বসন্তের আগমনে পর্ব-০৯

0
862

#বসন্তের_আগমনে💛🌸

#পর্ব_০৯

#লেখক_ঈশান_আহমেদ

আরহান ঈশাকে তার বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে নিজের বাড়িতে চলে আসলো।ঈশা ফ্রেশ হয়ে বসে বসে ভাবছে,

“আচ্ছা আরহান সাহেব একবারও বিয়ের কথা উল্লেখ করলো নাহ্ কেনো!উনি সত্যি কি জানে এই বিয়ের বিষয়ে?নাহ্ আম্মু আমাকে মিথ্যা বলবে নাহ্।”

মাসুমা বেগম এসে দেখলো ঈশা বসে বসে কি জেনো ভাবছে তাই উনি এসে ঈশার সামনে দাঁড়িয়ে বললেন,

“কি রে কি এতো ভাবছিস?”

মাসুমা বেগমের কথায় ঈশার ধ্যান ভাঙ্গলো।তারপরে সে বললো,

“আম্মু তুমি আসছো ভালোই হয়েছে।আচ্ছা আম্মু আজকে আমার আরহান সাহেবের সাথে দেখা হয়েছিলো।কিন্তু অবাক বিষয় হলো উনি আমার আর ওনার বিয়ে নিয়ে একটাও কথাও বলেনি।আসলে উনি কি সবটা জানে!”

মাসুমা বেগম ঈশা কথা শুনে চুপ হয়ে গেলেন।কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন,

“তুই বলেছিস কিছু?”

“একটা ছেলে কিছু বলেনি আর আমি মেয়ে হয়ে বলবো।আমার কোনো লজ্জা নাই নাকি!”

“হয়তো আরহানও লজ্জায় কিছু বলেনি।”

“উনার আবার লজ্জাও আছে?”

“বিয়ের বিষয় তো লজ্জা পেতেও পারে।”

কথাটা বলে মাসুমা বেগম তাড়াতাড়ি করে ঈশার রুম থেকে চলে গেলো।ঈশা ভ্রু কুচকে বললো,

“আম্মু প্রথম আমার প্রশ্ন শুনে ওমন ঘাবড়ে গেলো কেনো!ধ্যাত আমি একটু বেশিই ভাবছি।”

ঈশা তার রুম থেকে বের হয়ে ডাইনিং রুমে গেলো।



আরহান বাড়িতে এসে ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলো।আরহান নিচে গিয়ে দেখলো আয়েশা বেগম আর আরিশা বসে বসে কিসের যে লিস্ট করছে!

আরহান গিয়ে আয়েশা বেগম আর আরিশার সামনে দাঁড়ালো।আরহানকে দেখে আয়েশা বেগম এবং আরিশা দুজনেই ঘাবড়ে গেলো।আরহান অবাক হয়ে বললো,

“কি হয়েছে?তোমরা আমাকে দেখে এমন ঘাবড়ে গেলে কেন?”

আয়েশা বেগম তুতলিয়ে বললেন,

“ককক কই কিছু কিছু নাতো।আমরা কই ঘাবড়ে গেছি!”

“রিলাক্স আম্মু তুমি এমন তোতলাচ্ছো কেন?”

আরিশা আয়েশা বেগমের কানে কানে বললো,

“কালকে আমাকে বকাবকি করে আজকে নিজেই সব প্যাঁচ লাগাবো।”

আয়েশা বেগম ও আস্তে করে বললো,

“তাহলে তুই সামলা নাহ্ ছেলেকে!জানিস তো সব বিষয়ে একশোটা প্রশ্ন করবে।”

আরিশা উঠে দাঁড়িয়ে হাসি দিয়ে বললো,

“আরে ভাইয়া তেমন কিছু নাহ্।আমরা জাস্ট বাজারের লিস্ট করতেছিলাম।আসলে তুই হঠাৎ করে এসে দাঁড়ালি তো।তাই একটু ঘাবড়ে গেছি।”

আরহান নিশ্বাস ফেলে বললো,

“তোরা দুজনে পারিসও বটে।মাঝে মাঝে এমন করিস মনে হয় কি না কি হয়ে গেছে!”

আরিশা আরহানের কথায় হেসে দিলো।

“এতো দাঁত না ক্যালিয়ে বল আলভি কোথায়?”

“আলভিকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে।”

“তা তোমরা মা-মেয়ে কি খাবে নাকি?নাকি সারা দুপুর না খেয়েই থাকবে।”

আয়েশা বেগম উঠে দাঁড়িয়ে বললো,

“আচ্ছা চল আমরা খেয়ে নেই।”

সবাই মিলে একসাথে খেতে বসলো।আরহান খাওয়া শেষ করে বসে বসে টিভি দেখছে।আরিশা এসে তার পাশে বসে বললো,

“ভাইয়া আজকে সন্ধ্যায় আমি আর আম্মু ঈশা আপুদের বাড়িতে যাবো।”

“কি কারণে?”

“আপু তো সামনে বিয়ে তাই একটু দেখে আসি।”

“বিয়ে কবে?”

“আজকেই নাকি সব ঠিক করবে।”

“আচ্ছা তাহলে আমিও যাবো নে।আমার তো আজকে তেমন কাজ নাই।”

আরহানের যাওয়ার কথা শুনে আরিশার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।আরিশা মনে মনে বললো,

“আজকে যদি ভাইয়া যায়।সব বারোটা বাজবে।না ভাইয়াকে কোনোভাবেই নেওয়া যাবে নাহ্।”

আরিশা হালকা কেঁশে বললো,

“আরে ভাইয়া তুই কেনো যাবি?ওখানে সব মেয়ে মানুষরা থাকবে।তোর যাওয়ার দরকার নেই।”

“আঙ্কেল তো আছেন।”

“আরে না আঙ্কেল গুরুত্বপূর্ণ কাজে চিটাগং গিয়েছেন।”

“আচ্ছা ঠিক আছে ঘুরে আয় গিয়ে।আলভিকেও নিয়ে যাস।ওর ভালো লাগবে।”

“ওকে ভাইয়া।”

আরিশা চলে গেলো।আরহান বসে বসে ভাবছে,

“আমার যাওয়ার কথা শুনে আরিশা এমন করলো কেনো!ডাল মে কুচ কালা হে-”

আরহান কথাটা বলে কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থেকে টিভি দেখায় মন দিলো।

/🌸/

আয়েশা বেগম আর আরিশা ঈশাদের বাড়িতে গেলো।ঈশা আলভির সাথে বসে বসে খেলা করছে।আয়েশা বেগম বললেন,

“আমি চাই তিনদিন পরে আরহান আর ঈশার বিয়েটা সেরে ফেলতে।”

মাসুমা বেগম আর তৈয়ব সাহেব হাসি দিয়ে বললেন,

“আলহামদুলিল্লাহ।”

আয়েশা বেগম ঈশাকে উদ্দেশ্য করে বললো,

“ঈশা মা তুমি রাজি তো।”

“আন্টি আপনারা যা ভালো মনে করেন তাই হবে।আমার কোনো আপত্তি নেই।”

ঈশা কথাটা বলেছে ঠিকই কিন্তু তার মনের মধ্যে এক প্রকার সন্দেহ কাজ করছে।

আয়েশা বেগম আর আরিশা চলে আসার সময় ঈশা একটা বক্স আরিশার হাতে দিয়ে বললো,

“এটা মি.কাস্টার্ডের জন্য।”

আরিশা বক্সটা নিয়ে বললো,

“এতে কি আছে ঈশা আপু?”

“মি.কাস্টার্ডের জন্য কাস্টার্ড আছে।”

ঈশার কথায় সবাই হেসে দিলো।ঈশা খানিকটা লজ্জা পেলো।

—💚—

আরহান তার রুমে বসে বসে বই পড়ছে।কলিংবেল বাজার আওয়াজ আরহানের কানে আসলো।সে নিচে নেমে দেখলো রুবি খালা দরজা খুলে দিয়েছে।আয়েশা বেগম আর আরিশা এসেছে।আরহান গিয়ে আলভিকে কোলে নিয়ে বললো,

“এতো টাইম লাগে আসতে?”

আরহান কথাটা বলার সাথে সাথে আরিশা বক্সটা আরহানের হাতে দিলো।আরহান অবাক হয়ে বললো,

“এতে কি আছে?”

“কাস্টার্ড আছে।তোর হব না মানে ঈশা আপু পাঠিয়েছে।”

কাস্টার্ডের কথা শুনে আরহানের মুখে হাসি ফুটলো।হঠাৎ কি যেন মনে হতে আরহান আরিশার দিকে তাকিয়ে বললো,

“এই হব-র মানে কি?পুরোটা বল।”

“আর ভাইয়া তেমন কিছু না।এমনি মুখে চলে আসছিলো।

আরহান আর কিছু না কাস্টার্ড খাওয়া শুরু করলো।আরহান কাস্টার্ড খাওয়া শেষ করে বললো,

” আমার পছন্দের জিনিসটা খুব ভালোই বানাতে পারে মিস.বকবকানি।”

আরহানকে মুচকি হাসতে দেখে আরিশা বললো,

“কি রে ভাইয়া প্রেমে পড়লি নাকি?”

আরিশার কথায় আরহান চোখ রাঙিয়ে তাকালো।

“আরে ভাইয়া আমি মজা করেছি।এতো চোখ রাঙাতে হবে নাহ্।”

“🌻”

হিয়া বসে বসে মোবাইল টিপছে।এমন সময় একটা লোক এসে বললো,

“ম্যাডাম খবর পেলাম আয়েশা বেগম আরহান সাহেবের বিয়ে দেওয়ার মতলব করছে।”

লোকটার কথায় হিয়া দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

“এতো বড় সাহস ওই মহিলা!আমি কিছুতেই এই বিয়ে হতে দিবো নাহ্।কবে বিয়ে তা জানো?”

“না ম্যাডাম তা এখনো জানতে পারিনি।”

“ওকে খোঁজ নেও।ভালো করে খোঁজ নেও।”

হিয়া রাগে কাঁপছে।

/🧡\

আরিশা আলভিকে খাইয়ে দিয়ে নিজেও খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।আরহান আর আয়েশা বেগম বসে বসে রাতের খাবার খাচ্ছে।আয়েশা বেগম বললেন,

“ঈশা বিয়ে তিনদিন পরে।”

হঠাৎ আজকে কেনো জানি ঈশার বিয়ের কথা শুনে আরহানের বুকটা কেঁপে উঠলো।সে নিজেকে সামলে বললো,

“ওয়াও!খুব ভালো খবর।”

“হ্যাঁ।কালকে তুই ঈশা আর আরিশাকে নিয়ে একটু শপিংয়ে যাস।”

“আমি?আমি কেনো যাবো?”

“দেখ ঈশাদের সাথে আমাদের একটা ভালো সম্পর্ক আছে।আর ঈশার ভাই-বোন নেই।আর তুই তো ঈশার বড় ভাইয়ের মতো।তাই তোর যাওয়া উচিত।”

আয়েশা বেগম কথাটা বলে মৃদু হাসলেন।আরহান ভ্রু কুচকে বললো,

“আমি কিভাবে উনার বড় ভাই হলাম।আমাদের কোনো সম্পর্ক নাই।শুধু শুধু এইসব তৈরি করো না তো আম্মু।এতোকিছু থাকতে আমি নাকি ওই বাচাল মেয়ের বড় ভাই!”

আরহানের কথা শুনে আয়েশা বেগম হেসে দিলেন।আরহানও মুচকি হাসলো।তারপরে মনে মনে বললো,

“আম্মু আমাকে ঈশার বড় ভাই বলায় আমার এমন লাগলো কেনো!”

#চলবে…………………………..

[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার চোখে দেখবেন।]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে