প্রেমের পাঁচফোড়ন ২ পর্ব-৭+৮

0
2009

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৭
#Writer_Afnan_Lara
🌸
কে যাবে আপনাদের বাসায়??আমি??জীবনেও না
ওহ আপনি না তুমি,তুমি তো অনেক ছোট আমার থেকে,তুই বললেও হয়
.
আহানা ব্রু কুঁচকে বললো “আন্টি আজ আমি আসি!”
.
মা ওর হাত মুঠো করে ধরে রাখলেন যেতে দিলেন না,রিপা নাস্তা নিয়ে সোফার রুমের টেবিলে রাখতেছে এক এক করে
আহানা সোফায় এসে বসতেই শান্ত চোখ বড় করে বললো”তুমি আমাদের বাসায় আসছো কি করতে?”
.
আহানা রেগে গিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে কিছু বলতে যাবে তার আগেই শান্তর মা ওর দিকে চেয়ে চোখ বড় করলেন তাই শান্ত আর কিছু বললো না
সোজা নিজের রুমে চলে গেলো সে
শান্তর মা আহানার মাথায় হাত বুলাচ্ছেন
শান্ত নিজের রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে আলমারি খুঁজে একটা ছবি বের করলো,একটা বাচ্চা মেয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে,পাশেই সারা মুখে ৩পাউন্দের কেক মাখানো একটা ভূত দাঁরিয়ে আছে,ভূতটা শান্ত আর মেয়েটা আহানা,শান্ত যেমন আহানাকে জ্বালাতো আহানাও ওকে খুব জ্বালাতো,ছবিটাতে দুজনেই বেলু
এই বেলু হওয়ার কারনটা হলো তারা ঝগড়া লাগলেই একজন আরেকজনের চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলার মত অবস্থা করে ফেলতো তাই শান্তর মা আর আহানার মা মিলে দুজনকে বেলু করে রাখতো
তাহলে এই সেই মেয়েটা!!
যখন আমার সাথে ঝগড়া করতো তখনই আমার বুঝা উচিত ছিল আমার সাথে এমন করে ঝগড়া করতো এই একজনই!
এই ঝাঁঝের বোতল আবার আমার লাইফে ব্যাক করেছে তাও ম্যাচিউর হয়ে এবার তো তার জ্বালানোর লেভেল আরও হাই
অবশ্য আমিও কম না,এরে টাইট কেমনে দিতে হয় জানা আছে আমার,সবার আগে ওরে আমিই তো পানিতে ফালাইছিলাম
যাক কিছু মনে নাই ওর এটাই ভালো হয়েছে নাহলে এখন চেঁচামেচি করে কান ঝালা পালা করে দিতো
শান্ত ছবিটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ছবিটা ল্যাম্পশ্যাডের পাশে রেখে দিলো,সেদিন কেক একটু নিয়ে শান্ত আহানার জামাতে লাগিয়েছিলো বলেই আহানা গোটা কেকটা শান্তর মাথায় চেপে লাগিয়ে দিয়েছিলো,আর আমি এই শয়তান মেয়েটাকে চিনতেই পারলাম না!

আহানা নাস্তা করে বললো এবার সে চলে যাবে,রাত হয়ে গেলে যেতে সমস্যা হবে
মা রিপাকে ইশারা করলো শান্তকে ডাক দিতে
রিপা গিয়ে শান্তর রুমের দরজায় নক করলো কয়েকবার
শান্ত ঘুমিয়ে পড়সিলো এতক্ষণে
চোখ ডলতে ডলতে এসে দরজা খুলতেই রিপা বললো মা ডাকতেছে
শান্ত বাথরুমে এসে মুখটা হালকা ধুয়ে গিয়ে মায়ের পাশে বসলো
আহানা ব্যাগ হাতে নিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে চলে যাবে তাই
ওকে শান্তর মা থামতে বললো,কেন বললো সে বুঝতেছে না,দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সেটাই ভেবে যাচ্ছে সে
শান্ত মায়ের চুলগুলো ঠিক করে দিচ্ছে আর আহানার দিকে কেমন করে যেন তাকাচ্ছে
মা এখন এই রুমে না থাকলে হয়ত আহানাকে ধাক্কা মেরে বের করতো সে
কাদা ছোঁড়ার ব্যাপারটা মাথা থেকে যাচ্ছেই না তার
একটা মেয়ের এত সাহস কি করে হয় বুঝি না আমি
.
শান্তর মা আহানার দিকে ইশারা করে হাত দিয়ে বাড়ি বানিয়ে দেখালেন মানে আহানাকে বাড়িতে পৌঁছে দিতে বলতেছেন
শান্ত চোখ বড় করে বললো”ইমপসিবল!পারবো না আমি,এর সাথে আমার শুধু ঝগড়া লাগে,আর তখন দেখলা না কেমন করে আমার গায়ে কাদা মেরেছিল,ওর সাথে তো আমার কোনো কথাই নেই,শুধু জানে তিলকে তাল করতে
ওকে আমাদের বাড়িতে আসতে মানা করে দাও,ছোটবেলায় ও জ্বালাইতো আর এখন বড় হয়েও জ্বালাচ্ছে
.
মা চোখ বড় করে হুইলচেয়ার ঘুরিয়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলেন,দরজার নিচে যে ছিটকিনি থাকে সেটাও লাগিয়ে দিলেন
শান্ত মাথার চুল টেনে নিজেকে ঠিক করে উঠে গিয়ে দরজার পাশে গিয়ে বললো”ওকে সরি মা,আমি ওকে দিয়ে আসতেছি,প্লিস রাগ করিও না,দরজা খুলো
শান্ত পিছন ফিরে দেখলো আহানা দ্রুত গতিতে হেঁটে চলে যাচ্ছে,শান্তর সাথে বাড়ির ফিরার ইচ্ছা তার ও নাই,কোনো মতে বাসায় পৌঁছাতে পারলেই হলো তার
.
এই মেয়ে দাঁড়াও
.
আহানা শান্তর দিকে তাকিয়ে মুখ বাঁকিয়ে এক দৌড় দিলো
শান্ত গাড়ীর চাবি না নিয়েই সেও দৌড় দিলো
মা আমাকে একটা দায়িত্ব দিসে আর এই মেয়ে ঢং করতেছে
এখন এর কিছু হইলে মা আর দরজায় খুলবে না,উফ কি ঝামেলা!
শান্ত দৌড়াতে দৌড়াতে হাঁপিয়ে গেছে আহানাও হাঁপিয়ে গেছে,দুজনের মাঝে এখন দূরত্ব হাফ কিলোমিটারের মত কিংবা তার চেয়ে একটু কম
আহানা জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতে পিছন ফিরে তাকালো শান্তর দিকে
শান্ত পকেট থেকে রুমাল নিয়ে মুখ মুছতেছে
.
আহানা জোরে জোরে বললো”এত ঢং কারে দেখান?আমাকে ১০০বার বাসা থেকে বের করে দেওয়ার কথা বলে এখন আবার আমার পিছু নিসেন কেন?”
.
চুপ!আর একটা কথা বললে হাতের কাছে ইটের স্তুপ আছে,ছুঁড়ে মেরে তোমার মাথার খুলি উড়িয়ে দিব
.
মারুন না,আমিও দেখি,আমার হাতের কাছেও অস্ত্র আছে

১০মিনিট পর|||||
ম্যাডাম! ম্যাডাম!!দেখে যান একটু
.
মা রিপার আওয়াজ পেয়ে দরজাটা খুলে হালকা ফাঁক করে বাইরে তাকালেন
শান্ত আর আহানা দুজন দুজনের সাথে মারামারি করতে করতে এসে নিচে বসে গেলো ফ্লোরে
দুজনেই চোখ ডলতে ডলতে মারামারি করতেছে এখনও
.
মা চোখ বড় করে হুইলচেয়ার ঘুরিয়ে ওদের কাছে এসে দেখলো ওদের দুজনের সারা গায়ে বালি আর বালি
রিপা জলদি করে পানি এনে দুজনের গায়ে ঢেলে দিয়েছে তারপর টিসু দিয়েছে
আহানা চোখ মুছতে মুছতে বললো”আন্টি দেখুন না আপনার ছেলে আমার চোখে বালি মেরেছে”
.
আম্মু ওর কথা শুনবা না,আগে ও আমার গায়ে বালি মেরেছে তাই আমিও মেরেছি
.
আন্টি তার আগে উনি আমার পাশে ইট মেরেছে,ভেবে দেখুন আমার গায়ে ইটটা পড়লে আজ আমার কি হতো??
.
মা হেসে দিলেন,তার চোখের সামনে একদম শান্ত আহানার ছোটবেলাটা ফুটে উঠেছে
.
আপনারা এখনও যাননি ও মাই গড
.
কি করে যাবো রিপা??এই মেয়েটা এত ভেজাইল্লা!!আমি ভালোই ভালোই ওরে ওর বাড়িতে ড্রপ করতে চেয়েছিলাম আর সে কিনা আমার চোখে বালি মেরে দিলো
.
আপনি ভালো মানুষ তাই না?আমার চোখে কি বালি ভূতে মেরেছিলো?
লাগবে না আপনার সাহায্যের,বাই
আহানা ব্যাগ নিয়ে হনহনিয়ে বেরিয়ে চলে গেলো
মা আঙ্গুল তুলে শান্তকে ইশারা করে বললো আবার আহানাকে দিয়ে আসতে
শান্ত টিসু আরেকটা নিয়ে চোখ মুছতে মুছতে গিয়ে আহানার সামনে দাঁড়ালো
.
এই কি সমস্যা তোমার?এরকম ভাব কারে দেখাও?একদম বালি দিয়ে গোসল করাই দিব
আমাকে ভাব দেখাতে আসলে,বেয়াদব মেয়ে একটা
.
আমি আপনার সাথে বাড়ি ফিরবো না ব্যস!
.
তুমি ফিরবে না তোমার ঘাড় ফিরবে
কথাটা বলে শান্ত আহানার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো গাড়ীর দিকে
.
হাত ছাড়ুন,আপনার সাথে থাকলে নির্ঘাত আমাকে মরতে হবে,আমি আমার জীবনকে জেনেশুনে মরতে দিতে পারি না
.
আমাকে বলতেছো?তোমাকে আমি হারে হারে চিনি,তুমি মরতে চাও না??আমি সেটা বিশ্বাস করবো
আর জীবনে যদি আমার বাসায় আসছো তো দাঁত ভেঙ্গে দিব তোমার
.
যাব না আমি আপনার সাথে
.
তো এটা আমার মাকে বলতে পারো নাই,তখন তো বোকার মত চেয়েছিলে
.
আন্টি মন খারাপ করবে তাই বলিনি
.
তোমরা এত ধরনের কথা কেমনে বলতে পারো??আমার মাথায় বাড়ি দাও একটা
.
দিব?
.
বেশি কথা কইলে মাঝপথে নামাই দিব তোমাকে!ইডিয়ট
.
আমি ইডিয়ট?তাহলে আপনি ইডিয়ট হোল স্কয়ার

ম্যাডাম!!
স্যার আর আহানা এখনও যায়নি,গাড়ীর বাইরে দাঁড়িয়ে ঝগড়া করতেছে
.
মা মাথায় হাত দিয়ে রিপাকে ইশারা করলো যেন তাকে বাসার বাইরে নিয়ে চলে
রিপা তাই করলো
মাকে বাইরে দেখতেই আহানা আর শান্ত ঝগড়া থামিয়ে দাঁত কেলিয়ে জলদি করে কারে উঠে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো
শান্ত কার চালাতে চালাতে আহানাকে জিজ্ঞেস করলো মা চলে গেছে কিনা
আহানা উঁকি মেরে দেখে বললো “হুম,রিপা আপু নিয়ে যাচ্ছে উনাকে”
.
হুম তাহলে কই ছিলাম আমরা?
.
আমি আপনাকে কুত্তার ফ্রেন্ড কুত্তা বলছিলাম
.
ওহ হ্যাঁ
তোমার এত বড় সাহস,তুমি তো নিজেই কুত্তা,আই মিন কুত্তি আর তোমার সংস্পর্শে এসে ভালো মানুষও কুত্তি/কুত্তায় পরিণত হবে
.
তার মানে আপনি স্বীকার করতেছেন যে আপনি কুত্তা?
.
চুপ!বেয়াদব মেয়ে একটা!আর কখনও আমাদের এরিয়ার ধারের কাছেও আসবা না
.
আপনি বলার জন্য আমি বসে নেই,আমি আর জীবনেও আপনার মুখ দেখতে চাই না,কখনও ঐ ফ্লাইওভার দিয়ে ভোর ৫টার সময় যাবেন না বলে দিলাম,আপনাকে যেন আমি আর না দেখি
.
তোমার কথায় উঠবো বসবো আমি?
.
আপনার কথায় উঠবো বসবো আমি?আন্টি রিপা আপুকে দিয়ে আমাকে ফোন করলেই আমি চলে আসবো
.
ও রিয়েলি?? তলে তলে এতো?তার মানে তুমি চাও প্রতি সন্ধায় আমি তোমাকে এভাবে বাসায় পৌঁছে দিই?
.
ও এভাবে তো ভেবে দেখিনি
.
তো ভাবো!
.
এক কাজ করা যায়,আপনি অফিস থেকে দেরি করে ফিরিয়েন তাহলেই তো হয়
.
তুমি আমার মাকে চিনো না আমার মা রিপাকে দিয়ে আমাকে কল করিয়ে বাসায় আনাবে,তাও সিকনেসের কথা বলে
তুমি আমাদের বাসায় না আসলেই তো হয়,আর ফাইন আমি ভোর ৫টায় ফ্লাইওভার দিয়ে যাব না! ডিল!!!
.
ওকে ডিল!

শান্ত সায়দাবাদ আসতেই আহানা ওকে বললো গাড়ী থামাতে
.
বাসা কই?
.
জেনে কি করবেন?
.
তোমাকে এভাবে রোডে ছেড়ে দিলে মাকে কি বলবো আমি?তোমার বিশ্বাস নাই
কেউ তোমাকে রেপ/কিডন্যাপ করতে আসলেও তার সাথে ঝগড়া লাগাই দিবা তুমি,তাও যেনতেনো ঝগড়া না,একেবারে মোক্ষম ঝগড়া
বেচারা পরে পাগল হয়ে পাবনার দিকে ছুটবে
.
কি বললেন!!
ফাইন!! আমার কি!
যদি এই ছোটখাটো বস্তির এলাকায় ঢুকতে আপনার কোনো সমস্যা না হয় তো চলুন
আহানা গাড়ী থেকে নেমে হাঁটা ধরেছে
শান্ত গাড়ী থেকে নেমে পিছন পিছন আসতেছে আহানার
আহানা একটা টিনের বাড়ির সামনে এসে থেমে বললো” ওকে যান এখন!আমার বাসা এসে গেছে”
.
কিহহহ,আর ইউ সিরিয়াস?এইটা তোমাদের বাসা?
যতদূর জানি আয়াত আঙ্কেলের তো আমাদের মতনই বাড়ি গাড়ি ছিল তাহলে এখন এটা কি?
তুমি কি সত্যিই আয়াত আঙ্কেলের মেয়ে?
.
আহানা চোখ বড় করে ব্যাগ থেকে একটা পানির বোতল বের করে ছিপি খুলে শান্তর মুখে ছুঁড়ে মারলো বোতলের সব পানি
শান্ত হাত দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বললো”ফাইন!প্রমান পেয়েছি আর প্রমান লাগবে না
তাই বলে পানিতে ভিজাইলা!!তোমাকে আমি!!
শান্ত এদিক ওদিক তাকিয়ে কিছু পেলো না পরে আহানাদের বাসার দরজায় গিয়ে নক করলো কয়েকবার
আহানার মা এসে দরজা খুলে শান্তকে দেখে শাড়ীর আঁচল টেনে মাথায় দিয়ে বললেন”কি চাই?”
.
এক মগ পানি
.
মা দিবা না বলতেছি
.
আহানা?তুই কখন এলি?আর উনি কে?
.
আন্টি আমাকে এক মগ পানি দিন
.
আহানা মাকে মানা করে যাচ্ছে মা কি করবে বুঝে উঠতে না পেরে মগে পানি নিয়ে শান্তর হাতে দিলো
আহানা ততক্ষণে একটা নারকেল গাছের পিছনে গিয়ে লুকিয়েছে
শান্ত এগিয়ে এসে গাছের পিছন গিয়ে আহানার গায়ে পানি সব ঢেলে দিলো তারপর ফিরে আসলো
.
একি করলা বাবা,আমি তে কিছুই বুঝতেছি না
.
শান্ত নিজের রুমাল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বললো”আর ভিজাবা আমাকে?”
.
অবশ্যই ভিজাবো
বেয়াদব একটা!
.
আহানা কি হচ্ছে এসব?আমি তো কিছুই বুঝতেছি না
.
শান্ত আহানার মাকে সালাম দিয়ে চলে গেলো
.
আহানা ওড়না দিয়ে মুখ মুছতে ঘরে ডুকে বিছানায় ধপ করে বসে পড়েছে
.
কিরে এবার তো বল কি হয়েছে আর ছেলেটা কে?
.
শান্তি আন্টির ছেলে
.
কোন শান্তি?
.
আরে রিয়াদ আঙ্কেলের ওয়াইফ
.
মা চোখ বড় করে আর এক মিনিটও দেরি না করে দরজা খুলে দৌড় দিলেন
.
আরে আরে মা কই যাচ্ছো?
.
মা কিছুটা জোর গতিতেই শান্তর সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন
শান্ত সবেই গাড়ীতে ঢুকতে যাচ্ছিলো
.
কি হয়েছে আন্টি?
.
শান্ত!!কত বড় হয়ে গেছো তুমি,আমার বিশ্বাস হচ্ছে না
আমি আবার তোমাকে দেখতে পাবো ভাবিনি কখনও
.
এসব বলতে বলতে আহানার মা কেঁদে দিলেন
.
শান্ত উনার দুহাত হাত মুঠো করে ধরে বললো” কাঁদবেন না প্লিস,বাট আমি একটা কথা বুঝলাম না আপনাদের বাড়িঘরের এই হাল কেন?”
.
সে অনেক কথা,তোমার মা কেমন আছে সেটা বলো??আর সেদিন তোমার ভাই নাকি বোন হয়েছিল?সে কেমন আছে?আহারে কতটাদিন দেখি না,কত খুঁজেছি তোমাদের,সেসময়ে তোমাদের একটা সাহায্যের আমাদের অনেক দরকার ছিল!
.
কি হয়েছিল প্লিস বলুন
.
বাবা আসো আমাদের এই ছোট্ট বাসায়,কিছু মুখে দাও
বলছি তোমাকে সব
শান্ত আহানার মায়ের সাথে ওদের বাড়িতে আসতেছে
আহানা মুড়ির বোয়াম নিয়ে বিছানার এক কোণায় বসে হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে শুয়ে মুড়ি খাচ্ছে
দরজা খুলে শান্ত ভিতরে ঢুকতেই আহানা ওকে দেখতে পেয়ে ঠিকঠাক হয়ে বসে ব্রু কুঁচকে বললো”আপনি আবার??!বের হোন আমার বাড়ি থেকে”

আহানা!এটা কি রকম ব্যবহার?
.
মা তুমি জানো না উনিও আমাকে উনার বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বলেছে কতবার
.
চুপ থাক,যা চা বানিয়ে আন
.
আহানা দাঁতে দাঁত চেপে রাগে গজগজ করতে করতে বিছানা থেকে নেমে রান্নাঘরের দিকে যাচ্ছে
.
শান্ত চেয়ার টেনে বসতে বসতে বললো”চিনি দিও না”
.
আহানা দাঁত কেলিয়ে চেয়ে থেকে মনে মনে ভাবলো আজ তোরে আমি গুড় দিয়ে চা বানাই খাওয়াবো
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৮
#Writer_Afnan_Lara
🌸
শান্ত আহানাদের রুমটা ভালো করে দেখছে
সে নিজে যে চেয়ারটাতে বসে আছে সেটা একটা কাঠের চেয়ার
তার পাশে একটা পুরনো কাঠের টেবিল আছে,সেখানে কিছু বই,কলমদানি আর একটা আয়না
সামনে একটা বিছানা তবে এটা হলো চৌকি টাইপের হেলান দিয়ে বসা যাবে না ওরকম খাট
আর কিছু নাই রুমটাতে
.
আহানার মা চোখ মুছতে মুছতে কথা শুরু করলেন
.
তোমার আয়াত আঙ্কেল মারা যাওয়ার পর আমরা যখন বাড়ি ফিরি তাকে কবর দেওয়ার পর তখন জানতে পারি সকল সম্পত্তি নাকি আহানার চাচা মজনু নিজের নামে করে ফেলেছে
কি করে করলো বুঝে উঠতে পারিনি আমি সেসময়ে
আমাকে তারা পরেরদিনই আহানাকে সহ বের করে দিয়েছিলো বাসা থেকে
আমি পুলিশের কাছেও গেছিলাম কিন্তু তারা পুলিশকে কাগজপত্র দেখিয়ে দিয়েছে আর পুলিশ আমাকে জানালো সেখানে নাকি সাফ সাফ লিখা আছে আহানার বাবা আহানার ১৮বছর হওয়াতে দেরি তাই আপাততের জন্য সকল সম্পত্তি মজনুর নামে করে রেখেছিল যেন তার আকস্মিক মৃত্যু ঘটলে তিনি সম্পত্তি সামলাতে পারেন
আর মজনু ভাই কিনা আমাকে আর আহানাকে বের করে দেয় যেন আমাদেরকে তিনি চিনেও না
আহানার বাবা এমনটা করবেন না কখনও তা জানি আমি
হয় তিনি আহানাকে নমিনী করে যেতেন আর নয়ত আমার নামে করে দিয়ে যেতেন কিন্তু মজনুর নামে যে করে দিয়েছে সেটার কথা আমি ঠিক সেদিনই জানলাম,আমি এই বিষয়টায় একটুও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না কারণ আহানার বাবা বিন্দু মাত্র কিছু করলেও আমাকে জানাতেন,আমাকে না জানিয়ে কিছু করতেন না তিনি তাহলে দলিলটাতে যে সই ছিল সেটা কি ছিল সেটাই বুঝতে পারলাম না আমি আজও
আমার বাবা মা কেউ নেই,পাশে পেলাম নিজের বোনকে
আমি গরীব ঘরের মেয়ে ছিলাম, আমার বোন আমার সাথে আমার বাসায় থাকত বাবা মায়ের মৃত্যুর পর থেকে
সে একটু পড়াশুনা করছে বেশি করেনি তাই সে
বাসা থেকে বের করে দেওয়ার পর আমরা ৩/৪দিন আমাদের বাসার দারোয়ান কাসেম চাচার বাসায় ছিলাম,আহানার বাবার প্রতি শ্রদ্ধা ছিল বলেই তিনি আমাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন সেদিন
আমার বোন রোকেয়া অনেক চালাক চতুর সে কদিনের মধ্যেই কোনোমতে একটা গার্মেন্টসে ঢুকে যায় আর আমিও বাধ্য হয়ে গার্মেন্টসে চাকরি শুরু করি
দারোয়ানের বাসা ছেড়ে একটা বাড়ি খুঁজে পাওয়া পর্যন্ত আমরা এক দাদির বাসায় ছিলাম ততদিন
দাদিটা অনেক ভালো ছিলেন,আমার বোনের পরিচিত ছিল তার মেয়ে নাকি আমার বোনের সাথে গার্মেন্টসে কাজ করতো তাই আমাদের সমস্যার কথা শুনে আমাদের থাকতে দেন সেদিন
আহানার দামি দামি জামা আমি বিক্রি করে হাঁড়ি পাতিল এসব কিনলাম
ওর জন্য তখন ২/৩টা জামা ছিল অবশিষ্ট, টাকার অভাবে আমি সব বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিলাম সেদিন
এতদিন ভালো পরিবেশে থেকে বড় হয়ে তারপর এরকম একটা অবস্থায় হুট করে এসে পড়ায় পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে আহানার বেশ হিমশিম খেতে হয়েছিল
.
তো আঙ্কেল নমিনী ও তো করে যেতে পারতো আহানার নামে সম্পত্তি দিয়ে
সেটা করেননি কেন??আমি সেটাই বুঝলাম না
.
বাবা আমার ও এটা মাথায় ঢুকেনি,কারণ একদিন আহানার বাবা আমাকে এই ব্যাপারটা সম্পর্কে বলেছিলেন,বলছেন আহানাকে নমিনী করে দিবেন তাহলে সম্পত্তি মজনুর নামে কি করে হলো সেটাই তো বুঝলাম না
.
ঘাফলা আছে,তখন আপনাদের পাশে কেউ ছিলো না বলে কেস জিততে পারলেন না,শিট!
.
কিছু করার নাই,আমরা এতদিনে সব মানিয়ে নিয়েছি
একা ৩জন মেয়ে আর কত লড়তে পারে?
তা তোমার মায়ের কি খবর এখন?অনেক ইচ্ছা তারে একটু দেখবো,আপন বলতে উনিই ছিলেন,তোমাকে তো সেই ছোটবেলায় দেখেছিলাম, কত বড় হয়ে গেছো,আমি চিনতেই পারিনি,আমেরিকা থেকে থেকে কবে এসেছো?
.
আমি সেদিনই এসেছি যেদিন বাবা আর আয়াত আঙ্কেলের এক্সিডেন্ট হয়েছিলো
আমার তো আপনাদের কথা মনেই ছিল না,কারণ সেই ছোটবেলায় আপনাদের বাসায় আসা যাওয়া হতো তারপর সব ভুলে গেসিলাম
আর সেদিন লাশবাহী গাড়ী করে বাবার লাশটাই এসেছিলো,আয়াত আঙ্কেলের ব্যাপারে আমরা কিছুই জানতাম না!
বাবা কার ড্রাইভ করছিলো পাশে যে আয়াত আঙ্কেল ছিল তা আমরা আজ জানলাম আহানার থেকে
মা সেই থেকে কথা বলার শক্তি হারিয়েছে!আপনাদের ছবি দেখতো আর কাঁদতো,,কত ডাক্তার দেখিয়েছি কোনো লাভ হয়নি
আমরা কয়েক মাস বাদেই আপনাদের বাড়িও গিয়েছিলাম বাট সেখানের দারোয়ান জানালো বাসাটা বিক্রি করে দিয়ে আপনারা নাকি চলে গেছেন,কোথায় গেছেন তার হদিস সে জানে না
.
এভাবে সব শেষ হয়ে আবার পুনর্জীবিত হবে ভাবতেই পারিনি
আপনি এক কাজ করুন আমার সাথে চলুন বাসায়,মা আপনাকে দেখলে অনেক খুশি হবে
.
চা রেডি😒ধরেন!
.
আহানা ঠাস করে চায়ের কাপটা টেবিলের উপর রাখলো
শান্ত ব্রু নাচিয়ে মুখে এক চুমুক দিতেই কেশে উঠলো
.
আহানা মুচকি হেসে বললো”মিষ্টি আরেকটু দিব?”
.
শান্ত হালকা হেসে বললো”মিষ্টি কম হইছে,নাড়তে হবে আরেকটু”
এটা বলেই শান্ত আহানার হাত মুঠো করে ধরে সেখান থেকে আঙ্গুল একটা নিয়ে চায়ে চুবিয়ে নেড়ে নিলো
.
আম্মাগো!!!!আউচ!হাত জ্বলে গেলে আমার,হাত ছাড়ুন!
.
ব্যস পারফেক্ট
.
তোরা এখনও আগের মতই ঝগড়া করস,একটুও বদল হয়নি
.
আহানা নিজের আঙ্গুল মুখে পুরে চুষতে চুষতে দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো”বের হোন আমাদের বাসা থেকে”
.
শান্ত আহানার কথায় কোনো মনই না দিয়ে আহানার মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো”আন্টি চলুন না আমার সাথে”
.
কিন্তু বাবা,এতো রাতে
.
তো কি হইছে?দরকার হলে আমাদের বাসায় থেকে যাবেন,এখন চলুন
.
তাহলে অপেক্ষা করো আমি শাড়ীটা বদলিয়ে আসি
মা ভিতরের রুমে গেলেন
.
আহানা শান্তর পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখতেছে
শান্তর পরনে ব্রু টিশার্ট আর জিন্স সবই ঠিকঠাক ছেলেটার তবে স্বভাব খারাপ এই আর কি
.
চলো বাবা আমি তৈরি
.
শান্ত আহানার আম্মুর হাত ধরে হাঁটা ধরেছে
আহানা দরজার কাছে দাঁড়িয়ে চোরের মত চেয়ে আছে ওদের দিকে
.
মা থেমে গিয়ে বললো”আহানা বাসায় একা,আহানা যাবে না?”
.
শান্ত ব্রু কুঁচকে বললো”এই বিনা দাওয়াতের মেহমান!চলুন ”
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে বাসার দরজা আটকিয়ে ফেললো তারপর বাসার ভেতরে থেকে বললো “যাবো না”
.
না আমি আহানাকে রেখে যেতে পারবো না,একা একটা মেয়ে
.
আন্টি আপনি হাঁটা ধরেন আমি এরে আনতেছি
.
মা শান্তর কথামতন হেঁটে চললেন
শান্ত হাত কছলাতে কছলাতে বাড়ির সামনে এসে দরজা ধাক্কাতে শুরু করলো
.
কি?বললাম না যাবো না
.
তুমি যাবে না তোমার ২০গুষ্টি যাবে,চলো এখন!দরজা খুলো,এক নাম্বারের বেয়াদব একটা
.
আমি যাব না মানে যাব না
.
তাহলে তোমার মাকে আর দেখবা না,আমি উনাকে আমাদের বাসায় রেখে দিব,একা একা থাকো তুমি তাহলে
.
আহানা তাড়াহুড়ো করে দরজা খুলে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে থেকে বললো”মা কোথায়?”
.
শান্ত ওর কথার উত্তর না দিয়ে ওর হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো
.
হাত ছাড়ুন,কথায় কথায় হাত ধরে টানাটানি শুরু করেন কেন আপনি?
.
শান্ত চিকন সরু মাটির পথটা দিয়ে হেঁটে চলেছে আহানার হাত ধরে
তারপর আহানাকে কারের সামনে এনে ওর হাত ছাড়লো শান্ত
মা চোখ বড় করে আহানার কাছে এসে ওর কানে ফিসফিস করে বললেন”কি সমস্যা তোর??এরকম করিস কেন?জানিস না শান্ত কি হয় তোর?”
.
তো?কি করবো?
.
কিছু করতে হবে না চুপ থাক
.
শান্ত কারের দরজা খুলে দিয়ে বসতে বললো আহানার মাকে
উনি আহানাকে নিয়ে ভিতরে এসে বসলেন
শান্ত কার চালাতে চালাতে রিপাকে কল করে বললো ডিনার রেডি করতে আহানার মাকে নিয়ে আসতেছে সে
তারপর বাসার সামনে আসতেই আহানার মা কেমন করে যেন চেয়ে রইলেন বাসার দিকে
তার ও ঠিক এরকমই একটা রাজপ্রাসাদ ছিল
তাও এই ভেবে খুশি হলেন যে আপনজন বলতে কাউকে তো পেলো অবশেষে
শান্তর মা যখন শুনেছেন আহানার মা আসতেছে তখন থেকে তিনি দরজার কাছে এসে বসে আছেন
আহানার মা কার থেকে নামতেই শান্তর মাকে দেখে বুবু বলে চিৎকার করে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলেন তাকে
আহানা কার থেকে নেমেই ভ্যাত করে কেঁদে দিয়েছে ওদের দুজনের কান্না দেখে
.
এ্যা😭😭😭
.
শান্ত আহানার দিকে চেয়ে এক ভেটকানি দিয়ে চলে গেলো নিজের রুমের দিকে
আহানা কাঁদতে কাঁদতে এসে মায়ের পিঠে হাত বুলালো
শান্তর মা কান্না থামিয়ে এবার একটু হাসলেন তারপর ভিতরে চলে গেলেন সাথে আহানার মাকে নিয়ে
মুখ দিয়ে কিছুই বলতে পারছেন না অথচ এ কটা বছরে কত কথা জমিয়ে রেখেছিলেন তিনি
আহানা সোফায় বসে এদিক ওদিক দেখছে
আর তার মা মনের সব কথা শান্তর মাকে খুলে বলছেন
শান্তর মা ইশারা ইঙ্গিতে কথার তাল মেলাচ্ছেন
আহানা এবার উঠে বাসাটা একটু ঘুরে দেখতে চাইলো পরে ভাবলো ঐ লোকটার সাথে আবার দেখা হয়ে গেলে আবার আমাকে উল্টা পাল্টা বলবে তার চেয়ে বরং আমি গন্ধরাজের বাগানটা দেখে আসি
আহানা বাসা থেকে বেরিয়ে বাসার পিছন দিকটায় গেলো
বাতি জ্বালানো থাকায় বাগানটা বেশ সুন্দর লাগছে এবং স্পষ্ট ও লাগছে
আহানা ফুল কয়েকটা ছিঁড়ে কানে গুজে হাঁটা ধরলো,চারপাশে বাউন্ডারি করা মাঝখানে বাসা চারিদিকে গন্ধরাজ ফুলের ঘ্রানে মৌ মৌ করতেছে
আহানার মন চাচ্ছে এখানে সারাজীবন বসে থাকতে
এখানে অনেকক্ষণ থেকে আহানা এবার বাসার সামনে আসলো,বারবার সূর্যমুখী বাগানটার দিকে নজর যাচ্ছে তার
যদিও এই ফুল তার পছন্দের তালিকায় পড়ে না তাও দেখতে ভালো বলে একটু একটু করে এগোচ্ছে সে
বাগানটার ভিতরে ঢুকে সে মাথা উঁচু করে ফুলগুলো দেখে যাচ্ছে
শান্ত বারান্দায় একটা চেয়ারে বসে পা গ্রিলের উপর রেখে গান শুনছে আরামসে
হঠাৎ চোখ খুলতেই দেখলো সূর্যমুখীর বাগানটার কিছু ফুল নড়তেছে তারমানে নির্ঘাত আহানা সেখানে
শান্ত কান থেকে ইয়ারফোন খুলে এগিয়ে এসে বললো”আহানা!”
.
আহানার আর একটুর জন্য হার্ট এ্যাটাক হতো,বুকে থুথু দিয়ে পাশের বারান্দার দিকে চেয়ে বললো”ধমক দেওয়ার কি আছে?আমি কি ফুল ধরসি নাকি?”
.
ধরো নাই ছিঁড়ে ছিঁড়ে মাথায় দিসো,আমার মায়ের গন্ধরাজ ফুলের বাগানের সব ফুল দেখি মাথায় দিয়ে রাখসো তুমি
.
আপনার মা তো আমার আন্টি হয় তাই সেই অধিকারে ধরছি তাতে আপনার কি?
.
বের হও আমার বাগান থেকে তার পর বুঝাচ্ছি আমার কি
.
বের হবো না,আমার ইচ্ছা আমি এই বাগানটা ঘুরে ঘুরে দেখবো
.
শান্ত ভ্রুটা কুঁচকিয়ে বললো”ওয়েট আসতেছি আমি”
.
আহানা ঢোক গিলে বাসার ভিতর জলদি করে এসে সোফার পিছনে লুকিয়ে পড়েছে
শান্ত হনহনিয়ে বাগানের দিকে গিয়ে এদিক ওদিক তাকালো কোথাও আহানাকে পেলো না
.
আহানা হাঁপাতে হাঁপাতে বললো”মা/আন্টি কেউ বলবেন না আমি কই লুকিয়েছি”
.
শান্ত ড্রয়িং রুমে এসে চারপাশটা ভালো মতন দেখে নিলো,আহানা নেই
আহানার আম্মু সোফায় বসে আছেন পাশেই হুইলচেয়ারে শান্তর মা বসে আছেন দুজনেই শান্তর দিকে ভূত দেখার মতো চেয়ে আছেন
রিপা দাঁত কেলিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে আছে আর মিটমিট করে হাসতেছে
.
আচ্ছা,আহানা ছোটবেলায় সবসময় সোফার পিছনে লুকাতো,তো আই গেস ও এখনও সোফার পিছনেই লুকিয়েছে
আহানা কথাটা শুনতে পেয়ে জিভে কামড় দিয়ে পাশে দিয়ে বেরিয়ে এক দৌড় দিলো
শান্ত ও দৌড় দিলো
.
দেখছেন আপা দুজনে এখনও সেই আগের মতনই আছে,আমি তো ভেবেছিলাম এত বছর পরেও ওদের কিছু মনে থাকবে না কিন্তু এখন তো দেখি সব মনে আছে ওদের
তা আপনার ছোটটা কই?মেয়ে হলো নাকি ছেলে সেটাই জানতে পারলাম না ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস
.
মা মুচকি হেসে রিপার দিকে চেয়ে ইশারা করলেন
রিপা গেলো নিতুকে আনতে
নিতু পা টিপে টিপে সোফার রুমে আসলো
তারপর মুচকি হেসে সালাম দিয়ে পাশে বসে পড়লো আহানার মায়ের
মহিলাটির প্রতি তার আলাদা একটা শ্রদ্ধা আছে কারণ ছোট থেকেই সে মায়ের কাছে উনাদের ছবি দেখতো
আহানার মা নিতুর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন”কি মিষ্টি মেয়ে,একদম দেখতে শান্তর মত হয়েছে”
.
শান্তর মা মুচকি হাসলেন
.
ওদিকে আহানা দৌড়াতে দৌড়াতে করিডোরের শেষ প্রান্তে এসে থেমে গেছে,আর যাওয়ার পথ নেই
শান্ত হাত মুঠো করে মুড়িয়ে মুড়িয়ে আসতেছে এদিকে
.
এই খবরদার আমাকে টাচ করবেন না বলে দিলাম
.
আমার বাগান নষ্ট করবে আর তোমাকে আমি এমনি এমনি ছেড়ে দিব?তা হচ্ছে না
.
ককককি করবেন আপনি?
.
শান্ত এগিয়ে এসে আহানার চুল ধরে টেনে বাইরে নিয়ে আসলো
.
ছাড়ুন লাগতেছে আমার,কি এমন করছি যে আমাকে এরকম শাস্তি দিচ্ছেন
.
এই যে কি করছো দেখো,আমার ২টা সূর্যমুখী ফুলগাছ মাঠির গোড়া থেকে নড়িয়ে চড়িয়ে দিসো যার কারণে ওগুলা মাটিতে শুয়ে গেছে এখন এই মূহুর্তে তুমি পুঁতে দিবা এগুলা নাহলে চুল টেনে ছিঁড়ে হাতে ধরায় দিব তোমার
.
মায়ায়ায়ায়ায়ায়া
আন্টিইইইইইইই
.
লাভ নাই!তোমাকে কেউ বাঁচাতে আসবে না,চুপচাপ আমার কাজ করে দাও নাহলে কাদা খাইয়ে দিব
.
আহানা ব্রু কুঁচকে মাটিতে গোল হয়ে বসে গাছগুলো পুঁতে দিচ্ছে আর মাঝে মাঝে আড় চোখে শান্তর দিকে তাকাচ্ছে
মনে মনে ঠিক করে নিয়েছে সে এর শোধ তুলবে যে করেই হোক
.
হুম পারফেক্ট,নেক্সট টাইম আমার বাগানে প্রবেশ করবা না তুমি ওকে?
এখন বের হও আমার বাগান থেকে
.
আহানা দাঁতে দাঁত চেপে চলে যাওয়ার সময় হাতের কিছু কাদা শান্তর গায়ে লাগিয়ে এক দৌড় মারলো
.
ইস!এই মেয়েটা এত দুষ্টু,আজকে আমাকে দিয়ে ১০০বার গোসল করিয়েছে,বেয়াদব!এরে হাতের কাছে পাই সিউর আমি ওরে কাদা খাওয়াবো
শান্ত আহানাকে বকতে বকতে আবার গোসল করতে চলে গেলো
চলবে♥

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে