বসন্তের আগমনে পর্ব-১১

0
858

#বসন্তের_আগমনে💛🌸

#পর্ব_১১

#লেখক_ঈশান_আহমেদ

ঈশা আর আরহান আরিশার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।আরিশা বসে বসে কফি খাচ্ছিলো।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আরিশা দেখলো আরহান ঈশাকে সময়ের আগেই নিয়ে আসছে।আরিশা বললো,

“যাক আমার ভাইয়ের এলেম আছে।”

আরহান আরিশার কথায় হাসি দিলো।ঈশা অবাক হয়ে বললো,

“আরিশা তুমি হঠাৎ এই কথা বললে কেনো?”

আরিশা কিছু বলতে যাবে আরহান আরিশাকে থামিয়ে বললো,

“তুই চুপ থাক।আমি বলতেছি।”

আরহান ঈশার দিকে তাকিয়ে বললো,

“আসলে আরিশা আমাকে বলেছিল আপনাকে যেন দশ মিনিটের মধ্যে আপনার রুম থেকে নিয়ে আসি।আর আমি যদি আপনাকে দশ মিনিটের মধ্যে আপনার রুম থেকে নিয়ে আসতে পারি তাহলে ও আমাকে বীরপুরুষ মানবে।”

“ওহ্ তার মানে আপনি এই কারণেই বলেছেন আমাকে মেকআপ ছাড়া সুন্দর লাগে!”

“একদম ঠিক ধরেছেন।”

ঈশা মনে মনে বললো,

“কি ভাবলাম আর কি হলো!”

ঈশা আর কিছু না বলে মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে রইলো।মাসুমা বেগম এসে আরহানকে কফি দিলো।আরহান কফি খেয়ে আরিশা আর ঈশাকে নিয়ে রওয়ানা দিলো।আরিশা আলভিকে নিয়ে পিছনের সিটে বসেছে।আরহান ড্রাইভ করছে আর ঈশা তার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে আছে।আরহান বিষয়টা অনেকক্ষণ যাবৎ খেয়াল করে বললো,

“আচ্ছা আপনি আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?”

“ইচ্ছে করছে আপনাকে খুন করে ফেলতে।”

“আমি আবার কি করলাম?”

“আপনার জন্য আমি মেকআপ করতে পারিনি।”

“আরে আমি বললাম তো আপনাকে মেকি ছাড়া সুন্দর লাগে।”

“ওটা তো মিথ্যা বলেছেন।”

“আরে না ওটা সত্যিই বলেছি।”

ঈশা অবাক হয়ে আরহানের দিকে তাকিয়ে আছে।আরহান গাড়ি নিয়ে শপিংমলের সামনে থামালো।তারপরে তারা শপিংমলের ভিতরে গেলো।ঈশা একটা লাল শাড়ি তার গায়ে জড়িয়ে আরহানকে উদ্দেশ্য করে বললো,

“এই শাড়িতে আমাকে কেমন লাগবে?”

আরহান ঈশার দিকে তাকালো।তারপরে ভ্রু কুচকে বললো,

“আমার চেয়ে বেটার হবে আপনি আরিশাকে জিজ্ঞেস করুন।কারণ আমি এইসব বুঝিনা।”

ঈশা মুখ ভেঙচি কেটে বললো,

হ্যাঁ আপনি তো বাচ্চা।”

আরহান আর কিছু না বলে আলভিকে কোলে নিয়ে এদিক-ওদিক হাঁটা শুরু করলো।হঠাৎ তার সামনে এসে হিয়া দাঁড়ালো।আরহান হিয়াকে দেখে বিরক্ত নিয়ে চলে যেতে গেলে হিয়া আরহানের হাত টেনে ধরলো।আরহান রাগের কারণে এক ঝটকা দিয়ে হিয়ার হাত ছাড়িয়ে ফেললো।তারপরে হিয়ার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,

“আপনার সাহস হয় কি করে আমার হাত ধরার?”

“আমার সাহসটা বরাবরই একটু বেশি আরহান।”

“একদম চুপ করুন।পাব্লিক প্লেসে ফাজলামো করতে আসছে।”

আরহান কথাটা বলে চলে যেতে গেলে হিয়া পিছন থেকে বললো,

“কি তোমার বিয়ের শপিং করতে আসলে নাকি?”

হিয়ায় কথায় আরহান দাঁড়িয়ে পড়লো।অবাক হয়ে হিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,

“কি বললেন আপনি?”

“যা শুনলে তাই তো বললাম।তোমার বিয়ের শপিং করতে আসছো নাকি?”

আরহান চোখ বন্ধ করে নিজেকে কিছুটা শান্ত করে বললো,

“উল্টাপাল্টা কথা বলা বাদ দেন।আর নিজের কাজে মন দেয়।ডিসকাস্টিং!”

আরহান কথাটা বলে আলভিকে নিয়ে হেঁটে চলে গেলো।ঈশা আর আরিশা কেনাকাটা শেষ করে বসে আছে।আরহান এসে তাদের সামনে দাঁড়ালো।আরহান দেখলো ঈশার হাতে কতগুলা ব্যাগ আর আরিশার হাতে কতগুলো ব্যাগ!আরহান একটা নিশ্বাস ফেলে বললো,

“মেয়েরা এতো শপিং কিভাবে করে আল্লাহ জানে!আচ্ছা আলভির খুদা লেগেছে।আমরা লাঞ্চ করে একবারে বাড়িতে যাবো।আরহান আলভিকে নিয়ে হাঁটা শুরু করলো।পিছন থেকে আরিশা চিৎকার করে বললো,

” ভাইয়া তুই এমন কেনো!আমাদের হাতে গুলো ব্যাগ।আর তুই আমাদের রেখে হনহন করে হেঁটে চলে যাচ্ছিস!”

“তুই দেখতে পারছিস না আলভি আমার কোলে।”

“আলভি হা্ঁটতে পারে।তুই ও-কে নামিয়ে দিয়ে ব্যাগ নে।”

আরহান আর কিছু না বলে আলভিকে নামিয়ে দিলো।আরিশা আর ঈশার হাত থেকে কতগুলো ব্যাগ নিলো এক হাতে আরেক হাতে আলভিকে ধরে হা্ঁটা শুরু করলো।আরহানরা গিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে বসলো।লাঞ্চ করে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে আরহান বললো,

“কিভাবে যাবো!আগে কি ঈশাদের বাড়িতে যাবো নাকি আমাদের বাড়িতে?”

“ভাইয়া…ঈশা আপু আমাদের সাথে আমাদের বাড়িতে যাবে।আম্মু বলছে ঈশা আপুকে বাড়িতে নিয়ে যেতে।”

আরহান ঈশার দিকে তাকালো।সে দেখলো ঈশা আলভির সাথে খেলা করছে।আরহান বললো,

“আচ্ছা ঠিক আছে গাড়িতে উঠো তোমরা।”

আরহান গাড়ি চালিয়ে বাড়িতে গেলো।আরহান বাড়িতে এসে সোজা তার রুমে চলে গেলো।আয়েশা বেগম ঈশাকে দেখে অনেক খুশি হলেন।

“আমার হবু বউমা এসেছে!”

আয়েশা বেগমের কথায় ঈশা হেসে দিলো।আরিশা পাশে থেকে বললো,

“আর আমার হবু ভাবি।”

আয়েশা বেগম,ঈশা আর আরিশা গল্প করতে বসলো।আলভি ঈশার কোলে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে।আরিশা বললো,

“ভাবি আলভিকে আমার কাছে দেও।ও-কে আমি রুমে শুইয়ে দিয়ে আসি।”

“সমস্যা নেই তো আরিশা।ও আমার কোলেই ঘুমাক।আমার তো ভালো লাগতেছে।”

আরিশা আর কিছু বললো নাহ্।

সন্ধ্যাবেলা,

আরহান নিচে নামলো।আরহানকে নিচে নামতে দেখে আয়েশা বেগম বললেন,

“ভালোই হলো তুই নিচে নামলি।ঈশাকে একটু বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আয় তো।”

আরহান আর কিছু বললো নাহ্।আরহান ঈশাকে নিয়ে তাদের বাড়ির সামনে নামিয়ে দিলো।ঈশা গাড়ি থেকে নেমে বললো,

“আল্লাহ হাফেজ মি.কাস্টার্ড।”

আরহান হাসি দিয়ে বললো,

“আল্লাহ হাফেজ মি.বকবকানি।”

ঈশা মুখ গোমড়া করে বললো,

“আমি মোটেও এতো বকবক করি না।”

“আপনি বকবক না করলে বকবক করে কে!”

“আপনার বউ বকবক করে।”

ঈশার কথা শুনে আরহান তার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো,

“থাক আপনাকে আর কিছু বলবো নাহ্।আফটার অল কালকের পরেরদিন আপনার বিয়ে।”

ঈশা মনে মনে বললো,

“ইশ্!আমার মনে হয় একা বিয়ে।আর উনার কিছু নাহ্।”

ঈশাকে চুপ থাকতে দেখে আরহান বললো,

“আপনি চুপ করেও থাকতে পারেন?”

ঈশা মুখ ভেঙচি কেটে বললো,

“আপনি আসলেই ভালো মানুষ নাহ্।”

“হ্যাঁ আমি জানি তো সেটা।”

ঈশা আর কিছু না বলে চলে যেতে গিয়ে আবার দাঁড়িয়ে গেলো।হঠাৎ পিছনে ঘুরে আরহানের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো,

“একটা কথা কি জানেন,অতি চালাকের গলায় দড়ি।”

“হ্যাঁ এটা নিশ্চিয়ই আপনি আপনার কথা বলছেন।”

ঈশা চোখ রাঙিয়ে বললো,

“এটা আমি আপনাকে বলছি।”

“আমি তো কোনো চালাকি করিনি।”

ঈশা মনে মনে বললো,

“একবারও বিয়ের কথা মুখ দিয়ে বলছেন না।উনি নাকি চালাকি করেনি!”

ঈশা হালকা কেঁশে বললো,

“আচ্ছা ভিতরে চলুন।”

“না একবার তো গিয়েছি আর যাবো নাহ্।আপনি যান।আর বকবক করে আন্টির মাথা নষ্ট করুন।”

ঈশা আর কিছু না বলে রাগে ফুসতে ফুসতে চলে গেলো।আরহান মুচকি হেসে গাড়িতে উঠে বাড়িতে চলে আসলো।

ঈশা বাড়িতে এসে তার রুমে বসে আরহানকে বকছে।

“কি লোক রে বাবা!কেউ নিজের হবু বউয়ের সাথে এমন করে।আমাকে কিভাবে অপমান করে।আল্লাহ জানে বিয়ের পরে আমার কপালে কি আছে!”

ঈশা কথাটা বলে ওয়াশরুমে চলে গেলো।




আরহান বাড়িতে এসে তার রুমে বসে আছে।বারবার ঈশার কথাগুলো মনে পড়ে তার মুখে হাসি ফুটছে।

“আচ্ছা আমি ঈশার কথা এতো ভাবছি কেনো!না এটা ঠিক নাহ্।”

আরহান কথাটা বলে চোয়াল শক্ত করে ফেললো।তারপরে তার রুম থেকে বের হয়ে নিচে গেলো।নিচে গিয়ে দেখলো আরিশা আর আয়েশা বেগম বসে আছেন।

“ছুটকি আলভি কোথায় রে?”

“আলভি আমার রুমে ঘুমাচ্ছে।”

“ওহ্ আচ্ছা।ও কি খেয়েছে?”

“হ্যাঁ আমি খাইয়ে দিয়েছি।”

“আচ্ছা চলো তাহলে আমরা খেয়ে নেই।”

আরহান,আয়েশা বেগম আর আরিশা খেতে বসলো।আরিশা বললো,

“আম্মু ঈশা আপুর বিয়ের শাড়িটা অসাধারণ হয়েছে।আপুর পছন্দ অনেক সুন্দর।আর ভাইয়ার পাঞ্জাবিটাও অনেক সুন্দর হয়েছে।ঈশা আপুই পছন্দ করে দিয়েছে।”

আরহান অবাক হয়ে বললো,

“ঈশা আমার পাঞ্জাবি পছন্দ করে দিয়েছে?”

“হ্যাঁ দিতেই পারে।সমস্যা কি!”

“না কোনো সমস্যা নাই।”

#চলবে……………..

[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার চোখে দেখবেন।]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে