বসন্তের আগমনে পর্ব-১২

0
779

#বসন্তের_আগমনে💛🌸

#পর্ব_১২

#লেখক_ঈশান_আহমেদ

আরহান কিছু একটা ভেবে বললো,

“কিন্তু আমি পাঞ্জাবি পড়ি নাহ্।”

“আরে ভাইয়া ছেলেদের পাঞ্জাবিতে বেশি সুন্দর লাগে।আর তুই পাঞ্জাবি পড়তে চাস নাহ্!”

“আমাকে ওতো সুন্দর লাগতে হবে নাহ্।”

আরিশা আয়েশা বেগমের কানে কানে বিড়বিড় করে বললো,

“আম্মু আমরা বললে কাজ হবে না।ঈশা আপুকে দিয়েই বলাতে হবে।”

আয়েশা বেগম মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।

পরেরদিন সকালে,

ঈশা ঘুমিয়ে আছে হঠাৎ তার মোবাইলে একটা কল আসলো।চোখ ডলতে ডলতে মোবাইলের স্কিনে তাকিয়ে দেখলো আরিশার কল।ঈশা কলটা রিসিভ করলো।

“হ্যাঁ আরিশা বলো।”

“আপু তুমি একটু ভাইয়াকে রাজি করাতে পারবে পাঞ্জাবি পড়তে বিয়েতে!”

“আমি রাজি করাবো কেনো?”

“ও তো পাঞ্জাবি পড়তেই চায় না।ইনফেক্ট কখনো পড়েও নাহ্।আর আমাদের কথা তো শুনবেই না।তুমি একটু রাজি করাও।”

ঈশা মনে মনে বললো,

“যেখানে ওরা দুজন রাজি করাতে ব্যর্থ আমি সেখানে কিভাবে রাজি করাবো!”

ঈশা চুপ করে থাকায় আরিশা বললো,

“আপু তুমি কি শুনতে পারতেছো।”

“হ্যাঁ আরিশা আমি শুনতে পারতেছি।ওকে আমি চেষ্টা করবো।তুমি খালি মি.কাস্টার্ডের নাম্বারটা আমাকে ম্যাসেজ করে পাঠিয়ে দেও।কারণ উনার নাম্বার আমার কাছে নেই।”

“ওকে।”

আরিশা কলটা কেটে দিলো।ঈশা ওয়াশরুমে গেলো ফ্রেশ হতে।ঈশা ওয়াশরুম থেকে এসে দেখলো আরিশা আরহান নাম্বার ম্যাসেজ করে পাঠিয়ে দিয়েছে।ঈশা সাত-পাঁচ না ভেবে আরহানকে কল করলো।

আরহান ফ্রেশ হয়ে এসে অফিস যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে।হঠাৎ তার মোবাইলে একটা কল আসলো।সে মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলো আননং নাম্বার।প্রথমে রিসিভ করতে না চেয়েও কি মনে করে রিসিভ করলো!

মোবাইল রিসিট করতেই ঈশা বলে উঠলো,

“এতো টাইম লাগে কল ধরতে।”

ভয়েস শুনতে আরহানের বুঝতে বাকি নেই যে ঈশা কল করেছে।আরহান ভ্রু কুচকে বললো,

“আমাকে কি মনে করে কল করলেন!”

“কারণ তো আছেই কল করার।”

“কারণটাই তো জানতে চাচ্ছি।”

আপনি নাকি বিয়েতে পাঞ্জাবি পড়বেন না শুনলাম!”

“আমি পাঞ্জাবি পড়ি নাহ্।আর বিয়েতে পাঞ্জাবি পড়তে হবে এমন কোনো কথা আছে নাকি?”

ঈশা মনে মনে বললো,

“বর নাকি বিয়েতে পাঞ্জাবি পড়বে নাহ্।হায়রে দুনিয়া!”

ঈশা চোখ রাঙিয়ে বললো,

“আপনার পাঞ্জাবি পড়তেই হবে।বিকজ আমি চয়েজ করে দিয়েছি।আমি কিন্তু কখনো কোনো কিছু নিয়ে আপনাকে জোর করিনি।সো আমার এই কথাটা রাখতেই হবে।”

আরহানকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ঈশা কলটা কেটে ফেললো।আরহান মোবাইলটা হাতে নিয়ে বললো,

“আরে আমাকে তো কিছু বলতেই দিলো নাহ্।”

আরহান বিরক্তি মাখা মুখ নিয়ে নিচে গেলো।আরহান নিচে গিয়ে দেখলো আরিশা আলভিকে নিয়ে খেলছে।

“ওই তোকে কে বলেছিলো ঈশাকে জানাতে যে আমি পাঞ্জাবি পড়বো নাহ্।”

“আগে এটা বল তোকে কে বললো যে আমি ঈশা আপুকে জানিয়েছি।”

“তোকে আমি হাড়েহাড়ে চিনি।”

“তা বলবো নাহ্ কেনো?ঈশা আপু এতো শখ করে তোর জন্য পাঞ্জাবি পছন্দ করে দিলো আর তুই পড়বি নাহ্!এটা কি ভালো দেখায় নাকি!”

“তোকে সবকিছু কে দেখতে বলছে?”

“আমার মন চায় তাই দেখি।”

আরহান আর কিছু না বলে হনহন করে হেঁটে বাড়ি দিয়ে বের হয়ে চলে গেলো।আয়েশা বেগম আরিশার সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

“ব্রেকফাস্ট না করেই চলে গেলো।এতো রাগ যে কোথা থেকে আসে!”

“আম্মু ওর কথা বাদ দেও।কালকে যে বিয়ে ওটা নিয়ে ভাবো।”

“আরে বিয়ে তো ওর’ই।”

“কি অদ্ভুত ব্যাপার তাই-না আম্মু!যার বিয়ে তার হুঁশ নাই,আর পাড়াপড়শির ঘুম নাই।তবে এখানে পাড়াপড়শির জায়গায় মা-বোন হবে।”

আরিশার কথায় আয়েশা বেগম হেসে দিলেন।আয়েশা বেগম হাসি থামিয়ে বললেন,

“একে একমাত্র ঈশা’ই ঠিক করতে পারবে।”

“হ্যাঁ আম্মু ঠিক বলছো।”

আলভি আরিশার সাথে তাল মিলিয়ে বললো,

“আসলেই দিদুন থুমি টিক বলছু।”

আলভির কথায় আয়েশা বেগম আর আরিশা একসাথে হেসে দিলো।




বিয়ের দিন সকালে,

“আম্মু আমি ঈশা আপুর হলুদে যাচ্ছি।”

“ঈশার হলুদে না হয়ে গেলি কিন্তু আরহানের হলুুদ কিভাবে করবো!”

“আম্মু ভাইয়াকে আমাদের সাথে নিয়ে চলো।কোনো না কোনো ভাবে ওর গালে হলুদ ঠিকই লাগিয়ে দিবো।”

“আরহানকে নিয়ে গেলে ঈশা যদি সন্দেহ করে?”

“আরে আম্মু শোনো ঈশা আপু আমাকে বলছে ভাইয়া তো বিয়ের কথা তার সামনে বলে না তাই সে নিজেও বিয়ের কথা ভাইয়ার সামনে বলে না।আমি আবার আগবাড়িয়ে বলে দিছি ‘ভাইয়া তোমার সাথে মজা করতেছে আপু।’তখন আপু বললো ‘ওকে আমিও তাহলে মজাটা চালিয়ে যাই।'”

“কি যে হবে আল্লাহ জানে।আরহান তো কিছুই জানে না আর ঈশাও সবটা জানে নাহ্।আমার সব মিলিয়ে খুব চিন্তা হচ্ছে।”

“আম্মু তুমি রিলাক্সে থাকো আমি ভাইয়াকে নিয়ে যাচ্ছি।আর হলুদ লাগিয়েই বাড়িতে আনবো।”

আরিশা আরহানের রুমে গিয়ে দেখলো আরহান আলভিকে কোলে নিয়ে গিটার বাজাচ্ছে।

“ভাইয়া চলো।”

আরহান অবাক হয়ে বললো,

“কোথায় যাবো আমি?”

“ঈশা আপুর হলুদের অনুষ্ঠানে।”

“আমি হলুদে যাবো না।আমি একেবারে বিয়েতে যাবো নে।তুই বরং আলভিকে নিয়ে যা।”

“তোকে তো যেতেই হবে ভাইয়া।”

আরিশা জোর করে আরহানকে নিয়ে গেলো।আরহান গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে বললো,

“তোর জন্য ভালো একটা শার্ট-প্যান্টও পড়তে পারলাম নাহ্।এই টি-শার্ট আর জিন্স পড়েই চলে এসেছি।”

“আরে ওতো ভালো ড্রেস পড়তে হবে নাহ্।আমার ভাই তো এমনিই মাশাআল্লাহ।”

আরিশার কথায় আরহান জোরে হেসে দিলো।আরহান হাসি থামিয়ে বললো,

“পাম দিচ্ছিস?”

“আরে না তুই ঈশা আপুকে যেটা বলেছিলি আমিও তোকে সেটা বললাম।”

আরহান আর কিছু না বলে মৃদু হাসলো।আরহান ঈশাদের বাড়ির সামনে গাড়ি থামালো।ঈশার হলুদের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে তাদের বাড়ির বাগানে।আরহান গাড়ি থামাতেই আরিশা নেমে দৌড় দিলো।আরহান আলভিকে কোলে নিয়ে ভিতরে গেলো।আরহানকে দেখে সবাই মুচকি হাসছে আর একে অপরের সাথে কথা বলছে।যা দেখে আরহানের অনেক অশস্তি লাগছে।

“এই ছুটকির জন্য আমার এই অবস্থা।এমন অবস্থায় এসেছি দেখে সবাই হয়তো হাসাহাসি করছে।”

আরহান গিয়ে ঈশাকে যেখানে বসানো হয়েছে সেখানে দাঁড়ালো।ঈশাকে দেখে আরহান অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।হলুদ রঙের শাড়ি,ফুলের গহনায় ঈশাকে অনেক সুন্দর লাগছে।আরহান ঈশার দিক থেকে চোখ সরাতে পারছে নাহ্।আজকে প্রথম বার আরহান ঈশার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছে।

আরিশা এসে আরহানের হাতে একটা চিমটি দিলো।আরহান কিছুটা উচ্চস্বরে বলে উঠলো,

“আউচ!”

আরহান আলভিকে কোল থেকে নামিয়ে আরিশার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকালো।

“এটা তুই কি করলি?”

“ভাইয়া অন্যের বউয়ের দিকে কেউ এভাবে তাকিয়ে থাকে নাকি!”

“আরে উনাকে সুন্দর লাগছে তাই তাকিয়ে ছিলাম।তাকিয়ে থাকলে কি হয়েছে?”

“তোকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখলে অনেকে অনেক কিছু ভাবতে পারে।”

“ওকে তাকালাম নাহ্।”

ঈশা আরহানকে বললো,

“এই যে মি.কাস্টার্ড এদিকে আসুন।”

আরহান কিছু না বলে ঈশার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো,

“ডাকলেন কেনো?”

“এতো কথা না বলে আমার পাশে এসে বসুন।”

“কেনো?”

“আহ্ একটু কম কথা বললে হয় নাহ্!”

আরহান আর কিছু না বলে একটা নিশ্বাস ফেলে ঈশার পাশে গিয়ে বসলো।

“এখন আমাকে হলুদ লাগিয়ে দিন।”

“আমি এইসব পারবো নাহ্।”

“আমার হলুদে এসে আপনি আমার গায়ে হলুদ লাগাবেন নাহ্।তাহলে কিভাবে হবে?হলুদ লাগিয়ে দিন বেশি কথা না বলে।”

আরহান আর কিছু না বলে খানিকটা হলুদ নিয়ে ঈশার গালে লাগিয়ে দিলো।ঈশা মুচকি হেসে বেশখানিকটা হলুদ নিয়ে আরহানের গালে লাগিয়ে দিলো।

আরহান অবাক হয়ে বললো,

“এটা কি করলেন?”

“বা রে আমার হলুদে এসে আমার গায়ে হলুদ লাগাবেন কিন্তু আপনার গায়ে হলুদ থাকবে না এটা কি করে হয়?”

“ডিসকাস্টিং!”

আরহান ঈশার পাশে থেকে উঠে চলে গেলো।আরহান একটা চেয়ারে বসে আছে।মাসুমা বেগম এসে আরহানের হাতে শরবত দিয়ে বললো,

“এটা খেয়ে নেও বাবা।”

আরহান গ্লাসটা হাতে নিয়ে মুচকি হেসে বললো,

“থ্যাঙ্কিউ আন্টি।”

মাসুমা বেগম মৃদু হেসে চলে গেলেন।আরহান বসে বসে শরবত খাচ্ছে তবে তার চোখ বারবার ঈশার দিকে চলে যাচ্ছে।

“আমার চোখ বারবার ঈশার দিকে চলে যাচ্ছে কেনো?না এটা ঠিক নাহ্।”

আরহান উঠে দাঁড়িয়ে আরিশার কাছে গেলো।

“ছুটকি তুই আলভিকে নিয়ে চলে আসিস।আমি বাসায় চলে যাচ্ছি।”

“ওকে ভাইয়া তুই চলে যা।এমনিও তোকে জোর করে আনার কারণ মিটে গেছে।”

“আমাকে জোর করে আনার কারণ কি?”

“কারণ হলো ঈশা আপু চেয়েছিলো তোকে হলুদ লাগাবে।তাই তার ইচ্ছাটা পূরণ করার জন্যই তোকে জোর করে নিয়ে এসেছিলাম।”

আরহান আর কিছু না বলে চোখ রাঙিয়ে ঈশাদের বাড়ি থেকে চলে আসলো।

#চলবে……………….

[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার চোখে দেখবেন।]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে