বর্ষণের সেই রাতে- ২ পর্ব-২৬+২৭

0
1716

#বর্ষণের সেই রাতে- ২
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

২৬.

আদ্রিয়ানের বাড়ির পৌছাতে পৌছতে রাত হয়ে গেল। ড্রয়িং রুমে এসেই অনির পা থেমে গেল। অনিমাকে থামতে দেখে অভ্র থেমে গেল। অনিমা অভ্রর দিকে তাকি ঠোঁট কামড়ে কিছ একটা ভেবে বলল,

” এদিকে শুনুন!”

অভ্রও এগিয়ে এসে অনিমার মত ফিসফিস করে বলল,

” বলুন ম্যাম।”

” আপনার স্যার কী জানেন যে আমি কেন রেগে ছিলাম বা চলে গেছিলাম।”

অভ্র মাথা নাড়িয়ে বলল,

” উমহুম! স্যার জানেনা। ইভেন আমাকেও জানতে বলেছে। কিন্তু আমি নিজেও এখনও ক্লিয়ার না। আপনি রাগ কেন করেছিলেন? মূল কারণ কী ছিল?”

অনিমা একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বলল,

” জানতে হবেনা। আর হ্যাঁ খবরদার আপনার স্যারকে এইসব স্মৃতি আপুর ব্যাপারের কথাগুলো কিচ্ছু বলবেন না। মনে থাকবে?”

” হুঁ মনে থাকবে।”

বলে এগুতে নিলেই দেখল যে জাবিন ট্রেতে কিছু একটা নিয়ে ওপরের দিকে যাচ্ছে। অনিমাকে দেখে থেমে গেল জাবিন। ট্রে টা রেখে দৌড়ে এসে অনিমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,

” তুমি এখান থেকে চলে কেন গেছিলে অনিপু? জানো ভাইয়া কাল থেকে কত জ্বর? একন যদিও একটুখানি কমেছে। মাঝেমাঝেই তোমার নাম করে যাচ্ছে। এভাবে চলে যায় কেউ।”

অনিমা জাবিনকে ছাড়িয়ে এক কান ধরে কিউট করে বলল,

” সরি। ভুল হয়ে গেছে। আর কক্ষণো যাবোনা।”

” প্রমিস?”

” পাক্কা প্রমিস।”

” ভাইয়ার জন্যে রাতের খাবার নিয়ে যাচ্ছিলাম। চলো। তুমিই খাইয়ে দিও।”

অনিমার কেমন যেন গিল্টি ফিলিং হচ্ছে আদ্রিয়ানের কাছে যেতে। তাই বলল,

” তোমার ভাইয়া কী জেগে আছেন?”

জাবিন মুখ ছোট করে বলল,

” না, এখনতো তাকাতেও পারছেনা ঠিক করে।”

” আচ্ছা চল।”

এরপর তিনজনই আদ্রিয়ানের রুমে গেল। আদ্রিয়ান আসলে চোখ খুলতে পারছেনা ক্লান্তিতে, জ্বরের ঘোরে হুসও নেই ওর। অনিমা আদ্রিয়ানের পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। আদ্রিয়ান কেঁপে উঠল, যেন ওর স্নায়ু অনিমার উপস্থিতি বুঝতে পারছে। আদ্রিয়ানের রুমে কিছুক্ষণ থেকে অভ্র আর জাবিন বেড়িয়ে এলো অনিমাকে রেখে। বেড়োনোর সময় জাবিন অভ্রকে ডাকতেই অভ্র ভ্রু কুচকে পেছনে তাকিয়ে বলল,

” কিছু বলবে?”

আসলে অভ্র এখন জাবিনকে এখন তুমি করে বলে। সেদিন কথার ছলে আপনি করে বলছিল বলে জাবিন মুখ ফুলিয়ে বলেছিল, ‘দেখুন আপনি কিন্তু আমার অনেক বড়। তাই এসব আপনি টাপনি বলবেন না প্লিজ। নিজেকে আশি বছরের বুড়ি মনে হয়।’ জাবিনের কথায় সেদিন হেসেছিল। ঐদিনি প্রথম জাবিনের কোন আচরণ মনে ধরেছিল ওর। গাল ফোলালে মেয়েটাকে বড্ড কিউট লাগে। জাবিন এগিয়ে এসে বলল,

” থ্যাংকস।”

অভ্র ভ্রু কুচকে রেখেও হেসে বলল,

” কেন?”

” ভাবীকে ফিরিয়ে আনার জন্যে।”

” স্যার বায়োলজিক্যালি আপনার ভাই হতে পারে। কিন্তু রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও আমার কাছে ভাইয়ের চেয়ে কোন অংশে কম না।”

বলে একটু হেসে অভ্র চলে গেল। জাবিন অভ্রর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল। নাহ, যতটা মুডি ভেবেছিল ততোটা না।

অনিমা আদ্রিয়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর কাঁদছে। চোখ ভিজে উঠেছে ওর। আদ্রিয়ানের মাথায় বারবার জ্বরপট্টি দিয়ে দিচ্ছে। জ্বরটা হঠাৎ আবার বেড়ে গেছে। আদ্রিয়ানকে খাইয়ে, ঔষধ খাইয়ে অনিমা আর রুম থেকে বেড় হয়নি। জাবিন এসে পোশাক দিয়ে গেছে ও আদ্রিয়ানেল ওয়াসরুমেই চেঞ্জ করেছে। আদ্রিয়ান বেঘোরে ঘুমোচ্ছে। আদ্রিয়ানের এরকম অবস্থা মেনে নিতে পারছেনা অনিমা। নিজেকে দায়ী মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে সবটা ওর জন্যেই হয়েছে। সবটাই। জাবিন অভ্র মাঝেমাঝে এসে দেখে গেছে। ওরা থাকতে চেয়েছিল অনিমাই জোর করে ঘুমোতে পাঠিয়ে দিয়েছে। ও বারবার জ্বরপট্টি দিচ্ছে, হাত পা ঘষে দিচ্ছে আর আল্লাহর নাম নিচ্ছে শুধু। আদ্রিয়ান সত্যিই মাঝেমাঝে বিড়বিড় করে অনিমার নাম নিয়েছে। রাত আড়াইটায় আদ্রিয়ানের জ্বর সম্পূর্ণ ছেড়ে গেল। ঘাম বেড়ায়েছে প্রচুর। অনিমা সুন্দর করে ঘাম মুছে নিয়ে ফ্লোরে বসে আদ্রিয়ানের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে খাটের ওপর মাথা রেখেই ঘুমিয়ে পরেছে।

_____________

ফার্মহাউজে রুমের ফ্লোরের এক কোণে পরে ড্রিংক করে যাচ্ছে রিক। প্রচন্ড নেশা হয়ে গেছে তবুও করছে। নিজের ইচ্ছেতে কিছুই করতে পারছেনা ও। কেন? এতো কষ্ট করে ডক্টর হয়েও জয়েন করতে পারছেনা ওর বাবার জন্যে। যেই মেয়েটাকে সবটা দিয়ে ভালোবাসতো সেই ওকে ঠকিয়ে চলে গেল। আচ্ছা এটাকে ঠকানো বলে? মেয়েটাতো কখনও বলেনি ভালোবাসে ওকে। তাতে কী? তবুও এটাকে ঠকানোই বলে। মামাতো বলেছে এটাকে ঠকানো বলে। ও তো জানতো রিক ওকে ভালোবাসে। তাহলে কীকরে পারল অন্যকারো হাত ধরে পালিয়ে যেতে। এতোটাই স্বার্থপর ঐ মেয়েটা? অকৃজ্ঞ! নেশাক্ত অবস্থাতেই গ্যালারিতে ছবি ঘাটতে ঘাটতে ওর আর অনিমা একটা ছবি পেল। দুজনেই একটা বেঞ্চে বসে আইসক্রিম খাচ্ছে। অনিমা আইসক্রিম খাচ্ছে আর রিক ওর ওড়নার কোণ হাতে নিয়ে কিছু একটা করছে। আসলে অনিমাকে ভার্সিটি থেকে নিয়ে আসার পথে অনিমা রিকের কাছে বায়না করে আইসক্রিম খাবে। রিক কখনও অনিমার কথা ফেলেনা তাই ওকে নিয়ে আইসক্রিম খেতে যায়। আইসক্রিম খেতে খেতে একটা বেঞ্চে গিয়ে বসেছিল দুজনেই। দুজনেই খেতে খেতে গল্প করছিল। রিক কথা বলছিল কম আর অনিমাকেই দেখছিল বেশি। কিন্তু হঠাৎ করে অনিমার আইসক্রিম থেকে কিছু অংশ পরে যায়। রিক তাই ওড়নার ঐ অংশটা তুলে পরিস্কার করে দিচ্ছিল। যদিও অনিমার সেদিকে মোটেও খেয়াল ছিলোনা। খেয়াল করলে অবশ্যই অপ্রস্তুত হয়ে যেত। কারণ রিকের সাথে ওর মোটামুটি ভালো বন্ধুত্বের বন্ডিং থাকলেও যথেষ্ট ডিসটেন্স মেইনটেন করে চলত। সেটাই রিকের বেশি ভালো লাগত। আর ছবিটা ওদের ড্রাইভার না বলেই তুলেছে। পরে রিককে দেখিয়েছে। ছবিটা দেখে রিক এতোই খুশি হয়েছিল যে ড্রাইভারকে পাঁচ হাজার টাকা ধরিয়ে দিয়েছিল তখনই। ছবিটা দেখতে দেখতে অজান্তেই হেসে ফেলেল রিক। কত মিষ্টি একটা সম্পর্ক ছিল ওদের। দুপক্ষ থেকে ভালোবাসা না থাক বন্ধুত্ব তো ছিল। কিন্তু হঠাৎ কী কারণে এই সম্পর্কটা নষ্ট হয়ে গেল সেটা আজও রহস্য ওর কাছে। আর যখন ওর মনে পরল ওর নীলপরী ওর কাছে নেই এমনিতেই চোখ ভিজে আসতে চাইল। বোতলে একটা লম্বা চুমুক দিয়ে বলল,

” কেন করলে এরকম? এভাবে চলে গেলে কেন? একবারও আমার কথা ভাবোনি। ইউ বিট্রেট মি। ইয়েস ইউ বিট্রেট ভি। তোমাকে ছেড়ে দেবনা আমি। ইউ আর ওনলি মাইন। ওনলি মাইন।”

এসব বিড়বিড় করতে করতেই ফ্লোরেই ঘুমের মধ্যে তলিয়ে গেল রিক।

_____________

অনিমা লম্বা এক শাওয়ার নিয়ে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছছে। নিজেই নিজেকে আয়নায় দেখে ব্লাস করছে আর মুচকি হাসছে। সকালে ঘুমন্ত অবস্থাতেই আদ্রিয়ানকে রেখে রুমে এসছিল। পরে যখন খেয়াল করল যে আদ্রিয়ান জেগে গেছে তখন নিজের হাতে কফি করে নিয়ে গেছে আদ্রিয়ানের জন্যে। কতদিন পর আবার কফি বানালো আদ্রিয়ানের জন্যে।তবে আদ্রিয়ানের সামনে যায়নি। আদ্রিয়ানের ওয়াশরুমে যাওয়ার সুযোগ নিয়ে কাপটা রেখে এসছে সাথে একটা চিরকুট। যেটাতে লেখা ছিল, “রকস্টার সাহেব! আমার ওপর রাগ করে কফি ফেলে দিলে কিন্তু আমি ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে দেব। মারাত্মক কান্না। পরে সেই কান্নার দায় কিন্তু আপনাকে নিতে হবে। তাই ভদ্র ছেলের মত কফিটা খেয়ে নেবেন। পরে না হয় মগটা ভেঙ্গে আমার ওপর রাগ মেটাবেন।” আসলে চড়টা মারার পর থেকেই কেমন একটা গিল্টি ফিলিং হচ্ছে ওর। তাছাড়াও কত মিসবিহেভ করেছে তাই এখন আদ্রিয়ানকে ফেস করতে কেমন লাগছে। তারওপর আদ্রিয়ান নামক ঐ মানুষটা ওকে ভালোবাসে? আদ্রিয়ান শুধুমাত্র ওর। ওর? ভাবতেই ওর শিরা উপশিরা অবধি শিহরিত হয়ে যাচ্ছে। এতো ভালোলাগার অনুভূতি এর আগে কোনদিন পায়নি ও। কেমন লাগছে নিজেই জানেনা। আদ্রিয়ানের সামনে দাঁড়াতেই লজ্জা করবে। আচ্ছা চিঠিটা পড়ে আদ্রিয়ানের রিঅ্যাকশনটা কীকরম হয়েছে? চুল মুছে খাটে বসতেই আদ্রিয়ানের কিনে দেওয়া একটা টেডি দেখতে পেল। টেডিটা হাতে নিয়ে একটা চুমু দিল অনিমা। তারপর নিজে নিজেই ওটা হাতে নিয়ে হাটতে হাটতে গুনগুনিয়ে গাইল,

ঝিরি ঝিরি স্বপ্ন ঝরে,
দুটি চোখের সিমানায়
চুপি চুপি কানে কানে,
কেউ আমাকে ডেকে যায়
মন হারানোর এ সময়,
পাখা মেলে.. না জানি যাবো কোথায়
তেরে রারা রুরু, মন উড়ু উড়ু
প্রেম হলো শুরু মনে হয়,
তেরে রারা রুরু, মন উড়ু উড়ু
প্রেম হলো শুরু মনে হয়।

কাশির আওয়াজে চমকে তাকিয়ে চমকে পেছনে দেখে জাবিন দাঁড়িয়ে আছে। জাবিন মেকী হেসে ভ্রু নাচিয়ে বলল,

” এতো প্রেম কীসের শুনি? হুম?”

অনিমা কিছু না বলে মাথা নিচু করে হাসল। জাবিন বলল,

” থাক আর লজ্জা পেতে হবেনা। খেতে যাবেনা? ভাইয়া কিন্তু খুঁজছে। চল!!”

” না প্লিজ। আমি পরে খেয়ে নেব। এখন নিচে যাবোনা।”

” ওহ হো। চোখে চোখে এতো কথা মুখে কেন বলোনা? কেন বলোনা?”

” যাও তো!”

অনিমা হাসতে হাসতে জাবিনকে ঠেলে বার করে দরজাটা লাগিয়ে দিল। সারাদিন অনিমা আদ্রিয়ানের সামনে যায়নি শুনু পালিয়ে বেড়িয়েছে। আদ্রিয়ান কয়েকবার খুঁজেছিল, অনিমা শুধু লুকিয়ে পরেছে। অদ্ভুতভাবে ভীষণ লজ্জা লাগছে আজ ওর। পরতেই চায়না আদ্রিয়ানের সামনে। বিকেলে জাবিনের রুম থেকে নিজের রুমে এসে আরেকবার শাওয়ার নিল। ভীষণ গরম তাই। হুট করেই কালো রঙের শাড়ি পরল ও। কেন জানি ইচ্ছে হল। বাইরে এসে টি-টেবিলে চোখ পরতেই একটা কাগজ চোখে পরল। ভ্রু কুচকে কাগজটা খুলে দেখল সুন্দর করে লেখা আছে,

” এইযে মায়াবিনী? আর কত পালাবে হুম? সেইতো আমার কাছে আসতেই হবে। যত দেরীতে আসবে শাস্তি তত বেশি পেতে হবে। তাড়াতাড়ি চলে এসো শ্যামবতী। তোমাকে ছাড়া একেকটা মুহূর্তও একেকটা যুগ মনে হচ্ছে। আর পুড়িয়ে না। জ্বলে পুরে ছাই হয়ে যাবো তো।”

মুচকি হেসে চিঠিটায় ঠোঁট ছোঁয়ালো অনিমা।সবকিছুই অদ্ভুত ভালোলাগছে ওর। কেমন স্বর্গ স্বর্গ ফিলিংস। উফফ! এতো ভালোলাগা কেন?

অনিমা ওরকম ভেজা চুলেই বাইরে এলো সারাবাড়ি খুঁজেও আদ্রিয়ানকে পেল না। মনটা কেমন করছে। বাড়িতে কী নেই আদ্রিয়ান। হঠাৎ ছাদের কথা মনে পরতেই ছাদে চলে গেল অনিমা। কিন্তু ওখানেও কাউকে পেলোনা। তাই মন খারাপ করে ফিরে আসতে নিলেই কেউ হ্যাচকা টান দিয়ে ওকে নিজের দিকে টেনে নিল। অনিমা প্রথমে ভয় পেয়ে গেলেও পরে তাকিয়ে দেখল এটা আদ্রিয়ান। ও লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেলল। আদ্রিয়ান একহাত অনিমার কোমড়ে রেখে অপরহাত দিয়ে কপালের ভেজা চুল সরিয়ে বলল,

” তো ম্যাডাম! আজ সারাদিন এভাবে পালিয়ে বেড়ালেন। এর শাস্তি এখন কী পেতে চান? হুম?”

অনিমা লাজুক হেসে মাথা নুইয়ে নিল। ওর বলতে ইচ্ছে হচ্ছে ‘আপনার দেওয়া সব শাস্তিই আমার কাছে চরম সুখের প্রাপ্তি’। আদ্রিয়ান অনিমাকে আরেকটু কাছে টেনে বলল,

” তোমার এই লাজুক হাসিটা দেখতে মনটা কতোটা ব্যাকুল হয়ে ছিল জানো? জানো তোমার গলার স্বর, এই গালের টোলটা, তোমার বাচ্চামো সবটা কতটা মিস করেছি? আর এভাবে শাড়ি পরে ভেজা চুলে যে আমায় এলোমেলো করে দিলে তার দায় কে নেবে হুম? জানো এই সাজ, লজ্জা মাখা লালচে গাল সব মিলিয়ে কেমন লাগছে তোমাকে? একদম খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে..। এই লজ্জা পেলে?”

অনিমা কিছু বলছেনা চোখ বন্ধ করে মাথা নিচু করে আছে। তাই আদ্রিয়ান অনিমার ভেজা চুলে নাক ডুবিয়ে বলল,

” এই জানপাখি! কথা বল!”

জানপাখি শব্দটা অনিমার হৃদপিণ্ডে প্রচন্ড জোরে ধাক্কা দিল। পুরো শরীর কেঁপে উঠল। যেন রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে গেল নামটা। সবটাই যেন এলোমেলো হয়ে গেল। ওর হৃদস্পন্দন যেন আজ সব সীমা পেড়িয়ে ফেলবে। এ কেমন অনুভূতি? এই অনুভূতির নাম কী?

#চলবে….

#বর্ষণের সেই রাতে- ২
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

২৭.

আদ্রিয়ানের প্রতিটা বাক্যে অনিমা লজ্জায় এতোটাই কুঁকড়ে যাচ্ছে যে এখনও চোখ খুলে তাকাতেই পারছেনা। আদ্রিয়ান অনিমার চুল থেকে নাক সরিয়ে অনিমার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,

” এভাবে লজ্জা পেওনা লজ্জাবতী। তোমার লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়া মুখটা দেখে কিন্তু আমার নিজেকে সামলে রাখতে ভীষন কষ্ট হয়।”

কথাটা বলে অনিমার মুখের দিকে তাকিয়ে হালকা করে ফু দিল। অনিমা চোখ আরো খিচে বন্ধ করে ফেলল। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল,

” পরে কিছু করে ফেললে আবার ক্যারেক্টারলেস উপাধি দিয়ে দেবে। যদিও তোমার কাছে হাজারবার ক্যারেক্টারলেস হতে পারি।”

অনিমা চোখ খুলে তাকাল আদ্রিয়ানের দিকে তারপর আবার চোখ নামিয়ে নিল। লজ্জা লাগছে ভীষণ ওর। আদ্রিয়ান বলল,

” আর হ্যাঁ কফিটা কিন্তু খেয়েছি আর মগটাও কিন্তু ভাঙিনি। যদি তুমি সত্যিই ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দাও? তোমার চোখের জল কীকরে সহ্য করব হুম? আর তাছাড়াও তোমার ওপর রেগে থাকতে পারিনা আমি। এটাকে আমার বদঅভ্যাস বলতে পারো। কিন্তু তোমার প্রতি রাগ বা অভিমান আসতে চায়না আমার। অন্যকিছু আসতে চায়। বলব কী?”

অনিমা মাথা নিচু রেখেই ‘না’ বোধক মাথা নাড়াল। ওর যে আদ্রিয়ানের কথাগুলোতে ভীষণ লজ্জা লাগছে।

” বলে দে, ভাই আমার বলে দে। পেটের মধ্যে আর কত রাখবি বলত? এবার বলেদে।”

কারো মুখে একথা শুনে অনিমা আর আদ্রিয়ান দুজনেই একে ওপরের থেকে দূরে সরে দাঁড়াল। জাবিন দাঁত বার করে হাসছে। ও পেছনে হাত নিয়ে দুলতে দুলতে এসে ভ্রু নাচিয়ে বলল,

” আহা, কত প্রেম। প্রেম আজ আকাশে বাতাসে ছড়িয়ে পরেছে। এ প্রেমের জয় হোক।”

আদ্রিয়ান একটু গলা ঝেড়ে বিরক্তি নিয়ে বলল,

” তোর মত কাবাবের হাড্ডিরা যতদিন দুনিয়াতে আছে প্রেমের আর জয় হবেনা।”

কথাটা শুনে জাবিনের মুখের হাসি উধাও হয়ে গেল। ও মুখ কালো করে বলল,

” এভাবে অপমান? আমি এখন কাবাবে হাড্ডি হয়ে গেলাম? নাহ, এ অপমান মানা যায় না। আমি অনশন কর। হুহ।”

আদ্রিয়ান হেসে বলল,

” তুই করবি অনশন? তাহলেই হয়েছে। প্রতি দুই ঘন্টা অন্তর অন্তর তো কিছু না কিছু খেয়েই চলেছিস। রাক্ষুসী একটা। তোর যার সাথে বিয়ে হবে তাকে নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত আমি। বেচারা তোকে খাবার খাওনোর জন্যেই বাপ দাদার সম্পত্তি বেঁচে ফেলতে হবে। বাকি সব বাদ দিলাম।”

” তুই এভাবে বলতে পারলি?”

” বলবনা। যদি তুই নিজের ভাই আর ভাবীর রোমান্সের মধ্যে কাবাবের হাড্ডি হয়ে না আসিস।”

আদ্রিয়ানের এমন লাগামহীন কথা শুনে অনিমা আর দাঁড়াল না লজ্জা পেয়ে চলে গেল ওখান থেকে। ভাই বোন দুটোই বেহায়া। নাহলে এতো লাগামহীন কথা বলে?

____________

রিক পার্টি অফিসে নিজের কেবিনে বসে কিছু কাগজ দেখছে। তবে ওর এসবে একদমই মন নেই। কোনকালেই এসব রাজনৈতিক কাজ ভালো লাগেনা ওর। কিন্তু বাধ্য হয়েই করতে হচ্ছে। বিরক্তি কী জিনিস সেটা এখন হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছে ও। ফোনের আওয়াজে বিরক্তি আরও বৃদ্ধি পেল ওর। স্ক্রিনে তাকিয়ে আদ্রিয়ানের নাম দেখে বিরক্তি কিছুটা কাটল। রিসিভ করে বলল,

” হ্যাঁ বল হঠাৎ ফোন?”

” ইদানীং খুব ব্যস্ত আছিস বলে মনে হচ্ছে?”

” হ্যাঁ। সামনে ইলেকশন, এসব নিয়ে ব্যস্ত আরকি।”

আদ্রিয়ান বিরক্তি নিয়ে বলল,

” এতোবছর কষ্ট করে ডাক্তারি পড়ে এরপর রাজনীতি করার লজিকটা আমি এখনও বুঝছিনা।”

রিক ছোট্ট শ্বাস ফেলে বলল,

” এসব ছাড়। কিছু বলবি?

“আদিবের বিয়ে এই পনেরো তারিখ। তুই আসবি?”

” তোর বন্ধু আদিব?”

” হুম।”

রিক একটু ভেবে বলল,

” আচ্ছা দেখছি। এখনও শিওর নই তবে আসলেও একেবারে বিয়ের দিনই আসব।”

” হুম দেখ। আসলে সবার মাঝে তোরও ভালো লাগবে।”

আরও কিছুক্ষণ টুকিটাকি কথা বলে ফোনটা রেখে দিল রিক। লম্বা একটা শ্বাস ফেলে ভাবতে লাগল অনিমা কোথায় যেতে পারে? ও এতো সোর্স লাগিয়ে খুঁজছে কোথাও তো পাওয়া উচিত। এভাবে তো ভ্যানিস হয়ে যেতে পারেনা একটা মেয়ে।
ঠিক পাশের রুমেই কবির শেখ আর রঞ্জিত চৌধুরী তাদের নিকৃষ্ট পরিকল্পনায় ব্যাস্ত। তাদের যেখানে যত অবৈধ কারবার আছে সবকিছুরই টাকা পয়সার হিসেব করছেন ওনারা। তবে মাদারের খোঁজ পেয়েছেন ওনারা। উনি সিলেট আছেন এখন। তবে ঠিক কোন জায়গায় আছে সেটা এখনও জানেনা। আর সেটা জানা ওনাদের জন্যেই ভীষণ জরুরি। ওনাদের বর্তমান পরিকল্পনা এগোতে হলে মাদারকে প্রয়োজন।

____________

পাঁচদিন পরেই আদিবের বিয়ে। বিয়ের জন্যে যেই বাংলো ভাড়া করা হয়ে নিকট আত্মীয়রা সবাই এসে গেছে সেখানে। আদ্রিয়ানরাও ওই বাড়িতে চলে গেছে। যদিও এক সপ্তাহ পরে যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু আদিবের জোড়জুড়িতে এতো আগে চলে আসতে হল। সকলের কাছে অনিমার পরিচয় আদ্রিয়ানের ফুঁপাতো বোন হিসেবেই দেওয়া হয়েছে। কারণ আমাদের সমাজে এক মেয়ের এভাবে কোন পরপুরুষের বাড়িতে থাকাকে ভালো চোখে দেখেনা। আর আদ্রিয়ান চায়না অনিমাকে কেউ কোনরকম কথা শোনাক বা অনিমা কারো কাছে ছোট হোক। গতকাল রাতে এসছে ওরা এখানে। আজ সকালে আদিবের ফুপির বাড়ি থেকেও তিনজন চলে এলো। ওর ফুপা, ফুপি আর তাদের ছেলে আরমান। আরমান এসে ফ্রেশ হয়ে বাইরে এসে দেখল ড্রয়িং রুমে তিনচারজন মেয়ে মিলে ফল কাটছে আর গল্প করছে। ওখানে জাবিন, অনিমা আর আদিবের দুজন কাজিন ছিল। কিন্তু অনিমার দিকে আরমান বেশ অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইল। বলা বাহুল্য সেই দৃষ্টিতে খারাপ কিছু ছিলোনা। অনেক্ষণ যাবত আদ্রিয়ান অনিমাকে বিরক্ত করে যাচ্ছে। যেখানে যায় সেখানেই পেছন পেছন ঘুরঘুর করে বেড়াচ্ছে। অনিমা বেশ বিরক্তও হচ্ছে। অনিমা ছাদে কাপড় মেলে দিয়ে নিচে আসার সময় হঠাৎ কেউ ওর হাত টেনে ধরল। আর এটা আদ্রিয়ান ছাড়া আর কে হবে? অনিমা বিরক্ত হয়ে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,

” সমস্যা কী আপনার বলবেন? সকাল থেকে জ্বালিয়ে যাচ্ছেন। এভাবে ইরিটেড করার কোন মানে আছে?”

আদ্রিয়ান পাত্তা না দিয়ে মুচকি হেসে অনিমার হাত ধরে নিজের কাছে টেনে বলল,

” আজ একটু বেশিই সুন্দর লাগছে তোমাকে। তারওপর নেভিব্লু কুর্তি পরেছ। এই রং টাতে তোমাকে বেশ মানায়। তাই গার্ড দিচ্ছি যাতে কেউ নজর না দেয়। ঐ আরমান সকাল থেকে তোমাকে কীভাবে যেন দেখছে। যেটা আমার একদম ভালো লাগেনি। আমার জিনিসে অন্যকারো নজর পরবে ব্যাপারটা আমার মোটেও পছন্দ না।”

” আমি জিনিস?”

” সবার ক্ষেত্রে না। শুধু আমার ক্ষেত্রে। বাকি সব দিক দিয়ে তুমি স্বাধীন। শুধু এই দিকটা বাদে। না কেউ তোমার দিকে নজর দিতে পারবে। আর না তুমি অন্য কারো দিকে নজর দেবে। বুঝলে?”

” যদি আমি দেই তো?”

” কেন কাউকে মনে ধরেছে?”

অনিমা আদ্রিয়ানকে জ্বালানোর জন্যে বলল,

” তা জানিনা। কিন্তু ইউ নো হোয়াট! ঐ আদিব ভাইয়ার ফুপির ছেলেটা আছেনা, আরমান। ওনাকে কিন্তু দেখতে বেশ ভালো। বলিউড স্টার।”

আদ্রিয়ান একটু রেগে গেল। চোখে রাগ থাকলেও মুখে রহস্যময় হাসি ফুটিয়ে অনিমার হাতটা হালকা চাপ দিয়ে ধরে বলল,

” বেশি সাহস ভালোনা জানপাখি। আমাকে তুমি এখনও পুরোটা চেনোনা।”

” হাত ছাড়ুন কাজ আছে নিচে।”

” কেন আরমানকে দেখতে ইচ্ছে করছে বুঝি?”

” হ্যাঁ।”

আদ্রিয়ান অনিমার হাতে আরেকটু চাপ দিয়ে ধরে বলল,

” আবার বলো?”

অনিমা মেকি হেসে বলল,

” আমিতো মজা করছিলাম। নিচে কাজ আছে। ছাড়ুন প্লিজ।”

” যদি না ছাড়ি?”

” আমি চেঁচাবো।”

” চেঁচাও।”

অনিমা এবার করুণ চেহারা করে বলল,

” প্লিজ।”

আদ্রিয়ান আর অনিমাকে বিরক্ত না করে ছেড়ে দিল। অনিমা প্রায় দৌড়েই নিচে চলে গেল সবার কাছে। নিরিবিলি জায়গায় থাকা মানেই আদ্রিয়ানের জ্বালাতন সহ্য করা।

বিকেলে সবাই বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত। বিয়ে বাড়িতে তো হাজারটা কাজ থাকে। আদিবের দাদি নামক মানুষটা অন্যরকম। রসিক প্রকৃতির, কিন্তু কিছুকিছু ক্ষেত্রে আবার কেমন কঠিনও। অনিমাকে এরমধ্যেই নাতনির মত দেখতে শুরু করেছে। তবে এরমধ্যে দুবার বকাও খ
দিয়ে ফেলেছে। আদ্রিয়ানের সাথেও বেশ ভাব। যদিও তার কিছু কিছু কথায় আদ্রিয়ান নিজেও বিরক্ত হচ্ছে।
আদ্রিয়ান, আশিস আরও কজন মিলে ড্রয়িং রুমের সাইডেই কাজ করছিল। বড় একটা ঝুড়ি লাগবে তাই অনিমা আদ্রিয়ানকে উদ্দেশ্য করে চেঁচিয়ে বলল,

” আদ্রিয়ান এদিকে একটা ঝুড়ি লাগবে।”

ঠিক তখনই আদিবের দাদি রাগী গলায় হালকা ধমকে বলল,

” এই মেয়ে ও না তোমার বড় ভাই হয়? আদ্রিয়ান কী হ্যাঁ? ভাইয়া বলে ডাকতে পারছ না?”

অনিমা মাথা নিচু করে ফেলল। কেউ কিছু বলল না কারণ কাজিন ভাইকে তো স্বাভাবিকভাবে ভাইয়া বলেই ডাকার কথা। আদিব, আশিস, জাবিন ওরা মিটমিটিয়ে হেসে যাচ্ছে। আদ্রিয়ানের তো মনে মনে এই বুড়ির ওপর ভীষণ রাগ হচ্ছে। এখন নিজের হবু বউয়ের মুখে ভাইয়া ডাক শুনিয়ে ছাড়বে? এমন দুর্ভাগ্য কজনের হয়? অনিমা আর কী করবে অসহায় মুখ করে বলল,

” ভাইয়া? ঝুড়িটা দিয়ে যান।”

আদ্রিয়ান কিছু বলবে তার আগেই আরমান এসে একটা ঝুড়ি এনে অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,

” এই নাও তোমার ঝুড়ি।”

অনিমা জোরপূর্বক একটা হাসি দিয়ে বলল,

” থ্যাংকস।”

আরমান হেসে বলল,

” মাই প্লেজার, বিউটি।”

ব্যাস! হয়ে গেল। দাদি যে আগুন লাগিয়েছে আরমান সুন্দর করে তার মধ্যে ঘি ঢেলে দিয়েছে। অনিমা একটা শুকনো ঢোক গিলে আদ্রিয়ানে দিকে তাকিয়ে দেখে আদ্রিয়ানের কোন পাত্তা নেই। সে নিজের মত কাজ করছে। আদিব ওরা পারছেনা এখন ঘর কাঁপিয়ে হাসতে। অনিমা আদ্রিয়ানের অবস্থা দেখে ভীষণ হাসি পাচ্ছে ওদের।

সন্ধ্যার পর ড্রয়িংরুমে সবাই মিলে গল্প করছে। সবাই বলতে ইয়াং রাই। তাও ওরা নিজেরা। বাইরের কেউ নেই। আদ্রিয়ান তো বেশ ফুলে আছে বিকেল থেকেই। অনিমা আর কী করবে ও অসহায়ের মত বসে আছে। এসবে ওর কী দোষ? এরমধ্যেই একজন বলে উঠল,

” হোয়াটস আপ গাইস?”

সবাই সেদিকে তাকাল। লোকটাকে দেখে অাদ্রিয়ান, আদিব, আশিস তিনজনই অবাক হল। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে তিনজনেই ‘শালা’ বলে চেঁচিয়ে উঠল। তিনজনে গিয়েই জড়িয়ে ধরল ছেলেটাকে। আদ্রিয়ান বলল,

” তোর ফ্লাইট তো কাল ছিল তাইনা?”

” সারপ্রাইজ।”

আদ্রিয়ান সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। ওর নাম নাহিদ। ইউএসএ থেকে এলো আজ। আদিবের বিয়ের জন্যেই এসছে। এরকমটাই সবাই জানে। অনিমার সাথে পরিচয় করাবে তার আগেই নাহিদ বলল,

” ওয়েট! ওয়েট! লেট মি গেস। দিস ইজ ভাবী রাইট? অনিমা?”

আদ্রিয়ান নাহিদের কাধে হাত রেখে বলল,

” আরে বাহ। খুব জলদি চিনে ফেললি?”

” তোর মুখে ডেসক্রিপশন শুনতে শুনতে আমার মুখস্থ হয়ে গেছে। যাই হোক ভাবী আমি নাহিদ। সম্পর্কে আপনার দেবর হই। ”

অনিমা মুচকি হেসে বলল,

” ভালো আছেন?”

” আমি সবসময়ই ভালো থাকি।”

এরপর সবার সাথেই জমিয়ে আড্ডা দিল ও। নাহিদ ছেলেটা বেশ মিশুক। সবার সাথে কিছুক্ষণের মধ্যেই দারুণভাবে মিশে গেল। যেন সবাই ওর পূর্বপরিচিত। সবারই বেশ ভালো লেগেছে ওকে। আদ্রিয়ান সবার আড়ালে চোখের ইশারায় নাহিদকে কিছু বলল, নাহিদও কিছু ইশারা করে অনিমার দিকে একপলক তাকালো। আদ্রিয়ানের নাহিদকে এখানে আনার উদ্দেশ্য শুধু বিয়েটা না, অনিমাও। যেটা কেউ জানেনা।

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে