বর্ষণের সেই রাতে- ২ পর্ব-২৮+২৯

0
1696

#বর্ষণের সেই রাতে- ২
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

২৮.

সকাল থেকে সবাই দ্রুত সব কাজ সেড়ে রেডি হয়ে নিচ্ছে। আদিবের বিয়ের কিছু শপিং আর যার যার ব্যাক্তিগত প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে যেতে হবে তাই। সব কাজ সেড়ে নিয়ে বিকেলের দিকে বেড় হবে ওনারা। রাইমাদের পরিবারও এই বাংলোতেই আছেন। কারণ ওনাদের নিজস্ব বাড়ি এখানে নেই। তাই একবাড়িতে থেকেই বিয়ে হবে। আদিব আর রাইমা দুজনের মা বেশ ভালো। ওদের সবাইকে দ্রুত আপন করে নিয়েছেন। পরশু রাত থেকেই আদ্রিয়ান একটু বিরক্ত। ঐ আরমান নামক ছেলেটা অনিমার সাথে একটু বেশিই চিপকে থাকতে চাইছে। যেটা আদ্রিয়ানের মোটেও ভালো লাগছে না। অনিমা বুঝতে পারছে ব্যাপারটা কিন্তু কিছু করতে পারছেনা। মাঝেমাঝে শুধু অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আদ্রিয়ানের রাগে ফুঁসে ওঠাটাই দেখছে। বাকি ছেলে মেয়ে যারা ওদের ব্যাপারটা জানে তারাতো হেসে কুটিকুটি ওদের দুজনের হাল দেখে। যদিও সবার সামনে হাসিটা কন্ট্রোল করে রাখতে হয়। আর নাহিদতো এই অল্পসময়েই এমনভাবে সবার সাথে মিশে গেছে যে এখন ওকে এই বাড়ির কেউই মনে হচ্ছে। তবে আজ সকাল থেকে আদিবের ফুপি, মানে আরমানের মাও অনিমাকে কেমন করে ঘুরে ঘুরে দেখছে। যেটা অনিমা আর আদ্রিয়ান দুজনেই খেয়াল করেছে। ছেলে কী কম ছিল যে এখন মাও এভাবে পেছনে পরেছে?

তিনদিন পর বিয়ে, বাড়িতে প্রচুর মানুষ তাই দুপুরের খাবারের জন্যে সবাই ছাদের ফ্লোরে বসেছে। সবাই মিলে একসাথে খাবে তাই। এক লাইনে ছোটরা মানে ইয়াংরা সবাই বসেছে। ওপর লাইনে মুখোমুখি হয়ে বড়রা বসেছেন। অনিমা আদ্রিয়ান পাশাপাশি বসলেও আরমানও অনিমার পাশে বসে পরেছে। যদিও ওখানে জাবিন বসতে চেয়েছিল কিন্তু তার আগেই আরমান বসে পরেছে। আর আরমানের মা অনিমা আদ্রিয়ানে মুখোমুখি হয়েই বসেছে। আবার অভ্র জাবিনও পাশাপাশি বসেছে। মুখে কিছু না বললেই চোখে চোখে হালকাপাতলা কথা হচ্ছে এদের। খাওয়ার মাঝে আরমান ইচ্ছে করেই অনিমার সাথে নানারকমের কথা বলছে। অনিমাও ভদ্রতা রক্ষায় টুকটাক উত্তর দিচ্ছে, কখনও চুপ করে আছে। আদ্রিয়ানতো শক্ত হয়ে বসে খাচ্ছে কম হাত নিয়ে খাবার নাড়ছে বেশি। আদিব ফিসফিসিয়ে আদ্রিয়ানকে বলল,

” কী ভাই? জ্বলছে?”

আদ্রিয়ান একবার তাকাতেই আদিব আবার খাওয়ায় মনোযোগ দিল, যেন ও কিছুই বলে নি। আরমান একটা বাটি থেকে মাংস তুলে অনিমার পাতে দিয়ে বলল,

” মাংস না নিয়েই তো ভাত শেষ করে ফেলছিলে। মাংসটা ভালো হয়েছে খেয়েই দেখ? আরেকটু ভাত দেই?”

আদ্রিয়ান মুখে লোকমা তুলতে যাচ্ছিল কিন্তু এটা শুনেই থেমে গেল। অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে তারপর আরমানের দিকে তাকিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করে বলল,

” না, ঠিক আছে।”

” আরে আরেকটু নেও। এতো কম খাও বলেইতো এমন রোগা তুমি।”

তখন আদ্রিয়ান বলে উঠল,

” তুমি এতো চাপ নিওনা। ও রোগা হলে সেটা ওর বরের প্রবলেম। ঠিক ম্যানেজ করে নেবে। তার প্রয়োজন হলে রোগা থেকে মোটাও করে নেবে। তুমি খাও।”

” কিন্তু আমি যতদূর জানি অনি এখনও আনম্যারিড।”

” প্রথমত ওর নাম অনিমা। আর দ্বিতীয়ত ও চিরকুমারী থাকার প্রতিজ্ঞা করেনি। বিয়ে করবে একদিন।”

কথাটা শুনে যেন আরমান স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল। তবে আর কথা বাড়াল না। নাহিদ একটু গলা ঝেড়ে বলল,

” আচ্ছা এখানে কী কোন পোড়া খাবার নিয়ে এসছো না-কি? কেমন পোড়া পোড়া গন্ধ পাচ্ছি।”

আশিসও সম্মতি দিয়ে বলল,

” সেম সেম। আমারও একই ফিল হচ্ছে।”

আদিবের মা অনেকটা অবাক হয়ে বললেন,

” কী বলছিস কী? পোড়া খাবার কেন আনতে যাবো?”

আদ্রিয়ান দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

” তোদের দুটোর নাকে ইনফেকশন হয়েছে, নাকের ডক্টর দেখা গাধাস্।”

আদ্রিয়ানের এই কথা নিয়ে একদফা সবাই হেসেও নিল। নাহিদ আর আশিস ওকে আর বেশি না ঘাটিয়ে খাওয়ায় মনোযোগ দিল। অভ্র তো ভয়ে মুখ খুলছেনা, কখন আবার ঝাড়ি খেতে হয়। জাবিন আর রাইমা দুজনেই নিরবে বিনোদন নিচ্ছে। হঠাৎই আরমানের মা আদ্রিয়ানের উদ্দেশ্য বলে উঠল,

” আদ্রিয়ান তোমার ফুপির নাম্বারটা দিওতো।”

আদ্রিয়ান অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল,

” কোন ফুপি?”

” আরে তোমার ফুপি। মানে অনিমার মা।”

আদ্রিয়ান আর অনিমা একসাথে অবাক হয়ে তাকাল আরমানের মায়ের দিকে। আরমান হালকা ব্লাশ করছে। তবুও আদ্রিয়ান একটু হাসার চেষ্টা করে বলল,

” ফুপির নাম্বার দিয়ে আপনি কী করবেন? মানে..”

” আরে দরকার বলেই তো চাইছি। খাওয়া শেষ করে নাম্বারটা দিও কিন্তু।”

অনিমার তো ঘাম বেড়োচ্ছে। কী চায় কী এই মহিলা? আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,

” ফুপির ফোন তো নেই।”

আরমানের মা অনেকটা অবাক হয়ে বললেন,

” নেই মানে?”

” নেই মানে নেই? এইতো গত পরশু বাসের মধ্যে চুরি হয়ে গেল। ইশ! কত দামি ফোন ছিল। বল আদিব।”

আদিব হকচকিয়ে গিয়ে বলল,

” হ্যাঁ? ও হ্যাঁ তাইতো। অনেক দামি ফোন ছিল। ফুপির তো ফুপাও এতোটা প্রিয় ছিলোনা যতটা ঐ ফোনটা ছিল। ”

” এক্সাক্টলি। তাই ফুপি এখনও তার পুরোনো ফোনের শোক কাটিয়ে উঠতে পারেনি। আর ফুপাও এখনও এবরট থেকে ফোন কিনে পাঠায়নি। এইজন্যই তো অনি ওর মাকে ফোন করছেনা, সি।”

আদিবের দাদি বলে উঠলেম,

” হয়েছে খাওয়ার সময় এতো কথা বলতে নেই, খেয়ে নাও সবাই।”

আরমানের মা আশাহত হয়ে আবার খাওয়া শুরু করলেন। তবে আদ্রিয়ান খেতে পারছেনা শান্তিতে। অনিমার তো মনে মনে বড্ড ভয় লাগছে। ও বুঝতে পারছে যে আদ্রিয়ান বিরক্ত আর রাগ দুটোই হচ্ছে।

____________

গোটা দুপুর জুড়ে চৌধুরী বাড়িতে বা পাশের বেডরুমটায় আবারও তান্ডব হয়েছে। সেটা রিকই করেছে। আসলে মাঝেমাঝেই ও এরকম করে। এমনিতে স্বাভাবিক থাকলেও যেই মুহূর্তে অনিমার কথা মনে পরে, এটা মাথায় ঘোরে যে অনিমা ওকে ঠকিয়ে পালিয়ে গেছে, তখনই এরকম নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে যায় ও। মাত্রাতিরিক্ত নেশা করে সবকিছুই ভেঙ্গে ফেলে। যদিও সব শান্ত হয়ে গেছে বেশ অনেকটা সময় হল। স্নিগ্ধা খাবারের ট্রে এনে আস্তে করে দরজা ফাঁক করে দেখে রিক উপর হয়ে শুয়ে আছে। ওর বা হাত দিয়ে চুইয়ে চুইয়ে রক্ত পরছে। স্নিগ্ধা গুটিগুটি পায়ে ভেতরে এলো। প্লেটটা টি-টেবিলে রেখে রিকের পাশে বসে ওর মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে বলল,

” রিক দা?”

রিক চোখ বন্ধ করে রেখেই শক্ত কন্ঠে বলল,

” দেখ বিরক্ত করিস না আমাকে এখন। যা এখান থেকে।”

স্নিগ্ধা উঠে গিয়ে ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে এলো। রিকের পাশে বসে রিকের কাটা হাতটা ধরতেই রিক ঝাড়ি মেরে বলল,

” তোকে যেতে বললাম না?”

সিগ্ধা রিকের ধমকে পাত্তা না দিয়ে রিকের হাত টেনে নিজের কাছে নিল। রিক সরাতে নিলেই স্নিগ্ধা কাটা জায়গায় একটু চাপ দিল। রিক ‘আহ’ করে উঠল। স্নিগ্ধা কোন কথা না বলে রিকের হাতে আলতো হাতে পরিষ্কার করে ঔষধ লাগিয়ে দিচ্ছে। রিকও আর কিছু বলেনি শুধু ভ্রু কুচকে তাকিয়ে ছিল স্নিগ্ধার দিকে। ব্যান্ডেজ করার সময় রিক বলল,

” তোকে এতো সাহস কে দেয় বলত? লোকে আমার দিকে চোখ তুলে তাকাতেও ভয় পায় আর তুই?”

” তুমি বলোনা আমার আর অনিমার মধ্যে অনেক সিমিলারিটিস্ আছে? তার মধ্যে কিন্তু এটাও একটা। ওও কিন্তু প্রথমে তোমাকে একদম ভয় পেতোনা। কিন্তু পরে এভাবে যমের মত ভয় পেতে শুরু করল কেন বলোতো? কী করেছিলে ওর সাথে?”

রিক বিরক্ত হয়ে বলল,

” কিছুই করিনি। জানি অদ্ভুত শোনাচ্ছে, কিন্তু এটাই সত্যি।”

” বাদ দাও। আদিব ভাইর বিয়েতে যাবে?”

” ফ্রি হলে, আর গেলে তোকে নিয়েই যাবো। এবার যা।”

” যাবোতো খেয়ে নাও আগে।”

রিক রাগী চোখে তাকাল স্নিগ্ধার দিকে। স্নিগ্ধা হেসে বলল,

” কী হল আমি খাইয়ে দেব?”

রিক বিরক্তি নিয়ে স্নিগ্ধার হাত থেকে প্লেট নিয়ে নিল। এরপর নিজেই খেতে শুরু করল। স্নিগ্ধা ভেংচি কেটে বলল,

” নীলপরী বললে তো নাচতে নাচতে ওর হাতে খেতে।”

রিক চোখ ছোট ছোট করে তাকাতেই স্নিগ্ধা প্রায় দৌড়ে ওখান থেকে চলে গেল। ওখানে এখন থাকা মানেই সিংহের মুখে হাত ঢোকানো। স্নিগ্ধার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে যে রিক হেসেছে সেটা হয়তো রিক নিজেও জানেনা।

____________

অনেক খাটাখাটনির পর বিকেলের শপিং এর কাজ শেষ হয়েছে। সব মিলিয়ে এরেঞ্জ করে কেনাকাটা করতে বেশ কষ্ট করতে হয়েছে এদের। তবে তারমাঝেও বেশ মজার মজার ঘটনা ঘটেছে। আরমান সারাক্ষণ অনিমার পেছনেই চিপকে ছিল। অনিমা বারবার বারণ করার পরেও জোর করেই একটা পেন্ডেন্ট গিফট করেছে ওকে। এমনকি নিজের হাতে পরিয়েও দিয়েছে। অনিমা অনেক চেষ্টা করেও বারণ করতে পারেনি। পরিস্থিতিটাই এমন হয়ে ছিল। ঐ মুহূর্তে ভীত চোখে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে ছিল ও। দুবার আরমান অনিমার গায়ে হাতও দিয়েছিল। যদিও সেটা পজিটিভলি, নরমালি কথার ছলে বা আড্ডার ছলে যেভাবে দেয় সেভাবেই। সেরকম কিছু ভেবে দেয়নি। কিন্তু সেটা আদ্রিয়ানের মোটেও সহ্য হয়নি। ও না পেরেছে সবার সামনে কিছু বলতে আর না সহ্য করতে পেরেছে। আদিব, আশিস, নাহিদ, জাবিন, রাইমা ওরা সবাই বেশ মজা নিয়েছে ব্যাপারটায়।

আদ্রিয়ান পরশু থেকে এমনিতেই হালকা রেগে ছিল। শপিং মল থেকে বেড়োনোর পর থেকে ফুলে বোম হয়ে রয়েছে। কারো সাথেই কথা বলেনি তেমনভাবে। অনিমার সাথেতো না-ই। বাড়ি ফিরে রেস্ট আবার সবাই কাজে লেগে পরেছে। আদ্রিয়ান এখনও বম হয়ে আছে। আদিব ওরাও মাঝে মাঝে গিয়ে একটু খোঁচা মেরে আসছে। তবে এই দুদিন ধরেই আদিবের কাজিন সিস্টারদের দু একজন আদ্রিয়ানের ওপর একটু বেশিই ঢলে পরে। মুখে ‘ভাইয়া’ ‘ভাইয়া’ বললেও আদ্রিয়ানকে দেখলেই যে ওদের মন ‘সাইয়া’ ‘সাইয়া’ করে সেটা অনিমা বেশ বুঝতে পারে। বিশেষ করে আদিবের খালাতো বোনটা। আদ্রিয়ানকে সাহায্য করার নাম করে শুধু গা ঘেষছে। আদ্রিয়ানও আজ ঐ মেয়ের সাথে একটু বেশিই মিশছে। অনিমার রাগ হচ্ছে ঠিকই এটাও বুঝতে পারছে যে আদ্রিয়ানেরও এরচেয়ে বেশি রাগ হয়েছে নিশ্চয়ই ঐ আরমানের কজে। কিন্তু ঐ বা কী করবে? অসহায়ের মত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবটা দেখা ছাড়া আপাতত কোন উপায় নেই। জাবিন এসে অনিমার পাশে দাঁড়িয়ে বলল,

” ভাবি বি রেডি। বোম যেভাবে আস্তে আস্তে যত্ন নিয়ে বিশাল আকাড়ে তৈরী হচ্ছে, যেকোন সময় ফাটবে কিন্তু। সাবধান হ্যাঁ?”

অনিমা অসহায় দৃষ্টিতে তাকাল জাবিনের দিকে। জাবিন মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল। রাইমার দিকে তাকাতে রাইমাও ইশারায় বলল ‘তৈরী থাকো বাচ্চা, খুব শীঘ্রই তোমার ওপর দিয়ে সুনামি যাবে’। অনিমা অসহায়ভাবে একটা শুকনো ঢোক গিলল।

কাজকর্ম শেষ করে ড্রয়িং রুমে সবাই একসাথেই একটু বসেছে। দরকারি কথাও হচ্ছে এরমধ্যে। আদ্রিয়ান এসে বসে জগ থেকে গ্লাসে পানি নিল। অনিমা শুধু আড়চোখে দেখছে আদ্রিয়ানকে আর ভাবছে যে আক্রমণটা কখন কোনদিক থেকে হতে পারে। কথার মাঝেই দাদি বলে উঠল,

” এইযে আদিব, আদ্রিয়ানকে দেখে শেখ যে বোনের খেয়াল কীকরে রাখতে হয়। সরাটাদিন অনিমাকে কেমন চোখে চোখে রাখে। বাপ মা এখানে নেই তো তাই। তুইতো তোর বোনগুলোর দিকে তাকাসও না। ভাইদের এমনই হতে হয় বুঝলি? আর অনিমাও কী সুন্দর আদ্রিয়ানের কথা মেনে চলে। কী সুন্দর সম্পর্ক ভাই বোনের।”

আদ্রিয়ান বেচারা জল খাচ্ছিল কিন্তু দাদির কথা বিষম খেয়ে গেল। আদিব উঠে আদ্রিয়ানের পিঠে হাত বুলিয়ে বলল,

” হ্যাঁ হ্যাঁ একদম। একেবারে সচ্ছ পবিত্র ভাইবোনের সম্পর্ক ওদের। পুরো বাঁধাই করানোর মতো।”

আদ্রিয়ানের কাশি থামছেইনা। অনিমা এখন পারছেনা মাটি ফাঁক করে তারমধ্যে ঢুকে যেতে। নাহিদ বলল,

” বাঁধাই মানে। ঐতিহাসিক ভাইবোনের সম্পর্ক এটা। বাঙালি.. না না শুধু বাঙালি না মানবজাতি যুগ যুগ ধরে মনে রাখবে ভাই বোনের এই অমর সম্পর্ক।”

আদ্রিয়ান রাগী চোখে তাকাল ওদের দিকে। জাবিন আর পারল না,সবার সামনেই ঘর কাঁপিয়ে হেসে দিল। অভ্র ঠোঁট চেপে অনেক কষ্টে হাসি আটাচ্ছে। যারা ব্যাপারটা জানে সবার অবস্থা একই। জাবিনের হাসির কারণটা বাকিরা বুঝলনা। রাইমা অনেক কষ্টে সবাইকে সামলালো।

সবাই যে যার যার মত শুতে চলে যাচ্ছে। আদিব, আশিস, নাহিদ, অভ্র ওরা এখনও এই বিষয় নিয়ে হাসাহাসি করছে। আদ্রিয়ানের ধমকিতে সব থেমে একে একে শুতে গেল। আদ্রিয়ানও ওপরে যেতে নেবে এমন সময় আরমানের মা ডাকল ওকে। আদ্রিয়ান দাঁড়িয়ে বলল,

” কিছু বলবেন?”

আরমানের মা মুখে হাসি ফুটিয়ে ইতস্তত করে বলল,

” কীকরে যে বলি। আসলে..”

আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে ফেলল। খানিকক্ষণ ভনিতা করে আরমানের মা বললেন,

” আসলে আরমানের তো বিয়ের বয়স হয়েছে এতো ভালো চাকরীও আছে। তুমি অনিমার কাজিন ভাই হও তাই তোমাকেই বলছি। আরমানের অনিমাকে পছন্দ হয়েছে। আমাদেরও বেশ পছন্দ হয়েছে ওকে। তাই বলছিলাম ওদের দুজনের বিয়েটা নিয়ে যদি তোমার ফুপির সাথে একটু কথা বলতে আরকি। বুঝতেই পারছ।”

#চলবে…

#বর্ষণের সেই রাতে- ২
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

২৯.

আদ্রিয়ান অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আরমানের মায়ের দিকে। ওর সামনে আজ ওরই ভালোবাসার মানুষের, আরও সহজ করে বললে হবু বউয়ের বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছে? আর সেই প্রস্তাবটাও কি-না ওকেই দিচ্ছে। আদ্রিয়ান এখন হাসবে না-কি কাঁদবে বুঝে উঠতে পারছেনা। আরমানের মা হেসে বলল,

” তুমি বুঝতে পারছতো কী বলছি?”

ওনার কথায় আদ্রিয়ানের হুস এল। আদ্রিয়ান একটু গলা ঝেড়ে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,

” আপনি অনিমার কথা বলছেন? মানে ঐ পিচ্চি মেয়েটা?”

” হ্যাঁ তোমার ফুপাতো বোন, অনিমা।”

আদ্রিয়ান একটু সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলল,

” বিয়েতো হবেনা। মানে ফুপা এতো তাড়াতাড়ি ওর বিয়ে দেবেনা। ওর এখনও পড়াশোনা শেষ হয়নি।”

আরমানের মা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বললেন,

” ও এই ব্যাপার? সমস্যা কী? আমরা বিয়ের পরেও পড়াব। আমি কথা বলে নেব এই বিষয়ে।”

আদ্রিয়ানের মেজাজ বিগড়ে যাচ্ছে। দুনিয়াতে মেয়ের অভাব না-কি? ওর বউটাকেই পেল?তবুও একটু হাসার চেষ্টা করে বলল,

” ওরতো এখনও বিয়ের বয়সই হয়নি। ও তো নাবালিকা। সবে সতেরো বছর হয়েছে।”

” কী? কিন্তু আমিতো জানি ও ওনার্স সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্রী। উনিশ বা বিশ তো হওয়ারই কথা বয়স।”

” আসলে অনেক ট্যালেন্টেড মেয়েতো! তাই আগে আগে ভর্তি করে দিয়েছে।”

” তাই বলে এতো আগে? কীভাবে সম্ভব? কিছুই তো মিলছেনা..যাই হোক এক বছরই তো কম। আমাদের কোন অাপত্তি নেই। তুমি তোমার ফুপি..ও ফুপির তো ফোন নেই চুরি হয়ে গেছে। আচ্ছা তোমার ফুপার নাম্বারটাই দাও। আমি কথা বলে নিচ্ছি।”

আদ্রিয়ান এবার মহা ঝামেলায় পরল। এই মহিলাতো পেছনই ছাড়ছেনা। আদ্রিয়ান মাথায় চট করে কিছু একটা এল। ও একটু ভেবে আরমানের মায়ের একটু কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,

” আন্টি আসলে আপনাকে বলতে চাইনি আমি, আমাদের পারিবারিক ব্যাপারতো তাই। কিন্তু আপনি যখন এমন কিছু একটা ভেবেছেন তখন আমার জানানো উচিত। আর যাই হোক কাউকে ঠকানোতো যাবেনা তাইনা?”

আরমানের মা শোনার জন্যে উৎসাহি হয়ে একটু ঝুঁকে নিজেও আস্তে করে বললেন,

” কী এমন কথা?”

আদ্রিয়ান আরমানের মায়ের দিকে তাকিয়ে বাঁকা একটা হাসি দিল।

পরশু বিয়ে তাই আজ কাজের চাপটা অনেকটাই বেড়ে গেছে। সকাল থেকেই সবাই নানারকম কাছে ব্যস্ত। তবে অনিমা একটা অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ্য করছে সেটা হল আরমানের মা আজ আর ওকে সেভাবে দেখছে না। বরং ওর থেকে দূরে দূরেই থাকছে। মাঝেমাঝে যাও একটু তাকাচ্ছে তাও অদ্ভুতরকমভাবে। প্রথমে অবাক হলেও পরে অনিমা ভাবল যা খুশি করুন তাতে ওর কী? তবে আরমানও সকাল থেকে কেমন মুখ ভার করে আছে আর কিছুক্ষণ পরপরই অনিমার দিকে দেখছে। তবে আদ্রিয়ানের ব্যবহার আজ বেশ স্বাভাবিক। ও ভালোভাবেই সবার সাথে হেসে খেলে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু অনিমা জানে যতই স্বাভাবিক থাক ওর ওপর দিয়ে একটা ঝড় নিশ্চয়ই যাবে। ব্যস্ততার মাঝে সারাটাদিন কাটল ওদের আজ। দুপুরে খাওয়া শেষ করে সবাই একটু রিল্যাক্স করছে। অনিমা, জাবিন, রাইমা মিলে গল্প করছিল আর হাটছিল। হঠাৎ দাদি রাইমাকে ডাকল কেন জেনো। জাবিন ফোনে ব্যস্ত তাই অনিমা হাটছে আর বাগানটা দেখছে। বাগানটা বেশ সুন্দর। হঠাৎ ওর সামনে এসে আরমান দাঁড়াল। অনিমা অনেকটা চমকে গেল, পরে নিজেকে সামলে বলল,

” কিছু বলবেন?”

” অনি দেখ কাল থেকে মা কীসব বলছে। বলছে তোমার সাথে আমার বিয়ে হবেনা। উনি নাকি রাজি নন। অথচ ওনারই তোমাকে সবচেয়ে বেশি পছন্দ ছিল। এরকম কেন করছে বুঝতে পারছিনা। আমিতো ঠিক করে নিয়েছি বিয়ে করলে তোমাকেই করব। কিন্তু হঠাৎ করেই আম্মু বেঁকে বসল। তুমি কী বুঝতে পারছ আমার সমস্যাটা?”

অনিমা বোকার মত না বোধক মাথা নাড়ল। ও আসলেই বোঝেনি কিছু। কী বলছে এই ছেলে? আরমান অনিমান অনিমার দিকে একটু এগিয়ে গিয়ে বলল,

” আরে ইয়ার পছন্দ করি আমি তোমাকে। আই ওয়ান্ট টু ম্যারি ইউ। মা মানুক আর না মানুক দরকারে আমরা পালিয়ে বিয়ে করব। শুধু তুমি রাজি হয়ে যাও প্লিজ।”

অনিমাতো এবার সত্যিই বোকা বনে গেছে। কী বলছে এই ছেলে? অনিমা ইতস্তত করে বলল,

” দেখুন আমি..”

আরমান অনিমার দু বাহুর ওপর হাত রেখে বলল,

” প্লিজ রাজি হয়ে যাও। দরকারে আমরা আজই লুকিয়ে বিয়ে করব। তুমি রাজি তো?”

অনিমা দ্রুত নিজেকে ছাড়িয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে আর ভাবছে এর এই পছন্দের চক্করে অনিমার কপালে কেন শনি নিয়ে আসছে? ঐ পাগলটা কোনভাবে দেখে ফেললে আরমানের কপালে কী আছে আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেনা। ওর যা খুশি হোক তাতে অনিমার কিছু যায় আসেনা, ওরতো নিজের কথা ভেবে ভয় হচ্ছে। অনিমা কাঁপা গলায় কিছু বলতে যাবে তার আগেই কেউ বলে উঠল,

” অনি তোমাকে দাদি ডাকছে।”

অনিমা চমকে তাকাল। আদ্রিয়ান হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে। আদ্রিয়ানের চোখে যে মারাত্মক রাগ আছে সেটা অনিমা ভালোই বুঝতে পারছে। অনিমা যেতে নিলেই আরমান বলে উঠল,

” আদ্রিয়ান, তুমি তোমার বোনকে একটু বোঝাও প্লিজ আর আমার বাবা মাকেও। আমি ওকে বিয়ে করতে চাই এতে সমস্যা কী তুমিই বল? আমি কী ছেলে হিসেবে খারাপ? আর আমারতো মনে হয় অনিমার সাথে আমাকে বেশ মানায়।”

অনিমা মনে মনে যত দোয়া জানে সব পড়ছে। আজ ওকে কেউ বাঁচাতে পারবেনা। আর মনে মনে বলছে, ‘আরে ভাই থাম, দয়া করে থাম। কার সামনে কী বলছিস?’ আদ্রিয়ান আরমানের কথায় পাত্তা না দিয়ে অনিমার উদ্দেশ্য ঠান্ডা গলায় বলল,

” কী হল যাও?”

অনিমা একটা ঢোক গিলে মাথা নিচু করে চলে গেল। আদ্রিয়ান একপলক আরমানের দিকে তাকিয়ে ওকে আর কিছু বলতে না দিয়ে নিজেও চলে গেল।

_____________

রাত সাড়ে দশটা বাজে। জাবিন, রাইমা বাকি মেয়েরা সবাই গল্প করছে। কিন্তু অনিমার ক্লান্ত লাগছে তাই ও ওর রুমে চলে এলো। রুমটাতে ও আর জাবিন থাকে। কিন্তু জাবিন আজ অনেক দেরীতে আসবে, সবার সাথে গল্প করবে তাই। অনিমা রুমে এসে বেডে বসে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে না ফেলতেই দরজা লাগানোর আওয়াজে চমকে উঠল। তাকিয়ে দেখে আদ্রিয়ান দাঁড়িয়ে আছে। মুখে একটা শয়তানী হাসি ঝুলে আছে ঠিকই কিন্তু ভেতর ভেতর যে কী ভয়াবহ পরিমাণ রেগে আছে কেউ জানেনা। আদ্রিয়ানকে দেখে অনিমা ভয়ে প্রাণ যায় যায় অবস্থা। এমনিতেই দাঁড়িয়ে গেল ও। আড্ডা আর কাজের জন্যে কিছুক্ষণের জন্যে ভুলেই গেছিল সেসব কথা। মনে থাকলে কখনই এভাবে একা একা থাকত না। ও কাঁপাকাঁপা গলায় বলল,

” আ্ আপনি এখানে কেন? আর দ্ দরজা বন্ধ করলেন কেন?”

আদ্রিয়ান মুখে সেই ডেবিল টাইপ হাসি ধরে রেখেই বলল,

” আদর করার সময় দরজা জানালা সব বন্ধ করে নিতে হয় জানপাখি। লোকে দেখে ফেললে পরে তুমিই লজ্জা পাবে।”

” ম্ মানে?”

” ওয়েট বেবী, ওয়েট। এতো তাড়া কীসের? সবটা বোঝাচ্ছি ধীরে ধীরে।”

আদ্রিয়ান পকেটে হাত ঢুকিয়ে সিটি বাজাতে বাজাতে বিছিনায় বসে অনিমাকে ভালোভাবে স্কান করে নিয়ে বলল,

” হুম.. রূপ ছিটকে ছিটকে পরছে। ছেলের পছন্দ হয়, ছেলের মায়ের পছন্দ হয়। সোজা বিয়ে করে ঘরে তুলতে চায়। বাহ!”

অনিমা একটু অবাক হল ছেলের মায়েরও পছন্দ মানে? আদ্রিয়ান মুখে হাসি রেখেই বলল,

” তোমার জন্যে আমার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে আরমানের মা, আরমানের জন্যে। তুমি কী বল? হ্যাঁ বলে দেব? ছেলের এতো ভালো চাকরি, দেখতেও ভালো। কেমন জেনো? হ্যাঁ বলিউড স্টার। এরপর আবার দুজনকে নাকি পাশাপাশি খুব ভালো মানায়। কি বল সম্বন্ধ পাকা করে ফেলি? এতো ভালো প্রস্তাব।”

অনিমা চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

” আচ্ছা এসব ছাড়ো। আমিতো এখানে প্রেম করতে এসছি তোমার সাথে, প্রেম করার সময় ওসব আউটসাইডারদের কথা না ভাবাই ভালো।”

কথাটা বলে আদ্রিয়ান অনিমার দিকে এগোতে লাগল। অনিমা একটা শুকনো ঢোক গিলে পেছাচ্ছে বেশ বুঝতে পারছে যে ওর কপালে আজ খুব দুঃখ আছে। সব দোষ ঐ মা আর ছেলের। নিজেরা উল্টোপাল্টা কাজ করে ওকে ফাঁসিয়ে দিল। আদ্রিয়ান বাঁকা হেসে বলল,

” তো বেবী, শুরু করি?”

অনিমা দ্রুত ঘর থেকে বেড়িয়ে যেতে নিলে অাদ্রিয়ান ওর হাত টেনে ধরে নিজের কাছে নিয়ে এল। ওর কোমর জড়িয়ে নিজের সাথে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে ধরল। আদ্রিয়ান কোমর এতো জোরে চেপে ধরেছে যে অনিমা প্রচন্ড ব্যাথা পাচ্ছে। বোঝাই যাচ্ছে এতক্ষণ বলা কথাগুলো শুনতে ফানি লাগলেও আদ্রিয়ান প্রচন্ড রেগেই বলেছে। আর এখনতো সীমাহীন রেগে আছে। ব্যাথায় কাঁদোকাঁদো মুখ করে আদ্রিয়ানের দিকে তাকাল অনিমা। নিজেকে ছাড়াতে চাইছে কিন্তু আদ্রিয়ানের শক্তির কাছে ওর শক্তি কিছুই না। আদ্রিয়ান আরেকটু চেপে ধরে বলল,

” এখন যেভাবে ছাড়ানোর চেষ্টা করছ সেভাবে আরমান যতবার ছুঁয়েছে ততবার ছাড়ানোর চেষ্টা করোনি কেন? তখন এতো জোর ছিল কোথায়? আর আমি ছুঁলেই শুধু অস্বস্তি হয় তাইনা?”

এরপর ঘাড় বাঁকা করে অনিমার গলার দিকে তাকিয়ে দেখল সেই পেন্ডেন্টটা এখনও পরে আছে অনিমা। আদ্রিয়ান ঠোঁটে আবার সেরকম হাসি ঝুলিয়ে বলল,

” বাহ! এখনও এটা খোলনি? এতো মায়া পরে গেছে?”

অনিমার এখন নিজেরই নিজের মাথা ফাটাতে ইচ্ছে করছে। এই পেন্ডেন্ট এর কথাতো ভুলেই গেছিল ও, খুলবে কীকরে? এসব ভাবনার মাঝেই জোরে ব্যথা পেয়ে ‘আহ’ করে উঠল অনিমা। হ্যাঁ আদ্রিয়ান পেন্ডেন্টটা একটানে খুলে নিয়েছে। অনেকটা ব্যথা পেয়েছে অনিমা। ও এবার কেঁদেই দিল। আদ্রিয়ান সাথেসাথেই ওকে দেয়ালের সাথে আটকে ধরে বলল,

” একদম কাঁদবেনা। উল্টোপাল্টা কাজ করার সময় মনে থাকেনা? অন্যকেউ তোমাকে ছোঁয়ার সাহস পাবে কেন? কেন ছোঁবে তোমাকে? তোমার গলায় এসব কেন পরিয়ে দেবে? হ্যাঁ?”

অনিমা মাথা নিচু করে কাঁদছে। দুই বাহু একেবারে শক্ত করে ধরে চেপে রেখেছে। তারওপর ঘাড়ের দিকটা জ্বলছে ওর। মনে মনে ইচ্ছেমতো আদ্রিয়ানকে বকছে ও। এরকম করে কেউ? এমন পাগল কেন লোকটা? আদ্রিয়ান খেয়াল করল অনিমার ঘাড়ের ওদিকটা লাল হয়ে গেছে। আদ্রিয়ান অনিমার গলায় হালকা আঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করে ঝুঁকে ঠোঁট ছোঁয়ালো। হালকা কেঁপে উঠল অনিমা। মাথা তুলে অনিমার চোখ মুছে দিয়ে আদ্রিয়ান নরম স্বরে বলল,

” খুব লেগেছে না? এমন কাজ করো কেন হুম? তুমি জানো রেগে গেলে আমার মাথা নষ্ট হয়ে যায়।”

অনিমার রাগ লাগছে এবার ওর কোমর, হাত, গলা সব ব্যাথা বানিয়ে দিয়ে ন্যাকামো করছে। অনিমা আদ্রিয়ানকে ঠেলে সরিয়ে বলল,

” আমাকে অন্যকেউ ছুঁলে আপনার কী হ্যাঁ? আপনিও তো ছুঁলেন আমাকে সেইবেলা? আর তাছাড়াও যখন ঐ স্মৃতি যখন আপনার হাত জড়িয়ে রেস্টুরেন্টে বসে থাকে, বিয়ে বাড়িতে মেয়েগুলো আপনার গায়ে ঢলে পরে তখন কিছু না? আমায় কেউ ছুঁলেই দোষ?”

আদ্রিয়ান দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

” স্মৃতি আমার বন্ধু, আর ঐ মেয়েরা আদিবের বোন মানে আমারও বোন। আরমান তোমার কে হয় শুনি?”

অনিমা ভয় আর রাগের মিশ্র অনুভূতিতে কী বলছে নিজেই জানেনা তাই বলে ফেলল,

” হয়না তো কী হয়েছে হ্যাঁ? বানিয়ে নেব। এমনিতেও তো বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেই?”

আদ্রিয়ান অনিমাকে আবারও নিজের দিকে টেনে নিয়ে বলল,

” আরমানের বউ হওয়ার খুব শখ?”

” হবে না কেন? ছেলে হিসেবেতো ঠিকঠাকই আছে। আর যাই হোক আপনার মত এভাবে টর্চার করবেনা।”

আদ্রিয়ান অনিমাকে কপালের চুলগুলো সরাতে সরাতে বলল,

” আজ বলেছ বলেছ। কিন্তু ভুল করেও যদি আরেকবার মুখ দিয়ে এই কথা বেড় হয় একদম খুন করে ফেলব।”

অনিমা ভয় পেয়ে একটা ঢোক গিলল। আর কিছু বলল না। কারণ একে এখন আর ক্ষেপানো ঠিক হবেনা। না জানি কী করে বসে।

” কী মনে থাকবে?”

আদ্রিয়ানের থমকিতে অনিমা দ্রুত হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ল। আদ্রিয়ান মুচকি অনিমার কপালে চুমু দিয়ে কানের কাছে মুখ এনে বলল,

” গুড নাইট জানপাখি। হ্যাভ আ সুইট ড্রীম।”

বলে আদ্রিয়ান দরজা খুলে চলে এলো। অনিমা দ্রুত এক গ্লাস পানি নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে নিল। তখনই জাবিন এসে অবাক হয়ে দরজার দিকে একবার তাকিয়ে অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,

” ভাইয়া হঠাৎ এই রুমে কেন এসছিল?”

অনিমা মুখ মুছে ভীত কন্ঠে বলল,

” ডোস দিতে। এদিকের ডোস দেওয়া শেষ। ঐদিকে এবার কী করে খোদা জানে। আল্লাহ দেখ ছেলেটা যাতে প্রাণে বেঁচে যায়।”

জাবিন হাত উঠিয়ে বলল,

” আমিন।”

অনিমা তাকাতেই জাবিন ফিক করে হেসে দিল। কিন্তু অনিমারও হাসি পাচ্ছে এখন। ঐ ছেলের কপালে শিওর দুর্ভোগ আছে। কিন্তু মায়াও হচ্ছে বেচারার জন্যে।

সকালে চেঁচামেচি শুনে অনিমা আর জাবিন দুজনেরই ঘুম ভাঙল। এতো চেঁচামেচি শুনে ওরা উঠে দ্রুত বাইরে এলো। খেয়াল করে বুঝল আওয়াজ আরমানের রুম থেকেই আসছে। অনিমা আর জাবিন তাড়াতাড়ি সেই রুমে ঢুকে দুজনেই অবাক হয়ে গেল। অনিমা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে সামনের দিকে।

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে