বর্ষণের সেই রাতে- ২ পর্ব-২২+২৩

0
1706

#বর্ষণের সেই রাতে- ২
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

২২.

অাদ্রিয়ানের এরকম রূপ অনিমা এরআগে কোনদিন দেখেনি। আদ্রিয়ানকে খুব শান্ত ছেলে বলেই জানে ও। কিন্তু আজ রবিনকে এভাবে মারতে বলাতে ও হতবাক হয়ে গেছে। রবিনের দিকে তাকিয়ে দেখল ও ভ্রু কুচকে দাঁড়িয়ে আছে। আদ্রিয়ান একটু শক্ত চোখে অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,

” কী হল মারো।”

অনিমা মাথা নিচু করে ফেলল। রবিন এবার বলল,

” দেখুন আপনি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছেন এবার। যেতে দিন আমাকে আমার কাজ আছে।”

আদ্রিয়ান রবিনের কথায় পাত্তা না দিয়ে অনিমার হাত ধরে ঘুরিয়ে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে বলল,

” তোমাকে কিছু বলছি আমি। মারো ওকে। আমি আছি তোমার সাথে। বাকিটা আমি বুঝে নেব।”

অনিমা কিছু বলবে তার আগেই আদ্রিয়ান ধমকের সুরে বলল,

” ওকে ছেড়ে দেওয়ার কথা মুখে আনলে এবার আমি তোমাকে চড় মেরে দেব। সকলের সামনে মিস বিহেভ করেছিল না তোমার সাথে। আর ছেড়ে দেবে ওকে তুমি? ইন্ডিয়ান সিরিয়ালের ন্যাকা টাইপ নাইকা সাজতে ইচ্ছে করছে?”

অনিমার এবার রবিনের ক্যান্টিনের করা বিহেভিয়ার এর দৃশ্যগুলো চোখ ভেসে উঠল। মুহূর্তেই সব ভয়গুলো রাগে পরিণত হল। তাছাড়া এখন তো আদ্রিয়ান আছে ওর পাশে। অনিমা দাঁতে দাঁত চেপে এগিয়ে গিয়ে ঠাটিয়ে একটা চড় বসিয়ে দিল রবিনের গালে। রবিন ক্ষিপ্ত চোখে তাকিয়েছিল কিন্তু আদ্রিয়ান চোখে চোখ পরতেই ওর সব তেজ শেষ হয়ে গেল। নিমেষেই চুপসে গেল। কিন্তু একটা দিয়ে ওর রাগ যেন কিছুতেই মিটলো না অনিমার। তাই আরও তিন চারটা থাপ্পড় মারল। তবুও রাগে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। আদ্রিয়ান বলল,

” রাগ মেটেনি এখনো তাইনা? ওয়েট! হ্যাঁ জুতো খুলো।”

অনিমা অবাক চোখে তাকাল আদ্রিয়ানের দিকে। রবিনও বিস্ফোরিতো চোখে তাকিয়ে আছে। সকলে অবাক হলেও কেউ কিছু বলছেনা বরং নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। অনেকের ইচ্ছে করছে দৃশ্যগুলো ভিডিও করতে কিন্তু গার্ডদের জন্যে কেউ ফোন উপরেও তুলতে পারছেনা। অনিমা অবাক কন্ঠে বলল,

” কী?”

” বাংলায় বলেছি। বোঝনি? জুতো দিয়ে মারো। দেখবে রাগ অনেকটা কমেছে। বিশ্বাস হচ্ছেনা?ট্রায় করে দেখ? কাজ না হলে টাকা ফেরত।”

স্নেহা ফিক করে হেসে দিল। তীব্র আর অরুমিতাও ঠোঁট চেপে হাসছে। অনিমা রবিনের দিকে তাকালো সত্যিই ওর রাগ এখনও কমেনি। তাই আদ্রিয়ানের কথামতো সত্যি সত্যিই জুতো খুলে হাতে নিল। রবিন এবার ভয় পেয়ে গেল। সবার সামনে জুতোপেটা হলে সম্মানের কিছু থাকবেনা। ও যেতেও পারছেনা কারণ গার্ডরা আটকে রেখে দিয়েছে ওকে। কিন্তু কিছু একটা ভেবে অনিমা জুতো ফেলে আবার পায়ে পরে নিল। আর যাই হোক একটা মানুষকে, তাও ওর চেয়ে বয়সে বড় একজনকে জুতো দিয়ে মারতে পারবেনা ও। এমনিতেই কতগুলো চড় মেরেছে। আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে বলল,

” কী হল?”

অনিমা নিচু কন্ঠে বলল,

” আমি পারবনা। যদিও লোকটা যা করেছে তাতে ওর জুতোর বারিই প্রাপ্য কিন্তু আমি নিজেকে এতোটাও নিচে নামাতে পারবনা।”

আদ্রিয়ান মুচকি হাসল। ও জানতো অনিমা এটা করবেনা। এ কয়েকদিনে খুব ভালোভাবে চিনে নিয়েছে ওকে। মেয়েটার এই স্বভাবটাই তো ওকে বেশি টানে। রবিন লজ্জায় মাথা তুলতে পারছেনা। ওকে অনিমা জুতোর বাড়ি না মারলেও কিছু বাকিও রাখেনি। আদ্রিয়ান রবিনের সামনে গিয়ে বলল,

” ইশ! দু গালেই দাগ পরে গেছে। কী সাহস এই মেয়েটার। তোর গায়ে হাত তুলেছে? ভাবা যায়! ”

রবিন চোখ তুলে তাকাল। চোখদুটো লালচে হয়ে আছে। আদ্রিয়ান বলল,

” সেদিন তোকে একটা থাপ্পড় মেরেছিল বলে আজ ওকে আঘাত করেছিস তুমি তাইনা? এখনতো মোট পাঁচটা থাপ্পড় মেরেছে। এবার বদলা নিবি না। তোর সামনেই আছে। ছুঁয়ে দেখা।”

রবিন আবার চোখ নামিয়ে নিল। আদ্রিয়ান রবিনের কলার ধরে টেনে কাছে এনে ধমক দিয়ে বলল,

” কী হল? একটু আগে ক্যান্টিনেতো খুব গায়ের জোর দেখাচ্ছিলি। এখন আমিও তো একটু দেখি তোরে গায়ে কত জোর। যদি ওর গায়ে টাচও করারও সাহস করতে পারিসতো ওকে তোর হাতে ছেড়ে দেব। প্রমিস।”

আদ্রিয়ানের চোখের দিকে তাকালেই প্রচন্ড ভয় পাচ্ছে রবিন। কারণটা নিজেও জানেনা। তাই অনিমাকে ছোঁয়া তো দূরের কথা হাত বাড়ানোরও সাহস দেখাতে পারল না রবিন। আদ্রিয়ান কিছু বলবে তার আগেই অনিমার মাথা ঘুরে উঠল। আদ্রিয়ান সাথেসাথেই ধরে ফেলল ওকে। অরুমিতার দিকে তাকিয়ে বলল,

” ওকে নিয়ে গাড়িতে বসাও আমি আসছি।”

অরুমিতা তাই করল। স্নেহা আর তীব্রও গেল সাথে। আদ্রিয়ান রবিনের দিকে তাকিয়ে এক রহস্যময় হাসি দিয়ে ইশারা করতেই গার্ডরা ওকে ছেড়ে দিল। লজ্জায় অপমানে ওখান থেকে চলে গেল রবিন। আদ্রিয়ান পাশে দাঁড়ানো অভ্রকে উদ্দেশ্য করে বলল,

” বুঝলে অভ্র।”

” জি স্যার?”

” তোমার ম্যাম তো এটাকে ছেড়ে দিল। আসলে ওর মনে দয়ার একটা বিশাল সাগর আছে কি-না। কিন্তু আমার মনে তো পুকুরও নেই। কী করি বলোতো?”

অভ্র বুঝতে পারছে আদ্রিয়ান কী বলতে চাইছে তাই হেসে বলল,

” কখন আনতে হবে স্যার?”

” আজ রাতেই নিয়ে এসো। শুভ কাজে দেরী কীসের?”

বলে সানগ্লাসটা চোখে পরতে পরতে বলল,

” আর হ্যাঁ। আমি বেড়োলেই ওই ইউসলেসগুলো ( মিডিয়ার লোক) ভেতরে এসে কাহিনী শুরু করে দেবে। কিছুতো লিখবেই। যাই লিখুক তোমার ম্যামের নামটাও যাতে লিক না হয়। যত লাগে দিয়ে দাও।”

” আচ্ছা। কিন্তু এই হাইড এন্ড সিক আর কতদিন?”

” চলুক আর কটাদিন। আমি এখনও চাইনা ওর কোন খোঁজ কেউ পাক। আগে আমাকে সবটা ক্লিয়ার হতে হবে এরপর বাকি সব। চলো।”

আদ্রিয়ান গিয়ে গাড়িতে বসল। অরু তীব্র স্নেহা ওদের বিদায় দিয়ে অনিমাকে নিয়ে চলে গেলো ওখান থেকে। অভ্র থেকে গেল বিশেষ কাজে। আদ্রিয়ান বেড়োনোর সাথেসাথেই মিডিয়ার লোকেরা ভেতরে চলে এলো। আদ্রিয়ানের গাড়ির ছবিও তুলেছে কিন্তু গ্লাস লাগানো ছিল তাই কে বা কারা আছে দেখতে পায়নি।

_____________

রাত বারোটা বাজে। একটু আগেই বাড়ি ফিরল আদ্রিয়ান। ফিরে এসে দেখে অনিমা ঘুমোচ্ছে। ওর পাশে জাবিনও ঘুমোচ্ছে। শরীর এমনিতেই ভালো নেই ওর। জাবিনের একহাত অনিমার ওপরে দেওয়া। দেখে মনে হচ্ছে দুই বোন। অনিমার এই গুনটাও ভালো লাগে আদ্রিয়ানের সহজেই সবাইকে আপন করে নিতে পারে। আদ্রিয়ান ওর পাশে বসে গালে হাত দিয়ে দেখছে ওকে। ঘুমন্ত অবস্থায় সকলকেই নিষ্পাপ লাগে। কিন্তু এই মেয়েটাকে একটু বেশিই লাগে, একদম বাচ্চা। যদিও ওকে নিষ্পাপ বললে ভুল হবেনা। বাইরের জগতের এতো জটিলতা বুঝতে চায়না ও। সবকিছুই নিজের মত সরল করে ভেবে নেয়। কষ্ট পেলে বাচ্চাদের মত ঠোঁট ফুলিয়ে কেঁদে দেয়। খুশি হলে খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে। ওর সবটাই তো মায়ায় ভর্তি। তাইতো মায়াবিনী বলে ডাকে ওকে। ফোনের আওয়াজে হুশ এলো আদ্রিয়ানের। তাকিয়ে দেখে রিকের ফোন অনিমার ডিসটার্ভ হবে তাই তাড়াতাড়ি ফোনটা রিসিভ করে বলল,

” কীরে এতো রাতে হঠাৎ ফোন দিলি যে?”

” শুনলাম একটা মেয়ের সাথে মিসবিহেভ করেছিল বলে তুই নাকি কাকে একটা ধোলাই দিয়ে এসছিস? কী ব্যপার? প্রেমে পরেছ?”

” পরতেই পারি! আমি কী ব্রহ্মচারী নাকি?”

রিক হেসে দিয়ে বলল,

” হ্যাঁ হ্যাঁ বুঝে গেছি যা বোঝার। নাম কী মেয়েটার?”

আদ্রিয়ান অনিমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,

” মায়াবিনী।”

রিক ভ্রু কুচকে বলল,

” মায়াবিনী? এটা কারো নাম হয় না-কি?”

” ও তাহলে নীলপরী নাম হয়?”

” ওটাতো আমি ভালোবেসে ডাকি ওকে।”

” আমিও ভালোবেসেই ডাকি। কিন্তু তুই যেমন আমাকে তোর নীলপরীর নাম বলিসনি। আমি কেন আমার মায়াবিনীর নাম বলব?”

” যখন বিয়ে করবি এমনিই জেনে যাব। ছবিতো দেখা ইয়ার।”

” রিস্ক নেব না। যদি প্রেমে পরে যাস?”

রিক হেসে দিয়ে বলল,

” আরে বাঃ ভাই! আমার ডায়লগ আমাকেই?”

” একে রিভেঞ্জ বলে।”

দুই ভাইই হু হা করে কিছুক্ষণ হাসল। হাসি থামিয়ে বলল,

” এবার বিয়েটা করে ফেলনা। ওকে নিয়ে তোর বিয়ে খেতে চলে আসব।”

রিকের মনটা খারাপ হুট করেই খারাপ হয়ে গেল। অনিমার কথা খুব বেশি মনে পরছে। এমন কেন করল মেয়েটা? কেন চলে গেল? ও কী সত্যিই এতোটাই খারাপ? কোথায় খুঁজবে ও ওর নীলপরীকে। এই মুহূর্তে রাগ হচ্ছেনা কষ্টটাই বেশি হচ্ছে। তাই কথা ঘোরাতে বলল,

” মামা জিজ্ঞেস করছিল তোর কথা।”

” ও? কেমন আছে কংস মামা?”

রিক একটু হেসে বলল,

” শুধরালি না। ছোটবেলায় মজা করে বলতাম। কী রেগে যেত মামা। তাইনা?”

আদ্রিয়ান মজা করে বলল,

” হ্যাঁ! এমন মনে হত যেন সত্যিই উনি কংস।আর আমরা দুজন কৃষ্ণ আর বলরাম, ওনার কাল।”

বলে আরও একদফা হেসে নিল দুজন। ব্যাপারটা যেন ভীষণ মজার কিছু। কিন্তু কে বলতে পারে মজা করে বলা এই কথাটা কবে বাস্তবতা হয়ে সামনে এসে দাঁড়ায়।

_____________

সকালবেলা আদিব, রাইমা আর আশিস দেখতে এসছে অনিমাকে। অনিমা এখন সুস্থ কিন্তু আদ্রিয়ান ওকে নামতে দেয়নি তাই রুমেই বসেছে ওরা। অনিমা রাইমার সাথে কথা বলছে। ওর সামনে আদিব, আশিস আর অভ্র বসে আছে। আদ্রিয়ান কিছুক্ষণের জন্যে একটু বেড়িয়েছে। জাবিন এসে সবাইকে কফি দিল। অভ্র কফিটা ও হাতে আওয়াজ করে টেবিলে রাখল। অভ্র ভ্রু কুচকে তাকাতেই জাবিন একটা ভেংচি কাটল। অভ্র ফু দেওয়ার স্টাইলে একটা শ্বাস ফেলল। মেয়েটা এমন বিচ্ছু কেন? তবুও পাত্তা না দিয়ে কফির মগটা নিল। জাবিনের ভালো লাগেনা আর এসব কী হয় একটু ওর দিকে তাকলে। মুচকি হাসলে। পরক্ষণেই নিজেই নিজেকে বকে ও এমন উদ্ভট চিন্তার জন্যে। আশিস বলল,

” ভাবি এখন সব ঠিক আছেতো?”

অনিমা ভ্রু কুচকে বলল,

” সবসময় আমায় ভাবী ভাবী করেন ভাবি। আপনার কোন ভাইয়ের বউ আমি?”

আদিব বলল,

” আদ্রিয়ান যেভাবে চব্বিশ ঘন্টায় বাহাত্তর বার তোমাকে বউ বউ বলে ডাকে ভাবী না বলে উপায় আছে?”

অনিমা অবাক হয়ে গেল। আদ্রিয়ান ওকে বউ বলে? তাও সবার সামনে? কই ওর সামনেতো বলেনা। তাই অবাক কন্ঠেই বলল,

” কী?”

আশিস বলল,

” হ্যাঁ। আমাকেতো শুরুতেই ওয়ার্ন করে দিয়েছিল যাতে তোমার দিকে না তাকাই। ভাবো!”

অনিমা আরও অবাক হল। তখন আদ্রিয়ানের ফোন এল। ও আদিব আর আশিসকে একটু যেতে বলল। তাই ওরা চলে গেল। জাবিন ব্রেকফাস্ট হয়েছে কি-না দেখতে গেল ওর সাথে রাইমাও গেল। ওখানে শুধু অভ্র আছে। এরমধ্যেই অনিমার ফোন বেজে উঠল। ফোনে কথা বলে অনিমা আরও অবাক হল। অভ্র বলল,

” কী হয়েছে ম্যাম?”

” রবিন নাকি হসপিটালে ভর্তি। অবস্থা খুব খারাপ”

” এটাতো হতোই। সেদিন বৃষ্টির রাতে জাস্ট আপনার ওড়না ধরেছে বলে ছেলেগুলার যা অবস্থা করেছে। যেখানে ওকেযে বাঁচিয়ে রেখেছে এটাই ওর ভাগ্য।”

অনিমা এবার বিষ্ফোরিত চোখে তাকিয়ে বলল,

” কী?”

” হ্যাঁ সেদিন আপনাকে বেড় করে দিয়ে স্যারওতো এসছিলেন আপনার পেছন পেছন। আমার বেচারা ঘুমটাও ভাঙিয়েছে। কী আরামের ঘুম দিচ্ছিলাম। যাই হোক আপনি বসুন আমি আসছি।”

বলে অভ্র চলে গেল। অনিমা থ মেরে বসে আছে? কী বলে গেল ওরা? আদ্রিয়ান ওকে বউ বলে? ওর জন্য সেদিন ছেলেগুলাকে মেরেছে? আজ যা করেছে তা তো ও চোখেই দেখেছে। এরমানে তো একটাই যে আদ্রিয়ানও ওকে ভালোবাসে। সত্যিই তাই? আদ্রিয়ান ভালোবাসে ওকে? আদ্রিয়ান? ভাবতেই কেমন খুশি খুশি লাগছে ওর।

#চলবে…

#বর্ষণের সেই রাতে- ২
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

২৩.

ড্রয়িংরুমে মোটামুটি একটা আড্ডার আসর বসে গেছে। কারণ অনিমাকে দেখতে তীব্র, স্নেহা আর অরুমিতাও এসছে। কিন্তু আশিসকে দেখেই অরুমিতার মন খারাপ হয়ে গেল। নিজের ওপরই ভীষণ রাগ হয় ওর। ও যখনই আসে তখনই আসতে হয় ছেলেটাকে। কিন্তু কী আর করার? বাড়িটাতো ওর নয় আদ্রিয়ানের। তাই চুপচাপ হজম করতে হচ্ছে। আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে আশিস অরুমিতাকে দেখছে ঠিকই কিন্তু অরুমিতা তাকাচ্ছেও না। অনিমাতো এখনো নিচে নামেনি। ওর জন্যেই অপেক্ষা করছে সবাই। অভ্র ছাদ থেকে নামছিল তখন দেখল অনিমাও ড্রয়িং রুমের উদ্দেশ্য বেড়িয়েছে। অভ্র অনিমাকে দেখে মুচকি হাসল। উত্তরে অনিমাও ওর টোল পরা মিষ্টি হাসিটা উপহার দিল। ওদের মুখে আদ্রিয়ানের কর্মকাণ্ড শোনার পর থেকে ওর মন এমনিতেই বেশ ফুরফুরে হয়ে আছে। দুজনেই পাশাপাশি হাটছে। অনিমা একটু গলা ঝেড়ে বলল,

” আচ্ছা সেদিন ঝড়ের রাতে আপনার স্যার সত্যিই আমার পেছন পেছন এসছিল?”

অভ্র হেসে বলল,

” হ্যাঁ তো! এতো রাতে স্যার একা ছাড়বে?তাও আপনাকে? হয় নাকি?”

” ঐ ছেলেগুলার সাথে কী করেছে আপনার স্যার?”

” সবগুলোকে ইচ্ছেমতো পিটিয়েছে। এতোটাই মেরেছে যে ওদের কারোরই মিনিমাম একমাসের মধ্যে স্বাভাবিক জীবনে ফিরার চান্স ছিলোনা।”

” শুধু আমাকে একটু টিজ করেছে বলে এভাবে মারল?”

” হ্যাঁ মারলো তো!”

অনিমা বেশ অবাক হচ্ছে। এবার বুঝতে পারছে সেদিন রাতে আদ্রিয়ান শাওয়ার নিয়েছিল কেন। একটু একটু করে সবটাই ক্লিয়ার হয়ে যাচ্ছে। হুহ! সেদিন কী ভাবটাই না দেখিয়েছিল। অভ্র বলল,

” একটা ছেলের তো এসিড দিয়ে মুখ পুড়িয়ে দিয়েছে। ঐযে আপনার ওড়না দিয়ে মুখ মুছেছিল যে তার।”

অনিমা থ মেরে দাঁড়িয়ে গেল, অবাক কন্ঠে বলল,

” কী?”

অভ্র একটু চমকে উঠল। তারপর মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল,

” শুধুই মেরেছে এসিড-ঠেসিড মারে নি।”

কথাটা শুনে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল অনিমা। ও তো ভয় পেয়ে গেছিল। আদ্রিয়ান আর যাই হোক, ভয়ংকর নিশ্চয়ই না। হওয়া উচিতও না। ছেলেগুলাকে একটু মারধোরই করেছে, এটুকু করতেই পারে। হুট করে কেউ এতটাও হিংস্র হতে পারেনা যদিনা আগের অভ্যেস থাকে। এডিসের কথাটা নিশ্চিয়ই অভ্র মজা করেই বলেছে। এসব ভাবতে ভাবতেই অভ্র আর অনিমা দুজনেই একসাথে নিচে নামল। আদ্রিয়ান তীব্রদের সাথে কথা বলছিল। অনিমাকে দেখে থেমে গেল। অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে তাকাতেই আদ্রিয়ান চোখ সরিয়ে নিল। অনিমা নিজের মনেই হালকা একটু হেসে নিল। অরুমিতা বলল,

” শুনলাম নাকি ঐ ম্যামকে ভার্সিটি থেকে বেড় করে দেওয়া হয়েছে। হয়তো এই শহরে কোথাও আর চাকরিও পাবেনা”

অনিমা অবাক হয়ে আদ্রিয়ানের দিকে তাকালো। কিন্তু আদ্রিয়ান এমন একটা ভাব করল যেন কিছুই হয়নি। সবটাই স্বাভাবিক। তাই কেউ আর এই বিষয়ে কোন কথা বাড়ালো না। কিছুক্ষণ গল্প করার পর সবাই নাস্তা করে নিল। অরুমিতা ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়িয়ে খোলা হাওয়া উপভোগ করছিল এমন সময় ওর পাশে এসে আশিস দাঁড়ালো। অরুমিতা খেয়াল করেনি। আশিস কিছুক্ষণ অরুমিতার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,

” কেমন আছো?”

ডাকটা শুনে হালকা কেঁপে উঠল ও। দ্রুত তাকিয়ে দেখল আশিস দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে অরুমিতা মুখে মুচকি হাসি টেনে বলল,

” বেশ ভালো আছি। আপনি?”

” ভালো।”

” থাকারই কথা।”

” মেসেজের রিপ্লেও দেওনি।”

” অপরিচিতদের মেসেজ রিপ্লে করিনা। এই অভ্যেস এখনও আছে।”

বলে অরুমিতা পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে আশিস বলল,

” এতো রুড? কবে থেকে হলে?”

অরুমিতা তাচ্ছিল্যের এক হাসি দিয়ে বলল,

” তিন বছর কেটে গেছে। একটা মানুষ সারাজীবন একইরকম থাকবে সেটা ভাবাও তো বোকামি হবে তাইনা? যেখানে মানুষ ছ-মাসেই ঘোল পালটে ফেলতে পারে সেখানে তিন বছর তো অনেকটা সময়।”

” খোঁচা মারছ?”

” যেটা মনে করেন।”

বলে ওখান থেকে হনহনে পায়ে চলে এলো অরুমিতা ঐ ছেলেটাকে ওর সহ্য হয়না। একদম না। আশিস ঠায় দাঁড়িয়ে ভাবছে অরুমিতার পরিবর্তন নিয়ে। এই দুবারে ও চাতক পাখির মত তাকিয়ে অাগের অরুমিতাকে খুঁজছিল কিন্তু পায় নি। সত্যিই কী তবে বদলে গেছে মেয়েটা? গেলেও ওর তাতে কী? ওর তো যায় আসার কথা না? তবে এই শূন্যতা কীসের?

বিকেলে ছাদে শূন্য আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে অনিমা। কিছুই ভালো লাগছেনা ওর। ও লুকিয়ে থেকে ভুল করছে? ওকে খুঁজতে গিয়ে যদি ওরা মাদারের খোঁজ পেয়ে যায়? ওনাকেও তো মেরে ফেলবে ওনারা যেভাবে আর্জুকে মেরে ফেলেছিল। ওর জন্যে আবার কারো প্রাণ যাক ও চায়না। মৃত্যুর যে ভয়ংকর খেলা ও ওর চোখের সামনে হতে দেখেছে তার পুনরাবৃত্তি চায়না ও। কিন্তু কী করবে ও? এতোদিন এক প্রকার সব ভুলেই গেছিল, আদ্রিয়ানকে নিয়েও স্বপ্ন দেখতে শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু ওর অতীত কী ওকে ছাড়বে? পুরনো কথা মনে পরতেই মাথা হালকা ব্যাথা করে উঠল ওর। চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে নিল। দুটো শ্বাস নিয়ে সব মাথা থেকে ঝেড়ে ঠিক হয়ে দাঁড়ালে। তখনই পেছন থেকে কেউ বলে উঠল,

” ঔষধ খেয়েছ দুপূরে?”

অনিমা পেছনে তাকিয়ে দেখল আদ্রিয়ান দাঁড়িয়ে আছে। ও মাথা নেড়ে বলল ‘না’। আদ্রিয়ান বলল,

” হ্যাঁ সেটা ঔষধ চেক করেই বুঝেছি।”

বলে অনিমা হাতে তিনটে ঔষধ আর পানির বোতল ধরিয়ে দিল। তারপর বলল,

” এরকম অনিয়ম কেন কর? সবসময় কী আমি বাড়িতে থাকি তোমাকে মনে করাতে? নিজের একটু যত্ন নিলে কী হয়?”

” আচ্ছা আমি এখনও ঔষধ কেন খাচ্ছি? আমিতো ঠিকই আছি।”

আদ্রিয়ান চোখ ছোট ছোট করে বলল,

” আর ইউ ডক্টর?”

অনিমা মুখ ছোট করে ঔষধ খেয়ে নিল। আদ্রিয়ান বলল,

” পুরনো সবকথা এখন মনে পরে তোমার?

অনিমা একটু ভাবুক হয়ে বলল,

” হ্যাঁ! পরেতো সবটাই মনে পরে কিন্তু সেগুলো নিয়ে ভাবতে গেলেই মাথাটা ব্যাথা করে।”

” ভাবতে হবে না জাস্ট রিল্যাক্স কর আপাতত।”

” হুম।”

হঠাৎ করেই আদ্রিয়ান একটানে অনিমাকে ওর কাছে নিয়ে এল। অনিমা চোখ বড় বড় করে তাকাল আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান অনিমার কপালের চুল সরিয়ে দিয়ে বলল,

” একয়দিন এভাবে ইগনোর করেছ কেন আমাকে? জানো কত কষ্ট হচ্ছিলো? মজা লাগে আমাকে কষ্ট দিতে। আমাকে যন্ত্রণায় ছটফট করাতে, তোমার অবহেলায় ক্ষতবিক্ষত করতে। এভাবে পোড়াতে, জ্বালাতে ভালো লাগে তাইনা?”

অনিমা মাথা নিচু করে ফেলল। আদ্রিয়ান নিজের সাথে মিশিয়ে রেখেছে ওকে। লজ্জায় তাকাতে পারছেনা আদ্রিয়ানের দিকে। কীকরে তাকাবে? কীকরে বলবে আদ্রিয়ানকে যে, আমায় ফেলে ঐ স্মৃতি-ফৃতির কাছে গেছিলেন বলেই তো আমি রেগে গেছিলাম। কেন বোঝেন না আপনাকে আমি অন্যকারো পাশে দেখতে পারিনা, আপনার পাশে অন্যকেউ থাকলে আমার বুকে ব্যাথা হয়, ঐ জায়গাটা তো আমার তাই না? শুধুই আমার। কিন্তু মনের কথা মনেই রয়ে গেল অনিমার, মুখে আনতে পারল না। আদ্রিয়ান অনিমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বলল,

” অভিমান, অভিযোগ মনে যাই থাক তার উত্তর মোটেও অবহেলা হতে পারেনা। একবার নিজের বলে দাবি করেই দেখো না? নিজের সবটা তোমার নামে লিখে দেব। সবটা মানে বুঝতে পারছ তো? সবটাই কিন্তু..”

অনিমা এতোটাই লজ্জা পেলো যে ও আদ্রিয়ানকে ছাড়িয়ে দৌড়ে চলে এলো ওখান থেকে। নিচে এসে বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগল। এভাবে বলতে হয়? ওর বুঝি লজ্জা করেনা? কীভাবে বলল যে ‘সবটা মানে বুঝতে পারছ তো? সবটাই কিন্তু..’। অনিমা দুহাতে নিজের মুখ ঢেকে নিলো। ইশ! কী লজ্জা!

_____________

মেডিকেল থেকে বেড়িয়ে বাইরে কিছক্ষণ এপাশ ওপাশ চোখ বুলিয়ে হতাশ হল স্নিগ্ধা। এতোবার করে রিককে বলল ওকে আজ এসে নিয়ে যেতে, কিন্তু এলোনা? আচ্ছা অনিমা বললে কী এভাবে না এসে থাকতে পারত? নিশ্চয়ই না? বরং এক ঘন্টা আগে এসে দাঁড়িয়ে থাকত। নীলপরী বলে কথা। ও তো শুধুই বন্ধু। আচ্ছা ওর ইদানিং এরকম ফিল হয় কেন রিক ওকে ইগনোর করলে? বারবার অনিমার সাথে নিজেকে কম্পেয়ার করে ফেলে কেন? আগে তো এমন হত না। মন খারাপ করে একটা সিএনজি ডাকতে যাবে তখনই ওর সামনে একটা গাড়ি এসে থামল। দেখেই বুঝতে পারল রিকের গাড়ি। রিক মাথা বেড় করে বলল,

” ওয়ে ড্রামাকুইন, তাড়াতাড়ি আয়।”

রিক আজ রেড একটা টিশার্ট পরেছে। তারওপর চোখে কালো সানগ্লাস। ফর্সা গায়ে বেশ মানিয়েছে। স্নিগ্ধা দ্রুত গিয়ে উঠে বসল। রিক গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে বলল,

” হঠাৎ আমাকে ডাকলি কেন? বাচ্চা তুই? একা যেতে পারিসনা?”

” কেন? তোমার নীলপরী কী বাচ্চা ছিল? ওকেতো রোজ ড্রপ করে দিতে? নিয়েও আসতে!”

রিক ভ্রু কুচকে বলল,

” কী ব্যাপার বলতো? আজকাল ওর সাথে নিজেকে এভাবে কম্পেয়ার করছিস কেন? তুই আর ও এক হলি?”

স্নিগ্ধা তাচ্ছিল্যের এক হাসি দিয়ে বলল,

” সেইতো!”

রিক কথা বাড়ালোনা কিছুক্ষণ পর হঠাৎ করেই স্নিগ্ধা চেঁচিয়ে উঠল,

” রিক দা গাড়ি থামাও!”

” কেন?”

” থামাও না প্লিজ।”

রিক গাড়ি থামিয়ে বিরক্তি নিয়ে বলল,

” কী হয়েছে?”

” ফুচকা খাবো।”

” এখন?”

” হ্যাঁ প্লিজ।”

রিকের উত্তরের আশা না করেই স্নিগ্ধা নেমে গেল। রিক বাধ্য হয়ে নেমে পেছন পেছন গেলো। গিয়ে দেখে স্নিগ্ধা অলরেডি ওর্ডার করে ফেলেছে। রিককে খেতে বললে রিক না করে দিল। স্নিগ্ধা জোর করেনি। ফুচকা দেওয়ার পর কোনকিছু না ভেবেই খেতে শুরু করল। আশেপাশে যা ইচ্ছে হোক। রিক একদৃষ্টিতে স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে অনিমার কথা ভাবছে। শুরুর দিকে ওর নীলপরীও ওর কাছে ফুচকা খাওয়ার বায়না করত। আশেপাশে না তাকিয়ে একমনে খেতে থাকত। মাঝেমাঝে রিককে সাধত, রিক যখন না করত, তখন কিউট স্টাইলে একটা ভেংচি দিতো। বলত,

” ভালো জিনিসগুলো মিস করো। ডক্টর হয়ে এতো সাস্থ্যকর খাবার কেউ কীকরে রিজেক্ট করে?”

রিক শুধু হাসত অনিমার অদ্ভুত কথায়। আর প্রাণভরে ওর নীলপরীকে দেখত। কিন্তু হঠাৎ সব এলোমেলো হয়ে গেল। অজানা কারণেই অনিমা ওর সাথে আগের মত বন্ধুর মত মেশা বন্ধ করে দিল। ওকে ভয় পেতে শুরু করল, মাঝে মাঝে খারাপ ব্যবহারও করত। রিক কিছুই বুঝতে পারত না। এমন কেন করছে মেয়েটা? ওর দোষ কোথায়? জিজ্ঞেস করবে সেই সুযোগও পায়নি অনিমা কথাই বলতে চাইত না। একপর্যায়ে রিকের ধৈর্য্যের বাধ ভেঙ্গে গেল তাই অনিমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে ফেলত রাগের বসে, গায়ে হাতও তুলে ফেলতো। মেয়েটার হঠাৎ পরিবর্তন রাগীয়ে দিতো ওকে। আর এভাবেই আস্তে আস্তে দূরে সরে গেল ওর নীলপরী ওর কাছ থেকে, অনেক দূরে। স্নিগ্ধাও একই ভঙ্গিতে ফুচকা খাচ্ছে। হঠাৎ নিজের ওপরই বিরক্ত হলো রিক। অন্যকারো মধ্যে ও ওর নীলপরীকে কেনো খুঁজছে? এটা ও করতে পারেনা। নীলপরীর জায়গা ও অন্যকাউকে দেবেনা, কাউকেনা।

_____________

ভার্সিটি থেকে বেড়িয়ে শপিং এ যাবে বলেই ঠিক করেছে অনিমারা। আসলে আজ আদিবের বাড়িতে একটা ছোট্ট গেট টুগেদারের আয়োজন করা হয়েছে। সামনে রাইমাদের বাড়ির লোক ইউএসএ থেকে চলে এসছে। তাই আজ রাতে একটু খাওয়াদাওয়া হবে আরকি। ওখানে যাওয়ার জন্যেই কিছু জিনিস কিনবে ওরা। তীব্র আর স্নেহা যথারীতি ঝগড়া করতে করতে আসছে। অনিমাও আটকাচ্ছেনা আজ। আটকাতে আটকাতে ক্লান্ত ও। শপিং মলে গাড়ি থেকে নেমে আদ্রিয়ানকে ফোন করল অনিমা। ওরও আসার কথা আছে। তাইতো অনিমা এতো এক্সাইটেড। আজ প্রথম আদ্রিয়ানের সাথে শপিং করবে ভাবতেই খুশি খুশি লাগছে। কিন্তু কয়েকবার ফোন করার পরেও আদ্রিয়ান ফোনটা ধরল না। পাঁচ মিনিট পর মেসেজ এলো, “অনি তোমার কাছে কার্ড আছে না? ওটা দিয়ে শপিং করে নাও । আমি একটু আটকে গেছি কাজে। আসতে পারছিনা। সরি হ্যাঁ? প্লিজ রাগ করোনা।” অনিমার মনটাই খারাপ হয়ে গেল। কত কী ভেবেছিল। ভেবেছিল আদ্রিয়ানের পছন্দের সব জিনিস কিনে আদ্রিয়ানের মনের মত করে আজ সাজবে। কিন্তু লোকটা এলোই না। কি এমন কাজ? আবার ঐ স্মৃতির কাছে যায়নি তো? দূর কী ভাবছে? সেদিন না হয় দরকারে একসাথে ছিল, আজ থাকবেনা নিশ্চয়ই। স্মৃতিতো ওনার গার্লফ্রেন্ড না। উনি তো শুধু ওকে ভালোবাসে। সেলিব্রিটি মানুষ ব্যস্ত হতেই পারে। ওই বেশি ভাবছে। ওরা নিজেরাই গেল শপিং করতে শপিং এর সময় অনিমা খেয়াল করেছে অরুমিতা মাঝেমাঝে অন্যমনষ্ক হয়ে যায়। অনিমা জিজ্ঞেস করেছিল কী হয়েছে কিন্তু অরু শুধু হেসে বলেছে কিছুনা।

রাতে আদিবদের বাড়িতে আদ্রিয়ান বেশ দেরীতেই এলো। অনিমাকে অভ্র নিয়ে এসছে। অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে তাকাতেই ও এককানে হাত দিয়ে ঘাড় বাঁকা করে কিউট স্টাইলে ফিসফিসে আওয়াজে সরি বলল। অনিমাও হেসে দিল। আদ্রিয়ান শুধু মিষ্টি আর কোলড্রিংক খেল কারণ ও নাকি খেয়ে এসছে। অনিমা মুখে না বললেও মন খারাপ করল। এমন কোথায় ছিল যে অনুষ্ঠান আছে জেনেও খেয়ে এলো? খাওয়াদাওয়া শেষে সবাই মিলে আড্ডা দিতে বসল তখন একটা খেলা হল। সবাইকেই গান গাইতে হবে। গানের নামের লেখা কাগজে যেই গানটা থাকবে সেটাই গাইতে হব। অনিমার ভাগ্যে ‘রাবতা’ গানটাই পরল। গিটার বাজানোর দায়িত্ব আদ্রিয়ানই পেল। অনিমা লাজুক ভঙ্গিতে আদ্রিয়ানের দিকে একপলক তাকিয়ে গাইতে শুরু করল,

” কেহতে হ্যাঁ খুদাতে ইস জাহামে সাবহিকে লিয়ে
কিসিনা কিসিকো বানায়া হার কিসিকে লিয়ে
তেরা মিলনা হ্যাঁ উস রাবকা ইশারা মানু
মুঝকো বানায়া তেরে যেসেইহি কিসিকে লিয়ে
কুছতো হ্যাঁ তুঝছে রাবতা,
কুছতো হ্যাঁ তুঝছে রাবতা
কিউ হ্যাঁ ইয়ে কেসে হ্যাঁ ইয়ে তু বাতা
কুছতো হ্যাঁ তুঝছে রাবতা
তু হামসাফার হ্যাঁ তো কেয়া ফিকার হ্যাঁ?
জিনেকি ওয়াজা এহি হ্যাঁ ;মারনা ইসিকে লিয়ে
কেহতে হ্যাঁ খুদানে ইস জাহামে সাবিহিকে লিয়ে কিসিনা কিসিকো হ্যাঁ বানায়া হার কিসিকে লিয়ে

তখনই আদ্রিয়ান গেয়ে উঠল,

মেহেরবানি যাতে যাতে মুঝপে কার গ্যায়া
গুজারতাছা লাম্হা ইক তামান ভার গ্যায়া
তেরা নাজারা মিলা, রোশান সীতারা মিলা
তাকদির কী কাসতিও কো কিনারা মিলা

আদ্রিয়ান অনিমার দিকে তাকিয়েই গাইছিল। সবাইতো অনিমাদের দিকে তাকিয়ে মিটমিটিয়ে হাসছিল। গান শেষ হতেই সবাই জোরে হাততালি দিয়ে উঠল। অনিমাতো লজ্জায় শেষ। এই ছেলেকে ওর সাথে খান ধরতে কে বলেছিল? দূর! কী লজ্জায় ফেলল ওকে।

তবে অনিমা যে এতো ভালো গানও জানে সেটা দেখে আদ্রিয়ান সহ সবাই অবাক হয়েছে।

____________

ব্রেক টাইমে ক্যান্টিনে বসে খেতে খেতে গল্প করছিল অনিমা, অরুমিতা, তীব্র, স্নেহা। কিন্তু সবাই কিছু একটা নিয়ে গসিপিং করছে। ধীরে ধীরে সেটা বারছে। ওরা কিছুই বুঝছেনা। তীব্র একজনকে ডেকে বলল,

” কী হয়েছে? সবাই কী নিয়ে এতো কথা বলছে?”

” তোমরা পেপার পড়োনি। সিঙ্গার এডিকে নিয়েতো দারুণ নিউস বেড়িয়েছে। অনির তো জানার কথা। আদ্রিয়ান তো ওর আত্মীয় না?”

বলে চলে গেল। আদ্রিয়ানের নাম শুনে অনিমা দ্রুত উঠে গিয়ে পেপার নিয়ে এলো। পেপার খুলে ফ্রন্ট পেজে হেডলাইন আর ফটো দেখেই অনিমার বুক কেঁপে উঠল। নিশ্বাস ভারী লাগছে। তবুও নিজেকে সামলে ভেতরের পেজে গিয়ে থমকে গেল। চোখে অশ্রু এসে ভীর করল। লোকে ঠিকই বলে সেলিব্রিটিরা কখনও একজনের হয়না, কখনও না।

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে