বউ Part- 3

0
1563

Story: #বউ
Part- 3
writer: #Nur_Nafisa
.
.
(নাফিসা সারাদিন রুবিনার সাথে গল্প করে একদিনেই ভালো ভাব জমিয়ে ফেলেছে। রিয়াদ স্কুল থেকে ফিরলে তার সাথে খেলায় মেতে উঠে।)
নাফিসা- এই মটো, চলো তোমাদের পুরো বাড়ি ঘুরে দেখি।
রিয়াদ- আমি মটো!?
নাফিসা- ? তুমি তো একেবারে গুলো মুলো একটা। মটো নামে পারফেক্ট লাগবে ?
রিয়াদ- আম্মু….. দেখো ভাবি কি বলে আমাকে! ?
রুবিনা- দুষ্টুমি বন্ধ করে এদিকে এসে লাঞ্চ করে নাও নাফিসা।
নাফিসা- নো…. আমাকে #বউ ডাকবে..
রুবিনা- আচ্ছা বউ মা ডাকবো ?
রিয়াদ- হিহিহিহিহি…… ? বউ আবার মা!
নাফিসা- ?
(লাঞ্চ করে রিয়াদ কে সাথে নিয়ে পুরো বাড়িটা ই ঘুরে দেখতে লাগলো। বাড়িটা দেখতে পুরো ছোট খাট একটা প্রাসাদ ই মনে হচ্ছে নাফিসার কাছে। প্রতিটা রুমেরই একটা করে বারান্দা আছে। মাঝে গ্লাসের পার্টিশন।)
নাফিসা- চলো ছাদে যাই…. ?
রিয়াদ- এখন ছাদে গেলে আম্মু বকা দিবে।
নাফিসা- তাই নাকি! তাহলে তো আরও বেশি মজা হবে! ?
রিয়াদ- মানে!?
নাফিসা- লুকিয়ে লুকিয়ে যাবো ?
রিয়াদ- না….
নাফিসা- দূর! চলো চলো চলো….
(রিয়াদকে ও টেনে ছাদে যেতে লাগলো)
.
নাফিসা- এই ফ্লোরগুলোতে কেউ থাকে না?
.
রিয়াদ- না।
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
নাফিসা- কেন? তাহলে এতো বড় বাড়ি করার কি প্রয়োজন?
.
রিয়াদ- এটা আমাদের নতুন বাসা। এই ফ্ল্যাট গুলো ভাড়া দেয়া হবে।
.
নাফিসা- অহ! আচ্ছা। এতো বড় ছাদ এভাবে ফেলে রেখেছো কেন! বাগান করতে পারো এখানে, তাছাড়া একটা দোলনা ও রাখো নি।
.
রিয়াদ- এখানে কিছু করলে তো ভাড়াটিয়ারা সব নষ্ট করে দিবে। আমাদের বাগান ও আছে দোলনা ও আছে।
.
নাফিসা- কোথায়?
.
রিয়াদ- এদিকে আসো।
.
(রিয়াদ নাফিসাকে ছাদের কর্ণারে রেলিং এর পাশে নিয়ে এলো)
রিয়াদ- ওই যে নিচে দেখো।
.
নাফিসা- ওয়াও? এতো বড় বাগান ! তাহলে আর শুধু শুধু ছাদে এলাম কেন! চলো চলো নিচে যাই…….
.
(আবার দৌড়ে নিচে এলো। দাড়োয়ান গেইট থেকে দেখেই অবাক! এইডা কি আসলেই বাড়ির বউ! এমন গেঞ্জি আর প্যান্ট পইড়া ঘুরে বউরা! নাফিসা বাগান দেখতে লাগলো। আর রিয়াদ পানির পাইপ নিয়ে ফুলের গাছ গুলোতে পানি দিতে লাগলো।)
নাফিসা- এই মটো, পাইপ দাও আমার কাছে….
রিয়াদ- আমাকে মটো বলো কেন! ? দাড়াও….
(রিয়াদ পাইপের পানি দিয়ে নাফিসাকে ভিজিয়ে দিতে লাগলো)
নাফিসা- ? মাত্র ক্লাস 2 তে পরো, দুষ্টু তো কম না তুমি!

.
রিয়াদ- আমি ক্লাস 5 এ পরি?
.
নাফিসা- really! ? দেখে তো মনে হচ্ছে 2 এর বাচ্চা! এবার দেখো আমি কতো দুষ্ট।
.
(নাফিসা রিয়াদের কাছ থেকে পাইপ নিয়ে রিয়াদকে ভিজিয়ে দিলো। দুজনেই অনেক্ক্ষণ ভিজে গোসল করে বাসায় ফিরে এলো। রুবিনা দেখে চোখ কপালে! কিছুক্ষণ আগে মাত্র গোসল করলো, এখন আবার বাইরে থেকে গোসল করে এসেছে! দুজনকেই ইচ্ছে মতো বকা শুরু করলো। বকা আর শুনে কে! দুজনেই দ্রুত যার যার রুমে এসে চেঞ্জ করে নিলো। বিকেলে নাফিসা রিয়াদকে সাথে নিয়ে আবার নিচে এসে ক্রিকেট খেলতে লাগলো। রিয়াদের ভালোই হলো। একজন খেলার সাথি পেল। বাসায় একা একা কারো সাথে খেলতে পারে না। শুধু মাত্র ছুটির দিনে ভাইয়া আর বাবাকে পায় খেলার জন্য। রুবিনা ও একা একা ঘরে না থেকে তাদের সাথে নিচে নেমে এলো। দোলনায় বসে তাদের খেলা দেখছে।)
.
রিয়াদ- ওয়াও, ভাবি তুমি পাক্কা খেলোয়াড়! আব্বু ও পারে না তোমার মতো। আর ভাইয়া পারে কিন্তু আমার সাথে খেলতে চায়না, আমি নাকি পারিনা!
.
নাফিসা- আচ্ছা, তোমাকে ও পাক্কা খেলোয়াড় বানিয়ে দেব। শাশুড়ি আম্মু আসো না তুমিও।
.
রুবিনা- আমি!? না না, আমি এসব খেলবো না। তোমরাই খেল…
.
নাফিসা- কেন! আমার আম্মু ও তো খেলে আমাদের সাথে।
.
রুবিনা- ? তোমার আম্মুর মতো আমার এতো এনার্জি নেই!
.
নাফিসা- এভাবে বসে থাকলে এনার্জি আসবে কিভাবে! ?
.
রুবিনা- হাহাহা… ? ঠিকই বলেছো।
.
(কথা বলতে বলতে নাফিসা বল নিতে গিয়েছিল। এমনি তার একদম কাছে গাড়ি এসে ব্রেক করলো।)
.
নাফিসা- আয়ায়ায়ায়া….
.
( সবাই ভয় পেয়ে গেছে, আর গাড়ির ভেতর থেকে, রেহান রেগেমেগে তাকিয়ে আছে। এখনি বড় একটা দুর্ঘটনা ঘটে যেত। রায়হান সাহেব গাড়ি থেকে দ্রুত নেমে নাফিসার কাছে এলো, রুবিনা ও রিয়াদও।)
.
রায়হান- ব্যাথা পেয়েছ?
.
নাফিসা- নাহ! রিয়াদ ব্যাট দাও তো, ড্রাইভার এর আজ খবর নিয়ে ছাড়বো? দেখে গাড়ি চালাতে পারে না!
.
রুবিনা- ?
রায়হান-?
রিয়াদ- হাহাহা ? ড্রাইভার!
.
(নাফিসা ব্যাট নিয়ে তেড়ে ড্রাইভিং সিটের দরজার পাশে যেতেই রেহান বেরিয়ে এলো। নাফিসা রেহানকে দেখে ভেজা বিড়াল হয়ে গেছে। ব্যাট নিচে নামিয়ে ফেললো। গাড়ির ভেতরে উকি দিয়ে আর কাউকে দেখতে পেল না। তার মানে রেহান ই ড্রাইভ করেছে।)
.
রেহান- ড্রাইভারের খবর নিতে এসেছো? ড্রাইভার দেখে গাড়ি চালাতে পারে না! আর যে বল নিতে এসেছে সে কি অন্ধ ছিল! আশেপাশে দেখে হাটতে পারে না!?
.
নাফিসা- ? নো! আ..আই মিন… নাথিং
(বলেই ব্যাট ফেলে এক দৌড়ে ফ্ল্যাট এ এসে নিজের রুমে দরজা লাগিয়ে বসে রইলো। রেহান ছাড়া বাকিরা সবাই হাসতে লাগল।? সন্ধ্যায় রেহান রিয়াদের রুমে এসেছিল তাকে পড়াতে। কিন্তু এসে দেখলো নাফিসা পড়াচ্ছে রিয়াদকে। )
রেহান- রিয়াদ, আমার রুমে আয় পড়তে।
.
রিয়াদ- না, আজ আমি ভাবির কাছেই পড়বো।
.
রেহান- এই কিসের ভাবি! ? কে তোর ভাবি! আপু বলে ডাকবি।
.
নাফিসা- না, ভাবি বলে ডাকবে?
.
রেহান- ভাবি বলে ডাকবে কেন! একদম ভাবি বলবি না। আর এক বার শুনলে তোকে জ্যাকশন মাইর দিবো।
.
রিয়াদ- আম্মু……! ভাইয়া আমার পড়ার ডিস্টার্ব করছে।
.
রেহান- ফাজিল একটা ?
.
(রেহান চলে গেলো)
নাফিসা- রিয়াদ, জ্যাকসন মাইর কি?
.
রিয়াদ- ওইটা ভাইয়ার পিটুনি দেয়ার স্টাইল ?
.
নাফিসা- ?কিভাবে দেয়!
.
রিয়াদ- হাত পা একসাথে বেধে তারপর কাঠের স্কেল দিয়ে পিটুনি দেয়, আবার সুরসুরি দেয়।
.
নাফিসা- তোমার সুরসুরি আছে! দেখি…..
(রিয়াদকে সুরসুরি দিতে লাগলো আর রিয়াদ হাসতে হাসতে খাটে গড়াগড়ি খাচ্ছে!?)
রিয়াদ- প্লিজ স্টপ.
.
নাফিসা- ওকে, ? তোমার ভাইয়ার সামনে বেশি বেশি আমাকে ভাবি ডাকবে। দেখতে চাই জ্যাকসন মাইর?
.
রিয়াদ- ? নায়ায়ায়ায়া….
.
নাফিসা- ইয়েএএএএএস। নাহলে আমি দেব।?
.
রাতে ডিনারের সময়,
রুবিনা- নাফিসা তোমার কি অই রুমে থাকতে ভয় লাগে?
.
নাফিসা- ?আমার একা থাকতে ভয় লাগে, অই দুষ্টু লোক আমাকে একা পেলে আবার ধরে নিয়ে যাবে!
.
রুবিনা- আমাদের বাসায় কেউ আসবে না। তবুও যদি ভয় পাও তাহলে তুমি রিয়াদের সাথে থেকো।
.
নাফিসা- ওকে।
.
রিয়াদ- ওয়াও! ? ভাবি আমার সাথে থাকবে…! আমরা গল্প করে ঘুমাবো। খুব মজা হবে।
.
রায়হান- ঘুমাতে গেলেও মজা!?
.
রুবিনা- গল্প করতে করতে আবার রাত পার করে দিবেন না। সকালে স্কুল আছে। নামাজ ও পড়তে হবে ফজরের সময় উঠে। নাফিসা নামাজ পড়তে পারো না?
.
রেহান- আম্মু, তোমার আর জ্ঞান নেই! যে মেয়ে টিশার্ট পড়ে থাকে সে আবার নামাজ পড়তে পারবে!
.
নাফিসা- ? শাশুড়ী আম্মু, আমি নামাজ পড়তে পারি। কিন্তু সবসময় পরি না। একটু আলসে?। আম্মু সারাদিন বকে নামাজ পর, নামাজ পর। এখন বেশ আছি আম্মুর বকা নেই ?।
.
(মুহুর্তেই হাসিমাখা মুখটা মলিন হয়ে গেল। চোখে পানি ও এসে পড়েছে। সবাই অবাক!)
.
রায়হান- কি হয়েছে নাফিসা?
.
নাফিসা- আমি আব্বু আম্মুর কাছে যাবো। ?
.
(সবাই হকচকিয়ে গেল, পুরো ১দিন পর মেয়েটির তার বাবা-মা এর কথা মনে পড়লো!)
.
রায়হান- কোথায় তোমার আব্বু আম্মু, ঠিকানা বলো। আমি তোমাকে দিয়ে আসবো।
.
নাফিসা- আমি জানিনা। আমার আব্বু আম্মু আমাকে না পেয়ে কান্না করছে।
.
রায়হান- আচ্ছা, আমরা অতি শীঘ্রই তোমার আব্বু আম্মুকে খুঁজে বের করবো। এখন লক্ষী বউ মা ‘র মতো খাওয়া শেষ করো তো।
.
নাফিসা- আচ্ছা।
.

রুবিনা- নামাজ না পড়লে আমি তোমাকে বকা দিবো এখন। কাল থেকে ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়বে।
.
নাফিসা- আমার নামাজ কটি লাগবে….
.
রুবিনা- ওটা আবার কেমন?
.
নাফিসা- বোরকার মতো দেখতে।
.
রুবিনা- আমার কাছে সুতি গাউন আছে। ওটা পড়তে পারবে?
.
নাফিসা- ওকে……
.
(নাফিসা আর রিয়াদ রাতে অনেক্ক্ষণ গল্প দুষ্টুমি করে ঘুমিয়েছে।)
.
.
চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে