প্রেমের পাঁচফোড়ন ২ পর্ব-৯+১০+১১

0
2057

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৯
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আপা আজ আসি তাহলে,আবার নাহয় একদিন আসবো
.
শান্তর মা আহানার মায়ের হাত ধরে মাথা নাড়িয়ে না বুঝালেন
আহানার মা কিছুটা বিস্মিত হয়ে বললেন”আপা অনেক রাত হয়েছে,আর থেকে কি হবে?”
.
শান্তর মা বারবার মাথা নাড়াচ্ছেন
.
শান্ত তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছে হাঁচি দিতে দিতে এসে বললো “থেকে যান আন্টি আমি বরং আপনার ধানিলঙ্কাকে বাসায় দিয়ে আসবো”
.
না বাবা ওকে একা রাখা যাবে না,মেয়ে মানুষ,কত বিপদ আপদ হয়,বরং আমি যাই ওকে নিয়ে
.
শান্তর মা শান্তর দিকে চোখ বড় করে তাকালেন
শান্ত অসহায় লুক নিয়ে বললো”আচ্ছা তাহলে আহানাকে নিয়েই থাকেন,কোনো সমস্যা নেই”
কথাটা বলে শান্ত নাক ডলতে ডলতে নিজের রুমে ফিরে আসলো
আহানা বাথরুম থেকে হাত ধুয়ে বাইরে বের হয়ে শুনলো মা বলতেছে আজ তারা এখানে থেকে যাবে
আহানা মনে মনে ভাবলো “গন্ডারটা তো তাহলে ভালো করে জ্বালাবে”
ওপাশ থেকে জোরে জোরে হাঁচির আওয়াজ আসতেছে
মা হুইলচেয়ার ঘুরিয়ে ড্রয়ার থেকে ঔষধের পাতা নিয়ে রিপার হাতে দিলো শান্তকে দিয়ে আসার জন্য
রিপা তখন বুয়াকে সব বুঝিয়ে দিচ্ছে কি করে মাংসে ফোড়ন দিবে
তাই সে ঔষধের পাতাটা টেবিলের উপর রেখেই কাজে মন দিলো
আহানার অপরাধবোধ ফিল হচ্ছে কারণ তার জন্যই আজ শান্ত কতবার শাওয়ার নিয়েছে আর তাই এখন ওর ঠাণ্ডা লেগেছে
তাই ঔষুধের পাতা নিয়ে সে পা টিপে টিপে শান্তর রুমের সামনে আসলো
রুমের দরজা বন্ধ,বাইরের করিডোরটা সম্পূর্ণ অন্ধকার
আহানা ঢোক গিলে দুবার নক করলো দরজায়
শান্ত শুয়ে শুয়ে টিভি দেখতেছিলো,দরজায় নক হতেই বিছানা থেকে নেমে একটা টিসু দিয়ে নাক মুছতে মুছতে দরজা খুলতেই দেখলো আহানা ভূত দেখার মত চেয়ে আছে ওর দিকে
.
কি চাই?আবার কাদা লাগাতে আসছো?১০০বারে শান্তি হয়নি তোমার??তোমার কারণে আমাকে সর্দি জ্বর ধরেছে,কাল অফিসে যাওয়াটা টাফ হয়ে যাবে আমার জন্য
.
😒তো আমি কি হুদাই এসব করসি নাকি
.
তোমার সাথে ঝগড়া করার মুড নাই আমার এখন বের হও এখান থেকে
.
ধরেন ঔষুধ!আন্টি আপনাকে এটা খেতে বলেছে.আমি এমনি এমনি আসিনি এখানে হুহ!
.
শান্ত প্যারাসিটামলের পাতাটা হাতে নিয়ে সেটার দিকে চেয়ে মুচকি হেসে তারপর আহানার দিকে তাকালো
ছোটবেলার সব ঘটনা শান্তর মনে থাকলেও আহানার কিছু মনে নেই
কারণ তখন সে ৪বছরের ছিল,এখন ২১বছরে পা রেখে ৪বছরের ঘটনা মনে থাকার কথা না যদিও
শান্ত তখন ৮বছরের ছিল হয়ত,তাই তার স্পষ্ট সবটা মনে আছে
.
কি?এমন করে আসামিদের মতন হাসতেছেন কেন?
.
আমার টেডি স্মাইল তোমার কাছে আসামিদের হাসির মতো লাগে?
.
অবশ্যই,ঐ যে একদল আসামি আছে না,জেলে ঢুকার সময় বলে”হেহে আমি তোমাকে ছাড়বো না,হেহে!!আমি কাল পরশু বেরিয়ে পরবো হেহে! ওরকম
.
আমার সাথে কিসের তুলনা করতেছো,তুমি নিশ্চয় যুক্তিবিদ্যায় ফেল মারতা তাই না?
এসব যুক্তি দিয়ে অন্তত পাশ করা সম্ভব নাহ
.
এক্সকিউজ মি!আমার সাবজেক্ট যুক্তিবিদ্যা না ইসলাম শিক্ষা ছিল
.
ওহ আচ্ছা তাই তো বলি যুক্তিতে এত কাঁচা কেন
.
বাই!আপনার সাথে ঝগড়া করার কোনো মুড নাই আমার
.
এই দাঁড়াও দাঁড়াও
.
আবার হাত ধরসেন আমার,আপনার চরিত্র এমন ঢিলা কেন?কথায় কথায় মেয়েদের হাত ধরেন,বেয়াদব মার্কা স্বভাব
.
ছিং মার্কা পোস্ট থেকে বেয়াদব মার্কা স্বভাব! হোয়াট এ লজিক
.
একটা হলেই হলো,হাত ছাড়ুন বলছি
.
আমি ঔষুধ খাব আর তুমি খালি মুখে বসে থাকবা?তা তো হচ্ছে না
.
আহানা ব্রু কুঁচকে বললো”তো কি করবেন এখন?”
.
শান্ত চুপচাপ পাতা থেকে ঔষুধ বের করে পানি দিয়ে নিজে খেয়ে নিলো
আহানা এখনও বোকার মতন চেয়ে আছে ওর দিকে
শান্ত আরেকটা ঔষধ বের করলো তারপর দাঁত কেলিয়ে আহানার মুখ টিপে ধরে ওর মুখের ভিতর ঔষধ ঢুকিয়ে পানিও খাইয়ে দিলো সাথেসাথে
আহানা কাশতে কাশতে দূরে চলে গিয়ে বললো”আপনি একটা বেয়াদব! আপনার অসুখ বলে আপনি ঔষুধ খাইছেন ভালো কথা,আমাকে কেন খাওয়াইলেন?আমার কোনো অসুখ নাই শুধু শুধু আমাকে ওষুধ খাওয়াইলেন কেন?
.
আমি ঔষুধ খেলে তুমিও খেতে হবে,তোমার অসুখ থাক বা না থাক,ছোটবেলা থেকে এটাই চলে আসছে
.
আহানা কথা থামিয়ে ভাবনায় পড়ে গেলো,এ ব্যাপারে মা একবার ওকে বলেছিলো,ছোট বেলায় শান্ত ঔষুধ খেলে আহানা খিলখিল করে হাসতো তাই সে আহানাকে জোর করিয়ে সেম ঔষুধটা খাইয়ে দিয়ে নিজে হাসতো
.
তততততততো মানে কি,আমি কি এখন হাসতেসিলাম নাকি?
.
শান্ত মুখটা বাঁকিয়ে হাত দিয়ে থুতনি ডলতে ডলতে বললো”তাই তো!!আসলে আমার মনে হয় তুমি সেই আহানা না
সেই আহানা হলে হাসতো এখন
.
শুনুন!আমার আর কাজ নাই আপনাকে প্রমাণ দেওয়ার যে আমি আহানা নাকি অন্য কেউ!ফালতু!
আর একটা কথা আপনি ঔষধ খাওয়ার সময় হাসতাম কেন জানেন? ছোট বেলায় কেন হাসতাম জানি না তবে আজও হাসি আসছিল বাট আমি হাসিনি,কারণ হুদাই ঝগড়া বাড়ানোর ইচ্ছা আমার নাই
আপনি ঔষুধ হালকা চুষে তারপর পানি দিয়ে গিলে ফেলেন বলে হাসি পাচ্ছিলো,হয়ত ছোটবেলায় ও এমন করে খেতেন তাই আমি হাসতাম,আজ হাসিনি কারণ এখন আমি যথেষ্ট বড় হয়ে গেছি
.
ইহ লে কত বলো হয়ে গেছে লে!!
.
আহানা চোখ রাঙিয়ে রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেলো রুম থেকে
এই জন্য মানুষের ভালো করতে নেই
এই লোকটা সুন্দর করে কোনো কথায় বলতে পারে না
.
আহানা ড্রয়িং রুমে আসতেই দেখলো শান্তর মা ওর মাকে আর রিপাকে নিয়ে ভিতরের রুমে আছেন
তাদের দেখা যাচ্ছে,আহানা ভিতরে ঢুকতেই ইয়া বড় হা করলো
শাড়ী আর শাড়ী,রিপা আলমারি থেকে এক এক করে বের করছে,সব সুতির শাড়ী
মা আহানাকে দেখে মুচকি হেসে বললেন”দেখ না আহানা,বুবু আমাকে এত এত শাড়ী দিচ্ছে পরার জন্য,আমি মানা করলাম উনি আমার মানা শুনেনই না
.
আহানা একটা শাড়ী হাতে নিয়ে বললো”বাহ এটা তো বেশ সুন্দর,খয়েরী রঙের সুতির শাড়ী সবসময় সুন্দর হয়”
.
শান্তর মা হাত বাড়িয়ে আহানার দিকে ধরলো শাড়ীটা
.
না আন্টি!আমি শাড়ী ঠিক করে পরতে পারি না😰কখনও পরি নাই,সবসময় থ্রি পিস পরি
.
তারপরেও শান্তর মা হাত বাড়িয়ে ধরেই রেখেছেন তাই আহানা বাধ্য হয়েই শাড়ীটা হাতে নিলো
গেস্ট রুমে আহানা আর তার মা শুবে,রিপা তাই সেই রুম রেডি করতেছে
আহানা শাড়ীটা নিয়ে সেই রুমটায় আসলো,গেস্ট রুম যেমন হয় আর কি
একটা বিছানা,একটা ওয়ারড্রোব আর ড্রেসিং টেবিল
আহানা শাড়ীটা বিছানার উপর রেখে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো
বড় করে একটা শ্বাস নিয়ে সামনে তাকালো,রুমটা শান্তর মায়ের পাশের রুম বলে গন্ধরাজ ফুলের বাগানটা হালকা দেখা যাচ্ছে,
আহানা মাথা উঁচু করে দেখার চেষ্টা করছে গন্ধরাজ ফুলগুলো
পরক্ষনেই ডাক পড়েছে মায়ের
সবাই খেতে বসেছে তাই আহানাকে ডাকতেছে ওর মা
মায়ের মুখে আজ কতটা দিন পর আহানা হাসি দেখেছে
মায়ের ডাকে সে ডাইনিংয়ে আসতেই দেখলো শান্ত ওর দিকে চেয়ে ব্রু কুঁচকে চেয়ার টেনে বসতেছে
.
আহানা ওর বরাবর সামনের সিটে বসলো,সেটাই খালি পেলো তাই
শান্ত লেটুস পাতার সালাদ,গাজরের স্যুপ আর মাসরুম দিয়ে একটা রেসিপি করা হয়েছে সেটা খাচ্ছে,প্রতি বৃহস্পতিবার সে এটা খায় নিয়ম করে,হেলথ ভালো থাকে
আহানা ভাতে মাংস নিয়ে নাড়িয়ে মুখে দিতে দিতে শান্তর খাওয়া দেখছে
শান্ত ফোন টিপতে টিপতে চামচ কেটে কেটে স্যুপ খাচ্ছে
নিতু আহানার পাশে বসে চামচ দিয়ে ভাত খাচ্ছে
আর মা এক লোকমা মুখে দিয়েই হাজার কথার উৎপত্তি ঘটাচ্ছেন,আসার পর থেকে ২ঘন্টা হয়ে গেছে অথচ মায়ের কথাই শেষ হচ্ছে না এখনও
.
শান্ত মাসরুম মুখে দিয়ে চোখ বড় করে আহানার দিকে তাকাতেই আহানা আরেকদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলো সাথেসাথে
শান্ত যে উদ্ভট খাবার তৃপ্তি নিয়ে খাচ্ছে তাই পর্যবেক্ষন করছিল আহানা কিন্তু তা আর হলো না,শান্ত যে লুক নিয়ে তাকালো বাবারে মারে!!
আহানা আর দ্বিতীয় বার মুখ তুলে ওকে দেখতে যায়নি
শান্ত পুরো খাবার শেষ করে উঠে চলে গেলো নিজের রুমের দিকে,ঔষুধ খেলো না কারণ তখন ৮টার সময় খেয়েছিলো
মা আর শান্তর মা এখনও খাচ্ছেন,নিতু এঁটো করে চলে গেছে সেও বেশি খায়নি
আহানা নিজের খাবার শেষ করে রুমে গিয়ে বিছানায় ধপ করে বসে পড়েছে,কাল তো ভার্সিটি নাই,আছে শুধু টিউশনি,যাক শান্তিতে একটু ঘুমাবো তাহলে
আহানা বালিশ টেনে শুয়ে পড়েছে
পরেরদিন ভোর হতেই অভ্যস মতন আহানা জেগে গেলো
মা পাশেই ঘুমাচ্ছেন,আহানা বিছানা থেকে নেমে পা টিপে টিপে রুম থেকে বের হয়ে এবার বাসা থেকে বের হলো
সবাই ঘুমাচ্ছে
আশেপাশে সব খানে আম গাছ খুঁজলো সে কিন্তু পেলো না
যাক বাবা ব্রাশ করবো কি দিয়ে,ধুর ধুর!
তারপর আহানার নজরে পড়লো ছাদে আমগাছের পাতা দেখা যাচ্ছে
কিন্তু আমগাছ তো এত ছোট হয় না তাহলে?
যাক গে আগে দেখে আসি ব্যাপারটা কি
আহানা এবার এক দৌড়ে ছাদে চলে আসলো,ওমা এটা দেখি মিনি সাইজের আমগাছ,টবে করা,দুটো পাতা নিলে কিছু হবে না
আহানা পাতা দুটো নিয়ে দাঁতে ঘষতে ঘষতে পুরো বাড়ি হেঁটে হেঁটে দেখছে
নিতু কোলবালিশ জড়িয়ে ঘুমাচ্ছে তার রুমে
শান্তর মা নিজের রুমে হুইলচেয়ারে বসে বসেই নামাজ পড়ছেন,আহানার মাও ততক্ষণে উঠে নামাজে দাঁড়িয়েছেন
আর শান্তর রুমের দরজা বন্ধ,রুমে ঢুকলেই দরজা বন্ধ করে ফেলে,মনে হয় রুমে মণিমুক্তা লুকানো আছে,ঢং!
.
আহানা এবার বাগানের দিকে আসলো,সূর্যমুখী ফুলের বাগানটা ভোরবেলার আলোয় জাস্ট অসাধারণ লাগতেছে তা বলে বুঝানো যাবে না
আহানা পা উঁচু করে শান্তর রুমের বারান্দার দিকে একবার তাকালো,বারান্দার দরজা বন্ধ
সে এবার দাঁত কেলিয়ে বাগানটায় ঢুকে পড়লো,আহানার নিজের কাছে হাঁটতে কি ভালো যে লাগছে
দুপাশে বড় বড় ফুল আর ফুল
তার উপর জ্বালানোর মতন কেউ নেই
শান্ত গভীর ঘুমে কিন্তু তার এত সুন্দর ঘুমটা নষ্ট করলো ঊষা
ফোন করেই আগে ১০বার সরি বললো সে
.
আচ্ছা ফাইন,সরি বলা অফ দিয়ে আগে বলো কল কেন করেছো?
.
স্যার অফিসে আপনার থাইল্যান্ডের ক্লাইন্ট এসেছেন,ঐ যে নাম হলো জেমস স্টেভেন
.
এ সময়ে?
.
স্যার উনি কিসব ভাষায় বলতেছেন আমি কিছুই বুঝতেছি না,থাইল্যান্ডের ভাষা তো অনেক টাফ তাই না
.
আচ্ছা!উনাকে ফোন দাও
.
ওকে স্যার
.
শান্ত গুগল সার্চ করে অনেক কষ্টে জেমসের সাথে কয়েকটা কথা বললো,লোকটা ইংরেজী পারে কিন্তু বলবে না
শান্তকে পেরেশানিতে ফেলার জন্যই এত ঢং করছে
শান্ত ও নিরুপায়, ক্লাইন্ট তো ক্লাইন্ট হয়,এরে তো হাত ছাড়া করা মানে টাকা লস
তো কথা বলে সে যা বুঝলো সেটা হলো উনি এসময়ে শান্তর সাথে মিট করতে চান,এবং তিনি শান্তর বাসায় এসে বাঙালিয়ানা খাবার ও খেতে চান,শান্ত লজ্জায় পড়ে উনাকে বাসায় ইনভাইট করে ফেললো
ফোন রেখে চুল টানতে টানতে বিছানা থেকে নামলো সে
বাঙালিয়ানা রান্না খাবে, মন তো চাচ্ছে মরিচ বেটে খাওয়াই দি,কিন্তু না,শান্ত কুল ডাউন!আরামসে হ্যান্ডেল করো নাহলে ১০লাখের ডিল ক্যানচেল হবে
শান্ত বারান্দার দরজা খুলে বাইরে বের হতেই আহানার মুখ দেখলো
আহানা কোমড়ে হাত দিয়ে আম পাতা নিয়ে দাঁত খোঁচাচ্ছে আর মাঝে মাঝে কোমড় থেকে হাত নামিয়ে সূর্যমুখী ফুল ধরে ফুল নাড়াচ্ছে
.
উফফফফ!এই মেয়েটার মুখ দেখলাম সকাল সকাল
আজ সারাটাদিন আমার খারাপ যাবে!আবারও আমার বাগানে ঢুকছে
এই আহানা!
.
এ্যা!কে কে?
আহানা চমকে পিছন ফিরে তাকালো
শান্ত অগ্নি দৃষ্টিতে চেয়ে বললো”তোমার সাহস তো কম না!আবারও আমার বাগানে ঢুকছো,বের হও নাহলে এখানে এসে তোমার চুল ছিঁড়বো আমি”
.
আহানা ব্রু কুঁচকে হেঁটে চলে যেতে নিতেই শান্ত বললো দাঁড়াতে
.
আবার কি?
.
এই তোমার হাতে এটা কি
.
আহানা চেয়ে বললো” আমার হাতে তো আম পাতা,কেন চোখে দেখেন না?”
.
সেটা তো দেখতেছি,কোথা থেকে নিসো এটা?”
.
কই থেকে আবার?এমন একটা এরিয়াতে থাকেন যেখানে আমগাছ নাই,ভাগ্যিস ছাদে মিনি একটা আম গাছ পেলাম,সেটার পাতা দিয়ে কাজ চালাচ্ছি আপাতত
.
কিহহহহহ!আমার আম গাছের পাতা ছিঁড়ছো তুমি!!
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_১০
#Writer_Afnan_Lara
🌸
বেশি না,শুধু ২টা পাতা ছিঁড়সি
.
থাকো ওখানে,আমি আসতেছি,একদম নড়বা না
.
শান্ত রুম থেকে বেরিয়ে বাগানে এসে দেখলো আহানা উধাও,ছিটেফোঁটা চিহ্ন ও নেই
শান্ত রেগে মেগে বাসার দিকে গিয়ে বুয়াকে বললো বিরিয়ানি রাঁধতে আজকে দুপুরের জন্য আর এখন রুটি ভাজি,ডিম এসব তৈরি করতে ওর ক্লাইন্ট আসতেছে তাই
.
আহানা বাসার বাইরে লুকিয়ে পড়ছিলো,শান্ত চলে গেছে দেখে সে ভিতরে চলে আসলো আবার
বাপরে বাপ এক বাঁচা বেঁচেছি আর একটুর জন্য জ্যান্ত কবরই দিয়ে দিতো আমাকে
একটা ক্যাব এসে থামলো শান্তদের বাসার গেটের বাইরে
আহানা পিছন ফিরে সেদিকে তাকিয়ে আছে
একটা বেলু লোক বের হয়েছে ক্যাব থেকে,পরনে কোর্ট প্যান্ট আবার ছাগইল্লা দাঁড়িও আছ দেখছি,!
লোকটা আসতেই দারোয়ান গেট খুলে দিলো
আহানা এখনও লোকটাকে দেখে যাচ্ছে পা থেকে মাথা পর্যন্ত
লোকটা ভিতরে ঢুকে আহানার দিকে তাকিয়ে দেখে নিলো একবার
আহানার গায়ে হালকা সবুজ রঙের থ্রি পিস একটা আর হাতে আম পাতা,চুল উসকো খুসকো
লোকটা তার টাই ঠিক করে বললেন “สวัสดีคุณเจ๋ง(আপনি শান্তর কি হোন?)
.
আহানা চোখ বড় করে তাকিয়ে বললো”কি?কি বললেন
এটা আবার কোন দেশের ভাষা?”
.
লোকটা হেসে বললো”ฉันชื่อเจมส์สตีเวน(আমি জেমস স্টেভেন)
.
কি কয় এই বেডা কিছুই তো বুঝি না😒
.
শান্ত দূর থেকে জ্যাকেট পরে আসতে আসতে বলতেছে”
ยินดีต้อนรับสู่บ้านของเรา Mr. James Steven(আপনাকে স্বাগতম মিঃ জেমস স্টেভেন)
.
আহানা চোখটা বড় করে ভাবলো তারে কি ঘুমে ধরলো নাকি
চোখ ভালো করে ডলে আবার ভাবলো হঠাৎ করে মানুষের মুখের ভাষা উল্টা পাল্টা শুনতেছি কেন
কানে আঙ্গুল দিয়ে খুঁচিয়ে আবারও শুনার চেষ্টা করলো সে
লোকটা এবার বলতেছে”ผู้หญิงคนนี้คือสิ่งที่คุณเป็น(এই মেয়েটা তোমার কি হয়”
.
শান্ত গুগল সার্চ করে কথাটার মানে বের করে মুচকি হাসলো তারপর বললো”ญาติของฉัน(আমার রিলেটিভ)”
.
লোকটা Ohh বলে শান্তর সাথে বাসার দিকে চলে গেলো
আহানা ব্রু কুঁচকে ভাবতেছে এলিয়েনের মত কি কথা বললো এরা এতক্ষণ ধরে কিছুই তো বুঝলাম না আমি
.
শান্ত মিঃ জেমসকে সোফায় বসতে বলে বুয়াকে ডাক দিলো
আহানা চোরের মত পা টিপে টিপে সামনে দিয়ে হেঁটে মায়ের কাছে চলে এসেছে
তারপর মাকে সবটা খুলে বলার পর থেকে মা হাসতেছে ওর কাজের কথা শুনে
শান্ত মিঃ জেমসকে নিয়ে আলোচনা করতে করতে নাস্তা করতেছে
আহানা দরজার কোণায় উঁকি দিয়ে তাদের কথাবার্তা শুনে এর অর্থ বের করায় ব্যস্ত পরে আগামাথা কিছু না বুঝে একটু একটু করে পা বাড়িয়ে সে শান্তর রুমের দিকে চললো
প্রতিদিন শান্ত দরজা লক করে রাখে কেন এতে সে রহস্যের গন্ধ পেয়েছে তাই একবার শান্তর রুমটা ভালো করে দেখবে সে
রুমে ঢুকে দরজাটা আলতো করে আটকে ফেললো আহানা
যাতে কেউ সন্দেহ না করে
তারপর চোখ বুলিয়ে রুমটা দেখায় মগ্ন হলো সে
পুরো রুমটার দেয়ালে হলুদ কালারের রঙ করা,আর বিছানার চাদরটাও পুরো হলুদ রঙের,গন্ডারটার মনে হয় হলুদ অনেক পছন্দের
আহানা এবার আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো,তারপর নিজেকে একবার দেখে নিয়ে চুল ঠিক করে দাঁত কেলিয়ে বারান্দার দিকে চললো
শান্ত খাওয়া শেষ করে জেমসকে বসতে বলে নিজের রুমের দিকে আসতেছে
আহানা চারিদিক হেঁটে হেঁটে দেখে চলে যাওয়ার জন্য দরজা খুলতেই দেখলো শান্ত আসতেছে করিডোর দিয়ে
শান্তকে আসতে দেখে চোখ বড় করে সে দরজার পিছনে লুকিয়ে পড়লো জলদি করে
শান্ত রুমে এসে আলমারি থেকে একটা ফাইল বের করে তারপর অফিসে পরে যাওয়ার শার্ট বের করলো
এরপর বিছানায় সেগুলো রেখে গায়ের জামা সব এক এক করে খুলতেছে সে,রেডি হয়ে অফিসে যাবে
আহানা গভীর ভাবনায় আছে, কোনদিকে যাবে কি করবে সেটাই ভেবে যাচ্ছে সে
শান্ত গায়ের জ্যাকেটটা খুলতেই ওর মনে হলো রুমে অন্য কেউ আছে,কড়া দৃষ্টিতে সে দরজার পিছনের দিকে তাকালো
আহানা দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে দাঁড়িয়ে আছে
.
তুমি!!
.
আহানা শান্তর ধমকে মুখ থেকে হাত সরিয়ে বললো”সরি!এক্সিডেন্টলি আপনার রুমে ঢুকে পড়েছি আর এক্সিডেন্টলি আটকেও গেসি,বাই বাই
কথাগুলো বলে আহানা এক দৌড়ে পালালো
শান্ত হাতে শার্ট নিয়ে ব্রু কুঁচকে সেদিকে তাকিয়ে আছে
এই মেয়েটার মাথা পুরাই নষ্ট!
.
আহানা হাঁপাতে হাঁপাতে ড্রয়িং রুমের সামনে দিয়ে মায়ের কাছে যাচ্ছিলো তখনই মিঃ জেমস হেসে ওর দিকে তাকালো কিছু বলার জন্য
আহানা প্রচণ্ড রেগে আছে, জেমস কিছু বলার আগেই সে বললো”তাইল্লা দোলা চুপ থাক,তোর লটরপটর ভাষা আমি বুঝবো না,হুদাই আমাকে এসব ভাষায় কিছু বলতে আসবি না,বেইল্লার ঘরের বেইল্লা!হুহ!”
কথা শেষ করে আহানা ভিতরের রুমে চলে গেলো
মিঃ জেমস থ হয়ে বসে আছেন
আহানা কি বললো তার এক শব্দ ও তিনি বুঝলেন না এখন তার মনে হচ্ছে শান্তকে যখন তিনি তার ভাষায় কথা বলেন তখন শান্তর কেমন মনে হয়,তারপরে গুগল ট্রান্সলেট বের করে আহানা যা বললো তার থেকে “বেইল্লা”শব্দটা মনে আছে তার
সেটা লিখতেই থাইল্যান্ডের ভাষায় অনুবাদ হলো বেইল্লা অর্থ বেলু
উনি তো চোখ বড় করে কিছুক্ষন চেয়ে রইলেন,এই মেয়েটা তাকে বেলু বললো!
.
শান্ত রেডি হয়ে এসে জেমসকে নিয়ে অফিসের দিকে চলে গেছে
মা আর আহানার আম্মু গল্প করতেছেন
আহানা রুমের দরজা ভালো করে লাগিয়ে শাড়ী পরা প্র্যাকটিস করতেছে
সবই ঠিক আছে কিন্তু শাড়ীর কুচি সমান সমান হয় না কেন?
আর আঁচলটা বারবার পড়ে যাচ্ছে কেন,কি ঝামেলা!
আহানা এই নিয়ে ১৭বার ট্রাই করেছে
একবার কুচি ঠিক হয় না তো একবার আঁচল পড়ে যায় আর নয়ত আরেকবার দেখে পুরা শাড়ীই সে উল্টা পরেছে
হাঁপাতে হাঁপাতে আবারও চেষ্টা করছে সে
এক দুই তিন চার!কুচি তো ঠিক হলো তবে কুচি গুছিয়ে কোমড়ে গুজে দিলে এমন ফুলে থাকে কেন?
মনে হয় যেন আমি গর্ভবতী,মাকে কত করে বললাম শিখায় দাও কিন্তু না মা তো গল্প করায় ব্যস্ত!
রিপা আপু বুয়ার সাথে রান্নাঘরে কাজ করছে তাকে জ্বালানো যাবে না
করবো তো কি করবো??
আমি বরং এক কাজ করি আমাদের বাসায় গিয়ে আমার আরেকটা জামা নিয়ে আসি তাহলেই হলো!
আহানা শাড়ীটা রেখে তার জামা পরে মাকে বলে বেরিয়ে পড়লো
বাসা থেকে একটা জামা নিয়ে ফেরত আসবে আবার
শান্তর মা বলেছে আজও এখানে থেকে যেতে
আহানা বাসায় এসে দরজা খুলে নিজের একটা জামা নিয়ে আবার বের হয়ে দরজায় তালা লাগিয়ে পিছন ফিরতেই দেখলো রতন দাঁড়িয়ে আছে ওর সামনে,পান চিবাচ্ছে
আহানা ব্রু কুঁচকে পাশ দিয়ে হেঁটে চলে যেতে নিতেই রতন পথ আটকালো ওর
.
কি ব্যাপার আহানা!!কাল রাতে নাকি তোমরা বাসায় ছিলা না?তো এখন এলা তো আবার কই যাচ্ছো?
.
কোথাও না,সর আমার পথ থেকে
.
আগে আমার কথার উত্তর দাও তারপর যেতে দিব
.
আহানা রেগেমেগে রতনকে এক ধাক্কা দিয়ে বললো”আমি যেখানে খুশি সেখানে থাকবো তাতে তোর কি?বেয়াদব!জাহান্নামে যা তুই!”
.
রতন চুপ করে তাকিয়ে রইলো আহানার দিকে
আহানা আর পিছন ফিরে তাকালো না,রতনকে মনে মনে বকতে বকতে সোজা শান্তদের বাসায় ফিরে আসলো সে
রতন আজ কয়েকবছর ধরে ওকে জ্বালাচ্ছে,ওদের এলাকার এক নাম্বারের ছেঁচড়া একটা ছেলে
দালালি করে সংসার চালায়,কত মেয়েকে উঠায় নিয়ে গেছে কিন্তু সে আহানার প্রতি দূর্বল,আহানার রাগ তার ভালো লাগে সবসময়,মোট কথা আহানাকেই ভালো লাগে তার
আহানা ওকে দুচোখে দেখতে পারে না,কারণ এর চরিত্র সম্পর্কে এ টু জেট জানে সে
আহানা বাসায় ফিরতেই দেখলো শান্ত অফিস থেকে ফিরে এখন জেমসকে তার সূর্যমুখী বাগান দেখাচ্ছে
আহানা গাল ভেটকিয়ে পাশ দিয়ে চলে গেলো
রুমে এসে তার জামাটা নিয়ে পরতে নিতেই মা বললো শাড়ীটা পরিয়ে দিবে
আহানা তো মহা খুশি
মা ওকে খুব সুন্দর করে খয়েরী রঙের শাড়ীটা পরিয়ে দিলো
আহানা আয়নার সামনে নিজেকে দেখে বললো”মা আমাকে তো সেই লাগতেছে”
.
এই জন্যই তো বলে “শাড়ীতে নারী”
.
আমি আন্টিকে দেখিয়ে আসি?
.
আচ্ছা যা
.
আহানা খুশি হয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে শান্তর মায়ের রুমের দিকে চললো
উনি আহানাকে দেখে মুচকি হাসলেন তারপর তার বিছানার পাশের ছোট্ট ৪তাকের ড্রয়ার থেকে একটা কাজল বের করে আহানার কানোর পাশে ফোঁটা দিয়ে দিলেন
আহানা উনাকে দেখিয়ে এবার যাচ্ছে রিপাকে দেখাতে
তখনই শান্তর সামনে পড়লো
আহানা দাঁত কেলিয়ে বললো”দেখছেন?আমি শাড়ী পরসি হুহ!”
.
ওহ আচ্ছা তুমি?আমি তো ভাবলাম পাগলা গারতের পাগল বাসায় ঢুকে পড়ে লাফিয়ে লাফিয়ে এক রুম থেকে আরেক রুমে যাচ্ছে
.
আমি পাগল?
.
যাক তাহলে স্বীকার করলে যে তুমি পাগল
.
আপনি পাগল!সাথে করে পাগল নিয়ে ঘুরেন,বেইল্লা!
.
জেমস আবারও বেইল্লা কথাটা শুনে বুঝলেন তাকে আবারও বেলু বললো আহানা
তাই সে ব্রু কুঁচকে তাকালো আহানার দিকে
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে বললো”কি?বেইল্লা কইলাম যে তোর গায়ে লাগছে,বুঝছিস তোরে বেইল্লা কইসি যে?”
.
লোকটা মুখ বাঁকিয়ে শান্তর দিকে তাকিয়ে বললো”เบลูบอกว่าฉันเข้าใจแล้ว แต่ตอนนี้เขาพูดอะไรอีก(বেলু বললো আমাকে সেটা তো বুঝলাম কিন্তু এখন আবার কি বললো)”
.
শান্ত পড়লো মহাবিপদে,কারণ তার ফোন তার রুমে,এখন জেমস কি বললো তার আগা মাথা কিছুই বুঝলো না সে
.
আহানা দাঁত কেলিয়ে বললো”হয়ত আপনি বুঝেননি আপনাকে কি বলেছে কিন্তু আমি বুঝেছি”
.
কি বলেছে?
.
বলেছে”ফাটা টিশার্ট😂!”
.
শান্ত রেগে আহানার চুল টেনে ধরে বললো”ভাগো এখান থেকে,সারাদিন বাঁদরামি করে বেড়ায়”
.
আহানা নিজের চুল থেকে শান্তর হাত ছাড়িয়ে মুখ বাঁকিয়ে রান্নাঘরে চলে গেছে
.
বিরিয়ানি রান্না হচ্ছে,তার সাথে ইলিশ মাছের দো-পেঁয়াজা,চিঁড়ি মাছের মালাইকারি,ভাত ও আছে
আহানা সব দেখে আবার মায়ের কাছে চলে আসলো

জেমস বাঙালী খাবার খেয়ে অনেক খুশি,সে খুশি খুশি চলে ও গেছে,ডিল ফাইনাল
বিকাল হয়ে গেছে,,আহানা টিভি খুলে বসে একটা মুভি দেখতেছে,নিতু পপকর্ণ নিয়ে এসে ওর সাথে বসে আলাপ শুরু করেছে
মা আর শান্তর মা বাগানের ঘুরতে গেছেন
আর শান্ত নিজের রুমে টিভি দেখছে
.
নিতু আহানার হাত ধরে সোফা থেকে নামিয়ে বললো তাকে ছবিতে যে গান চলছে সেই গানের নাচটার কপি শিখিয়ে দিতে
আহানা বললো পারবে না এখন
তাই নিতু কান্নাকাটি জুড়ে দিয়েছে
আহানা বাধ্য হয়ে বললো তাকে কপি করতে,তারপর শাড়ীর আঁচল কোমড়ে গুজে সে ফ্লোরে দাঁড়িয়ে মুভির নায়িকাটার মত নাচা শুরু করলো
সাথে নিতু ও নাচতেছে
দুমদুম আওয়াজ পেয়ে শান্ত টিভি অফ করলো,টিভি অফ করায় আওয়াজটা আরও জোরে শোনা যাচ্ছে,তাই সে রুম থেকে বেরিয়ে ড্রয়িং রুমে এসে দেখলো আহানা নিতুকে নাচ শেখাচ্ছে
শান্ত ব্রু কুঁচকে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে নাটক দেখে যাচ্ছে
আহানা বলতেছে”প্রথমে ডান পা উঁচু করবি তারপর বাম পা
.
শান্ত হাসতে হাসতে বললো”তারপর ধপাসসসসস”😂
.
আহানা নাচ শেখানো থামিয়ে পিছন ফিরে শান্তর দিকে তাকালো,নিতু ও হেসে দিয়েছে শান্তর সাথে সাথে
আহানা মুখ বাঁকিয়ে বললো”তো আপনি শেখান তাহলে,নিজেকে কি মনে করেন?নাচের “ন” ও তো জানেন না আর আপনি আসছেন আমাকে ভেটকাইতে
.
তোমার চাইতেও জোস নাচ আমি নিতুকে শেখাতে পারবো
.
তে শেখান দেখি কেমন অস্কার জেতা নাচ শেখাতে পারেন আপনি
.
শান্ত নিজের ফোনে একটা ইংলিশ গান প্লে করে নিতুকে বললো ওরে কপি করতে
.
নিতু!!প্রথমে হাত এটা ঘুরিয়ে এখান দিয়ে এনে ওখান দিয়ে আনবা
.
তারপর ঘুরিয়ে তোমার ভাইয়ার গালে চড় বসিয়ে দিবা😂
.
শান্ত আহানার দিকে তাকিয়ে রেগে এক দৌড়ানি দিলো
আহানা শাড়ীর কুচি ধরে দৌড় মেরেছে ততক্ষণো
.
এই খবরদার দৌড়াতে দৌড়াতে আমার সূর্যমুখী ফুলের বাগানে ঢুকবা না বলে দিচ্ছি
.
তাহলে আমাকে দৌড়ানি দেওয়া অফ দেন
.
ফাইন,যাও মাফ করে দিলাম
.
আহানা থেমে গিয়ে বললো”মাফ?কিসের মাফ?আমি আপনার থেকে মাফ চাইনি”
.
তাহলে আজ তোমার রক্ষে নেই
.
কি করবেন?আমাকে কিছু করলে আপনার সূর্যমুখীর বাগান আমি ধংস করে দিবো
.
তারপর তোমাকে আমি ছেড়ে দিব তাই না??তোমাকেও ধংস করে দিব
.
আপনাকে আমি বিদ্দবস্ত করে দিব
.
বিদ্দবস্ত মানে?সেটা কি আবার?
.
আপনি বিদ্দবস্ত চিনেন না?
.
বিদ্দবস্ত মানে,ওহহহ আচ্ছা ইউ মিন “বিধ্বংস “??
খোদা!
এই মেয়েটা এসব কি আউলাঝাউলা কথা বলে,আমার মগজ তার জায়গা থেকে নড়ে গেছে এই মেয়েটার কথার মানে বের করতে যাইয়া
এই পাগলের সাথে আর দুলাইন কথা বললে আমিও পাগল হয়ে যাবো
.
আহানা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো”আমি পাগল হলে আপনি পাগল হোল স্কয়ার”
.
আমার মধ্যে পাগলের কি দেখলে তুমি?
.
যে মানুষ সেধে পাগলের সাথে কথা বলতে আসে সে হলো আসল পাগল
.
তাহলে তুমি স্বীকার করছো তুমি পাগল?
.
তার মানে আপনি স্বীকার করছেন আমার সংস্পর্শে এসে আপনিও পাগল হয়ে গেছেন?
.
এই তোরা দুজন থামবি??
এরকম ঝগড়া তো শত্রু শত্রু ও করে না যেটা তোরা করিস
বাপরে বাপ!!আমি আর বুবু দূর থেকে তোদের ঝগড়া দেখতেছিলাম
আমরা নিজেরাই এখন পাগল হয়ে যাবো মনে হয়
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_১১
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আন্টি একটা কথা বলার ছিল আপনার সাথে
.
হ্যাঁ বাবা বলো
.
বাসায় আসুন,সোফায় বসে বলতেছি
.
আহানার মা শান্তর সাথে বাসার ভেতরে চলে গেলো
আহানা শান্তর মায়ের কাছে এসে বসেছে ঘাসের উপর আর ওর মা হুইলচেয়ারে
.
আহানার মা সোফায় বসে শান্ত গলায় বললেন “হুম বাবা বলো কি বলবে”
.
মিঃমজনু শেখ এখন চৌধুরী হয়ে গেছে আন্টি!
আমার অফিসের সাথে পার্টনারশিপ করতে চায় তাও ৫০/৫০,হাহা,আমি তো নাম শুনে কিছুক্ষণ ভাবনায় ছিলাম যে উনি কি সেই মজনু শেখ?নামটা পাল্টে চৌধুরী হয়েছেন,চিনছি কি করে জানেন আন্টি?ইন্ডাস্ট্রির নাম শুনে
আগে ছিল আয়াত লাগজারিস গ্রুপ আর এখন মজনু লাগজারিস গ্রুপ!!
আরে ভাই কপি করলি ঠিক আছে তাই বলে পুরাটা?
.
তো তুমি কি বললে?
.
আমি রাজি হয়ে গেলাম
.
এমন কেন করলে বাবা তুমি তো জানো উনি কিরকম খারাপ লোক তার পরেও কেন তুমি উনার সাথে বন্ধুত্ব করতে গেছো
.
আরে কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলবো তাই তো জেনেশুনে ফাঁদে পা ফেললাম
আর সে আমাকে আর আমার ফ্যামিলিকে চেনে না তাই কাজটা আরও সহজ হলো আমার জন্য,আন্টি আপনি আমাকে জাস্ট ১মাস টাইম দেন,আপনার বাড়ি -গাড়ি সব আমি ব্যাক এনে দিব
.
এটা কি সম্ভব?
.
অবশ্যই সম্ভব! তাকে তার পথ দিয়েই আক্রমণ করবো আমি,আপনি শুধু বলেন আপনাদের গাড়ী কি রঙের লাগবে আর বাড়ি কি রঙের লাগবে
.
আহানার মা মুচকি হেসে বললেন”বাবা পারলে আমাদের আগের বাসা এনে দাও,ওখানে আহানার বাবার সব স্মৃতি
বাসাটা মজনু যার কাছে বিক্রি করেছে সে বিদেশ থাকে বলে বাসাটা পড়েই আছে পরিত্যাক্ত
.
ওকে ডোন্ট ওয়ারি,আমি সেটাই এনে দিব আর ঐ মজনুর যেটা আছে সেটাও মাটিতে মিশিয়ে দিব আমি
.
আমাকে একটা আশা দিলে তুমি
ভাবতেও পারিনি আদৌ এটা ফেরত পাবো কিনা
যদি পাই তাহলে খুব ভালো হতো
.
আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন
.
আহানা উঁকি মেরে দরজার পাশে দাঁড়িয়ে কান পেতে শুনার চেষ্টা করছে যে কি কথা হচ্ছে ওখানে
.
শান্ত কথা শেষ করে নিজের রুমে চলে গেলো
আহানা সাথে সাথে মায়ের কাছে দৌড়ে এসে বললো “এতক্ষণ কি কথা হলো”
মা আহানাকে সবটা বুঝিয়ে বললেন,মায়ের কথা শুনে আহানা ফিক করে হেসে দিয়ে বললো”মঘেরমুলুক নাকি?
দলিল করা সম্পত্তি আবার ব্যাক পাওয়া যায় নাকি,পাগলের প্রলাপ”
.
আরে শান্ত অনেক জোর দিয়ে বললো হলেও তো হতে পারে
.
কচু হবে,হুদাই আমাদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে

আহানা রেডি হচ্ছে টিউশনি করাতে যাবে বলে,রেডি হয়ে বের হতে নিতেই দেখলো শান্ত ও বের হচ্ছে বাসা থেকে
নেভি ব্লু কালারের জ্যাকেট পরে ফোনের দিকে তাকিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কারে উঠলো সে
আহানা দাঁড়িয়ে ভাবলো নির্ঘাত জিএফের সাথে মিট করতে যাচ্ছে কারণ আজ তো শুক্রবার,উনার অফিস তো শুক্রবারে দুপুর পর্যন্ত থাকে রিপা আপু বলেছে আর এখন তো বিকাল
হুমম! হুহ আমার কি!
আহানা সোজা হেঁটে চললো টিউশনির দিকে,পথে রিকসা পেলে জলদি যাওয়া যাবে
এখান থেকে রিকসা নিলে ১৫মিনিট পরই চিত্রাদের বাসা,চিত্রাকে পড়িয়ে তারপর যাবে সিয়াদের বাসায় তারপর আবার ফিরে আসবে সে
চিত্রাকে একটা প্যারাগ্রাফ লিখতে দিয়ে আহানা আনমনে ভাবতেছে শান্তর জিএফটা দেখতে জানি কিরকম!আর শান্তর কি দেখে ওকে পছন্দ করলো সে?শান্তর মধ্যে তো আমি কোনো গুনই দেখি না
মনে হয় যে ওরে পছন্দ করে সে নিজেও একটা পাগল,হিহি
.
ম্যাম
.
হুম বলো চিত্রা
.
হাসতেছেন কেন ম্যাম?
.
না কিছু না এমনি,তুমি তোমার কাজ করো নাহলে চড় মেরে দিব,সারাদিন খালি বকবক!
.
আহানা কি হয়েছে?চিত্রা কি কথা শুনে না?
.
শুনে শুনে,একটু ধমক দিতে হয় আর কি,ওর রেসাল্ট দিসে না আজকে?গ্রেট কত?
.
সেটাই তো বলতে এলাম,,আহানা আমি এত খুশি কি বলবো,এই প্রথম চিত্রা ৯০এর উপর মার্কস পেয়েছে,তোমাকে কি বলে যে ধন্যবাদ দিব
.
যাক আমার ধমক কাজ দিয়েছে,ধন্যবাদ দিতে হবে না আন্টি
ও বড় হয়ে আমাদের মুখ উজ্জ্বল করবে একদিন এটাই তো চাই
.
আন্টি খুশি মনে চলে গেলেন
আহানা আবার ও ভাবনায় চলে গেলো,একবার গিয়ে শান্তর জিএফটা দেখলে ভালো হতো না?মনটা কেমন খচখচ করতেছে,অবশ্য আমি তো জানি না সে এখন কোথায়
ফলো করলে ভালো হতো,কিন্তু উনারে ফলো করতে গেলে তো আমারই টিউশন মিস যেতো
আহানা চিত্রাকে পড়ানো শেষ করে বাসা থেকে বের হতেই সিয়ার আম্মু ফোন করে জানালেন তারা আজ পার্কে ঘুরতে গেছেন তাই আজকে আহানা যেন পরাতে না আসে
আহানা তো মহাখুশি,এখন কথা হলো সে কি করবে,তার তো মন চাচ্ছে শান্ত এখন কি করতেছে সেটার সূত্র বের করতে
কিন্তু করবে তো কি করে!পরেই ওর মনে হলো রিপা জানলেও জানতে পারে যে শান্ত কোথায় গেছে
আহানা দেরি না করে বাসার দিকে ছুটলো
একটা কিউট বিকালবেলা,বেশ লাগতেছে
তার উপর রহস্য রহস্যভাব!!সূত্রের অভাব
শান্তর রহস্য বের করবো এই ভেবে বিকালটা কেন জানি আরও ভালো লাগতেছে
আহানা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়িতে ফিরে এসে রিপাকে কথার ছলে জিজ্ঞেস করলো শান্ত কই গেছে
রিপা সাথে সাথে বলে দিলো একটা রেস্টুরেন্টের নাম
আহানা অবাক হয়ে বললো”তুমি জানলে কি করে?”
.
রিপা বললো শান্ত যাওয়ার সময় ওর মাকে বলে গেছে যে সে কোথায় যাচ্ছে
.
আহানা বাসার সামনে দাঁড়িয়ে ভাবলো সে কি রেস্টুরেন্টে যাবে?নাকি যাবে না
গেলে তো অনেক ভালো হয়,শান্তর বিপক্ষে কিছু প্রমান পাওয়া যাবে এরপর থেকে শান্তকে কন্ট্রোলে আনাও যাবে
ভাবতে ভাবতে সে হাতের পার্সটার ভিতরে টাকা গুনলো
গুনে গুনে ২০টাকা আছে,২টা ১০টাকার নোট
আর রেস্টুরেন্ট টাতে যেতে ৩০টাকা লাগবে,মায়ের কাছে তো কোনো টাকা নাই,আহানার কাছে টাকা আরও আছে তবে সেগুলো তাদের বাসায়,আবার তাদের বাসায় যেতে হলে সন্ধাও হয়ে যাবে,আমি বরং আসার সময় হেঁটে আসবো
আহানা তাই একটা রিকসা নিলো কোনো মতে রেস্টুরেন্টের কাছাকাছি আসলে তারপর বাকিটা হেঁটে যাওয়া যাবে এই ভেবে
তো রিকসাআলা ওকে রেস্টুরেন্টটার এক কিলোমিটার আগেই নামিয়ে দিয়েছে
আহানা উনাকে জিজ্ঞেস করলো রেস্টুরেন্টটা কোথায় উনি বললেন “সোজা গিয়ে বাম পাশে”
আহানা এবার জোরে সোরে হাঁটা ধরেছে,হাঁটতে হাঁটতে হাঁপিয়ে গিয়ে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে দালানের দিকে তাকালো
মুখ খানিকটা উঁচু করেই তাকাতে হয়েছে এত বড় দালান,১৯/২০তলা হবে
ইয়া বড় দালান, ৬তলায় রেস্টুরেন্ট দেখা যাচ্ছে,মানুষ বসে গসিপ করতেছে এটাও দেখা যাচ্ছে কারণ দেয়ালের গ্লাস স্বচ্ছ
তো যেমন ভাবা তেমন কাজ,আহানা লিফটে উঠে আসতেছে সেখানে
মনে মনে সে মহা খুশি,আসার সময় নিতুর থেকে ক্যামেরাও এনেছে এটা দিয়ে ভালো মানের ছবি তুলে শান্তকে ব্ল্যাকমেইল করবে সে
রেস্টুরেন্টে এসে এদিক ওদিক তাকিয়ে একটা কোণায় সে শান্তকে দেখলো
শান্ত বকবক করে কথা বলেই যাচ্ছে আর তার সামনে মনে হয় একটা মেয়ে বসে আছে,চুল দেখে মনে হয় মেয়ে,ইয়া বড় বড় চুল
আহানা লুকিয়ে লুকিয়ে শান্তদের পাশ থেকে কয়েক সিট দূরে এসে বসেছে
ওড়না দিয়ে ঘোমটা দিয়ে ক্যামেরা অন করলো সে
পিছন থেকে করচ করচ করে কয়েকটা ছবি তুললো,আরেকটা তুলতে যাবে এসময়ে ওয়েটার এসে হাজির
দাঁত কেলিয়ে সে বললো অর্ডার দিতে
আহানা পড়লো মহা বিপদে,তার কাছে তো একটাকাও নেই,কি করবে এখন,রেস্টুরেন্টে এসেছে যখন কিছু তো খেতে হবে তা না হলে তো ওরা ওকে বসতে দিবে না
আহানা সবদিক ভেবে বললো ঐ যে লোকটা দেখছেন আমার ভাইয়া হয়,টাকা উনার থেকে নিয়েন,আমি এখানে আসছি আমার ভাইয়ার কাজের তদারকি করতে,এখন আপাতত আইসক্রিম দিয়ে যান একটা
ওয়েটার হেসে চলে গেলো
আহানা এবার ছবি তুলবে মেয়েটার মুখ সহ
এগোতে এগোতে অনেকটা কাছে চলে এসেছে সে
ক্যামেরা ঠিক করে ভালো করে ছবি তুলার জন্য মেয়েটার দিকে তাকাতেই আহানা ৪৪০ভোল্টের ঝটকা খেলো একটা
এটা দেখি পোলা!!!!
আহানা ইয়া বড় হা করে কাছে এসে ছেলেটার চুল ধরে দেখতে লাগলো
তারপর ছেলেটার গোফ ধরে টানাটানি শুরু করে দিলো সে
শান্ত আহানাকে দেখে চমকেছে তার চেয়ে বেশি চমকেছে আহানা যখন ছেলেটার চুল আর গোফ টানাটানি শুরু করে দিয়েছে
শান্ত কিছু বুঝে উঠতে না পেরে আহানাকে টেনে ছেলেটার কাছ থেকে সরিয়ে আনলো
নাহলে সে আর একটুর জন্য ছেলেটার চুল দাঁড়ি সব তুলেই নিয়ে আসতো
.
আহানা শান্তর দিকে তাকিয়ে বোকার মত প্রশ্ন করে বসলো
আর সেটা হলো”আগে বলুন এটা মেয়ে না ছেলে?”
.
শান্ত ফিসফিসিয়ে বললো”তুমি এখানে কি করতেসো?”
.
আমার প্রশ্নের উত্তর দিন
.
অবিয়াসলি ছেলে,গোফ দেখো না?যেটা ধরে টানতেছিলে এতক্ষণ
.
গোফ তো দেখেছি,সাথে এক হাত লম্বা মাথার চুল ও দেখতেছি তাই কনফিউশানে আছি এটা কি আসলে
.
শান্ত ছেলেটাকে এক্সকিউজ মি বলে আহনাার হাত ধরে দূরে নিয়ে আসলো
“শুনো এটা আমার ক্লাইন্ট!উনার সাথে মিট করতে এসেছি আমি,তুমি এখানে আসছো কেন সেটা বলো?”
.
বেডা না বেডি,কইতে আপনার এত সময় কেন লাগে বুঝি না আমি
.
এটা ছেলে,কথা শুনো নাই তুমি?অনেক ছেলেরা চুল বড় রাখে এমন,আগে দেখোনি
.
বাহ তো
.
ভালো,দেখা হয়ে গেছে
যাও এখন
.
না যাবো না আমি

কেন যাবা না?
.
আমি আপনার জিএফকে দেখতে এসেছি
.
শান্ত ব্রু কুঁচকে এবার পুরো বিষয়টা বুঝলো
তারপর হাত গুটিয়ে বললো”আচ্ছায়ায়ায়ায়া,এবার বুঝলাম!!আমার পিছনে গোয়েন্দাগিরি করো??বাপরে বাপ হাতে দেখি নিতুী ক্যামেরাও আছে
.
😒
.
আসেন আপনাকে মিট করাই আমার জিএফের সাথে
.
না না,দরকার নাই!
.
আরে আসেন আসেন
শান্ত আহানার হাত মুঠো করে ধরে টেনে সিটে বসিয়ে দিয়ে নিজেও ওর পাশে বসে পড়লো
আহানা ঢোক গিলে যেতে যেতে জানালার সাথে লেগে গেছে
.
মিট দিদার,ওর নাম দিদার উল হক,আমার ক্লাইন্ট,আর দিদার উনি হলেন পাশের বাসার আন্টি টাইপস রিলেটিভ আমার
মানে সে আজ এসেছে আমার আর আমার জিএফের গোপন পিক তুলতে
.
দিদার হেসে বললো”আর সে আমাকে তোমার জিএফ ভেবেছে?”
.
হ্যাঁ,এবং ছবিও তুলে ফেলেছে মুখ না দেখেই
.
হাহা,ভেরি ফানি,তা এই ছবি দিয়ে উনি কি করতেন?
.
সে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করতো
.
বাহ কি আইডিয়া!
.
ম্যাম আপনার আইস্ক্রিম
.
আহানা আইসক্রিমের দিকে তাকিয়ে তারপর শান্তর দিকে তাকালো,ভয়ার্ত স্বরে বললো”খাব না আমি”
.
শান্ত ওয়েটার থেকে আইস্ক্রিম নিতে নিতে বললো”মারবো না তোমাকে,মারার চেয়েও কঠোর শাস্তি দিব আমার পিছনে লাগার জন্য”
আহানার হাতে আইসক্রিম ধরিয়ে দিয়ে শান্ত দিদারকে বিদায় দিলো
তারপর আহানার দিকে ঘুরে বসে তার হাতে থাকা কফির মগে চুমুক দিলো
আহানা আইসক্রিম খাচ্ছে আর মনে মনে ভাবছে কি করে রক্ষা পাবে সে
.
এই মেয়ে!
.
আহানা আইসক্রিম মুখে দিতেই শান্ত “এই মেয়ে” বললো তাই ওর গলায় আইসক্রিমে থাকা বাদাম আটকে গেলো
কাশতে কাশতে বললো”কি ”
.
তোমারে আমি হারে হারে চিনি
.
চিনছেন তো ভালো করছেন আবার বলার কি আছে?
.
আজ তোমার হাত পা ভেঙ্গে তার পর বাসায় নিয়ে যাবো
.
কককককেন এমন করবেন আআআআপপপনি!
.
শান্তর পিছনে কোনো গোয়েন্দা লাগলে তারে শান্ত এমনি এমনি ছাড়ে না
আর হলো কথা জিএফের আমার এসবে ইন্টারেস্ট নেই,মা যাকে বলবে তাকেই বিয়ে করে নিব
.
ওহহহ
.
দেখি ক্যামেরা দেখাও
.
না,কেন দেখবেন আপনি,একদম ধরবেন না ক্যামেরা
.
তার মানে নিশ্চয় কিছু একটা গণ্ডগোল আছে,দেখি দাও আমাকে
.
না দিব না
.
শান্ত আরও এগিয়ে গেলো আহানার দিকে,আহানা ভয়ে পিছিয়ে গিয়ে হাতে থাকা আইসক্রিম এক চামচ শান্তর গালে লাগিয়ে দিলো,একদম লেপটে
.
শান্ত চোখ বন্ধ করে টেবিল থেকে টিসু নিয়ে মুখ মুছতে গিয়ে থেমে গেলো
আহানা বোকার মত তাকিয়ে আছে আর হাতে থাকা ক্যামেরাটা পিছনে লুকাচ্ছে
শান্ত আহানার গায়ের ওড়না দিয়ে মুখ মুছে নিলো
আহানা কোনে রিয়েক্টই করলো না কারণ এখন তার একটাই কাজ আর সেটা হলো ক্যামেরা লুকানো
.
শান্ত মুখ মুছা শেষ করে আহানার হাত চেপে ধরলো,কিছুটা জোরেই
আহানা হাত মুছড়াতে মুছড়াতে বললো”তাও ক্যামেরা দিব না আমি”
শান্তর সাথে জোরাজুরিতে পারলো না আহানা,শান্ত ক্যামেরা নিয়েই ছাড়লো তারপর দেখলো আহানা মোট ১৪টা ছবি তুলেছে সবগুলোতে শান্ত হেসে তাকিয়ে আছে সামনে বসা মানুষটির দিকে
শান্ত অফিসের কথা বলার সময় মাঝে মাঝে হেসেছিল আহানা ঠিক ওসময়টায় ছবি তুলেছে যেন ওর মা মনে করে এটা সত্যিই ওর জিএফ
আচ্ছা বাকি ছবিগুলোতে মেয়ের চুল তুলেছে সব
হায় রে!
আমাকে ফাঁদে ফেলার সব তৈরি করে নিয়েছিল বেকুবের গুষ্টিটা
.
আহানা টেবিলের নিচ দিয়ে বের হয়ে এক দৌড় মেরেছে ততক্ষণে
শান্ত সামনে তালিকে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা দারোয়ানকে ইশারা করলো
দারোয়ান আহানার সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়েছে সাথেসাথে
.
আহানা পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো শান্ত হাসতে হাসতে আসতেছে এদিকে
চলবে♥

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে