমি নিজের কাজ নিজে করতে না পারলেও তোমার কাজ খুব ভালো করেই করতে পারি।

তারার হাসি দেখে ধ্রুব নিজেও মুচকি হাসলো। তাহিয়া চৌধুরী তারা, পাখি আর আহানের একমাত্র মেয়ে। একটা চার বছরের ছেলেও আছে তাদের, তার নাম প্রান্তিক চৌধুরী।

সেদিন তাজ আহানকে সাথে করে বাংলাদেশ নিয়েই এসেছে, তখন থেকে সামনের বাড়িটাতে আহান থাকে সবাইকে নিয়ে। পাখি এখন কিছুটা সুস্থ হয়েছে। পাখি একদিন ছোট একটা এক্সিডেন্ট করে। তখন মাথায় আঘাত পেলে আহান তাকে চিকিৎসা করার সময় জানতে পারে পাখি জন্মগতভাবে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী নয়। জন্মের পর তার মাথায় আঘাত লেগেছিলো, হয়তো সেই রাতে কোনোভাবে লেগেছিলো। আহান নিজের সবটা দিয়ে পাখির চিকিৎসা করেছে, পুরোপুরি সুস্থ হওয়া সম্ভব নয়, তবে অনেকটা সুস্থ হয়েছে পাখি।

তিতির প্রেগন্যান্ট থাকাকালীন বলতো তার ছেলে হলে নাম রাখবে তাহিয়ান খান ধ্রুব আর মেয়ে হলে নাম রাখবে তাহিয়া খান তারা। আহান সেই নামটা রেখেছে নিজের মেয়ের। বয়স কেবল দশ বছর তারার কিন্তু কথায় মনে হয় পাকা বুড়ি একটা। তারা আর প্রান্তিক দুজনেই সম্পূর্ণ সুস্থ। দেখতে একদম জীবন্ত পুতুলের মত দু’জনই। তারা সারাদিন ধ্রুবর পিছনে আঠার মতো লেগে থাকে তাই ধ্রুব ওকে ধমকের উপর রাখে।

দু’দিন পর ধ্রুবর আঠারো বছর পূরণ হবে, তাই সবাই সিলেট যাবে। ধ্রুবর আজই এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হয়েছে আর এসেই ব্যাগ প্যাকিং শুরু করে দিয়েছে সে। ধ্রুব অনেক বেশি এক্সাইটেড এবারের জন্মদিন নিয়ে, একে তো পরীক্ষা শেষ, ইচ্ছে মতো মজা করবে আর এবার তার মায়ের রেখে যাওয়া গিফট পাবে সে। সেটা নিয়ে ধ্রুব খুব বেশি এক্সাইটেড।

তারা এলোমেলো করে ব্যাগ প্যাক করে দিয়ে ধ্রুবর দিকে তাকালো, দেখছো আমি করতে পারি কিনা ?

ধ্রুব নিজের ব্যাগের দিকে তাকিয়ে বললো, প্যাকিং ভালোই করেছিস কিন্তু আমার আইরন করা শার্টের একটার আইরনও আর আস্ত নেই। তুই নিজের ব্যাগ প্যাক করেছিস ? এবার কিন্তু আমরা অনেকদিন সিলেটে থাকবো।

তারা মাথা চুলকে বললো, আমার ব্যাগ তো গ্র্যানি প্যাক করে দিয়েছে মনে হয়।

ধ্রুব ভ্রু কুঁচকে তাকালো তারার দিকে আর তারা দাঁত বের করে হাসলো।

ধ্রুব বললো, মাম্মাম আর প্রান্তিক কোথায় ?

আমি তো মা আর প্রান্তিকের সাথে লুকোচুরি খেলতে এখানে এসে লুকিয়েছি।

ধ্রুব নিজের পোশাক নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়িয়ে বললো, এখন আমার রুম থেকে যা তুই। আমি ফ্রেশ হয়ে ঘুমাবো।

তারা মাথা চুলকে বললো, দাদুমণি তো আমাকে পাঠিয়েছিলো তোমাকে খাবার খেতে ডাকার জন্য।

ধ্রুব থেমে দাঁড়িয়ে বিরক্ত গলায় বললো, যেটা করতে এসেছিলি সেটা না করে বাজে বকবক করলি এতক্ষণ। যা এখন গিয়ে দাদুমণিকে বল আমি বন্ধুদের সাথে বাইরে খেয়ে এসেছি। এখন ফ্রেশ হয়ে ঘুমাবো, আমাকে যেনো কেউ বিরক্ত না করে।

কথা শেষ করে ধ্রুব ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে গেলো। তারা সেদিকে তাকিয়ে ভেংচি কাটলো।

ধ্রুব ওয়াশরুমের দরজা আটকে ভেতর থেকে চেঁচিয়ে বললো, বলেছিলাম না ভেংচি কাটলে আমি তোর ঠোঁট কেটে দিবো।

থতমত খেয়ে গেলো তারা আর মনে মনে ভাবলো, ধ্রুব ভাইয়ার মনে হয় পেছনেও দু’টো চোখ আছে। নাহলে দেখলো কীভাবে আমি ভেংচি কেটেছি ?

তারা চিন্তায় পড়ে গেলো ধ্রুব কীভাবে দেখলো ও ভেংচি কেটেছে। গাধা মেয়েটা বুঝতে পারেনি দরজা বন্ধ করার আগে ওয়াশরুমের আয়নায় তারাকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিলো। প্রশ্নটা মাথায় নিয়ে তারা বের হয়ে গেলো ধ্রুব রুম থেকে। ধ্রুব ঝর্ণার নিচে দাঁড়িয়ে তারার কথা ভেবে মুচকি হাসলো। মেয়েটাকে ধমকের উপর রাখলেও তার বোকা বোকা কথা আর এলোমেলো কাজ ধ্রুবর খুব ভালো লাগে। তার পেছন পেছন ঘুরে বলে বকা দিলেও, ধ্রুবও মনে মনে চায় তারা তার সাথেই থাকুক।

লম্বা চওড়া দেহ, সদ্য গোঁফ দাঁড়ির রেখা দেখা দিয়েছে চেহারায়, মুখের কিশোর ছাপটা কাটতে শুরু করেছে ধ্রুবর। এই বয়সটা খুব আবেগের বয়স, এই বয়সে কেবল নিজের সিদ্ধান্ত নিজে গ্রহণের প্রবণতা তৈরি হয়। সেই সময়ে ধ্রুবর জন্য হয়তো কঠিন কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সহজ হবে না। কিন্তু তার জন্য তো তেমন কিছুই অপেক্ষা করছে।

৩৭.
চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে তাজ। হঠাৎ মনে হলো কপালে শীতল হাতের স্পর্শ পেলো। মাথার দু একটা পাকা চুল জানান দিচ্ছে বয়স বাড়ছে। দেখতে দেখতে বেলা যে কম হলো না। ইকবাল খান গত হয়েছেন তাও দুই বছর হতে চললো। সময় কী কারো জন্য অপেক্ষা করে ?

তাজ পিটপিট করে তাকিয়ে দেখলো হাসোজ্জল এক রমণীর মুখ। আজও গায়ে জড়ানো ধবধবে সাদা শাড়ি। ঠোঁটের কোণে হাসিটা তাজের বুকে কম্পন ধরালো।

রমণী মুচকি হেসে বললো, মাথা ধরেছে ?

তাজ রমণীর হাতটা নিজের কপালে চেপে ধরলো, তুমি হাত বুলিয়ে দাও তাহলে ভালো লাগবে।

তাজের কথার অবাধ্য হলো না সেই রমণী। আলতো করে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে তাজের। তাজ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রমণীর দিকে।

সেটা খেয়াল করে রমণী বললো, কী দেখেন ?

তাজ মুচকি হেসে বললো, দেখছি তোমার মুখে বয়সের ছাপ পড়ে না কেনো ? তোমার চুলে পাক ধরে না কেনো ?

খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো রমণী, আমার যে বয়সই বাড়ে না জনাব। আমার বয়স তো একটা সংখ্যাতেই আঁটকে আছে। তাহলে বয়সের ছাপ কীভাবে পড়বে ?

তাজ মুগ্ধ চোখে দেখছে সে হাসি, তোমার মুসকান নামটা সার্থক।

মুসকান মুচকি হেসে তাজের কপালে নিজের শীতল ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলো তাজ।

May I come in sir ?

সবুজের গলা শুনে চোখ মেলে তাকালো তাজ। আশেপাশে তাকিয়ে খুঁজলো মুসকানকে। কই কেউ তো নেই এখানে।

তাজ মুচকি হেসে বললো, আবার পালিয়েছে।

সবুজকে আসার অনুমতি দিয়ে কাজে মন দিলো তাজ। মুসকানের বিচরণ তার একাকিত্বে। তাজ জানে না মুসকান তার ভ্রম, হ্যালুসিনেশন নাকি অন্যকিছু আর জানতেও চায় না। সে ভালো আছে এভাবেই। যখনই সে একা থাকে দেখতে পায় মুসকানকে, তার গন্ধ, তার স্পর্শ অনুভব করতে পারে। নিজের মনের কথা শেয়ার করে তার সাথে। কত দুষ্টুমি, মান অভিমান চলে তাদের। তবে সেটা একান্ত তাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ। কাউকে বললে হয়তো তাজকে পাগল বলবে, কী দরকার বলার ? তাজ তো বেশ আছে নিজের স্ত্রী সন্তান নিয়ে। ধ্রুবকে কোলে নিয়ে যখন ঘুম পাড়িয়ে দিতো, আলতো করে কাঁধে মাথা রাখতো মুসকান। এভাবেই কাটছে তাজের দিনের পর দিন, মাসের পর মাস আর বছরের পর বছর। তবে কারো উপস্থিতি অনুভব করলেই কোথায় পালিয়ে যায় মুসকান। আগে তাজের কষ্ট হতো, তবে এখন মুসকান এভাবে পালিয়ে গেলে সে মুচকি হাসে।

স্যার সিলেট যাবেন কখন ?

তাজ ফাইলে মুখ গুঁজেই বললো, আগামীকাল সকালের ট্রেনে। ধ্রুব এবার ট্রেনে যাবে বায়না ধরেছে।

সবুজ মুচকি হাসলো তাজের কথায় আর পুনরায় বললো, বাসায় যাবেন কখন ?

বিকেলেই যেতে হবে। ধ্রুবর সাথে আবার ক্রিকেট খেলতে হবে গিয়ে।

সবুজ ঘড়ি দেখে বললো, স্যার চারটার বেশি তো বাজে আর কখন যাবেন ?

সবুজের কথা শুনে তাজ নিজের ঘড়ি দেখলো, ওহ্ শিট লেইট হয়ে গেলো মনে হয়। ছেলেটা গাল ফুলিয়ে বসে থাকবে। বুঝলে সবুজ, আমি বুঝি না আমার ছেলেটা এমন মেয়েদের মতো গাল ফুলানোর অভ্যাস কোথায় পেলো ?

সবুজ হেসে বললো, আসলে স্যার যে মেয়েরা বাবার বেশি আদর পায় তাদের এমন গাল ফুলানোর অভ্যাস হয়। ছোট স্যার তো আপনার অতিরিক্ত ভালোবাসা পায় তাই এমন গাল ফুলায়।

সবুজের কথা শুনে তাজ মুচকি হাসলো শুধু, কিছু বললো না। তাজ সত্যি অতিরিক্ত আদরে বড় করেছে ধ্রুবকে। কোটি টাকা লস দিয়েও ছেলের অনেক ইচ্ছে পূরণ করেছে। এমন অনেক দিন গেছে গুরুত্বপূর্ণ মিটিং ছেড়ে ছেলের এক ফোনে ছুটে গেছে তার স্কুলে। অনেকবার ধ্রুব মিথ্যা বলে তাজকে স্কুলে নিয়ে গেছে গুরুত্বপূর্ণ মিটিং থাকা সত্ত্বেও। শুধু বন্ধুদের দেখাতে তার বাবা তাকে কতটা ভালোবাসে। তবু তাজ একটা ধমক পর্যন্ত দেয়নি ধ্রুবকে, সেটা এখন পর্যন্ত কোনদিন দেয়নি। ধ্রুব কোনো ভুল করলে তাজ কৌশলে সেটা বুঝায়, রেগে নয়। তাই তো সবার এতো ভালোবাসা পেয়েও বখে যায়নি ছেলেটা।

ধ্রুবর যখন ষোল বছর তখন একদিন সিগারেট মুখে দিয়েছিল বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে। সেটা তাজের কানে আসতে দু সেকেন্ড সময় লাগেনি, কারণ ধ্রুবর আশেপাশে ছায়ার মতো বেশ কয়েকজন গার্ড থাকে সবসময়। তবে সেই ব্যাপারে ধ্রুব কিছু জানে না। সিগারেট নিয়ে তাজ ধ্রুবকে কিছুই বলেনি।

তবে আহান একদিন ধ্রুবকে তার পছন্দের জায়গায় নিয়ে যায়। ধ্রুবর মনটা তখন খুব ভালো, আহান তাকে বলে কতটা কষ্ট করে তিতির তাকে জন্ম দিয়েছে। নিজের জীবনের বিনিময়ে ধ্রুবকে বাঁচিয়েছে। এই জীবনটা নষ্ট করা মানে তিতিরকে কষ্ট দেওয়া। আহান এমনভাবে সব বুঝিয়ে বলেছে ধ্রুবকে, সে কেঁদে কেটে ওয়াদা করেছে এই জীবনে সে কখনো খারাপ পথে পা রাখবে না। এভাবেই তাজ আর আহান আগলে রেখেছে ধ্রুবকে।

তাজ দ্রুত বাসায় চলে গিয়ে সোজা ধ্রুবর রুমে গেলো। গিয়ে দেখে ধ্রুব ঘুমিয়ে আছে। ঘুমন্ত ছেলের কপালে চুমু খেলো তাজ।

দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বললো, জানি না তোমার মায়ের ডায়েরি আমাদের সম্পর্কটার মোড় কোনদিকে নিবে। তবে তোমার সিদ্ধান্ত যাই হোক আমি মেনে নিবো।

ধ্রুব ঘুমের ঘোরে ধ্রুবর কোমর জড়িয়ে ধরে কোলে মাথা রেখে ঘুম জড়ানো গলায় বললো, বাবা তুমি আজও লেইট করেছো।

তাজ ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো, লেইট কোথায় করলাম তুমি তো এখনো ঘুমাচ্ছো।

ধ্রুব পিটপিট করে তাকালো তাজের দিকে, তুমি আসছিলে না দেখেই তো আমি ঘুমচ্ছিলাম।

তাজ ধ্রুবর চুল এলোমেলো করে দিয়ে বললো, ঠিক আছে আমি সরি। তুমি এখন ফ্রেশ হয়ে ব্যাট বল নিয়ে গার্ডেনে যাও, আমিও ফ্রেশ হয়ে আসছি।

ধ্রুব উঠে ঢুলতে ঢুলতে চলে গেলো ওয়াশরুমে আর তাজও উঠে নিজের রুমে গেলো। তাজের বিকেলটা সবসময় তার ছেলের নামে। ফ্রেশ হয়েই দু’জন গার্ডেনে চলে গেলো খেলতে। ধ্রুবর খেলার জন্য বাড়ির একপাশে বাগানকে মাঠে পরিণত করেছে তাজ। বিকেল হলেই বাড়ির সব গার্ডসহ খেলাধুলা করে বাবা ছেলে। মাঝে মাঝেই তাদের সাথে যুক্ত হয় আহান।

৩৮.
জ্ঞান হওয়ার পর থেকে রাহি যাকে নিজের বাবা বলে জেনে এসেছে সে রাহির নিজের বাবা নয়। এই সত্যিটা জানার পর রাহির কী রিয়াকশন দেওয়া উচিত সে বুঝতে পারছে না। কতই বা বয়স তার, এই তো মাস কয়েক আগে পনেরো বছরে পা রেখেছে। ছোট্ট মনে এতবড় ধাক্কা সামলাতে পারছে না। আবার সামনে শুয়ে থাকা মুমূর্ষু রোগীর কথা অবিশ্বাস করতেও পারছে না। মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে কেউ নিশ্চয়ই মিথ্যে কথা বলবে না। রাহির সামনে হসপিটালের বেডে শুয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছে রকি নামের লোকটা। যার ভাষ্যমতে সেই রাহিকে কিডন্যাপ করে রায়হানের হাতে তুলে দিয়েছিলো।

লম্বা শ্বাস টেনে রকি বললো, আমি মিথ্যা বলছি না রাহি। তোমার নাম রাহি চৌধুরী নয়, তোমার আসল নাম শায়িনী আহমেদ।

রকি প্রথম থেকে সব খোলে বললো শায়িনীকে। শায়িনীর চোখ টলটল করছে নোনাজলে। জ্ঞান হওয়ার পর থেকে তার চোখে কখনো পানি আসতে দেয়নি বাবা নামক লোকটা আর আজ তার জন্যই শায়িনী কাঁদছে।

সব বলে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো রকি, জীবনে অনেক পাপ করেছি আমি। তার শাস্তিও পেয়েছি, পরিবার হারিয়ে এখন নিজের জীবনটাও শেষ হতে চলেছে। তাই মৃত্যুর আগে তোমাকে সত্যিটা জানালাম, যদি পাপের বোঝাটা একটু কমে। তবে একটা কথা সত্যি বলছি রাহি মা। রায়হান চৌধুরী জীবনে অনেক পাপ করেছে কিন্তু তোমাকে নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসে। হয়তো নিজের সন্তানকেও এতোটা ভালোবাসতো না।

শায়িনী আর বসে থাকতে পারলো না। টলমল পায়ে বের হয়ে গেলো কেবিন থেকে। পনেরো বছরের জীবনে অনেক বড় ধাক্কা খেয়েছে আজ সে। বুঝে উঠতে পারছে না তার এখন কী করা উচিত।
সবার ডিনার শেষে টেবিল গুছিয়ে নিচ্ছে মৌ। দু’তালায় দাঁড়িয়ে মৌয়ের দিকে তাকিয়ে আছে শান। মৌ আর স্বাভাবিক হয়নি। অনেক খোঁজেও শায়িনীকে না পেয়ে মৌ দিনদিন আরো অস্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছিলো। শান বাধ্য হয়ে তাকে সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে নিয়ে যায়, আগের বাসা চেঞ্জ করে, এতে একটু স্বাভাবিক হলেও পুরোপুরি হয়নি। ডক্টর শানকে পরামর্শ দেয় আরেকটা বাচ্চা নেওয়ার। তারপর তাদের কোল আলো করে আবার আসে এক পুত্র সন্তান মাহিম আহমেদ। মৌ আরো একটু স্বাভাবিক হয়, নিজের সন্তান, সংসার হসপিটাল সব আবার সামলাতে শুরু করে। তবে হয়ে যায় এক যন্ত্রমানবী। হয়তো এভাবেই কাটবে তার বাকি জীবন। সন্তান হারানোর ক্ষত যে শুকাবার নয়।

শান দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে ছেলের রুমে গেলো। মাহিম ঘুমিয়ে পড়েছে, শান তার গায়ে কাঁথা টেনে দিয়ে কপালে চুমু খেয়ে বের হয়ে গেলো তার রুম থেকে। তার যাওয়ার কিছুক্ষণ পর এলো মৌ। কিছু সময় তাকিয়ে থাকলো ছেলের দিকে। ছেলেটার মুখ দেখলে বুকটা খা খা করে মৌয়ের। ছেলের মুখের আদুল মেয়েটার মতোই হয়েছে। ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে নিঃশব্দে কাঁদতে লাগলো মৌ। এখন আর তাজের কথা ভেবে কষ্ট পাওয়ার সময় হয় না মৌয়ের। মেয়ের কথা ভেবে কেঁদেই দিন কাটে তার। অনেকটা সময় ছেলের কাছে থেকে নিজের রুমে গেলো মৌ।

শান বেডে বসে একটা রোগীর ফাইল দেখছে আগামীকাল তার অপারেশন। মৌ ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে চুল আঁচড়ে নিচ্ছে।

শান ফাইল রেখে মৌয়ের দিকে তাকালো, এবার কী স্বাভাবিক হওয়া যায় না মৌ ?

মৌ শান্ত চোখে তাকালো শানের দিকে, আপনার কাছে স্বাভাবিক হওয়া মানে আমার মেয়েটাকে ভুলে যাওয়া। যার মুখে প্রথম মা ডাক শুনেছি তাকে কীভাবে ভুলে যাবো শান ? আপনি ভুলতে পেরেছেন সেই আধো আধো বুলির বাবা ডাক ?

চোখ ঝাপসা হলো শানের। হ্যাঁ সেও পারেনি সেই ডাক ভুলতে, কোনোদিন পারবেও না। এখনো ঘুমালে মনে হয় কেউ তুলতুলে হাতে তার গাল স্পর্শ করবে আর সে মুচকি হেসে সেই হাতে শ’খানেক চুমু খাবে। সে ঘুমায় ঠিকই কিন্তু গালে আর সেই তুলতুলে স্পর্শ পায় না।

চোখ মুছলো মৌ, যা নিজে পারছেন না তা আমাকে করতে বলছেন ?

শানের উত্তরের অপেক্ষা না করে মৌ বেলকনিতে চলে গেলো। শান চোখ বন্ধ করে বালিশে মাথা এলিয়ে দিলো। তার চোখের কোণ বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়লো বালিশে। আজ আর দু’জনের কারো ঘুমানো হবে না বোধহয়।

৩৯.
সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে বাসায় ফিরেছে সবাই। দুপুরে অসহায় মানুষদের হাতে খাবার তুলে দিয়েছে ধ্রুব নিজ হাতে। এই কাজটা করতে তার অসম্ভব ভালো লাগে। এমনিতেও সবসময় চেষ্টা করে মানুষকে সাহায্য করার। ধ্রুবর জন্মদিনে কেক কাটা হয় না কিংবা কোনো পার্টি করাও হয় না। জন্মদিনের সকাল শুরু হয় দাদুমণি আর গ্র্যানির হাতে পায়েস খেয়ে। দুপুরে শাহজালাল মাজারের সামনে অসহায় মানুষদের খাবারের ব্যবস্থা করে, সবাই সেখানেই দুপুরের খাবার খেয়ে নেয়। ধ্রুবর প্রত্যেকটা জন্মদিন কাটে সিলেটে। আজও সবাই মাজারে গিয়েছিলো, ফিরে এসে যে যার রুমে চলে গেলো রেস্ট নিতে। আহান গেলো নিজের রুমে। আলমারি খোলে সযত্নে আগলে রাখা ডায়েরিটা বের করলো। ডায়েরিতে আলতো করে হাত বুলিয়ে চশমা খোলে নিজের চোখ মুছে নিলো। ধ্রুবর রুমের দিকে পা বাড়ালো।

দরজায় নক করলো, বাবাই আসবো ?

ধ্রুব বেডে শুয়ে ফোনে বন্ধুদের সাথে কথা বলছিলো। দরজার দিকে তাকিয়ে আহানকে দেখে ফোন রেখে উঠে বসলো।

ব্যস্ত গলায় বললো, পাপা তুমি আমার রুমে আসতে অনুমতি নিচ্ছো কেনো ?

আহান মুচকি হেসে রুমে প্রবেশ করে ধ্রুবর পাশে বসে মাথায় হাত রাখলো, আমার বাবাই তো এখন আর ছোট্টটি নেই। সে বড় হয়েছে তাই তার রুমে আসতে এখন অনুমতি নিতে হয়।

আহানের কথা শুনে ধ্রুব মাথা নিচু করে লাজুক হাসলো, আমি তোমার আর বাবার কাছে সবসময় ছোট ধ্রুবই থাকতে চাই পাপা।

আহান ধ্রুবর কথা শুনে তার কপালে চুমু খেলো, তুমি সবসময় আমার কাছে সেই ধ্রুবই থাকবে। যে ধ্রুবকে শুভ্র তোয়ালে মোড়ানো অবস্থায় তুতুলের বুক থেকে নিজের বুকে তুলে নিয়েছিলাম।

চোখ ঝাপসা হলো আহানের সাথে ধ্রুবরও। আহানের নিজের দুই সন্তান আছে এখন, তবু ধ্রুবর জায়গা তার জীবনে সম্পূর্ণ আলাদা। ধ্রুবকে যতটা ভালোবাসে নিজের সন্তানদের ততটা ভালোবাসতে পেরেছে কিনা জানে না আহান।

আহান ডায়েরিটা এগিয়ে দিলো ধ্রুবর দিকে, তোমার জন্মদিনের উপহার।

ডায়েরিটা দেখে খুশিতে চকচক করে উঠলো ধ্রুবর চোখমুখ। ধ্রুব কাঁপা হাতে ডায়েরিটা নিলো। আহান ডায়েরি দিয়ে ধ্রুবর গালে হাতে রেখে আদর করে বের হয়ে গেলো রুম থেকে। ধ্রুব ডায়েরি নিয়ে বাড়ি থেকে বের পুকুরপাড়ে চলে গেলো।

উত্তেজনায় এখনো হাত কাঁপছে ধ্রুবর। প্রত্যেকটা জন্মদিনে সে অনেক অনেক উপহার পেয়েছে সবার থেকে। লক্ষ লক্ষ টাকার সেসব উপহারের চেয়ে আজ হাতে থাকা সামান্য একটা ডায়েরি তার কাছে অধিক মূল্যবান মনে হচ্ছে। যেদিন এই ডায়েরির কথা শুনেছে সেদিন থেকে এটা হাতে পাওয়ার প্রহর গুনছে সে। এই ডায়েরিটাতে তার মায়ের স্পর্শ আছে ভাবতেই শরীর কেঁপে উঠছে তার। সাদা আর সোনালী রঙের ডায়েরির উপর ধ্রুবতারা লেখাটায় হাত বুলালো ধ্রুব। অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে তার, হয়তো তার মাও এখানে হাতে রেখেছে অসংখ্য বার। ধ্রুব ডায়েরিটা বুকে জড়িয়ে লম্বা শ্বাস টেনে নিলো। ধ্রুব নিজের অজান্তে পুকুরের সেই একই সিঁড়িতে বসেছে যেখানে অনেকগুলো বছর আগে তাজ বসে পড়েছিল “বিষাক্তফুলের_আসক্তি” আর আজ একই জায়গায় ধ্রুব পড়ছে “ধ্রুবতারা।”

কম্পিত হাতে ধ্রুব ডায়েরির প্রথম পাতা উল্টালো। তার চোখে পড়লো সাদা পৃষ্ঠার উপর পেন্সিলে আঁকা এক ছবি। একটা বাচ্চাকে পরম আদরে বুকে জড়িয়ে রেখেছে তার মা। ধ্রুব হাত রাখলো সেই ছবিতে। তার মা হয়তো এভাবেই তাকে কোলে তুলে নিতে চেয়েছিলো। চোখ ঝাপসা হলো ধ্রুবর। ডায়েরির পাতায় এক ফোটা নোনাজল পড়তেই ধ্রুব নিজের চোখ মুছে নিলো। পৃষ্ঠা উল্টে পরের পৃষ্ঠা বের করলো।

আমি যখন এই ডায়েরিটা লিখছি তখন তুমি আমার মধ্যে অবস্থান করা একটা ভ্রুণ আর তুমি যখন এই ডায়েরিটা পড়ছো আমি তখন কেবল সবার স্মৃতি মাত্র। আমি এখন এটাও জানি না তুমি আমার তাহিয়ান খান ধ্রুব নাকি তাহিয়া খান তারা। তুমি ধ্রুব হও কিংবা তারা, তুমি আমার জীবনের ধ্রুবতারা। ধ্রুবতারা দিক হারানো মানুষকে দিক ঠিক করতে সাহায্য করে। আমি যখন জীবন গোলকধাঁধায় আঁটকে গেলাম, তুমি আমাকে বাঁচার একটা পথ হয়ে দেখা দিলে। তাই তুমি আমার জীবনের ধ্রুবতারা। তোমাকে আজ একটা গল্প বলবো। কখনো তো তোমাকে রাজা-রানির গল্প শোনানো হয়নি। জানি এখন তুমি বড় হয়ে গেছো রাজা-রানির গল্প শোনার আগ্রহ নেই। তবু আমি আজকে তোমাকে এক ধোঁকাবাজ রাজকন্যার গল্প শুনাবো।

এক রাজ্যে অনেক হাসিখুশি এক রাজকন্যা ছিলো। বাবা-মাকে নিয়ে সে খুব ভালো ছিলো। কিন্তু একরাতে রাক্ষসদের আক্রমন হলো রাজা-রানি আর রাজকন্যার উপর। রাজা-রানি মারা গেলো আর রাজকন্যা একরাতের ব্যবধানে এতিম হয়ে গেলো। রাজ্য দখল করে নিলো রাক্ষসরা, রানী মারা যাওয়ার আগে আরো এক রাজকন্যা দিয়ে গেলো বড় রাজকন্যার কাছে। রাজকন্যা নিজেই তখন ছোট আবার তার কাঁধে এলো ছোট বোনের দ্বায়িত্ব। ধীরে ধীরে সব মানিয়ে বড় হতে থাকলো রাজকন্যারা। তাদের আগলে রাখলো রাজ্যের বিশ্বস্ত সেনাপতি। কিন্তু একদিন সেনাপতিও মারা গেলো। আবার একা হয়ে গেলো দুই রাজকন্যা। বড় রাজকন্যা দ্বায়িত্ব নিলো ছোট রাজকন্যার। ছোট রাজকন্যা যে অসুস্থ, বড় হয়েও সে ছোট। বড় রাজকন্যা যখন অসহায় তখন এক রাজপুত্রের সাথে দেখা। রাজপুত্র তাদের অন্ধকার জীবন আলোকিত করে দিলো। ভালো চলছিলো রাজকন্যার জীবন কিন্তু আবার সেই রাক্ষসদের আগমন হলো রাজকন্যাদের জীবনে। ছোট রাজকন্যার জীবন বাঁচাতে বড় রাজকন্যা ধোঁকা দিলো রাজপুত্রকে। রাজপুত্রের সবকিছু ধ্বংস করে দিলো বড় রাজকন্যা, অপবাদের কালিমা লেপন করে দিলো রাজপুত্রের মাথায়। রাজপুত্র ঘৃণা করতে শুরু করলো রাজকন্যাকে। কিন্তু রাজকন্যার কিছুই করার ছিলো না। এভাবেই চলতে থাকলো দিন, রাজপুত্রের ঘৃণা বাড়তে লাগলো রাজকন্যার উপর। তখনই আরেক রাজপুত্র ফেরেস্তার মতো এলো রাজকন্যাদের জীবনে। তার সাহায্যে রাজকন্যা সবার কাছে রাজপুত্রকে নির্দোষ প্রমাণ করে তার থেকে দূরে চলে গেলো ছোট রাজকন্যাকে নিয়ে। রাজপুত্র জানতে পারলো না রাজকন্যা তাকে কতটা ভালোবাসে, রাজপুত্র এটাও জানতে পারলো না রাজকন্যা একা যায়নি সাথে নিয়ে গেছে রাজপুত্রের সন্তানকে। রাজপুত্র যে রাজকন্যাকে প্রচন্ড ঘৃণা করতো তাই রাজকন্যার সাহস হয়নি রাজপুত্রকে তার সন্তানের কথা জানানোর।

গল্পের সেই ধোঁকাবাজ রাজকন্যাটাই ছিলো তোমার মা আর তোমার বাবা সেই রাজপুত্র। আচ্ছা তুমিও কী আমাকে ঘৃণা করবে মিষ্টি বাচ্চা আমার ? তুমি জানো, ডক্টর যখন জানালো আমার ভেতরে আরো একটা প্রাণ একটু একটু করে বেড়ে উঠছে। সেই অনুভূতি আমি তোমাকে বুঝাতে পারবো না। আনন্দ, ভয় সব মিলেমিশে এক হয়ে গেছে। এরপর ডক্টর যখন বললো তোমাকে পৃথিবীর আলো দেখাতে গেলে আমার জীবনের ঝুঁকি আছে, তখন আমি দ্বিধায় পড়ে গেলাম। চোখের সামনে কোনো পথ দেখতে পাচ্ছিলাম না। তোমার খালামণিকে তুমি জানো, আমি না থাকলে তাকে কে দেখে রাখবে আর তোমারই বা কী হবে ? আমি চারদিকে কেবল অন্ধকার দেখতে পাচ্ছিলাম। তোমার বাবার চোখে আমার জন্য তখন সীমাহীন ঘৃণা। একবার সিদ্ধান্ত নিলাম তোমাকে আমি পৃথিবীর আলো দেখাবো না। এই কথা জানার পর হয়তো তুমি আমাকে ঘৃণা করবে। তোমার মা তোমাকে অনেক ভালোবাসে সোনা। কিন্তু সেদিন আর কোনো পথ খোলা পায়নি সে। তোমাকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে যখন আমি ডুকরে কাঁদছি তখন ফেরেস্তার মতো হাজির হলো আহান। তাকে বোধহয় তুমি পাপা বলে চিনো। সে তো বলতো তোমাকে সে পাপা ডাকতে শেখাবে। তোমার পাপা আলাদীনের জিনির মতো আমার সব সমস্যার সমাধান হয়ে এসেছিলো। তোমার মাম্মামকে দেখে রাখার চিন্তা আমার আর ছিলো না তাই সিদ্ধান্ত নিলাম তুমি পৃথিবীর আলো দেখবে।

এতটুকু পড়ে ধ্রুব ডায়েরি বন্ধ করে নিজের চোখ মুছলো। দাদুমণির কাছে অনেকটা শুনেছে সে। তবু মায়ের ডায়েরি পড়ে প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে তার। না সে নিজের মাকে ঘৃণা করার কথা ভাবতেও পারছে না। তাকে পৃথিবীর আলো দেখানোর সিদ্ধান্ত না নিলে আজ তার মা বেঁচে থাকতো।

ধ্রুব ডায়েরি বুকে জড়িয়ে কেঁদে উঠলো, আমি তোমাকে ঘৃণা করার কথা ভাবতেও পারি না মা। আমি তোমাকে খুব খুব, খুব বেশি ভালোবাসি।

চোখ মুছে আবার পড়তে লাগলো ধ্রুব। এরপরে তিতির ধ্রুবকে নিয়ে কত স্বপ্ন দেখেছে সব লেখা। প্রতি মাসের পরিবর্তনে ধ্রুব তিতিরকে কত জ্বালিয়েছে, ধ্রুব কবে ফাস্ট কিক করেছে সেটাও লেখা। অনেক জায়গার লেখা ছড়িয়ে গেছে, কালার চেঞ্জ হয়ে গেছে, হয়তো তিতিরের চোখের পানি পড়েছিলো। তিতির যেদিন জানতে পারে তারা নয় ধ্রুব আসছে সেদিনটার কথাও লেখা। তিতির ধ্রুবর সাথে একা একা যা কথা বলতো সবই লিখে রেখেছে। ধ্রুব সেসব পড়ে কখনো হাসছে তো কখনো কাঁদছে। কতই না কষ্ট দিয়েছে সে তার মাকে।

এক পৃষ্ঠায় লিখেছে, তোমার জীবনটা আমার কাছে অনেক মূল্যবান ধ্রুব। কখনো ভুল পথে পা রেখে আমার কষ্টগুলো বৃথা হতে দিও না। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত সৎ পথে থেকো। তোমার জন্য যেনো আমি পরকালেও গর্বিত হতে পারি।

ধ্রুব মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো সে তার মায়ের কষ্ট বৃথা যেতে দিবে না। আবার পড়তে লাগলো।

তোমার আগমনের সময় ঘনিয়ে আসছে আর হয়তো আমার বিদায়ের। আজকাল শরীরটা আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তোমার বাবা এখনো জানে না তোমার কথা। হয়তো একদিন জানতে পারবে, ফিরিয়ে নিতে আসবে তোমাকে। আমি তোমার বাবার জীবন থেকে অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছি।

গল্পের শেষের পাতায় আমি প্রথমবারের মতো কিছু দিতে চাই তাজকে। সেটা আমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান অংশ, আমার ধ্রুব। আমার ধ্রুব সোনা কী রাখবে না তার মায়ের কথা ? সেও কী সবার মতো তার স্বার্থপর মাকে ঘৃণা করে ? যদি এই স্বার্থপর মাকে ঘৃণা না করো, তবে ফিরে যাও বাবার কাছে, এতোটা ভালোবাসো যাতে তোমার মায়ের প্রতি থাকা তার ঘৃণা ভুলে যায় সে। ভালোবাসতে না পারলেও ঘৃণা যেনো আর না করে। তোমার বাবা অনেক ভালো একজন মানুষ ধ্রুব। কখনো তার মনে কষ্ট দিও না। তার যেনো কখনো মনে না হয়, আমার মতো আমার অংশও তার জীবনের অভিশাপ। নিজের বাবাকে ভালো রেখো আর তুমিও অনেক ভালো থেকো আমার সোনা বাচ্চা। পারলে আমার প্রতি তোমার বাবার ঘৃণা মুছে দিও তার মন থেকে।

এরপরে বড় একটা সমাপ্ত লিখে শেষ করেছে “ধ্রুবতারা” ডায়েরির লেখা।

চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে