বসন্তের আগমনে পর্ব-১০

0
812

#বসন্তের_আগমনে💛🌸

#পর্ব_১০

#লেখক_ঈশান_আহমেদ

খাওয়া শেষ করে আরহান তার রুমে চলে আসলো।রুমে এসে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে।হঠাৎ তার মোবাইলে একটা কল আসলো।সে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো রাত সাড়ে এগারোটা বাজে।

“এতো রাতে কে কল করলো!”

আর মোবাইলটা হাতে নিয়ে কলটা রিসিভ করলো।কলটা রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে নারী কণ্ঠ ভেসে আসলো।

“কি খবর আরহান বেবি!”

হিয়ার কণ্ঠ শুনেই আরহানের রাগ উঠে গেলো।সে কিছু না বলে কলটা কেটে মোবাইল সুইচ অফ করে দিলো।আরহান মোবাইলটা বিছানায় ছুড়ে মেরে বিছানার উপর বসে পড়লো।

“এই মেয়েটা আমাকে ভালো থাকতে দিবে নাহ্।”

আরহান কথাটা বলে হাত মুথো করে ফেললো।সে রাগে ফুসছে।হঠাৎ সে ধপ করে বিছানায় শুয়ে পড়লো।

/🌸\

মাসুমা বেগমের ডাকে ঈশার ঘুম ভাঙলো।ঈশা চোখ ডলতে ডলতে বললো,

“এতো ডাকাডাকি করছো কেনো আম্মু?”

“দু’দিন পরে তোর বিয়ে।এখন যদি এভাবে পড়ে পড়ে ঘুমাস জামাইয়ের বাড়ি গিয়ে কি করবি!”

“আম্মু ওই বাড়িতে গিয়ে আমার কপালে কি শনি নাচছে একমাত্র আল্লাহ জানে।তাই বিয়ের আগে যত পারি চিল করে নেই।”

কথাটা বলে ঈশা যেই আবার শুতে যাবে মাসুমা বেগম তার হাত টেনে ধরলো।ঈশাকে জোর করে ওয়াশরুমে পাঠালো।



আরহান বসে বসে ব্রেকফাস্ট করছে।আরিশা’ আলভিকে কোলে নিয়ে এসে বললো,

“ভাইয়া তুই রেডি?”

আরহান অবাক হয়ে বললো,

“কিসের জন্য রেডি হবো?”

“বা রে আম্মু তো তোকে কালকে বললো।ঈশা আপুর বিয়ের শপিংয়ে হেল্প করতে।”

“আমি পারবো নাহ্।তুই গিয়ে হেল্প কর।”

আয়েশা বেগম এসে আরহানের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

“আরহান তুমি ইদানীং নিজেকে অনেক বড় মনে করতেছো।নিজের মায়ের কথাও অমান্য করছো।”

আরহান কিছু বলতে যাবে তার আগে আয়েশা বেগম বললো,

“তুমি আরিশা আর ঈশাকে নিয়ে শপিংয়ে যাবে।আলভি দাদুভাই-কেও চাইলে সাথে নিতে পারো।এটাই শেষ কথা।আমি আর কোনো কথা শুনতে চাই নাহ্!”

আয়েশা বেগম কথাগুলো বলে তার রুমের দিকে চলে গেলেন।আরিশা দাঁড়িয়ে মিটিমিটি হাসছে।আরহান আরিশাকে উদ্দেশ্য করে বললো,

“এতো হিহিহি না করে গিয়ে রেডি হয়ে আয়।”

আরিশা মুখ গোমড়া করে আলভিকে কোলে করে নিয়ে চলে গেলো।আরহান ব্রেকফাস্ট শেষ করে সোফায় বসে আছে।আরিশা আলভিকে নিয়ে আসলো।আরহান আলভিকে কোলে নিয়ে বললো,

“চল উড়নচণ্ডী।”

“ভাইয়া তুমি কিন্তু আমাকে অপমান করছো।”

“যা করতেছি একদম ঠিক করতেছি।বেশি কথা না বলে চল।মিস.বকবকানিকে তো আবার তার বাড়ি থেকে ড্রপ করতে হবে।”

আরহান আলভিকে কোলে নিয়ে বের হয়ে গেলো।আরহান গাড়িতে উঠে বসলো।আরিশা আলভিকে নিয়ে পিছনের সিটে বসলো।আরহান ভ্রু কুচকে বললো,

“ওই তুই আলভিকে নিয়ে পিছনে বসলি কেনো?আমাকে কি ড্রাইভার মনে হয়!”

“একটু পরে ঈশা আপু গাড়ি উঠবেই।আপু না হয় সামনে বসলো।আমি আর আলভি পিছনেই ঠিক আছি।”

“আলভিকে সামনে দে।আর তুই ওই বকবকানিকে নিয়ে পিছনে বসিস।”

“একদমই না।আমার ক্রাইম পার্টনার আমার সাথেই বসবে।”

আরহান গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বললো,

“তুই দিন দিন উচ্ছন্নে যাচ্ছিস।”

“হ্যাঁ তুই যেমন গিয়েছিস!”

“ছুটকি তুই কিন্তু এবার আমার হাতে মার খাবি।”

আরিশা মুখে হাসি ফুটলো।সে বললো,

“ভাইয়া তুই কতদিন পরে আমাকে এই নামটা ধরে ডাকলি।”

আরহান কিছু না বলে চুপ করে গাড়ি ড্রাইভ করা শুরু করলো।খানিকক্ষণ বাদে বললো,

“এখন থেকে এই নাম ধরেই ডাকবো।”

||🌼||

আরহান ঈশাদের বাড়ির সামনে গিয়ে গাড়ি থামালো।আরিশা আর আলভি গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো।

“আমি গাড়িতেই বসে থাকি।তুই আর আলভি গিয়ে উনাকে নিয়ে আয়।”

“আরে ভাইয়া বাড়ির সামনে এসে এভাবে গাড়িতে বসে থাকলে মানুষ খারাপ বলবে।ভিতরে চল।”

আরিশা আরহানকে কিছু বলতে না দিয়ে জোর করে ঈশাদের বাড়িতে নিয়ে গেলো।মাসুমা বেগম এসে দরজা খুলে দিলো।মাসুমা বেগম হাসি দিয়ে বললেন,

“আরে তোমরা এসেছো!আচ্ছা ভিতরে আসো।”

আরহান আর আরিশা ভিতরে গিয়ে বসলো।আরহান মাসুমা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বললো,

“আন্টি ঈশা কোথায়?”

“ঈশা রেডি হচ্ছে বাবা।”

আরহান বিড়বিড় করে বললো,

“এই মেয়ে যে এখন কয় ঘন্টা লাগায় রেডি হয় কে জানে!”

আরহান আলভিকে কোলে নিয়ে বসলো।আরিশা আরহানের কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,

“ভাইয়া ঈশা আপুকে দশ মিনিটের মধ্যে যদি তুই ডেকে আনতে পারিস তাহলে আমি ভেবে নিবো তুই বীরপুরুষ।”

আরহান আরিশার কথা শুনে চমকে গেলো।মাসুমা বেগম বললেন,

“আচ্ছা আমি একটু আসছি।”

মাসুমা বেগম চলে যেতেই আরহান বললো,

“তুই কি পাগল হয়েছিস!একটা অচেনা মেয়ের ঘরে আমি কিভাবে যাবো?”

“আরে ঈশা আপু অচেনা হলো কিভাবে?তুই তো তাকে ভালো করে চিনিস।আর তুই যদি ঈশা আপুকে ডেকে আনতে পারিস তাহলে আমি তখন এখনের চেয়েও বেশি রেসপেক্ট করবো।”

“তোর রেসপেক্টের আমার দরকার নেই।”

“তাহলে ধরে নিলাম তুই একদম ভিতুর ডিম।”

আরিশার কথা শুনে আরহানের রাগ উঠে গেলো।সে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,

“উনার রুম কোন দিকে?”

“সোজা গিয়ে ডানে।”

আরিশার কথা অনুযায়ী আরহান হেঁটে গেলো।ঈশার রুমের দরজা খোলা।আরহান ভিতরে উঁকি দিয়ে দেখলো ঈশা চুল আঁচড়াচ্ছে।আরহান ঈশার দরজায় টোকা দিলো।ঈশা পিছনে তাকিয়ে দেখলো আরহান তার রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।ঈশা আরহানকে দেখে এগিয়ে এসে বললো,

“আরে আপনি বাইরে কেনো দাঁড়িয়ে আছেন!ভিতরে আসুন।”

আরহান ঈশার রুমের ভিতরে গিয়ে বললো,

“আপনার রেডি হতে আরো কতক্ষণ লাগবে?”

“মিনিমাম বিশ মিনিট।”

“আরে এতো টাইম লাগবে কেনো!ড্রেস তো পড়েছে আর চুলও আঁচড়ানো শেষ।সো এখন চলুন।”

“আরে না এখনো মেক-আপ করা বাকি আছে।”

“আরে আপনাকে মেক-আপ ছাড়াই সুন্দর লাগে।”

আরহানের কথায় ঈশা অবাক হয়ে আরহানের দিকে তাকালো।আরহান দাঁড়িয়ে মাথা চুলকাচ্ছে।আরহান মনে মনে বললো,

“কি বলতে কি বলে ফেললাম!”

ঈশা মনে মনে বললো,

“তাহলে আর সেজে কি হবে!আমার হবু বরই তো বলে দিলো মেক-আপ ছাড়াই আমাকে সুন্দর লাগে।আউ কি সুন্দর কথা!”

আরহান কিছু বলতে যাবে ঈশা আরহানকে থামিয়ে বললো,

“আচ্ছা চলুন।আমি রেডি।”

ঈশা হাঁটা শুরু করলো।আরহান অবাক হয়ে বললো,

“বাহ্ এক কথাই কাজে লেগে গেলো।”

আরহান কথাটা বলে হাসি দিয়ে ঈশার পিছনে হাঁটা শুরু করলো।

#চলবে…………………

[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার চোখে দেখবেন।]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে