বর্ষণের সেই রাতে- ২ পর্ব-৩০+৩১

0
1835

#বর্ষণের সেই রাতে- ২
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

৩০.

অনিমা অসহায় দৃষ্টিতে জাবিনের দিকে তাকিয়ে আবার সামনে তাকাল। আরমান ওয়াসরুমের ফ্লোরে পরে আছে, মনে হচ্ছে প্রচন্ড ব্যাথা পেয়েছে। আদিব আর আরেকটা ছেলে মিলে ওকে তোলার চেষ্টা করছে। আরমান সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে ওয়াশরুমে যাচ্ছিল। শুধু হাতমুখ ধোবে তাই দরজা লক করেনি। কিন্তু একটু এগোতেই স্লিপ করে পরে গেছে। আর পরেছেও ভুলভাবে যার ফলে অনেকটা বেশিই ব্যাথা পেয়েছে। আরমানের চিৎকারেই সবাই ছুটে এসছে। ওকে তুলে আনতে আদিব একটা ছেলেকে নিয়ে গেছে। আরমানের মা সহ সবাই মোটামুটি অস্হির হয়ে গেছে আরমানের এরকম অবস্থায়। আরমান ব্যাথায় কাতরাচ্ছে। এমনিতেই রেগে থাকলেও অনিমার এবার একটু মায়া হচ্ছে বেচারার ওপর। এটাও বুঝতে পারছে যে আদ্রিয়ানই কিছু একটা করেছে। ওরা সবাই ধরাধরি করে আরমানকে খাটে বসাতে চাইল কিন্তু আরমান ব্যাথায় চিৎকার করছে। ওরা বুঝলো যে আরমানের হয়ত কোথাও ফ্রাকচার হয়েছে বা কোন সমস্যা হয়েছে তাই কাছের হাসপাতালে নিয়ে গেল ওকে। আরমানের সাথে আরমানের বাবা আর আরও আদিবের আরও দুজন কাজিন গেছে। কিছুক্ষণ পর আরমানের মাও পার্স নিয়ে ছুটলেন। তাই পেছন পেছন আদিবও গেছে। আরমানকে নিয়ে যাওয়ার পর সবাই কিছুক্ষণ আপসোস করে কাজে লেগে পরল। কাল বিয়ে তাই এখন বসে থাকলে চলবে না। পরে না হয় আবার খবর নিয়ে নেবে। অনিমা ভাবছে এতো কিছু হয়ে গেল অথচ আদ্রিয়ান কেন এলোনা? নিচে সবাই মিলে বসে তরকারি, মসলা, পেয়াজ সব কাটছে রান্না জন্যে। অনিমা, জাবিন, রাইমা ওরা সবাই সোফায় বসে আছে। অনিমা দাঁত দিয়ে নখ কাটছে আর আশেপাশে তাকিয়ে আদ্রিয়ানকে খুঁজছে। রাইমা বলল,

” ইশ! কী হয়ে গেল না? আমার দুদিন ধরেই কেমন মনে হচ্ছিল একটা কিছু হবেই। দেখ? হয়ে গেল!”

জাবিন একটু বিরক্তি নিয়ে বলল,

” দূর তেমন কিছুই তো হলোনা। আমিতো ভেবেছিলাম আরও মারাত্মক কোন অবস্থা হবে। কিন্তু হলো কই?”

অনিমা অবাক হয়ে বলল,

” এটা তোমার কম হচ্ছে?”

” না, তা না কিন্তু হ্যাঁ এক্সপেক্টেশন আরও বেশিই ছিল। ভেবেছিলাম তিন চার মাসের মধ্যে উঠতে পারবেনা। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাবে।”

অনিমা অবাক হতে গিয়েও হলোনা, শুধু একটা হতাশ নিশ্বাস ত্যাগ করল। যেমন ভাই আর তেমন বোনই তো হবে। এতো অবাক হওয়ার কিছু নেই এমন সময় আদ্রিয়ান চোখ ডলতে ডলতে বেড়িয়ে এলো, চারপাশে চোখ বুলিয়ে লম্বা হাই তুলে বলল,

” সব এতো চুপচাপ কেন? কিছু কী হয়েছে?”

আদিবের মা আফসোসের সুরে বললেন,

” আর বলিস না আদ্রি। আরমানটা সকাল সকাল ওয়াসরুম থেকে পরে ভীষণ ব্যাথা পেয়েছে। হাসপাতালেও নিতে হল।”

আদ্রিয়ান অবাক চেহারা করে বলল,

” কী বলছ? আমাকে একবার ডাকবে তো? এখন ভালো আছে তো? মানে বেশি কিছুই হয়নি তো?”

” পায়ে কী যেন হয়েছে বলল। আর হাতের কনুইয়ের হাড়ে ফ্রাকচার হয়ে গেছে।”

” ওহ, সো স্যাড। আমিতো কিছু টেরই পাইনি। অনেক রাত করে ঘুমিয়েছি তো।”

কথাটা বলে আদ্রিয়ান ওখান থেকে সরে এসে সোফায় বসল। অনিমা চোখ ছোট ছোট করে দেখছে আদ্রিয়ানকে। ও খুব ভালো করেই জানে যে আদ্রিয়ান সবটাই জানে। কিন্তু শেয়ানাগিরী করে সবার সামনে ভালো হচ্ছে। আশিস অনেকগুলো চেয়ার একত্র করে দুহাতে ধরে আনছিল। আদ্রিয়ানের কথা শুনে আশিস বলল,

” হ্যাঁ সেই! এতো খাটাখাটনির পর ঘুম তো বেশি আসবেই।”

বলতে বলতে চেয়ার নিয়ে আশিস চলে গেল। তখন নাহিদ আর অভ্র দুজনেই এল। অভ্র আর জাবিনের চোখাচোখি হল কয়েক সেকেন্ডের জন্যে। অভ্র চোখ সরিয়ে বসে পরল। নাহিদ এসে আদ্রিয়ানের বসা সোফাটার হ্যান্ডেলের ওপর বসে আদ্রিয়ানের কাঁধে হাত রেখে বলল,

” তো ভাই এতো পরিশ্রমের পর ঘুম ভালো হয়েছে তো।”

আদ্রিয়ান হেসে ঘাড়ে হাত দিয়ে একটু আড়মোড়া ভেঙ্গে বলল,

” সলিড হয়েছে!”

কথাটা বলে অনিমার দিকে তাকিয়ে দুষ্টু একটা হাসি দিল আদ্রিয়ান। অনিমা ভ্রু কুচকে ফেলল। এই ছেলেটা যে কোন লেভেলের পাগল সেটা আস্তে আস্তে বুঝতে পারছে অনিমা এখন। নাহিদ বলল,

” হ্যাঁ সলিড তো হবেই তাইনা। মনে জ্বালাই বড় জ্বালা। সেটা মিটে গেলেই সব শান্তি।”

জাবিন একটু চিন্তা করে বলল,

” কিন্তু ভাইয়া! আই হ্যাভ এ খুব গভীর প্রশ্ন। তুই ওনাকে ওয়াশরুমে ফেললি কীকরে?”

আদ্রিয়ান একটু হাসল। নাহিদ বলল,

” আমি বলছি, আমি বলছি। ইনি একা করেননি। আমাদের সবাইকে ক্রাইম পার্টনার বানিয়ে ছেড়েছে। বুঝলে না?”

জাবিন মাথা নাড়ল। নাহিদ হেসে বলল,

” আদ্রিয়ান অারমানের ওয়াশরুমের টাইলসে সুন্দর করে সাবান আর ওয়েল মেখে একেবারে পিচ্ছিল করে দিয়ে এসছিল। আমরাও হেল্প করেছি।”

রাইমা বলল,

” কিন্তু তোমরা ঢুকলে কীকরে?

অভ্র বলল,

” আসলে ব্যালকনির দরজা খোলা ছিল। আমি আর আশিস ভাই মই ধরেছি, স্যার আর নাহিদ ভাই ভেতরে গেছিল, আর আদিব ভাই পাহারা দিয়েছিল।”

জাবিন হেসে দিয়ে দিয়ে বলল,

” ওয়াও! কিন্তু, পরে তো কেউ কিছু পায়নি বাথরুমে?”

” পাবে কীকরে? সবাই যখন আরমানকে নিয়ে ব্যস্ত ছিল তখন আমি আর নাহিদ ভাই ক্লিন করে দিয়েছি। এইজন্যই তো ওকে তুলতে শুধুই আদিব আর আরেকটা ছেলেকে নিয়েছিল। ছেলেটাও সব জানত। পা টিপে টিপে গেছিল যাতে ওখানে পা পরলেও স্লিপ না করে।”

” বাহ! তালিয়া, তালিয়া।”

নাহিদ আর অভ্র কলার ঠিক করে একটু ভাব নিল। অনিমা হতাশ দৃষ্টিতে তাকাল এদের দিকে। সত্যিই সবগুলোরই তার ছেড়া। কিন্তু আদ্রিয়ানের ভয়ে আর কিছু বলল না। অভ্র নাহিদের দিকে তাকিয়ে বলল,

” তো নাহিদ ভাই! আপনার কী খবর? মানে আমাদের ভাবী কোথায়? আমাদেরও তো দেখাবেন না-কি?”

আদ্রিয়ান বলল,

” হ্যাঁ একদমই তাই! তনয়ার কথা তো ভুলেই গেছিলাম কবে আসছে দেশে?”

নাহিদ মাথা চুলকে বলল,

” কেন এক্সট্রা প্যারা দিচ্ছিস ভাই? এখন দেখ কত স্বাধীন আছি। মহারানি এলেই আমায় ইন্ডিপেন্ডেন্সির রফাদফা করে দেবে। ওসব ছাড় এটা বল যে ভাবীকে সত্যি সত্যি ভাবী কবে বানাচ্ছিস? আই মিন এখনতো লাইসেন্স ছাড়াই ভাবী ডাকতে হচ্ছে। এবারতো বল লাইসেন্স কবে করছিস?”

আদ্রিয়ান অনিমার দিকে তাকিয়ে একটুখানি হেসে বলল,

” সেটাতো বলেই দিয়েছি। সয়ম্বরা যেদিন বরমালা পরাবে।”

আদ্রিয়ান কথাটা শুনে অনিমা হালকা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেলল। আদ্রিয়ানের কথা শুনে রাইমা, জাবিন, নাহিদ অভ্র একসাথে বলে উঠল,

” ওগো সয়ম্বরা, এবারতো বরমালা পরিয়ে দাও।”

অনিমা আর ওখানে বসে থাকতে পারল না। লজ্জা পেয়ে ওখান থেকে উঠে চলে গেল। ও এমনিতেই এবিষয়ে ভীষণ লাজুক। তারওপর ওরা সবাই বারবার ইচ্ছে করেই ওকে এভাবে অস্বস্তিতে ফেলে।

____________

রঞ্জিত চৌধুরী আর কবির শেখ কেবিনে বসে কাজ করছিলেন তখন ওখানে রিক এলো, আসলে কালকে আদিবের বিয়েতে ও যাবে সেটা বলার জন্যেই এসছে। রিক নক করে বলল,

” ড্যাড আসব?”

রঞ্জিত চৌধুরী না তাকিয়েই বললেন,

” হ্যাঁ এসো!”

রিক ভেতরে এসে বলল,

” ড্যাড আমি..”

রিকের কথা শেষ হওয়ার আগেই রঞ্জিত চৌধুরী মাথা উঠিয়ে বললেন,

” কালকে তোমাকে দক্ষিণ গ্রামের সাইডের গোডাউনটায় যেতে হবে। আর ওখানকার লোকেদের সাথে দেখাও করবে। ইলেকশন সামনে তাই একটু সিনসিয়ার হও।”

” কিন্তু বাবা আমি কাল আদিবের বিয়েতে যাবো ভাবছিলাম।”

” আদ্রিয়ানের বন্ধু আদিব?”

” হ্যাঁ।”

” ও আদ্রিয়ানের বন্ধু! তোমার বন্ধুতো নয়, তাই ওখানে যাওয়ার তেমন কোন প্রয়োজন নেই। কিন্তু গ্রামের ওখানে যেতে হবে।”

” কিন্তু..”

” আমার শর্ত ভুলে গেছ?”

রিক রঞ্জিত চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে একটা ছোট্ট শ্বাস ফেলে বলল,

” আর কিছু?”

” না, এখন যেতে পারো।”

রিক হনহনে পায়ে বেড়িয়ে গেল। কবির শেখ মুখ দিয়ে ‘চাহ’ টাইপ শব্দ করে উঠে গেলেন রিকের পেছন পেছন। এরপর রিককে বোঝালেন যে রঞ্জিত চৌধুরী যেটা বলছে আপাতত সেটা করাই ঠিক হবে। কিছু যুক্তি দিয়েও দেখিয়ে রিককে বোঝাতে সক্ষম হলেন। রিক প্রথমে আদ্রিয়াকে ফোন করে বলল যে ও যাবেনা। আদ্রিয়ান তেমন রিঅ্যাক্ট করে নি। শুধু বলেছে, ‘আসলে ভালো লাগত, বাট ঠিকাছে।’ তবে প্রমিস করিয়ে নিয়েছে যে খুব শীঘ্রই ওর এখানকার বাড়িতে আসতে হবে। রিকও প্রমিস করেছে তাড়াতাড়ি যাবে। এরপর স্নিগ্ধাকে ফোন করে জানিয়েছে ও যাবেনা তাই কোন প্রস্তুতির দরকার নেই। স্নিগ্ধা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলেছে শুধু। ছোটবেলা থেকেই সবসময় সব আনন্দ, উৎসব, খেলাধুলা, বন্ধুবান্ধব থেকে দূরেই রাখত রিকের বাবা ওকে। রিক না শৈশবের অজ্ঞানতার আনন্দ উপভোগ করতে পেরেছে, না কৈশোরের উচ্ছলতা উপভোগ করতে পেরেছে। তাই হয়তো যৌবনে ও এতোটা উগ্র আর বদমেজাজি।

____________

আরমানকে দুপুরের পরে নিয়ে আসা হয়েছে বাড়িতে। বেচারা এখনও হাটতে পারছেনা। হাতে ব্যান্ডেজও আছে। ওর মাথা থেকে আপাতত অনিমার চিন্তা সরে গেছে। সে নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত। ওকে রুমে শুইয়ে দেওয়া হয়েছে। সবাই গিয়েই দেখে এসছে ওকে। অনিমাও গিয়ে একবার দেখে এসছে। আরমানের অবস্থা দেখে একটু মায়া হচ্ছিলো ওর কিন্তু বেশি মায়া দেখাতে যায়নি। তাহলে ছেলেটা যেটুকু সুস্থ আছে পরে তাও আর থাকবে না। সারাদিনের কাজে আদ্রিয়ানও ব্যস্ত তাই অনিমার সাথে তেমন কথা বা দেখা হয়নি।

সন্ধ্যার আগ দিয়ে তীব্র, স্নেহা আর অরুমিতাও এলো। আসলে ওরা কালকে আসতে চেয়েছিল কিন্তু আদিবের জোড়াজুড়িতে আজকেই আসতে হলো। অনিমা ওদেরকে পেয়ে আরও খুশি হয়ে গেছে। যদিও জাবিন রাইমা ওদের সাথেও ও ফ্রি কিন্তু ওদের সাথে অনিমা একটু বেশিই এটাচড। ওরা বসে আড্ডা দিচ্ছে তার মাঝে স্নেহা বলল,

” কতকিছু মিস করলাম ইয়ার। আমিতো দুদিন আগেই আসতে চেয়েছিলাম, কিন্তু এই গবেটটার জন্যে পারিনি।”

তীব্র হালকা ধমকে বলল,

” চুপ কর। তোর কোন কালের আত্মীয়র বাড়ি এটা? একদিন আগে এসছি এটাই অনেক। গাধা মেয়ে একটা।”

” আমি গাধা?”

” গাধাই তো?”

” তাহলে এই গাধার সাথে প্রেম করিস কেন শুনি?”

” ফেঁসে গেছি তাই!”

স্নেহা রেগে বলল,

” আচ্ছা তাই? ফাইন! দেন ব্রেকআপ।”

তীব্রও বিরক্তি নিয়ে বলল,

” হ্যাঁ ব্রেকআপ।”

অনিমা আর অরুমিতা একটুও বিচলিত না হয়ে আরামে চানাচুর চিবোচ্ছে। এতে ওরা এখন অভ্যস্ত। এদের সপ্তাহে চারবার ব্রেকআপ হয়, আটবার প্যাচআপ হয়। এ নতুন কিছুই না।

অনেকে ঝাকঝমকভাবে হলুদের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে আজ। অনিমা সুন্দর করে হলুদ রঙের শাড়ি পরে হালকা করে সেজেছে। কৃত্রিম ফুলের হালকা কিছু গহনা পরে চুল ছেড়ে দিয়ে করিডর দিয়ে দ্রুত যাচ্ছে এমনিতেই লেট হয়ে গেছে তাই। সবাই অনেক আগেই চলে গেছে ওপরে। হঠাৎ করেই কেউ হাত টেনে ওকে রুমে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল। অনিমা তাকিয়ে দেখে আদ্রিয়ান মুচকি হাসছে। হলুদ পাঞ্জাবী পরেছে, লাল ওড়নার মত কিছু একটা গলায় ঝুলিয়ে রাখা আছে, চুলগুলোও কপালে পরেছে খানিকটা, মুখে সেই সুন্দর হাসি। অনিমা রেগে বলল,

” সবসময় এভাবে হুটহাট টেনে নেওয়া আর দরজা বন্ধ করা কী আপনার জন্মগত দোষ?”

আদ্রিয়ান অনিমাকে টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে বলল,

” উমহুম, প্রেমগত দোষ!”

” ছাড়ুন দেরী হচ্ছে।”

” হোক দেরী। আমি বেশি ইম্পর্টেন্ট নাকি হলুদের প্রোগ্রাম?”

অনিমা মুখ বাঁকিয়ে বলল,

” হলুদের প্রোগ্রাম।”

আদ্রিয়ান ওকে আরেকটু কাছে টেনে বলল,

” তাই না?”

” তাইতো! আপনিতো একটা পাগল। আরমানের সাথে এটা না করলেও হত।”

আদ্রিয়ান এবার একটু চেপে ধরে রাগীভাবে বলল,

” কেন মায়া হচ্ছে ওর জন্যে?”

অনিমা কিছু বলল না। যদি বলে ‘হ্যাঁ’ তাহলে আর রক্ষা থাকবেনা।

” ও তোমাকে পছন্দ করেছে সেটা বিগ ডিল না। করতেই পারে। বাট তোমার গায়ে হাত দেওয়া, পেন্ডেন্ট পরিয়ে দেওয়া ওর উচিৎ হয়নি। ইউ নো আই কান্ট টলারেট। তাই ওর শাস্তিটা অর্ধেক আমি দিয়েছি অর্ধেক ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিয়েছে। আমি শুধু পরে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছি। অল্প ব্যাথাও পেতে পারত, কিন্তু এতো বাজেভাবে পরেছে সেটা ওর কপালের দোষ। আমি কী করতে পারি?”

অনিমা শুধু বোকার মত তাকিয়ে রইল আদ্রিয়ানের দিকে। কত সহজে নিজের সব দোষ ভাগ্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দিল। বাহ! ভাগ্যও হয়ত আদ্রিয়ানকে মনে মনে বকছে অনিমার মত।

” আচ্ছা যদি এরপর আবার আমার পেছনে পরে তো?”

” পরবে না, শিওর থাকো।”

” কেন?”

আদ্রিয়ান ফিসফিসে আওয়াজে বলল,

” সিকরেট!”

অনিমা মুখ গোমড়া করে নিল। এতো সিকরেট কেন এই ছেলের মধ্যে? পরে কিছু একটা ভেবে একটু কৌতুহলী হয়ে বলল,

” আরমানের মায়ের মাথা থেকে বিয়ের ভুত কীকরে নামল? মানে কী করেছেন আপনি?”

” ওটাও সিকরেট।”

অনিমা করুণ স্বরে বলল,

” বলুন না।”

আদ্রিয়ান আড়াআড়ি স্টাইলে ভ্রু বাঁকিয়ে বলল,

” বলতেই হবে?”

অনিমা হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ল। আদ্রিয়ান অনিমার দিকে একটু ঝুকে বলল,

” বলেছি যে তুমি এক বিশাল বড় মাফিয়ার হবু বউ। লোকটা ভীষণ ভয়ংকর, কিন্তু সে তোমাকে পাগলের মত ভালোবাসে। আর তোমার দিকে যে চোখ তুলে তাকায় তাকে সোজা ওপরে পাঠিয়ে দেয়। একবার একজনের চোখও তুলে নিয়েছে। শুধু তাই না কোন ছেলের মাও যদি এমন চিন্তা করে তাকেও… বুঝতেই পারছ। তার নজর সবসময় তোমার ওপর থাকে। সো আরমানের লাইফ ইজ ইন রিস্ক। ব্যাস! এটুকু শুনেই মহিলার হাওয়া ফুস…লাইক বালুন ইউ নো।”

অনিমা হেসে দিয়ে বলল,

” আপনি সত্যিই একটা পাগল!”

” হতে পারি।”

” হয়েছে এবার ছাড়ুন।”

অনিমা ছাড়াতে নিলেই আদ্রিয়ান অনিমাকে একদম নিজের কাছে এনে গালে আলতো করে হলুদ লাগিয়ে দিল। অনিমা আদ্রিয়ানের আলতো স্পর্শে আগেই চোখ বন্ধ করে নিয়েছে। আদ্রিয়ান অনিমার কপালে কপাল লাগিয়ে ফলল,

” ওপরে সবাই সবাইকে হলুদ লাগাবে। কিন্তু তোমার ওপর প্রথম অধিকার আমার। আমার অধিকার আমি বুঝে নিতে জানি মায়াবিনী, তাই প্রথম হলুদ আমিই তোমাকে ছোঁয়ালাম।”

#চলবে…

#বর্ষণের সেই রাতে- ২
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

৩১.

আজকে আদিব আর রাইমার বিয়ে। সকাল থেকে বাড়িতে সবার মাঝেই চরম ব্যস্ততা। তবে ঔষধ আর গতরাতের ধকলের জন্যে অনিমার ঘুমটা একটু দেরীতেই ভাঙল। রাতে পরে থাকা হলুদ শাড়িটা না পাল্টেই লম্বা হাই তুলতে তুলতে গার্ডেন এরিয়াতে গিয়ে দেখল রাইমাকে গোসল করানো হচ্ছে। গোসল বলতে ঐ একটু তেল, হলুদ ছুঁইয়ে জল ঢেলে দেওয়া। অনিমাও ওদের সাথে যোগ দিল। রাইমাকে ওরা বারবার বিভিন্ন কথা বলে লজ্জায় ফেলছে। আর বেচারি সত্যিই লজ্জা পেয়ে একদম গুটিয়ে যাচ্ছে। ওখানকার কাজ সেড়ে রাইমাকে গোসলে পাঠিয়ে অনিমা, জাবিন, অরুমিতা, স্নেহা ওরা ওপর পাশে এসে দেখে আদিবকে সবাই জোর করে ধরে রেখেছে। ওরা ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারল না। সবাই মিলে বেচারার সাথে এরকম জবরদস্তি করার মানে কী? তাই আরেকটু এগিয়ে যেতেই ব্যাপারটা বোধগম্য হলো ওর কাছে। সবাই আদিবকে তৈলাক্ত হলুদ মাখিয়ে গোসল করাবে কিন্তু আদিব সেটা করবেই না। আদ্রিয়ান, আশিস, নাহিদ, তীব্র সবাই ওকে জোর করে ধরে রেখেছে। একপ্রকার জোর করে আদিবকে হলুদ মাখানো হলো। অভ্র খুব দায়িত্ব নিয়ে সবগুলো মুহূর্তকেই ক্যামেরা বন্দি করে নিচ্ছে। অনিমারা সবাই খিলখিল করে হাসছে এই দৃশ্য দেখে। আদ্রিয়ানের চোখ হঠাৎ অনিমার ওপর পরতেই আদ্রিয়ান থমকে গেল। হালকা অগোছালো শাড়ি, খোলা চুল, মুখে ঘুমঘুম ভাব। আদ্রিয়ানকে ঘায়েল করার জন্যে এটুকুই যথেষ্ট। অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে তাকাতেই আদ্রিয়ান বুকে হাত দিয়ে কিছু একটা বোঝালো। অনিমা হালকা লজ্জা পেয়ে চোখ সরিয়ে নিল। এমনিতেই এই লোকটা সবসময় ওকে লজ্জায় ফেলতে প্রস্তুত। কালকেও হলুদের ব্যাপারটা নিয়ে অস্বস্তিতে পরেছে ও। ও ওপরে যেতেই সবাই মিলে যেকে ধরছে যে গালে হলুদ কীকরে এলো। অনিমা কী বলবে বুঝতে পারছিলনা। আদ্রিয়ানের কড়া নির্দেশ ছিল যে হলুদ মোছা যাবেনা। তাইতো এভাবেই সবার সামনে আসতে হল। সবাইকে কোনরকমে বুঝিয়ে দিলেও ওরা যারা আদ্রিয়ানের ব্যাপারটা জানে সবাই আন্দাজ করতে পেরেছিল। বেচারীকে এই নিয়ে ভীষণ জ্বালিয়েছেও। অনিমার চোখ অরুমিতার দিকে পরতেই ও খেয়াল করল যে অরুমিতা একবার আশিসের দিকে তাকিয়েছে কিন্তু পরে আর তাকায়নি। অথচ আশিস একটু পরপরই অরুমিতার দিকে কেমন একটা শুকনো মুখ করে তাকাচ্ছে। ব্যাপারটা খটকা লাগলেও পরে অনিমা তেমন গুরুত্ব দিলোনা। তবে বলা বাহুল্য তীব্র আর স্নেহার তথাকথিত ব্রেকাপ এখন ও চলছে। অভ্র ছবি তুলতে তুলতে এগোচ্ছে হঠাৎ জাবিনের সাথে ধাক্কা লাগে। অভ্র বিরক্ত হলেও কিছু বলল না। ভাবছে না জানি এই মেয়ে আবার কী চেঁচামেচি শুরু করে দেয়। অভ্রর ধারণাকে সত্যি করে জাবিন রেগে বলল,

” বারবার আপনার ধাক্কাটা আমার সাথেই লাগে কেন শুনি? পছন্দ-টছন্দ হয়ে গেছে না-কি? চান্স মারছেন?যত যাই করুণ আমি এত সহজে পটছি না ওকে?”

” ইন ইউর ড্রীম।”

কথাটা বলে অভ্র কেটে পরল। মাঝেমাঝে ইচ্ছে করে এই মেয়েকে ঠাটিয়ে একটা চড় মারতে। স্যারের বোন বলে ছেড়ে দেয়। ওদিকে জাবিন বোকার মত তাকিয়ে রইল। এভাবে অপমান? সেদিন শুধুশুধুই এর প্রশংসা করছিল। প্রশংসার যোগ্য নয় এ। লোকটা একটা আস্ত বজ্জাত।

কিছুক্ষণ পরেই সবাইকে হলুদ দিয়ে মাখিয়ে দেওয়ার খেলা শুরু হল। যে যাকে পারছে একপ্রকার হলুদ স্নান করিয়ে দিচ্ছে। অনিমাদের দিকে কেউ এখনও আসেনি তবে আসছে। হঠাৎ করেই অনিমা নিজের কোমরে স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠল। কোমরের উন্মুক্ত অংশটায় তাকিয়ে দেখে হলুদের ছড়াছড়ি। ও দ্রুত পাশে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই। হঠাৎ পেছন থেকে কানের কাছে কেউ ফিসফিসিয়ে বলল,

‘বলেছিলাম না প্রথম অধিকার আমার।’

অনিমা চোখ বন্ধ করে ফেলল। একটুপর চোখ খুলে সামনে তাকাতেই দেখল আদ্রিয়ান যাচ্ছে। পেছন ফিরে তাকিয়ে বাঁকা হেসে একটা চোখ টিপ মারল ও। অনিমা চোখ নামিয়ে হেসে দিল। লোকটা সত্যিই আস্ত এক পাগল। ততক্ষণে জাবিন ওরাও যোগ দিল এতে। সবাই বেশ মজা করে খেলছে। তবে অনিমা খেয়াল করল যে আদ্রিয়ানকে কেউ হলুদ লাগাতে পারছেনা। ও এদিক ওদিক পালাচ্ছে শুধু। অনিমা ভাবল একে তো এভাবে বেঁচে যেতে দেওয়া যায় না, কিছুতেই না। কিছু একটা করতেই হবে। অনিমা জাবিন, অরু আর স্নেহাকে ডেকে কানে কানে কিছু একটা বলল। ওরা এবার আদ্রিয়ানের পেছনে পরেছে। কিন্তু আদ্রিয়ানকে ধরে ফেলা তো এতো সহজ নয়। আদ্রিয়ান পালিয়ে একটু দূরে গিয়ে গাছের সাথে হেলান দিয়ে হালকা জোরে শ্বাস নিচ্ছে ফোনটা বেড় করতে যাবে এমন সময় কেউ ওর দু গাল ভর্তি করে হলুদ লাগিয়ে দিল। আদ্রিয়ান হকচকিয়ে তাকিয়ে দেখল অনিমা খিলখিলিয়ে হাসছে। যে হাসি আদ্রিয়ানকে বারবার মারে। আদ্রিয়ান চোখ ছোট করে বলল,

” জানপাখি, এটা কী ঠিক হল?”

অনিমা হাসতে হাসতে বলল,

” একদম ঠিক হয়েছে! এই নিয়ে দু-দুবার আমার গায়ে হলুদ মাখিয়েছেন। আমি অতি সুন্দরভাবে তার শোধ তুললাম।”

বলে দৌড়ে পালাতে নিলেই আদ্রিয়ান ওর হাত ধরে একটানে নিজের কাছে নিয়ে এসে গাছের সাথে চেপে ধরে বলল,

” কোথায় যাচ্ছো বেবি? আমার সবকিছুরই অর্ধেক ভাগ তোমার। নিজের ভাগটুকু না নিয়ে চলে গেলে হবে?”

অনিমা কিছু বলার আগেই আদ্রিয়ান নিজের গাল অনিমার গালের সাথে জোরেই ঘষে দিল। আদ্রিয়ানের হালকা খোঁচা দাঁড়িতে ব্যাথা পেয়ে অনিমা ‘আহ’ করে উঠল। আদ্রিয়ান পিঞ্চ করে বলল,

” লাগল বুঝি?”

অনিমা একগাদা বিরক্তি নিয়ে বলল,

” রকস্টার সাহেব? আপনি জানেন আপনি খুব খারাপ একটা লোক?”

” হ্যাঁ জানিতো ভীষণ খারাপ। কিন্তু এই খারাপ মানুষটাও কারো মায়ায় জরিয়ে গেছে। কোন এক মায়ারাজ্যের মায়াবিনী রাজকন্যা তাকে বশ করে নিয়েছে।”

অনিমা সাথে সাথেই চোখ নামিয়ে নিল। অাদ্রিয়ান ওর আরেকটু কাছে গিয়ে বলল,

” এইযে সে সকালে এরকম এলোমেলো ভাবে বেড়িয়ে চলে আসে। তুমি কী জানো তার এমন হুটহাট ঘায়েলকারী রূপ আমাকে মেরে ফেলে? একদম মেরে ফেলে।”

অনিমা আবার চোখ তুলে তাকাল আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান ভ্রু নাচাতেই ও মুচকি হেসে আবারও চোখ নামিয়ে নিয়ে আদ্রিয়ানকে ছাড়িয়ে চলে গেল। এই লোকটার সামনে আর থাকা যাবেনা। এর একেকটা বাক্য ভীষণই ভয়ংকর, ওর সর্বস্ব কাঁপিয়ে রেখে দেয়।

__________

আদিব আর রাইমার বিয়ে ভালোয় ভালোয় হয়ে গেছে। সারাদিন অনেক হৈ হুল্লোড় করেই কেটেছে সবার। রাতে সবাই ফ্রি হয়ে যে যার যার মত শুতে চলে গেছে। সবাই আজ সত্যিই খুব ক্লান্ত তাই। অরুমিতা জল খেয়ে রুমে শুতে যাচ্ছিল হঠাৎ পেছন থেকে কেউ একজন ডেকে উঠল। অরুমিতা তাকিয়ে দেখে আশিস দাঁড়িয়ে আছে। অরুমিতা চলে যেতে নিলেই আশিস দ্রুত এগিয়ে গিয়ে বলে,

” অরু প্লিজ আমার কথাটা শোন।”

অরুমিতা পেছনে ঘুরে তাকিয়ে বলল,

” প্রথমত অরুমিতা হবে। আর দ্বিতীয়ত কথা বলার মত কোন সম্পর্ক হয়তো আমাদের মধ্যে নেই। তাইনা?”

” কোনদিনও ছিলোনা?”

” ছিল তো। আপনার জন্যে টাইমপাস আর আমার জন্যে ভুল। যাই হোক অতীত ঘাটবোনা আমি। আসছি।”

অরুমিতা যেতে নিলেই আশিস বলল,

” আ’ম সরি। আমি জানি আমি…”

” আমি আগেও বলেছি যে আমি অতীতকে ভুলে গেছি। তাই এসব নিয়ে মাথা না ঘামানোটাই ভালো হবে। ভালো আছি আমি। তাই দয়া করে আমাকে বিরক্ত করতে আসবেন না।”

আশিসকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই অরুমিতা ওর রুমে চলে গেল। স্নেহা ঘুমিয়ে পরেছে। অরুমিতা ফোনে আশিসের পাঠানো আনসিন মেসেজটা দেখল। স্ক্রিনে তাকিয়ে ভাবলো সেদিনের কথা যেদিন এই আপরিচিত আশিসের সাথেই চ্যাটিং এ প্রথম কথা হয়েছিল:

কলেজ থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে ফোন চেক করতে গিয়ে আবার সেই আইডি থেকে মেসেজ দেখে অবাক হয়েছিল ও। যেখানে লেখা ছিল, ‘আমি তোমার ফ্রেন্ডের বিএফ এর কাজিন হই। তোমার সাথে জরুরি কথা ছিল।’ তখন ওর মনে একটু কৌতূহল জেগেছিল। লোকটা কী বলবে? এরপরেই অরুমিতা রিপ্লে করেছিল। ফরমালি কিছু কথাবার্তাও বলেছে। পরে জানতে পেরেছিল যে সত্যিই ওর রুমমেটের বিএফ এর কাজিন হয়। পরে চ্যাটিং এর মাধ্যমেই টুকিটাকি কথা হওয়া শুরু হয় ওদের মধ্যে। যা ধীরে ধীরে বাড়তে সাথে। এরপর দুজনের মধ্যেই বেশ ভালো বন্ডিংও হয়ে যায়। হঠাৎ একদিন আশিস অরুমিতাকে প্রপোজ করে বসে। অরুমিতা অবাক হয়েছিল। আশিসকে যে ওর পছন্দ না সেরকম কিছুই না কিন্তু হঠাৎ এভাবে প্রপোজ করাতে কী বলবে বুঝে উঠতে পারছিল না।

স্নেহার ডাকে ভাবনা থেকে বেড়িয়ে আসে অরুমিতা। স্নেহা ভাঙা কন্ঠে বলে,

” কীরে? বসে আছিস কেন? ঘুমাবিনা?”

অরুমিতা মাথা নেড়ে চুপচাপ শুয়ে পরল। অতীতের কথা ও আর ভাববে না। যা হওয়ার সেটা হয়ে গেছে। ও ওর বর্তমানে বাঁচবে। পেছনে ফিরে আর তাকাবেনা।

___________

বিয়ের সমস্ত অনুষ্ঠান শেষ। আজ অনিমারা সবাই ফিরে যাবে এখন। বিকেলে আদিব আর রাইমা চট্টগ্রাম যাবে ওদের দেশের রাইমাদের বাড়ি। নাহিদ আদ্রিয়ানদের সাথে ওদের বাড়িতে যাবে। ওখানেই আপাতত থাকবে ও। সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেড়োতে যাবে তখনই আদিবের দাদি অনিমা আর আদ্রিয়ানকে ডেকে পাঠাল। ওরা দুজনেই বেশ অবাক হল। হঠাৎ ওদের আবার কেন? ভেতরে গিয়ে দেখে আদিবের মাও বসে আছে। ওরা গিয়ে দাঁড়াতেই আদিবের দাদি বলল,

” তোমরা যে মামাতো ফুপাতো ভাই বোন নও সেটা আমি দুদিন দেখেই বুঝে গেছি।”

আদিবের মাও বলল,

” হ্যাঁ সেই। তোমাদের আচরণ, অনিমার ভাইয়া বলতে এতো সংকোচ। সব দেখে এমনিতেই বুঝে গেছিলাম। যাই হোক বিয়ে কবে করছ?”

আদ্রিয়ান মাথা চুলকে একটু হেসে বলল,

” আসলে…”

আদিবের দাদি বলল,

” এসব আসলে নকলে ছাড়ো। তাড়াতাড়ি বিয়ে টিয়ে করে ফেল। আমরা তোমাকে চিনি তাই কিছু মনে করিনি। জানি তুমি কেমন তাই। কিন্তু লোকেতো বুঝবে না। কেচ্ছা রটাতে সময় লাগেনা। ”

তারপর অনিমাকে উদ্দেশ্যে করে বলল,

” আর এইযে মেয়ে আমার এই ডানপিটে লাগামছাড়া নাতিটাকে তাড়াতাড়ি আঁচলে বেঁধে ফেলো তো। পরেরবছর বড় মা বলে ডাকার মত কেউ জেনো চলে আসে হ্যাঁ?”

দাদির কথা শুনে আদ্রিয়ানের কাশি শুরু হয়ে গেল। অনিমা অবাক হয়ে তাকাল। কথাটার মানে বুঝতে কিছুক্ষণ লাগল ওর। মানেটা বোঝার সাথে সাথে মারাত্মক লজ্জা পেল অনিমা। দ্রুত ওখান থেকে বেড়িয়ে চলে এল। সবাই কী পেয়েছে কী? ছুড়ি থেকে বুড়ি সবাই কী ওকে লজ্জা দেওয়ার দায়িত্ব নিয়ে বসে আছে না-কি? আদ্রিয়ানের সামনে দাদি কী বলল এটা? এখন আদ্রিয়ানের সামনে কীকরে দাঁড়াবে ও? কী লজ্জা!

____________

দুপুরে বাড়ি ফিরে খাওয়াদাওয়া করে আদ্রিয়ান, অনিমা, জাবিন, অভ্র নাহিদ যে যার যার রুমে দীর্ঘসময়ের লম্বা ঘুম দিয়েছে। সবাই ক্লান্ত ছিল তাই।সন্ধ্যাবেলা ড্রয়িং রুমে সবাই মিলে চা আর পাকোড়া খেতে খেতে গল্প করছে। সবটা অনিমাই বানিয়েছে। নাহিদ পাকোড়া খেতে খেতে বলল,

” ভাবী! জাদু আছে তোমার হাতে। কী টেষ্ট! মানতে হবে এডি তোর কপাল ভালো। আমার ম্যাডাম তো রান্নায র ও জানেনা। বিয়ের পর কী হবে কে জানে?

আদ্রিয়ান হেসে বলল,

” তোর রান্নার হাত তো ভালো। তুমি খাওয়াবি! সবসময় বউরাই কেন রাঁধবে?”

” হ্যাঁ কপালে আমার সেটাই আছে!”

ওরা এসব নিয়ে হাসিহাসি করছে। তখন পাশ দিয়ে একজন সার্ভেন্ট স্টোর রুম পরিষ্কার করে ঝুড়িতে আবর্জনা নিয়ে যাচ্ছিল তখন ঝুড়ি থেকে একটা কাগজ পরে গেল। অনিমা কাগজটা তুলে ডাকতে যাবে তার আগেই কাগজে লেখাটা দেখে ওর চোখ আটকে গেল। মাথা প্রচন্ড জোরে ব্যাথা করে উঠল, কিছু আর্তনাদ, মাটিতে ভেসে যাওয়া রক্ত, একটা মেয়ের করুণ আকুতিমিনতি, হৃদয় গ্রাসী চিৎকার সব কানে বাজছে, চোখে আবছা ভেসে উঠছে। আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলনা সব অন্ধকার হয়ে গেল ওর। জ্ঞান হারিয়ে পরে যেতে নিলেই আদ্রিয়ান ধরে ফেলল ওকে। ওরাও দাঁড়িয়ে গেল। অভ্র জাবিন অনিমাকে নিয়ে ব্যস্ত। নাহিদ দ্রুত সেই কাগজটা নিয়ে দেখল ওটা প্রায় দেড় বছর পুরোনো একটা পেপার কাট, তাও ছেড়া। হেডলাইনের অংশে একটা নাম বোঝা যাচ্ছে ‘আর্জু শারমা’। নাহিদ একটু অবাক হল। নামটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে মেয়েটা বাঙালি নয়, সম্ভবত ভারতীয়। কিন্তু একটা অবাঙালি মেয়ের নাম পড়ে অনিমা এমন করল কেন? ও বুঝতে পারছে নামটার সাথে অনিমা স্মৃতি জড়িয়ে আছে কোনভাবে। আদ্রিয়ানের এসবে খেয়াল নেই। ও অনিমাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে আছে। অনিমাকে ধরে নিয়ে সোফায় বসতেই নাহিদ পেপারটা আদ্রিয়ানের দিকে এগিয়ে দিল। আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে পেপারের অংশটুকু পড়ল, কিন্তু কিছু বলল না। অনিমাকে কোলে তুলে নিয়ে নাহিদকে কিছু একট ইশারা করে রুমের উদ্দেশ্যে হাটা দিল।

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে