বউ Part- 2

0
1990

Story: #বউ
Part- 2
writer: #Nur_Nafisa
.
.
(রেহানের মা রুবিনা চৌধুরী দরজা খুলে চরম একটা শকড খেলেন! তার ছেলে বিয়ে করে বউ নিয়ে বাসায় ফিরেছে!ব্যাস! গলা ফাটিয়ে চিৎকার শুরু করে দিলেন!)

রুবিনা- ? ওগো…….! কোথায় তুমি, দেখো তোমার ছেলে কি করেছে! ?

রেহান- ?আম্মু শুন…

রুবিনা- চুপ থাক তুই। কি শুনবো! কত স্বপ্ন ছিল ছেলের বিয়ে নিয়ে, সব শেষ করে দিলি…… এএএএএএ?

(মেয়েটি ভয়ে রেহানের পিছনে লুকিয়ে গেলো! আর রেহান বেচারা কিভাবে বুঝাবে মাকে! তার মা অল্পতেই রিয়েক্ট করে!রেহান যেই ঘরে প্রবেশ করতে যাচ্ছিলো….. )

রুবিনা- খবরদার, ঘরে আসবি না?

(এমনি চশমা পড়তে পড়তে হাজির হলেন রেহানের বাবা রায়হান চৌধুরী। সাথে দৌড়ে এলো রেহানের ছোট ভাই রিয়াদ। এবার রেহান একটু সস্তির নিশ্বাস ছাড়লো। কারণ সে তার বাবাকে বুঝাতে পারবে।)

রায়হান- কি হয়েছে! এমন চেচামেচি শুরু করেছো কেন!

রুবিনা- ?অন্ধ নাকি! দেখতে পাচ্ছো না তোমার বড় ছেলে বউ নিয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।

রিয়াদ- ?ভাবি এসেছে!

রুবিনা- চুপ! ? কিসের ভাবি!

(রায়হান চৌধুরী বরাবর ই একজন রসিক মানুষ। এবং তার পুরো পরিবার ই ম্যাজিক্যাল ফ্যামিলি)

রায়হান- ভুল কি বললো! ভাইয়ের বউ তো ভাবি ই হবে। তা এতো চেচামেচি করার কি আছে! ছেলে বউ নিয়ে এসেছে বরন করে ঘরে তুললেই হয়।

রুবিনা- (কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে) আল্লাহ! ? এ কি বলছে! কি সুন্দর কথা! ছেলে বউ নিয়ে এসেছে ঘরে তুলে নিব! দুদিন পর আবার নিজে বউ নিয়ে এসে বলবে বউ নিয়ে এসেছি বরন করে ঘরে তুলে নাও!?

রায়হান- এই এই, দেখো, কোন কথা কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছো! আমার বিয়ের বয়স কি আছে! দুদিন পর তো ছোট ছেলে বিয়ে করে বউ নিয়ে ফিরবে। আমাকে কেন ডেকেছো পরিচিত হবার জন্য? আচ্ছা আমি পরিচিত হয়ে নিচ্ছি, (মেয়েটিকে) বউ মা, শুনো…. আমি হচ্ছি তোমার শ্বশুর আব্বু, উনি তোমার শাশুড়ী আম্মু, এই পিচ্চিটা তোমার দেবর আর তোমার বর তো তোমার সাথেই আছে ? সালাম করো আমাদের….

(মেয়েটি রেহানের পেছন থেকে দ্রুত ঘরে প্রবেশ করে রায়হান চৌধুরীকে সালাম করলো, তারপর রুবিনা চৌধুরীকে সালাম করতে গেলে….)

রুবিনা- এই মেয়ে, একদম কাছে আসবে না। দূরে থাকো, দূরে থাকো…? কত স্বপ্ন ছিল ছেলের বিয়ে নিয়ে, সব শেষ হয়ে গেল! ?

(রেহান হতবাক হয়ে গেল তার বাবার আর মেয়েটির কান্ড দেখে।)

রায়হান- (রেহানকে উদ্দেশ্য করে) গাধা একটা, বিয়ের আগে ফোন করে তোর মায়ের স্বপ্ন জেনে নিলি না!

রিয়াদ- হিহিহিহি….. ?

রেহান- আব্বু আমি বিয়ে করিনি….

রায়হান- ?

রুবিনা- ? বিয়ে করিস নি মানে! কার বাড়ি থেকে বউ নিয়ে পালিয়েছিস!

রেহান- আরে এই মেয়ে বিপদে পড়েছে। আমার কথাটা তো আগে শুনে নাও।

রুবিনা- কোনো কথা শুনবো না। যার বউ তার কাছে দিয়ে আয়।

রায়হান- আরে রেহান বলছে তো বিপদে পড়েছে। আগে শুনে নাও তার কথা। আয় ভেতরে আয়।

(রেহান ঘরে প্রবেশ করলো। মেয়েটিও দ্রুত এসে সোফায় বসে পড়লো। আর দাড়িয়ে থাকতে পারছে না। তারপর রেহান সব ঘটনা খুলে বললো। রেহানের বাবা-মা দুজনেই অবাক হয়ে আছে। মেয়েটির দিকে তাকিয়ে দেখলো মুখে ভয়ের ছাপ। রায়হান চৌধুরী মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলো তার বাসা কোথায়। মেয়েটি কোন উত্তর না দিয়ে রেহানের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ছেড়ে দিলো। রায়হান চৌধুরী বেশ বুঝতে পেরেছে মেয়েটি খুব বেশি ভয় পেয়েছে। তাই আর কিছু জানতে চাইলো না।)

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

রুবিনা- রাস্তায় পুলিশের কোন ঝামেলা হয়নিতো?

রেহান- না।

রুবিনা- আচ্ছা, রিয়াদের পাশের রূমটা দেখিয়ে দে থাকার জন্য। কাল দেখা যাবে বাকিটা। এখন চল ডিনার করবি প্রায় রাত ১০টা বেজে গেছে।

(সবাই একসাথে খেতে বসলো। রেহান মেয়েটির খাওয়া দেখে অবাক হয়ে আছে! কিছুক্ষণ আগে মাত্র সে দোকান থেকে খাবার কিনে খায়িয়েছে। এখন আবার এতো খাবার খাচ্ছে কিভাবে! যেন ২/৩ দিন ধরে না খেয়ে আছে! খাওয়া শেষ করে যে যার রুমে ঘুমাতে গেল। রিয়াদের পাশের খালি রুমটা মেয়েটিকে থাকার জন্য দেয়া হলো। রেহান মাত্র ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো কপালে এক হাত রেখে হঠাৎ কারো উপস্থিতি বুঝতে পেড়ে কপাল থেকে হাত সরিয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো মেয়েটি তার রুমের ভেতর দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে। সে উঠে বসে পড়লো। )
রেহান- কি ব্যাপার! এখানে কেন এসেছো?

– আমি শাড়ি পড়ে ঘুমাতে পারি না।

রেহান- ? তো আমি কি করবো!

– আমার ড্রেস লাগবে।

রেহান- আম্মুর থ্রিপিস পড়তে পারবে?
.

– আমি ওসব পড়তে পারিনা?

রেহান- এই মেয়ে! তুমি কোন গ্রহ থেকে এসেছো শুনি! শাড়ি পড়তে পারবে না আবার থ্রিপিস ও না! তাহলে কি পড়বে!?

– একটা টিশার্ট হলেই হবে।

রেহান- (মনে মনে, টিশার্ট পড়বে! তাহলে তো এর বাসা ঢাকাতেই হবে। মাথা মোটা মেয়ে তো কিছুই বলতে পারছে না!)
আমার টিশার্ট পড়তে পারবে?

– হুম।

(রেহান বিছানা থেকে নেমে আলমারি খুললো টিশার্ট নেয়ার জন্য। পেছন থেকে মেয়েটি বলে উঠলো লাল টিশার্ট টা দিতে। রেহান বিরক্তি নিয়ে সেটা ই বের করে দিলো। তারপর মেয়েটি চলে গেলো তার রুমে।)
(মাঝরাতে বুকের মধ্যে ভারি কিছু অনুভব করে রেহানের ঘুম ভেঙে গেলো। সে দেখতে পেল কেউ তার উপর পড়ে আছে! সে ধাক্কা দিয়ে ঝটপট করে বিছানা থেকে নেমে গেল। মেয়েটি নাড়া পেয়ে ঘুমের মধ্যেই বলতে শুরু করলো, ” আমাকে মেরো না, আমাকে মেরো না… প্লিজ! ?”
রেহান ডেকে মেয়েটির ঘুম ভাঙিয়ে দিলো। মেয়েটি ঘুম ঘুম চোখে উঠে বসলো।)
– কি হয়েছে? ডাকছেন কেন!

রেহান- এই তুমি আমার রুমে কি করছো!

– অই রুমে আমার খুব ভয় করছে, যদি ওরা আমাকে ধরে নিয়ে যায়!?

রেহান- কারা ধরে নিয়ে যাবে! এখানে কেউ আসতে পারবে না। যাও অই রুমে যাও….

– প্লিজ আমি এই রুমে থাকবো। আমার খুব ভয় লাগছে।

রেহান- ওকে ঘুমাও।

– আপনি যাবেন না প্লিজ……

রেহান- আমি কি তোমার সাথে থাকবো নাকি!?

– আমার সাথে প্রব্লেম হলে আপনি সোফায় ঘুমান।

(রেহানের মেজাজ চরম খারাপ হয়ে গেল। এই মেয়ের নূন্যতম বুদ্ধি বলতে কিছু নেই! অবিবাহিত একটা ছেলে আর মেয়ে কি একসাথে থাকতে পারে! আপন ভাইবোন হলে মেনে নেয়া যায়! সে কিছু না বলে সোফায় বসে রইলো। মেয়েটিও বিছানায় চুপচাপ শুয়ে পড়লো। রেহান যখন দেখলো মেয়েটি ঘুমিয়ে পড়েছে তখন সে অন্য রুমে চলে গেলো যেখানে মেয়েটিকে থাকতে দেয়া হয়েছিল।)
.
(সকালে রুবিনা চৌধুরী ছেলেদের ডাকতে এলে দেখলেন রেহান অন্য রুম থেকে বের হচ্ছে।)

রুবিনা- কিরে, তুই এই রুমে কেন?

রেহান- কি করবো! ওই মেয়ে আমার রুম দখল করে নিয়েছে। রাতে ভয় হয় দৌড়ে আমার রুমে চলে গেলো। বাধ্য হয়ে আমাকে নিজের রুম ছাড়তে হলো! যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কিছু একটা করে বিদায় করো।

রুবিনা- নিয়ে এলি তুই, এখন আমি বিদায় করবো!

রেহান- সেটাই সবচেয়ে বড় ভুল করেছি।

রুবিনা- এভাবে বলতে নেই। বিপদে পড়লে হেল্প করতেই হয়। দেখছি কি করা যায়।

(রেহান মায়ের সাথে যখন কথা বলছিলো তখন দেখলো, মেয়েটি হাই তুলতে তুলতে তার রুম থেকে বেরিয়ে এলো। রুবিনা মেয়েটিকে দেখে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো। মেয়েটির পড়নে লাল টিশার্ট আর কালো জিন্স। রেহান কাল রাতে তেমন খেয়াল করে নি।এখন সে ও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। টিশার্ট টা মেয়েটার ঢিলেঢালা জার্সি হয়ে গেছে! লাল টিশার্ট আর কালো জিন্স এ ভালোই লাগছে তাকে দেখতে। ফর্সা মেয়েটিকে মানিয়েছে বেশ। রুবিনা একটু হেসে মেয়েটির কাছে এগিয়ে এলো।)

রুবিনা- টিশার্ট দেখে তো বুঝতে পেরেছি এটা রেহানের কিন্তু জিন্স তো রেহানের না, এটা কোথায় পেলে?

– শাড়ির সাথে এটা পড়নে ছিলো।

রুবিনা- ?হাহাহা…. শাড়ির সাথে জিন্স! আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে এসো, ব্রেকফাস্ট করবে।

(তারপর সবাই একসাথে ব্রেকফাস্ট করে নিলো। এ পরিবারের সবাই লক্ষ্য করলো মেয়েটি খুব ভালো স্টাইলে খাবার খাচ্ছে। আচার-আচরণ কথা বার্তা সব কিছু দেখে বুঝা যাচ্ছে শিক্ষিত ও ধনী পরিবারের মেয়ে হবে। কিন্তু সমস্যা একটাই, পরিচয় নিয়ে কোনো প্রশ্ন করলেই মেয়েটি কান্না করে দেয়, গত কালের ঘটনা মনে করে ফেসে ভয়ের ছাপ পড়ে। কথার ছলে রুবিনা মেয়েটির নাম জেনে নিলো।)

রুবিনা- আমাকে তোমার ভালো লেগেছে?

– হুম খুব ভালো তুমি শাশুড়ী আম্মু ☺️

রেহান- ?
রুবিনা- ?আচ্ছা তোমার নাম কি?

– #বউ

রুবিনা- এটা না। তোমার আব্বু তোমাকে কি বলে ডাকে?

– আব্বু বলে “আমার পাগলী মেয়ে।”

রুবিনা- অহ, আচ্ছা। তাহলে তোমার ফ্রেন্ডস কি বলে ডাকে?

– হেই, ফার্স্ট & কিউট গার্ল।

সবাই- ?!!!!!

রুবিনা- তাহলে তোমার আম্মু কি বলে ডাকে?

– আম্মু বলে, ” নাফিসা, এখানে যাবেনা, সেখানে যাবে না, এটা করবে না, ওটা করবে না ব্লা ব্লা ব্লা…..?”

(এবার সবাই খুব বড় নিশ্বাস ছাড়লো, অবশেষে তার নামটা জানা গেছে। কারো আর বুঝতে বাকি নেই সে একজন ধনী বাবার আদুরে মেয়ে। মা নিশ্চয়ই কড়া গার্ড দিয়ে রাখে। কৌশলে তার বাবা মায়ের নামটা ও জানা গেছে। সবাই খাওয়া শেষ করলো। মেয়েটি রিয়াদের সাথে তার রুমে চলে গেলো। রেহান, ও তার বাবা-মা সোফায় বসলো। )
রেহান- আব্বু এখন কি করা যায়! কোথায় দিয়ে আসবো! কিছু তো বলছে না এই মেয়ে! এর কোন বাজে মতলব আছে মনে হয়! না হলে শিক্ষিত এতো বড় মেয়ে আবার ঠিকানা না বলতে পারে!

রায়হান- না, মেয়েটি খুব ভয় পেয়েছে গত কালের ঘটনায়। তাছাড়া একটু পাগলী টাইপের তাই তো তার বাবা পাগলী বলেই ডাকে! ? এখন ওর সামনে এসব কথা তুলা ও যাবে না।

রুবিনা- নাফিসাকে দেখে বুঝাই যাচ্ছে ধনী পরিবারের মেয়ে। পুলিশকে ইনফর্ম করো। তারা সাহায্য করতে পারবে….

রায়হান- ব্যাপার টা পুলিশের কাছে গেলে এ নিয়ে আমাদের ঝামেলায় পড়তে হবে। বাবার যে নাম বললো এমন তো কাউকে চিনিও না।

রেহান- পত্রিকায় দেবো!

রায়হান- আমারা পত্রিকায় দিলে তো তার সত্যিকার গার্ডিয়ান চিনতে পারবো না। তাছাড়া মেয়েটির মনে হয় কোনো শত্রু আছে, তারাও তো নিতে চাইতে পারে! ?
ভালো কথা মনে করেছিস। তার পরিবার নিশ্চয়ই মেয়েকে খুজতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিতে পারে। ২টা দিন পত্রিকায় চোখ রাখি, তারপর না হয় আমরাই পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেব। ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের কাছেই থাকুক।

রেহান- ওকে। অফিস যাবে না, চলো….

রুবিনা- নাফিসার তো জামাকাপড় নেই, তুই শপিংমল এ নিয়ে যা, কিছু কিনে দিস।

রেহান- আমি পারবো না।

রুবিনা- এনেছিস তো তুই ই?

রেহান- এটাই তো সবচেয়ে বড় ভুল আমার! যাও ডেকে নিয়ে আসো…

রুবিনা- আচ্ছা,

(রেহান ও তার বাবা রেডি হয়ে গেলো অফিসের জন্য। নাফিসা এসে ও হাজির….)
নাফিসা- ওয়াও! শপিং এ যাবো। আই লাইক ইট?

রেহান- এই টিশার্ট আর জিন্স পড়ে যাবে!

রুবিনা- তাহলে আর কিভাবে যাবে!

রেহান- যেতে হবে না, এক তো আমি এই বেশে সাথে নিতে পারবো না, অন্যথায় ওর শত্রুরা আবার আমার পেছনে পড়বে।

রায়হান- হুম, ওর এখন বাসা থেকে বের না হওয়াটাই বেটার।

রেহান- কি লাগবে, লিস্ট লিখে দাও আমি নিয়ে আসবো।

নাফিসা- ?ওকে।

(রেহান অফিসে যাওয়ার আগে শপিং করে বাসায় দিয়ে তারপর অফিসে গেছে।)
.


চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে