বর্ষণের সেই রাতে- ২ পর্ব-২৪+২৫

0
1857

#বর্ষণের সেই রাতে- ২
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

২৪.

পেপারটার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অনিমা। ওর মস্তিষ্ক ওকে একটাই কথা বলছে যে আদ্রিয়ান ঠকিয়েছে ওকে, হ্যাঁ ঠকিয়েছে। এটাকেতো ঠকানোই বলে। কারণ আদ্রিয়ান আর স্মৃতির একটা ছবি বড় করে ছেপে দিয়েছে। ছবিটাতে স্মৃতি আর আদ্রিয়ান দুটো চেয়ারে পাশাপাশি বসে আছে। সেটা বড় কথা না বড় কথা হল স্মৃতি আদ্রিয়ানের একহাত নিজের দুইহাতে আকড়ে ধরে হাসছে। আদ্রিয়ানও হাসছে। দুজনের মুখ দেখে মনে হচ্ছে কোন একটা মজার বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বা ঘটেছে। কিন্তু অনিমার মাথায় সেসব আসছে না ওর মাথায় এটাই থাক্কা লেগেছে যে মেয়েটা আদ্রিয়ানের হাত জড়িয়ে আছে আর আদ্রিয়ানও বাধা দিচ্ছেনা বরং হাসছে। আর হেডলাইন আর বিস্তারিত যা লেখা আছে তার সারাংশ এটাই যে আদ্রিয়ান আর স্মৃতি একে ওপরকে ডেট করছে। কখন,কোথায়, কীভাবে ওদের এভাবে ক্যামেরা বন্দি করে সেটাকেই খুব সুন্দর করে ব্যখ্যা করে লিখেছে। একটা রেস্টুরেন্টে আছে ওরা। এটা কালকেরই ঘটনা। এসব পড়ে আর দেখে অনিমার চোখ দিয়ে আপনাআপনি জল পরছে। কিছু তো বোঝার আর বাকি নেই? কিন্তু ওর মন নিয়ে কেন এভাবে খেলল আদ্রিয়ান? ওর মন ভেঙ্গে কী পেল? সত্যিই মানুষের ধারণা মিথ্যা নয়। সিলেব্রেটিদের কাছে সম্পর্কের কোন মানেই নেই। ওর কাছে হয়তো এগুলো ছেলেখেলা কিন্তু ওপরপাশের মানুষটার কথা একবারও ভাবল না। কীকরে পারল এরকম করতে? অনিমাকে এভাবে কাঁদতে দেখে তীব্র ওর হাত থেকে পেপারটা নিল। অরুমিতা, তীব্র আর স্নেহা মিলে পেপারটা পড়ে বুঝতে পারছে অনিমা কেন কাঁদছে। অরুমিতা ওর কাধে হাত রেখে বলল,

” দেখ অনি। আজকাল সাংবাদিকরা তো তিলকে তাল করে কত কিছুই লেখে। সবকী সত্যি বল? ”

অনিমা চোখ মুছে বলল,

” এখনও এসব বলবি? লেখাগুলো না হয় তিলকে তাল করে লিখেছে। মেনে নিলাম। কিন্তু ছবিটা? ছবিটার কথা কী বলবি? এটাও মিথ্যে? আর তাছাড়াও ওনার একটা না হোক বা দশটা রিলেশন হোক তাকে আমার কী?”

তীব্র বলল,

” সত্যিই তোর কিছু না?”

” আজব! কিছু হতে যাবে কেন? আমি কী ওনার বউ লাগি নাকি গার্লফ্রেন্ড লাগি হ্যাঁ? ওনার কিছুতেই আমার কোন মাথাব্যথা নেই।”

অরুমিতা হেসে বলল,

” তাহলে কাঁদছিস কেন?”

অনিমা চুপ করে রইল। তীব্র, স্নেহাও চুপ করে আছে। কী বলবে বুঝতে পারছেনা। অনিমা আবার কাঁদছে। কালকে এইজন্যই ওরসাথে শপিং এ আসেনি আদ্রিয়ান, রাতে খেয়েও এসছে। সেদিনের ব্যাপারটা না হয় কাজ ছিল তাই ওকে রেডি হতে বলে না নিয়েই চলে গেছিল স্মৃতির কাছে তাই বলে কালকেও?ওর চেয়ে এতো বেশি গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতি আদ্রিয়ানের কাছে? হবেনা কেন? ওর সাথে তো আদ্রিয়ান টাইমপাস করতে চেয়েছিল কিন্তু স্মৃতি হয়তো তারচেয়ে বেশি কিছু। তবে আদ্রিয়াকে ক্ষমা করবেনা ও। ওর মন নিয়ে এভাবে খেলা আদ্রিয়ানের ঠিক হয়নি। কদিন আগেও ওর এসবে যায় আসতো না। কিন্তু আদ্রিয়ান বারবার ওর কাছে এসে, ওকে ওরকম কথা বলে, ইন্ডিরেক্টলি ভালোবাসার কথা বলে ওকেও ইচ্ছে করে দুর্বল করে দিয়েছে। আর এখন অন্য মেয়েকে নিয়ে প্রেমলীলা করছে। তাকে ক্ষমা করা যায়? অরুমিতা ওরা অনিমাকে শান্ত করার চেষ্টায় আছে। কিছুক্ষণ পর অনিমা আবার চোখ মুছে বলল,

” অরু, স্নেহা তোরা যেই ফ্লাটটাতে থাকিস। ওখানে তো দুজনেই থাকিস আমায় থাকতে দিবি?”

স্নেহা অবাক হয়ে বলল,

” কী?”

অনি ভাঙা গলাতে বলল,

” চিন্তা করিস না। আমি ভাড়া দিয়ে দেব। জাস্ট দুটো টিউশনি জোগার করে নেই তারপর।”

অরুমিতা রেগে বলল,

” চড় মারবো একটা। টাকার কথা আসছে কোথা থেকে? কিন্তু আদ্রিয়ান ভাইকে না বলে এভাবে চলে আসবি?”

” ওনাকে বলার কী আছে? তাছাড়াও ওনার ঘাড়ে বসে আর কতদিন খাবো?”

তীব্র বলল,

” দেখ অনি রাগের মাথায় ভুলভাল কোন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলিস না। মাথা ঠান্ডা কর, ঠান্ডা মাথায় একটু ভাব। তারপর দেখা যাবে।”

কিন্তু অনিমা শক্ত কন্ঠে বলল,

” আমি যা বলছি ঠান্ডা মাথাতেই বলছি। আর এখানে রাগের তো কিছু নেই! রাগ করতে যাবো কেন? শুধু বলছি ওনার ঘাড়ে বসে আর খাবোনা আমি। এখন যদি তোরা আমায় থাকতে দিতে না চাস তাহলে আমায় অন্যকিছু ভাবতে হবে।’

ওরা তিনজন অনেক বোঝানোর চেষ্টা করল কিন্তু অনিমা নাছোড়বান্দা। তাই বাধ্য হয়েই অরুমিতা আর স্নেহা ওকে নিয়ে গেল নিজেদের সাথে। আদ্রিয়ানের পাঠানো ড্রাইভারকেও না বলে চলে আসল ও। আর অরুমিতা,স্নেহাদের কড়া নির্দেশ দিয়ে দিল যাতে এই ব্যাপারে আদ্রিয়ানের সাথে কোন কথা না বলে, কিচ্ছু না বলে। আর হুমকিও দিল যদি বলে তো ও ওই ফ্লাট ছেড়ে চলে যাবে। আসলে অনিমা চায়না আদ্রিয়ান অনিমার দুর্বলতা জেনে যাক।

____________

আদ্রিয়ান ওর অফিসে বসে ডিরেক্টর এর সাথে কথা বলছিল। তখনই ওর ড্রাইভার ওকে ফোন করে বলল ভার্সিটির টাইম শেষ হয়ে গেছে অনেকক্ষণ হয়ে গেছে অনিমা বাড়ি ফেরার জন্যে বাড়িতে আসেনি। আদ্রিয়ানের মনে ভয় ঢুকে গেল। এমনিতেই অনেকে মেয়েটার প্রাণের পেছনে পরে আছে। কোন বিপদ হয়নিতো। ও অনিমাকে ফোন করল কিন্তু ফোন বন্ধ পেল। আদ্রিয়ান দ্রুত ওখান থেকে বেড়িয়ে গেল। বেড়োতে সার্ভেন্টকে ফোন করে জিজ্ঞেস করল অনিমা বাড়ি ফিরেছে কি-না। ওনারা না বলল। এরপর আদ্রিয়ান একে একে অরুমিতা, স্নেহা, তীব্রকে ফোন করল কিন্তু কেউ ধরল না। আসলে অনিমা ধরতে দিচ্ছেনা। আর তাছাড়াও আদ্রিয়ানকে ওরা মিথ্যে বলতে পারবেনা সেজন্যও ধরছে না। আদ্রিয়ান কলেজে গিয়ে পুরো কলেজ খুঁজেও অনিমাকে না পেয়ে এবার গাড়ি নিয়ে রাস্তায় খুঁজতে শুরু করল। পাগল পাগল হয়ে যাচ্ছে ও। অরুদের ফ্লাটের বা তীব্রর বাড়ির ঠিকানা ও জানেনা তাই খুঁজতে হবে। কিন্তু তারআগে রাস্তাগুলো দেখে নেওয়া ভালো।

দেখতে দেখতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। এদিকে অরুমিতা আর স্নিগ্ধার ফ্লাটে যাওয়ার পর থেকেই অনিমা মন খারাপ করে বসে একজায়গায় আছে। দুপুরেও কিছু খায়নি। কিছুক্ষণ পর অরুমিতা এসে বলল,

” অনি দেখ আদ্রিয়ান ভাই বারবার ফোন করছে। প্লিজ কথা বল নাহলে আমাদের বলতে দে। প্লিজ!”

এই নিয়ে মোট চারবার এসে একই কথা বলে গেছে কখনও অরুমিতা কখনও স্নেহা। তাই অনিমা এবার রেগ‍ে গেল। একটানে ফোনটা নিয়ে রিসিভ করে বলল,

” হ্যাঁ বলুন।”

অনিমার কন্ঠ মুহূর্তেই চিনে ফেলল আদ্রিয়ান। তাই রাগী গলায় বলল,

” এক থাপ্পড় মেরে বলুন বার করে দেব। বেয়াদব মেয়ে। জানো কীভাবে পাগলের মত খুঁজছি? আরুমিতার কাছে যাচ্ছো বলে যাবেনা? যা ইচ্ছা তাই করবে?”

অনিমা নিজেকে সামলে বলল,

” দেখুন আমি কী করব সেটা পুরোটাই আমার ব্যাপার। আর আমি আজ থেকে আমি এখানেই থাকবো। প্লিজ ফোন করে আর ডিসটার্ব করবন না।”

আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল,

” ওহ, ম্যাডাম তাহলে রাগ করেছে আমার ওপর? রাগ করেছ বলে এভাবে চলে যেতে হবে? দাঁড়াও নিয়ে আসি তোমাকে তারপর রাগ করা বাড় করছি।”

আদ্রিয়ান মিষ্টি গলায় বলা এই কথাটা অনিমার কাটা ঘায়ে নুন দেওয়ার মতই মনে হল। তাই এবার একটু রেগে চেঁচিয়ে বলল,

” আপনার সাথে রাগ করব কেন আমি? হু আর ইউ? নিজেকে এতো গুরুত্ব দেওয়ার দরকার নেই। আপনি অনেক করেছেন আমার জন্যে। আর কিছু করতে হবেনা। এবার আমায় আমার মত ছেড়ে দিন। রাখছি।”

বলে ফোন কেটে দিল। জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে অনিমা। অরুমিতা আর স্নেহা হা করে তাকিয়ে আছে। অনিমা সেটা দেখে ধমকে বলল,

” হা করে তাকিয়ে আছিস কেন? যা এখান থেকে।”

অরুমিতা আর স্নেহা একপ্রকার পালিয়ে গেল। ওরা যেতেই অনিমা কেঁদে ফেলল। ও চায়নি আদ্রিয়ানের সাথে এভাবে কথা বলতে কিন্তু কেন করল আদ্রিয়ান ওর সাথে এরকম? যদি অন্যকারো সাথে সম্পর্ক ছিলোই তাহলে ওর সাথে এত ঘনিষ্ঠতা কেন বাড়ালো। কেনো এভাবে ওর মন এভাবে ভেঙ্গে দিল? কেন? কী পেল এরকম করে? শুধুই টাইমপাসের জন্যে? নাকি ওকে সস্তা ভেবেছিল আদ্রিয়ান? যার সাথে যা ইচ্ছা করা যায়।

তার প্রায় দুঘন্টা পর ফ্লাটের বেল বেজে উঠল। অরুমিতা গিয়ে দরজাটা খুলে দেখল আদ্রিয়ান দাঁড়িয়ে আছে। সাথে অভ্রও আছে। অনিমা সোফায় বসে ছিল আদ্রিয়ানকে দেখে দাঁড়িয়ে গেল। আদ্রিয়ান হনহনে পায়ে ভেতরে এসে অনিমার হাত ধরল এরপর টেনে ভেতরের রুমটাতে নিয়ে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়ে দরজার সাথে চেপে ধরল। তবে ওর চেহারায় তেমন রাগ নেই। ও অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,

” এতো রেগে আছো কেন হুম? কী করেছি কী আমি? না বলে এভাবে রেগে বম হয়ে থাকলে শোধরাবো কীকরে? বল কী করেছি?”

অনিমার এখন আদ্রিয়ানকে অসহ্য লাগছে একদম অসহ্য। অনিমা ঝাড়া দিয়ে ছাড়িয়ে বলল,

” কী সমস্যা কী আপনার? যখন তখন এভাবে টাচ করেন কেন? আপনাকে তো অনেক আগেও বলেছিলাম যে আমাকে এভাবে টাচ করবেন না।আমি আপনার প্রেমিকার মত অত্যাধুনিক নই। পরপুরুষের স্পর্শ খারাপ লাগে আমার। নাকি একটা নোংরা জায়গা থেকে বাঁচিয়ে নিয়ে এসছিলেন বলে আমাকে সেইরকমই সস্তা মেয়ে ভাবছেন?”

” অনি!”

” ইটস অনিমা ফর ইউ।”

আদ্রিয়ান একটু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে অনিমার কথায়। হয়ত এটা আশা করেনি। তাতে অনিমার কী? ওও তো অনেককিছুই আশা করেনি কিন্তু আদ্রিয়ানতো সেসসবই করেছে। অনিমা আরেকটা শ্বাস ফেলে বলল,

” আর বলেছিলাম না যে নিজের এতোটাও ইম্পর্টেন্স দেওয়ার দরকার নেই। রেগে নেই আপনার ওপর আমি। ব্যস আপনার বাড়িতে থাকতে চাইনা আর।”

আদ্রিয়ান অনিমাকে ধরে আবারও নিজের কাজের কাছে এনে বলল,

” কেন? এতদিন তো দিব্যি ছিলে। আর এরকম করছ কেন ইয়ার? কী করেছি আমি? আচ্ছা, আমার কোন ব্যবহারে হার্ট হয়েছ? ওকে, আ’ম সরি। এবারতো চল?”

কিন্তু অনিমার চোখে ঐ ছবি আর আর্টিকেলই ভাসছে। আর কিছু ভাবতে পারছেনা। আদ্রিয়ান অনিমার হাত ধরে নিতে গেলে অনিমা ঝাড়ি দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,

” বাংলা বুঝতে পারছেন না? যেতে চাইনা আমি আপনার সাথে। আমি এখন থেকে এখানেই থাকব। আমার ওপর একদম জোর খাটাতে আসবেন না আমি আপনার গার্লফ্রেন্ড নই। তাই নিজের অধিকারের সীমায় থাকুন। আর হ্যাঁ..”

বলে অনিমা একটা প্যাকেট এনে আদ্রিয়ানের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,

” এটা আপনারি দেওয়া একটা ড্রেস। বাকিগুলো আপনার বাড়িতেই আছে। এটা আজ কলেজে পরে গেছিলাম তাই আমার কাছ ছিল। দিয়ে দিলাম আপনাকে।”

তারপর হাতের ঘড়ি, কানের দুলটা যেটা আদ্রিয়ান কিনে দিয়েছিল সব খুলে আদ্রিয়ানের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,

” আপনার ঋণ শোধ করতে পারবনা আমি। কিন্তু এগুলো ফিরিয়ে দিলাম। অনেক করেছেন আমার জন্যে। সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকব আপনার কাছে। এবার আসুন।”

আদ্রিয়ান স্হির চোখে তাকিয়ে আছে অনিমার দিকে। যাচ্ছেনা। তাই অনিমা ঠেলে রুম থেকে বার করে দিয়ে দরজা আটকে কাঁদতে লাগল। আদ্রিয়ান অনেকবার নক করেছে কিন্তু অনিমা খোলেনি। কিছুক্ষণ পর আর কোন আওয়াজ পেলনা অনিমা। অরুমিতা বলল,

” আদ্রিয়ান ভাই চলে গেছে অনি। এবার খুলে দে।”

অনিমা দ্রুত উঠে খুলে বাইরে এসে দেখল সত্যিই চলে গেছে আর ওর ঔষধ আর প্রেসক্রিপশনের কপি রেখে গেছে। অনিমা আর পারলোনা অরুমিতাকে জড়িয়ে ধরে জোরে জোরে কিছুক্ষণ কাঁদল। অরুমিতা আর স্নেহা মিলে অনেক কষ্টে সামলেছে ওকে।

____________

পরেরদিন ভার্সিটিতেও অনিমা স্নেহার একটা ড্রেস পরে গেল। এখনও কিনতে যেতে পারেনি পোশাক। দুটো ক্লাস শেষেই হঠাৎ ডিন ডেকে পাঠালো অনিমাকে। অনিমা ডিনের রুমে যেতেই ডিন বলল,

” একজন এসছে তোমার সাথে দেখা করতে পাশের রুমে ওয়েট করছে, যাও।”

অনিমা অবাক হয়ে বলল,

” জি?”

” রিপিড করব?”

” না কিন্তু..”

” যাও।”

অনিমা বুঝলোনা কে এখন ডাকল ওকে। আর ডিনও যেতে বলল। পাশের রুমে দরজা দিয়ে অর্ধেক ঢুকতেই কেউ টেনে ভেতরে নিয়ে গেল। অনিমা ভয় পেয়ে গেলেও তাকিয়ে দেখে আদ্রিয়ান। চোখে মুখে ভয়ংকর রাগ আছে আদ্রিয়ানের। কিন্তু আজ কেন জানি অনিমা ভয় পেলোনা। কারণ আদ্রিয়ানের কাছে পাওয়া আঘাতটা ওর মনের গভীরে লেগেছে। আদ্রিয়ানকে দেখলেই যে ওর সেই নিউজের কথা মনে পরেও ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলল,

” এসব কেমন অসভ্যতা মিস্টার জুহায়ের? ছাড়ুন আমাকে। দেখুন আপনি কিন্তু এভাবে..”

আদ্রিয়ান ধমকে বলল,

” চুপ! একদম চুপ! কী ভেবেছ বারবার মনে আঘাত করবে আর আমি মেনে নেব? যা ইচ্ছে তাই করে বেড়াবে? মানুষ মনে হয়না আমাকে? জানোয়ার আমি? আমার কষ্ট হয়না? অনেক সহ্য করেছি আর না। ভালো কথায় শোনার মেয়ে তুমি নও। তোমাকে দিয়ে সবকিছু জোর খাটিয়েই করাতে হবে।”

বলে অনিমাকে টেনে নিয়ে যেতে ধরলে অনিমার কি হল নিজেই জানেনা সর্বশক্তি দিয়ে আদ্রিয়ানের গালে চড় মেরে দিল। কাজটা করে নিজেই হতভম্ব হয়ে গেল অনিমা। কী করল ও?

#চলবে…

#বর্ষণের সেই রাতে- ২
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

২৫.

আদ্রিয়ান গালে হাত দিয়ে অবাক দৃষ্টিতে তাকাল অনিমার দিকে। অনিমা যে ওকে চড় মেরে দিতে পারে সেটা ভাবতেও পারেনি বোধহয়। অনিমার নিজেরও অপরাধবোধ কাজ করছে। এরকম কিছু করার কথা ও কল্পনাতেও আনতে পারেনা, কিন্ত কীকরে কী করে ফেলল নিজেই বুঝে উঠতে পারছেনা। মেরেছে তো মেরেছে এতো জোরে মেরেছে যে ওর হাতও জ্বালা করছে। ছিঃ এমনটা কীকরে করে ফেলল। আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে দেখে ও শান্ত চোখে অনিমাকে দেখছে। ফর্সা বাম গালে হালকা লালচে ভাব এসছে। অনিমার মাথায় অাবারও স্মৃতির বাহু জড়িয়ে বসে থাকার দৃশ্যটা ভেসে উঠল, আবার সেদিন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ছবি তোলার দৃশ্য। তারপর বারবার অনিমার এতো কাছে আসা। সব মনে পরতেই আবার রেগে গেল। তাই শক্ত কন্ঠে বলল,

” এমন কেন আপনি? আপনাকে বলেছিনা আমাকে এভাবে ছোঁবেন না। একটা মেয়েকে জোর করে নিজের বাড়িতে রেখে দেবেন বুঝি? লজ্জা করছেনা? আপনাকে আলাদা ভেবেছিলাম, কিন্তু অাপনারা মিডিয়া জগতের সবাইকী এরকম? ঘরে একজন লাগবে আর বাইরে আরেকজন লাগবে? একটা দিয়ে হয়না তাইনা? বাইরেতো একজন আছেই আপনার, তাই ঘরে এখন আমাকে চাই তাইতো?”

আদ্রিয়ান শান্ত কন্ঠে বলল,

” তোমার আমাকে সত্যিই এই টাইপ ছেলে মনে হয়?”

” এরচেয়েও জঘন্য মনে হয়। যে একটা মেয়ের মন নিয়ে খেলার আগে দুবার ভাবেনি। আপনার কাছে তো আমি জাস্ট একটা সস্তার জিনিস। যাকে ফ্রিতে পেয়ে একটা সস্তা জায়গা থেকে তুলে নিয়ে এসছেন। আর সেভাবেই ব্যবহার করতে চাইছেন ”

আদ্রিয়ান এবার ঝাড়ি দিয়ে বলল,

” বারবার এক কথা বলে যাচ্ছো। ঘরে-বাইরে, মন নিয়ে খেলেছি এসব বাচ্চাদের মত ভিত্তিহীন অভিযোগ করে যাচ্ছো। আমাকে ক্যারেক্টার লেস বলেই মনে হয় তাইনা? যদি সেরকম হতাম না এতদিনে তোমার সাথে আমি.. হোয়াটএভার এতো রাগ, এতো ঘৃণা কীসের হ্যাঁ? যে আমার গায়ে হাত তুলতেও দুবার ভাবলেনা? দুদিন আগেও বাচ্চামো করলে। কেন করলে সেটা আজও জানিনা। আবার এখন শুরু করে দিয়েছ। আ’ম জাস্ট ফেড আপ উইথ ইউ। জাস্ট ফেড আপ। সবকিছুর একটা সীমা থাকে অনি। এসবের মানে কী?”

” আপনাকে এসবের জবাব দেবনা আমি। আমি জানি আপনি আমার জন্যে অনেক করেছেন, তাই বলে কিনে নেননি। তাই আপনি আপনার মত থাকুন আর আমাকে আমার মত থাকতে দিন। বারবার এভাবে আমাকে বিরক্ত করবেন না।”

কথাগুলো বলে আদ্রিয়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখল আদ্রিয়ান শক্ত হয়ে স্হির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। থাপ্পড়ের এফেক্টটা এখনও যায়নি। অনিমা চোখ সরিয়ে আর কিছু বলতে না দিয়েই বেড়িয়ে এলো। আদ্রিয়ান রাগে একটা চেয়ার লাথি মেরে ফেলে দিল। পরপর তিনবার টেবিলে ঘুষিও মারল। তারপর মাথা চেপে ধরে বসে পরল টুলের ওপর। সব অসহ্য লাগছে, সব।

এদিকে অনিমার খুব কান্না পাচ্ছে এখন। ও তো এরকমটা চায়নি। ও তো আদ্রিয়ানের কাছেই থাকতে চেয়েছিল। সারাজীবন। একসাথে জীবন কাটাতে চেয়েছিল। কিন্তু কেন এরকম করল আদ্রিয়ান? কেন? ওয়াসরুমে ঢুকে শব্দ করে কেঁদে দিল ও। ও জানেনা ও বাড়াবাড়ি করেছে কি-না। কিন্তু ওর মনে যা চলছে সেটা ও ছাড়া কেউ বুঝবেনা। আদ্রিয়ান যদি ওর বয়ফ্রেন্ড বা হাজবেন্ড হত তাহলে প্রথমেই গিয়ে কলার ধরে জিজ্ঞেস করত এসব কী হ্যাঁ ? ওই মেয়েটা আপনার এতো কাছে আসবে কেন? কিন্তু কীসের ভিত্তিতে জিজ্ঞেস করবে ও? ওরা দুজনতো প্রেম করছে না? আদ্রিয়ান আর ওর সম্পর্কের তো কোন নাম নেই, একে ওপরকে বলেও নি ভালোবাসার কথা। যা আছে সবটাই মনে মনে। একে ওপরের অনুভূতির কথা সরাসরি বলেনি কেউই। যেখানে সম্পর্কটাই এখনও সরাসরি শুরু হয়নি সেখানে এই বিষয় নিয়ে সরাসরি অভিযোগ করা বা প্রশ্ন করাটা হাস্যকর ছাড়া কিছুই না। অনুভূতিটা পুরোটাই মনে মনে তাই অভিমান আর অভিযোগটাও মনেই আটকে আছে, চাইলেও প্রকাশ করতে পারছেনা। কেউ পারতোনা করতে। এখন অনিমা না বলতে পারছে, আর না সহ্য করতে পারছে। অবস্থাটা জটিল, বড়ই জটিল।

_____________

রঞ্জিত চৌধুরী টেবিলে রাখা গ্লোবটা ঘোরাচ্ছে আর ভাবছে। ভাবতে ভাবতে পাশে বসে কাজ করতে থাকা কবির শেখকে বলল,

” একটা মেয়ে কী হাওয়ায় মিলিয়ে যেতে পারে কবির? কোথায় পাচ্ছিনা? সম্ভব কীকরে?”

” কেউ লুকিয়ে রেখেছে ওকে।”

সাবলীলভাবে বললেন কবির শেখ। রঞ্জিত চৌধুরী বলল,

” কে?”

কবির শেখ কাজ থামিয়ে দিয়ে বললেন,

” ‘কে’ সেটার চেয়েও বড় প্রশ্ন হচ্ছে ‘কেন?’ কেউ কেন ওকে লুকিয়ে রাখতে চাইবে। আমরা দুজন আর ঐ মেয়েটা ছাড়া এমন কে আছে যে দেড় বছর আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা সম্পর্কে জানে?”

” মাদার আর আর্জু। আর্জুকে তো… তাহলে কী মাদার?”

” আরে না। ঐ বুড়ির এতো ক্ষমতা নেই। যে কাজটা করছে সে খুব শেয়ানা খিলারী। সবটাই জানে কিন্তু কিছুই জানেনা এমন টাইপ। বুদ্ধি না থাকলে একটা মেয়েকে এভাবে লুকিয়ে রাখতে পারতোনা। তবে হ্যাঁ লোকটা কে বা কারা সেটা জানা জরুরী। দেড় বছর আগে যেই খাতা বন্ধ হয়ে গেছিল একবার যদি সেই খাতা খুলে যায়না। পাতালে গিয়ে লুকোলেও আমরা বাঁচতে পারব না। কিন্তু প্রশ্ন হল এই রহস্য সে কীকরে জানে? সে কে?”

রঞ্জিত চৌধুরী চিন্তিত কন্ঠে বলল,

” রিক নয়তো?”

কবির শেখ কাঁচের দেয়াল দিয়ে ওপাশে বসে কাজ করতে থাকা রিকের দিকে তাকিয়ে বলল,

” না। ও বাইরে দিয়ে কঠিন হলেও ভেতর দিয়ে ভীষন আবেগী। সত্যিটা জানলে ও এতো শক্ত থাকতে পারত না। ও এখন ঐ মেয়েকে খোঁজার ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছে করতে দাও।”

” আমরা কী করব?”

” অতীত ঘাটতে হবে। জানতে হবে সেদিনের ঘটনা ওরা ছাড়াও আর কার বা কাদের জানার সম্ভাবনা আছে। আর ঐ বুড়িকেও খুঁজতে হবে এবার। অনেক কিছুই জানে। কোথায় ঘাপটি মেরে বসে আছে কে জানে?”

রঞ্জিত চৌধুরী সম্মতি জানালেন। কবির শেখের ভেতরে ভয় যেকে বসেছে। অনিমা ছাড়া এমন কে আছে যার কাছে ওনাদের সেই রহস্যের খোঁজ আছে যেটা ওনাদের সমূলে বিনাশ করতে যথেষ্ট।

_____________

দেখতে দেখতে তিনটা দিন কেটে গেছে। ঐ দিনের পর অনিমা আর ভার্সিটি যায় নি। কিছুই ভালো লাগছেনা ওর। প্রথম একদিন আদ্রিয়ান অরুমিতার ফোনে কয়েকবার কল করেছিল কিন্তু অনিমা ধরতে দেয়নি। তারপর আদ্রিয়ানও আর ফোন করেনি। আর কোন যোগাযোগের চেষ্টাও করেনি। বিকেলে সোফায় বসে টিভি দেখছে ওরা। অরুমিতা বলল,

” অনি তোর কী মনে হয়না তুই এবার বাড়াবাড়ি করে ফেলছিস?”

স্নেহাও সম্মতি দিয়ে স্নেহাও বলল,

” হ্যাঁ অনি এটা কিন্তু বাড়াবাড়ি হচ্ছে তোর।”

অনিমার ধৈর্য্যের বাদ ভেঙ্গে গেল। রোজই এককথাই বলে ওরা। এবার স্নেহার দিকে তাকিয়ে বলল,

” যদি দেখিস কোন মেয়ে তীব্রর হাত ধরে না রীতিমতো বাহু জড়িয়ে লেপ্টে বসে আছে। আর দুজনেই হাসছে। তোর কেমন লাগবে? তাও বারবার মেয়েটার সাথে আলাদা আলাদা একেকজায়গায় যাবে? কখনও রেস্টুরেন্ট কখন মলে। আরে তোকে কী বলছি? তীব্রর ফোন দুবেলা বিজি পেলেই তো তোর কপাল কুচকে আসে। দূর থেকে দেখে অন্যকে বলা অনেক সহজ হয়। কিন্তু যার সাথে হয় সেই বোঝে।”

স্নেহা চুপ হয়ে গেল। কথাগুলো পুরোপুরি ফেলনা না। অনিমা অরুমিতার দিকে তাকিয়ে বলল,

” আর তুইতো এখনও কাউকে ভালোই বাসিস নি তুই কীকরে বুঝবি?”

অরুমিতার মুখ অন্ধকার হয়ে গেল। বেসেছিল তো একজনকে ভালো। আর নিজের ভালোবাসার মানুষকে অন্যকারো সাথে দেখার কষ্টটা ও জানে। তাই আর কিছুই বলল না।

হঠাৎ দেখল টিভিতে আদ্রিয়ানেরই শো হচ্ছে। অনিমা বিরক্ত হল। নিজেতো দিব্বি হাসি আনন্দ করে শো করে বেড়াচ্ছে। আর কষ্টে গুমরে গুমরে শুধু ও একাই মরছে। এই লোকটার তো কিছুই যায় আসেনা। ঠিক করেছে চলে এসছে। যার কাছে ওর কোন মূল্যে নেই তার কাছে কেন থাকবে? অনিমা রেগে উঠে যেতে নিলেই স্মৃতি নামটা এনাউস করা হল। চমকে উঠল অনিমা। তাকিয়ে দেখল আদ্রিয়ান আর স্মৃতির নতুন ডুয়েট গান ‘ শুধু তোমাকেই ভালোবাসি’ এর লঞ্চিং প্রোগ্রাম চলছে। অনিমা মাথায় এবার ধাক্কা লাগল। তারমানে ওনারা দুজন একসাথে গান গাইবে? সেদিন আদ্রিয়ানের ফোনে বলা, ‘শুধু তোমাকেই ভালোবাসি’ কথাটা অনেকটা রিলেট করতে পারছে। অনিমা তাকিয়ে দেখল আদ্রিয়ানের মুখে হাসি থাকলেও সেটা কৃত্রিম। চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে এই তিনদিনে। অরুমিতা বলল,

” দেখ ওদের গান ছিল। আমার মনে হয় এইজন্যই একসাথে থাকত।”

অনিমা কিছু না বলে বিরক্তি নিয়ে উঠে চলে এলো। মনে এখন একটু হলেই দ্বিধা ঢুকেছে ওর। কিন্তু যদি কাজের জন্যেও একসাথে গিয়ে থাকে। সিঙ্গারদের কাজতো স্টুডিওতে থাকবে। হ্যাঁ গেট টুগেদার বা ফ্যানমিটের জন্যে না হয় রেস্টুরেন্টে আর মলে গিয়েছিল, মেনে নিল। কিন্তু সিঙ্গারদের এমন গেট টুগেদার বা ফ্যানমিটের কথা ও জীবনে শোনেনি যেখানে শুধু দুজন সিঙ্গারই থাকে কোন ডিরেক্টর বা টিমের দরকার হয়না? হ্যাঁ সিনেমার হিরো হিরোয়িনের ক্ষেত্রে প্রমোশন বা ইন্টাভিউতে শুধু লিড দুজনই যায় অনেক সময়। কিন্তু সিঙ্গারদের ক্ষেত্রে তো এমনটা ও কখনও শোনেনি আর দেখেওনি। দূর! কিচ্ছু মেলাতে পারছেনা। আদ্রিয়ান মুখ দেখে এটুকু বুঝে গেছে আদ্রিয়ান কষ্টে আছে ওকে ছাড়া। কিন্তু এতোই যদি ওর প্রতি ভালোবাসা তাহলে স্মৃতির সাথে এতো ঢলাঢলি কীসের?

____________

ভার্সিটি থেকে বেড়িয়ে অনিমা দেখল যে অভ্রর গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে গেইটের সামনে। ও একটু অবাক হল। অনিমাকে দেখে অভ্র এগিয়ে এসে বলল,

” ম্যাম, কিছু কথা আছে অাপনার সাথে। প্লিজ একটু সময় দেবেন। জাস্ট বসে একটু কথা বলব।”

” কিন্তু..”

” ম্যাম প্লিজ। আমি ফ্লাট অবধি ড্রপ করে দেব।”

অভ্র এভাবে বলল যে অনিমা না করতে পারল না। তাই অরুমিতাদের যেতে বলে ও অভ্রর সাথে গাড়িতে বসল।

একটা কফিশপে মুখোমুখি অনিমা আর অভ্র বসে আছে। অনিমা বলল,

” তাড়াতাড়ি বলুন দেরী হচ্ছে আমার।”

অভ্র বলল,

” ম্যাম কাল রাত থেকেই স্যারের ভীষণ জ্বর। পরশু থেকেই শরীর ভালো ছিলোনা। কিন্তু কাল বেশি অসুস্থ হয়ে পরেছে। আসার আগে একশ চার জ্বর চেক করে এসছি।”

অনিমা কেঁপে উঠল। যতই অভিমান থাক ও তো ভালোবাসে ছেলেটাকে। কিন্তু তবুও নিজেকে সামলে বলল,

” ত-তো ডক্টর দেখান, ঔষধ খাওয়ান আমায় কেন বলছেন?”

” আপনি না গেলে স্যার সুস্থ হবেনা ম্যাম। উনি আপনাকে কতটা চায় আপনি ভাবতেও পারবেন না। কাল রাতে জ্বরের ঘোরে আপনার নামই নিচ্ছিল। জাবিন তো সারারাত কেঁদেছে কাল।”

অনিমার কেমন যেন লাগছে, ছুটে যেতে ইচ্ছে করছে আদ্রিয়ানের কাছে। তবুও বলল,

” তা আমাকে কেন ডাকছে? স্মৃতি ম্যাম আছেনা। ওনার গার্লফ্রেন্ড। তাকে ডাকলেই তো হয়।”

অভ্র কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে হঠাৎই হেসে দিয়ে বলল,

” ম্যাম আপনি ওই নিউস দেখে এসব ভাবছেন? তাইতো বলি। আরে সেরকম কিছুই না। ওটা ভুয়া নিউস ছিল। না জেনেই একটা ফটোকে ইস্যু নিয়ে লিখেছে। আপনার তো এসব আগে বোঝার কথা।”

” সেসব বুঝেছি আমি অভ্র। কিন্তু উনি কেন একা কোন মেয়েকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে যাবেন? তারওপর এভাবে হাত জড়িয়ে বসে থাকবেন? যখন উনি জানেন যে মিডিয়ায় লোকেরা এরকম সুযোগই খোঁজে?”

” শুধু স্মৃতি ম্যামকে নিয়ে গেছে এটা আপনাকে কে বলল? ”

” তাহলে?”

” আরে ওই মিউসিক অফিসের সবাই গেছিল। আসলে সেদিন হঠাৎ রেকর্ডিং এর জন্যে স্যারকে ডেকেছিলেন। ওটা দুদিন পর হবার কথা ছিল কিন্তু কোন একটা সমস্যার জন্যে সেদিনই ইমার্জেন্সি করতে হয়। রেকর্ডিং শেষে সবাই মিলে ডিনারে গেছিল। যদিও অনুষ্ঠান ছিল বলে স্যার যেতে চান নি। কিন্তু সবাই নাকি এতো জোর করেছিল যে স্যার সৌজন্যতা রক্ষায় খেয়েছিলেন। রাতে এমনিতেও স্যার বেশি খাননা। কোনরকম খেয়েছিলেন যাতে অনুষ্ঠানে এসেও কিছু খেতে পারে। আর ওনাদের টেবিলে চারজন বসেছিল। বাকি যেদুজন ছিল তারা একটু বাইরে গেছিল। তখন ঐ টেবিলে শুধু স্মৃতি ম্যাম আর স্যার ছিল কিছু নিয়ে কথা বলছিল। স্মৃতি ম্যাম ওনার বেশ কাছের বন্ধু অনেক ফ্রি ওনার সাথে। তাই হয়ত মজা করছিলেন কথা বলার সময় আর ওরা ছবি তুলে নেয়।”

অনিমা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে কী বলবে বুঝতে পারছেনা। অভ্র আবার বলল,

” আর প্রথমদিনতো স্যারকে কনট্রাক্ট সাইন করার জন্যে ডেকেছিল। ডেট টা স্যার ভুলে গেছিল তাই আপনাকে রেডি হতে বলে ফেলেছে ভুলে। দোষটা আমার ছিল। আমিই স্যারকে রিমাইন্ড করাই নি ব্যাপারটা। আর যেই মলে আপনি ওনাদের দুজনকে দেখেছিলেন ওইমলের অপরের তলাতেই তো অফিস। তাই ওখানে থাকা অস্বাভাবিক না।”

অনিমা শুধু তাকিয়ে দেখছে অভ্রকে। অভ্র হেসে বলল,

” তাইতো বলি। স্যার পরশু এটা কেন বলল।”

” ক-কী বলেছে?”

” বলেছে যে, তোমার ম্যাম বড্ড বেশি অবুঝ অভ্র। একদম বাচ্চা। একটুও বোঝেনা আমাকে। একটুও না।”

অনিমা এবার টেবিলে বারি মেরে রাগী গলায় বলল,

” আপনার স্যার ঠিক বলে, আপনি একটা গাধা, ইডিয়ট, আপনি..আপনি একটা স্টুপিড, মাথামোটা, যাচ্ছেতাই!”

অভ্র হা করে তাকিয়ে আছে। আদ্রিয়ানও ওকে এগুলো বলেই বকে। কিন্তু আলাদা আলাদা। এভাবে সবগুলো একসাথে বলে বকেনি। ও অবাক কন্ঠে বলল,

” আমি কী করলাম?”

অনিমা কাঁদোকাঁদো গলায় রেগে বলল,

” চুপ করুন। এই কথাগুলো কদিন আগে বলেন নি কেন হ্যাঁ? এতো লেট করে কেউ? শুধু শুধুই কেঁদে সমুদ্র বানিয়েছি। জানেন এই কদিন ঘুমও হয়নি আমার। সব আপনার জন্যে। আগে আসবেন না!”

অভ্র বোকা বনে গেল। এখন এতেও ওর দোষ? রাগ করবে দুজনে আর যত দোষ বেচারা অভ্রর। তবুও নিজের না জানা ভুল স্বীকার করে অভ্র বলল,

” সরি ম্যাম।”

” রাখুন আপনার সরি। চলুন, বাড়ি যাবো।”

অভ্র বুঝতে পারল কোন বাড়ির কথা বলছে তবুও খোঁচা মেরে বলল,

” অরুমিতাদের বাড়ি?”

অনিমা ঝাড়ি দিয়ে বলল,

” আপনার স্যারের বাড়ি ডাফার!”

অভ্র দ্রুত মাথা নেড়ে বলল ‘আচ্ছা’। তারপর নিজের মনেই হাসল। দোষ থাক বা না থাক। এই বর-বউ দুজনের ঝগড়ায় দিন শেষে ঝাড়িটা ওকেই শুনতে হয়। একেই বলে সোনায় বাঁধানো ঝাড়ি খাওয়া কপাল।

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে